#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৩৬
কমিউনিটি সেন্টারের ড্রেসিং রুমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আর নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি।কাঁচা হলুদ কালারের তিন পার্টের লং জর্জেট গাউন পরেছি,গাউনের উপরে সেমি লং কাঁচা হলুদ কালার কোটি আছে যেটাতে পুরোটায় স্টোনের কাজ করা, গাউনের লং হাতা দুটোই মশারির মতো পাতলা কিন্তু কনুই এর কাছে সুন্দর করে এমব্রয়ডারি করা আছে।মেক আপ করতে ভালো লাগেনা তাই চোখে শুধু আইলাইনার আর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিয়েছি।মাথায় ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে স্টোনের টায়রা পরে চুলগুলো খোলা রেখেছি।কানে স্টোনের বড় বড় ইয়ার রিং পরেছি,চুল খোলা থাকায় সেগুলো ভাল করে দেখা যাচ্ছে না।ওড়নাটা একপাশে দিয়ে ভাল করে ঠিক করে নিয়েছি।পাশ থেকে রুহি আপু আমাকে আয়না ছেড়ে দেওয়ার তাড়া দিচ্ছে।আমি মাথার টায়রাই একটু হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে রুহি আপুকে বললাম,
আমি:রুহি আপু,আমার সাজ কমপ্লিট।দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে?(রুহি আপুর সামনে পোস নিয়ে দাঁড়িয়ে)
রুহি:অন্ত মুনি,তোকে আর নতুন করে কি বলবো হুম?এক কথায় বলছি ওকে?তোকে আমার প্রিয় ফুল সূর্যমুখীর মতো লাগছে।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:সত্যি?(আনন্দিত হয়ে)
রুহি:হুম তিন সত্যি।এখন আয়না থেকে সর,আমিও রেডি হই।অনুষ্ঠান শুরু হতে বেশি দেরি নেই।(শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে)
আমি:ওকে আসো এখানে বসো আমি দেখে আসি ইচ্ছের হলো নাকি।(আয়নার সামনে টুলটাতে বসতে ইশারা করে)
রুহি:এই না,তুই কোথাও যাবি না।আমি এখানে একা থাকবো নাকি?(আয়নার সামনে টুলে বসে)
আমি:অহ সেটাও তো কথা।আমরা না এখানে এসে ভুল করে ফেলেছি, সবাই উপরে আর আমরা দুজন নিচে। কেমন ভয় ভয় লাগছে।(আশেপাশে তাকিয়ে)
রুহি:কোন ভয় নেই,এই সেকেন্ড ফ্লোরের সব গুলোই ড্রেসিং রুম।যেয়ে দেখ প্রত্যেক টা রুমেই কেউ না কেউ আছে।এই গোলাপ গুলো আমার খোপায় গুজে দে তো।(কয়েকটা গোলাপ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে)
আমি গোলাপ গুলো হাতে নিয়ে আপুর খোপায় ক্লিপ দিয়ে আটকাতে থাকলাম।আপু আয়নাতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
রুহি:ড্রেস টা খুব সুন্দর লাগছে,কবে কিনেছিস এটা?
আমি:কাল।
রুহি:কাল?কখন?আমরা সবাই তো শাড়ি কিনলাম,তুই ও তো শাড়ি কিনলি।(অবাক হয়ে)
আমি:রাতে কিনেছি,নির্ভীক ভাইয়া কিনে দিয়েছেন।এই সব কিছুই উনি কিনে দিয়েছেন।(আয়নাতে আপুর দিকে তাকিয়ে)
রুহি:এত কিছু?অনেক টাকা খরচ করেছেন তো তাহলে।নির্ভীক তোকে খুব পছন্দ করে তাইনা?আসার থেকে দেখছি তোর সাথে উনার বেশ ভাব।(মুচকি হেসে)
আমি:হুম আমি তো উনার ফ্রেন্ড হই,উনি আমাকে পিচ্চি ফ্রেন্ড বলেন আবার মাঝে মাঝে বেস্ট ফ্রেন্ডও বলেন।(হেসে)
রুহি:উনার সাথে তোর কত দিনের পরিচয়?(মেক আপ করতে করতে)
আমি:উনি তো বলেন আমার জন্মের পর থেকেই উনার সাথে আমার পরিচয়।(পাশের চেয়ারে বসে)
রুহি:বুঝলাম না,তুই তো ঢাকাতে….
আর কিছু বলার আগেই দরজায় নক পড়লো।আমি উঠে যেয়ে দরজা খুলতেই মিতু আপু আর ইচ্ছেকে দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম।
আমি:অহ মাই গড,এ আমি কাদের দেখছি?খুব,খুব,খুব সুন্দর লাগছে।(দুজনের দিকে তাকিয়ে)
মিতু:তোকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে।এত সুন্দর ড্রেস কোথায় পেলি?ইশ!আমিও এরকম একটা ড্রেস কিনলে ভাল হত।(রুমে ঢুকে)
ইচ্ছে:আমি সিউর তোকে দেখলে আজ নির্ভীক ভাইয়া জ্ঞান হারাবে।(আমার কানে কানে)
আমি:উনি আমাকে কখনও সেসব নজরে দেখেননি আর কোনদিন দেখবেনও না,সো ফালতু কথা বলবিনা।(মন খারাপ করে ইচ্ছের কানে কানে)
ইচ্ছে:কেন?(অবাক হয়ে)
আমি:উনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে,মিষ্টি….
ইচ্ছের কানে কানে এতটুকু বলেই থেমে গেলাম।এই ব্যাপার টা আমি কারো সাথে শেয়ার করতে চাইনি কিন্তু মুখ ফসকে ইচ্ছেকে বলেই দিলাম।ইচ্ছের কাছে কিছুই লুকোতে পারিনা।
ইচ্ছে:কি?এটা কি করে সম্ভব?(অবাক হয়ে জোড়ে)
রুহি:কি হয়েছে রে?(আমাদের দিকে তাকিয়ে)
ইচ্ছে:কিছুনা।রুহি আপু হয়নি তোমার?আমরা সবাই রেডি, আফ্রা আপুকে স্টেজে বসিয়েছে।পাঁচতলায় আফ্রা আপুর স্টেজ আর চারতলায় রাযীন ভাইয়ার।উনারা ফোন করে আমাদের আগে হলুদ নিয়ে যেতে বলেছেন তারপর উনারা আসবেন।এই অন্ত,চল জারিফ ভাইয়া তোর কথা জিজ্ঞেস করছে।রুহি আপু তুমি মিতু আপুর সাথে তাড়াতাড়ি আসো।(গরগর করে)
রুহি:আচ্ছা তোরা যা আমরা আসছি।
আমি ইচ্ছের সাথে বাহিরে আসলাম।ইচ্ছে হলুদ শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেছে কিন্তু হাঁটতে পারছেনা। একহাতে শাড়ির কুচি ধরে হাঁটতে হাঁটতে আমাকে বলল,
ইচ্ছে:তুই কি করে জানলি নির্ভীক ভাইয়ার গালফ্রেন্ড আছে?
আমি:জেনেছি কোন ভাবে।বাদ দে ওসব কথা,প্লিজ।(মন খারাপ করে)
ইচ্ছে:আরে কেন বাদ দিব, তুই যেটা বলছিস সেটা সম্ভব না।(ভ্রু কুচকে)
আমি:ওই তো লিফট্ এসে গেছে। চল,চল।
আমরা দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে লিফটের ভেতরে ঢুকলাম।ভেতরে অনেক লোক আছে দেখে দুজনই চুপ থাকলাম।পাঁচতলায় এসে লিফট থেকে নেমে আপুর স্টেজের দিকে গেলাম।এখানে সবাই হৈ,হুল্লোর করছে।আমি যেয়ে আপুর কাছে বসলাম।কাঁচা হলুদ শাড়ি আর ফুলের গহনায় আপুকে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে। আপুর সামনে নানান ডিজাইনের হলুদের তত্ব সাজিয়ে রাখা হয়েছে।আমি আর ইচ্ছে আপুর সাথে সেলফি তোলা শুরু করে দিলাম।আপু আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
আফ্রা:জারিফ ভাইয়া খুঁজছে তোকে, ছবি পরে তুলিস আগে ভাইয়ার সাথে দেখা করে আয়।
আমি:কোথায় ভাইয়া?(ফোনের দিকে তাকিয়ে)
আফ্রা:ওই পাশটায় দেখ,নাছিম ভাইয়াদের ওখানে।
আমি স্টেজ থেকে নেমে ঐদিকে যেয়ে জারিফ ভাইয়াকে ডাকলাম।হলুদ পান্জাবিতে ভাইয়াকে খুব হ্যান্ডসাম লাগছে।সব ভাইয়ারাই হলুদ পান্জাবি আর আপুরা হলুদ শাড়ি পরেছে।জারিফ ভাইয়া আমার কাছে এসে বলল,
জারিফ:ছোটপাখি,কোথায় গিয়েছিলি?কখন থেকে খুঁজছি।
আমি:আমি রুহি আপুর সাথে সেকেন্ড ফ্লোরে ড্রেসিং রুমে ছিলাম।
জারিফ:ওকে চল।
আপুকে হলুদ লাগানো শুরু করা হলো।একে একে সবাই আপুকে হলুদ ছোঁয়ালো।আমিও অনেক গুলো হলুদ নিয়ে আপুর গালে ছুঁয়ে দিলাম।আপুকে হলুদ দেওয়া শেষে ভাইয়া আপুরা একে অপরকে হলুদ লাগাতে লাগলো।আমার গালেও সবাই হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে।এখানে সবার গালে হলুদ আছে শুধু মাত্র আরাফ ভাইয়া হলুদ লাগায় নি।জারিফ ভাইয়া থাকার জন্য আরাফ ভাইয়া আমার আশেপাশে ঘেষতে পারছেনা কিন্তু দূর থেকে দেখছে।আমি সেদিকে বেশি খেয়াল করছিনা।আপুর কাছে বসে থেকে মজা করছি।আপুকে হলুদ লাগানো শেষে জুনিয়র সিটিজেনরা সবাই তত্ব নিয়ে রেডি হলাম।এখন আমরা রাযীন ভাইয়াকে হলুদ লাগাতে যাবো।
জারিফ ভাইয়ার একহাত জড়িয়ে ধরে পাঁচ তলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে চার তলায় নামছি।যতই এক ধাপ এক ধাপ করে নিচে নামছি আমার হার্টবিট ততই বেড়ে যাচ্ছে।কারন নিচে গেলেই নির্ভীক ভাইয়ার সাথে দেখা হবে।আমাকে দেখলে উনি নিশ্চয় সবার আগে উনার সেই অমায়িক হাসি হাসবেন যেটা আমি স্বপ্নের মধ্যেও দেখি।
নিচে এসে আমরা অবাক,এখানে প্রচুর লোক।উনারা এত লোক ইনভাইট করেছেন?আমরা নিচে আসতেই বর পক্ষ থেকে আমাদের ফুল দিয়ে স্বাগতম জানানো হলো তারপর আমাদের স্টেজের সামনে এক সাইডে সোফায় বসতে দিলেন,আদর আপ্যায়নের ব্যবস্থা করলেন।আমি জারিফ ভাইয়া আর ইচ্ছের মাঝখানে বসলাম।জারিফ ভাইয়ার অন্যপাশে আরাফ ভাইয়া বসেছে।আমি স্টেজের উপর রাযীন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম কারন রাযীন ভাইয়াকে হলুদ মাখিয়ে ভূত বানিয়ে বসিয়ে রেখেছে।প্রান্ত ভাইয়াকে দেখছি,উনিও হলুদ মেখে যাতা অবস্থা।বাকি ছেলে মেয়েদের তো চিনতেই পারছিনা।তাছাড়া ছোট বড় সবার মুখে হলুদ আছে।সবাই কে দেখছি কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া কোথায়?হোয়্যার ইজ হি?
এত ভীরের মধ্যে আমার চোখ দুটো এখন নির্ভীক ভাইয়াকে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে গেল।হঠাৎই নির্ভীক ভাইয়ার কন্ঠ পেয়ে হকচকিয়ে পেছনে দরজার দিকে তাকালাম।
নির্ভীক:ঐ প্রান্ত,কাম হেয়ার।(চিল্লিয়ে)
এতক্ষণে উনাকে দেখতে পেয়ে যেন আমার চোখ জুড়োলো।কাঁচা হলুদ আর সবুজ কালার মিক্সড পান্জাবি আর কালো জিন্স পড়ে আছেন উনি।দুই গালে হলুদ মাখানো।উনাকে দেখতে খুব কিউট লাগছে।কিন্তু উনার হাতে বালতি কেন?কি আছে ওতে?আমি পেছনে ঘাড় ঘুড়িয়ে উনাকে দেখছিলাম কিন্তু ইচ্ছে আমাকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে কানে কানে বলল,
ইচ্ছে:প্রান্ত ভাইয়া আমাকে মেসেজ দিয়েছে দেখ।(মুচকি হেসে ফোন আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে)
“মিস ঝগরি রানী,অনেক অপেক্ষা করালে।যাইহোক,ওয়েলকাম।”
মেসেজটা পড়ে আমি ইচ্ছের দিকে তাকালাম।ইচ্ছেকে কিছু বলবো তখনি কোথায় থেকে নির্ভীক ভাইয়া এসে আমার সামনে দাঁড়ালেন আর হাতের বালতিটা ফ্লোরে রেখে দিলেন।বালতি দেখে আমি অবাক কারন পুরো এক বালতি গোলা হলুদ।এত হলুদ কে মাখবে।আমি উনার মুখের দিকে তাকাতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে সেই অমায়িক হাসি হাসলেন তারপর জারিফ ভাইয়া সহ সবার সাথে কথা বললেন শুধু আমি বাদে।কিন্তু আমার এতে মন খারাপ হলোনা কারন উনি বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন।
নির্ভীক ভাইয়া আর কয়েকটা ছেলে এসে আমাদের স্টেজে নিয়ে গেলেন।সবাই আপুর হলুদ রাযীন ভাইয়াকে লাগাতে লাগলো।আমি রাযীন ভাইয়াকে একটু হলুদ দিয়ে ইচ্ছের সাথে স্টেজের নিচে একপাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।
হঠাৎ একটা ছেলে ঘোষণা করলো দুইমিনিট লাইট অফ থাকবে।সবাইকে নিজের অবস্থানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে বলল আর ফোনের ফ্ল্যাশ ইউজ করতে নিষেধ করলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই লাইট অফ হয়ে গেল।চারপাশটা ঘুটঘুটে অন্ধকার না হলেও কিছু ভালমতো দেখা যাচ্ছেনা সবকিছু ঝাপসা লাগছে আর চেঁচামেচিতে কিছু স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না।আমি তো ভয় পাচ্ছি,ইচ্ছেকেও দেখতে পাচ্ছিনা।কোথায় গেল ও?
অন্ধকারে ইচ্ছের হাত খুঁজছি তখনি কেউ আমাকে টাইডলি জড়িয়ে ধরলো।এটা কোন মেয়ে নয় সেটা সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পেরেছি।ভয় পেয়ে একটা চিৎকার দিব তখনই লোকটা আমার মুখ চেপে ধরলো।আমি আমার হাত দিয়ে লোকটার হাতটা সরানোর চেষ্টা করতেই লোকটা একহাত দিয়ে আমার দুহাত শক্ত করে ধরে আমাকে ঠেলে দেয়ালের সাথে দাঁড় করিয়ে দিল।আমি লোকটাকে দেখার খুব চেষ্টা করছি কিন্তু ফেস বুঝায় যাচ্ছেনা।হঠাৎ মুখের উপর গরম নিঃশ্বাস পরতে লাগলো,ভয়ে এবার আমার শরীরের সব লোম কাঁটা দিয়ে উঠলো।লোকটা আমার সাথে লেপ্টে দাঁড়িয়ে আছে সেজন্য তার হার্টবিট আমি শুনতে পাচ্ছি,খুব জোড়ে জোড়ে বিট করছে।হঠাৎ গালে ঠান্ডা কিছু অনুভব করলাম,মনে হচ্ছে লোকটা তার গাল আমার গালে ছোঁয়াচ্ছে।গালে খোঁচার মতো কিছু ফুটছে,এটা নিশ্চয় খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।দুইগালে এরকম হওয়ার পর লোকটা আমার গালে আর কপালে কিস করে ছেড়ে দিল।ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে আমি ইচ্ছেকে ডাকতে থাকলাম কিন্তু এত চেঁচামেচির জন্য ইচ্ছে মনে হয় শুনতে পাচ্ছেনা।ব্যাগ থেকে ফোন বের করে পাওয়ার বাটন অন করতেই লাইট চলে আসলো।
আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি লাইট যাওয়ার আগে আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখান থেকে একটু দূরে আছি।ইচ্ছে একটু সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।আমি কাঁপতে কাঁপতে ইচ্ছের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই স্টেজ থেকে একদল ছেলে মেয়ে চিৎকার দিয়ে বলল,”সারপ্রাইজ”।
ওদিকে গুরুত্ব না দিয়ে আমি ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
ইচ্ছে:কিরে কি হয়েছে?কাঁদছিস কেন?(ব্যস্ত হয়ে)
আমি:অন্ধকারে একটা ছেলে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল আর আমার গালে আর হাতে হলুূদ লাগিয়ে দিয়েছে,এই দেখ আর এগুলো হাত দিয়ে লাগাইনি। কিসও করেছে গালে।(কাঁদতে কাঁদতে)
ইচ্ছে:কি?কে করল এমন?আরাফ ভাইয়া তো জারিফ ভাইয়ার সাথে আছে।(ভ্রু কুচকে)
আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
আমি:আমার খুব খারাপ লাগছে।
ইচ্ছে:আস্তে,ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে তোর মান সম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে আর জারিফ ভাইয়া জানতে পারলে সিনক্রিয়েট করবে।এখন আর কাউকে বলবিনা।কাঁদিসনা চল ভাইয়ার কাছে থাকতে হবে।(হাত ধরে)
আমরা ভাইয়ার কাছে যাব তখনই কোথায় থেকে নির্ভীক ভাইয়া আমার সামনে আসলেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে আছি আর শব্দহীন কাঁদছি।অন্ধকারের লোকটা অনেকটা উনার মতোই সুঠাম দেহি হবে আর উনার হাতে এত হলুদ কেন।তাহলে কি উনি?না না এটা কিছুতেই হতে পারেনা,উনি আমার সাথে কখনও এমন অসভ্যতামি করবেন না।
নির্ভীক:কাঁদছো কেন?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:অন্ধকারে কে যেন….(কান্না থামানোর চেষ্টা করে)
ইচ্ছে:দেখুন না ভাইয়া,অন্ধকারে ভয় পেয়েছে।(আমাকে বলতে না দিয়ে)
নির্ভীক:অহ সরি,আসলে ভাইয়াকে না জানিয়ে ভাইয়ার অনেক পুরাতন কিছু ফ্রেন্ড এসেছে।লাইট অফ থাকতে ওরা এসে ভাইয়ার পাশে বসেছে লাইট অন করতেই তো ভাইয়া সারপ্রাইজড হয়ে গেল।তুমি অনেক ভয় পেয়েছ না?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি কান্না থামিয়ে মাথা নিচু করে থাকলাম।
নির্ভীক:এখনও ভয় করছে?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি শুধু মাথা নাড়ালাম যার অর্থ ‘না’।নির্ভীক ভাইয়া আর কিছু না বলে আমাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন।আশেপাশে সবাইকে দেখছি অনেক ছেলে আছে,তারা আমার দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে। সবার মুখেই হলুূদ আছে কাকে সন্দেহ করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।তাও আমি সবাইকে সন্দেহি নজরে দেখতে লাগলাম। তখনই একটা ছেলে এসে বলল,
“হেই ব্রো,ড্রিংকস্ গুলো কোথায়?কখন থেকে খুঁজছি।(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে) আরে ভাবি যে,অনেক দিন পর দেখা।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি ভ্রু কুচকে ছেলেটির দিকে তাকালাম।মুখে হলুদ ঠাসা কোন জায়গা বাদ নেই তাই প্রথমে চিনতে পারিনি কিন্তু এখন চিনতে পেরেছি,এটা তো শৈবাল।
নির্ভীক:এখানে কোন অ্যালকোহলের ব্যবস্থা করা হয়নি।আর শৈবাল আমাকে রাগাস না,ওকে?(চোখমুখ শক্ত করে)
শৈবাল:ওকে,ওকে।ইনজয় ইউর টাইম।(হাসতে হাসতে)
বলেই আমার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে চলে গেল।আমি ভ্রু কুচকে ভাবছি অন্ধকারের ওই লোকটা শৈবাল নয় তো?কিন্তু শৈবালের হাতে তো হলুদ দেখলাম না।আমার কেন যেন মনে হচ্ছে লোকটা আমার খুব কাছের কেউ,ওই হাতের স্পর্শ খুব চেনা।
ইচ্ছে:আপনারা আপুকে হলুদ পরাতে যাবেন না?(নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:অফকোর্স যাবো।(মুচকি হেসে)
প্রান্ত:আরে তোমরা এখানে?তোমাদের সাথে কথায় হলোনা,খেয়েছো তোমরা?এই নির্ভীক চল ওদের নিয়ে।(আমাদের কাছে এসে)
আমি:প্রান্ত ভাইয়া?জারিফ ভাইয়া কোথায়?আমি ভাইয়ার কাছে যাবো।(প্রান্ত ভাইয়ার কাছে যেয়ে)
প্রান্ত:ওপাশটাতে।(হাত দিয়ে ইশারা করে)
আমি ওইদিকে তাকিয়ে দেখি রিসাব ভাইয়া সোফায় বসে থেকে ফোন টিপছে।রিসাব ভাইয়ার কাছে গেলেও চলবে,এখানে আমার একটুও ভাল লাগছে না।সব হয়েছে ওই অসভ্য লোকটার জন্য।আশেপাশে কত অপরিচিত ছেলে তারা কেমন করে তাকাচ্ছে,খুব অসস্তি হচ্ছে।আর এক মুহূর্তও এখানে থাকবোনা,এখনই আম্মুর কাছে যাবো।আমি ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:চল,রিসাব ভাইয়ারর কাছে যাবো।
ইচ্ছে:ওকে।
নির্ভীক:কি ওকে?তোমরা আমাদের সাথে যাবে,কাম উইথ মি।(আমার হাত ধরে)
আমি:ওকে নিয়ে যান,আমি আম্মুর কাছে যাবো।(হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ইচ্ছের দিকে ইশারা করে)
বলেই দ্রুত পায়ে হাঁটতে লাগলাম।পেছন থেকে নির্ভীক ভাইয়া ডাকলেন তাও আর তাকালাম না।রিসাব ভাইয়ার কাছে যেয়েই ভাইয়াকে হাত ধরে টেনে তুলে বললাম,
আমি:রিসাব ভাইয়া,উঠো,চলো।
রিসাব:কোথায় যাবি?(ভ্রু কুচকে)
আমি:আম্মুর কাছে,চলো তাড়াতাড়ি।(হাত টেনে চলে আসতে লেগে)
রিসাব:আরে দাঁড়া,সবাই একসাথে যাবো।(আমার হাত ধরে আটকে রেখে)
আমি কোন কথা শুনলাম না জোড় করে রিসাব ভাইয়াকে নিয়ে আসতে লাগলাম।আসার সময় দেখলাম ইচ্ছে,প্রান্ত ভাইয়া অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর নির্ভীক ভাইয়া রেগে।এখন রাগ করে কি হবে?যতসব অসভ্য লোকদের ইনভাইট করে এনেছেন,থাকবোনা এখানে হুহ্।
উপরে এসে ওয়াশরুমে যেয়ে হাতমুখ ভাল করে ধুয়ে ফ্রেশ হলাম।তারপর আপুর কাছে যেয়ে বসলাম।এখন এখানে সব সিনিয়র সিটিজেনরা আছেন তাই চারপাশটা একদম কোলাহল মুক্ত।
আফ্রা:কিরে বাকিরা কোথায়?
আমি:নিচে।(ফোনের দিকে তাকিয়ে)
আফ্রা:ওদের কি অবস্থা দেখলি?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:এই যে দেখ,তোমার বর।চিনতে পারছো?(ফোনের পিকচার এগিয়ে দিয়ে)
আফ্রা:এ বাবা এটা কি ধরনের হলুদ সন্ধ্যা?(মুচকি হেসে)
আমি:জানো?উনারা হলুদ রাখার জন্য বালতি ইউজ করছেন আর সবাই হলুদ মেখে ভূত হয়ে আছে।(হাসতে হাসতে)
আমি সামনে তাকিয়ে দেখি রিসাব ভাইয়া বিরিয়ানির প্লেট নিয়ে বসে গেছে।আমারও ক্ষুধা লেগেছে। তাই আপুকে বললাম,
আমি:খেয়েছো তুমি?
আফ্রা:হুম একটু আগেই খেলাম।
আমি:ওকে তুমি থাকো আমি খেয়ে আসি।
বলেই এক দৌড় দিয়ে ফুড কর্ণারে গেলাম।সেখান থেকে প্লেটে করে খাবার নিয়ে রিসাব ভাইয়ার কাছে যেয়ে খেতে লাগলাম।
আমি:কয়টা মেয়ে পটালে?(রিসাব ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
রিসাব:আর বলিস না এইবার মনে হয় আমি নিজেই পটে গেছি।(মুচকি হেসে)
আমি:কাকে দেখে?(অবাক হয়ে)
রিসাব:খাওয়া শেষে দেখাবো নি তোকে।(খেতে খেতে)
আমি:এখনই দেখাও।(খাবার মুখে দিয়ে)
রিসাব:আরে খা আগে তারপর,তুই ভাল করে দেখে বলবি চিনিস কিনা।আমি দূর থেকে পিকচার তুলে নিয়েছি।জানিস প্রথম দেখায় মেয়েটা আমাকে গোলাপ দিয়েছে।
আমি:হা হা ওয়েলকামের ওই গোলাপ গুলো?
রিসাব:হুম।(মুচকি হেসে)
আমি:খাওয়া শেষ এবার দেখাও তো।(প্লেট ঠেলা দিয়ে সরিয়ে)
রিসাব:ওখানে গিয়ে বস,আমি আসছি।(খেতে খেতে)
আমি যেয়ে স্টেজের নিচে সোফায় বসে রিসাব ভাইয়ার জন্য ওয়েট করতে লাগলাম।কিছুক্ষণ পর রিসাব ভাইয়া এসে আমার পাশে বসলো।তারপর ফোন থেকে পিকচার বের করে দেখালো।আমি ভাল করে দেখে রিসাব ভাইয়াকে বললাম,
আমি:আপুটা তো অনেক কিউট কিন্তু আগে কখনও দেখিনি।নাম কি?
রিসাব:নাম ধাম কিছু জানিনা,আমি একটু কথা বলতে চাইলাম কিন্তু আমাকে পাত্তায় দিল না।(হতাশ হয়ে)
আমি:আগেই হতাশ হচ্ছো কেন?কাল আবার দেখা হবে দেখো।(রিসাব ভাইয়ার একবাহুতে হাত রেখে)
রিসাব:হুম।
আমি:দেখি এত কি পিকচার তুলেছো?
বলেই রিসাব ভাইয়ার ফোন নিয়ে দেখতে লাগলাম।ততক্ষণে নিচ থেকে সবাই চলে এসেছে।আমি সেদিকে কোন গুরুত্ব দিলাম না।ঠোঁট উল্টে রিসাব ভাইয়াকে বললাম,
আমি:তুমি সবার সাথে সেলফি নিয়েছো অথচ আমার সাথে নাও নি।
রিসাব:সেকি নেইনি?আয় আয় এখনই নিচ্ছি।
বলেই আমাকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বিভিন্ন পোসে কয়েকটা সেলফি তুলে নিল।আমি আর ভাইয়া একসাথে প্রায় মাথার সাথে মাথা ঠেকিয়ে ফোনে সবগুলো পিকচার দেখে রিসাব ভাইয়াকে ফোন দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।স্টেজের দিকে তাকিয়ে দেখি অনেক ভীর,আপুকে এবার রাযীন ভাইয়ার হলুদ লাগাচ্ছে।স্টেজের দিকে যেতেই সামনে নির্ভীক ভাইয়া দাঁড়ালেন, উনি আমার দিকে চোখমুখ লাল করে তাকিয়ে আছেন।আমি আবার কি করলাম?তখন নিচে ভাল লাগেনি তাই চলে এসেছি, এতে এত রাগ করার কি আছে?ধূর ভাল্লাগেনা।(মনে মনে)
উনি আমাকে কিছু না বলে আমার হাত ধরে হাঁটা দিলেন।এত দ্রুত হাঁটছেন যে আমাকে দৌড়াতে হচ্ছে।আমি হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম,
আমি:কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
উনি কিছু বললেন না।আমাকে নিয়ে লিফটে্ উঠলেন।লিফট্ থেকে বের হয়ে দেখি আমরা ছাদে।চারপাশে অনেক আলো আর কিছু টেবিল চেয়ার পাতা আছে।দেখে মনে হচ্ছে এটা একটা রেস্টুরেন্ট, পরিবেশ টা অসম্ভব সুন্দর কিন্তু আমরা দুজন ছাড়া এখানে আর কেউ নেই।
নির্ভীক ভাইয়া আমাকে নিয়ে চেয়ারে পাশাপাশি বসে একপাশ থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সেলফি তুলতে লাগলেন।আমার কাঁধে হাত রেখে মুখের কাছে মুখ এনে বিভিন্ন পোস দিয়ে কয়েকটা সেলফি তোলার পর উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে পিকচার গুলো দেখতে লাগলেন।আমি উঠে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে বললাম,
আমি:সেলফি তুলতে ছাদে আসতে হবে?নিচেই কত সুন্দর ডেকোরেশন ছিল।(উনার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:এই তুমি হাসোনি কেন?আর তোমার হলুদ কোথায়?মুছে ফেলেছো কেন?হুয়াই?(রেগে আমার দিকে তাকিয়ে)
বলেই আমাকে একটানে উনার কোলে বসিয়ে দিলেন।আমি তড়িৎ গতিতে উঠতে লাগলাম কিন্তু উনি আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে রাখলেন।উনার এমন আচরণ আমার একটুও পছন্দ হলো না।আমি রেগে উনাকে বললাম,
আমি:উফ্ ছাড়ুন,এমন করছেন কেন।
উনি আমাকে আরও শক্ত করে ধরলেন তারপর ফোন টেবিলে রেখে একহাত আমার ঘাড়ের পেছনে আর অন্যহাত দিয়ে আমার কোমড় জড়িয়ে রেখে আমার গালে উনার গাল ছোঁয়াতে লাগলেন।সেই একই ফিলিংস,একই ছোঁয়া।আমার তো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে।আমি কাঁপা কাঁপা হাতে উনাকে সরানোর চেষ্টা করছি কিন্তু উনি ছাড়ছেন না।উনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে নিজের মধ্যে নেই।আমি এবার কেঁদেই দিলাম।কিছুক্ষণ পর উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার চোখ মুছে দিয়ে কপালে কিস করে বললেন,
নির্ভীক:নাউ স্মাইল।(রেগে ফোন হাতে নিয়ে)
আমি মাথা নিচু করে বললাম,
আমি:অন্ধকারে ওই লোকটা আপনি ছিলেন?
নির্ভীক:অন্যকেউ থাকলে খুশি হতে তাইনা?শৈবালকে ভেবেছিলে?ওর দিকে কেন তাকাচ্ছিলে বল?(রেগে)
আমি আবার উনার কোল থেকে উঠতে গেলাম কিন্তু উনি এবার চরম রেগে গেলেন।
নির্ভীক:অন্ত?চুপচাপ থাকো বলছি, নাহলে আমি কি করবো আমি নিজেও জানিনা।(ধমক দিয়ে)
উনার ধমক শুনে আমি কেঁপে উঠলাম।উনি ক্যামেরা অন করে আমাকে হাসতে বলে আবার সেলফি তোলা শুরু করলেন।যদিও আমি হাসিনি তাও উনি প্রায় ৩০-৪০টা সেলফি তুলে আমাকে ছাড়লেন।আমি উঠে গিয়ে টেবিলের কোন ঘেষে মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম।
উনিও উঠে দাঁড়িয়ে ফোন প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বাম হাত দিয়ে আমার একবাহু চেপে ধরে ডান হাতের তর্জনি আঙুল দিয়ে শাসিয়ে বললেন,
নির্ভীক:আর কোন ছেলের সাথে সেলফি তুলবা?আর কারও হাত ধরবা?বসবা আর কোন ছেলের পাশে?(রেগে ধমক দিয়ে)
আমি মাথা নিচু করে কান্না করতে লাগলাম।উনি আমাকে এত বকা কখনও দেননি।আমার উপর এত রাগ কখনও দেখাননি।রাগে উনার চোখমুখ লাল হয়ে আছে।
নির্ভীক:টেল মি।(রেগে আমার গাল চেপে ধরে)
আমি হেঁচকি তুলে কাঁদতে থাকলাম।উনি চেয়ারে একটা লাথি দিয়ে কপালের চুলগুলো দুইহাত দিয়ে মাথার উপরে চেপে ধরলেন।
নির্ভীক:আমার হাত ছেড়ে তুমি অন্য কারও হাত ধরলে?হাউ ডেয়ার ইউ।(রেগে)
বলেই উনি আরেকটা চেয়ারে লাথি দিলেন।তারপর আবার আমার সামনে এসে বললেন,
নির্ভীক:আমাকে তুমি চিনতে পারো না?কেন বলো?কেন চিনতে পারোনা আমাকে?হুয়াই?(রেগে আমার দুই বাহু ঝাকিয়ে)
আমি কোন কথায় বলতে পারছিনা।উনার এমন ব্যবহারে খুব কষ্ট পাচ্ছি।উনি আমার সাথে এমন করছেন কেন,রিসাব ভাইয়ার হাত ধরেছি তাতে কি হয়েছে?সব ভাইয়ারা অনেক ভাল,সবাই আমাকে কত ভালোবাসে আর উনি অযথা রাগ করছেন।
নির্ভীক:কথা বলছো না কেন?উফ্ তুৃমি একটা অসহ্য মেয়ে।(আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে)
ধাক্কা খেয়ে আমি দুই তিন ধাপ পিছিয়ে গেলাম।এইবার আমার খুবই খারাপ লাগলো।উনি আমাকে অসহ্য মেয়ে বলে ধাক্কা দিলেন?ওকে আর কখনও উনার সাথে কথা বলবো না।আমি মাথা থেকে উনার কিনে দেওয়া টায়রা একটানে খুলে উনার পায়ের কাছে ফেলে দিলাম।টায়রার পাথর গুলো সব ছিটকে এদিক ওদিক চলে গেল।উনি আবার আমার দিকে রাগী চোখে তাকালেন।আমি কান্না করতে করতে দৌঁড়ে লিফটে্র কাছে আসলাম কিন্তু লিফট্ নেই।তাই সিঁড়ি দিয়েই নামতে লাগলাম।১০তলার ছাদ থেকে ৭তলায় দৌড়ে নেমে লিফট্ পেলাম।লিফটে্ করে ৫তলায় আসতেই টোয়া আপুর সাথে দেখা।এই ঢংগি মেয়ের পোষাক দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।পাতলা হলুদ কালার জর্জেট শাড়ি পড়েছে,স্লিভলেস ব্যাকলেস ব্লাউজ।আমাকে দেখে খুশি হয়ে বলল,
টোয়া:কোথায় গিয়েছিলি রে?কখন থেকে খুঁজছি তোকে।(আমার সামনে এসে)
আমি:কেন?(ভ্রু কুচকে)
টোয়া:এই যে হলুদ দিতে।
বলেই আমার গালে,কপালে হলুদ লেপ্টে দিল।আমি হাত দিয়ে সেগুলো তুলতে লাগলাম।টোয়া আপু খুশি হয়ে বলল,
টোয়া:এবার ওই ইচ্ছেমতিকে দিলেই আমার কাজ শেষ।
বলেই চলে গেল।আমি দুঃখী ফেস করে ভেতরে ইচ্ছেকে খুঁজতে লাগলাম।নির্ভীক ভাইয়া যে আমাকে একটুও পছন্দ করেন না আর বিরক্ত মনে করেন সেটা আজ উনি আমাকে ক্লিয়ারলি বুঝিয়ে দিয়েছেন।আমি উনাকে আর কখনও বিরক্ত করবোনা।আমি উনার কাছে একটা অসহ্য মেয়ে অথচ আমি উনাকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছি।উফ্ এত কষ্ট হচ্ছে।দূর থেকে ইচ্ছেকে দেখতে পেলাম।টোয়া আপু হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে।আমি মুখ হাত চুলকাতে চুলকাতে ওখানে গেলাম।টোয়া আপু আমাকে যেতে দেখে চলে গেল।
ইচ্ছে:কোথায় গিয়েছিলি?(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:এই তো এখানেই আছি।উফ্ এত চুলকাচ্ছে কেন।(মুখ চুলকাতে চুলকাতে)
ইচ্ছে:তোর মুখে এগুলো কি বের হয়েছে?(অবাক হয়ে)
আমি:আহ্ খুব চুলকাচ্ছে,উফ্ অস্বস্তি।
ইচ্ছে:মুখে পানি দে,অনেকক্ষণ হলুদ দিয়ে রেখে এমন হয়েছে মনে হয়।
আমি:উফ্ আম্মুকে ডাক,এগুলো কেমন যেন হচ্ছে।(ফ্লোরে বসে কাঁদতে কাঁদতে)
ইচ্ছে:এই কি হচ্ছে তোর?এমন করছিস কেন?দ্বারা আমি মামিন কে ডাকছি।(ভয় পেয়ে)
বলেই ও সবাইকে চিৎকার করে ডাকতে লাগলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই আমাকে ঘিরে ধরলো।আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছি।স্থির হয়ে বসে থাকতে পারছিনা মুখ আর হাত অসহ্য চুলকাচ্ছে।সারা আপু আর লিয়া আপু টাওয়েল ভিজিয়ে আমার মুখ হাত মুছে দিচ্ছে।আরাফ ভাইয়া আমার পাশে বসে ব্যস্ত হয়ে দেখছে।সবাই চিন্তিত হয়ে কি হল কি হল করছে।জারিফ ভাইয়া ভীর ঠেলে এসে আমার কাছে বসে দেখতে লাগলো,
আমি:ভাইয়া,কি হচ্ছে এসব?খুব কষ্ট হচ্ছে,আহ্।
জারিফ:আম্মু এগুলো কি হল?এখনই হসপিটালে নিতে হবে।এই আরাফ,নাছিম গাড়ি তে যা।(ব্যস্ত হয়ে)
আরাফ:আমি গাড়ি বের করছি।
বলেই আরাফ ভাইয়া চলে গেল।আমি এবার ফ্লোরে শুয়ে পরলাম।মুখ তো দেখতে পাচ্ছিনা কিন্তু হাতের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম গুটি গুটি লাল ঘামাছির মতো বের হয়েছে।এত চুলকাচ্ছে মনে হচ্ছে এখানকার মাংশ কেটে ফেলে দিই।
কখন থেকে গলা ফাঁটিয়ে কাঁদছি আর এই অসহ্য চুলকানি,একদম ক্লান্ত হয়ে গেছি।চোখ হালকা বন্ধ করতেই নির্ভীক ভাইয়ার কন্ঠ শুনতে পেলাম।
নির্ভীক:অন্ত,অন্ত?ভাইয়া,কি করে এমন হল?এখনই হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।(উত্তেজিত হয়ে আমার একহাত ধরে)
জারিফ:কি থেকে কি হয়ে গেল,ছোটপাখি?ছোটপাখি?
আমি:কাউকে নিবা না।কেউ গেলে আমি কোথাও যাবো না।তুমি একা যাবে।(চোখবন্ধ করে ভাইয়ার হাত ধরে)
আম্মু: জারিফ তাড়াতাড়ি চল বাবা,আমার মেয়েটার মুখ যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।(কাদতে কাদতে)
নির্ভীক:চলো।
বলেই আমাকে কোলে তুলে নিলেন।আমি রেগে হাত পা ছুড়া ছুড়ি করতে করতে বললাম,
আমি:নামান আমাকে,যাবো না আপনার সাথে।নামান,কোথাও যাবো না আমি।
উনি আমার কোন কথায় শুনলেন না।গাড়িতে এসে কোল থেকে নামালেন।আরাফ ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসে আছে।আমাকে মাঝখানে দিয়ে একপাশে জারিফ ভাইয়া অন্যপাশে নির্ভীক ভাইয়া বসেছেন।আমি উসখোস করছি আর চুলকাচ্ছি।চুলকিয়ে চুলকিয়ে চামড়ায় উঠে যাচ্ছে।নির্ভীক ভাইয়া আমার দুইহাত ধরে করুন মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:রক্ত বের হচ্ছে।আর হাত দিওনা এগুলোতে,চুলকালে আরও বেশি হবে।একটু ওয়েট করো আমরা চলে এসেছি।
আমি:ছাড়ুন আমার হাত(চিৎকার করে)উফ্ ছাড়ুন প্লিজ,ভাইয়া আমার হাত ছাড়তে বলো।(হাত টানতে টানতে)
উনি কিছুতেই আমার হাত ছাড়লেন না।জারিফ ভাইয়া ভেজা টাওয়েল দিয়ে আমার মুখ মুছে দিল এতে আরও বেশি চুলকাতে লাগলো কিন্তু উনি হাত ছাড়ছেন না তাই চুলকাতেও পারছিনা আর সহ্য করতে না পেরে উনার হাতে কামড় দিলাম উনি তাও ছাড়লেন না।আমি এবার রাগ করে চুপচাপ থাকলাম।মনে মনে ভাবলাম যতকষ্টই হোক আমি আর কিছু করবো না।কিছুক্ষণ পরই হসপিটালে পৌঁছে গেলাম।
জারিফ ভাইয়ার কাঁধে হেলান দিয়ে মোটামুটি বয়ষ্ক ডক্টরের দিকে তাকিয়ে আছি।কিছুক্ষণ আগে উনি আমাকে একটা ট্যাবলেট আর দুটো ক্যাপসুল খেতে দিয়েছেন।আমি সেগুলো খেয়ে চুপচাপ আছি,এখনও কিছু ঠিক হয়নি।ডক্টর প্রেসক্রিপশন লিখতে লিখতে বললেন,
ডক্টর:আগে কখনও এমন হয়েছে?(আমার দিকে তাকিয়ে)
জারিফ:ডক্টর ওর প্রচুর অ্যালার্জি আছে কিন্তু কখনও এমন হয়নি।কয়েকটা খাবার না খেলে কোন প্রবলেম হয়না।
ডক্টর:এগুলো অ্যালার্জি নয় চুলকানি।কোন খাবার খেয়ে এসব হয়নি।যেটার সংস্পর্শে এমনটা হয়েছে সেটা খেলে ও এতক্ষণ মারা যেত।
ডক্টরের কথা শুনে নির্ভীক ভাইয়া আমার একহাত জড়িয়ে ধরলেন।জারিফ ভাইয়া আমাকে বলল,
জারিফ:ছোটপাখি?তুই কি কোথাও হাত দিয়েছিস?
আমি:উহুম।(ভাইয়ার কাঁধে মাথা রেখে)
জারিফ:তাহলে মুখে কিছু দিয়েছিস?
আমি:না।
আরাফ:হলুদ দিয়েছে,একটা মেয়ে ওকে হলুদ লাগিয়ে দিল তার কিছুক্ষণ পরই তো এমন করতে লাগলো।
ডক্টর:হলুূদ দিলে চুলকানি হয়না,চুলকানি থাকলে ভাল হয়ে যায়।যাইহোক,,আমি মেডিসিন লিখে দিলাম টাইমমতো খাওয়াবেন আর রেগুলার ক্রিম লাগাতে ভুলবেন না।রোদে বের হতে দিবেন না,ফুসকুড়িতে হাত দিতে দিবেন না।ব্যাথা থাকবে,জ্বরও থাকতে পারে।ভয় পাবেন না(জারিফ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:ওর সুস্থ হতে কত সময় লাগবে?(ডক্টরের থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে)
ডক্টর:মোটামুটি ২-৩ সপ্তাহ লাগবে।৭দিন পর আবার দেখা করবেন তখন ভাল-মন্দ বোঝা যাবে।আর জেলটা রেগুলার রাতে লাগাবেন তাহলে দাগ থাকবেনা।(ডেস্কের উপর হাত রেখে আমার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:এগুলো তো এখন লাল হয়ে আছে পরবর্তীতে কেমন হতে পারে আই মিন……
ডক্টর:এগুলো চুলকাবে কিন্তু হাত দিবেন না তাহলে কালো দাগ হয়ে যাবে আর কুসুম গরম পানি ইউজ করবেন। যখন চুলকাবে এই মেডিসিন টা খেয়ে নিবেন।ভয়ের কোন কারন নেই সব ঠিক হয়ে যাবে।(নির্ভীক ভাইয়াকে পুরোটা বলতে না দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:ওকে থ্যাঙ্ক ইউ ডক্টর।(উঠতে উঠতে)
ডক্টর:স্টুডেন্ট অফ দ্যা ইয়ার,মুহতাসিম ফুয়াদ নির্ভীক।আম আই রাইট?(মুচকি হেসে)
নির্ভীক:ইয়াহ্ বাট….(আবার বসে অবাক হয়ে)
ডক্টর:আমার ছেলে একটা রোবট বানিয়েছে ওর দাদিকে ঠিক টাইমে সঠিক মেডিসিন দেওয়ার জন্য।ওই রোবটের মেমরির প্রোগ্রামিং আপনার করা।(নির্ভীক ভাইয়াকে পুরোটা বলতে না দিয়ে)
নির্ভীক:সুব্রত?অহ্ হ্যালো অ্যাঙ্কেল অ্যান্ড আ’ম রিয়েলি সরি আমি আপনাকে আগে চিনতে পারিনি।(মন খারাপ করে)
ডক্টর:নো নো সরি বলতে হবে না তুমি তো আমাকে কখনও দেখ নি তবে আমি সুব্রতর কাছে তোমার অনেক গল্প শুনেছি আর তোমাদের এওয়ার্ড ফাংশনে আমি গিয়েছিলাম ওখানেই তোমাকে দেখেছি।
ব্যস শুরু হয়ে গেল গল্প।প্রায় ১০ মিনিট পর ডক্টরটা আমাদের ছাড়লেন।নির্ভীক ভাইয়া আর জারিফ ভাইয়া
উনাকে ইনভাইট করলেন।উনিও যাবেন বলেছেন।
গাড়িতে পেছনের সিটে হেলান দিয়ে বসে আছি।আরাফ ভাইয়া ড্রাইভ করছে আর পাশে জারিফ ভাইয়া বসে আছে। নির্ভীক ভাইয়া আমার পাশে বসে থেকে জেলের খাম থেকে নির্দেশিকা বের করে পড়ছেন।আমি আড় চোখে উনার হাতের দিকে তাকালাম।
তখন উনাকে কামড় দেওয়া ঠিক হয়নি।ইশ!একদম রক্ত জমাট বেধে আছে।গুনে গুনে ১৩টা দাঁতের ছাপ উঠে আছে।আমি করুণ চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকলাম।হঠাৎ মনে হলো আমি তো উনার কাছে অসহ্য মেয়ে,উনি আমাকে সহ্য করতে পারেন না।আর এতদিন আমি ভেবেছি উনি আমাকে অনেক পছন্দ করেন।এতদিন উনি আমাকে ঝামেলা মনে করেছেন আর আমাকে বুঝতেও দেননি।আমি আগে বুঝলে কখনও উনাকে বিরক্ত করতাম না।এখন যখন জানলাম অবশ্যই উনার থেকে দূরে থাকবো।কিন্তু কি করে?খুব খারাপ লাগবে তো।খারাপ লাগলেও আমাকে দূরেই থাকতে হবে কারন এখন তো আমি জানি উনি আমাকে অসহ্য মনে করেন।
আমি জানালার সাথে লেগে বসে বাহিরে তাকালাম।
চলবে……