“হালাল প্রেম” পর্ব- ১৫

“হালাল প্রেম”
পর্ব- ১৫
(নূর নাফিসা)
.
.
শুক্রবার দুপুর বারোটার দিকে দুজন সোফায় বসে বসে টিভি দেখছে। সাফওয়ানা সোফায় পা তুলে লম্বালম্বিভাবে শুয়ে আছে। আর শারমায়া সোফায় বসে টেবিলে পা তুলে রেখেছে। মিস্টার বিন দেখে দুজন হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে। এবং একে অপরকে হাস্যকর চরিত্রে উপস্থাপন করে পঁচানোর চেষ্টা করছে। শারমিন গোসল সেড়ে এসে বললেন,
“এখনো গোসল করতে যাসনি? জলদি যা। টিভি বন্ধ কর। আজান দিবে এখনি।”
সাফওয়ানা জবাব দিলো,
“যাও তুমি, করছি…”
“করছি না, এখন কর৷”
শারমিন চলে গেলেন কিচেনে। দুএক মিনিট পর কিচেন থেকে হাক ছাড়লেন,
” মুড়ি খাবি কে?”
শারমায়া জবাব দিলো,
“মা, এখন খাওয়ার সময় হলো!”
“এইযে, গোশতের ঝোল আছে একটু। মেখে খেয়ে নে। হাড়িতে রান্না বসাবো। তারাতাড়ি আয়।”
শারমায়া টিভির দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,
“সাফু, যা। ভালো করে হাত ধুয়ে মুড়ি মেখে নিয়ে আয়।”
সাফওয়ানা উল্টো দু’হাতে শারমায়াকে ঠেলতে লাগলো,
“আপু যাও, টিভি দেখতে দেখতে মুড়ি দারুণ মজা হবে। পপকনের কাজ দিবে।”
শারমায়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে সাফওয়ানার দুহাত ধরে টেনে সোফা থেকে নামিয়ে দিলো,
“সুইটি কিউটি বোন আমার। যাও, মুড়ি মেখে নিয়ে এসো। দুইটা কাচা মরিচ কুচি করে দিয়ো। আরো বেশি মজা হবে।”
সাফওয়ানা আবার পূর্বের ন্যায় সোফায় উঠে শুয়ে সোফার হাতল আঁকড়ে ধরে বললো,
“সোনামণি বোন আমার, বেশিরভাগ সময় আমিই মেখে নিয়ে আসি আর তুমি গদগদ করে গিলো। আজ তুমি যাও।”
শারমায়া আবার তার হাত ধরে টানতে টানতে বললো,
“ওই, ওঠ! আমি যাবো কেন! কত্তো বড় সাহস তোর, বড় বোনকে অর্ডার করিস! ওঠ!”
সাফওয়ানাকে টানতে গিয়ে এদিকে সোফার সিট তুলে এনেছে শারমায়া। ওদিকে শারমিন সাখাওয়াত বলতে লাগলেন,
“এই আলসের দল, আয়। আমি মরিচ কুচি করে দিচ্ছি। তোদের দুইটার মতো আলসে আর দু’একটা দেখিনি জগতে! আল্লাহ জানে শ্বশুরবাড়ি থেকে দিনরাত কত খোটা আসে!”
শারমায়া সিট সাফওয়ানার উপর ফেলে বিড়বিড় করতে করতে বেরিয়ে যেতে লাগলো,
“আমার ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারো মা। সাফওয়ানার একটা জল্লাদ শ্বাশুড়ি হবে দেখো। তোমার চেয়েও বড় খুন্তি নিয়ে পিটিয়ে ছাল তুলে ফেলবে। কাজ না করে যাবে কোথায়!”
শারমিন শুনতে না পেলেও সাফওয়ানা তার বিড়বিড় শুনে বললো,
“ইশ! কি সাধু গিন্নি! আমার শ্বাশুড়ি মোটেও এমন হবে না। যদি হয় তো উল্টো শ্বাশুড়িকে বাপের বাড়ি ঘুরে আসতে পাঠাবো।”
শারমায়া হাসতে হাসতে চলে গেলো। কিচেনে এসে বললো,
“সকালে না মাত্র খাওয়া শেষ করলে, এখন আবার কেন?”
“শুক্রবার গোশত রান্না না করলে ভালো লাগে৷”
“তাহলে কাল রান্না করার কি প্রয়োজন ছিলো?”
“কাল তোর মামা এসেছে না!”
“মামা শুক্রবার এলে কি হতো।”
শারমিন বিরক্তির সাথে বললো,
“তোর কাছে বলে আসতে হবে তো যে কি বার আসবে! ফাজিল পোলাপান!”
মাকে বিরক্ত করতে পেরে শারমায়া হেসে উঠলো। অতপর চুপচাপ হাড়িতে মুড়ি মেখে হাড়ি নিয়েই বেরিয়ে আসছে। তা দেখে শারমিন বললো,
“এইটা নিয়ে কোথায় যাস! বাটিতে নে।”
“সমস্যা কি? এখন তো আর রান্না করছো না! গোশত এখনো বরফই আছে। ভিজে বরফ গলতে থাকুক। এতোক্ষণে খাওয়া শেষ হয়ে যাবে।”
“কেন, তোর বাটিতে নিতে সমস্যা কি?”
“আম্মু, অযথা বাটিতে নিয়ে তৈলাক্ত করার প্রয়োজন কি? এটাতেই খাবো। এতো কিছু নোংরা করতে পারবো না। ধুতেও কষ্ট লাগে।”
বলতে বলতে বেরিয়ে গেলো সে। ওদিকে শারমিনের বকবক চলছে,
“দিন যায় আর খচ্চর হয় পোলাপান! সুখে থাকলে ভুতে কিলায় এই হয়েছে দশা ! সুখে রাখছি তো, টের পাও না কাজ কি জিনিস! যখন ঘাড়ে পড়বে তখন বুঝবে। আমারই ভুল হয়েছে, কেন যে এখানে এলাম! গ্রামে থাকতে, বেশ বুঝতে পারতে।”
ওদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। সে হাড়ি নিয়ে ড্রয়িং রুমের দরজা বরাবর ঠান্ডা মেঝেতে বসে পড়লো। মুড়ি মুখে পুড়ে দিতে দিতে বললো,
“সাফু, খেতে হলে চলে আয়। দারুণ মজা হয়েছে।”
সাফওয়ানা রিমোর্ট রেখে পা ছড়িয়ে বসে পড়লো মেঝেতে। কোনো কোনো মসজিদে আজান পড়ছে তাই শারমায়া বললো টিভি বন্ধ করে আসতে। সে টিভি বন্ধ করে আবার এসে পূর্বের ন্যায় বসে পড়লো।
খাওয়া প্রায় শেষ দিকে, এমনি কলিং বেল বেজে উঠলো। শারমায়া হাড়ি সরিয়ে নিয়ে বললো,
“আব্বু এসেছে বোধহয়, দরজা খুলে দিয়ে আয়।”
শারমায়ার কথার ভঙ্গিতেই সাফওয়ানা বুঝে নিয়েছে দরজা না খুলে দিলে তাকে খেতে দিবে না। শেষের দিকের খাওয়াটাই বেশি মজা। এইমজা কখনোই কেউ মিস করে না। এখনো করতে রাজি নয় সাফওয়ানা। তাই দরজা খুলতে চলে গেলো। দরজা একটুখানি ফাঁক করতেই কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে সে শারমায়ার দিকে তাকালো। বাবা এসেছে নাকি ফারিয়া আপু তা দেখার জন্য শারমায়া ওদিকে তাকিয়েছিলো। কিন্তু সাফওয়ানার এমন অদ্ভুত দৃষ্টি বুঝতে না পারায় তার ব্রু কুচকে গেলো। সাফওয়ানা সাথে সাথেই তার এটো হাত পেছনে লুকিয়ে ওড়নায় মুছতে মুছতে খুব দ্রুত সম্পূর্ণ দরজা খুলে দিয়ে বললো,
“সারপ্রাইজ…!”
জোভান বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে! জোভানকে দেখে শারমায়া কঠিন ঢোক গিললো! এবং সাথে সাথেই হাড়ি নিয়ে নিজের রুমে দৌড়! সাফওয়ানা হাসতে হাসতে অর্ধেক শহীদ! হাসির সাথেই জোভানকে সালাম দিলো সে। জোভান দই মিষ্টির প্যাকেট সাফওয়ানার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“আরে, হাসুনি বুড়ি! হাসি থামাও আগে।”
জোভান ভেতরে প্রবেশ করার পরপরই সাখাওয়াত বদরুদ্দোজা এবং আশরাফ আহমেদ খান সিড়ি দিয়ে উঠে এলেন। মেয়েকে এভাবে হাসতে দেখে সাখাওয়াত বললেন,
“কি ব্যাপার, হাসছো কেন এভাবে?”
“হাসি পাচ্ছে, আব্বু।”
আশরাফ স্যারকে দেখে সাফওয়ানা হাসি নিয়ন্ত্রণ করে সালাম দিয়ে বললো,
“আসসালামু আলাইকুম আংকেল। কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো আংকেল?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“শারমায়া কোথায়?”
“আপু রুমে।”
সাখাওয়াত বদরুদ্দোজা ও আশরাফ স্যার ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতে লাগলে জোভান ফিসফিসিয়ে বললো,
“আপু রুমে কি যেনো করে?”
“হাড়ি গিলে। আ’ম শিওর আপনাকে মিস করছে। আসুন দেখে যান আরেকবার।”
জোভান ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বললো,
“আর লজ্জা দিয়ো না গো আমার বউটাকে।”
জোভানের কথায় সাফওয়ানা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। তাদের কথাবার্তা শুনে এমনি শারমিন বেরিয়ে এলো কিচেন থেকে। জোভান সালাম দিয়ে কথা বলতে লাগলো। সাফওয়ানা রুমে চলে গেলো শারমায়ার অবস্থা দেখতে। শারমায়া হাড়ি খাটের নিচে লুকিয়ে হাত ধুয়ে কাপড়চোপড় নিচ্ছে গোসলের জন্য৷ সাফওয়ানাকে রুমে আসতে দেখে প্রথমে সে দরজা লাগিয়ে দিলো। অতপর তার দুহাত ধরে পায়ের মধ্যে পরপর চারটা লাথি দিয়ে বললো,
“ঘরের শত্রু বিভীষণ! খুব আনন্দ লাগছে আমার অবস্থা দেখে? কতটা বদ হলে তুই এমন কাজ করতে পারিস! এভাবে দরজা খুললি কেন তুই!”
“আরে! মেহমান এসেছে, দরজা না খুলে তাড়িয়ে দিবো!”
“তুই আমাকে ইশারা তো করতে পারতি।”
সাফওয়ানা হাসতে হাসতে বললো,
“ছাড়ো, নয়তো ডিরেক্টলি তোমার শ্বশুর আব্বুর কাছে বিচারপত্র জমা করবো।”
“স্যার এসেছে?”
“হু, এসেই বলছে বউমা কোথায়।”
“মোটেও এটা বলেনি, স্টুপিড!”
শারমায়া খাটের নিচ থেকে হাড়ি বের করে সাফওয়ানার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
“এগুলো খেয়ে রেখে আয়।”
“তুমিই খাও, ভাইয়াকেও ডাকি খাওয়ার জন্য। ডেচকিতে কাপল লাঞ্চ হয়ে যাক।”
“চারটায় কম হয়ে গেছে নাকি?”
“চারটা লাথির আটটা উশুল তুলবো ভাইয়াকে বলে।”
“যা, দেখা যাবে ভাইয়ার চামচী!”
এমনি শারমিন এলো রুমে। গোসল করেনি বিধায় বকে গেলেন আর হাড়ি নিয়ে চলে গেলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here