#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ৪০)
#নাহার
·
·
·
চোখ হালকা পিটপিট করে খুলে সবকিছুই ঝাপসা দেখতে লাগলো নিরা। আবারো চোখ বন্ধ করে নেয়। কয়েক মূহুর্ত চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকে আবার চোখ খুলে তাকায়। প্রথমে চোখ যায় উপরের দিকে। একটা ছাই রঙের ছাদ। না ছাদ নয় এটা অনেকটা ঢেউ ঢেউ। কয়েক সেকেন্ড লাগলো নিরার এটা বুঝতে যে, ছাদটা এরকম ঢেউ ঢেউ কেনো। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তার মস্তিষ্ক বললো এটা টিনের চাল। নিরা চমকালো। সে এখন একটা টিনের ঘরে। পাশে তাকিয়ে দেখলো জানালা। খোলা জানালা। বাতাস আসছে। নিরার সামনের চুল বারবার উড়ছে। মাথাটা একটু তুলে দেখলো এটা টিনের ঘর নয় বেড়ার ঘর। টিন শুধু উপরে দেয়া। নিরা অবাক হলো। শান্ত হয়ে শুয়ে কাল রাতের কথা মনে করতে শুরু করে। “সে কাল রাত ছাদে ছিলো। একটা কালো কসটিউম পরা লোক তার মুখের সামনে কিছু স্প্রে করে। এবং এরপর আর কিছু মনে নেই।” নিরা আতকে উঠে। দ্রুত চোখ খুলে ফেলে। এতোক্ষণ পর অনুভব করলো তার পেটের উপর কিছু একটা আছে। এবং নিরার পা দুটোও পেচিয়ে রেখেছে। ভয়ে নিরার বুক কেপে উঠে। পেটে আলতো করে হাত রাখে। নিরার পেটের উপর কারো হাত। তার পা দুটো কেউ একজন তার পা দিয়ে পেচিয়ে রেখেছে।
লাফ দিয়ে উঠে বসে নিরা। পাশের ব্যাক্তিটিও বসে পরে। নিরা পাশের ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে চমকে যায়। কিছুটা চিৎকার দিয়েই বললো,
— আপনি?
সামনের ব্যাক্তিটি দুইহাতে দুই কানে চেপে ধরে। মুখে বিরক্তির ছাপ এনে বললো,
— এভাবে কেউ চিৎকার করে? এখন তো আমার কান নষ্ট হয়ে যেতো। আমি আর কানে শুনবো নাকি আল্লাহই জানে।
সামনের ব্যাক্তিটি আর কেউ নয় রাফিন। নিরা আঙুল তাক করে বললো,
— আপনি এখানে আমার পাশে শুয়ে আছেন কেনো? এভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন কেনো?
রাফিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— আমার ইচ্ছা।
নিরা আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
— কোথায় নিয়ে এসেছেন আমাকে?
— আমার দুনিয়ায়।
রাফিনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিরা খাট থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আরেকদফা চমকে যায়। মাথা নিচু করে নিজেকে দেখলো। হাত দেখলো, চুল দেখলো। নিরার পড়নে লাল সূতির শাড়ি। গোল্ডেন পারের লাল সূতির শাড়ি। দুই হাতে চার পাঁচটা কাচের চূড়ি। চুল বেণুনি করা লাল ফিতা দিয়ে। এতোক্ষণে রাফিনও উঠে নিরার পেছনে দাঁড়িয়েছে। নিরা ঘুরে রাফিনের বরাবর দাঁড়িয়ে কড়া গলায় জিজ্ঞেস করলো,
— আমার কাপড় কে পাল্টেছে?
রাফিন নখ কামড়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
— মেবি আমি।
নিরা চোয়াল আপনা আপনি ঝুলে গেলো। হা করে তাকিয়ে আছে রাফিনের দিকে। এদিকে রাফিনের ডোন্ট কেয়ার ভাব। নিরা ঝাঝালো কণ্ঠে বললো,
— আপনার এতো সাহস কি করে হলো আমার কাপড় পাল্টানোর?
রাফিন সিরিয়াস ভঙিতে দাঁড়িয়ে বললো,
— শাড়িতে তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই পালটে দিয়েছি।
নিরা রাগে রাফিনের বুকে ঘুষি মারে। রাফিন ঘুষি দেয়া জায়গায় হাত বুলিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বললো,
— ব্যাথা পেয়েছি তো।
— এখানে কেনো এনেছেন আপনি আমাকে? বলুন আর কি চান আপনি?
— আমার বউকে নিয়ে এসেছি তাতে তোমার কি?
নিরা আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বললো,
— কই মালিহাকে তো দেখছি না এখানে। মিথ্যে বলছেন কেনো? আমি থাকবো না এখানে।
— হুশ! ওই মালিহার কথা এখানে আসছে কেনো?
— আপনিই তো বললেন আপনার বউকে নিয়ে এসেছেন।
— হ্যাঁ। বউকে নিয়েই তো এসেছি।
— কোথায় তাহলে আপনার বউ?
— আমার সামনে দাঁড়িয়ে।
নিরা চমকে যায়। বুকের ভেতরে হাতুড়ি পেটা শুরু হয়। কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে কাপাকাপা গলায় বললো,
— মা মানে?
রাফিন নিরাকে দরজার পাশের বাঁশের বেড়ার সাথে চেপে ধরে বললো,
— আমার বউ হচ্ছো তুমি। বলেছিলাম না আমি ফিরে আসবো। তোমাকে এই রাফিন নামক খাচায় বন্ধী করতে। দেখো আমি আমার কথা রেখেছি।
— মা মানে কি বলছেন আপনি? আ আমি ব বউ? ক কিন্তু কি কিভাবে?
— কাল যে পেপারে সাইন করেছো ওটা আমাদের ম্যারেজ রেজিস্ট্রি পেপার ছিলো। তোমার ঘরের সবাই ছিলো সাক্ষী। এবার বুঝলে। আর কালো কস্টিউম পরা মানুষটা তোমার স্বামী ছিলো।
নিরার চোখ ছলছল করে উঠে। অভিমান সব জেগে উঠে। রাফিনকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
— আমাকে আপনার পুতুল মনে হয়? হ্যাঁ? ইচ্ছে হলো শাসন করলেন। ইচ্ছে হলো আগলে রাখলে, ভালোবাসলেন। ইচ্ছে হয়েছে গায়ে হাত তুলে ছুড়ে ফেলে চলে যাবেন? কি পেয়েছেন আপনি আমাকে? ইচ্ছে মতো অপমান করে এখন বিয়ে করে বুক ফুলিয়ে বলছেন আমি আমার কথা রেখেছি। আমার চাইনা আপনার ভালোবাসা। আমি আমার মতোই ঠিক আছি। চলে যান আপনি আমার জীবন থেকে।
নিরা শব্দ করেই কেঁদে দেয়। রাফিন নিরার চোখের পানি মুছে দিয়ে কাছে টেনে নিতে চাইলে নিরা আবার রাফিনকে সরিয়ে দেয়। রাফিন বেশ বুঝতে পারছে নিরার অভিমান ভাঙাতে হলে এবার অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। রাফিন বললো,
— শুনো সব কিছুর পেছনে কারণ ছিলো।
নিরা চেঁচিয়ে বললো,
— আমি জানতে চাই না কোনো কারণ। আমি কিছুই জানতে চাই না। আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন। আপনার সাথে আর এক মূহুর্তও থাকতে চাই না আমি।
নিরার কথায় রাফিন কপাল কুচকে ফেলে। আবারো চেপে ধরে বেড়ার সাথে। নিরা দাপাদাপি করে ছুটার জন্য। ধাক্কা দেয় কয়েকবার। কিন্তু এবার এক চুলও নাড়াতে পারেনি রাফিনকে। নিরা না পেরে কান্না করে বললো,
— কি সমস্যা? কি চাই আপনার? এভাবে ধরে রেখেছেন কেনো?
— আমার বউ আমি ধরে রাখবো। জড়িয়ে ধরবো। আদর করবো তাতে তোমার কি?
নিরার রাগ উঠে। কান্না থাকিয়ে কিছুটা ধমক দিয়েই বললো,
— ছাড়ুন আমাকে।
— না ছাড়বো না। ছাড়ার জন্য তো ধরিনি।
— ছাড়ুন বলছি। ছাড়ুন আমাকে।
— না বাবু ছাড়বো না। এতোদিনের কষ্ট সব ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দেবো।
— আমার চাই না আপনার আদর, ভালোবাসা। ছাড়ুন।
রাফিন আরো শক্ত করে ধরে নিরাকে। এবার নিরা আর নড়তে পারছে না। রাফিন এতো শক্ত করে চেপে ধরায় নিরার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই রাফিনের কাধে কামড় দেয়। রাফিন “আহ” শব্দ করেই একটু দূরে সরে যায়। এই সুযোগে নিরা দৌড়ে বেরিয়ে যায়।
ঘরটা থেকে বেরিয়ে আরেকদফা চমকে যায় নিরা। সাথে মন জুড়িয়ে যায়। পেছন ফিরে ঘরটা একবার দেখলো। এক রুমের বড় একটা বেড়ার ঘর। পাশে কয়েকটা পেয়ারা গাছ। অন্যপাশে আম, কাঁঠাল গাছ। কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখলো একটা পুকুর। পাড় বাঁধানো। সিড়ি গুলো অনেকটা বড় এবং লম্বা। সিড়ির উপরের দিকে দুইপাশে বসার জন্য বেঞ্চের মতো সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। সিমেন্টের বেঞ্চের দুই ধারে অনেক গাছপালা। সারি সারি হরেক রকমের গাছ। নিরা দৌড়ে সেদিকে যায়। পুকুরের থেকে কিছুটা বাঁ দিক করে একটা চাপাকল রয়েছে। চাপাকলের থেকে কিছুটা দূরে সারি সারি ফুলের গাছ। বিভিন্ন ফুলের টব রয়েছে। পুকুরের মাঝ বরার দেয়াল তুলা। মেয়েদের সুবিধার জন্য দেয়া হয়েছে। গাছের পাশে কাপড় পাল্টানোর জন্য ছোট ঘরের মতো বানানো হয়েছে। নিরা সিড়িতে বসে পুকুরে পা ডুবিয়ে দেয়। একটু আগের সব রাগ অভিমান হাওয়া হয়ে গেছে নিরার। মন স্নিগ্ধতায় ছেয়ে গেছে। চোখ বন্ধ করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়। দুই হাত ডুবিয়ে দেয় পুকুরের পানিতে। দুইহাত ভিজে গেলে নিরা আপন মনে হেসে উঠে। আবারো চারপাশে তাকায়। ঘরের ঠিক ডানদিকে একটা বিল দেখতে পায় নিরা। বিলটা কেমন যেনো সম্পূর্ণ লাল। নিরা বেকুবের মতো নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে, “লাল রঙের বিল আছেরে নিরা?” উত্তরের জন্য পুকুর থেকে পা তুলে সেদিকে যায়। একেবারে কাছে এসেই নিরা অবাক হয়। এবার বেশি অবাক হয়েছে। অবাকের চরম পর্যায়ে। নিরা খুশিতে গদগদ হয়ে যায়। আনমনে বলে উঠে, “শাপলাবিল।”
পেছন থেকে কেউ নিরার কানের কাছে মুখ এনে বলে,
— তোমার পছন্দের জায়গায় নিয়ে এসেছি।
নিরা চমকে পেছনে তাকায়। রাফিন দাঁড়িয়ে। এতোক্ষণ পর নিরা রাফিনকে খেয়াল করলো। রাফিন লুঙি পড়েছে। গায়ে সাদা সেন্টু গেঞ্জি। গলায় গামছা ছুলানো। একদম গ্রামের যুবক ছেলেদের মতো লাগছে। দুইজন গাছের নিচে দাঁড়িয়েছে। কড়া রোদ উঠেছে। চারিদিকে এতো এতো গাছপালার কারণে তাদের গায়ে রোদ লাগছে না। ছায়ার মধ্যেই আছে। নিরা মুখ ঘুরিয়ে নেয়। সে আর এখানে এক মুহুর্তও থাকবে না। রাফিন থেকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে বলে,
— আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন। আমি এখানে থাকবো না।
রাফিন কপাল কুচকে তাকায়। নিরা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ঘাটে নৌকা বাঁধা। নিরাকে আচমকা কোলে তুলে নিয়ে নৌকার এক কোনায় বসিয়ে রাফিন অপর প্রান্তে বসে পরে বৈঠা নিয়ে। নিরা উঠে যাওয়ার আগেই নৌকা ঘাট থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে নেয়। নিরা উঠতে চাইলেই রাফিন বললো,
— নড়াচড়া করবে না। নৌকা উলটে যাবে। এই বিলে কিন্তু যোক এবং কেঁচো আছে।
এই কথা শুনের নিরা ঘাপটি মেরে বসে পরে। রাফিন দুষ্টু হাসি হাসে। নিরা আশেপাশে দেখছে। যতদূরে তাকাচ্ছে সব লাল সবুজের মাখামাখি। সূর্যের আলো শাপলা এবং পাতার ফাকে ফাকে পানিতে পড়ায় ঝিলিক মারছে। মনে হচ্ছে শাপলার নিচে সব হিরা রাখা। নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজের পাশেই এই বিল। এটাকে সবাই শাপলা নামে চিনলেও এর মূল নাম “শিমুলিয়া কুলাদি বিল”। রাফিন এবার একটা গান ধরে,
” তুমি না ডাকলে আসবো না
কাছে না এসে ভালোবাসবো না।
দূরত্ব কি ভালাবাসা বাড়ায়? নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল,
গল্পটা পুরনো।
ডুবে ডুবে ভালোবাসি,
তুমি না বাসলেও আমি বাসি।”
যদিও নিরা অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু গানের প্রতিটা লাইন সে মনে গেঁথে নিয়েছে। নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করছে, “আচ্ছা সত্যিই কি দূরত্ব ভালাবোসা বাড়ায় নাকি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?” কয়েক মিনিট ভেবে নিজেকে বললো,
“চলে গেলে তো উনি ফিরে আসতো না। দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণে তো আমি উনাকে ভুলতেও পারিনি। তার মানে আমি উনাকে আগের থেকে বেশি..? হুহ! কিছুই না। আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। এতো সহজে মাফ দিবো না।”
——————————
দুপুরে একজন মহিলা খাবার নিয়ে আসে। তার সাথে একটা বাচ্চা মেয়ে আছে। মহিলা খাবার টেবিলে রাখে। নিরা খাটেই বসে ছিলো। বাচ্চাটা নিরার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। খাবার রেখেই মহিলা বাচ্চা নিয়ে চলে যায়। নিরা এবার একটু ঘরটায় চোখ বুলালো। বেশি কিছু নেই ঘরে। একটা খাট আছে। খাটের পাশে একটা টেবিল। টেবিলের উপরে হারিকেন এবং দিয়াশলাই এর বক্স রাখা। তার পাশেই একটা প্লাস্টিকের মগ এবং দুইটা স্টিলের গ্লাস। টেবিলের সামনে দুইটা চেয়ার রাখা। নিরা উঠে খাবারের ঢাকনা তুললো। ভাত, মুরগির মাংস আর করলা ভাজি রাখা। নিরা মুরগির মাংসে হাত দিবে তার আগেই রাফিন পেছন থেকে নিরার শাড়ির ফাকে হাত ঢুকিয়ে পেটে হাত রাখে। নিরার হাত থেকে ঢাকনা পড়ে যায়। তাড়াতাড়ি ঘুরে রাফিনকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
— অসভ্যতা করবেন না একদম।
— গোসল না করেই খাবে নাকি?
নিরা এবার ভাবনায় পরলো। আসলেই তো গোসল না করেই কি খেতে বসে যাবে। কিন্তু কাপড় তো আনেনি। তাহলে কি পড়বে সে? নিরা আস্তে করে বললো,
— আমি কাপড় আনিনি।
— সমস্যা নেই বার্থডে ড্রেসে থাকবে আরকি। আমিতো তোমার স্বামী আমার সামনে ওভাবে থাকলে আমি একদমই মাইন্ড করবো না। তারপর কাপড় শুকিয়ে গেলে আবার পড়ে নিবে।
নিরা দাতে দাত চেপে বললো,
— অসভ্য।
রাফিন নিরার কোমড় চেপে ধরে কাছে এনে কানের লতিতে হালকা ঠোঁট ছুয়ে দেয়। নিরা কেপে উঠে। সরে আসতে চাইলে রাফিন আরো শক্ত করে ধরে কোমড়। কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
— খাটের নিচে ব্যাগের মধ্যে তোমার জন্য শাড়ি রাখা আছে। আসমানী রঙের সূতির শাড়িটা পড়বে।
কথাটা বলেই কানের লতিতে হালকা কামড় দিয়ে ছেড়ে দেয়। নিরা কান ডলতে ডলতে বললো,
— অসভ্য ডাক্তার।
রাফিন হালকা হাসে। নিরা খাটের নিচ থেকে ব্যাগটা বের করে খাটের উপরে তুলে কাপড় বের করে নেয়। সবগুলো সূতির শাড়ি এখানে। একটাও থ্রিপিস নেই। নিরা বিরক্ত হয়ে কাপড় সব ঘাটতে ঘাটতে বললো,
— থ্রিপিস নেই কেনো? আমি শাড়ি পড়তে পারি না।
রাফিন যেনো এই কথার অপেক্ষায় ছিলো। দুষ্টু হাসি দিয়ে নিরাকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে। ঘাড়ে থুতনি রেখে বললো,
— আমি আছিতো। হেল্প করবো তোমাকে।
— আমার আপনার হেল্পার দরকার নেই। ছাড়ুন।
নিরা রাফিনের দিকে ফিরে বললো,
— যখন তখন এভাবে জড়িয়ে ধরছেন কেনো?
— আমার বউ। যখন যেভাবে ইচ্ছা ধরবো।
কথাটা বলে চোখ মারে। নিরার ভেতরে কেঁপে উঠে লজ্জায়। শাড়িটা নিয়ে রাফিনের পাশ কেটে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।
পুকুরে নেমে কিছুক্ষণ বসে থাকে নিরা। হাত দিয়ে পানি তুলে গায়ে ঢালছে। রাফিন পুকুরে নেমে হাসতে হাসতে বললো,
— এভাবে রাত দিন পার হয়ে যাবে কিন্তু গোসল শেষ হবে না।
নিরা ভেঙছি কাটে। আগের মতোই হাত দিয়ে পানি গায়ে ঢালছে। রাফিন কিছুক্ষণ সাতঁরে এসে নিরার হাত ধরে টান দেয়।
নিরা ভয়ে চিঠকার করে উঠে। রাফিন বিরক্তি নিয়ে বললো,
— উফ! এভাবে চিৎকার করার কি আছে?
রাফিন বুক সমান পানিতে দাঁড়ানো। নিরার কোমড় ধরে উপরে তুলে ধরেছে তাকে। নিরা একবার ভালো করে দেখে বললো,
— আমাকে পাড়ে দিয়ে আসুন। আমি এখানে ডুবে যাবো।
— ডুববে না আমার গলা জড়িয়ে ধরো।
— অসম্ভব কোনোদিনই না। নামান আমাকে।
রাফিন নিরার কোমড় ছেড়ে দিলে নিরা পানিতে ডুবে যায়। আবার কোমড় ধরে উপরে তুলে। নিরা ভয়ে শক্ত করে রাফিনের গলা জড়িয়ে ধরে। আতংকে বলে উঠে,
— আমাকে এভাবে ছেড়ে দিবেন না আমি ডুবে যাবো।
— তাহলে সুন্দর করে গলা জড়িয়ে ধরো।
নিরা উপায় না পেয়ে রাফিনকে জড়িয়ে ধরে। রাফিন বললো,
— নিঃশ্বাস নিবে না আর মুখ খুলবে না।
নিরা মাথা নাড়তেই রাফিন ডুব দেয় নিরাকে নিয়ে। আবার পানির উপরে উঠে আসে। সিড়িতে বসিয়ে বলে এবার গায়ে সাবান মাখো। নিরা নিজের গায়ে সাবান মাখতে শুরু করে। রাফিন অভিমানি সূরে বলে,
— আমাকেও লাগিয়ে দাও।
— পারবো না।
রাফিন রাগ দেখিয়ে বললো,
— কি বললে? আবার বলো।
নিরা ভয় পেলো। আমতা আমতা করে বললো,
— ঠিকাছে দিচ্ছি।
রাফিনের একটু কাছে বসে গায়ে সাবান মেখে দিচ্ছে। রাফিন দুষ্টামি করে বললো,
— সাবান মাখার ছলে আমার শরীর দেখছো, হুম?
নিরা লজ্জায় সরে যায় সেখান থেকে। রাফিন আবারো বুক সমান পানিতে নেমে নিরাকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আবারো একই ভাবে তিন চার ডুব দিয়ে উপরে উঠে আসে। নিরা গামছা নিয়ে কাপড় পাল্টানোর সেই ঘরটাতে চলে যায়। রাফিন ঘাটে বসেই লুঙি পালটে গামছা জড়িয়ে বাড়িতে ঢুকে।
——————————
খাবার টেবিলে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে রাফিন। নিরার এখনো আসার নাম নেই। রাফিন বিড়বিড় করে বললো,
— এতোক্ষণ কি করছে মেয়েটা?
গামছা গলায় ঝুলিয়ে খালি গায়ে কাপড় পাল্টানোর সেই ঘরটাতে আসলো। দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। ঘরটাতে একটু ঢুকে দেখলে নিরা কাপড় পেচিয়ে রেখেছে। শাড়িটা পড়তে পারছে না। ভেজা চুল পিঠে লেপ্টে আছে। দরজা খুলে যাওয়ায় নিরা চৎকার করলো। রাফিন আবারো বিরক্ত হয়ে বললো,
— এতো চিৎকার করার কি আছে?
— আমি এখনো শাড়ি পড়িনি। আপনি যান এখান থেকে।
রাফিন কিছু না বলেই নিরাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে চলে আসে। নিরা বার কয়েক রাফিনের বুকে আলতো ভাবে মেরে মেরে বললো,
— আমি শাড়ি এখনো পড়িনি। নামান আমাকে।
ঘরে এনে খাটের উপর বসিয়ে দিলো। আবার টান দিয়ে খাট থেকে নামিয়ে নিচে দাড় করিয়ে নিজেই শাড়ি পড়াতে শুরু করে। নিরা চেচিয়ে বললো,
— আমি পারবো। সরুন আপনি।
রাফিন ধমক দিয়ে বললো,
— চুপ একদম। ক্ষিদায় পেটের নাড়ি ভূড়ি সব পেচিয়ে যাচ্ছে। আর একটা কথা বললে তোমাকে খাওয়া শুরু করবো।
নিরা ভয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। রাফিন যত্ন করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বললো,
— খাওয়া শুরু করো।
নিরাও বাধ্য মেয়ের মতো খাওয়া শুরু করে। খেয়ে দেয়ে নিরা শুয়ে পড়ে খাটে। মুহুর্তেই ঘুনিয়ে যায় নিরা। রাফিন সবকিছু ঠিক করে রেখে দরজা লাগিয়ে নিরার পাশে শুয়ে পড়ে।
ঘুম ভাঙার পর দেখলো অন্ধকার ঘরে নিরা বসে আছে। আশেপাশে কেউ নেই। ভয়ে নিরার গলা শুকিয়ে আসছে।
·
·
·
চলবে………………………