“হালাল প্রেম” পর্ব- ৩২

“হালাল প্রেম”
পর্ব- ৩২
(নূর নাফিসা)
.
.
ওদিকে সাফওয়ানা তাদের দেখে সালাম দিলো। অন্যরা ঠিকভাবে কথা বললেও মিরাজ নিজের গলা চেপে ধরে মরে যাওয়ার ভঙ্গিতে জিভ কেটে বললো,
“ফাঁ…সি, কেমন আছো?”
সাফওয়ানা রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালে সে বললো,
“ওহ্! নো! শিফা, কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি সিংহ মার্কা চুলওয়ালা ভাইয়া।”
মিরাজসহ সবাই হেসে উঠলো। সাদাত বললো,
“সিংহরাজ ভাই, চুলের এতো অপমান।”
“না রে, চুলগুলো কাটতে হবে। সবার নজর শুধু আমার চুলের দিকেই যায়।”
তারা ড্রয়িংরুমে এসে বসলে জোভান সাখাওয়াত বদরুদ্দোজার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। সকলে হাসিঠাট্টা আর গল্পগুজবে মেতে উঠলো। ওদিকে শারমায়া ও সাফওয়ানা মাকে সাহায্য করতে লাগলো। সাথে কাজ এগিয়ে দিতে জুলেখা ইয়াসমিন খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। খাওয়াদাওয়ার পর শারমায়া দই, মিষ্টি এনে দিলো তাদের। শারমায়া ড্রয়িংরুম থেকে বেরিয়ে গেলে জোভানও চুপচাপ উঠে এলো। শারমায়া কিচেনে যাচ্ছিলো জোভান ডাকলো,
“শারমায়া?”
“হুম?”
“শুনে যাও তো একটু।”
তাকে ডেকে জোভান শারমায়ার রুমে চলে গেলো। শারমায়া এসে বললো,
“কি?”
“আমার জন্য মিষ্টি নিয়ে এসো।”
“সেখানে দিয়ে এলাম তো।”
“এখানে খাবো আমি।”
“আচ্ছা।”
শারমায়া আবার আলাদা প্লেটে মিষ্টি নিয়ে এলো জোভানের জন্য। রুমে না পেয়ে বারান্দায় এসে জোভানকে পেলো। জোভান মুচকি হেসে হাতে থাকা ফোন পকেটে রাখলো। অতঃপর প্লেট থেকে একটা মিষ্টি হাতে নিয়ে শারমায়ার মুখের সামনে ধরলো। শারমায়া মাথা পেছনে হেলিয়ে বললো,
“আমি এখন মিষ্টি খাবো না। আপনি খান।”
“তুমি কষ্ট করে এক্সাম দিয়ে ভালো রেজাল্ট করেছো, তোমাকে না খায়িয়ে আমি খাই কি করে? নাকি অন্য মিষ্টি খাবে?”
“ইশ! এটাই খাবো তবে এখন খাবো না। ডিনারের পর খাবো।”
“তাহলে তো আমিও এখন খাবো না।”
“এমন কেন আপনি?”
“তোমার জন্য।”
“অল্প খাবো।”
“ওকে।”
শারমায়া একটুখানি মুখে নিলে জোভান বাকিটা খেতে খেতে বললো,
“এবার নিয়ে যাও।”
“একটাই খাবেন? দই খাবেন না?”
“ড্রয়িংরুমে রেখে এসেছো না, সেখানে গিয়ে খাবো। এটা নিয়ে যাও। নয়তো ডাবল খেয়ে আমার অবস্থা টাইট হবে। আর দোষ হবে তোমার।”
জোভান চলে গেলো আর শারমায়া মুখ চেপে হাসলো। বন্ধুদের শ্বশুরবাড়ি ঘুরেফিরে দেখিয়ে তারা একত্রে বেরিয়ে গেলো। জোভান তার বাবামায়ের সাথে তাদের গাড়িতে চলে গেছে, ইফাজের বাড়ি সেইপথে হওয়ায় ইফাজও তাদের সাথে গেছে। সাদাত মিরাজের সাথে বাইকে চলে গেছে।
দুদিন পর সন্ধ্যায় অচেনা নম্বর থেকে কল এলো শারমায়ার ফোনে। সে রিসিভ করে সালাম দিলো৷ সালামের জবাবে অপর পাশ থেকে পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এলো,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ। কে আপনি?”
“আপনার শুভাকাঙ্খী।”
“মানে?”
“জয়কে আপনি কতটুকু চেনেন?”
“কে জয়?”
“নিজের হাসব্যান্ডকে চিনতে পারছেন না?”
“আপনি কে এবং কেন কল করেছেন সেটা বলুন।”
“সেটাই তো বলছি। আপনি জয়কে কতটুকু চেনেন?”
“সেটা কেন অযথা আপনাকে বলতে যাবো?”
“দেখুন, আমার মনে হচ্ছে আপনি তার ব্যাপারে জানেন না। তাই জানাতে চাইছি।”
“কি জানাবেন?”
“জয় আগে বিয়ে করেছে। আপনি তার দ্বিতীয় বউ, এটা কি আগে থেকে জানেন?”
“আপনাকে কে বলেছে?”
“কাউকে বলতে হবে কেন। আমি তার খুব পরিচিত একজন। তবে আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে জানাচ্ছি, সে আপনাকে বিয়ে করে আপনার লাইফটা নষ্ট করে দিয়েছে৷ আপনার পরিবারের কাছে লুকিয়েছে সে বিবাহিত। একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে তার কয়েকবছর সম্পর্ক ছিলো। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে সংসার বাঁধে তারা। আর লোকজনকে জানায় সে ইংল্যান্ড ছিলো পড়াশোনার জন্য। যেই নাকি তাদের সংসারে ঝামেলা হলো, সে বউকে রেখে পরিবারে ফিরে এলো। তারপর চুপিচুপি আপনাকে বিয়ে করে ফেললো সত্য ফাঁস হওয়ার ভয়ে। কিন্তু সত্য কি চাপা থাকে? আপনাদের বিয়ের ব্যাপার আগে জানলে আরও আগেই সত্যিটা জানিয়ে দিতাম। আপনাকে ঠকিয়েছে সে।”
“সে প্রেম করেছে, পালিয়ে বিয়ে করেছে, আবার দ্বিতীয়বার আমাকে বিয়ে করে এতোসব লুকিয়ে আমাকে ঠকিয়েছে। তো আপনার এতো জ্বলছে কেন? আপনি কি তার প্রথম বউয়ের এক্স বয়ফ্রেন্ড নাকি? বদমাশি করার জায়গা পান না? এসব ধান্দা ছেড়ে ভালো হয়ে যান। অন্যের সংসারে ঘাটাঘাটি না করে নিজের সংসারে নজর দিন। আরেকবার ফোন করার চেষ্টা করলে থানায় মামলা করবো।”
“বাবাগো…! ভয় পেয়েছি, ভাবি। সম্পর্ক এতো মজবুত কেন রে জোভান?”
এবার কন্ঠ পরিচিত লাগছে শারমায়ার কাছে। কণ্ঠটা অনেকটা মিরাজের মতো। তাহলে কি জোভান পাশে থেকে ইচ্ছে করে এমনটা করিয়েছে? শারমায়া কল কেটে দিলো। জোভানের উপর প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে তার। কয়েক সেকেন্ড পরেই জোভানের ফোন থেকে কল এলো। শারমায়া রিসিভ করে বললো,
“কেন কল করেছেন?”
“কেন মানে? এটা কেমন কথা?”
“কেমন কথা আপনি জানেন না?”
“তুমি আমাকে ভুল বুঝছো, শুনো আমার কথা।”
“শুনতে হবে না কিছু। আমি বুঝতে পেরেছি আপনি আমার পরীক্ষা নিচ্ছিলেন বন্ধুকে দিয়ে। আপনি ভাবেন কি আমাকে? সন্দেহের দৃষ্টিতে রাখি আমি আপনাকে?”
“এমন কিছু না। তুমি…”
“এমন কিছু না তো কি? বারবার এমন পরীক্ষার সম্মুখীন কেন হতে হবে আমাকে? আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলতে খুব ভালো লাগে আপনার? আসলে বোধহয় খুব বেশিই বিশ্বাস করে ফেলেছি আপনাকে।”
শারমায়া তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দিলো। জোভান আবার কল করলে সে আবারও কেটে দিলো। আবার সেই অচেনা নম্বর থেকেও কল আসছে। রাগ যেন কোনোমতেই কমাতে পারছে না। কান্না আসছে তার। জোভান আরও কয়েকবার কল করলে সে চোখের পানি ওড়নার আঁচলে মুছে রিসিভ করে বললো,
“কি?”
“একটু শোনো আমার কথা।”
“কি শুনবো?”
“মিরাজ দুষ্টুমি করে এমনটা করেছে। আমরা ইফাজের বাসায় এসেছিলাম আজ। বারান্দায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। মিরাজ বারান্দার দরজা আটকে রুমে দাঁড়িয়ে আমার ফোন থেকে নম্বর নিয়ে ইফাজের ফোন থেকে কল করেছে। আমি বারবার নিষেধ করছিলাম, সে তবুও করেছে। তোমাকে যাচাই করার কোনো প্রয়োজন নেই আমার। আমি জানি তুমি কতটা বিশ্বাস করো আমাকে।”
“শেষ হয়েছে বলা?”
“এখন যে তুমি আমার উপর রেগে আছো সেটা আমি বুঝতে পারছি। তবে আমি সত্যি বলছি।”
“মিরাজ ভাইয়াই এটা করেছে না?”
“আমি তোমাকে যাচাই করতে কেন যাবো, বলো। আমার মনে হয় আমি খুব ভালো জানি তোমাকে। ভালো তো আর এমনি এমনি বেসে ফেলিনি।”
“ইফাজ ভাইয়া ফোন কেন দিলো? ভাইয়াও জড়িত ছিলো সাথে? এমন দুষ্টুমি তো আমি পছন্দ করি না।”
“না, ইফাজ জড়িত ছিলো না। সে-ও বকে যাচ্ছিলো মিরাজকে ফোন নেওয়াতে।”
ইফাজ জোভানের হাত থেকে ফোন নিয়ে বললো,
“ভাবি, ইফাজ বলছি। জোভান ঠিকই বলেছে। মিরাজ সবার ফোন নিয়ে নিয়েছে।”
“আপনাদের ফ্রেন্ডশিপ আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে ভাইয়া। আমার দেখা বেস্ট বাইন্ডিং। বাট, কারো কাছে এসব দুষ্টুমি আমি কখনোই প্রত্যাশা করিনি। মিরাজ ভাইয়ার কাছেও না। অতিরিক্ত কোনো জিনিসই ভালো না।”
মিরাজ ফোন নিয়ে বললো,
“স্যরি ভাবি। আপনি এতো রেগে যাবেন, ভাবতে পারিনি৷ খুব বোরিং লাগছিলো তাই একটু মজা নিতে চাইছিলাম জোভানের সাথে। মাথায় এছাড়া আপাতত আর কিছু আসেনি। আর কখনো এমন হবে না। স্যরি। একবার বিশ্বাস করুন, আর কখনো এমন দুষ্টুমি করবো না। ভাবি?”
শারমায়া স্যরি এক্সেপ্ট করলেও গম্ভীরভাবে প্রশ্ন করলো,
“আমি যদি আপনার বলা কথাগুলো বিশ্বাস করে নিতাম তখন আপনি কি করতেন?”
“প্রয়োজনে দুই নৌকায় পা দিয়ে আপনাদের সম্পর্কের সেতু হয়ে দাঁড়িয়ে যেতাম। তবুও এতো মধুর একটা সম্পর্ক হারিয়ে যেতে দিতাম না। ট্রাস্ট মি পিলিজ।”
শারমায়া ফিক করে হেসে উঠলো। মিরাজ বললো,
“আলহামদুলিল্লাহ। একটা মহা প্রলয় থেকে বাঁচিয়ে দিলেন। নে রে ভাই, ভাবি হেসেছে।”
জোভান ফোন নিয়ে বললো,
“রাগ কমেছে?”
“এখন এনজয় করুন। বাসায় ফিরে কল দিবেন।”
“বাসায় যাবো না তো আজ। এখানেই থাকবো, কাল অফিস শেষ করে তারপর বাসায় যাবো।”
“তাহলে তখনই কল দিবেন।”
“কেন? এখন কথা বলতে সমস্যা কি? তারা কেউ নেই তো পাশে। আমার জন্য রুম ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় চলে গেছে।”
“বলুন কি বলবেন?”
“রাগ কমেনি এখনো?”
“যদি বলি কমেনি?”
“এজন্যই তো তোমাকে এতো বেশি ভালোবাসি।”
“এজন্য মানে কীজন্য?”
“এইযে, তুমি কত কৌশলে আমাকে বুঝিয়ে দাও সব। আই লাভ ইট।”
“কি বুঝিয়েছি?”
“তুমি যে কতটা রোমান্টিক মুডে আছো সেটাই।”
“আপনি আসলেই একটা…!”
“কি?”
“জানি না। আমি এখন কল কেটে দিবো।”
জোভান হেসে বললো,
“এই না। আচ্ছা, বলো তো মিরাজকে কি পানিশমেন্ট দেওয়া যায়?”
“কিছু না। ভাইয়া অনুতপ্ত।”
“পানিশমেন্ট না পেলে এই অনুতপ্ত কাল সকাল হতেই উধাও হয়ে যাবে। ইফাজের রুমের সামনে নারিকেল গাছ আছে। তাকে যদি নারিকেল গাছের মাঝামাঝিতে সারারাত বেঁধে রাখি কেমন হবে?”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here