হিমি
লেখনী- সৈয়দা প্রীতি নাহার
৫৮.
খাটের কোনায় ঝিম ধরে দাঁড়িয়ে আছে হিমি। তাহির হাসপাতাল থেকে ফিরেছে প্রায় এক ঘন্টা হলো। এই এক ঘন্টা যাবতই হিমি দাঁড়িয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে তাহির তাকে নিশ্চুপ হয়ে এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আসলে তা নয়। হিমির কেবিন থেকে বেরুনোর পর থেকে এখন অব্দি একটা কথাও বলে নি তাহির। বাড়ি ফিরে যখন হিমির ভয়ার্ত চেহারা দেখেছে তখনও বলে নি। এখনো বলছে না। দিব্যি নিজের কাজ সেরে নিচে ডিনার করতে চলে গেছে। তবে তাহির নিচে নেমে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে হিমি। তার মনে হতে লাগলো এতক্ষনে দম নিতে পেরেছে সে। হিমি তাড়াহুড়া করে মুঠোফোন উঠিয়ে মোজাম্মেল সাহেবের নাম্বারে ডায়াল করলো। রিং হওয়া মাত্রই রিসিভ হলো কল। মোজাম্মেল সাহেব উচ্ছ্বাসিত গলায় বললেন,
“কেমন আছিস মা?”
“একটা ভুল করে ফেলেছি জ্যাঠুমনি।”
“ভুল! কি ভুল?”
“আমি ওনাকে সব বলে দিয়েছি।”
হিমির কথার আগামাথা বুঝলেন না মোজাম্মেল সাহেব। বললেন,
“কাকে কি বলে দিয়েছিস?”
“ওনাকে। মানে বাচ্চা ডাক্তারকে। আমি ওনাকে বলে দিয়েছি যে সামিয়াকে আমি পালাতে সাহায্য করেছি। এমনকি আমিই ওকে পালাতে বলেছি।”
“কেনো বলেছিস?”
“আমার কেমন জেনো লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো খুব বড় ভুল করেছি। আর ভুলটা ওনার থেকে গোপন রেখে আরো ভুল করছি। তাই না পেরে বলে দিয়েছি। কিন্তু বলার পর বুঝেছি না বলাই ভালো ছিলো। সব সত্যি বলে ভুল করে ফেলেছি।”
মোজাম্মেল সাহেবের গলা কড়া হলো,
“ভুল আর ভুল। আগে তো এমন ছিলি না হিমি। যা মন চাইতো তাই করতি। কাউকে কোনো কৈফিয়ত দিস নি। ভালো খারাপ যাই হতো নিজেই সামলে নিতে পারতি। তাহলে এখন কেনো পারছিস না? ভুল স্বীকার করছিস ভালো কথা কিন্তু গন্ডগোল করে ফেলছিস কেনো?”
“আমি জানি না জ্যাঠুমনি। কি করতে কি করে ফেলছি বুঝতে পারছি না। প্লিজ হেল্প করো না!”
“কি হেল্প?”
“বাচ্চা ডাক্তার আমার সাথে কথা বলছেন না। উনি রেগে আছেন কি না তাও বুঝছি না। তবে যখন আমি ওসব বলেছিলাম তখন তিনি রেগে গেছিলেন। আমায় কেবিন থেকে চলে যেতেও বলেছিলেন। তারপর থেকে একটা শব্দও বলেন নি।”
“ও তোর সাথে কথা বলছে না মানেই তো ভয়ঙ্কর রেগে আছে। রেগে থাকারও কথা।”
হিমি তাড়াহুড়া করে বললো,
“না না জ্যাঠুমনি। ওনার কথা বলা না বলার পেছনে রাগ মূখ্য নয়। মূখ্য হচ্ছে কষ্ট। উনি কষ্ট পেয়েছেন বলেই কথা বলছেন না। রেগে থাকলে বলতেন।”
“রেগে থাকলে কথা বলতো?”
“হ্যা। উনার রাগ এমন যে কেউ ধরতে পারে না। খুব স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেন। আজ বলছেন না। এর মানে উনি রাগ করেন নি। তবে কষ্ট পেয়েছেন। নিশ্চয় আমার থেকে এমনটা আশা করেন নি বলে কষ্ট পেয়েছেন নয়তো ওনাদের অপমানের পেছনে আসল দায়ি আমি বলে কষ্ট পেয়েছেন। দুটো কাজই আমি করেছি। তাই হয়তো কষ্টটা বেশি।”
থম মেরে গেলেন মোজাম্মেল সাহেব। হিমিকে কখনো এতোটা ভাবতে দেখেন নি তিনি। এতোটা বুঝদারও ছিলো না সে। পরিবর্তন প্রকৃতির নিয়ম। হিমিও সেই নিয়মে পা মিলিয়েছে দেখে ভালো লাগছে মোজাম্মেল সাহেবের। হিমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,
“ভয় হচ্ছে জ্যাঠুমনি।”
“কিসের ভয়? তুই তো বললি মনের ডাক্তার রাগ করে নি। যেহেতু রাগ করে নি তাহলে তেমন কিছু হওয়ার কথা নয়। ভয় পাবি কেনো?”
“রেগে থাকলে তো ভয় পেতাম না। ওনার রাগ ভাঙাতে পারতাম। কি করে কি করেছি, কেনো করেছি সবটাও বলতাম। উনি তো কষ্ট পেয়েছেন। আমার দিকে তাকাচ্ছেনও না। ইগনোর করছেন। কি করে কথা বলবো? কথা না বললেও যে উনি আগ বাড়িয়ে কথা বলবেন না। ভয় হবে না?”
তটস্থ হলেন মোজাম্মেল সাহেব। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“আমি জানতাম হিমি কাউকে ভয় পায় না। হিমি দাদুকে ভয় পায় না, চাচামনি ছোটমাকে ভয় পায় না, মামানিকে ভয় পায় না। কিন্তু তুই তো দেখছি ভয় পাস। ভয়ানক ভয় পাস। তাও আবার নিজের বরকে।”
ভরাট গলায় জবাব এলো,
“আমি ভয় পাই জ্যাঠুমনি। সব সময়ই ভয় পাই। তোমরা কেউ বুঝোনি। আমিও বুঝতে দেই নি। আমি দাদুকে যতোটা না ভয় পাই তার চেয়ে বেশি ভয় পাই বাবাকে। আমার ভয় হয় কখন মায়ের মতো বাবাও আমায় ফেলে চলে যায় আর যাওয়ার আগে একবার আমায় আদর না করে। বাবার ভালোবাসা কখনো পাবো কি না সেটা ভাবলেও আমার ভয় হয়। মামানিকে ভয় পেতাম ছোটবেলায়। বড় হতে হতে ভয় কেটে গেছে। সত্যি বলতে এখন মামানির জন্য অনুভুতিই নেই। আমার মনেই হয় না মামানি বলতে ব্যক্তিটি আমার জীবনের অংশ। চাচামনিকে শেষবার তখন ভয় পেয়েছিলাম যখন পরীক্ষায় ফেইল করার জন্য ওনার থেকে বেতের বারি খেয়েছিলাম। তারপর থেকে রাগ হয়। ভয় হয় না। আর ছোটমা! আমার অদ্ভুত লাগে ওই মানুষটাকে। বিরক্ত লাগে। ভয় লাগে না।”
“মনের ডাক্তারকে কেনো ভয় পাচ্ছিস?”
“ওনাকে ভয় পাচ্ছি না তো। ভয় পাচ্ছি ওনার কষ্ট থেকে সৃষ্ট ঘৃণাকে। আমার মনে হচ্ছে অতি শিঘ্রই উনি আমায় ঘৃণা করবেন। আমার উপর বিরক্ত বোধ করবেন। অবিশ্বাস করবেন। ওনার আরা আমার মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ছাড়া আরো একটা অদৃশ্য সম্পর্ক আছে। বিয়ের আগেই হয়তো সেই সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বুঝি নি। তবে এখন বুঝছি। আমি চাই না কোনোভাবে সেই সম্পর্ক নষ্ট হোক। আমি যাই চেয়েছি তাই হারিয়েছি। বার বার আফসোস করেছি। কখনো কখনো দোষারোপ করেছি অন্যকে। অথচ শুধু এই মানুষটাকেই কেনো জানি আমার মনে হয়। মনে হয়, আমি ওনাকে চেয়েছিলাম। পেয়েছি। প্রথমবারের মতো নিজেকে সুখী মনে হয়েছে। হচ্ছেও। আমি চাই না এই সুখটা চলে যাক। জ্যাঠুমনি? আমার ভয় হয় কখন আমাকে ওনার ঘৃণার বস্তু মনে হয়। কখন না আর সবার মতো আমাকে ফেলনা ভেবে বসেন। আমি বাবার কাছে ফেলনা হয়েও শক্ত থেকেছি। কিন্তু বাচ্চা ডাক্তারের কাছে ফেলনা হয়ে গেলে আর পারবো না। বিশ্বাস করো। আমার খুব অদ্ভুত লাগছে। হাত পা কাঁপছে। কান্না পাচ্ছে। নিজেকে ভীষন অপরাধী লাগছে জ্যাঠুমনি।”
হিমির প্রত্যেকটা কথা মন দিয়ে শুনলেন মোজাম্মেল সাহেব। ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বললেন,
“কি করতে হবে বল। দেখি তোর বাচ্চা ডাক্তারের মন হালকা করতে পারি কি না।”
হিমি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো,
“তোমায় ওনার সাথে কথা বলতে হবে। ওনাকে সবটা বলতে হবে। আমি বুঝিয়ে বলতে পারবো কি না জানি না। তাই বলছি তুমিই বলে দিও। তুমি তো সব জানো। ঠিকমতো বুঝিয়ে বলবে কিন্তু। তারপর ওনাকে বলবে যে, দোষ আমার। তাই যেনো আমায় বকেন। রাগ করেন। বাকিটা আমি সামলে নেবো। উনার মন একবার হালকা হলেই আমার সাথে কথা বলবেন। আমি তখন মাপ চেয়ে নেবো। রাগ ভাঙাবো, সরি বলবো। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। বলবে তো জ্যাঠুমনি?”
মোজাম্মেল সাহেব ঘোরে চলে গেছিলেন। হিমির প্রশ্নে ঘোর কাটে তার। ব্যস্ত হয়ে বলেন,
“অবশ্যই বলবো। তুই বলেছিস মানে বলতে হবেই। এক্ষুনি ফোন করছি আমি। দেখি কি করে রেগে থাকে সরি মানে কষ্ট পেয়ে মুখ ভার করে থাকে! ওর মন প্রাণ সব সতেজ করে দেবো। রাগও করবে না তোর উপর। আমার সাথে কথা বলার পর পরই দেখবি কেমন স্বাভাবিক হয়ে যাবে মনের ডাক্তার। হাসবে। হেসে হেসে কথা বলবে তোর সাথে। তুই এতো ভাবিস না।”
“হুম। কিন্তু তুমি এখন ফোন করো না। উনি ডিনার করছেন। পরে করো।”
“বেশ। তুই ডিনার করেছিস?”
“না। খিদে পায় নি।”
“খিদে পাবে না কেনো? মানুষের খিদে পাবে স্বাভাবিক। খিদে না পাওয়া হলো অস্বাভাবিক। তুই মানুষ হয়ে তোর খিদে পাচ্ছে না? এটা তো অস্বাভাবিক ঘটনা হিমি! এই অস্বাভাবিকতা, অসামঞ্জস্যতা মেনে নেয়া যায় না। তুই খেতে যা। জোর করে হলেও খেয়ে নে।”
_____________________
ব্যালকনির রেলিংএ এক হাত রেখে ফোনে কথা বলছে তাহির। শোবার ঘর অন্ধকার। হিমি ঘুমাচ্ছে। তার ঘুমে ডিস্টার্ব হবে ভেবেই ফোন এট্যান্ড করতে বাইরে এসেছে তাহির। ফোনের অপর প্রান্তে মোজাম্মেল সাহেব কথা বলছেন।
“হিমির উপর রেগে আছো?”
“জি না। আমি রাগ করি নি।”
“হিমিও তাই বলেছে। আমার বিশ্বাস হয় নি। কারন, আমার যতদূর মনে হয় হিমির কনফেশন শুনে তোমার রেগে যাওয়া উচিত ছিলো। রাগলে না কেনো?”
“রাগার কোনো কারন খুঁজে পাই নি। তবে ওনার কথা শুনে অবাক হয়েছি। আমার কাছে ওনার কাজ গোলমেলে লেগেছে। আমি বুঝতে পারছি না কি ভাবে রিয়েক্ট করবো। ওনার সাথে কথাও বলতে পারছি না। আটকে যাচ্ছি। অস্বস্তি হচ্ছে।”
“তোমায় আমি মনের ডাক্তার বলে সম্বোধন করি বলে কিছু মনে করো না তো?”
“জি না। আপনার যা ইচ্ছা ডাকতে পারেন।”
আশ্বস্ত হলেন মোজাম্মেল সাহেব। ছোট্ট শ্বাস ফেলে রকিং চেয়ারে বসে বললেন,
“মনের ডাক্তার? আমি জানি, হিমির কাজে তুমি কষ্ট পেয়েছো, অপমানিত হয়েছো বুঝতে পারছি। আমি মানি হিমি যা করেছে তা ঠিক করে নি। কিন্তু তোমার বিয়ে আটকানোর আর কোনো রাস্তা ছিলো না ওর কাছে। বাধ্য হয়েই করেছে।”
তাহির বিস্মিত হলো। বললো,
“আমার বিয়ে আটকানোর পেছনে ওনার কি স্বার্থ ছিলো সেটাই তো বুঝতে পারছি না আঙ্কেল। কি এমন কারন যার জন্য কনেকে পালিয়ে যেতে পরামর্শ দিলেন তিনি?”
“তোমায় একটা গোপন কথা বলি। টপ সিক্রেট। কাউকে বলো না যেনো। বিশেষ করে হিমিকে। আমি আর আমার স্ত্রী, হিমির বড়মা, হিমিকে যতোটা চিনি ততোটা হয়তো ওও নিজেকে চিনে না। কথাটা বলার কারন হচ্ছে হিমির স্বার্থ সম্পর্কে আমরা অবগত। হিমি ভালোবাসার কাঙাল। আজীবন ভালোবাসা চেয়েছে। আপন মানুষদের থেকে ভালোবাসা না পেতে পেতে এতোটাই ভেঙে গেছে যে কাউকে কাছে পেলেই আকড়ে ধরতে চায়। তোমার কি মনে হয় বলোতো! হিমি কেনো তোমার বিয়ে আটকাতে চাইছিলো?”
কয়েক সেকেন্ড মতো ভেবে তাহির জবাব দিলো,
“বলতে পারছি না।”
“হিমি তোমাকে ভালোবাসে। তোমাকে চাইতো বলেই অন্য কারো সাথে তোমাকে জড়িয়ে যেতে দেখতে চায়নি। তোমার স্ত্রী ভীষন বোকা। ও জানে না ও তোমায় ভালোবাসে। তখনও জানতো না। তোমার বিয়ের দুদিন আগে মাঝরাতে হঠাৎ আমায় ফোন করে বলে তার কান্না পাচ্ছে। কারন জিজ্ঞেস করায় বললো তুমি তার ফোন তুলছো না। কথা বলছো না। তাই তার কষ্ট হচ্ছে। আমি বুঝতে পারছিলাম তুমি তার থেকে দূরে চলে যাচ্ছো বিষয়টা মেনে নিতে পারছে না সে। তাই বলেছিলাম তোমার বিয়ে হয়ে গেলে তুমি তাকে আরো সময় দেবে না। কথা বলবে না। নিজের স্ত্রীর তুলনায় হিমি তুচ্ছ। হিমিকে ভাবতে বাধ্য করেছিলাম ও তোমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আফসোস। বোকা মেয়েটা বুঝে নি। আর বুঝে নি বলেই কনেকে পালিয়ে যেতে বলেছিলো। প্ল্যান করে কনেকে বিয়ের আসর থেকে সরিয়ে দিয়েছে। ওর ধারনা ছিলো কনে চলে গেলে তোমার বিয়ে হবে না। তুমি আবার তার সাথে কথা বলবে। সময় দেবে। হিমি সেটাই চাইছিলো। ও তোমাকে ভালোবাসে বলেই তোমাকে নিজের করে রাখতে চায়। ও চায় যেনো তুমি ওকে ভালোবাসো। ওকে আপন করে রাখো। হিমি কখনোই তার এক্সপেক্টেশন অনুযায়ি কিছু পায় নি। অথচ তোমায় পেয়েছে। এক্সপেক্ট করেছিলো হয়তো মনে মনে। পেয়ে যাবে ভাবে নি। যখন পেয়েই গেছে তখন সারাজীবনের পেতে চায়। তুমি ওর ভালোবাসা বুঝো না?”
তাহির নিঃশব্দে পায়চারি করলো ব্যালকনিতে। কোনো জবাব দিলো না। নিজে থেকেও কিছু জানতে চাইলো না। মোজাম্মেল সাহেব বললেন,
“আরো একটা সিক্রেট বলি তোমায়। তুমি জানো হিমি কেনো ছেলেদের পোশাক পরতো? জানো না নিশ্চয়! শুনো, ওর যখন বয়স চার বা সাড়ে চার তখন ও জানতে পারে ওর বাবা মা ওকে ভালোবাসে না। ওর বাবা মা ওকে চায় নি। ওর ছেলে বাবু চেয়েছিলো। মেয়ে হয়েছে বলেই ওকে ফেলে চলে গেছে সবাই। কেউ ওকে পছন্দ করে না। ছোট বউ মানে হিমির ছোটমা এসব ওকে বুঝিয়েছে। আমি ভীষন রাগারাগি করেছি ছোটবউ এর উপর তখন। আমিনা আর আমি হিমিকে বুঝিয়েছি এসব মিথ্যে। ওর বাবা ওকে ভালোবাসে। হিমি মানে নি। ওর চোখের সামনে তখন এক ট্রাঙ্ক ভর্তি ছেলে শিশুদের জামা কাপড়। খেলতে গিয়ে স্টোর রুমে সেসব দেখেছে সে। জামা কাপড়গুলো মুহিব আর হাফসার কেনা ছিলো। হিমি বিশ্বাস করে নিলো ওর বাবা মা ওকে চায় নি। ছেলে চেয়েছে। এসব পোশাক ছেলের জন্য কিনেছে। হিমির ধারনা হলো ও যদি ছেলে হয়ে যায় তবে মুহিব ওকে ভালোবাসবে। ব্যস! ওই মুহুর্তে ট্রাঙ্ক থেকে জামা প্যান্ট বের করে পরার বায়না ধরলো। ওইসব জামা নবজাতকের জন্য ছিলো। হিমির পরার উপযুক্ত ছিলো না। কিন্তু তার জেদ ভয়ঙ্কর। নিহানের জামা পরবে না। নিজের জামা চাই। ওর বাবার কেনা জামা চাই। রাতের বেলা বৃষ্টি মাথায় ছুটে গেছি ছেলেদের জামা কিনতে। কিনেওছিলাম। বাড়ি ফিরে ওকে বলেছি ওর বাবা কিনে দিয়েছে। হিমি খুশি হয়েছিলো। কান্না থামিয়ে হেসেছিলো। ছেলেদের পোশাক পরে লাফিয়ে বেরিয়েছে। পরদিন নতুন আবদার। চুল কাটবে। নিহানের মতো ছোট ছোট চুল হলে ও ছেলে হয়ে যাবে। আমরা কেউ মানি নি। ওর দাদু ভীষন বকেছিলেন। মেয়ে কারো কথা শুনলে তো! নিজে নিজেই কাচি দিয়ে কেটে দিয়েছিলো কাঁধের উপর থাকা চুল। বিকেলে সেলুনে গিয়ে চুল ছাটিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর থেকে এটাই তার অভ্যাসে পরিণত হলো। হিমি ভাবতো ছেলেদের পোশাক আর ছেলের মতো চুল থাকলেই সে ছেলে হয়ে যাবে। ধীরে ধীরে নিজের খেলনা পাল্টে ফেললো। চলা ফেরা পাল্টালো। ওর বাবা যেদিন ফিরলো সেদিন খুব আগ্রহ নিয়ে মুহিবের সামনে দাঁড়িয়েছিলো হিমি। মুহিব চিনে নি। বাবা যখন বললো ও মুহিবের মেয়ে হিমি। তখন মুহিব কোনো প্রতিক্রিয়া করে নি। উঠে ঘরে চলে গেছিলো। হিমির অভিমান হলো। মুহিবের প্রতিদিনকার ব্যবহার হিমির অভিমান বাড়িয়ে দিলো। তবুও বাবার ভালোবাসা পাওয়ার আশা ছাড়ে নি। বাবার উপর যতো রাগ অভিমান থাকুক না কেনো কখনোই বাবার মুখের উপর কথা বলে নি। মুহিব ইন্ডাইরেক্টলি কথা বলতো হিমির সাথে। হিমি সব কথা রাখতো। শুনতো। কথা উল্টায় নি। চুপ করে থেকেছে। তার হাজারও জেদ মুহিবের কথা ভেবে চুপসে গেছে। ভাবতে পারছো তার ভালোবাসার আকাঙ্খা কতোটা প্রগাঢ়?”
চলবে,,,,,,,,