“হালাল প্রেম” পর্ব-১৯

“হালাল প্রেম”
পর্ব-১৯
(নূর নাফিসা)
.
.
ন্যাশনাল মেমোরিয়ালের ভেতরে প্রবেশ করে তারা সিঙ্গেল, কাপল ও গ্রুপ ফটো তুললো। সাফওয়ানা যখন কাপল ফটো তুলছিলো, জোভান শারমায়ার মুখোমুখি দাঁড়ালো এবং বললো,
“ক্যান ইউ গিভ মি ইউর হ্যান্ড ফর সেলিব্রেট আওয়ার ফার্স্ট মান্থ?”
শারমায়া মিনিং বুঝতে পারলেও রিজন বুঝতে পারলো না। তাই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। জোভান নিজের হাত বাড়িয়ে ইশারায় আবার তার মতামত জানতে চাইলে শারমায়া আর কিছু ভাবলো না। নিজের ডান হাত রাখলো জোভানের হাতের উপর। জোভানের ইচ্ছাকে সে কখনোই উপেক্ষা করবে না। কারণ না হয় ঘটনার পরেই জানবে সে। জোভান মুচকি হেসে শারমায়ার অনামিকা আঙুল থেকে রিং খুলে নিচ্ছে। যা দেখে মুহূর্তেই শারমায়ার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো! এটা তো এনগেজমেন্ট এর রিং, এটা খুলছে কেন জোভান! তাহলে তো শ্বাশুড়ি মায়ের কথা উপেক্ষা করা হবে। তিনি তো বলেছিলেন সবসময় পরে থাকতে! তাই এতোক্ষণ চুপ থাকতে চাইলেও এবার রিং খুলে নেওয়া মাত্র শারমায়া বললো,
“এটা খোলা কি ঠিক হবে? আন্টি তো সবসময় পরে থাকতে বলেছিলেন।”
জোভান তার বাম হাত টেনে অনামিকা আঙুলে রিংটা পড়িয়ে দিতে দিতে বললো,
“আন্টি খুলে রাখতে নিষেধ করেছিলেন, ফিঙ্গার চেঞ্জ করা যাবে না তা তো বলেননি।”
কথাটা বলার পরপর পকেট থেকে একটা রিং বের করে ডান হাতের আঙুলে পরিয়ে দিতে দিতে বললো,
“হ্যাপি ফার্স্ট মান্থ, ডিয়ার।”
শারমায়া মুচকি হেসে জোভানের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“হ্যাপি ফার্স্ট মান্থ।”
এতোক্ষণ যাবত সাফওয়ানা পরিকল্পনা মোতাবেক চুপচাপ ভিডিও করছিলো। এখন ভিডিও সেভ করে সে-ও বলে উঠলো,
“ডান ভাইয়া। হ্যাপি ফার্স্ট মান্থ ডিয়ারেস্ট কাপল।”
জোভান মুচকি হেসে সাফওয়ানার হাত থেকে ফোন নিতে নিতে বললো,
“থ্যাংক ইউ সো মাচ ডিয়ার সিস্টার। বলো এবার তোমার কি গিফট চাই?”
“গিফট তো গিফটই। একটা দিলেই হলো।”
“আগামী বছর একটা বর এনে দেই তাহলে। কি বলো?”
“ছি! দরকার নাই। আমিই চাই। একটা পিজ্জা হলেই হবে।”
“বরের চেয়ে বেশি মূল্যবান পিজ্জা?”
“অফকোর্সলি।”
জবাব দিয়ে নিজেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো সাফওয়ানা, সাথে যুক্ত হলো জোভান। তাদের দুষ্টুমি দেখে মুচকি হাসলো শারমায়া। কিছুটা সময় ন্যাশনাল মেমোরিয়ালে কাটিয়ে তারা বেরিয়ে এলো। আশেপাশে ঘুরাফেরার পর তারা লাঞ্চ করলো রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় সাফওয়ানাকে পিজ্জা কিনে দিলো জোভান। গাড়িতে এবার শারমায়া সামনের সিটে বসেছে। আরও কিছুক্ষণ গাড়িতে চড়ে আসরের সময় জোভান তাদের খালামনির বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। পিজ্জা এখানেই খাওয়া শেষ। তবে তারা যে জোভানের সাথে ঘুরে এসেছে আর পিজ্জা জোভান গিফট করেছে সেটা বলেনি শারমায়া নিষেধ করায়। তাহলে আপু, ভাবি নানান কথা বলবে আর লজ্জা দিবে। বাবা-মা ঢাকায় ফিরলে সবাই একত্রে খালামনির বাসায় চলে এলো। রাতে এখানে খাওয়াদাওয়া করে তারপর দুজন বাবামায়ের সাথে বাড়ি ফিরে এলো।
সারাদিন ঘুরাফেরা করায় দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। ঘুমানোর জন্য বিছানায় দেহ এলিয়ে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু ঘুম নামছে না শারমায়ার চোখে। প্রায় এক ঘন্টা যাবত সে আজকে পরিয়ে দেওয়া রিং য়ের দিকে তাকিয়ে আছে। জোভান তো তাকে একের পর এক গিফট দিয়ে যাচ্ছে। সে তো কিছুই দিতে পারলো না৷ ফার্স্ট মান্থ এ তাকেও তো কিছু গিফট করা প্রয়োজন ছিলো। যাক, আজ যেহেতু আর সম্ভব না কাল দেখা যাক। কি গিফট দিবে তা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছে শারমায়া। জোভানের সাথে আজ আর কথা হলো না। হয়তো জোভান ব্যস্ত তাই কল দেয়নি।
পরদিন সকালে কল এসেছে জোভানের। শারমায়া বাথরুমে থাকায় রিসিভ করে কথা বলছে সাফওয়ানা। শারমায়া এসে ফোন নিয়ে নিলো।
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো? ”
“আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ। ঘুম হয়েছে রাতে?”
“হুম। আপনার ঘুম হয়নি নিশ্চয়ই। কাল রাতেও অফিস ছিলেন?”
“না, সন্ধ্যায়ই বাসায় ফিরেছি। ঘুমও হয়েছে ভালো।”
“ওহ্, তাহলে রাতে কল দেননি যে?”
” অপেক্ষায় ছিলে?”
“হুম।”
“আমি তো ভেবেছি তুমি আপু, ভাবিদের সাথে গল্পগুজবে ব্যস্ত। যেই লজ্জাবতী তুমি। তাদের সামনে তো আর কথা বলবে না। তাই দেইনি।”
“আমি তো রাতেই আমাদের বাসায় চলে এসেছি আব্বু আম্মুর সাথে।”
“ওফ্ফ! তাহলে তুমিও তো দিতে পারতে!”
“আমি ভেবেছি আপনি ব্যস্ত তাই আর দেইনি।”
“হাহাহা… ভালো মিলে গেছে ভাবনা। নাস্তা করেছো?”
“উহুম। আপনি কখন করবেন?”
“বাহ! বুঝে গেছো তাহলে যে তোমার সাথে কথা বলার পর নাস্তা করি?”
“তো বুঝবো না!”
“হৃদয়ে টান পড়েছে বোধহয়। চলো, নাস্তা করি।”
“ওকে, হিহিহি.. ”
“হাসির কি আছে?”
“কিছুনা। খাওয়ার সময় কথা বলতে নেই। চলুন আগে নাস্তা শেষ করি তারপর কথা বলি।”
“ওকে, আমার পাশের চেয়ারে বসো।”
শারমায়া হাসতে হাসতে কল কেটে দিয়ে বললো, “পাজি লোক একটা!”
কোচিং-এর জন্য শারমায়া আজ একটু আগেই বাসা থেকে বের হলো। অতঃপর চলে এলো একটা ঘড়ির দোকানে। জোভানকে দেওয়ার মতো কোনো ডিজাইন পছন্দ হলো না। পরপর তিনটা দোকান ঘুরলো কিন্তু এতো এতো ডিজাইনের মধ্যে একটাও পছন্দ করতে পারছে না। কি হয়েছে তার সে নিজেই বুঝতে পারছে না। আসলে কি ঘড়ির ডিজাইন ভালো না নাকি তার পছন্দই হারিয়ে গেছে। বেশি কনফিউশান নয় তো, যার জন্য এমন হচ্ছে! নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হয়ে আবার প্রথম প্রবেশ করা দোকানে এলো। যেমনই হোক, কিনে ফেলবে একটা। অতঃপর আটশত টাকার মধ্যে একটা টাইটান ঘড়ি কিনলো। যদিও ইচ্ছে ছিলো আরও দামী গিফট দেওয়ার কিন্তু আপাতত হাতে সঞ্চিত টাকা নেই। ঘড়ির ডিজাইন তেমন ভালো লাগছে না তবে জোভানকে কালো রংটা মানাবে ভালো। তাই এটাই নিলো৷ এদিকে কোচিং-এ এসেছে পাঁচ মিনিট দেরি করে। পড়াশোনায় আজ তেমন মনযোগ নেই। মাথায় ঘুরছে অন্য পরিকল্পনা।
সারাদিন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, সে তো দামী দামী জিনিসপত্র ব্যবহার করে, এটা কি তার পছন্দ হবে? ধুর, পড়লে পড়বে নতুবা ফেলে দিবে। এতো ভেবে লাভ নেই। কিন্তু জোভানকে গিফটটা দিবে কিভাবে! তাকে কি আসতে বলবে? নাহ, এসে গিফট নিয়ে যাবে এটা কেমন দেখায়! আবার ভেবেছে কুরিয়ার করবে, কিন্তু পৌছাতে সময় লাগবে বেশি তাছাড়া গিফট বক্সের বারোটা বাজাবে নিশ্চিত। তাই সেই পরিকল্পনাও বাদ। অনেক ভেবে খুঁজে পেলো অন্য একটা পথ। সন্ধ্যায় সে জোভানের ফোনে কল করলো।
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। ব্যস্ত আছেন?”
“না, বলো।”
“এখন কোথায় আপনি?”
“অফিসে।”
“ওহ্। বাসায় ফিরবেন কখন?”
“তুমি বোধহয় জরুরী কিছু বলতে চাইছো। সরাসরি বলো।”
“না, মানে ফ্রি আছেন কিনা সেটাই জানতে চাইছি।”
“না থাকলেও তোমার জন্য ফ্রি হয়ে যাবো। মিস করছো নাকি খুব?”
“হুম করছি।”
“সিরিয়াসলি? আমি কিন্তু পারবো তোমাকে এখনই নিয়ে আসতে।”
শারমায়া হেসে উঠলো এবং বললো,
“তো নিয়ে যান।”
“না থাক, চার বছর পরই নিয়ে আসবো। নয়তো শ্বশুর আব্বা আবার কষ্ট পাবেন।”
“কত যে পারবেন সেটা আমিও জানি।”
“আমি যে পারবো, বিশ্বাস হয় না?”
“আচ্ছা, সেটা বাদ দিন। এখন বলুন, আপনি কি আটটার আগে বের হবেন অফিস থেকে?”
“হতেও পারি। কেন?”
“আটটার পূর্বে বের হলে একটু দশ নম্বর রোডে আসতে পারবেন?”
“কিসের রোড নম্বর বলা শুরু করেছো! বাসার ইনভাইটেশন কেউ এভাবে দেয়! সরাসরি বলবে বাসায় আসতে, তাহলেই না আসবো। হঠাৎ জরুরী তলব যে? শ্বাশুড়ি মা কি আজ ভালো রান্নাবান্না করেছেন আমার জন্য?”
“ইশ! শুধু বেশি বেশি! আমি বাসার দাওয়াত দেইনি। বাসায় আসার দাওয়াত দেওয়ার হলে আম্মু আব্বুই কল করতো। ন্যাশনাল ব্যাংকের পাশে এলেই হবে। এজন্যই রোড নম্বর বলেছি। কারণ কিন্তু জানতে চাইবেন না। আর এতো জরুরীও না। ফ্রি থাকলে এবং সম্ভব হলেই আসবেন।”
জোভান হেসে বললো,
“ওকে। আসার আগে তোমাকে কল করবো।”
“ওকে। আর শুনুন…”
“হুম?”
“একা আসবেন।”
জোভান নিঃশব্দে হেসে বললো,
“ওকে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here