মুহূর্তে পর্ব-১২

0
830

#মুহূর্তে
পর্ব-১২
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

কথন কবিতা ও তাহিরাকে ভার্সিটি গেটের সামনে নামিয়ে দেয়। দরজার বাহিরের থেকে গান-বাজনার শব্দ শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। মাঠেই বড় করে আয়োজন করা। গান বাজছে। স্টেজে নাচ হচ্ছে। তাহিরা ও কবিতা দরজা দিয়ে ঢুকতেই লিমন তাদের বলল, “ভাবি আপনাদেরই অপেক্ষা করছিলাম। ধ্রুব ভাই বলল আপনারা এসে পড়ছেন। আপনাদের নিতে আসতে।”
“আর আপনার ধ্রুব ভাই কীভাবে জানল?” কবিতা প্রশ্ন করেই তাকায় তাহিরার দিকে। ধ্রুবকে তাহিরা পছন্দ করতো তা তার আগের থেকে জানা। কিন্তু ধ্রুবর চরিত্র সম্পর্কে মোটেও ধারণা ছিলো না কবিতার। ভার্সিটি আসার পর সে জানতে পারে এবং ধ্রুবর বিরুদ্ধে কথাও বলে তাহিরাকে। তার বোনের মতো এত ভালো মেয়ে এমন কোনো ছেলের সাথে জীবন কাটাতে পারে না যে প্রতিদিন ভিন্ন মেয়ের সাথে ঘুরে বেড়ায়। ক’দিন ধরে ধ্রুব ও তাহিরার মাঝে কিছু চলছে। তা ঠিকই বুঝতে পারে কবিতা। কিন্তু দুইজন মুখে কিছু বলে না। ধ্রুবকেও আজকাল কোনো মেয়ের সাথে দেখা যায় না। দুইজনের মাঝে ঠিক কি হচ্ছে বুঝতে পারে না কবিতা।

সামনের সিটগুলোর মধ্যে ধ্রুব বসা ছিলো। লিমন তাদের সেখানেই নিয়ে গেল। ধ্রুব তাহিরাকে দেখে তার সামনে এসে একগাল হেসে বলে, “তোকে বলেছিলাম না এই রঙ তোর উপর বেশি মানাবে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তোকে।”
“জ্বি না, আমার উপর সাদা রঙ বেশি মানায় বলেই আপনি আমাকে এই শাড়ি পরতে বলেছেন। যেন আমাকে বেশি সুন্দর না দেখায় তাই না?”
জোরপূর্বক হাসে ধ্রুব। প্রশ্নটা এড়িয়ে যাবার জন্য কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে, “কবিতা তোমাকে প্রথম শাড়িতে দেখলাম। সুন্দর লাগছে।”
কবিতা উওর দেয় না। জোরপূর্বক হেসে একটি সিটে বসে পড়ে। তাহিরা এবং ধ্রুবও তার পাশে এসে বসে। দুইজনে গল্প করছিলো অনেক। কবিতা ভাবলো কথা শুনে বোঝা যাবে তাদের মাঝে কি চলছে। বুঝা গেল না। সাধারণ কথা-বার্তা। নিরাশ হয় কবিতা, তার সাথে কথা বলার মতো কেউ নেই। অনু আজ আসে নি। তার কাছে এইসব অনুষ্ঠান ভীষণ বিরক্তির।

কবিতা পাশে তাকিয়ে খেয়াল করে তীর্থ একজনের সাথে কথা বলতে বলতে তার পাশে এসে বসে। সে কথা বলায় ব্যস্ত। তার দিকে একবার তাকায়ও না তীর্থ। গম্ভীরমুখে কথা বলছিলো তীর্থ। কবিতা হাঁটুর উপর কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইল তীর্থর দিকে। গম্ভীরমুখে তাকে ভালোই লাগে। আকর্ষণীয় দেখায়।

কথা শেষে গম্ভীরমুখ নিয়েই তীর্থ ধ্রুবকে ডাক দিয়ে মুখ ফিরায়। হঠাৎ-ই তার মুখের ভাব পরিবর্তন হয়। চোখদুটো বড় বড় করে তাকিয়ে রয় সে কবিতার দিকে। কবিতাও তাকিয়ে ছিলো তার দিকে। ইচ্ছে করেই মুখ ফিরায় নি। কেন যেন তীর্থ যেভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকে তা দেখতে ভালো লাগে। মনে হয় এই জগতে তার থেকে বেশি সুন্দর কাওকে দেখে নি তীর্থ। এমন মুগ্ধতা ছেয়ে থাকে তার দৃষ্টিতে।

তীর্থের মুগ্ধতা ভরা দৃষ্টি যাচাই করতে করতে যখন ক্লান্ত হয় কবিতা তখন জিজ্ঞেস করে, “এভাবে তাকিয়ে থেকে কী দেখছেন?”
ঘোর কাটলো যেন তীর্থের। সে চোখ নামিয়ে নেয় সাথে সাথে। লজ্জাও পায়। কোনো উওর দেয় না।
কবিতার হাসি গাঢ় হয়। সে তীর্থের দিকে একটুখানি ঝুঁকে বলে, “এমন করে তাকিয়ে থাকাটাকে বেহায়াপনা বলে।”
“তাহলে তো তোমার দোষ।”
“আমার দোষ কীভাবে?” বিস্মিত গলায় জিজ্ঞেস করে কবিতা।
“আগে কখনো বেহায়াপনা করি নি। এই প্রথম, তাও তোমায় দেখে। তাহলে এইটা কী তোমার দোষ নয়? তোমাকে এত সুন্দর দেখালে আমার দোষ কোথায়?”

তীর্থের কথা শোনার পর তার পাশে বসে থাকা লিমন বলে, “ভাই…ভাই আপনে এইটা কী কইলেন? কেমনে কইলেন? ভাই আপনার জ্বর আইসে? আপনে ঠিক আছেন?”
“বিরক্ত করিস না-তো।” তীর্থ ধমক দিলো লিমনকে। কিন্তু এতে লিমনের উপর কোনো প্রভাব পড়ে না। সে উঁচু স্বরে বলে, “ধ্রুব ভাই আপনে শুনলেন তীর্থ ভাই আজ প্রথম কাওরে প্রশংসা করছে। দাঁড়ান আমি এখনই পলাশ আর রতন ভাইরে বইলা আসি। এটা তো আকস্মিক ঘটনা।”
তীর্থ ভীষণ লজ্জিত হয় এইসব শুনে। কিন্তু কবিতার কেন যেন এই দৃশ্য ভীষণ মজার লাগে। সে খিলখিল করে হেসে উঠে।

লিমন যেতেই ভীষণ লজ্জায় পড়ে তীর্থ। সবার সামনে এমন কান্ড কেন করতে হলো তার? ভীষণ রাগও উঠলো। মুহূর্তে না গড়াতেই এক মিষ্টি হাসির শব্দ তার কানে এসে ভাসে। তীর্থ তাকায় তার পাশের চেয়ারে বসা রূপবতীর দিকে। সাদা রঙ তার উপর অসম্ভব সুন্দর লাগছে। তাকে স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে, পবিত্র লাগছে। তীর্থের হঠাৎ-ই মন চাইলো একটি শীতের সকাল হোক, চারদিকে কুয়াশা পড়তে থাকুক, নিস্তব্ধ হোক এক পথ। সে পথে হাত ধরে হাঁটবে সে তার পাশে বসা মেয়েটির সাথে। ঠিক এমনভাবেই সেজে থাকবে সে। পরে থাকবে সাদা জামদানী। খুবই ছোট একটি কল্পনা, অথচ এই কল্পনাতেই তার মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। কবিতার হাসি দেখে তার ঠোঁটের কোণেও হাসি এঁকে এলো।

কিছু সময় পর তাহিরার এক বান্ধবী তাকে ডেকে নিয়ে গেল। ধ্রুবও অন্য কারও সাথে কথায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তীর্থ সুযোগ পেয়ে বলে, “শুনো।”
“হুঁ” কবিতা স্টেজের গানের প্রদর্শন দেখছিলো।
“তোমাকে…. মানে বলছিলাম কি তুমি একদিন শুধু চোখে কাজল দিয়ে সেজে এই শাড়িটি পরবে?”
তীর্থের এমন আবদার শুনে কবিতা তাকায় তার দিকে। মিটিমিটি হেসে জিজ্ঞেস করে, “কেন আপনার দেখতে মন চাচ্ছে?”
“না মানে…এমনিতেই বলছিলাম।”
“আপনার মানিব্যাগে আপনার প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা আছে?”
এমন প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে যায় তীর্থ, “আছে। কিন্তু কেন
বলোতো।”
“আপনার জন্য একটা শার্ট অথবা পাঞ্জাবি কিনব তাই। গেঞ্জির উপর এমন জিন্সের জ্যাকেট পড়ে কেউ অনুষ্ঠানে আসে? কালারও একদম মিসম্যাচ। আপনাকে এক কালারের শার্টে বা পাঞ্জাবিতে কত হ্যান্ডসাম লাগবে জানেন?”
“তুমি এখন যাইতে চাইছ?”
“নবীনবরণ কী আজ না?”
তীর্থ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।
“তো আমরা এখনই যাচ্ছি। আসুন।”

তীর্থ কবিতাকে মানা করলো না। তারা তখনই বের হয় অনুষ্ঠান থেকে। তীর্থ তার বাইক বের করার পর কবিতা হুমকির সুরে বলে, “দেখেন আগে কখনো আমি বাইকে উঠি নি আস্তে চালাবেন। এক্সিডেন্ট করলে অবিবাহিতই মরতে হবে। একটা প্রেমও করতে পারলাম না এই পর্যন্ত।”
“কেন তোমার না বিয়ে ঠিক হলো, শুনলাম।” খুব গম্ভীর শুনাল তীর্থকে। তীর্থ কথাটা বলার সময় একপলক তাকায়ও না কবিতার দিকে। কবিতা সাবধানে তীর্থের বাইকে উঠে বসে, “এখনো বিয়ে ঠিক হয় নি। আমাদের পরিবার রাজি কিন্তু কথন ও আমি না।”
“কথন কে?” তীর্থ বাইক স্টার্ট করে। বাইক চালু হতেই কবিতা শক্ত করে তীর্থের কাঁধ ধরে নেয়। তীর্থ একপলক বাইকের আয়নায় কবিতাকে দেখে নেয়। কী অপরূপ দেখাচ্ছে তাকে!
গতকাল কবিতার বিয়ের কথা শুনার পর থেকে তার মনে হচ্ছিলো তার বুকের ভেতর একটা ভারী পাথর রেখেছে কেউ। ভারী হয়ে আসছিলো তার বুকটা। সে ভারী ভাবটা আর নেই। উল্টো তার মাঝে এতটা ভালোলাগা কাজ করছে। যতটা ভালো লাগা গত একযুগ ধরে লাগে নি, তা আজ লাগছে। আচ্ছা, মেয়েটা কী জাদু জানে?

“কথন সে ছেলের নাম, যার সাথে বিয়ে ঠিক হলো।” কবিতার কন্ঠে ঘোর ভাঙে তীর্থে।
“ওহ, তো বিয়ের জন্য মানা করার কারণ?”
“উনি প্রেম অথবা বিয়েতে জড়াতে চায় না। আগে নিজের ক্যারিয়ারে কিছু করতে চায়। আর আমি…..” থেমে যায় কবিতা। সে কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। কথন সুদর্শন, ভদ্র, তার পরিবার ভালো, তার ভবিষ্যতও উজ্জ্বল এবং সবচেয়ে বড় বিষয় তার মনোভাব কবিতার সাথে মিলে। আসলেই তো, সে বিয়ের জন্য রাজি না কেন?
“তুমি?” প্রশ্ন করে তীর্থ।
“ঠিক জানি না। আমাদের দেখা হলে ঝগড়া ছাড়া কথা হয় নি, সম্ভবত এই কারণে। আবার তাকে মনেও ধরে নি।”
“অন্যকাওকে ধরেছে?” প্রশ্নটায় একটু হকচকিয়ে যায় কবিতা। আয়নায় একপলক তীর্থকে দেখে বলে, “ঠিক জানি না।”
.
.
তাহিরা কথা বলছিল তার ক্লাসের বান্ধবীদের সাথে। বাহিরে শব্দ বেশি হওয়ায় তারা ভেতরে এসে গল্প করছিলো। হঠাৎ একটি মেয়ে এসে তার গালে জোরে চড় মারে। তাহিরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটির দিকে। মেয়েটির সাথে একসময় ধ্রুবর অনেক কথা হতো। তার নাম জুঁই। তাহিরা ওয়াদা করার পর ধ্রুব আর কোনো মেয়ের সাথে যোগাযোগ রাখে নি। জুঁইও তার মাঝে একজন। এ-কারণে জুঁই রেগে আছে তাহিরার উপর। তার সন্দেহ তাহিরাই ধ্রুবর এমন ব্যবহারের কারণ। জুঁই ধমকের সুরে তাহিরাকে বলে, “তোকে বলেছিলাম? তোকে বলেছিলাম ধ্রুবর কাছ থেকে দূরে থাকতে? বলি নাই? তোর সাহস কত বড় ওকে আমার কাছ থেকে দূর করার।”
“জুঁই প্লিজ এইখানে তামাশা করো না। আমরা অন্য কোথাও যেয়ে কথা বলি।”
“কেন অন্যকোথাও যাব? ও, তুই কেমন মেয়ে তা সবাই জানলে তোর খারাপ লাগবে?” জুঁই আরও উঁচু স্বরে কথা বলতে শুরু করে, “অন্যের প্রেমিককে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিজের বশে করার সময় লোকের কথা মাথায় আসে না?”
“দেখ জুঁই তুমি আমাকে ভুল ভাবছ।”
“আমি ভুল ভাবছি? আমি নিজে শুনেছিলাম তুই ধ্রুবকে বলেছিলি যেন আমার সাথে কথা না বলে। তারপরও ধ্রুব আমার সাথে কথা বলছে দেখে তোর সহ্য হয় নি। তাই তুই….” তাহিরা জুঁইয়ের কথা কেটে বলে, “কারণ আমি চাই নি তুমি কষ্ট পাও। আমি কখনো চাই নি ধ্রুবর জন্য কোনো মেয়ে কষ্ট পাবে। তুমিও জানো ও তোমাকে আসলে ভালোবাসতো না। আমি প্রতি মেয়ের বেলায় এই কথাই ওকে বুঝাই। তোমার জন্যই তো আমি এই কথাটা বলেছিলাম।”

“ওহ সাট আপ।” আর্তনাদ করে উঠে জুঁই, “তোর বদ নজর আগের থেকে ছিলো ওর উপর। তাই তুই এমন করেছিস। নিজের শরীর ওর কাছে বিলিয়ে দিয়ে ওঁকে নিজের বশে করেছিস তাই না? এই কারণেই তো ও একবার আমার দিকে তাকায়ও না। এমন বেশ্যাগিরি করে কত ছেলের থেকে টাকা বের করেছিস তুই?”
জুঁইয়ের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেল তাহিরা। তার চোখ ভিজে গেল। সে নিজের নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। এত বড় অপবাদ কখনো তার শুনতে হবে সে কখনো ভাবে নি। আজ পর্যন্ত কেউ তার চরিত্রের উপর প্রশ্ন তুলে নি।

“এইখানে হচ্ছেটা কী?” দরজা থেকে ধ্রুবর কন্ঠ শুনে তাহিরা সেদিকে তাকায়। ধ্রুবর পাশে তাহিরার এক বান্ধবী দাঁড়ানো সম্ভবত সে-ই ডেকে এনেছে ধ্রুবকে।

ধ্রুব তাহিরার দিকে তাকায়। তার নয়নজোড়ায় পানি ছলছল করছিলো। মুহূর্ত না গড়াতেই এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে তার গালে। ধ্রুব অস্থির হয়ে যায়। তার বুকের ভেতরটা মুচড়ে উঠে। সে তাহিরার দিকে এগোতেই মাঝপথে জুঁই তার সামনে এসে দাঁড়ায়। তাকে অস্থির দেখায়। সে ছটফটিয়ে ধ্রুবর হাত ধরে বলে, “ধ্রুব…. ধ্রুব আমি জানি ওর কারণে তুমি আমাকে ইগনোর করছ। তুমি আমার কথা একবার তো শুনবে। আমি নিশ্চিত… নিশ্চিত যে ও তোমার টাকার জন্য তোমাকে ফাঁসিয়েছে। তোমার বাড়িতে ভাড়া থাকতে থাকতে এখন বাড়ির উপর রাজত্ব করার শখ জেগেছে ওর।”

ধ্রুব বিরক্তি নিয়ে তাকায় জুঁইয়ের দিকে, “তোমার আমাকে বলতে হবে না তাহিরা কেমন। ওর টাকার প্রতি কোনো লোভ নেই। ও অন্যান্য মেয়েদের মতো নয় যে টাকার কারণে আমার পিছনে দৌঁড়াবে। তাহিরা আজ পর্যন্ত আমার কাছ থেকে এক পয়সাও নেয় নি। আমি ওকে ছোটবেলা থেকে চিনি এন্ড গেস হোয়াট কয়েকশো বছর সাধনা করলেও ওর মতো ভালো হওয়া তোমার পক্ষে সম্ভব না।”
ধ্রুব এক ঝটকায় জুঁইয়ের হাত সরিয়ে তাহিরার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। তাহিরা গালভেজা জল আলতো আঙুলে মুছে বলে, “সরি ফুলটুসি, আমার কারণে তোর এত আজেবাজে কথা শুনতে হলো।” ধ্রুব কান ধরে নরম দৃষ্টিতে তাকায় তাহিরার দিকে, “সরি।”

তাহিরার পাশের মেয়েটি এগিয়ে এসে অভিযোগের সুরে জানায়, “ধ্রুব তুই জানিস এই মেয়ে কি বলেছে তাহিরাকে?”
মেয়েটি কিছু বলতে নিলেই তাহিরা থামায় তাকে। ধ্রুবর দৃষ্টি সরু হয়। সে মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করে, “কী বলেছে?”
মেয়েটি উওর না দেওয়ায় ধ্রুব আবার উঁচু স্বরে প্রশ্ন করে, ” আমি জিজ্ঞেস করছি কী বলেছে লিমা?”
“বলেছে যে তাহিরা না’কি… ইশশ কীভাবে বলি আমি?”
“জলদি বল।”
লিমা চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে বলে, “ও না’কি শরীর বিলিয়ে তোকে বশে করেছে। তোকে ছাড়া অন্যান্য ছেলের থেকে না’কি এ…এভাবে টাকা নিয়েছে এসব বলেছে। বে…বেশ্যা শব্দও ব্যবহার করেছে।”
কথাটা শুনতেই চমকে উঠে ধ্রুব। সে তাহিরার দিকে তাকায়। এই বাক্য শুনে তার চোখেও জল ভেসে উঠে। মাথায় রক্ত চড়ে যায়। সে তার পাশে থাকা চেয়ার এক লাত্থিতে দূরে সরিয়ে দেয়। রুমটায় জোরে এক শব্দ হয়ে উঠে। সে পিছনে ফিরে জুঁইয়ের গলা টিপে ধরে সোজা।
আর্তনাদ দিয়ে উঠে সে, “তোর সাহস কীভাবে হয় আমার তাহিরার চরিত্রে প্রশ্ন তোলার? তুই কে? তোর চরিত্রের গুণগান শুনাব সবাইকে?”

রুমের সবাই হতবাক এই কান্ড দেখে। ধ্রুবকে কেউ কখনো এর পূর্বে রাগে দেখে নি। আর মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার তো দূরের কথা তাদের সাথে উঁচু স্বরে কখনো কথাও বলে নি সে।
তাহিরা দ্রুত যেয়ে ধ্রুবর হাত ধরে বলে, “কী করছিস তুই? ছাড় ওকে।”
ধ্রুবর মেজাজ তাহিরার উপরও গরম হয়, “মাঝখানে আসবি না তাহিরা। দূরে সরে দাঁড়া।”
জুঁইকে একটা বাজে গালি দিয়ে সে আবারও বলে, “যার নিজের চরিত্রের ঠিক ঠিকানা নেই সে আবার আমার তাহিরার চরিত্রে প্রশ্ন তুলছে? তোর কি ইচ্ছা চরিত্র কেমন তা আমি তোর মা বাপ আর সম্পূর্ণ ঢাকা শহরকে জানাই?”
জুঁইয়ের মুখ ভয়ার্ত হয়ে এলো। সে নিজেকে ধ্রুবর কাছ থেকে ছাড়াতে চাইলেও পাড়লো না। কিছু বলবে যে তার শক্তিও পাচ্ছে না সে। তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। হঠাৎ কাশতে শুরু করে সে। তাহিরা বহু কষ্টে ধ্রুবর কাছ থেকে ছাড়ায় জুঁইকে।

ধ্রুব এক ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দেয় জুঁইকে তারপর তাহিরার হাত ধরে বলে, “নিজের মতো সবাইকে ভাববি না। আমার তাহিরা পবিত্র। ওর চরিত্রে কোনো দাগ নেই। আর আমার ও তাহিরার সম্পর্কে জানতে চাস? আমি ওকে ভালোবাসি এবং কেবল ওকেই ভালোবাসি। আর আমি ওকেই বিয়ে করব।”
ধ্রুব তাহিরাকে টেনে নিজের সাথে নিয়ে যায়।

ধ্রুব ভার্সিটি থেকে বের হয়ে রাগের মাথায় কল দেয় তার মা’কে, “আম্মু তুমি দ্রুত আমাদের এলাকার কাজি অফিসে আসো। আমি এই মুহূর্তে তাহিরাকে বিয়ে করতে চাই।”

চলবে….

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here