হুজুরের বউ যখন ডক্টর পর্ব-১৭

0
1130

হুজুরের বউ যখন ডক্টর

রাইটার : রাকিবুল ইসলাম

পর্বঃ১৭

মেহেদির আসা এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেল
জাফরীর কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছেনা
আসলে সুস্থ করার মালিক তো আল্লাহ
অবস্থা আরো ভয়াবহ হচ্ছে দিনে দিনে।
মেহেদি তাকিয়ে দেখতে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

মেহেদি চোখের পানি দেখে নাসরিন কে বললো
আপু জাফরীর চোখ দিয়ে কিসের পানি পড়ছে
নাসরিন বললো ভাই সেটাই আমরা এখনো বুঝতে
পারিনা।
মেহেদি জাফরীর মাথার কাছে বসে মাথায় হাত
বুলিয়ে দিচ্ছে।মুখটা কালো কুচকুচে হয়ে গেছে।
মাথার চুল গুলোতে জট পেকে গেছে।
পায়ের পাতা গুলো কেমন যেন কাল হয়ে আসতেছে।এতো ডাক্তার এতো কিছু দিয়ে হবেনা
কারণ সুস্থ করার মালিক একমাত্র আল্লাহ।
______________
মেহেদি দেশে এসেছে খবর টা গিয়ে নয়নের কাছে পৌছে গেছে।নয়ন বললো কি ব্যাপার ও তো
মেহেদি না। তাহলে কি জন্য এসেছে মেহেদি এখানে

নয়নের বন্ধু : দোস্ত আমি প্রথমেই বলছিলাম ওটাই আসল মেহেদি। কিন্তু আমার কথা বিশ্বাস করিস নাই। এখন দেখ কি হলো।

নয়ন : না না না না এটা হতে পারেনা আমি নিজের হাতে ওকে জিবিত অবস্থায় মাটি দিয়েছি
মেহেদি কি করে বেচে থাকতে পারে।আর সবচেয়ে বড় কথা ও যদি সত্যিই মেহেদি হবে।
তাহলে আমার সাথে দুই দুই বার দেখা হলো
আমাকে চিন্তে পারলোনা কেন

নয়নের বন্ধু : তাহলে ও জাফরীর কাছে কি করছে

নয়ন : কেমন যেন সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে
আর যদি নাসরিন জানতে পারে কোনভাবে আমি
মেহেদি কে হত্যা করার চেষ্টা করেছি।
তাহলে তো আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে
কি করব আমি তখন।
এই দাড়া,আচ্ছা মেহেদি এখন জাফরীর কাছে
আছে তাইনা।

নয়নের বন্ধু : হুমমমমম

নয়ন : তাহলে তো যেতেই হয় ওখানে

নয়নের বন্ধু : কিভাবে যাবি নাসরিন যদি দেখে ফেলে তাহলে

নয়ন : হুমমম দেখুক

নয়নের বন্ধু : দেখলে তোরে জবাই করবে সালে

নয়ন : চিন্তে পারলে তো জবাই করবে

নয়নের বন্ধু : মানে কি…???

নয়ন : ছদ্ম বেশে ধারণ করে যাবো।
যদি বুঝতে পারি ওটা সত্যি মেহেদি তাহলেই
খালাস করে দেব।

নয়নের বন্ধু : জাফরীকে যদি এতো ভালোবাসিস
তাহলে বিয়ে করলি কেন অন্য মেয়েকে
দোস্ত আমার মন বলে তুই জমিয়ে সংসার কর
বুঝলি।শুধু শুধু মানুষের পিছনে লেগে কি লাভ হবে তোর।
আর তা বাদে তোর একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে
আছে তার কথা তো একবার ভাব।

নয়ন : না এতো সহজে আমি ছেড়ে দেয়ার পাত্র না
________________
মেহেদি রাত্রিবেলা তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে
উঠেছে ওযু করে রুমে ঢুকে নামাজ পড়ছে
মেহেদি। আল্লাহর দরবারে দোয়া করছে হে আল্লাহ
জাফরীকে তুমি সুস্থ করে দাও।
এই বলে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেছে।আল্লাহ বান্দার
কান্না সয্য করতে পারেনা। আর স্বামী যদি ন্ত্রীর
জন্য দোয়া করে সেই দোয়া আল্লাহ কবুল না
করে থাকতে পারেনা।

তুমিতো সুস্থ করার মালিক হে আল্লাহ আমার
প্রিয়তমা স্ত্রীকে তুমি সুস্থ করে দাও।
আমার খাদিজার আম্মুকে তুমি সব সময় বালা মুসিবত থেকে হেফাজত করো।
লম্বা একটা মোনাজাত করতেই ফজরের আজান
ভেসে আসলো।
মেহেদি মুনাজাত শেষ করে ফজরের নামাজের
সুন্নাত আদায় করে।মসজিদে যাচ্ছে নামাজ পড়তে।নার্সকে ডাক দিয়ে বললো আপু তুমি একটু জাফরীকে দেখো। আমি নামাজ পড়ে আসছি।
__________________
খুব সকালে এক বৃদ্ধ লোক হাসপাতালের চারপাশ দিয়ে ঘুরতেছে। এক মাথা থেকে অপর মাথায় যাচ্ছে।আবার অন্য মাথা থেকে আরেক
জায়গায় যাচ্ছে।আসলে ওটা নয়ন, বৃদ্ধ মানুষের
ছদ্ম বেশ নিয়ে হাসপাতালের বাহিরে ঘুরছে।
মেহেদি দেখতে পেয়ে বদ্ধ লোকটার কাছে গিয়ে
বলছে (আস্সালমুআলাইকুম)

বৃদ্ধ : ওয়ালাইকুম আস্সালাম

মেহেদি : চাচা কিছু খুজছেন

বৃদ্ধ : ওহ কি যেন খুজতেছিলাম।ও হ্যা বাবা মসজিদ টা কোন দিকে।

মেহেদি : মসজিদ তো সামনের দিকে। চলুন আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি।

বৃদ্ধ : আচ্ছা বাবা ধন্যবাদ

মেহেদি : চলুন আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি

বৃদ্ধ : না বাবা লাগবেনা।

মেহেদি : চলুন তো আমি নিয়ে যাচ্ছি।

মেহেদি ছদ্মবেশি নয়নের হাত ধরে
মসজিদে নিয়ে গেল।
মেহেদি বললো চাচা ওযু করছেন

বৃদ্ধ : ওযু,,,,,,, না বাবা করিনাই তো।

মেহেদি : তাহলে ওযুটা সেরে নেন তারপর নামাজ পড়ুন তাড়াতাড়ি

বৃদ্ধ : বাবা নিজে পারব এবার তুমি যাও।

মেহেদি : ওমা সে কি কথা,, টেপে পানি নাই।
আর আপনি তো টিউবওয়েল চাপ দিতে
পারবেন না।পানি না পেলে কি করে ওযু করবেন
আপনি তো ভালভাবে হাটতে পারেন না চাচা।
আমি পানি ঠেসে দিচ্ছি আপনি ওযু সেরে নামাজ আদায় করুণ।

নয়ন মনে মনে চিন্তা করলো দাড়িতে পানি দিলে
নকল দাড়ি গুলো তো উঠে যাবে।
আর মেকআপ গুলো ও উঠে যাবে…..!!!
আর ওযু কিভাবে করতে হয় তাও তো জানিনা।
সালা কি বিপদে পড়লাম।এখন যদি ধরা পড়ে যাই
তাহলে তো বিপদ আছে।
ওযু কি করে করে সেটাও তো জানিনা….!!!!!

মেহেদি : কি হলো চাচা কি ভাবছেন কল ঠেসে
দিচ্ছি ওযু করেন।

নয়ন কোন রকম টিউবওয়েলের সামনে দাড়িয়ে
হাত ধুয়ে ওযু করছে।
মেহেদি তাকিয়ে দেখছে বৃদ্ধ লোকটি ওযু করছে
কিন্তু আমরা যে পানি গড়গড়া সহ কুলি করে
পানি ফেলে দেই।কিন্তু এই মুরুব্বি চাচা তো পানি ফেলে দিচ্ছেনা,,, বরং খাচ্ছে।।।

মেহেদি বললো চাচা আমরা সাধারনত ওযু করতে
গিয়ে গড়গড়া সহ কুলি করি।তখন সেই
পানি আমরা ফেলে দেই।
কিন্তু আপনি তো পানি খেয়ে ফেলতেছেন মানেটা
কি…….!!!

বৃদ্ধ : হাহা হা হা,,,, আসলে বাবা বয়স হয়ে গেছে তাই মনেনাই।আসলে আমি বাসা থেকে ওযু
করে এসেছি।মনে ছিলোনা বাবা।

মেহেদি : ওহ আচ্ছা নামাজ পড়েন তাহলে

বৃদ্ধ : হ্যা বাবা যাচ্ছি।

নয়ন মনে মনে চিন্তা করছে সালা কি বিপদে
পড়লাম রে।নামাজ পড়তে ঢুকতেছি
এটা কোন নামাজ আর কিভাবে পড়ে।
কয় রাকাআত পড়ে কিছুই তো জানি না
আর মেহেদিও তো দাড়িয়ে আছে

বৃদ্ধ : আসলে বাবা আমার মনে নাই ভোরবেলার
নামাজ আমি পড়ে নিয়েছি বাবা।

মেহেদি : ওহ আচ্ছা।কিন্তু আপনি তো বললেন
পড়েন নি

বৃদ্ধ : এতোকিছু কি আর মনে থাকে বাবা তুমি শুধু আমাকে হাসপাতালের গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসো।

মেহেদি : হ্যা নিশ্চয় দেব।

মেহেদি বৃদ্ধ লোকটাকে এগিয়ে দিয়ে আসলো
বললো চাচা ঠিক আছে আমি যাচ্ছি।

বৃদ্ধ : হ্যা বাবা যাও যাও,,, তোমার জন্য দোয়া রইল

মেহেদি : আচ্ছা চাচা ভাল থাকবেন।

বৃদ্ধ : হি হি হি যাও বাবা।

মেহেদি ওখান থেকে চলে গেল।
বাপরে বাপ বাচা গেল।এই আমাকে যেভাবে
চেপে ধরেছিলো ধরা পড়ে যেতাম ওযু করতে গিয়ে।
আর ধ্যাত মানুষ শুধু নামাজের কথা বলে।
নামাজ পড়ে কি হবে। কিছুই হয়না।
জাস সালা প্লান টা মাটি হয়ে যাচ্ছে।
____________________
মেহেদি নামাজ পড়ে জাফরীর রুমে প্রবেশ করলো
রুমে প্রবেশ করে চিন্তা করলো জাফরী তো
আমার বিয়ে করা বউ মেয়েটার কপালে একটু
চুমু দিলে সমস্যা কোথায়।
মেহেদি আসতে করে গিয়ে জাফরীর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলছে এইযে ম্যাডাম আপনি
কবে সুস্থ হবেন।
আপনাকে যে এভাবে দেখতে আর ভাল লাগেনা
আর আপনার কাছে মাফ ও চাইতে পারছিনা
এসব বলছে আর জাফরীর মাথার চুল গুলো
বিলি কাটতেছে।

এসব বলতে বলতে মেহেদি জাফরীর মাথার কাছে
মাথা দিয়ে বসে ঘুমিয়ে গেছে।
কি এক অপূর্ব দৃশ্য তাইনা অসুস্থ স্ত্রীর কাছে
এইভাবে ঘুম যাওয়া কোন মেয়েটা চায়না।
মেহেদি ঘুমিয়ে ছিলো। একটা বিকট আওয়াজে
মেহেদির ঘুম ভেঙ্গে গেল।
মেহেদি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখছে জাফরীর
চোখ দিয়ে পানি টপ টপ করে পড়ে বালিশ
ভিজে গেছে।
মেহেদি তার পকেট থেকে রুমাল বের করে
চোখের পানি মুছে দিতে চাইলো।
তার আগে মেহেদি ঘা ওয়ালা চোখে চুমু দিতে
দিল।
জাফরীর চোখের পানি গিয়ে মেহেদির ঠোটে লাগল।

তারপর জাফরীর চোখের পানি রুমাল দিয়ে
মুছতেছে।আর চোখে ফু দিচ্ছে।রুমাল দিয়ে চোখ মুছতেছে । মেহেদি নজর করে দেখছে।
জাফরীর ডান হাতের আংগুল টা আসতে করে
নড়াচড়া করে উঠলো।

মেহেদি প্রথমে দেখে বুঝতে পারেনি।
তারপর ভালকরে নজর করে দেখছে জাফরীর
ডান হাতের আংগুল টা নড়ে উঠে আবার থেমে
গেল।মেহেদি দেখে নিজের চোখ কে বিশ্বাস
করতে পারছিলোনা।
খুশিতে আত্যহারা হয়ে গেল মেহেদি,
খুশির ঠেলায় নাসরিনকে ফোন দিয়ে বলছে
আপু জাফরীর হাত নড়তে দেখেছি।

নাসরিন : কি বলছেন ভাই সত্যি (খুশি)

মেহেদি : হুমমমমম সত্যি বলছি

নাসরিন : আহ আমার যে কি খুশি লাগছে
দাড়ান আমি আসতেছি।

মেহেদি : দাড়াতে পারবনা বসে আছি

নাসরিন : উফ খুব খুশি লাগছে ভাই।
________________
এইভাবে একটা মাস পেরিয়ে গেল
এখনো কি জাফরীর সুস্থ হবার সময় হয়নি
কবে সুস্থ হবেন তিনি……এইভাবে যখন
একটা মাস পেরিয়ে গেল।

মেহেদি আই সি ইউ তে বসে কোরআন পড়ছিল
এমন সময় মুম্বাই থেকে অনলাইনে ফোন
দিলো মেহেদিকে।
কারণ মেহেদির ডাটা সব সময় অন থাকে
কারণ মু্ম্বাই তার বউ বাচ্চা আছে।

খাদিজা : আসসালামুআলাই আব্বু

মেহেদি : ওয়ালাইকুম আসসালাম কেমন আছো মা তুমি।
খাদিজা : আলহামদুলিল্লাহ আব্বু। আব্বু তোমার জন্য একটা শু খবর আছে।

মেহেদি : কিহ খবর

খাদিজা : আগে বলো তুমি আমাকে আগের মতোই ভালোবাসবে।

মেহেদি : হুমমম মা,,, তোকে তো আগের মতোই ভালোবাসব।কেন তোকে কি কখনো কম ভালোবেসেছি।

খাদিজা : কিন্তু আজ থেকে তো কম ভালোবাসবে

মেহেদি : কেন রে…?

খাদিজা : কারণ আজ নতুন মেহমান বাড়িতে এসেছে।
মেহেদি : মানে??

খাদিজা : আব্বু আব্বু আমার ছোট ভাইয়া এসেছে দুনিয়াতে।

মেহেদি : কিহ বলছিস মা আলহামদুলিল্লাহ।
আমি খুব খুশি হয়েছি (উত্তেজিত)

খাদিজা : দাড়াও আমি ক্যামেরা টা ঘোরাচ্ছি

ক্যামেরা ঘোরা মাত্রই মেহেদি তাকিয়ে দেখছে
ফুটফুটে একটা বাচ্চা, হাসিমাখা কি সুন্দর।
মেহেদি দেখে খুশিতে আত্যহারা।
ওহ আজ আমি খুশি হয়েছি খুব ভাল লাগছে।
সবাইকে মিষ্টি খিলানোর জন্য ফোনটা কেটে
দিয়ে যখন বের হতে ধরলো
তখন মেহেদি নজর করে দেখছে জাফরীর
বাম পা আসতে করে নড়া দিয়ে উঠলো।

নাসরিন বলেছে জাফরীর অবস্থা এখন একটু
উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
হাতের একটা আংগুল নড়ে উঠেছিল জাফরীর
আজ পা নড়ে উঠলো ।
এটা দেখে আরোই খুসি হয়ে গেছে মেহেদি।
দৌড়ে যাচ্ছে দোকানে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবে
বলে।

রেহেনা : দুলাভাই এইভাবে দৌড়ান কেন

মেহেদি : আল্লাহ আমার ঘরে একটা পুত্র সন্তান দান করেছে।

রেহেনা : ওহ খুসির খবর তো,, দৌড়ান কেন?

মেহেদি : মিষ্টি খাওয়াবো সবাইকে।

এইবলে মেহেদি দৌড়ে গিয়ে দোকান থেকে
অনেক মিষ্টি কিনলো।
এবং দোকানদার কে বললো আপনার দোকানে
যারাই আসবে একটা করে মিষ্টি দিবেন।
যতো টাকা বিল হয় আমি দেব।

মিষ্টির দোকানদার বললো বাপরে সারা জীবন
দেখে আসলাম হুজুরেরা নাকি মানুষের
খায় কিন্তু খাওয়ায় না।
কিন্তু আজ একটা হুজুর দোকান ফ্রি করতে আসছে,,, ভালোই তো।
এই কথা সোনার পর মেহেদি বললো আজ আমার
খুশির দিন। তাই সব ফ্রি করে দিলাম।

যাকে সামনে পাচ্ছে মিষ্টি বিতারণ করছে।
হাসপাতালে সব ডাক্তারদের মিষ্টি বিতারণ করছে

হঠাৎ মেহেদি তাকিয়ে দেখছে কয়েক সপ্তাহ
আগের একটা বৃদ্ধ লোক।
সে হাসপাতালের ভিতরে জাফরীর কেবিনের সামনে ঘোরাঘুরি করছে।
মেহেদি যখন পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললো
চাচা আপনি কি করছেন
মেহেদিকে দেখা মাত্রই লোকটা চমকে গেলো।

মেহেদি : আসসালামুআলাইকুম চাচা কি করছেন

বৃদ্ধ : ওয়ালাই সালাম।

মেহেদি : এটা আবার কেমন সালাম নেয়ার স্টাইল
(মনে মনে)

বৃ্দ্ধ : বাবা মসজিদ কোন দিকে

মেহেদি : এখন তো নামাজের সময় না

বৃদ্ধ : ওহ তাইতো আসলে বাবা মনে ছিলোনা

মেহেদি : আপনার বাড়িতে কেউ নাই আপনাকে একা ছেড়ে দেয় কেন…?
চলুন আপনাকে বাড়িতে দিয়ে আসি

বৃদ্ধ : না বাবা ঠিক আছে আমি নিজেই যেতে
পারবো।

মেহেদি : আচ্ছা যান

বৃদ্ধ : আচ্ছা বাবা যাই

মেহেদি : দাড়ান…
আপনি মিষ্ঠি না খেয়ে কেন যাচ্ছেন,,এই নেন মিষ্টি

বৃদ্ধ : কিসের জন্য বাবা।

মেহেদি : আমার ঘরে আল্লাহ নতুন মেহমান পাটিয়েছে।সেইজন্য।

বৃদ্ধ : সালা কয় কি বউয়ের বাচ্চা হয়েছে
(মনেমনে)

মেহেদি : চাচা কিছু বললেন

বৃদ্ধ : না বাবা কিছু বলিনাই

মেহেদি : কি যেন বললেন আপনি

বৃদ্ধ : না বাবা কিছৃ বলিনাই

ছদ্মবেশী নয়নের হাতে যখন দুইটা মিষ্টি দিলো
হঠাৎ মেহেদি নজর কর দেখছে।
মুরুব্বি চাচার দাড়ি খুলে গেছে
মেহেদি এতোটাই আনন্দে ছিলো মানুষের দাড়ি
খুলে যেতে পারে এটা মেহেদির মাথায় আসেনাই।
মেহেদি বললো চাচা আপনার দাড়ি খুলে গেছে
লাগিয়ে নিন।
এইবলে মেহেদি ওখান থেকে চলে গেল।
_______________
নয়ন : বাপরে বাপ বাচা গেল এখনি ধরা পড়তে
যাচ্ছিলাম।আসলে মেহেদি যদি হয়ে থাকে
তাহলে আমিতো শেষ।নাসরিন তো আমাকে ছাড়বেনা।

আবার একটা হিসাব মিলছেনা মেহেদি কি
করে জাফরীকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে
সংসার করছে। আরো একটা বিবাহ করলো
কারণ টা কি।
আবার আমার মুখে দাড়ি খুলে গেল মেহেদি বললো চাচা আপনার মুখে দাড়ি খুলে গেছে।
আসলে হচ্ছে টা কিহ।
কেন জানি সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।
ধ্যাত…….এখন হাসপাতাল ছাড়া যাবেনা
আর তথ্য জানা লাগবে।আরো হিসাব বুঝার
বাকি আছে।
__________________
মেহেদি জাফরীর রুমে প্রবেশ করলো
মিস্টির প্যাকেট নিয়ে।
বাকি মিস্টি নাসরিনের জন্য যখন রেখে দিতে
যাবে,,, হঠাৎ করে মিষ্টির একটু রস জাফরীর
ডান পায়ে পড়ে গেল।উফ মাজে মাঝে কি যে কাজ করি আমি।
আসতে করে জাফরীর পায়ের মিষ্টির রস
গুলো মুছে দিলো।
আর জাফরীর কপালে একটা চুমু দিলো।
জাফরীর কপালের সাথে নাকের বরাবর মেহেদি তার নাকটা লাগিয়ে বলছে।
কি গো,,,,, আল্লাহ আপনাকে কবে সুস্থ করে
তুলবে।আর কতোদিন আপনি চোখ দুটো
বন্ধ করে থাকবেন।
আপনার কি এখনো সময় হয়নি চোখ দুটো
খোলার।আমি যে আপনাকে এইভাবে আর
দেখতে পারছিনা।
কবে এই চোখ দুটো খুলবেন আপনি।
কবে আমাকে হুজুর বলে ডাকবেন।
জানেন আপনাকে বড্ড বেশি মিস করতেছি
আমি যে আপনার প্রতি অনেক দূর্বল।
আপনাকে বুঝি এতোটাই ভালোবাসতাম
তাইনা।কিন্তু কি করব,,, আমার যে এখনো পুরোনো কথাই মনে নাই।হাজার বার চেষ্টা করি।
মনে করার।কিন্তু মনে পড়ে নাই।
কবে আপনি আগের মতো হাসবেন, কথা বলবেন, মেহেদি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে
কান্না করছে। আর মেহেদির চোখের পানি গুলো জাফরীর ঠোটে গড়িয়ে গেছে।

নাসরিন : বাহ

মেহেদি : ওহ আপনি

নাসরিন : হুমমম

মেহেদি : কখন আসলেন

নাসরিন : এইতো দাড়িয়ে আপনার কথাগুলো শুনছিলাম

মেহেদি : ওহ

নাসরিন : কি একটা রোমান্টিক দৃশ্য আপনার
চোখের পানি গুলো জাফরীর ঠোটে পড়ছে।

মেহেদি : বইন এই কথা বলে আর লজ্জা দিস না।
শুধু দোয়া করো জাফরী যেন সুস্থ হয়।
জানিনা আরো কতদিন লাগবে।
______________________
দিন যাচ্ছে, সপ্তাহ যাচ্ছে,মাস যাচ্ছে।
কিন্তু জাফরী এখনো সুস্থ হচ্ছেনা,
এইভাবে কেটে গেল সাত মাস।
মেহেদি নজর করে দেখছে নাসরিন কান্না করছে।

মেহেদি : আপনি কান্না করছেন কেন

নাসরিন : (কান্না)

মেহেদি : কি হয়েছে বলুন প্লিজ।

নাসরিন : ভাই এই রিপোর্ট গুলো দেখুন

মেহেদি : কি আছে এই রিপোর্টে

নাসরিন : আপনি নিজের চোখে দেখুন (কান্না)

মেহেদি : আচ্ছা দেন দেখি।

মেহেদি যখন রিপোর্ট হাতে নিয়ে দেখছে।

মেহেদি- রিপোর্ট তো ভালো না,এখন কি করা যায়?

নাসরিন- এখন একটাই মাত্র উপায় জানা আছে আমার। তবে জানিনা এটা কতটুকু কার্য করিতে হবে।

মেহেদি- দেখুন আপু যেহেতু সময় খুব কম তাই আপনি শেষ চেষ্টাটাই না হয় করুন,।বাকিটা আল্লাহ দেখেনিবেন।

– জি ইনশাআল্লাহ ভাই আমি দেখছি।

মেহেদি – তা এখন কি করবেন আপনি?

নাসরীন – দেখুন ভাইয়া যেহেতু চোখ গুলো নষ্ট হয়ে গেছে, তাই আমাদের শেষ চেষ্টা হচ্ছে তার চোখের অপারেশন লাগবে।

মেহেদি- আচ্ছা যা করার প্রয়োজন আপনারা তাইই করুন,শুধু আমার জাফরী কে সুস্থ করার ব্যাবস্থা

হঠাৎ মেহেদির ফোন আসলো ফোনটা রিসিভ
করেই দেখে তার খাদিজার আম্মুর ফোন
চোখের পানি মুছে বললো আসসালামুআলাইকুম
খাদিজার আম্মু সালামের জবাব নিয়ে বলছে
কি হয়েছে তোমার কন্ঠ স্বর টা এমন হয়ে গেছে
কেন…. কি হয়েছে তোমার।

খাদিজার আব্বু : কই কিছু হয়নি

খাদিজার আম্মু : আমি বললে শুনবোনা তো
কারণ আমি তোমাকে চিনি। কারণ তুমি যখন তীব্র কষ্ট পাও।
তখন তোমার কন্ঠ টা চেন্জ হয়ে যায়।কি হয়েছে
আমাকে বলো।

খাদিজার আব্বু : জাফরী

খাদিজার আম্মু : জাফরীর কি হয়েছে

খাদিজার আব্বু : ডাক্তার বলেছে জাফরির সময় অনেক কম,
খাদিজার আম্মু : কি বলছো এসব।আমার প্রিয় স্বতীনটার এতো সিরিয়াস অবস্থা আর তুমি আমাকে কিছু বলোনাই কেন…??

খাদিজার আব্বু : কি করে বলতাম তুমি তো টেনশন করতে

খাদিজার আম্মু : আমি বাংলাদেশে যাবো

খাদিজার আব্বু : একা আসতে পারবে তুমি

খাদিজার আম্মু : হুমমম পারব।
আমার নিজের খুব কষ্ট লাগছে এইভাবে থাকতে।
_______________
এদিকে নাসরীন সহ তার সব বান্ধুবিরা মিলে নাসরীনের অপারেশনের ব্যাবস্থা করছে, তার চোখ পরিবর্তন করতে হবে,কেননা আগের চোখ গুলো নষ্ট হয়ে গেছে,আর আজ জাফরীর অপারেশন ডেট।

দুইদিন পর খাদিজার আম্মু বাংলাদেশে আসলো,
এসে মেহেদি কে ফোন দিল।

– আসসালামু আলাইকুম।
– ওয়ালাইকুস সালাম কোথায় তুমি?

– আমি তো এয়ারপোর্টে এসেছি।

– আচ্ছা এবার দেখো কালো রঙের একটা মাইক্রো তোমার কাছাকাছিই দাঁড়িয়ে আছে,কি দেখতে পেয়েছো?

– জি দেখতে পেয়েছি,

-আচ্ছা এবার ওই গাড়িতেই করে চলে এসো,ওটা আমি পাঠিয়েছি।

– আচ্ছা আসছি,আনা হিব্বুকুমুল্লাহ ওয়া খইরুম।

– জাযাকাল্লাহ খইরান।

——————————

– নাসরীন আপু, আমার জাফরী কে দেখে রাখবেন,প্লিজ

– জি ইনশাআল্লাহ ভাই আমরা সথা সাধ্য চেষ্টা করে যাবো, বাকিটা আল্লাহ তায়া’লার উপর ছেড়ে দিন।

– ফি আমানিল্লাহ বোন।

নাসরীর সহ বাকি ডাক্তাররা জাফরীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেল। মেহেদি বাইয়ে পায়চারি করছে আর বিপদের সময় যে দোয়া পড়লে আল্লাহ কবুল করেন সেই দোয়াই পড়ছে বার বার

—————————————-

এদিকে খাদিজার আম্মুও হাসপাতালে পৌঁছে গেছে, গাড়ি থেকে নেমেই সোজা হাসপাতালের রিসিপশনের কাছে চোলে গেছে,তার কোলে একটা ছোট্ট বাচ্চাও আছে,

– এক্সকিউজ মি ম্যাম,

– জি বলুন কিভাবে আমরা আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

– এখানে চিকিৎসারত জাফরী নামের কেউ আছেন?

– জি আছেন, আপনি ওনার কে হন?

– আমি ওনার পরিচিত বোন,ওনি এখন কোথায় আছেন?

– ওনার তো অপারেশন চলছে ৪০২ নাম্বার রুমে।

– আমি কি ওখানে যেতে পারি?

– জি অবশ্যই কেন নয়,তবে বাহিয়ে অপেক্ষা করতে হবে।

– জি আচ্ছা শুকরিয়া ম্যাম,

– ওকে

খাদিজার আম্মু এবার অপারেশন থিয়েটারের দিকে চলতে লাগলো,
পথিমধ্যে হঠাৎ সে লক্ষ করলো কেউ যেন তার পিছু নিচ্ছে,কিন্তু কে সে?

চলবে…..?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here