#মুহূর্তে
পর্ব-৩১
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
“তুমি অফিসে যাও নি কেন?” সকাল সকাল আইদকে বাসায় দেখে মৃণা প্রশ্ন করে। আইদ মৃণার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছিলো। তা মৃণার সামনে রেখে একগাল হেসে বলল, “তুমি গতকাল অসুস্থ ছিলে, তাই আজ ছুটি নিয়েছি।”
“আমার অসুস্থতার সাথে তোমার ছুটির সম্পর্ক কী? গতসাপ্তাহে তো তুমি নিজে অসুস্থ ছিলে তখন ছুটি না নিলে এখন নেবার কী প্রয়োজন?”
আইদ ঠোঁটের কোণের হাসিটা বজায় রাখে। মৃণার গালে আলতো করে হাত রেখে বলে, “কারণ তুমি অসুস্থ। বিয়ের পর তোমার খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব। তোমার সম্ভবত মন খারাপ তাই তোমার মা বাবাকে আসতে বলেছি। আমি একটুপর তাদের যেয়ে নিয়ে আসবো।”
“আমি আপনাকে বলেছি আনতে?”
মৃণা রাগান্বিত স্বরে বলল। আজ সে ভেবেছিলো তীর্থের অফিসে যাবে। তীর্থ মোবাইল থেকে তাকে ব্লক করে রেখেছে তাই যেভাবেই হোক তার সাথে দেখা করে বাচ্চার খবরটা জানাতে হবে। কিন্তু এদিকে সবাই তার খুশির পিছনে পড়ে আছে যেন।
“তাদের দেখে তোমার মনও ভালো হয়ে যাবে সাথে তাদেরও।”
আইদ নরমসুরে বলল। মৃণার বেয়াদবির উওর দিলো না আর। কিন্তু মৃণা আবারও বলে, “আমার মা বাবাকে দেখা লাগবে না। আর আপনিও অফিসে যেতে পারেন। আমি এখন সুস্থ।”
“মৃণা,” এবার আইদ ধমক দিয়ে উঠে, “তুমি যখন চাও এভাবে জেদ করতে পারো না। তোমার মা বাবাকে আমি আসতে বলেছি। তোমার তাদের সাথে দেখা না লাগলেও, তাদের লাগবে। বিয়ের পর তুমি একদিন কেবল তাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছ। আমি তাদের জামাই হয়ে তাদের সাথে প্রতি সাপ্তাহে দেখা করে আসতে পারি কিন্তু তুমি যেতে পারো না? তুমি জানো উনারা একা থাকে। দুইজন বৃদ্ধ মানুষ। তাদের খোঁজ নেওয়া তো নেও না। আর এখন তারা আসছে এতেও তোমার সমস্যা? উনারা এসে দুইদিন তোমার সাথে থাকবে এটা আমার শেষ সিদ্ধান্ত। আর তোমাকে ক’দিনই অসুস্থ দেখাচ্ছে। আমি রাতে তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।”
ডাক্তারের কথা শুনতেই বুকের ভেতর কামড়ে উঠে মৃণার। সে ডাক্তারের কাছে গেলে যে সর্বনাশ হয়ে যাবে। সে যদি আসলেই গর্ভবতী হয়? আইদ একথা জানতে পারে না। মোটেও না।
সে এবার মিষ্টি করে বলে, “আমি বলতে চেয়েছিলাম যে
মা-বাবা যদি আমাকে এসে অসুস্থ শুনে তাহলে চিন্তা করবে।তুমি মা বাবাকে ডাকলে ডাকো। তারা আসলে আমার থেকে খুশি আর কে হতে পারে? কিন্তু আজ আমি ডাক্তারের কাছে যাব না। তাদের সামনে তো একদমই না।আরও দুইদিন দেখি, ভালো না লাগলে যাব।”
আইদের মন এবার উদাসীন হয়ে যায়৷ সে ভাবে, সে না বুঝে কত রুক্ষভাষী কথা বলে ফেলল মৃণাকে। নিজেকে সংযত করে সে মৃণার হাত ধরে সে বলল, “সরি আমার এমনভাবে কথা বলা উচিত হয় নি। আচ্ছা এখন ভালো মেয়ের মতো খাবার খেয়ে নেও, তোমার পছন্দের নাস্তা বানিয়ে এনেছি, ফ্রাঞ্চ টোস্ট। ওয়েট আমি খাইয়ে দিচ্ছি। তুমি বলো কেমন হয়েছে। এই প্রথম বানিয়েছি।”
আইদ নিজ হাতে খাইয়ে দিলো মৃণাকে। মৃণাও কিছু বলে না। আপাতত সে এমন কিছু করতে চায় না যেন কোনো কারণে আইদের তাকে নিয়ে সন্দেহ হয়। সে বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে নেয়।
আইদের উপর তার মাঝেমধ্যে রাগ উঠে। অহেতুক রাগ। এই রাগের কারণটাও সে জানে না। সম্ভবত লোকটা একটু বেশিই ভালো তাই। সে ছোট বেলা থেকেই দেখতে আইদ তার মা বাবাকে তার থেকে বেশি যত্ন করে, তার বেয়াদবিগুলোকে মুখ বুঝে সহ্য করে, তার যত্ন নেয়। সে ভেবেছিলো এসবের একটাই কারণ তাকে পাওয়া। কত লোকরা তো এমন ভালো সাজার নাটক এই কারণেই করে, তার স্বার্থের জন্য। স্বার্থ পূরণের পর সব যত্ন শেষ হয়ে যায়। পৃথিবীটা কী এভাবেই চলে না? সবাই-ই তো নিজের স্বার্থের জন্য জীবন কাটায়। সব নামের ভালো কাজের পিছনেও থাকে নিজের স্বার্থ।
কিন্তু আইদকে নিয়ে সে অবাক। আজ বিয়ের একমাস হয়ে এলো, আইদ তাকে শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে জোর তো দূরের কথা, বাসররাতে তাকে দূরে সরানোর পর দ্বিতীয়বার কাছে আসার কথা বলেও নি। এখন সে তার এবং তার মা-বাবার আরও বেশি যত্ন নেয়। এর পিছনে আইদের কী স্বার্থ থাকতে পারে বুঝে না সে।
“আপনি আমাকে বিয়ে কেন করেছেন?” হঠাৎ মৃণার এমন প্রশ্ন করায় আইদ একটু চমকে উঠে।
“হঠাৎ করে এই প্রশ্ন করছ যে?”
“আমি কখনো আপনার সাথে ঠিক মতো কথাও বলি নি। আপনি আমাকে বিয়ের আগে পছন্দ করতেন এই কারণে আমাকে বিয়ে করেছেন আপনি?”
ব্যাপারটা নিয়ে কিছু মুহূর্ত চিন্তা করে বলে আইদ, “বিয়ের আগে পছন্দ করতাম এটা একদম সত্যি না, তবে আমাদের বিয়ের কথা অফিসিয়ালি শুরু হবার পর থেকে তোমার কথাই সবসময় চিন্তা করতাম। তুমি যেহেতু আমার স্ত্রী হবে তাই শুধু তোমার কথাই ভাবতাম। একসময় ভালোলাগাটাও হয়ে যায়।”
“তাহলে আমাকে বিয়ে কেন করেছ?”
“কারণ আমাদের মা বাবা চাইতো। বিশেষ করে আংকেল আন্টি। তারা সবসময়ই আমাকে নিজের ছেলের মতো আদর করেছেন। আর সমসময় চাইতেন যেন তোমার বিয়ে আমার সাথে হয়। এই কারণেই।”
উওরটা শুনে মৃণার কপাল কুঁচকে যায়। সে কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে বুঝতে পারে না। সে কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি বিয়ের আগে কাওকে ভালোবাসো নি?”
আইদ মাথা নাড়ায়। উওর ‘না’ ছিলো।
“এটা কীভাবে সম্ভব? সবার-ই কোনো না কোনো অতীত থাকে।”
“কিন্তু আমি ভবিষ্যতে বিশ্বাসী। যেহেতু আমি জানতাম আমার বিয়ে তোমার সাথে হবে তাই অন্যকারো প্রতি দুর্বল হবার পূর্বেই নিজেকে সংযত করে রেখেছি। জীবনে একজনকেই ভালোবাসতে চেয়েছি। আমার স্ত্রীকে। এখন আমার সব ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য।”
মৃণা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ আইদের দিকে। অপরাধভাব তার দেহের অঙ্গে অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। হৃদয়ে কোনো এক অদ্ভুত অনুভূতির বিস্ফোরণ ঘটে। সে আর তাকিয়ে থাকতে পারে না আইদের দিকে। চোখ সরিয় নেয়। কেন যেন চোখ তুলে আইদের দিকে তাকানোর সাহস হয় না তার।
.
.
কবিতা রান্না শেষে খাবারগুলো টেবিলে রাখছিলো। এমন সময় টেবিলে একগুচ্ছ গোলাপ দেখলো সে। সে আশেপাশে তাকায়। কে এখানে রাখতে পারে এই ফুলের গুচ্ছ? আশেপাশে কারও দেখা পায় না সে। ফুলটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ ফুলের সৌন্দর্যের পরখ করতে থাকে। সে নাকের কাছে নিয়ে গভীর নিশ্বাস নেয়। আচমকায় কেউ এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
“তোমার ভালো লেগেছে?”
কবিতা প্রথমে চমকে উঠে তীর্থের কন্ঠ শুনে, তবে সে শান্ত নিজেকে শান্ত করে। আবার পরের মুহূর্তে তার রাগ উঠে যায়। সে তীর্থ থেকে দূরে সরে বলে, “আমি বলেছিলাম আমার কাছে আসতে না। সমস্যা কী তোমার?”
“কবিতা আর কত? একমাস কেটে গেল। আমি বলেছি তো আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।”
কবিতা কিছু না বলে রান্নাঘরে যেতে নিলেই তীর্থ তার হাত ধরে নেয়, “কথা না বললে আমাদের মাঝে ঝামেলার সমাধান কীভাবে হবে?”
“কেন? সমাধান করার প্রয়োজন কী? বলেছি তো তুমি তোমার মতো থাকো, আমি আমার মতো থাকবো। তোমার তো আরো খুশি হওয়া উচিত, তোমার কাজে কেউ তোমাকে জ্বালাবে না।”
“কবিতা প্লিজ। তুমি আমাকে এভাবে অবহেলা করলে কষ্ট হয় আমায়?”
“কষ্ট হয়? কেন? এমন তো নয় যে তুমি আমার সাথে আগে সারাক্ষণ বসে বসে গল্প করতে। আমার জন্য সময়ও হতো না তোমার কাছে। এখনও সব একই থাকবে একেবারে আগের মতো। আমাকে যেমন শপিজের মতো ঘরে রেখে ভুলে গিয়েছিলে ঠিক তেমন। আর আমি তো চরিত্রহীন তাই না? আমার মতো চরিত্রহীন মেয়ের সাথে কথা বলে তোমার মান কমে যাবে না?”
কবিতা ঝাড়ন দিয়ে তীর্থের হাত সরাতেই নিলেই তীর্থ তাকে কাছে টেনে নেয়। তাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমার ভুল হয়ে গেছে কবিতা। আই এম সরি। আমি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে নিবো। তুমি যেমন চাইবে তেমনই হবে। প্লিজ এমন ব্যবহার করো না, আই লাভ ইউ সো মাচ। প্লিজ।”
কবিতা তীর্থের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে চাইল। কিন্তু তীর্থের শক্তির কাছ থেকে পেরে উঠলো না।
কলিংবেল বাজলো। কলিংবেল বাজতেই তীর্থ কবিতাকে ছেড়ে দেয়। তারপর হাতের উলটো পাশ দিয়ে চোখ মুছে। কবিতা একটু অবাক হয়। তীর্থ কাঁদছিলো? তার বুকের ভেতর কামড়ে উঠে। সে যতই নারাজ হোক না কেন, আজও তীর্থের কোনো দুঃখ তার সহ্য হয় না। কিছুতেই সহ্য হয় না।
তীর্থ রুমে যাবার পর আবারও কলিংবেল বেজে উঠে। কবিতার ঘোর ভাঙ্গে। সে যে দরজা খুলে দেখে একটি যুবক ছেলে দাঁড়ানো। ছেলেটাকে সে চিনে না তাই জিজ্ঞেস করল, “আপনার কাকে লাগবে?”
“এটা কি মি.তীর্থের বাসা?”
“জ্বি।”
ছেলেটা একটি খাম এগিয়ে দিলো কবিতার দিকে, “একমাস আগে আমার বাবার এক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলো। এতজন দেখলো কেউ তার সাহায্য করল না তীর্থ স্যার ছাড়া। ওদিন না’কি তার ছেলেও খুব অসুস্থ ছিলো তাও আমার বাবার সাহায্য করলো। আমাদের কাছে তখন চিকিৎসার টাকা ছিল না তাই হাস্পাতালে পেমেন্টও করেছিলেন উনি। উনি বাসার ঠিকানা দিয়ে গিয়েছিলো তাই তার থেকে ঋণ নেওয়া টাকা ফেরত দিতে এলাম।”
কবিতা একটু হকচকিয়ে যায়। অর্থাৎ কাব্য যেদিন অসুস্থ ছিলো সেদিন তীর্থ একজনকে হাস্পাতালে নিয়ে গিয়েছে তাই দেরি করেছিলো?
“তোমার বাবার এখন কী অবস্থা?”
“অনেকটা সুস্থ।”
ছেলেটা টাকা দিয়েই বিদায় হয়ে যায়। কবিতা রুমে যেয়ে দেখে তীর্থ বিছানায় বসে আছে। চুপ করে। কবিতা যেয়ে তার পাশে টাকার খামটি রেখে বলল, “একটি ছেলে এসে টাকার খামটি দিয়ে বলল তুমি তার বাবা হাস্পাতালে নিয়ে তার জন্য পেমেন্ট করেছিলে সে টাকা দিয়ে গেল। তুমি আমাকে বলো নি কেন সেদিন তুমি লোকটাকে হাস্পাতালে নিয়ে যাওয়ার কারণে দেরি করেছ?”
“বললে কী তুমি আমায় ক্ষমা করে দিতে?”
কবিতা কিছুক্ষণ নীরব থাকলো। তারপর সেখান থেকে যেতে চাইলো। এর পূর্বেই তীর্থ তাকে জড়িয়ে ধরে। তার কোমরটা হাত দিয়ে আবদ্ধ করে পেটে মুখ গুঁজে বলল, “তুমি কী আমাকে ক্ষমা করবে না। প্লিজ কবিতা আমার আর সহ্য হচ্ছে না।”
“তাহলে আমি কীভাবে সহ্য করেছি তা ভাবো। তোমার এই এক দেড় মাসের অবহেলা সহ্য হচ্ছে না। তুই কত বছর ধরে আমাকে অবহেলা করছো হিসেব আছে তোমার? আমি আজ তোমার সাথে কথা বলছি না বলে তুমি কষ্ট পাচ্ছো, যখন তোমার মা’য়ের জন্য আমার সাথে তোমার ঝগড়া হতো তখন কতদিন ধরে তুমি আমার সাথে কথা বলতে না একবার বুঝো কেমন লাগে। আর শেষ দুইবছরে তো আমি তোমাকে চিনতেও পারছি না। এতটা বদলে গেছ তুমি। আমি সব ক্ষমা করেছি। কিন্তু সেদিন তুমি আমার চরিত্রের উপর প্রশ্ন তুললে। তোমার বুক কাঁপে নি একটিবারও? যদি কারও অবহেলা সহ্য করতে না পারো তাহলে অবহেলা করো কেন?”
“আমি ভুল করেছি। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি এখন তা বুঝতে পারছি। আমাকে আরেকটা সুযোগ দেও কবিতা। আমাদের ভালোবাসার খাতিরে হলেও আরেকটা সুযোগ দেও। আমি সব ঠিক করে দিব।”
বুকের ভেতর কম্পন জাগে কবিতার। তীর্থের জন্য মায়া হয় তার। কিন্তু সে তীর্থের সামনে সম্পূর্ণভাবে নরম পড়ে না। সে বলে, “ঠিকাছে ঠিক করে দেখাও। আমিও দেখতে চাই তুমি কীভাবে এই সাত বছরের এলোমেলো হয়ে যাওয়া সংসারটা গোছাবে। যা আমি এত বছরেও পাড়লাম না।”
কবিতা কাঁপা কাঁপা হাতে তীর্থের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে, “গোসল করে নেও, আমি খাবার দিচ্ছি।”
তবুও সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো কবিতা। তীর্থ যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে ছাড়লো। তার মনে যতই ক্রোধ থাকুক না কেন, তা তীর্থের কষ্ট থেকে বড় নয়। সে জানে, তীর্থ চেষ্টা করলে এই সংসার আবার গুছিয়ে যাবে। সে কখনোই তীর্থকে ছাড়া থাকার কথা চিন্তাও করতে পারে না। তার ভালোবাসার কাছে একসময় তার সকল রাগ হাওয়ায় মিশে যাবে। মনের সিন্দুকে বন্দী থেকে যাবে কষ্টগুলো। সে একবার তীর্থকে বলেছিলো, “তোমার সকল ভুল আমি ক্ষমা করে দিব, কেবল আমার বিশ্বাস ভাঙবে না।”
কবিতা জানে তীর্থ তাকে হাজার অবহেলা করুক, সে কখনো তার বিশ্বাস ভঙ্গ করবে না।
তীর্থ তাকে ছেড়ে বলল, “দেখে নিও আমি সব ঠিক করে দিব।”
তীর্থ ছাড়তেই কবিতা সেখান থেকে চলে গেল।
কবিতা যাবার পর তীর্থ গভীর নিশ্বাস ফেলে। অবশেষে কবিতার মন একটু হলেও গলে গেল। ধ্রুব ঠিক বলেছিলো, সর্বপ্রথম একটি মা’য়ের মন গলাতে হবে, তারপর একটি নারীর, অবশেষে স্ত্রীর। আজ সে একটি মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে মা’য়ের মন তো গলিয়ে দিলো কিন্তু
কবিতা তার চরিত্রের উপর তোলা প্রশ্ন সহজে ভুলবে না।
এখন যেমন করেই হোক কবিতাকে তার মানাতে হবেই।
ফোনটা বেজে উঠে তীর্থের। আননোওন নাম্বার। ফোনটা তুলেই সে জিজ্ঞেস করে, “হ্যালো কে?”
“তীর্থ প্লিজ ফোন কাটবে না। আমার জরুরী এক কথা আছে। অনেক জরুরী।”
মৃণার কন্ঠ শুনে তীর্থ ফোন কাটতে নিয়েছিলো কিন্তু মৃণার জরুরী তলবের কথায় সে আর ফোন কাটে না। ভারী গলায় জিজ্ঞেস করলো, “কী জরুরি কথা?”
“আমি সম্ভবত প্রেগন্যান্ট। তোমার বাচ্চা আমার গর্ভে।”
স্তব্ধ হয়ে গেল তীর্থ। এই কথা শোনার জন্য সে প্রস্তুত ছিলো না।
“ফাইজলামি করো? দেখ মৃণা এসব ফাজলামো আমার পছন্দ না। তুমি যাই করো না কেন আমি তোমার কাছে ফিরে আসবো না। তোমার বিয়ে হয়ে গেছে, সুখে থাকো তুমি। আমাকেও শান্তিতে থাকতে দেও।”
“প্রেগন্যান্সির সকল লক্ষ্মণ খেয়াল করেছি।”
“তোমার বিয়ে হয়েছে বাচ্চাটা তোমার স্বামীরও হতে পারে।”
“আইদের সাথে এখনো আমার শারীরিক সম্পর্ক হয় নি।”
কথাটা শুনে আর কিছু বলতে পারলো না তীর্থ। চিন্তায় পড়ে গেল সে। তার জীবনে শান্তি থাকতে পারে না কেন? কবিতার সাথে যখনই সব ঠিক করতে চাইলো তখনই এমন মুশকিলে পড়তে হলো তাকে?
তীর্থ মাথায় হাত রেখে গভীর নিশ্বাস ফেলে বলল, “আগামীকাল সন্ধ্যায় আমার সাথে হাস্পাতালে দেখা করো। আমি হাস্পাতালের এড্রেস পাঠিয়ে দিব।”
“আচ্ছা আর এই নাম্বারে কল দিও না। এটা আইদের নাম্বার। আমাকে তুমি ব্লক করে রেখেছিলে বলে আইদ গোসলে যাবার পর ওর নাম্বার দিয়ে কল করেছি।”
“আচ্ছা।”
তীর্থ কল কেটে দিলো। ফোন কাটার পর মৃণা জলদি করে তীর্থের নাম্বার ফোন থেকে ডিলিট করতে যাবে তখনই আইদের কন্ঠ শুনে সে, “মৃণা, আমার ফোনে কার সাথে কথা বলছ তুমি?”
আইদের কন্ঠ শুনতেই ঘাবড়ে যায় মৃণা। তার হাতের থেকে ফোন পড়ে যায়। আইদ তার কথা শুনে নেয় নি তো?
[আগামীকাল আরেকটি পিচ্চি পর্ব দিব ইনশাআল্লাহ। তবে এরপর থেকে আবারও একদিন পর পর গল্প আসবে। যেহেতু শেষ কিন্তু পর্বে অতিরিক্ত পর্বের জন্য প্রেশার দিচ্ছেন না তাই খুশি হয়ে দিচ্ছি।]
চলবে…
[বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন। ধন্যবাদ।]
সকল পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=381227816949915&id=100051880996086