“হালাল প্রেম” পর্ব- ৫২

“হালাল প্রেম”
পর্ব- ৫২
(নূর নাফিসা)
.
.
ফজরের আজান ভেসে আসছে দূর মসজিদ থেকে। সাথে সাথেই জোভান উঠে বসলো। অতঃপর হেটে হেটে রুমের দক্ষিণ পাশের একটা পর্দা সরিয়ে পার্টিশনের গ্লাস খুলে বারান্দায় চলে এলো। শারমায়া তাকিয়েই ছিলো তার দিকে। বুঝতে বাকি নেই, সে-ও যে ঘুমাতে পারেনি। এভাবে থেকে থেকে নিজেও কষ্ট পাচ্ছে তাকেও কষ্ট দিচ্ছে। মূলত জোভান কষ্ট পাচ্ছে বলেই শারমায়ার কষ্ট হচ্ছে। আর এটাও বেশ ভালো জানে, লোকটা এখনো তাকে অনেক ভালোবাসে। তাইতো এতো এতো কষ্ট নিশ্চুপে বহন করে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে নিকটবর্তী মসজিদগুলো থেকেও আজানের ধ্বনি ভেসে এলো। আজান শেষ হওয়ার পর জোভান রুমে চলে এলো। আর চোখ পড়লো শারমায়ার দিকে। শারমায়ার দৃষ্টি তার দিকেই ছিলো। দৃষ্টিতে দৃষ্টিতে যেন ব্যাথা প্রকাশ করলো দু’জন দুজনাতে। অতঃপর জোভানই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে গ্লাস লক করে পর্দা টেনে দিয়ে চলে গেলো বাথরুমে। ওযু করে এসে কাভার্ড থেকে টুপি নিয়ে রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। আবার ফিরে এসে জায়নামাজ বের করে টেবিলের উপর রেখে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। শারমায়ার দুচোখের কোটর ভেদ করে দ্রুত গতিতে আবারও গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা অশ্রু। মিনিট দশেক পর সে উঠে ওযু করে এসে জায়নামাজে নামাজ আদায় করে নিলো। অতঃপর পানি পান করে খাটে এসে শুয়ে পড়লো আবার সাথে সাথেই উঠে এসে পার্টিশনের পর্দাগুলো সরিয়ে দিলো। ওপাশে দেখা গেলো বারান্দা এবং তারপর আবছা আলোকিত ভুবন। সারি সারি বয়ে গেছে বহুতল ভবন। গ্লাস ঠেলে বারান্দায় পা রাখলে কানে ভেসে এলো ব্যস্ত শহরের কোলাহল। এ শহর তার পরিচিত, কিন্তু এই বাড়ির সাথে তার নতুন পরিচয়। মানুষগুলো পূর্ব পরিচিত হয়েও আজ ধারণ করে আছে নতুন রূপ। অপরিচিত রূপ ও অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ বারবার তাকে কাঁদিয়ে যাচ্ছে। শুরুটা যেহেতু তার দ্বারা হয়েছে, শেষটাও তাকেই করতে হবে। প্রয়োজনে মৃত্যু পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাবে, তবুও পূর্ব জোভানকে ফিরে পাবার আশা সে ছাড়বে না। বাইরে আলো ফুটেছে। রুমে আগমন ঘটলো জেভার। সে শারমায়ার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে তাকে ডাকলো। শারমায়া পিছু ফিরে তাকাতেই জেভার দৃষ্টি বিস্মিত হয়ে উঠলো। শারমায়া সালাম দিলো। সে সালামের জবাব দিয়ে বিস্ময়ের সাথে বললো,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। হয়েছে কি?”
শারমায়া মুচকি হেসে বললো,
“কোথায় কি হয়েছে?”
“মুখটা কেমন ফোলা ফোলা!”
“বেশি ঘুমিয়েছি হয়তো সেজন্য।”
“বেশি ঘুমিয়েছো? আমি ডাক্তার মানুষ, আর তুমি আমাকে বোকা বানাতে চাও? জয়ের ফেসটাও সুবিধার মনে হলো না। এতো দেরিতে ঘুমিয়ে আবার এতো তারাতাড়ি জেগে গেছো! তোমাকে কি কাজের তাড়া দিয়ে রেখেছিলাম?”
এমনি রুমে আগমন ঘটলো জোভানের। জেভা পিছু ফিরে জোভানকে বললো,
“এই, কি হয়েছে তোদের?”
জোভান তার দিকে একবার তাকিয়ে টুপিটা ভাজ করতে করতে এবং খুলতে খুলতে কাভার্ডের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
“কোথায় কি হয়েছে?”
জেভা আবার শারমায়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়লো,
“সেই রাগারাগি কি মিটেনি এখনো?”
“রাগারাগি কেন করবো, আপু!”
শারমায়া এমনভাবে বললো কথাটা যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু জেভার মোটেও পছন্দ হলো না তার ভঙ্গিমা। সে গম্ভীরভাবে বললো,
“মিথ্যে আমার সাথে বলো না। এতে বরং লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হবে বেশি। রাগারাগির বিষয়বস্তু কি খুব বড়সড় গুরুতর?”
শারমায়া দৃষ্টি নত করে মাথা দু’দিকে নাড়লো। জেভা রুমে জোভানের দিকে তাকিয়ে দেখলো জোভান তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। জেভার দৃষ্টি তার দিকে নিক্ষেপ হওয়ায় সে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। জেভা বুঝতে পারলো বিষয়টা জানাতে কেউই প্রস্তুত না। যেখানে যেকোনো সমস্যায় জোভান প্রায় সব বিষয়েই তাকে ইনফর্ম করে। এব্যাপারে যেহেতু জানাতে চাইছে না, সেহেতু তারও জোরপূর্বক জানার কোনো ইচ্ছে নেই। সে জোভানকে থামিয়ে দুজনের উদ্দেশ্যে কড়া কণ্ঠে বললো,
“জানি না কি হয়েছে আর জানতেও চাইছি না। বিষয়বস্তু যদি জটিল হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে দুদিন সময় দিলাম। এই দুদিনের মধ্যে যদি নিজেদের মধ্যে সবকিছু ঠিক না হয়েছে, ব্যাপারটা আমি বাবামাকে জানাতে বাধ্য হবো। এর বেশি কিছু আর বললাম না।”
জেভা রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে জোভানের উদ্দেশ্যে বললো,
“নয়টার আগে রুম ছেড়ে বের হবি না।”
“বাবা ডেকেছে আমাকে।”
বাবা যেহেতু ডেকেছে, অহেতুক ডাকেনি। তাই জেভা আর কিছু বললো না। দুজনেই বেরিয়ে গেলো। তবে দরজা চাপিয়ে রেখে যেতে ভুলেনি জোভান। বারান্দা ছেড়ে রুমে এসে শারমায়ার চোখ পড়লো ছাদ হতে বিছানা অব্দি ঝুলানো ফুলের ঝারের উপর। এই মুহূর্তটা যেমন দ্বিতীয় বার আসবে না, এই সাজে ঘরটা সজ্জিতও হবে না কোনোদিন। এই ঝারের নিচে প্রত্যাশিত সময় যেহেতু অতিবাহিত হয়নি, সেহেতু এটাকে ছুড়ে নর্দমায় ফেলে ভুল করবে না শারমায়া। সময় চলে গেছে তো কি হয়েছে? প্রত্যাশা তো মুছে যায়নি। যেদিন জোভান স্বাভাবিক রূপে ধরা দিবে তার কাছে, সেদিন এই ফুলের সাথেই অতিবাহিত করবে সময়কে। যাক সে পঁচে, তবুও কিছুটা হলেও তো দিতে পারবে গ্লানি ঘুচে।
শারমায়া ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে টুল এনে খাটে রাখলো। অতঃপর ফুলের ঝারটি সাবধানে টেনে ছুটিয়ে নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে গুছিয়ে রাখলো। বিছানার উপর থেকে ফুলের পাপড়ি গুলো কুড়িয়ে নিয়ে টি-টেবিলের উপর রেখে বিছানা গুছিয়ে ফেললো। একটু পর একে একে অনেকেই আসতে লাগলো নতুন বউয়ের কাছে। বাচ্চারা এসেও ফুলের পাপড়িগুলো নিয়ে ছুটাছুটি করছে। ভাগ্যিস ঝারটা আগেই সরিয়ে ফেলেছিলো। তা নাহলে বাচ্চাদের হাতেই কুটি কুটি হয়ে যেতো নিশ্চিত। কিছুক্ষণ পর চাচীমার সাথে রুম হতে বেরিয়ে এলো শারমায়া৷ নাস্তা করতে বসলো একসাথে। জোভানের দেখা পেলো এগারোটার দিকে। ইফাজের সাথে এসে ঝটপট নাস্তা করে আবার বেরিয়ে গেলো। সকলের একসাথে গল্প আড্ডা কাজকর্ম সম্পাদনে ভালো লাগলেও শারমায়ার বেশ অস্বস্তি লাগছে তাদের সামনে বসে থাকতে। জেভা তাকে আসর থেকে উঠিয়ে রুমে নিয়ে এসে বললো,
“বাইরে থেকে দরজা আটকে দিচ্ছি, তুমি ঘুমাও। একটু পর এসে ডেকে দিবো। তখন যেন ঘুমেই পাই।”
জেভার কথামতো ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়লো ঠিকই, কিন্তু ঘুম নামছে না চোখে। চোখের পাতা বন্ধ করলেই কেবল জোভানের চেহারা ভাসে। একটু পর দরজা খোলার শব্দ পেয়ে ভাবলো জেভা এসেছে। সে ঘুমের ভান ধরেই চোখ বন্ধ রাখলো। পরক্ষণে কাভার্ড খোলার শব্দ পেয়ে চোখ খুলে দেখলো জোভানকে। জোভান কাপড়চোপড় নিয়ে বাথরুমে গিয়ে দরজা লাগানোর সময় দেখলো শারমায়ার দৃষ্টি সজাগ। গোসল সেরে বের হলে শারমায়া উঠে বসলো। মাথাটা কেমন যেন ঝিম ধরে আছে। এমনি কেউ দরজায় নক করলে জোভান দরজা খুলে দিলো। জেভা এসে বললো,
“এতো তারাতাড়ি ভেঙে গেলো ঘুম? শাওয়ার নিয়ে ফেলো। আর, হ্যাঁ। শাড়ি পরবে। নতুন বউকে শাড়িতে বেশি কিউট লাগে।”
জেভা লাগেজ খুলে বেগুনি রঙের জামদানি শাড়ি এগিয়ে দিয়ে গেলো পরার জন্য। এদিকে জোভান তৈরি হয়ে আবার বেরিয়ে গেলো। যাওয়ার সময় বলে গেলো,
“কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আপুকে বলো।”
একটু কথা বলার সুযোগই পেলো না শারমায়া। তাই মনে মনে বললো,
“আমার তো তোমাকেই প্রয়োজন ছিলো।”
গোসলের পর চুপচাপ বসে রইলো শারমায়া। জুলেখা ইয়াসমিন প্লেটে খাবার নিয়ে রুমে এলেন। শারমায়া বললো,
“মা, আপনি কষ্ট করতে গেলেন কেন? আমি সেখানেই যেতাম।”
“এখানেই খাও। সেখানে কেমন খেয়েছো, দেখেছি না সকালে? এই সবটুকু শেষ করতে হবে। আমি খায়িয়ে দিবো?”
শ্বাশুড়ি মা চাইছে যেহেতু, নিষেধ করে কিভাবে! যদিও খাওয়ার রুচি একদমই নেই তবুও শারমায়া মুচকি হাসলো শুধু। জুলেখা ইয়াসমিন গল্প করতে করতে তাকে খায়িয়ে দিলো। কিন্তু সবটুকু খাওয়া সম্ভব হলো না শারমায়ার পক্ষে। তাই বাকিটুকু তিনি নিজে খেয়ে নিলেন। অতঃপর জেভা ফোন নিয়ে এলো, মা ও সাফওয়ানার সাথে ফোনে কথা হলো। জেভা বারবার শাসিয়ে যাচ্ছিলো তবুও কান্না চাপা রাখতে পারলো না। কখন আগামীকাল আসবে, আর বাবা-মাকে দেখার সুযোগ হবে সেই ভেবে ছটফট করছিলো মনটা।
বিভিন্ন অনুভূতির মাঝে নতুন পরিবারের সাথে সারাটা দিন পেরিয়ে সন্ধ্যায় দেখা পেলো জোভানের। যুথিকার সাথে সোফায় বসে টিভি দেখছিলো শারমায়া। জোভানকে রুমে যেতে দেখে সে রুমে এসে দরজা চাপিয়ে দিলো। জোভান নিজের ফোনটা চার্জার কানেক্ট করছে। শারমায়া বললো,
“কোথাও যাচ্ছো?”
“কেন?”
“বাকিটা জীবন কি আমাদের এমনিতেই কাটবে?”
“কেন? খারাপ কি? ভালোই তো কাটছে।”
“এভাবে তো সংসার সাজে না।”
” কেন, কিসের অভাব তোমার? বলো? আমি সব এনে দেওয়ার চেষ্টা করবো।”
“জোভান, আমি কোনো দ্রব্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছি না। ভালোবাসার অভাব আমার। বড্ড অভাবে আছি।”
“এসব ছেলেখেলা বাদ দাও। বয়স হয়েছে, এসব ছেলেখেলা এখন মানাবে না। তুমি চেয়েছো সংসারে আসতে, নিয়ে আসা হয়েছে। পূর্বেও কোনো কাজে বাধ্য করা হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। তোমার স্বাধীনতা আছে, যেভাবে পছন্দ থাকো।”
“এভাবে কেন বলছো? আমি তোমার ওয়াইফ না? আমার উপর নজরদারি করা তোমার রাইট। আমি জানি, অপরাধ করেছি। তার প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ তো দিবে। সুযোগ না পেলে তো কেউই শুধরাতে পারবে না।”
“যা হয়েছে বাদ দাও। যা হচ্ছে সেটা নিয়ে ভাবো। অতীতকে নিয়ে ঘাটাঘাটি আমার পছন্দ না। আমার কাজ আছে, আসছি।”
শারমায়া তার হাত টেনে বাধা দিয়ে বললো,
“টুকটুকির আব্বু, এভাবে ইগনোর করো না আমাকে। আমি এখানে আছিই তো তোমার জন্য। কেন ভুল করেছি, একটা বার শুনে নাও। তারপর শাস্তি দাও। তবুও এভাবে ইগনোর করো না। এভাবে তো সংসার চলে না। আমাদের মিষ্টি সংসার হবে। যেমনটা তুমি পূর্বে চাইতে।”
জোভানের দৃষ্টি কঠিন হয়ে উঠলো। সে বললো,
“শাস্তি দেওয়া তোমার কাজ হতে পারে। আমার না। কাউকে কষ্ট দেওয়া তোমার অভ্যাস হতে পারে, আমার না। আমি পারি না আমার প্রিয়জনদের সাথে রাগ দেখাতে। কেন জানো? প্রিয়জনরা কষ্ট পাবে, আর সেই কষ্ট আমার সহ্য হবে না। সেদিন জানতে চেয়েছিলাম, জানতে পারিনি। আজও জানতে হবে না। সেদিনও প্রত্যাশা করতাম, ভালো থাকো। আজও করছি।”
শারমায়া তার নিকট আরও এগিয়ে এসে মুখখানা দু’হাতে ধরে বললো,
“একটুও ভালো নেই আমি। তুমি ভালো না থাকলে আমি ভালো কি করে থাকি? আমি আমার পূর্বের টুকটুকির আব্বুকে ফিরে পেতে চাই।”
“তাহলে আমাকে পূর্বের দিনগুলো ফিরিয়ে দাও।”
শারমায়ার কান্নার বেগ বেড়ে গেলো। সে বললো,
“এতোটা কঠিন হয়ে যেয়ো না, টুকটুকির আব্বু। ক্ষমা করে দাও না একবার।”
“সময় নিজের সাথে সাথে মানুষকেও বদলে দেয়, শারমায়া। তুমিও বদলে গেছো, আমাকেও বদলে দিয়েছো। কখনোই পারবে না সেই সময় ফিরিয়ে আনতে।”
বলতে বলতে শারমায়ার দুহাত নামিয়ে দিলো জোভান। হুট করেই শারমায়া মেঝেতে বসে জোভানের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,
“পায়ে পড়ি তোমার। ক্ষমা করে দাও। আমি জানি অনেক কষ্ট দিয়েছি, ক্ষমা করে দাও টুকটুকির আব্বু।”
“শারমায়া! শারমায়া, উঠো। কি করছো এসব! পা ছাড়ো। উঠো! উঠতে বলেছি আমি। শারমায়া!”
জোভান স্তব্ধ তার কর্মে! প্রচুর রাগ হচ্ছে শারমায়ার উপর। বারবার বলছে উঠার জন্য, হাত ধরে টানছেও কিন্তু শারমায়া কাঁদছেই। জোভান ঝাড়ি মেরে তার হাত ছাড়িয়ে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম ছেড়ে। পায়ে পড়েও কি তার মন গলাতে পারলো না, ভাবছে শারমায়া। সে হার মেনে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো। কেউ এসে তাকে এই অবস্থায় দেখলে কি ভাববে, সেজন্য দ্রুত উঠে বাথরুমে চলে গেলো। যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত করে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো অনেক্ক্ষণ। কাঁদতে না দেখলেও তার চেহারা দেখে ঘরের সদস্যদের বুঝতে বাকি নেই সে কেঁদেছে। তবে তাদের ধারণা, বাবামায়ের কথা মনে করে কেঁদেছে সে।
রাত দশটা বাজতেই শারমায়াকে খায়িয়ে ঘুমানোর জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এদিকে সে খাটে হেলান দিয়ে বসে নিরবে অশ্রু ফেলে যাচ্ছে। জোভান রুমে এসেছে প্রায় এক ঘন্টা পর। সন্ধ্যায় যে বেরিয়েছে, আর দেখা পাওয়া যায়নি তার। এখন ঘরে ফিরেছে ক্লান্ত বেশে। দেখতে সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক লাগছে তাকে। দরজা লাগাতে লাগাতে কেমন অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো শারমায়ার দিকে। শারমায়ার ভেতরটা যেন মোচড় দিয়ে উঠলো। নিভু নিভু দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে আসছে জোভান। শারমায়া বিছানা ছেড়ে নেমে দাঁড়ালো। জোভান নিকটে এসে হাত বাড়িয়ে শারমায়ার মাথাটা কাছে এনে ঠোঁটে উষ্ণ ছোয়া দিতে গেলে শারমায়া হালকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো,
“কি হয়েছে তোমার?”
জোভান খুব শান্ত গলায় জবাব দিলো,
“কিছু হয়নি।”
“কি খেয়েছো?”
“কিছুই খাইনি।”
জোভান আবার এগিয়ে এলে শারমায়া তাকে আবারও ঠেলে দিয়ে গলার আওয়াজ সামান্য উঁচু করে বললো,
“এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে? কি খেয়েছো তুমি?”
জোভান তাকে ছেড়ে দিয়ে প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেট এবং ফোনটা বের করে খাটে আছাড় মেরে জিদ্দি গলায় বললো,
“কিচ্ছু খাইনি আমি! ইফাজের সাথে ছিলাম। বিশ্বাস না হলে কল করে জেনে নাও তার কাছে।”
জোভান তোয়ালে নিয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো বাথরুমে। দরজাটা জোরে ধাক্কা দেওয়ায় শব্দের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু লক করেনি, বুঝাই যাচ্ছে। শারমায়া তার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে ছলছল চোখে তাকালো খাটে ফেলা ফোনের দিকে। ওদিকে দরজা লক না করায় পানির শব্দ ভেসে আসছে। এই রাতের বেলা কি সে শাওয়ার নিচ্ছে! অতঃপর ধীর পায়ে হেটে হেটে শারমায়া চলে এলো বাথরুমে। দরজা ঠেলে প্রবেশ করতেই দেখলো জোভান যেভাবে এসেছে বাইরে থেকে সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে ঝর্নার নিচে। শারমায়ার চোখ থেকে টুপটাপ অশ্রু গড়াচ্ছে। সে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
“তোমাকে বিশ্বাস করতে তৃতীয় ব্যক্তির সুপারিশের প্রয়োজন নেই আমার। তুমি কি কেঁদেছো?”
প্রত্যুত্তর না করে জোভান শান্ত গলায় প্রশ্ন ছুড়লো,
“কেন করলে এমন?”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here