মুহূর্তে পর্ব-২৯

0
648

#মুহূর্তে
পর্ব-২৯
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“খবরদার আমাকে স্পর্শ করার সাহসও তুমি করবে না। আমি এই মুহূর্তে তোমার চেহেরাও দেখতে চাই না।”
কবিতায় কথাটি বলে উঠে গেল। আলমারির সামনে নিচে পড়ে থাকা ফাইলটি উঠিয়ে চলে গেল সেখান থেকে।

কবিতা চোখ মুখ মুছে গেল বাহিরে। গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছিলো কথন। কবিতাকে গাড়িতে উঠে বসতে দেখে সে বলল, “তোমার বাসা থেকে বোধহয় কিছু শব্দ শোনা যাচ্ছিল।”
“ওহ, ওই টিভি চালু ছিলো। খেয়াল করি নি।”
কথন খেয়াল করলো কবিতা চেহারাটা। কেমন মলিন হয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনই কান্না করেছে সে।
“কবিতা, তুমি কান্না করেছ?”
“আমি? না তো আমি কাঁদবো কেন?”
“তোমার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।”
কিছুক্ষণ চুপ রইল কবিতা। তারপর বলল, “কাব্য অসুস্থ তো ওই জন্য একটু চিন্তা হচ্ছিল।”
কথন হেসে কবিতাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “ডোন্ট ওয়ারি। ওর কিছু হবে না।”
কবিতা জোরপূর্বক হাসলো।

কথন দ্রুত গাড়ি চালিয়ে হাস্পাতালের দিকে রওনা দিলো। মাঝরাস্তায় সে জিজ্ঞেস করে, “তীর্থ কোথায়? ওকে দেখলাম না।”
“উনি…উনি একটা সমস্যায় ফেঁসে গেছে। এসে পড়বে।”
মিথ্যা বলল কবিতা। তার আর তীর্থের মাঝে যত বড়ই সমস্যা হোক না কেন, তীর্থ তার স্বামী। তার স্বামীর সম্মানের মান রাখাটা তার দায়িত্ব। আর যাই হোক, সে অন্যকারো সামনে তার স্বামীকে ছোট করতে পারে না।

জানালা দিয়ে হিম শীতল বাতাস এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘ ডাকছে। বজ্রধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই মুহূর্তও খুবই সুন্দর হতে পাড়তো।
কিন্তু আফসোস!
কবিতার সাথে এমন মুহূর্ত নিয়ে কল্পনা করবার অধিকার তার নেই। তবুও ছোট একটি স্মৃতির পৃষ্ঠা থেকে একটি মিষ্টি মুহূর্ত উঁকি দিলো কথনের মনে। ঘটনাটা সাড়ে সাত বছর পূর্বের…….

একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলো দুইজন। কথনের বান্ধবীর বিয়ে। অনুষ্ঠানে কবিতার সাথে একটি ঘটনার পর সে আর সেখানে থাকতে চাইলো না, রাগে সেখান থেকে বের হয়ে গেল। কথনও তার পিছু নেয়। সে এসেই হাত ধরে কবিতার, “আরে বাবা এত রাগ করছ কেন? আর এভাবে রাগ করে কেউ চলে আসে? কি মনে করবে তারা? ভেতরে চলো।”
“আপনার বন্ধুর বিয়ে আপনি যান। এতকিছুর পর আমি কেন যাব? আমি এখন বাসায় যাব।”
“তোমাকে আমি একা যেতে দিব না’কি?”
“হাত ছাড়েন তো। মেজাজ খারাপ করবেন না।”
“ছাড়ব না। ভেতরে চলো।”
কবিতা নিজের জুতা খুলে তা হাতে নিতেই কথন তার হাত ছেড়ে পিছিয়ে গেল। ভীত গলায় বলল, “দে..দেখ যাই হোক না কেন আমি বয়সে তোমার বড়। তুমি যা চিন্তা করছ তা একদম ঠিক না।”
কবিতা মুখ বানিয়ে বলল, “ভাই হিল পরে আমার পা’য়ের সাথে সাথে আমিও শেষ। মানুষ কচুর বিয়ে করে। তাদের বিয়েতে এসে আমার অবস্থা খারাপ। একতো এই ফালতু হিল, এর উপর এই শাড়ি। সামলাতে সামলাতে আমি মরে যাচ্ছি। অসহ্য! পা ব্যাথা হয়ে গিয়েছিলো, তাই হাতে নিলাম। আপনি কী ভেবে ভয় পেলেন?” উওরের অপেক্ষা না করেই কবিতা হাঁটতে লাগলো। তার হাঁটারও অন্যরকম ভঙ্গি ছিলো। সে অনেকটা লাফিয়ে হাঁটতো। একদম বাচ্চাদের মতো।

কথন আবারও তার পিছনে গেল, “আচ্ছা কবিতা চলো তোমায় বাসায় দিয়ে আসি। বৃষ্টি পড়বে মনে হচ্ছে।”
“উঁহু, আপনার বন্ধুর বিয়ে না থাকলে খারাপ দেখা যায়। আপনি ভেতরে যান, আমি এখানেই আছি।”
“আমি তোমাকে এখানে একা ছেড়ে যাব?”
“আমি অপেক্ষা করতে পাড়ব।”
“আচ্ছা তুমি দুইমিনিট দাঁড়াও আমি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসি।”
উত্তর শোনার আগেই কথন চলে গেল। ভেতরে যেয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ফিরে এসে দেখে কবিতা এখনো একই জায়গায় হাঁটাহাঁটি করছে। কবিতা তাকে দেখেই দৌড়ে ছুটে এসে চোখ দুটো বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে, “আমি যখন জুতা খুলেছিলাম তখন কী আপনি ভেবেছিলেন আমি জুতা দিয়ে আপনাকে পিটাব?”

কথন বিরক্তি নিয়ে তাকায় কবিতার দিকে, “প্রায় দশ মিনিট পর তুমি এটা বুঝেছ? বাহ কী জিনিয়াস তুমি! আর এমন পেঁচার মতো চোখ করে তাকাবা না, ভয় করে।”
কথন গাড়ি দিকে হাঁটতে শুরু করে। কবিতাও আসে তার পিছনে, “আমার চোখ পেঁচার মতো দেখতে? কীভাবে বলতে পাড়লেন এটা আপনি? জানেন কত ছেলে আমার চোখ দেখে আমার প্রেমে পড়েছে?”
কথন ভ্রু কপালে তুলে তাকায় কবিতার দিকে তার শাড়ির আঁচলটা কোমরে গুঁজে রাখা, খোলা চুলগুলো অগুছালোভাবে খোঁপা করে রেখেছে, জুতাগুলো হাতে নিয়ে লাফাচ্ছে। তাকে দেখে কথন হেসে বলে, “তোমার প্রেমে পড়েছে? নিশ্চয়ই তার মাথায় সমস্যা আছে। তুমি তো স্বাভাবিক মানুষের মতো হাঁটতেও জানো না। সে কখন থেকে বান্দরের মতো লাফাচ্ছো।”
কবিতার তার সামনে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে নিলো।

কথন তার দুই পকেটে হাত রেখে হাঁটছিলো। কবিতার বলে, “আমি বান্দরের মতো লাফাই? আপনারা কি শেষমেশ বানরের সাথে তুলনা করছেন? আপনার সাহস কত বড় একথা বলার।?
কবিতা পিছনে দিকে হাঁটতে হাঁটতে কথাটি বলে। সে কথনের মুখোমুখি ছিলো। কথন হেসে দিলো কবিতার কথায়। তার এই খুনসুটিটা মজারই লাগছিল। তাই সে খুনসুটিটা আগানোর উদ্দেশ্যে বলল, “ছিঃ ছিঃ আমার এত বড় ভুল করতে পারি না’কি? বানরও তোমায় দেখে লজ্জায় লুকিয়ে পড়বে।”
“দেখেন আপনি….” কবিতা কথনের মুখের সামনে আঙ্গুল তুলে ধমক দিতে চাইল কিন্তু এর পূর্বেই পিছনের একটি পাথরের সাথে পা লেগে পড়ে যেতে নেয় সে। সাথে সাথে কথন তার হাত ধরে নেয়।

কবিতা এক বড় নিশ্বাস ফেলে। এক মুহূর্তের জন্য তার নিশ্বাস আটকে গিয়েছিলো। কথন এক টানে তাকে উঠাতে নিলেই কবিতা তার বুকে এসে পড়ে। সে হতবাক, হতদ্ম্ব। তার মুখের রঙও উঠে গেল। অথচ কথন ঠিকই ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে মশকরা করে, “দেখাও, কী দেখাবে?”

কৃষ্ণবর্ণ আকাশের মাঝে বজ্রধ্বনির গর্জন শুরু হয়। বাতাসের ছড়াছড়ি চারপাশে। ঝুম বৃষ্টি নামে। কথন এক পলক আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার কবিতার দিকে তাকায়। কবিতার চোখ নিচে নামানো। সে কী লজ্জা পাচ্ছে? তার কবিতার এই লাজুকতার ভাব ভালোই লাগলো তার কাছে। সে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো কবিতার দিকে। কবিতা চোখজোড়া তুলতেই হলো নয়নবন্ধন। হঠাৎ সে দৃষ্টিতে তার স্পন্দন বেড়ে গেল। নিজের এমন অবস্থাতে অবাক না হয়ে পারে না। কবিতা চোখ উঠানোর পরের মুহূর্তেই চোখ নামিয়ে নেয়। সরে যায় তার কাছ থেকে। কথন নিজের উপরই অবাক, এমন মুহূর্তখানিকের দৃষ্টি বন্ধনে কারও এত করুণ অবস্থা হতে পারে?

কথন একটু কাশলো। আমতা-আমতা করে বলল, “আচ্ছা চলো বাসায় যাওয়া যাক।”
কথন এগোল। কিন্তু তার পিছু এলো না কবিতা। কথন থেমে পিছনে তাকাতেই কবিতা দুইহাত দুইপাশে ছড়িয়ে উঁচু স্বরে বলে, “আমরা তো আগের থেকেই ভিজে গিছি। আরেকটু নাহয় এই বৃষ্টিতে ঘুরে বেড়াই।”
“তোমার ঠান্ডা লাগবে।”
কবিতা হাতের তালুতে একটু পানি জমিয়ে কথনে দিকে ছিটিয়ে দিলো, “হলে দুইজনে একসাথে হবো। আর ডাক্তারবাবু অসুস্থ হলে তো আপনি আছেনই ফ্রী চিকিৎসার জন্য।”
“কবিতা বাসায় চলো।” কথন ধমকের সুরে বলল। কে শোনে কার কথা? কবিতা নিজের মতই ঘুরে বেড়ায় ঝুম বৃষ্টিতে। প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াল ঝুম বৃষ্টির মাঝে।

কবিতা যখন তার কথা অগ্রাহ্য করে তখন কথন নিজেই তাকে ধরে নিয়ে আসতে যায়। কিন্তু পূর্বের কবিতা তো তার কথা মানার মানুষ না। সে দিলো এক দৌড়। কথনও তার পিছনে দৌড় দেয়। দুইজনে ছুটে বেড়ায়। অবশেষে হাঁপিয়ে যেয়ে কবিতা বসে পড়লো উঠানেই। হাঁপিয়ে ওঠে বলে, “টাইম প্লিজ।”
কথন দাঁড়িয়ে পড়ে। কবিতাকে উঠানে বসতে দেখা তার দিকে ঝুঁকে মাথায় টোকা মেরে বলে, “তোমার সাথে কী আমি কানামাছি খেলছি? আসছে টাইম প্লিজ। আর এভাবে উঠানে কে বসে?”
“অস্থির লাগছে। আপনিও আসেন তো।”
কবিতা টেনে ধরে কথন কে নিজের পাশে বসালো। তারপর জিজ্ঞেস করল, “ডাক্তারবাবু কতক্ষণ আপনার ডাক্তারগিরি ছেড়ে এই মুহূর্ত ইনজয় করুন। এসব মুহূর্ত বারবার আসে না। এইসব মুহূর্তও স্মৃতির ডায়েরিতে থেকে যায়।”
“তুমি এমন কেন বলো তো।”
“কেমন?”
“এলিয়েনদের মতো।”
কবিতা ভ্রু কুঁচকে, মুখ ফুলিয়ে তাকায় কথনের দিকে। তাকে দেখে কথনের হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাবার অবস্থা, “একদম….একদম এলিয়েনদের মতো লাগছে।”
“হ্যাঁ এলিয়েন তো আপনার বন্ধু হয়, তাই বেশ জানেন এলিয়েন দেখতে কেমন।”
কবিতা ভেংচি কেটে সামনে তাকাল। বৃষ্টি ঝরা আকাশে মেয়েটা কি দেখল কে জানে? কথন সোজা হয়ে বসে মুগ্ধ নয়নে তাকাল কবিতার দিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে একগাল হাসি নিয়ে সেও তাকাল সে মেঘলা আকাশের দিকে। সত্যি বলেছিলো কবিতা, কিছু মুহূর্ত স্মৃতির ডায়েরিতে থেকে যায় এবং সে মুহূর্তটা তার স্মৃতির ডায়েরির সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তের মাঝে একটি।

স্মৃতির নগর হতে বর্তমানে ফিরে আসে কথন। সে তাকাল কবিতার দিকে। কবিতা জানালার বাহিরে তাকিয়ে ছিলো। সে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা তোমার মনে আছে ক
নিগারের বিয়েতে এমন বৃষ্টির মুহূর্তটা?”
কবিতা খানিকটা অপ্রস্তুত দেখা গেল। সে মাথা নাড়িয়ে বলল, “আমার ঠিক মনে নেই।”
কথনের মনটা একটু খারাপ হলেও, সে নিজেকে বুঝিয়ে নিলো। কেননা সে একজীবন এই স্মৃতি দ্বারা কাটিয়েছে, কবিতা না। এই সাত বছরে হাজারো স্মৃতি বানিয়েছে সে। তার পরিবারের সাথে। তার ভালোবাসার মানুষটির সাথে।
.
.
তীর্থ অনেকসময় সেখানেই বসে রইলো। সে কি করবে, না করবে কিছুই বুঝতে পারলো না। অস্থির হয়ে যায় সে। কবিতা আসলে যদি তাকে ছেড়ে চলে যায় তখন কী করবে সে?
তার ফোন বেজে উঠে। ফোন বের করতেই সে দেখতে পায় মৃণা কল করছে। ভীষণ বিরক্ত হয় সে। কল কেটে সে কল দিলো ধ্রুবকে। প্রথমে ধ্রুব না ধরলেও দুই তিনবার কল দেওয়ার পর ধরে।
“কোথায় ছিলি তুই? কতক্ষণ ধরে কল করছি।”
” এতবার কল করার কী আছে? শালা তাহিরার সাথে একটু ঘুরতে আসছি। রোমেন্স তো করতে দিবি। কে মরসে যে ফোন দিতেই আছিস?”
ধ্রুবর কথাগুলো শুনে তার উপর ভীষণ রাগ হয় তীর্থের। তবে সে তা বুঝতে দেয় না। এই মুহূর্তে ধ্রুবকে প্রয়োজন। সে বলে, “আমি অনেক বড় একটা ঝামেলা বেঁধে ফেলেছি।”
“কী হলো? সব খুলে বল।”

তীর্থ আজকের সকল ব্যাপার খুলে বলে ধ্রুবকে। ধ্রুব সব শুনতেই ধমক দিয়ে উঠে তীর্থকে, “তোর মাথা খারাপ? নিজের ছেলেকে অসুস্থ ফেলে কোন বালের কাজে গেছিস তুই? একটা কাজে লস খেলে কোন তুফান আসতো শুনি? আবার ওই মেয়ের সাথে ঘুরতেও গেছিস তাও নিজের ছেলেকে ছেড়ে। তুই তো দেখি আমার থেকে বড় হারামি।”
“মৃণা হাত কেটেছিলো।”
“তো? এটা কোনো বড় ব্যাপার না। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। একটু ব্যাথা করে আবার পরে ঠিক হয়ে যায়। এর উপর তুই কবিতার চরিত্রে প্রশ্ন তুলেছিস?” শব্দ করে হাসে ধ্রুব। আবার বলে, “ভাই তুই জানিস তো, তুই নিজে ওকে ধোঁকা দিচ্ছিস? তোর কলিজা এত বড় যে নিজের চরিত্র ভালো করে জানা সত্ত্বেও তুই ওর চরিত্রে প্রশ্ন তুলেছিস। লাইক সিরিয়াসলি? তোর একবারও তখন নিজের আর মৃণার কথা মাথায় আসে নি। তুই জানিস তো তাই না কবিতার অন্যায় জিনিস সহ্য হয় না। মিদুলের বাবার কথা ভুলে গেছিস?”
উওরে তীর্থ কিছু বলতে পারেনা। অপ্রস্তুত হয়ে যায়। শরমে মাথা ঝুঁকিয়ে নেয়। তারপর মৃদুস্বরে বলে,”কথনের সাথে দেখে মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিলো। আনমনে বলে ফেলেছি। এখন কী করব?”
“আর কী করবি? মৃণাকে নিজের জীবন থেকে বাহির করে দিবি।”
“কিন্তু আমার ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক ছিলো। আমি এভাবে নিজের দায়িত্ব থেকে কীভাবে পিছাতে পারি?”
“তো তোর কবিতার প্রতিও তো কত দায়িত্ব ছিলো ভাই। কোনটা পালন করছিস? তোর আর মৃণার কোন স্বভাব মিলে জানিস? তোরা নিজেকে উদাহরণ দিয়ে সঠিক প্রমাণ করতে চাস। আমি এই ভুল করেছি কিন্তু আমার এই কারণ আছে। কেন ভাই? তুই ভুল করেছিস, তুই তা ভালো করে জানিস, তাহলে নিজের কাছে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করতে হবে কেন? তোর আর আমার মাঝে একটাই পার্থক্য কী জানিস? তুই পাপ কাজ করছিস, আমিও করছি। আমি জানি আমি অনেক খারাপ। তা সরাসরি মেনে নেই। কিন্তু তুই নিজেকে নিজের কাছে সঠিক প্রমাণ করতে করতেই শেষ।”

তীর্থের রাগ উঠল ভীষণ। সে ক্রোধিত কন্ঠে বলল, “এসব কথা বাদ দিয়ে আসল কথায় আসবি? মৃণা আমাকে হুমকি দিয়েছে, ওকে বিয়ে না করলে ও সুসাইড করবে।”
“আর তুই ওর কথা বিশ্বাস করে নিলি? ওর মতো স্বার্থপর মেয়ে তোর জন্য নিজেকে শেষ করবে? এটা কী জোক ছিলো?”
“যদি আসলে কিছু করে ফেলে?”
“শুন তুই একটা গাঁধা। তুই গত দেড় বছরেও ওকে চিনতে পারিস নি। আমি ওর সাথে একসাপ্তাহ কথা বলেই বুঝে গেছি এই মেয়ে নিজের স্বার্থের জন্য নিজের মা বাবাকেও ফেলে দিতে দ্বিধাবোধ করবে না। তোর কী মনে হয় ও কেন তোর সাথে আছে? তোকে ভালোবাসে এ-কারণে? এতদিন পরেও তুই এটা ভাবিস? ও যাস্ট তোর টাকার জন্য তোর সাথে আছে। রূপা আমাকে বলেছিল ও তোর বিজনেসের কথা শোনার পরই তোর প্রতি ইন্টারেস্ট দেখিয়েছে।”
“তুই ভুল ভাবছিস। এমন কিছু না।”
“ওর আগেও একটা ছেলের সাথে শারীরিক সম্পর্ক ছিলো তা জানিস? ওর এক্স বয়ফ্রেন্ড।”
“তুই মিথ্যা বলছিস, তাই না?”
“আমি তোকে মিথ্যা বলে কী পাব ভাই? তুই কী তোর সব সম্পত্তি আমার নামে করে দিবি? শুন অভিজ্ঞতা নিয়ে বলছি, বেশি গম্ভীর হবার প্রয়োজন নাই সম্পর্কের মধ্যে। এমন মেয়ে একটা যাবে দশটা আসবে। ওকে ফোন করে শক্ত করে কথা বলবি। ওকে জানিয়ে দিবি যেন তোর সাথে কোনো যোগাযোগ না রাখে। ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে চাইলে গলে পড়বি না। বলবি জাহান্নামে যেতে।”
“দোস্ত আমার মনে হয় রূপা তোকে ভুল বলছে। তুই ভুল ভাবছিস। আর আমি এমন কীভাবে করতে পারি? দেড় বছর ধরে সম্পর্ক আমাদের, ও এখন আমার জীবনের অংশ।”
“ভাই আমার এত সময় নাই তোকে বুঝানোর। হয়তো মৃণাকে চুজ কর, নাহলে কবিতাকে। আমি বলে রাখি মৃণার সাথে বিয়ে করলে তোর কবিতাকে হারাতে হবে। এটা লিখে দিতে পারব। আজকে যেভাবে রিয়েক্ট করল এরপর আমার মনে হয় না সত্যি জানার পর তোর সাথে স্বাভাবিক ভাবে থাকব। বাচ্চাদের জন্য একসাথে থাকতে পারে কিন্তু তোকে আর কখনো ভালোবাসবে না। আর মৃণা তোর সাথে বিয়ে করার পর কবিতাকে তোর জীবনে থাকতেও দিবে না। লিখে নে আমার কথা। এবার তুই সিদ্ধান্ত নে, তোর কবিতাকে চাই না মৃণাকে? আমি যাই। রুমে তাহিরা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
“আমার কথা তো শুন…” ধ্রুব ফোন কেটে দেয় তীর্থের কথা না শুনেই। তীর্থ এরপর বারবার কল দেয় ধ্রুবকে তার ফোন বন্ধ। খুব বিরক্ত হয় সে। এর মাঝেই আসে মৃণার কল। সে কলটা ধরল না। তার মাথায় ভাবনাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে।

ধ্রুব কী যা বলেছে তা সত্য?
মৃণার তার আগে অন্যকারো সাথে সম্পর্ক ছিলো?
তাহলে মৃণা আসলে তাকে ভালোবাসে না?
কিন্তু যদি ধ্রুব মিথ্যা বলে? মৃণা খারাপ কিছু করে নেয় নিজের সাথে তখন?

আর কবিতা, তার রাগ কীভাবে ভাঙাবে সে? যদি আসলেই কবিতা তার আর মৃণার সম্পর্কে জানে তখন? ভাবতেই বুকের ভেতর কামড়ে উঠে তার। ভয়ে তার জান যেন গলায় আটকে এলো। আজ তার রাগে এককথায় তাকে ছাড়ার হুমকি দিয়ে গেল কবিতা। সত্যিটা জানলে সে কী করবে?

আবারও বেজে উঠে ফোনটা। আবারও মৃণার কল। তীর্থ কী বলবে তাকে? বিয়ের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিবে? কিছুই ঢুকছে না মাথায়। কিন্তু যা সিদ্ধান্ত হোক না কেন তার আজই নিতে হবে। এই মুহূর্তেই।

চলবে…

[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]

সকল পর্ব-

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here