❤অবশেষে ভালোবাসি (সিজন ২)❤part :3
#writer: রোদেলা❤
।
।
সবাই ডায়নিং এ বসে আছে।।আজ অনেকদিন পর আবার একসাথে,,, সেই তিনবছর আগে সাদিয়া-রিয়াদের বিয়েতে লাস্ট দেখা হয়েছিল।।তারপর সবাই যার যার কাজ নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো যে আর সুযোগই হয়ে ওঠে নি,,,হয়তো সুযোগটা খুঁজতেও যায়নি কেউ।।।।পরশো সাদিয়া-রিয়াদের মেয়ের বয়স ৭ দিন হবে,,,সেই দিনই আকিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।।।কিন্তু সবাইকে ২ দিন আগেই আসতে হয়েছে সাদিয়ার জেদের কাছে হার মেনে,,,বলতে গেলে জোড় করেই এনেছে সবাইকে…..একসাথে সময় কাটাবে বলে,,,,,
।
রাত ১০ঃ৩০… সবাই ডায়নিং এ বসে আছে,উদ্দেশ্য একসাথে ডিনার করা।যদিও সবার মধ্যে একটু অস্বস্তিভাব স্পষ্ট।।তবুও কারো উৎসাহেরও সীমা নেই।।পুরনো কথাগুলোকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা তো করায় যায়,,চেষ্টা করতে ক্ষতি কি?পাশাপাশি দুই চেয়ারে বসেছে সাদিয়া আর রিয়াদ ,,,রিয়াদ বামহাতে সাদিয়ার কোমরে স্লাইড করে চলেছে ক্রমাগত,,রিয়াদের স্পর্শে সাদিয়া শিউরে উঠছে আর বার বার রাগী চোখে তাকাচ্ছে যার অর্থ এই,,,” আশেপাশে দেখো,, সবাই দেখছে হাত সরাও”…কিন্তু রিয়াদ সাদিয়ার চোখ রাঙানোকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে চুপচাপ ডিনার করছে,,,এমন ভাব যেনো আশেপাশে কি হচ্ছে সে সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারনাও নেই,,,সে যেনো খাবার নিয়েই মহা ব্যস্ত।।রিয়াদের অন্যপাশে বসেছে রিয়া,,,রিয়া প্লেটে খাবার নাড়াচাড়া করছে আর আড়চোখে ফাহিমকে দেখছে,,,আবার ফাহিম তাকাতেই লজ্জা আর ভয়ে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে বার বার।।টেবিলের অন্যপাশে বসেছে নাদিয়া ও ফারহান।।ফারহান অল্পস্বল্প রোমান্স করার চেষ্টায় আছে কিন্তু বউয়ের চোখ রাঙানিতে দমে গেছে বেচারা।।।টেবিলের এককোনায় অদিতি বসেছে,,,সে এই মুহূর্তে চরম বিরক্ত,,,বিরক্তির ছাপ মুখে স্পষ্ট।।তার বিরক্তির প্রধান কারন আয়ান,, সে বার বার অদিতির পায়ের উপর পা তুলে দিচ্ছে,, আর স্লাইড করছে,,,এ পর্যন্ত দুই তিনটা লাথিও খেয়েছে বাট সে দমে যাওয়ার পাত্র নয়।।
।
অদিতিঃ পা সড়ান বলছি,,,লুচু কোথাকার,,(ফিসফিসিয়ে রাগী গলায়)
।
আয়ানঃ আমাকে বলছো??
।
অদিতিঃ এখানে লুচু বলে আর কাউকে ম্যানশন করা যায় বলে তো আমার মনে হয় না উইথআউট ইউ।।।
।
আয়ানঃ ওহ রিয়েলি??এখন বুঝবে লুচু কাকে বলে,,,জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ,,,(চোখ টিপে),
।
ফারিনঃ নতুন আনতি,,,আর নতুন আংতেল তোমলা ফিতফিত কলে কি বলতো??আংতেল পাপ্পি তাত্তে বুঝি??
।
ফারিনের কথা শুনে অদিতির চোখ বড়,বড় হয়ে গেলো,,,,আয়ানও অবাক।।।এই দুই বছরের বাচ্চা বলে কি???ফারিন আদো আদো ভাষায় আবার বলতে শুরু করলো….
।
ফারিনঃ পাপাও তাই(চাই) ঘুমানোর আগে ফিতফিত কলে,,,,আমি তুনেচি(শুনেছি)…
।
এবার ফারহান বিষম খেলো,,,,ছেলে যে তাকে এভাবে লজ্জায় ফেলবে তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি।।কাশতে কাশতে নাদিয়ার দিকে তাকালো,,,নাদিয়া তো না পারছে ফারহানকে খেয়ে ফেলতে,,,,,,এদিকে সবাই মুখ চেপে হাসছে।।।অদিতি নিজের লজ্জা ভুলে গিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলো,,,,কিন্তু সাদিয়া ভদ্রতার ধারে কাছে না গিয়ে হো হো করে হেসে দিলো,,,সাথে সবাই।।।আর ফারহান নিরীহ চোখে তাকিয়ে রইল সবার দিকে,,,,বেচারা……..
।
।
★★★
অদিতিঃ আআআআআআআআআআ,,,,,,,,
।
আয়ানঃচুপপপপপ(মুখ চেপে ধরে)চিৎকার করে কি সবাইকে দেখাতে চাও যে তুমি উইথআউট ক্লোথ আছো??
কি হলো কথা বলো,,,
।
অদিতিঃ উমমমম,,,উমমম(চোখ দিয়ে ইশারা করলো মুখ থেকে হাত সরানোর জন্য)
।
আয়ানঃ ওহ,,,,সরি….
।
অদিতিঃইউউউউউ,,,,আপনি আসলেই একটা লুচু,,,লুচু কোথাকার,,,ন্যূনতম ভদ্রতা পর্যন্ত নেই,,,কারো রুমে ডোকার আগে নক করতে হয়,, সেটা জানেন না???অশিক্ষিত জানোয়ার একটা,,, (বেড শিট নিয়ে নিজেকে ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে )
।
এবার আয়ানের মাথায়,রক্ত উঠে গেলো।।,আজিব তো নিজে দরজা লক না করে তোয়ালে পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো।।আর এখন তাকে মেনার্স শেখাচ্ছে হুহ!! আরে সে কি ইচ্ছে করে ওকে এভাবে দেখেছে নাকি?সে তো ভেবেছিলো এটা ওর রুম,,, তাই ভুল করে উইথআউট নক ঢুকে গেছে।।আর এই মেয়ে তো তার ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলছে,,,,হাউ ডেয়ার হার,,,এসব ভেবে রাগে ফুসঁতে ফুঁসতে অদিতিকে এক জটকায় দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো আয়ান….
।
আয়ানঃ এই মেয়ে,,নিজেকে কি মনে করো হ্যা,,,হাউ ডেয়ার ইউ??? আমি লুচু তাই না??অশিক্ষিত জানোয়ার?ওকেহ,,,এখন বোঝাবো জানোয়ার কেমন হয়,,(দাঁতে দাঁত চেপে)
।
অদিতিঃ দে,,,খুনন,,,আপ…..(আর কিছু বলার সুযোগ হয়ে উঠলো না,, তার আগেই অদিতির ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো আয়ান,,,,অদিতির চোখ যেনো বেরিয়ে আসার উপক্রম,,,,এমন কিছুর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না৷।।কয়েক সেকেন্ড পর অদিতি বুঝতে পারলো তারসাথে এক্চুয়েলি কি হচ্ছে,,,, বুঝার পর মুহূর্তেই অদিতি কিল, ঘুষি, ধাক্কা দিয়ে আয়ানকে সরানোর প্রানপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আয়ানের মতো বডিওয়ালা ছেলের সাথে ওর পেড়ে ওঠার কথাও না…… এবার অদিতি ক্লান্ত হয়ে হাল ছাড়ে,,,,প্রায়,১০ মিনিট পর ঠোঁটে একটা কামড় দিয়ে অদিতিকে ছেড়ে দিলো আয়ান,,,,,
।
আয়ানঃ সো মিস ঝগরাটে মাইন্ড ইট।।।এরপর আয়ান চৌধুরীর সাথে কথা বলার সময় ভেবে কথা বলবে নয়তো লুচুগিরি কাকে বলে সেটা আরো ভালো করে বুঝিয়ে দিবো,,,গড ইট???(বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেলো)
।
অদিতি এখনো যেনো ঘোরের মধ্যেই আছে।।কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারছে না সে।।কিছুক্ষনপর নড়েচড়ে ওঠলো অদিতি,দুই হাত দিয়ে ঠোঁটটা চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পড়লো…কি হলো এটা তার সাথে??চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে অদিতির, এমন পরিস্থিতির শিকার তাকে এর আগে কখনো হতে হয় নি।।কোনো ছেলের এতো কাছেও যাওয়া হয় নি কখনো।।রিয়াদের সাথে রিলেশনে থাকা কালীন শুধু হাত ধরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো ওদের রিলেশন তবু সবসময় অদিতিই জোর করে ধরতো রিয়াদের হাত।রিয়াদ তো পারলে অদিতি থেকে একহাত দূরে গিয়ে বসতো সবসময়, ব্যাপারটায় তখন বেশ মজায় পেতো অদিতি কিন্তু কখনও এর কারন চিন্তা করে দেখে নি। ও সবসময় ভাবতো হয়তো রিয়াদ এসবে আনকম্ফোর্টেবল ফিল করে না তাই দূরে দূরে থাকে কিন্তু ওর মনে যে শুধু সাদিয়া আছে তা কে জানতো?এমনি মন মেজাজ খারাপ তার উপর আয়ানের এমন লুচু বিহেভিয়ারে অদিতির ইচ্ছে করছে সবকিছু লন্ডভন্ড করে ফেলতে।।সে চুপ থাকে তারমানে এই নয় যে এবারও চুপ থাকবে,,এই আয়ান চৌধুরীকে উচিত শিক্ষা তো অদিতি দিবেই দিবে,,জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ মিস্টার কানা ঢেড়শ।।
।
।
সাদিয়াঃ বাবুনি??তুই কবে বড় হবি বল তো??তোর ফারিন ভাইয়ার মতো আধো আধো কথা বলবি,,আচ্ছা তুইও কি তোর ফারিন ভাইয়ার মতো দুষ্টু হবি??মাম্মামনি আর পাপাকে লজ্জায় ফেলে মজা নিবি??হুমম হুমম??(গালে আদর করে দিয়ে)
।
রিয়াদঃ কি এতো গল্প চলে মা মেয়ের??
।
সাদিয়াঃ রিদ,,,আজ দুলাভাই আর আপ্পির মুখটা দেখার মতো ছিলো,,,দারুন এন্টারটেইনমেন্ট,,, ফারিন তো ফাটিয়ে দিয়েছে,,,,হিহিহিহিহিহি।।
।
রিয়াদঃ বাহ বা,,,,আমার বউ দেখি আজ খুব খুশি(পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,,, ঘাড়ে মুখ গুজে)
।
সাদিয়াঃ হুমম,,,তা খুশি,,,অনেকদিনপর সবাই একসাথে হাসিখুশি,,,,আমার মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানো??
।
রিয়াদঃ (ঘাড়ে মুখ গুঁজেই)হুমমমম??
।
সাদিয়াঃ আমি হয়তো তোমার আর অদিতির মধ্যে চলে এসেছি।।।আমার গিল্টি ফিল হয় যেনো ওর ভাগের ভালোবাসা দিয়ে আমি আমার জুলি ভরেছি(বলতেই রিয়াদ তার হাতের বাধঁন হালকা করে সাদিয়ার,মুখের দিকে তাকালো),,,,তোমার জন্য আমি নই হয়তো অদিতিই বেটার ছিলো……(মুখ কালো করে)
।
রিয়াদ এবার সাদিয়াকে ছেড়ে দিয়ে সাদিয়ার সামনে এসে দাড়াঁলো।দুই হাত সাদিয়ার দুই গালে রেখে মুখটা উচু করে ধরে বলতে লাগলো…
।
রিয়াদঃ এই কিউটি,,,,ইউ নো না,,, হাউ মাচ আই লাভ ইউ।।।তুমি কখনোই অদিতি আর আমার মাঝে আসো নি,,,তাছাড়া আমাদের দুজনের মাঝে কিছু ছিলোই না,,,,ওটা তোমাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা ছিলো মাত্র।।অদিতি সরে না,দাড়ালে তিনটা জীবন নষ্ট হয়ে যতো।।আমি ওকে কখনোই মেনে নিতে পারতাম না৷৷।।পারলেও হয়তো সে আমার মাঝে কখনো ওর জন্য ভালোবাসা খুজেঁ পেতো না।।।তুমি আমার লাইফের বেস্ট পার্ট এন্ড বেস্ট ডিসিশন।।যে পার্টটা আমার রক্তে মিশে গেছে।।।সাদিয়া,,,,তুমি আমার এমন একটা বদঅভ্যাস যা আমি কখনো ছাড়তে চাই না,,,,তোমাকে আমার বড্ড প্রয়োজন,,,,প্লিজ আমার সামনে এসব আর বলো না,,,,লাগে তো এখানে,,(বুকের বা পাশে হাত রেখে)
।
সাদিয়াও এবার রিয়াদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,,,,,উফফফ কি শান্তি।।। রিয়াদের বুক থেকে মাথা তুলে পা দুটো হালকা উচুঁ করে হুট করেই রিয়াদের ঠোঁটে চুমু দিয়ে আবারো মুখ গুজলো বুকে,,,,রিয়াদ তো রীতিমতো অবাক…
।
রিয়াদঃ ওহ,,মাই গড,,,,হোয়াট ওয়াজ দেট???তুমি নিজ থেকে??আই কান্ট বিলিভ,,,,,,উফফ,,,প্লিজ এভাবে লজ্জা পেয়ো না একদম স্ট্রবেরী আইসক্রিমের মতো লাগে,,,,তখন মন চাই একদম খেয়ে ফেলি,,,,(বলে মুখ এগিয়ে আনতেই দরজায় টোকা পড়লো)
।
অদিতিঃ উহুম,,,,উহুম,,,।
।
কারো কাশির শব্দে রিয়াদ আর সাদিয়া যেনো বিদ্যুৎ বেগে দুজন থেকে দূরে গিয়ে দাড়ালো…
।
রিয়াদঃ আরে অদিতি তুমি??কিছু দরকার??(আসার আর টাইম পাইলো না,,ধেৎ)
।
অদিতিঃ হুমম,,আপনার বউকে।।।রোমান্স শেষ হলে আপনার বউকে একটু পেতে পারি??এই সাদি?এদিকে আয় একটা কথা আছে তোর সাথে।।।
।
সাদিয়াঃ আমার,সাথে?? কি কথা??
।
অদিতিঃ কাছে তো আয়,, আর রিয়াদ তুমি যাও,,,,তোমাকে বলা যাবে না,,
।
রিয়াদঃ কিন্তু কেন?(অবাক হয়ে)এটা কেমন বিচার??
।
অদিতিঃ যেমন বিচারই হোক,,, তুমি এখন যাওওওওও।
।
রিয়াদ বেরিয়ে যাওয়াতেই সাদিয়া মুখ খুললো,,,কিরে??কি এমন দরকার??যার জন্য গুপ্ত বৈঠক (অদিতি কানে কানে কিছু বললো,,,যা,শুনে সাদিয়া অবাক)….. কিন্তু কেনো????
।
অদিতিঃ এতো কিছু তোর জানা লাগবে না,,,এনিওয়ে থেংক্স ইন এডভান্স,,,(বলেই চোখ টিপে শয়তানী হাসি দিয়ে চলে গেলো)
।
সাদিয়াঃ কিন্তু,,,তুইইই,,,,আরে ব্যাস চলে গেলো,,,,(মুখ গোমরা করে)
।
★★★
ছাঁদে দাড়িয়ে আছে ফাহিম।।।দৃষ্টি আকাশের দিকে,,,বেচারার মনটা বেশ খারাপ।।কিন্তু কেনো খারাপ তা সে নিজেও বুঝতে পারছে না,,,,নিজের মধ্যে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে….যেনো কিছু একটা নেই
#চলবে….