হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে পর্ব:১৪

0
970

উপন্যাস :হিয়ার মাঝে-লুকিয়ে ছিলে।

কলমে:চন্দ্রা।

পর্ব:১৪

ড্রেসিং টেবিলের সামনে ঝুঁকে কিছু একটা করেছিলো রিতি।তিতলিকে এইমাত্র রাহুলের সাথে বাইরে মন্দিরচত্বরে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে ভেসে আসছে সানাইয়ের নানান রকমের সুর।মা দশভূজার আগমনী বার্তা।

তোর হাতে কি হয়েছে রে?

রিতি মুখ তুলে তাকায়,

কি হবে?হাত তো ঠিকই আছে! নিজের হাত ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখায় বিরূপাক্ষকে।

অহ,আমি ভাবলাম আবার কিছু হলো নাকি?ক্ষীরের শরীর কি না? তাচ্ছিল্য প্রকাশ পায় বিরূপাক্ষের কথায়।

এই সাত সকালে না লাগলে চলছে না বুঝি?
মায়ের আগমনের সাথে নতুন দিনের সূচনা হবে। আপনি ক্যানো পরে আছেন পুরোনো ভুল ত্রুটি নিয়ে।ওসব ভুলে যাওয়া যায় না?কে কবে শত্রু ছিলো আর কে বন্ধু এত মাপামাপি না করে সামনে যে আছে তাকেই ক্যানো শুভাকাঙ্ক্ষী ভাবছেন না।রিতি স্বাভাবিক ভাবেই বললো কথাগুলো, বিরূপাক্ষ সেটা বুঝতে চাইলো না।কারন ওর মস্তিষ্কের ফ্লাসব্যাকে এখনো রিপিট চলছে ভোরে মন্দিরের পাশের বেলতলা টা।তাই রিতির কথায় পাত্তা না দিয়ে বললো সামান্য ঝাঁঝ মেখে,,
ও হো,,তাই বুঝি। প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা তো সবজায়গাতেই দিদিমনি গিরি ফলাতে হবে?সবাই তোর শুভাকাঙ্ক্ষী?এজন্যই চেনা নেই জানা নেই যে কাউকে দিয়ে,যেকোনো সময়ে,যেকোনো জায়গায় নিজের চুলে ক্লিপ ও লাগিয়ে নিচ্ছিস? ব্লাউজের বোতাম টা ও লাগিয়ে নিস না ক্যানো?তোর না হয় চক্ষুলজ্জা কম,তাই বলে সবাই কে নিজের মতো ভাববি? নিজের জুতার ফিতে খুলতে খুলতে কথাগুলো বলছিল বিরূপাক্ষ। দৃষ্টি তার জুতার দিকেই ছিলো না হলে দেখতে পেতো তার এই অত্যন্ত নিচু ইঙ্গিত পূর্ণ কথায় কারো কান,চোখ এমনকি সারা মুখে অপমানের গাঢ় কালিমা লেপে দিলো।
রিতি আর কোনো প্রকার বাক্য ব্যয় করার জন্য তৈরী ছিলো না! মানুষটাকে ঘৃনা করতে গিয়েও ব্যার্থ হয় বার বার। তাই নীরবে বেরিয়ে গেলো ঘড় থেকে।এই বাদ দশায় সে বিরূপাক্ষ ক্যানো কারো সাথেই রুঢ় আচরণ করতে চায়না।শক্ত বাক্য প্রয়োগ করতে চায় না কারো সাথে।
এদিকে রিতিকে বিনা তর্কে এড়িয়ে যেতে দেখে ইগোয় লাগলো বিরূপাক্ষের। নিজের একটা জুতা জোড়ে ছুড়ে মারে শূন্যে।সাথে সাথে কাঁচের কিছু ভাঙার আওয়াজ আসে। তাকিয়ে দেখে একটা কাঁচের প্লেট মেঝেতে পরে ভেঙ্গে তিন চার খানা অথবা তারো বেশি খন্ড হয়েছে।আর আশেপাশে ছড়িয়ে আছে কতগুলো ছোট ছোট পিস করে কাটা আপেল,শশা,কিছু আঙুর।

রিতি আজ উপবাস। কিন্তু নির্জলা নয় । ফলাহার সে করতে পারবে। রঘুনাথ,জয়া,এমনকি বড়োমার কথাও শোনেনি।তাদের শত বারণ অমান্য করে উপোস করে আছে।রাতে পূজার শেষে ভাঙবে উপোস। অন্নপূর্ণা দেবী নিজের হাতে এগুলো দিয়ে পইপই করে বলে গিয়েছেন খেয় নিতে কিন্তু রিতি খায়নি এখনো।এখন আর খাওয়ার যোগ্য থাকলো না।

এই কমলার জুসটা অহনা কে দিয়ে আয়তো কাজল!

আজ্ঞে যাই বড়মা।জুসটুকু নিয়ে অহনার জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষের দিকে যায় কাজল।কাজল এই বাড়ির অস্থায়ী কাজের মেয়ে।সরলার ভাইয়ের মেয়ে।বয়স বাইশ কিংবা তেইশ হবে হয়তো।যখন চৌধুরী বাড়িতে বাড়তি কাজের মানুষ দরকার পরে তখন সরলা সুযোগটা লুফে নেয়।
রন্ধনশালায় বেশ কয়েকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেলো রিতি।ডাইনিং টেবিল থেকে একগ্লাস জল খেলো ঢক ঢক করে।আজ রান্না করছেন অন্নপূর্ণা দেবী নিজেই। ভালো রাঁধেন তিনি।বাড়িতে আত্মীয় স্বজন বেশী হলে জয়ার উপরে অতিরিক্ত চাপ দিতে চাননা,তাই নিজ হাতে কিছু কিছু রান্না করেন।রিতিকে কিচেনে ঢুকতে দেখে বললেন তিনি,কি রে মা,খেয়েছিস ফলটুকু?

হুম খেয়েছি।

মুখটা ভার ক্যানো আমার বোনটার?পাশ থেকে বললো জয়া।

কোথায় মুখ ভার ?আমি তো দেখতে এরকমই বলো বড়মা?

ভারী তো বটতলার সাক্ষী করছিস!সত্যিই তো মুখটা অমন করে রেখেছিস কেন?

তুমিও বড়োমা?হাসি ফুটে উঠল রিতির ঠোঁটে।

যাই বলুন দিদি বৌমা কিন্তু ভারী মিষ্টি হয়েছে আপনার।দেখলেই প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। আমার অহনটাও ঠিক এমন‌‌।রিতির থুতনীতে হাত দিয়ে বললেন, মিসেস দেবনাথ। নিহার রঞ্জন আঙ্কেলের স্ত্রী মোহিনী দেবনাথ।ভদ্র মহিলা পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে।তবে নিহার আঙ্কেলের মতো অমন দিলখোলা টাইপের নয়।একটু যেনো ইগো গায়ে স্প্রে করে চলেন সবসময়ে। কথা যাই বলুক না ক্যানো সাথে তার ছেলে মেয়ের উপমা টানবেন ঠিকই।তবে প্রথম দর্শনে পোশাক পরিচ্ছদে যতটুকু টুকু খোলা মেলা ভেবেছিলো সবাই ততটাও নয়। হাতাকাটা অতিমাত্রায় কম কাপড়ের ব্লাউজের সাথে পাতলা ফিনফিনে নামমাত্র শাড়িতে রিতি ভেবেছিলো রাহুলের মতো অমন গোছালো সংযমি ছেলেটার মা কোনোমতেই ভাবা যায় না তাঁকে আর গ্রামের মহিলারা না জানি কতকিছুই বলবে আড়ে আবডালে। কিন্তু না এমন কিছুই হওয়ার সম্ভাবনা রইলো না আর।এবাড়িতে ঢুকেই তিনি স্যালোয়ার কামিজে আবৃত করে নিয়েছেন কড়া ডায়াটিংয়ের কৃপায় ফিট রাখা হালকা মেদযুক্ত শরীরটাকে।

মোহিনী আন্টির কথায় কোনো ভাবান্তর হলো না রিতির।

দোতলার বারান্দা থেকে উচ্চ স্বরে ডাকলো বিরূপাক্ষ,,বৌদিদি,,বৌদিদি,,
জয়া তড়িঘড়ি কিচেনে থেকে বেরোলো,,,

কি হয়েছে ভাই,,

এক কাপ কফি কি পেতে পারি ?নাকি বাড়িতে সবার জন্য উপোস বাধ্যতা মূলক করা হয়েছে?
বিরূপাক্ষের এত রাগের কারনটা খুঁজে পেলো না জয়া। হেসেই বললো,,তা ক্যানো ভাই, পাঁচটা মিনিট দাও আমি এক্ষুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি। বিরূপাক্ষ রাগে গজগজ করতে করতে ফিরে গেলো নিজের ঘড়ে।
অন্নপূর্ণা দেবী বললেন মোহিনী দেবীকে,,ছেলেটা ছোট থেকেই একটু চঞ্চল, কিন্তু এমন রগচটা স্বভাবের ছিলো না দিদি।
কি জানি বাবা আজকাল বুঝিনা ছেলের মন মর্জি।

মামীমা, কি এমন বললো ভাই,,এমন ভাবে বলছো ক্যানো?একটু কফি ইতো চাইলো।নাকি দরকারে কিছু চাইতে ও পারবে না ছেলেটা?বিরূপাক্ষের সপক্ষে যুক্তি দিতে ব্যস্ত জয়া।

হ্যা হ্যা তোলো আরো মাথায়। কিচ্ছুটি তো বলার জো নেই।ঢাল হয়ে দাঁড়াবে হয় বৌদিদি নয়তো দাদাভাই।আমার কি আমি আর কতদিন?বুঝবে ঠ্যালা?নিচু স্বরে অসন্তোষ প্রকাশ করেন অন্নপূর্ণা দেবী।
জয়া মৃদু হাসলো,কে বলেছে তোমাকে বুঝতে?আমরাই বুঝে নেবো বুঝলে?দেখো আবার মনের ক্ষোভ যেনো রান্নার উপর না পরে মামী মা,,, অন্নপূর্ণা দেবী বুঝলেন তাকে ক্ষেপানোর চেষ্টা চলছে।এই মেয়েটাকে দু চারটে কটুকথা বললেও হেসে উড়িয়ে দেবে নিজের আপন মহিমায়,তাই আর দিরুক্তি না করে নিজের কাজে মন দিলো।

এই নে ধর, এটা ভাইকে দিয়ে আয় তো।
কফির মগটা রিতির দিকে এগিয়ে ধরে জয়া।রিতি দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিলো।দ্রুত বলে উঠলো,,
তুমি যাওনা ক্যানো বৌদিদি?এই তো সবে এলাম।

জয়া চোখ পাকিয়ে মোহিনী আন্টিকে ইঙ্গিত করে।মুখে বলে,একটু পরে মামাবাবু গুরুদেবকে নিয়ে উপস্থিত হবেন।কত কাজ বাকী বলতো?আমি এদিকটা সামলে নিই।তুই যা তো।নিরুপায় রিতি অগত্যা পা বাড়ায় দোতলার উদ্দেশ্যে।বড়োমা,জেঠুকে কথা দিয়েছে বাইরের কাউকে ঘড়ের কথা জানতে দেবেন না। কিন্তু তিনি তো সুযোগ পেলেই ঝাল ঝাড়ছেন আর তার ভূক্তভুগী হতে হচ্ছে রিতিকে। যেতে যেতে শুনলো মোহিনী আন্টি বলছেন,, আজকাল কার ছেলে মেয়েরা একটু আধটু অমন হয় দিদি।এত মন খারাপ করলে চলে?তবে আমার ছেলেটা হয়েছে একদম সোনার টুকরা।যা বলবো তাই শুনবে।মেয়েটা যা একটু,,
হ্যা নিজের গুলো সব সোনার টুকরা আর অন্যেরটা তো ছাইয়ের গাদা! মনে মনে বললো রিতি।

মামিমা আমি তাহলে গনেশ কে ডেকে বলি কাউকে নিয়ে সোফা সেট গুলো সরিয়ে রাখুক? বসার ঘরে বিছানা পেতে গুরুদেবের আসনখানা করে দেই? কড়াই থেকে শাক ভাজি টুকু নামাতে নামাতে বললো জয়া।

হ্যা মা তাই কর। আমার হয়ে এলো প্রায়।আর মামাকে ফোন করে একবার জেনে নিস কতদূর এলো।
জয়া ভাজির বাটিটা নিয়ে ডাইনিং এর দিকে ছুটলো সাথে মোহিনী দেবীও বেরোলেন কিচেন থেকে। ছেলেটার সেই সকাল থেকেই দেখা পাওয়া যাচ্ছেনা।বাইরে মন্দিরে নিচু স্বরে গান বাজছে মাইকে। সেখান থেকেই হাজির হলো অহনা সাথে তিতলি।

বিরূপাক্ষ ফোন স্ক্রল করছিলো একধ্যানে।রিতির আগমন টের পেয়ে বৃদ্ধা আঙুলের গতি বাড়লো কিছুটা।
আপনার কফি,, মৃদু স্বরে বলল রিতি। কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কোন প্রতিক্রিয়া নেই তার মধ্যে।

এ বাড়িতে আর কারো কফির মগ ধরার নিয়ম উঠে গিয়েছে নাকি?সবসময় তোকেই আনতে হবে কফিটা?নাকি সবসময় আঠার মতো লেগে আছিস সিম্প্যাথি পাওয়ার জন্য?ফোনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই বললো বিরূপাক্ষ।

স্পষ্ট কটাক্ষ গায়ে মাখলো না রিতি,,
আমি আনলে কি সমস্যা?আমি কি অচ্ছুত? নাকি আমার ছোঁয়া খেলে তোমার জাত যাবে?
কফির মগ বিরূপাক্ষের সামনে রেখে ভাঙা প্লেটের টুকরো গুলো এক জায়গায় জড়ো করতে করতে বললো রিতি।

বাড়িতে কাজের লোকগুলো কি মরেছে সব?নাকি ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে আছে?

বালাইসাঁট এমন দিনে অমন কথা মুখেও আনবেন না।ওদের সংসার,পরিজন আছে।

কতদিন চলছে তোদের এই রং তামাশা?সবাই জানে?নাকি চোখে ঠুলি পরিয়ে রেখেছিস সবার?রিতির দিকে তীক্ষ্ণ স্থির চোখে তাকিয়ে আছে বিরূপাক্ষ।
এমন ভিত্তিহীন অভিযোগে থমকে যায় রিতি। যথাসাধ্য সংযত করে নিজেকে,,

আপনার কথাটা ঠিক বুঝলাম না?

ন্যাকামো করবি না রিতি? রাহুলকে কতদিন ধরে চিনিস তুই?

রাহুল আমার একজন ভালো বন্ধু।কাউকে
মিছে সন্দেহে দোষী করবেন না।

ও হো,,তাইতো! একেবারে জানের জিগার দোস্ত তোর?তাইতো রাতে ডাইনিংয়ে চোখে চোখে ইশারা করতে দেখলাম।সকালে নির্জনে তোর চুল গুলো খোপা করতে দেখলাম। ভালো বন্ধু না হলে সেসব হয় বল?
বিরূপাক্ষ যে এত অবলীলায় এমন অপবাদ কাউকে দিতে পারে সেটা যেনো বিশ্বাস হলোনা রিতির। তবুও সে আর কথা বাড়ালো না।শুধু বললো,,এমন ভাবে বলবেন না।উনি শুনলে খারাপ ভাববেন।সত্যিই ভালো লোক তিনি।কথা বাড়াতে চায়না রিতি।ময়লা ঘাটলে শুধু দুর্গন্ধই ছড়ায়।তাতে কারোরই ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়না।
দুনিয়ার সবাই ভালো লোক, ভদ্রলোক আর আমিই শুধু অভদ্র তোর কাছে?সবাই তোর কাছের মানুষ আপনজন আর আমিই শুধু ফ্যালনা তাই না?

এতদূর ক্যানো ভাবছেন?আর রাগ কিসের আপনার আমার উপর?কি করেছি আমি?যা হয়েছে ভুলে ক্যানো যাচ্ছেন না?আর চার পাঁচটা দিনের ইতো ব্যাপার। তারপর তো আমি চলেই যাবো। আপনার কোনো কিছুতে বাঁধ সাধবো না আমি।আপনি থাকেন আপানার মতো আর আমি সামনে আসবো না।সবাই অবশ্য চায় কিন্তু আমি থাকতে আসিনি বিশ্বাস করুন।করুণ বিলাপের মতো শুনালো রিতির কথাগুলো তথাপি বিরূপাক্ষ নিজের বাক্য বাণ ছুঁড়তে ছাড়লো না,,

তাই? আমার পেছনে পরে থাকবি না?তো কাউকে পেয়ে গিয়েছিস বুঝি?সে রাহুল নয়তো?আমেরিকার সিটিজেন।জীবন বর্তে যাবে তোর।অবজ্ঞা ভরে বললো বিরূপাক্ষ।
রিতি চোখদুটো বন্ধ করে নেয়।টলমল জলটা পরেই তবে ছাড়লো।রূপদা শেষে ওকে ঐ দলের ছেলেভুলানো মেয়েদের দলে ফেললো?জোরে একটা শ্বাস ফেলে স্বাভাবিক করে গলাটা। ঠোঁটের কোনে নকল হাসি ঝুলিয়ে বললো,,
সে আপনি যা ভাবার ভাবুন। কিন্তু এখন এসব বাদ দিন না!বাদ দিয়ে দিন না স্মৃতির পাতা থেকে অনাকাঙ্খিত দিনটি।সেই ছোট বেলায় যখন আপনার পিছু পিছু ঘুরতাম মনে করুন না এখনো তেমন ঘুরছি । ভাবুন না আমাদের বিয়ে টিয়ে কিছু হয়নি।বিরূপাক্ষকে কনভিন্স করার চেষ্টা করে রিতি।এতে বিরূপাক্ষের রাগটা খানিক প্রশমিত হলেও রিতিকে আঘাত করার নতুন জাল বুনে ফেলে,,
ঠিক আছে মানলাম তোর কথা।কিন্তু তুই কি মানতে পারবি?এই আপনি আজ্ঞে না করে আগের মতো রূপদা বলে ডাকতে পারবি?

এই কথা?সে আমি ডাকবো। কিন্তু জ্যাঠামহাশয়,বড়োমা আবার ঝামেলা করলে। তবুও ডাকবো আগের মতোই রূপদা বলে।

আর শাঁখা সিঁদুর? ফেলতে পারবি?ফিচেল হাসে বিরূপাক্ষ।
রিতির ভেতরটা ভেঙে আসে সামনের মানুষটার এমন নিষ্ঠুর ধাঁচের কথা শুনে। কিন্তু বাইরে সে প্রকাশ করবে না ভেতরের ভাঙচুর,,
যতদিন না ডিভোর্স হয়। ততদিন না হয় থাকুক এগুলো।কি জানো তো রূপদা রাস্তাঘাটে চলতে গেলে সুবিধা হয় এগুলো থাকলে।সহজে কেউ নজর দেয় না।

বিরূপাক্ষ একমুহুর্তের জন্য থমকে যায় রিতির বিকারহীন কথাগুলো শুনে।মনে পরে সেই দিনের সেই চিঠিটার কথা।সেখানে লিখেছিলো,, কোনো দিন দেশে ফিরলে রিতিকে আইনি ভাবে মুক্তি দেবে ।তার মানেই তো ডিভোর্স। কথাটা মনে হতেই জালা করে ওঠে বুকের বা পাশটায়।এক অচেনা ভোঁতা যন্ত্রণা।যার কোন নাম নেই ভিত্তি নেই।

এত ভেবো না রূপদা। তুমি যাতে তোমার প্রতিজ্ঞা ঠিকভাবে রক্ষা করতে পারো , দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পিছুপা না হও তার ব্যবস্থা আমি করে দেবো।শুধু একবার বিশ্বাস করে দ্যাখো।আমি কথা রাখবো। আমার জন্য তোমাকে কষ্ট পেতে আমি দেবো না। তুমি সুখে সুখে জড়িয়ে থাকবে তোমার বনলতায় আর আমি শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে জল দিয়ে,যত্ন দিয়ে বাঁচিয়ে রাখবো তোমার বনলতাকে। একটুও আঁচ লাগতে দেবো না কখনো তার গায়ে।সে থাকবে চিরহরিৎ।
রিতি উঠে এসে দাঁড়িয়েছে বিরূপাক্ষের অতি নিকটে। খুব আস্তে ধীরে থেমে থেমে ফিসফিসিয়ে বললো কথা গুলো।

বিরূপাক্ষ থমকে গেছে রিতির মুখে বনলতার নাটা শুনে। কিভাবে জানলো সে বনলতার সম্মন্ধে?সেই ছোট্ট রিতি সত্যিই অনেক বড়ো হয়েছে। অনেক বুঝতে শিখেছে,বুঝাতে শিখেছে।তার কথার দৃঢ়তায় অবাক না হয়ে পারলো না বিরূপাক্ষের মতো বিদেশের ডিগ্রীধারী ছেলেটাও।

চলবে,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
ভালো থাকবেন সবাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here