#ভালোবাসি তাই
part:16
Writer: Afifa Jannat Maysha
🍁
গোধূলি লগ্নের ঝাপসা আলোয় ছেয়ে আছে চারদিক। আজকেও বিচে এসেছি ঘুরতে। তবে সবাই আসেনি। হোটেলেই থেকে গেছে অনেকে৷ আমারো আসার ইচ্ছে ছিলো না৷ সারার জোরাজোরিতে শুধুমাত্র আসা হয়েছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে না এলে অনেক কিছু মিস করতাম।
বিচে এখন এতোটাও ভীড় নেই। চারপাশে বইছে বাতাস সেইসাথে সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ। আকাশটা কেমন লাল হয়ে আছে যেনো তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে কেউ। এমন একটা পরিবেশে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে।
একা একাই হাটছি আমি। সারার সাথেই হাটতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার এককথা এই পরিবেশটাকে ফীল করার জন্য একা থাকা সবচেয়ে প্রয়োজন। আমরা দুজন একসাথে থাকা মানেই বকবক করা। সেজন্য আলাদা আলাদাই হাটতে হবে আমাদের। তাই এখন একা একাই হাটতে হচ্ছে আমায়। সারা অবশ্য ভুল কিছু বলে নি। সত্যিই এখন একা থাকতে ভালো লাগছে।
এসব কিছুর ভীড়ে যে কালকে রাতের ঘটনা আমি ভুলে গেছি এমনটা না। কিন্তু এখন ওসব নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করছে না আমার। আমার সাথে ঠিক কি হয়েছিলো সেটা কাউকেই বলিনি আমি। বলেছি দুঃস্বপ্ন দেখেছি। নাহলে আমার জন্য পুরো ট্যুরটাই নষ্ট হয়ে যেতো। আজকে সারাদিনই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আচরণ করেছি সবার সাথে।
সাগরের তীর ধরে হেটে যাওয়ায় ঢেউগুলো এসে পায়ে লাগছে আমার । আমার দৃষ্টি অস্থির সেই সাথে ভাবনাও। মাথার ভেতর সবটাই মনে হচ্ছে ফাঁকা হয়ে আছে। মস্তিষ্কও হয়তো জটিল কিছু ভাবতে চাইছে না আজ। পরিবেশটাকে অনুভব করতে চাইছে শুধু।
আমি যখন নিজের সাথে সময় কাটাতে মগ্ন হয়ে আছি তখনি মনে হলো আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে কেউ। তার দৃষ্টি বোধ হয় আমার দিকেই। কিন্তু আমি এখনো তাকাই নি সেদিকে। তবে বুঝতে পারছি এটা রাহুল ভাইয়া।
এমন ভাবে দুজন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি যেনো কথা বললেই ফাঁসি হয়ে যেতে পারে আমাদের । তাই কথা না বলাই শ্রেয়। কিন্তু রাহুল ভাইয়ার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না খারাপ লাগছে সেটা বুঝতে পারছি না আমি। এবার মনে হচ্ছে উনার দিকে তাকালো উচিৎ আমার। নয়তো ভাববেন আমি ইগো দেখাচ্ছি।
রাহুল ভাইয়ার দিকে ঘুরতেই দেখলাম উনি এখনো তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। উনার এই চাহনির মানে যে আমি বুঝতে পারি না এমনটাও নয়। কিন্তু আমি বুঝতে চাই না। কারণ আমার সবটা জোরেই শুধু সায়ন ভাইয়া রয়েছে। চাইলেও সেই জায়গাটা কাউকে কখনো দিতে পারবো না আমি।
হালকা লাল আভায় রাহুল ভাইয়ার মুখও লাল হয়ে আছে। ছোট ছোট চুলগুলো অবাধ্যের মতো কপালে এসে পরছে বারবার। আজ হালকা গোলাপি রঙের একটা শার্ট গায়ে জরিয়েছেন তিনি। না চাইতেও সায়ন ভাইয়ার সাথে উনার তুলনা করে ফেলছি আমি। তবে আমার কাছে সায়ন ভাইয়াই বেস্ট সবসময়।
– এভাবে তাকিয়ে থেকো না আমার লজ্জা লাগে তো।
রাহুল ভাইয়ার কথায় ভীমড়ি খেলাম আমি। আজকেও উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি? উফ, কি অস্বস্থিকর। মিটমিটিয়ে হাঁসছেন রাহুল ভাইয়া ।
– থাক আর লজ্জায় লাল হতে হবে না।
– না মানে আসলে।
– এতো কথা বলতে হবে না। চলো একসাথে হাঁটি।
যদিও আমার একা একা হাঁটতেই ভালো লাগছে তবুও না করলাম না আমি। এভাবে কারো মুখের উপর সরাসরি “না” শব্দটা ব্যবহার করা যায় না।
– চলুন।
আবারো হাঁটছি দুজন। কথা না বলার ইচ্ছেটা দুজনের মাঝেই প্রকট। হঠাৎ করেই একটা অদ্ভুত আবদার করে বসলেন রাহুল ভাইয়া। আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন
– আমি কি তোমার হাতটা ধরে হাঁটতে পারি, মাইশা?
কি নিঃসঙ্কোচ আবদার! উনার কথায় মনে হচ্ছে আমার হাঁতটা ধরার অধিকার শুধু উনারই আছে। এখন উনি অনুমতি চাইছেন মাত্র। তবে উনার চোখে চলছে হাত ধরতে দেওয়ার আকুতি। আমি কোনো উত্তর না দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি।
অনেক্ষন আমার কোনো সাড়া না পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললেন রাহুল ভাইয়া। হয়তো খারাপ লাগছে উনার। কিন্তু আমি কি করতে পারি এখন? অনুমতি দেবো উনাকে? দিলে কি খুব বেশি খারাপ হয়ে যাবে? শুধু হাতটাই তো ধরতে চেয়েছেন উনি।
আমি চেহারায় স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে এনে মুচকি হেঁসে বললাম
– পারেন।
আমার এই উত্তরে অবাক হয়ে গেছেন রাহুল ভাইয়া। হয়তো বিশ্বাস করতে পারছেন না যে আমি রাজি হয়ে গেছি। উনাকে স্বাভাবিক করতে আবারো বলে উঠলাম আমি
– কি হলো ধরবেন না?
– হ্যাঁ, হ্যাঁ। অবশ্যই।
রাহুল ভাইয়া হাত বারানোর আগেই আমি উনার হাত ধরে হাটতে লাগলাম। আমার এই আচরণে হয়তো আরো অবাক হয়েছেন উনি। তবে খুশিও হয়েছেন প্রচুর। আমি খুশি কি না জানি না। তবে উনাকে খুশি দেখে ভালো লাগছে আমার৷
কোন এক গোধূলি লগ্নের এমন সময়ই আমি কারো হাত ধরে হাটার স্বপ্ন দেখতাম। আর এই কেউটা ছিলো সায়ন ভাইয়া। আজকে আমি হাটছি ঠিকই কিন্তু আমার হাতে রাখা হাতটা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত একজন ব্যাক্তির৷
🍁
এখন মাঝরাত। সবাই ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। সারাদিন কালকের কথা মনে না হলেও রাতের পর থেকে আবার মাথায় এই চিন্তাই ভর করেছে। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করে চলেছি শুধু। বাসায় থাকলে এতক্ষণে চলে যেতাম বেলকনিতে। কিন্তু এখন তাও সম্ভব নয়। কেনো জানি ভয় করছে ভীষণ।
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তবু্ও হাত বারিয়ে পানিটা খেতে ইচ্ছে করছে না। আমি বোধ হয় দিনদিন অলসের গোডাউন হয়ে যাচ্ছি। কিছুই করতে ইচ্ছে করে না আমার।
আচমকাই মনে হলো রুমে অন্য কেউ আছে। বুকের ভেতর ঢাক-ঢোল বেজে চলেছে ক্রমাগত। আমি শিউর কালকের লোকটাই এসেছে আবার। হয়তো কাল তার উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তাই আজ আবার এসেছে। আমি সোজা হয়ে শুয়ে আছি। লোকটাকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না যে আমি জেগে আছি।
লোকটা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আমার ভয় চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে। আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি চিৎকার করার। উনি আমার মাথার কাছে এসে বসলেন। ঠিক করেছি এখনই চিৎকার করবো আমি। উনি নিশ্চয়ই মারতে এসেছেন আমায়।
কিন্তু আমার ভাবনায় এক ট্যাংক পানি ঢেলে অবাক হওয়ার মতো কাজ করে বসলেন লোকটি। আমার দিকে ঝুকে কপালে একটা চুমু একে দিলেন উনি। আমি তো ফ্রিজড হয়ে গেছি। সাথে আশ্চর্যও হয়েছি। কালকে এলেন মারতে আর আজকে……..। আর ঘুমিয়ে থাকার নাটক না করে চোখ খুলে ফেললাম আমি। কিন্তু অন্ধকারে মুখটা দেখতে পারছি না।
আমি জেগে গেছি বুঝে যাওয়ায় আজকেও দ্রুত চলে গেলেন উনি। কেনো যেনো আমিও আটকাই নি। আটকাবো কি করে? আমার আশেপাশের কিছুই তো মাথায় ঢুকছে না আমার। যখন বুঝতে পারলাম আমি লোকটাকে খুব সহজেই ছেড়ে দিয়েছি তখন নিজের উপরই রাগ হচ্ছে । চাইলেই তো আটকে রাখতে পারতাম আমি।
কিন্তু উনি রুমে ঢুকলেন কি করে? আমি যেতদূর জানি দরজাতো ভেতর থেকে বনশ ছিলো। আর কালকেই যদি কেউ মারতেই আসে তাহলে আজকে এমন করার মানে কি? তাহলে কি এই দুজন এক না? আর কিছু ভাবতে পারছি না আমি। শুরু হয়ে গেছে অসহ্য মাথা ব্যাথা।
চলবে……
[আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমি জানি আমার গল্পের পার্ট গুলা ছোঁয়া হয়ে যায়। কিন্তু এখানে আমার কিছু করার নেই। আমি চাইলেও বড় করে লিখতে পারবো না৷ এটুকু লিখতেই অনেক টাইম লাগে৷ তাই বড় পার্ট চেয়ে লজ্জা দিবেন না প্লিজ। আমি আবার একটু বেশিই লাজুক 😁😁😁। বুঝলেন না বিষয়টা? না বুঝলে নাই। বসে বসে মুড়ি খান।
আর হ্যাঁ, কলেজের অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ায় গল্পটা নিয়মিত দিতে পারছি না। তার জন্য এত্তগুলা সরি।
ধন্যবাদ ]