“হালাল প্রেম” পর্ব- ২৮

“হালাল প্রেম”
পর্ব- ২৮
(নূর নাফিসা)
.
.
তার কাহিনী শুনে শারমায়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো এবং বললো,
“মিরাজ ভাইয়ার তো গার্লফ্রেন্ড আছে। তাই না?”
“হুম।”
“কেমন?”
“মিরাজের মতোই স্বভাবে পিচ্চি টাইপ। তোমার এক ক্লাস জুনিয়র।”
“আসেনি প্রোগ্রামে?”
জোভান একটু বিস্ময়ের সাথে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার বাসা থেকে দাওয়াত করলে তুমি এখন যাবে?”
“না।”
“তুমি বউ হয়েই আসবে না, আর সে গার্লফ্রেন্ড হয়ে আসবে?”
“বউ তো প্রকাশিত, গার্লফ্রেন্ড তো লুকায়িত। লুকিয়ে লুকিয়ে আনতেই পারবে। আর মিরাজ ভাইয়ার তো ওপেন রিলেশনই।”
“আমিও তোমাকে লুকিয়ে নিয়ে যাবো তোমার শ্বশুর বাড়ি।”
“তবুও যাবো না।”
জোভান হেসে উঠলো। শারমায়া বললো,
“সাদাত ভাইয়া, ইফাজ ভাইয়ারও আছে?”
“সাদাতের নেই। তাকে বিয়ের জন্য বাসা থেকে চাপ দিচ্ছে। সে এখন করবে না বলছে। আর ইফাজের গার্লফ্রেন্ড ছিলো তবে এখন নেই।”
“ব্রেকাপ? নাকি বিয়ে হয়ে গেছে?”
“বিয়ে হয়ে গেছে। ওদের লাভ একটু বেশিই পাকাপোক্ত ছিলো। কিন্তু সমস্যা তারা ক্লাসমেট। তাই নুসরাতের ফ্যামিলি তাদের ব্যাপারে জানার পর মেনে নিতে পারেনি। মেয়েটাও ভদ্র। সে ফ্যামিলির অবাধ্য হতে পারেনি। সমবয়সী হওয়াতে ইফাজের বাবা-মা ও মেনে নিবে না বলেছে। দু’দিকেই যেহেতু অমত তাদেরও আর কিছু করার নেই। অনেক কান্নাকাটি করেছিলো নুসরাত। গতবছর বিয়ে হলো। ইফাজ তার বাবামায়ের উপর জেদ করে বলেছে জীবনে বিয়েই করবে না।”
“ইফাজ ভাইয়া তো ভদ্রই। দেখতেও সুন্দর তাহলে মেনে নিতে সমস্যা কি! মেয়ের ফ্যামিলি স্ট্যাটাস কি ইফাজ ভাইয়ার চেয়ে হাই লেভেল?”
“লেভেল সমানই। তবে মেয়ে বিয়ে দিবে আরও হাই লেভেলে। একটু অহংকার নিয়েই বসে ছিলো নুসরাতের পরিবার।”
“বড় কথা তাদের ভাগ্যই অন্যের সাথে জুড়ে আছে।”
“হুম, সেটাই।”
“আর জয় স্যারের তো ছিলোই না, তাই না?”
জোভান তার দিকে তাকাতেই শারমায়া খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। নড়াচড়া করায় সাথে শাড়িও ঠিক রাখতে লাগলো। তার দুষ্টুমিতে এবার জোভানও মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে বললো,
“ওফ্ফ! টুকটুকির আম্মু এতো হাসতে জানে! অনেক্ক্ষণই তো ঠিক রইলো শাড়ি, এবার এলোমেলো করার সময়।”
শুরু হলো তার দুষ্টুমি, রক্ষা নেই শারমায়ার। তার খুনসুটির সমাপ্তি হলেই মিললো মুক্তি। শারমায়া লজ্জায় কাঁথা মুড়ে আছে। জোভান উঠে বাথরুমে গেলো। টুথপেষ্ট ও ব্রাশ হাতে ফিরে এসে খাটে বসে বললো,
“জান, উঠো।”
শারমায়া কাঁথার নিচ থেকেই বললো,
“আপনি অনেক খারাপ। ডাকবেন না আমাকে।”
জোভান হেসে বললো,
“তোমার জন্য আরও খারাপ হতে প্রস্তুত। তুমি উঠবে নাকি আমি আবার ঘুমাতে আসবো?”
“আপনি যান, আমি উঠছি।”
“আমি কোথাও যাবো না। এখন উঠো।”
জোভান হাত বাড়িয়ে পায়ের তালুতে সুড়সুড়ি দিতেই শারমায়া ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। তার রাগান্বিত দৃষ্টির প্রেক্ষিতে জোভান মুচকি হেসে ব্রাশ এগিয়ে দিয়ে বললো,
“ব্রাশ করো।”
“এটা কার?”
“অন্যকারোটা তোমাকে দিবো? এটা আমার। এখানে এলে আমি ইউজ করি এটা। অন্যকেউ ধরে না। প্রব্লেম হবে?”
শারমায়া মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে ব্রাশ হাতে নিলে জোভান বললো,
“প্রব্লেম হলেও এটা দিয়েই করাতাম। আগেই তো বলেছি, অভ্যাস করতে হবে। তারাতাড়ি করো। তোমার পর আমি করবো।”
শারমায়া ব্রাশ নিয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে বাথরুমে চলে গেলো। দুজনেই ফ্রেশ হয়ে একসাথে রুম থেকে বের হলো। পাশের রুম থেকে জেভা বেরিয়ে এসে বললো,
“এতোক্ষণে উঠার সময় হলো? খাবার সব ঠান্ডা হয়ে গেছে। নামাজও বোধহয় পড়েনি আজ।”
জোভান ঠোঁটের এক কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো,
“অনেকদিন পর ফজরের নামাজটা মিস হলো। ডেকে দিলে না তুমি?”
“অন্যসময় কি আমাকে ডেকে দিতে হয়? বউ পেয়ে যে ঘুম দিয়েছেন, ডাকলেও উঠতেন নাকি?”
“আর বলো না কিছু, শারমায়া লজ্জা পাচ্ছে তো।”
জেভা মৃদু হেসে বললো,
“পাক লজ্জা। তাহলে এরপর থেকে নামাজ মিস হতে দিবে না। নিজ বাসায় যাওয়ার পর যখন বেশি ঘুমাতে দেখবা আমার মতো ধারুমধুরুম মাইর দিতে শুরু করবা। তোমার ভাইয়াকে ডাকলে যদি না উঠে আমি এটাই করি। বিরক্ত হয়ে এমনিতেই উঠে যায়।”
জোভান বললো,
“তুমি তো বর পিটাও, আমার বউ এমন না। আমার প্রতি তার অন্যরকম মায়া।”
“পেটাবো না তো কি করবো! এতো ঘুম কিসের? সারাদিন কাজকর্ম তো আমরাও করি, তাই বলে মাতাল হয়ে পড়ে ঘুমাই!”
শারমায়া নিচু শব্দে হেসে উঠলো। জোভান বললো,
“না গো, আপুকে ফলো করবে না। আমাকে যখন ঘুমাতে দেখবা তুমিও ঘুমিয়ে থাকবা। সমান সমান। খাবার দিলে দাও তো আপু। ক্ষুধা লেগেছে অনেক।”
“বস, আমি গরম করে নিয়ে আসি।”
“ভাইয়া কোথায়?”
“তোর ভাইয়া সেই কখন অফিস চলে গেছে।”
“আহনাফ?”
“তার দাদুর কাছে।”
জেভা কিচেনে গেলে শারমায়া বললো,
“আপুর পরিবারে আর কেউ নেই?”
“আছে, আপুরা চার জা। সবাই আলাদা আলাদা ফ্ল্যাটে। ছোটজনের সাথে আপুর শ্বাশুড়ি থাকেন। শ্বশুর নেই।”
“সবারই এমন দুই রুমের ফ্ল্যাট?”
“হুম। বড়জনের ছেলেমেয়ে বড় হওয়াতে দুইটা ফ্ল্যাট করে নিয়েছে।”
তারা নাস্তা করার সময়ই আহনাফ চলে এসেছে দাদুর সাথে। জেভা পরিচয় করিয়ে দিলে শারমায়া সালাম দিলো। আহনাফের দাদু শারমায়ার প্রশংসা করলেন। অতঃপর কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে গোসল করে জেভার ঢিলেঢালা জামা পড়লো শারমায়া। লজ্জা লাগছে তবুও সে বাধ্য। রাগও হচ্ছে জোভানের উপর। জেভা নিজের রুমে তাকে বসিয়ে আলমারি খুলে দুইটা শাড়ি দেখালো,
“শারমায়া, এগুলো ভালো লাগে?”
“আপু, একটা হলেই হলো।”
জোভান আহনাফকে পেটের উপর বসিয়ে এখানেই খাটে শুয়ে আছে। জেভা কিছু বলতে যাচ্ছিলো, তার আগে জোভানই বললো,
“তোমার না আরও শাড়ি আছে, ওইগুলো দেখাও।”
“হুম, দেখাচ্ছি।”
জেভা আলমারির সামনে থেকে একটু পেছনের দিকে এসে বললো,
“দেখো এখানে। গর্জিয়াসের মধ্যে পরবে?”
শারমায়া মত প্রকাশ করছে না বিধায় জোভানকেই পছন্দ করতে বললো। জোভান একের পর এক শাড়ি নামাতে বললো, জেভাও দেখাতে লাগলো৷ প্রথমে সবুজ রঙের শাড়ি ধরে আবার রেখে দিলো। পরপর ছয়টা শাড়ি দেখানোর পর জোভান বললো,
“আপু, তোমার গ্রীন শাড়িটা অনেক সুন্দর।”
জেভা বিরক্তির সাথে বললো,
“মন যেহেতু ওইটাতেই ডুবে আছে, এগুলো এলোমেলো করলি কেন?”
জোভান হাসলো শুধু। জেভা শারমায়ার কাছে এসে মুচকি হেসে বললো,
“এটা জোভানই গিফট করেছিলো আমাকে। এই বার্তাটা বউকে জানানোর জন্য এতোক্ষণ যাবত আমাকে অযথা বিরক্ত করলো।”
জোভানের উদ্দেশ্যে বললো,
“লজ্জা পাচ্ছে তো মেয়েটা। এবার বাইরে যা। নয়তো তুই পরা, আমিই বেরিয়ে যাই।”
জোভান আহনাফকে কোলে নিয়ে চলে যেতে যেতে বললো,
“ইজ্জত মেরো না আমার।”
সে চলে গেলে শারমায়া বললো,
“আপু, উনি শাড়ি পরাতে পারে?”
“ছোটবেলা আমি কাজিনদের সাথে যখন ওড়না দিয়ে শাড়ি পরে খেলতাম, সে আমাদের দেখাদেখি রুমে এসে একা একা ওড়না প্যাচিয়ে শাড়ি পরার চেষ্টা করতো। একটু লাজুক ছিলো তো, আমরা হাসলে সে লজ্জায় কান্না করে দিতো। মা বলতো, আরে হাসার কি আছে? তোরা শিখবি আমার ছেলে শিখবে না? নিজে না পরুক, বউকেও তো পরিয়ে দিবে। তখন আরও বেশি কান্না করে দিতো। আমার সমবয়সী সেই কাজিনরা এখনো জোভানকে দেখলে ওসব বলে আর হাসে।”
শারমায়া মৃদু হেসে বললো,
“আমি তো তোমার শাড়ি পরে নিলাম, উনি কি ভাইয়ার পোশাক পরে যাবে?”
“না, তার পোশাক এখানে আছে তো। মাঝে মাঝে ইচ্ছে হলে চলে আসে তো, তাই দুইটা প্যান্ট আর দুইটা টিশার্ট এখানে রেখে দিয়েছি। সবসময় তো আর পোশাক নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ সময় অফিস থেকে আসে।”
শারমায়া প্রস্তুত হতে হতে ওদিকে জোভানও গোসল সেড়ে তৈরি হয়ে গেছে। কালো জিন্সের সাথে গোলাপি রঙের একটা টিশার্ট পড়েছে। শারমায়া জোভানের চোখ ফাঁকি দিয়ে কয়েক পলক দেখে নিয়েছে তাকে। তারা বের হওয়ার আগে জেভার দুই জা এসে দেখে গেছে শারমায়াকে। আরেকজন বাসায় ছিলো না তাই পরিচিত হতে পারেনি। মিরাজের বাড়িতে আসার সময় জোভান বললো,
“ডিয়ার, আমরা যে আজ আপুর বাসায় ছিলাম এটা আবার তাদের সামনে প্রকাশ করো না। তাহলে কিন্তু আমাকে কিছু না কিছু বলবে আর তুমি লজ্জা পাবে। তারা জানে তুমি তোমার বাসায় আর আমি আমার বাসায় ছিলাম।”
তারা সেখানে আসতেই মিরাজ বললো,
“আজকেও পিচ্চিটাকে নিয়ে এলি না!”
জোভান বললো,
“পিচ্চির পরীক্ষা।”
ইফাজ শারমায়ার উদ্দেশ্যে বললো,
“ভাবি, আমরা যে সাফওয়ানার সাথে দুষ্টুমি করি, আপনি কি রাগ করেন?”
“নাহ।”
“আমরা কিন্তু তাকে ছোটবোনই মনে করি। সে জোভানেরও ছোট বোন, আমাদেরও ছোট বোন।”
মিরাজ বললো,
“পিচ্চি রাগী বেশি, এজন্য রাগাতে ভালো লাগে। মাইন্ড করবেন না আবার। আমরা ভালো ছেলেপুলে। নিজেদের প্রশংসা নিজেরাই করি।”
সকলেই হেসে উঠলো। জোভানের বাবা-মাও উপস্থিত ছিলো আজকের প্রোগ্রামে। তারা সবাই একসাথেই খাওয়াদাওয়া করেছে। মিরাজের মা চাচীরা আবার জুলেখা ইয়াসমিনের সাথে ছেলের বউয়ের প্রশংসা করলো। ফ্রেন্ডদের ফ্যামিলির মাঝে এতো আন্তরিকতা দেখে শারমায়ার খুব ভালো লাগলো। আর তার ফ্রেন্ডদের মধ্যে তো কেউ কারো ফ্যামিলিকে তেমন চেনেই না!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here