হৃদমোহিনী পর্ব-১৫

0
2357

হৃদমোহিনী
পর্ব ১৫
মিশু মনি
.
২০.
হানিমুনে এসেছে মেঘালয় ও মিশু৷ কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সাথে ওদের একগাদা বাচ্চাকাচ্চাও এসেছে। হানিমুন হচ্ছে দুজনের হানিবানির জন্য, এখানে বাচ্চারা কেন আসবে? তাও আবার একগাদা নাদুসনুদুস গুল্টুস গাল্টুস বাচ্চা৷ ওদেরকে ছেড়ে থাকাও যায়না। আরো বেশি বিব্রতকর ব্যাপার হচ্ছে, রোমাঞ্চের সময় বাচ্চারা চেঁচামেচি করে বলে, ‘আব্বু আম্মু তোমরা কি করছো?’

ঘুম ভেঙে গেলো মিশুর৷ এটা একটা স্বপ্ন ছিলো তবে! এটা কোনো স্বপ্ন হলো? মেজাজ খারাপ করা স্বপ্ন। হানিমুনে গেছে সাথে কয়েক হালি বাচ্চা নিয়ে৷ একদিকে হাসি পাচ্ছে, অন্যদিকে রাগ লাগছে। মিশুকে নড়াচড়া করতে দেখে মেঘালয়ের ঘুম ভেঙে গেলো। জানতে চাইলো, কি হয়েছে?

মিশু বললো, ‘একটা পাজি স্বপ্ন দেখেছি।’
– ‘স্বপ্ন আবার পাজি হয়ে কিভাবে?’
– ‘তো? দেখলাম আমরা হানিমুনে গেছি আর আমাদের একগাদা বাচ্চাও গেছে সাথে৷’

ভ্যাবাচ্যাকা খেলেও শব্দ করে হেসে উঠলো মেঘালয়। হাসতে হাসতে বললো, ‘মজার স্বপ্ন দেখেছো বটে। বাচ্চার আবার বাচ্চাও হইছে? পাগলী একটা।’
– ‘পাগলী বলবেন না। সময়মতো বিয়ে হলে আমি এতদিনে চারটা বাচ্চার মা হতাম।’
– ‘হা হা হা৷ কত বছরে বিয়ে হলে?’
– ‘তা জানিনা। তবে আমাদের এখানে একটা মহিলার বয়স আঠার প্লাস কিন্তু চারটা বাচ্চা আছে৷ আমার ও হতে পারতো।’

মেঘালয় মুচকি হেসে বললো, ‘কয়টা বাচ্চা লাগবে বলো? আমিতো আছিই।’
-‘মানে!’

মেঘালয় দুষ্টুমি হাসি হেসে বললো, ‘মিশু বর্তমানে তুমি আবার একমাত্র প্রেমিকা ও আদরের বউ৷ তোমাকে ভালোবাসাটা আমার দায়িত্ব তাইনা? ভালোবেসে অনেকেই জীবন দেয়। আমিতো তোমার জন্য জীবন দিতে পারবো না,কিন্তু তোমার পেটে একটা জীবন এনে দিতে পারবো ‘

মিশু অবাক হয়ে চেঁচালো, ‘কিহ! কি বললেন?’

মেঘালয় আবারো বললো, ‘আমি তোমার জন্য জীবন দিতে পারবো না কিন্তু তোমার পেটে একটা জীবন এনে দিতে পারবো।’

মিশু ক্ষেপে গিয়ে বললো, ‘ছাড়ুন আমাকে৷ দূরে সরে ঘুমান, ছাড়ুন বলছি।’

মেঘালয় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে বিছানার উপর। মিশুকে ছেড়ে দিতেই সে খানিকটা দূরে গিয়ে বালিশে শুয়ে পড়লো। মেঘালয় কম্বল টানাটানি করছে আর বলছে, আমার শীত করছে তো৷ পুরোটা কম্বল নিজে নিয়ে নিয়েছো।

মিশু একদিকে কম্বল ধরে টানছে, অন্যদিকে মেঘালয় টানছে। দুজন দুদিকে ধরে বেশ কিছুক্ষণ টানাটানি করার পর ক্ষান্ত হয়ে মিশু ছেড়ে দিলো। তারপর কম্বল ছাড়াই শুয়ে পড়লো। মেঘালয় মুখ টিপে হেসে বললো, ‘আমি একাই গায়ে দিবো?’
– ‘দিন। আমার লাগবে না। আর কাল সকাল হলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন। আর কোনোদিনো কোনোরকম যোগাযোগ করবেন না বলে দিলাম।’
– ‘কেন?’
– ‘আমি ডিভোর্স চাই।’

কথাটা বলার পর শ্বাস নেয়ার ও সময় পেলোনা মিশু। আচমকা কি যে হয়ে গেলো বুঝে উঠতে সময় লাগলো ওর। মেঘালয় খপ করে পেটের উপর দিয়ে একহাত দিয়ে কোমরটা চেপে ধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো। তারপর মিশুকে নিচে ফেলে উপরে উঠে দুহাত মিশুর হাতের উপর রেখে পুরোপুরি বন্দি করে ফেললো ওকে৷ আবেশে চোখে বুজে ফেলেছে মিশু৷ বাম হাতের তালুর উপর ডান হাতের তালু, আঙুলের ফাঁকে আঙুল। চোখে চোখ রেখে মেঘালয় বললো, ‘তাকাও।’

মিশু ভয়েই কাঁপছে। কিছুতেই চোখ খুলছে না। মেঘালয় আবারও বললো, ‘তাকাও।’

মিশু ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তাকালো। মুখের উপর মেঘালয়ের মুখটা দেখে শিউরে উঠলো একেবারে। একবার ঢোক গিলে তাকালো মেঘালয়ের চোখের কোটরে। মেঘালয়ের চোখে কি যেন আছে, ছটফটানি বাড়তে শুরু করেছে মিশুর৷ অত বড় মানুষটার শরীরের নিচে পড়ে কেমন যেন শক্তিহীন লাগছিলো নিজেকে।

মেঘালয় বললো, ‘আর যদি একবার এই কথা বলেছো তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা বলে দিলাম।’
– ‘আমি আপনার চেয়েও খারাপ হবো।’
– ‘তাই? কি করবা শুনি?’
– ‘হাত ধরে ফেলেছেন তাতে কি? কামড়ে গোশত ছিঁড়ে নিবো।’

মিশু কথাটা বলে একদন্ড শান্তি নিতে পারলো না। মেঘালয় হুট করেই ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ছোট্ট কামড় বসিয়ে দিলো মিশুর নিচের ঠোঁটে। সুখে মেঘালয়কে দুহাতে শক্ত করে ধরে ফেললো মিশু৷ কামড়ও কখনও এত সুখের হয় বুঝি? মেঘালয় এমন কেন? কোনো কথাবার্তা ছাড়াই এটাক করে বসে। উফফ লজ্জা লাগছে।

লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো মিশু৷ লাল থেকে ক্রমশই নীল হতে লাগলো। মেঘালয় ঠোঁট ছেড়ে দিতেই মিশু দুহাতে মেঘালয়ের পিঠ শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো৷ ওর ছোট্ট শরীরটা চাপা পড়ে দম ফেলতেও পারছে না। মেঘালয় মুখটা তুলে মিশুর চোখে চোখ রেখে বললো, ‘কার ক্ষমতা কেমন দেখলে তো?’

মিশু কোনো কথা বলতে পারলো না। মেঘালয় গভীরভাবে তাকাচ্ছে। মিশুর শরীর‍টা চাপা পড়লেও ভেতরে কাঁপন ধরে গেছে ঠিকই।

মেঘালয় বললো, ‘তোমাকে সবদিক থেকে প্রেম দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। তোমার পুরো শরীর জুরে আমার প্রেমের বীজ দিয়ে পাহারা দেয়া হচ্ছে। পালাবার চেষ্টা করলেই প্রেমের বৃষ্টিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাবে। সেচ্ছায় হৃদসমর্পণ করো নয়তো চুমু ছুঁড়তে বাধ্য হবো।’

চোখের দিকে তাকিয়ে এভাবে বললে কি বাঁচা যায়? খুন হয়ে যায়না? মিশুর চোখেমুখে অন্যরকম একটা আভা ছড়িয়ে পড়েছে৷ মেয়েটার ভেতরে কি পরিমাণ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে সেটা দেখেই অনুধাবন করা যাচ্ছে৷ মিশু তো শেষ হয়েই যাবে এবার। কে আটকায় ওকে? হৃদয় সমর্পণ না করলে যে চুমুর বুলেটাঘাতে ঝাঁঝরা করে দিবে।

মেঘালয় মুচকি হেসে বললো, ‘আমার বয়স কত জানো? সাতাশ। আমি জীবনে প্রথম তোমার কাছেই হৃদয় চেয়েছি। না দিলে জোর করে দখল করবো, তারপর প্রেমের বানে ডোবাবো তোমার পুরো শহর। একটা শহর জুরে শুধুই আন্দোলন হবে, প্রেমের আন্দোলন।’

মিশু মুগ্ধ হয়ে এতক্ষণ পর কথা বললো, ‘আপনি তো চরম রোমান্টিক। দেখে বোঝাই যায়না। এত গুরুজি সাধু মানুষটার ভেতরে যে এত রোমান্টিকতা আছে ভাবাই যায়না।’
– ‘ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কভার।’
– ‘ইস কি খারাপ আপনি। আপনি তাহলে মানছেন আপনি বইটা অতটা সুবিধার না?’
– ‘আমি থ্রিলার প্লাস রোমান্টিক বই বুঝলে? পুরো বই জুরে রহস্য আর এডভেঞ্চার বিরাজ করে। এ বইয়ের ভাষা বুঝার সাধ্য কারো নেই।’

মিশু হেসে বললো, ‘বই খোলার সাহস কারো হয়নি, আর পড়া তো দূরের কথা৷ বই যদি নিজে থেকেই খুলে পড়তে বলে, তখন না বুঝলেও পড়বো।’

মেঘালয় হেসে ফেললো। মিশু হাতের আঙুল গুলো নাড়ানোর চেষ্টা করেও পারলো না। মেঘালয়ের সমস্ত আঙুল আঁকড়ে ধরে আছে ওর আঙুল গুলোকে। ছোট্ট ছোট্ট হাতদুটোকে হাতের নিচে পিষে ফেলতে দারুণ আনন্দ। ভেবেই ফিক করে হেসে ফেললো মেঘালয়।

মিশু বললো, ‘আমাকে ছাড়ুন। ঘুমাতে দিন।’
– ‘আজ আমাদের প্রথম বাসর রাত না?’
– ‘বাসর রাত কয়বার হয়?’
-‘আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা রাতই বাসর রাত হবে। আর প্রত্যেকটা দিনই ঈদের দিন হবে।’
– ‘আমার লোভ ধরিয় দিচ্ছেন?’

মেঘালয় হেসে বললো, ‘খুব দিচ্ছি। আরো দিবো?’
– ‘দেখি আপনার ক্ষমতা?’

মেঘালয় আরো একটু নিচু হয়ে মিশুর নাকে একটা ছোট্ট কামর দিয়ে বললো, ‘কালকেই বাবাকে বলবো আমি আমার প্রেমিকাকে বিয়ে করে ফেলেছি। ব্যস, বাবা গাড়ি নিয়ে এসে তোমাকে নিয়ে যাবে।’

মিশু অবাক হয়ে বললো, ‘কিহ! সত্যি নাকি?’
– ‘হুম। কিন্তু অবশ্যই বলতে হবে গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করেছি। আমার প্রেমিকা যেই হোকনা কেন বাবা মেনে নিবেন। কিন্তু এক্সিডেন্টলি বিয়ে হয়েছে শুনলে কখনওই মেনে নিবেনা। এটা ডিপেন্ড করছে আমার উপর।’
– ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।’
– ‘বাবাকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব আমার। তুমি শুধু একটা কাজ করো।’

মিশু কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কি?’
মেঘালয় বললো, ‘কাম নেয়ার।’

শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেললো মিশু৷ মেঘালয় মিশুর দুহাতে নিজের হাত রেখেই মিশুর গলায় মুখ গুঁজে দিলো। অনেক্ষণ নিরবে কেটে গেলো এভাবে। মিশুর চোখে পানি, মানুষটা হঠাৎ জীবনে এসে দখল করে নিচ্ছে। প্রেমে পড়ত বাধ্য করছে এভাবে। ইস! এমন কেন সে?

মেঘালয় সোজা হয়ে শুয়ে মিশুকে বুকের উপর টেনে নিয়ে বললো, ‘আর দুষ্টুমি করবো না। এখানে মাথা রেখে শান্ত হয়ে ঘুমাও।’
– ‘আপনি এমন কেন?’
– ‘আমার সাতাশ বছরের জীবনের সমস্ত ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছিলাম তোমার জন্য৷ একটু এক্সাইটমেন্ট তো থাকবেই তাইনা?’

মিশু আর কিছু বললো না। মেঘালয়ের এই তীব্র প্রেমের বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে ঠান্ডা লেগে যাবে কিনা ভাবছে। এমন একজনকে পাওয়ায় সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে। মেঘালয়ের শরীরে দারুণ একটা গন্ধ মিশে আছে। বুক ভরে সেই ঘ্রাণ নিতে নিতে ঘুমিয়ে পড়লো মিশু। মেঘালয় ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

২১.
সকালে ঘুম ভাঙার পর মিশু বেশ বুঝতে পারলো এখনো মেঘালয়ের বুকেই গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। হাতটা ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করেও পারলো না। কি শক্ত করে ধরে রেখেছে বাবাহ! না ছাড়ানো যায়, না ফেরানো যায়!

মেঘালয় ঘুমাচ্ছে। মিশু নিশ্চুপ হয়ে ভাবতে লাগলো এই অদ্ভুত সম্পর্কের কথা। কেমন হুট করেই সবকিছু ঘটে গেলো! মেঘালয়ের মনে একবার হলেও দুশ্চিন্তা এসেছে, মিশুকে স্ত্রী হিসেবে মানতে খুব আপত্তিও হয়ত ছিলো। অথচ কিছুই বুঝতে দিচ্ছেনা। বরং নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করছে মিশুকে ভালোবাসার, মিশুকে নিয়েই সুখী হওয়ার৷ একদম অন্যরকম একটা মানুষ। নিজের ভেতরে কি চলে সেটা কাউকে বুঝতে দেয়না।

মিশু পা দুটো মেলে দেয়ার চেষ্টা করলো লম্বা করে। পা মেলতেই মেঘালয়ের উন্মুক্ত পায়ের সাথে পা লেগে গেল। রোমশ পায়ে কোনো আলগা আস্তরণ নেই তারমানে লুঙিটা ঠিক জায়গায় নেই। লজ্জা পেয়ে হাসলো মিশু। কিন্তু কোনো নড়াচড়া না করে শান্ত হয়ে শুয়ে রইলো মেঘালয়ের বুকে। এভাবে কতক্ষণ কেটে গেছে ও বলতে পারেনা। চোখ বুজে শুধু সুখে ভাসছিলো, আর ভাবছিলো মেঘালয়কে এক মুহুর্তের জন্যও কখনো আড়াল করবে না। সবসময় আঁকড়ে রাখবে ওকে। ভালোবাসবে, খুব ভালোবাসবে।

মেঘালয় চোখ মেললো একটু পরেই। ঘুম ভাঙতেই বললো, ‘মিশুউউ..’
– ‘হুম।’
– ‘কখন ঘুম ভাঙলো তোমার?’
– ‘একটু আগেই। আমি কি এখন উঠতে পারি?’
– ‘শিওর। আব্বুর ফোনটা একটু এনে দেবে?’
– ‘কার আব্বু?’
– ‘মানে কি মিশু? তোমার আব্বু কি আমার আব্বু নয়?’

উত্তরটা খুব ভালো লাগলো মিশুর। প্রসন্ন মুখে উঠতে যাবে এমন সময় মেঘালয় ওর হাতটা ধরে কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে বললো, ‘সবসময় এরকম হাসিমুখে থাকবা।’

মিশুর সত্যিই খুব আনন্দ হচ্ছে। মুচকি হেসে উঠে এলো বিছানা থেকে৷ ইস! জীবনের প্রত্যেকটা সকাল যেন এমন হয়।

গোসল সেরে নিজের রুমে গিয়ে আলমারি খুলে বসলো মিশু। আজকে একটু সাজগোজ করতে ইচ্ছে করছে। যদিও সাজগোজ করতে ওর একদমই ভালো লাগেনা। আজ বড্ড ইচ্ছে করছে যে। আচ্ছা শাড়ি পড়ে মেঘালয়কে চমকে দেয়া যায়না?

আলমারি থেকে আসমানী রঙের একটা শাড়ি বের করলো মিশু। আজ বউ হতে ইচ্ছে করছে, খুব ইচ্ছে করছে।

শাড়ি পড়ে ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে মেঘালয়ের রুমে এসে ঢুকলো। এসে দেখে মেঘালয় ঘুমিয়ে পড়েছে আবারো। রুমের মেঝেতে অনেক গোলাপির পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দেখতে ভালোই লাগছে। আজ সবকিছুই সুন্দর লাগছে কেন?

বেলা দশটা বেজে গেছে। মা নাস্তা রেডি করে ডাকছেন। মেঘালয় এখনো ওঠেনি ঘুম থেকে৷ আর উঠবেই বা কি করে, সারা রাত ঘুমাতে পারেনি ছেলেটা। মিশুকে মানিয়ে নেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে মনেপ্রাণে। যদিও লাইফ পার্টনার নিয়ে অনেক কিছুই ভাবা ছিলো ওর। মেয়েটা কেমন হবে সেরকম ইচ্ছে কার না থাকে? তবুও বিয়েটা যখন হয়েই গেছে তখন তো এই মেয়েটাকে ছেড়ে দেয়া যায়না। দায়িত্বকে এড়ানোর মাঝে কোনো সুখ নেই, বরং দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালনেই সত্যিকার সুখ৷ রাতটা অনেক সুন্দর কেটেছে, মিশু মেয়েটা নেহাত খারাপ না। বউ হিসেবে একদম পারফেক্ট।

মিশু এসে বিছানার পাশে বসলো। তার একটু বাদেই চোখ মেললো মেঘালয়। চোখ মেলেই এত বড় সারপ্রাইজ পাবে সেটা ভাবতেও পারেনি ও। শাড়িতে মেয়েটার বয়স যেন একটু বেড়ে গেছে৷ লাজুক কিশোরীর মত লাগছে একদম। অনেক্ষণ মিশুর মায়াবী মুখের দিকে চেয়ে রইলো মেঘালয়। মিশু লজ্জানত মুখে মেঝের দিকে চেয়ে আছে। মেঘালয় বললো, ‘এই মিশুউউ..’
– ‘হুম।’
– ‘ঠোঁটে কি হয়েছে?’

চমকে উঠলো মিশু৷ রাতের ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো। লজ্জায় একেবারে গাঢ় নীল হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেলো ওর৷ মৃদু হেসে একছুটে বেড়িয়ে এলো রুম থেকে।

মেঘালয় ওর ছুটে চলে যাওয়ার পথে চেয়ে রইলো অবাক হয়ে। ঘুম ভাঙার পর দারুণ একটা সারপ্রাইজ বটে!

মিশু একটা জিন্স ও টি শার্ট নিয়ে এসে বললো, ‘এগুলা আপনার জন্য৷ আব্বু নিয়ে এসেছে রাতে।’
টি শার্ট হাতে নিয়ে মেঘালয় বেশ অবাক হয়ে বললো, ‘রুচিবোধ তো ভালোই। দারুণ জিনিস নিয়েছে।’
– ‘আজকে আপনাকে নিয়ে মার্কেটে গিয়ে যা যা লাগবে কিনে আনতে বলেছে৷ আপাতত এগুলা পড়ুন।’
– ‘হুম। প্যান্টের সাইজ ও ঠিক আছে আর জিনিসটার কোয়ালিটিও ভালো। আব্বু তো দারুণ রুচিশীল।’

মিশু প্যান্টটা নেড়েচেড়ে দেখে বললো, ‘হুম। আপনি গিয়ে ভালো দেখে নিয়ে আসবেন।’
– ‘এটা কি খারাপ মনেহচ্ছে?’
– ‘কয় টাকা আর হবে?’
– ‘এটার দাম হোপফুলি দুই হাজার ছয়শ হবে।’

মিশু অবাক হয়ে বললো, ‘সেকি! এত দাম? কিভাবে সম্ভব?’
– ‘হ্যা, আমি গোসলে যাই তাহলে।’
– ‘হ্যা। দ্রুত আসুন, আমি নাস্তা রেডি করতে বলি।’

মিশু চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে এমন সময় মেঘালয় ওর হাতটা টেনে ধরে বললো, ‘বউ বউ লাগছে।’

মিশু মুচকি হেসে দৌড় দিলো একটা৷ মেঘালয় নিজেও মুচকি হাসলো৷

দুবার কলিংবেল বাজতেই দরজা খোলার জন্য ছুটে এলো মিশু। দরজা খুলে বিস্ময়ে চোখদুটো বড় হয়ে গেলো ওর!

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here