#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়
#Sohani_Simu
পর্ব:৩৯
নির্ভীক ভাইয়াদের বাসার লাইব্রেরীতে সোফায় বসে গল্পের বই পরছি আর আড় চোখে নির্ভীক ভাইয়াকে দেখছি।উনি আমার সামনেই টেবিল চেয়ারে বসে মুখ গম্ভীর করে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছেন।মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছেন তারপর আবার কাজে মন দিচ্ছেন।প্রায় তিন ঘন্টা ধরে এভাবে বসে আছি উনি আমাকে উঠতে দিচ্ছেন না এমনকি রাতের খাবার আমাকে নিয়ে এখানেই খেয়েছেন।অনেক সময় ধরে এভাবে বসে থেকে বিরক্ত হয়ে গেছি তাছাড়াও অনেক রাতও হয়েছে তাই আমার ঘুম পাচ্ছে।বই বন্ধ করে বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই উনি রাগী গলায় বললেন,
নির্ভীক:কি হল,উঠছো কেন?বসে থাকো ওখানে।
আমি:আর কতক্ষণ?বাসায় যাবো,আমার ঘুম পাচ্ছে।(বিরক্ত হয়ে)
নির্ভীক:বসো আর ১০মিনিট।(স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে)
আমি:আপুর কাছে যাবো।(দরজার দিকে যেতে যেতে)
নির্ভীক:এই না,স্টপ।(একটু জোড়ে)
তখনই লোডশেডিং হল এদিকে উনার কথা শুনে আমি চমকে এক লাফে সোফার উপর দাঁড়িয়ে গিয়েছি।ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকালাম।ল্যাপটপের মৃদু আলোই নির্ভীক ভাইয়াকে ছাড়া এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে আর কিছু দেখা যাচ্ছে না।উনি ব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
নির্ভীক:অন্ত,দাঁড়াও ওখানেই থাকো।আমি আছি তো এখানে,কোন ভয় নেই।
আমি:আমি ঠিক আছি।
নির্ভীক:এদিকে আসো।(আমার হাত ধরে)
আমাকে নিয়ে গিয়ে উনার পাশে বসালেন।ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে ফোন টেবিলের ওপর উপুর করে রাখলেন ফলে সব আলো সিলিং এ পরে পুরো রুম আলোকিত হয়ে গেল।উনি আবার মাউসে হাত রেখে বললেন,
নির্ভীক:আর একটু ওয়েট করো।এখন এটা রেখে উঠাই যাবেনা,কিছুক্ষণের মধ্যেই এটা শেষ হয়ে যাবে।(স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে)
আমি:আচ্ছা।(উনার দিকে তাকিয়ে)
উনি আর কিছু বললেন না।উনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি মন মস্তিষ্ক সব ল্যাপটপকে দিয়ে দিয়েছেন।আমি টেবিলে দুই কনুই রেখে দুই হাত দিয়ে গাল ধরে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।উনি তীক্ষ্ণ কালো চোখে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছেন,চোখের ভ্রুর কাছে কয়েকটা কালো চুল নেমে এসেছে।উনার হেয়ার কাট টা অনেক ভাল লাগে আমার, সামনের চুলগুলো বড় রেখে পেছনের আর পাশের চুলগুলো ছোট রাখেন।পেছনের চুলগুলো আর একটু ছোট হলে আর্মিদের মতো লাগতো,অবশ্য এটায় পারফেক্ট আছে।হটাৎ চারপাশে লাইট জ্বলে উঠলো।আমি উনার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানিনা।উনি একটা দম ছেড়ে বললেন,
নির্ভীক:উফ্ এতক্ষণে শেষ হলো।
উনার কথা শুনে আমি গাল থেকে হাত নামিয়ে ঠিক হয়ে বসে বললাম,
আমি:তাহলে চলুন,আমি বাসায় যাবো।
নির্ভীক:এখনই?১০টা বাজে আরও দুঘণ্টা পর নিয়ে যাবো।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:কি?আরও দুঘণ্টা?আপনি কিন্তু শুধু শুধু আমাকে আটকে রেখেছেন।(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:তোমার জন্যই তো এসব করতে হচ্ছে।আমার কথা শুনলে তোমাকে এভাবে বসে থাকতে হতো না।(ল্যাপটপ অফ করে)
আমি:কেন,আমি আবার কি করলাম?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:আচ্ছা তোমার ওই ভাইগুলো কবে যাবে বলো তো?ওরা আমাকে খুব জালাচ্ছে, ওদের জন্য আমার রাতের ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে যাচ্ছে।(চেয়ার টেনে উঠে দাঁড়িয়ে)
আমি:কেন?ভাইয়ারা কি করেছে?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:সবসময় আমার জিনিসে হাত দিচ্ছে আমার একদম ভাল লাগছে না।(বিরক্ত হয়ে)
আমি:ওরা তো আপনাদের বাসায় আসেনি।তাহলে আপনার কিছুতে হাত দেওয়ার তো কথা না।(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:তোমাদের বাসাতেই থাকে আমার জিনিস।(ল্যাপটপ ড্রয়ারে ঢুকিয়ে)
আমি:কি জিনিস?আমাকে বলুন আমি ওটা তুলে রাখবো তাহলে ওরা আর হাত দিবেনা।
নির্ভীক:তোমাকে বলে কাজ হবে না তুমিও ওদের মতোই ছাগল।যা করার আমাকেই করতে হবে।(মুচকি হেসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে)
আমি:আমি ছাগল?(চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে)
নির্ভীক:হুম কিউট ছাগল।(গাল টেনে)
আমি রেগে আমার গাল থেকে উনার হাত সরিয়ে বললাম,
আমি:আমি এখনই বাসায় যাবো আর কখনও আসবোনা এখানে,আপনি আমাকে আর আমার ভাইদের ছাগল বলেছেন।(উল্টো দিকে ঘুরে দরজার দিকে যেতে যেতে)
নির্ভীক:আসবানা বললেই হলো?তুলে নিয়ে আসবো,আর যেতেই দিবো না।(পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে)
উনি আমাকে জড়িয়ে ধরায় আমি কেঁপে উঠলাম।হাত-পা মৃদু কাঁপছে,হার্টও স্বাভাবিক এর চেয়ে জোড়ে বিট করতে লাগলো।উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন,
নির্ভীক:আজকে এখানে থাকো,প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
আমি:না,ছাড়ুন।(ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে)
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার এক হাত ধরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:চলো ছাদে যাই।
আমি:না যাবো না।(হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে)
নির্ভীক:যেতেই হবে।(হাঁটতে হাঁটতে)
উনি আমার কোন কথায় শুনলেন না।আমাকে টেনে নিয়ে ছাদে আসলেন।আসার সময় কমলা খালাকে বললেন খালা যেন লাইব্রেরীর পাশের রুমে ঘুমাই,আমি আজ খালার কাছে থাকবো।ছাদে এসে উনি ছাদের দরজা এপাশ থেকে লক করে দিলেন।তারপর আমাকে নিয়ে দোলনায় বসলেন।কিছু একটা ভেবে আবার উঠে গিয়ে দরজা খুলে সিঁড়ির ঘরে যেয়ে ছাদের লাইট অফ করে দরজা এপাশ থেকে লক করে আমার পাশে এসে বসলেন।আমি মুখ ফুঁলিয়ে উনার কাজ কারবারি দেখছি।কখন থেকে বাসায় যেতে চাইছি উনি আমাকে কিছুতেই যেতে দিচ্ছেন না।
নির্ভীক:আজকের রাত টা কত সুন্দর দেখেছো?চাঁদের আলোয় চারপাশটা কত স্নিগ্ধ লাগছে।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:হুম দেখেছি।(বিরক্ত হয়ে)
উনি বুঝতে পেরেছেন বাসায় না যাওয়ায় আমি বিরক্ত তাই বললেন,
নির্ভীক:আচ্ছা তুমি বাসায় যেয়ে কি করবা বলো তো?ওই ছাগলদের সাথে পার্টি দিবা?ওদের সাথে থাকলে কিছু শিখতে পারবানা না, আমার সাথে থাকো তাও কিছু শিখতে পারবা।(টিশার্টের কলার ঠিক করতে করতে)
আমি:কি শিখতে পারবো?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:ভালোবাসা।(ফিসফিস করে)
উনার কথা শুনে আমার রাগ হলো।উনি মিষ্টিকে ভালোবাসেন এটা ভেবে আরও বেশি রাগ হলো কিন্তু হঠাৎই মনে হলো উনার থেকে মিষ্টির কথা শুনলে কেমন হয়?অ্যাজ আ ফ্রেন্ড,আমি উনাকে উনার গার্লফ্রেন্ডের ব্যাপারে আস্ক করতেই পারি কিন্তু কিভাবে,লজ্জা লাগছে তো।
নির্ভীক:কি ভাবছো?(ভ্রু কুচকে)
আমি:ভাবছি….আপনার গার্লফ্রেন্ডকে তো কখনও দেখালেন না।(উনার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:এসব ভাবছো?(রেগে ভ্রু কুচকে)
আমি:হুম দেখান,দেখবো আমি।(ভীত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে)
আমার কথা শুনে উনি রাগী মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি মনে হয় ভুল কিছু আস্ক করে ফেলেছি সেটা উনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।আমি ভীত কন্ঠে উনাকে বললাম,
আমি:সরি।আমি বলতে চাইনি,এমনি..
নির্ভীক:আচ্ছা চলো ওর কথা বলি তোমাকে।(মুচকি হেসে)
উনার কথা শুনে আমার মনটা ভেঙ্গে গেল।তারমানে আমার ধারণা ১০০% সত্যি ছিল,সত্যি উনার গার্লফ্রেন্ড আছে।আমি মন খারাপ করে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:ইচ্ছেকে বলুন ও বিশ্বাস করেনা আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে।
নির্ভীক:না না সবাইকে বলা যাবেনা,শুধু তোমাকে বলবো।তুমি কিন্তু কাউকে বলবানা,ওকে?(মুচকি হেসে)
আমি শুধু মাথা নাড়ালাম আর উনার কথা শোনার জন্য মনটাকে একটু শক্ত করলাম।উনি আমার পাশে এগিয়ে এসে আমার একহাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললেন,
নির্ভীক:ওর নাম মায়া।(সামনের দিকে তাকিয়ে)
আমি:মায়া?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:হুম।(মুচকি হেসে)
তাহলে মিষ্টি কে?মায়াই যদি উনার গার্লফ্রেন্ড হবে তাহলে উনি মিষ্টিকে ফোনে আই লাভ ইউ বলেছিলেন কেন?আর মিষ্টির জন্য সবকিছু করেছেন,মিষ্টিকে কখনও ছাড়বেননা।এসব কি তাহলে?হয়ত মিষ্টি আরেক নাম মায়া।(মনে মনে)
আমি:শুধু মায়া?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:না আরও অনেক নাম আছে ওর।তবে তোমাকে শুধু মায়াই বললাম,ওকে?(মুচকি হেসে)
আমি:ওকে।(মন খারাপ করে)
নির্ভীক:আমি ওকে অনেক ভালোবাসি।(আকাশের দিকে তাকিয়ে)
আমি:ভালোবাসার চেয়েও বেশি?(উনার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:হুম অনেক অনেক বেশি।ওই আকাশের চেয়েও বেশি।(আকাশের দিকে তাকিয়ে)
আমি:দেখবো মায়াকে।
নির্ভীক:দেখবে?আচ্ছা চোখ বন্ধ করো আর আমার কথা গুলো ফিল করো তাহলেই দেখতে পাবে।(আমার পাশে আর একটু এগিয়ে এসে)
আমি:আপনি এমনি বলুন,আমি চোখ বন্ধ করবো না।(উনার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে)
নির্ভীক:উম,আচ্ছা ঠিক আছে।(আবার আমার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে)
আমি:উনি কি খুব সুন্দর দেখতে?আপুর মতো সুন্দর?
নির্ভীক:আমি তো ওকে ছাড়া আর কাউকে দেখিনি তাই জানি না কার মতো সুন্দর বা ওর চেয়ে বেশি সুন্দর কেউ আছে কিনা।(আমার হাতের দিকে তাকিয়ে)
আমি:আর কারও দিকে তাকাননি?কিন্তু রাস্তাঘাটে, ভার্সিটিতে তো অনেক মেয়ে থাকে তাদের কাউকে দেখেন নি?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:উহুম।(আমার কাঁধে মাথা রেখে)
আমি:কিন্তু…
নির্ভীক:লাভ বল আর অ্যাট্রাকশনই বল কিংবা লাইক,যাই বল না কেন।আমি মনে করি পৃথিবীতে ও ছাড়া আর কোন মেয়েই নেই।বুঝতে পারছো? (আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:মানে আমরা যারা অন্য মেয়েরা আছি এরা আপনার কাছে মেয়ে নয়?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:তুমি বাদে,তুমি অন্যদের মধ্যে পর না। তুমি তো আমার পিচ্চি।(আমার নাক টেনে)
আমি:তাহলে আপনি মায়াকে ভালোবাসেন?(মলিন মুখে উনার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:হুম।(মুচকি হেসে)
আমি:আর মায়া?(মন খারাপ করে)
আমার কথা শুনে উনি একটা ছোট দম ছেড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন,
নির্ভীক:আমি এমন একটা মেয়েকে ভালোবাসি যে কখনও কাউকে ভালোবাসেনি।(মন খারাপ করে)
তারমানে মায়া উনাকে ভালোবাসেন না।যাক এতক্ষণে একটু শান্তি পেলাম।মনটা একটু হালকা হল।উফ্ এতক্ষণ মনে হচ্ছিল বুকে কেউ পাথর তুলে রেখেছিল।আমি একটু নড়ে চড়ে বসে উনাকে কিছু বলবো তখনই উনি বললেন,
নির্ভীক:একমাত্র আমি ছাড়া,ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।(মুচকি হেসে আবার আমার কাঁধে মাথা রেখে)
উনার এই কথা শুনে আমার হৃদয় মন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল।তারমানে উনারা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসেন।এখন আমার কি হবে?আমিও নির্ভীক ভাইয়াকে ভালোবাসি কিন্তু নির্ভীক ভাইয়া তো আমাকে কোনদিনও ভালোবাসবেন না।আমি এখন কি করবো?খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু মরে গেলেও এখন কান্না করা যাবেনা তাহলে উনি সব বুঝে যাবেন।আমি যে উনাকে ভালোবাসি এটা কিছুতেই উনাকে বুঝতে দিবো না।অনেক কষ্টে কান্না আটকে চুপচাপ বসে আছি।উনি আমার হাতের আঙ্গুল নিজের হাতের আঙ্গুলের সাথে মাপছেন আর বলছেন,
নির্ভীক:জানো?রাতের আকাশে যখন চাঁদ উঠে তখন ওর হাত ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে।খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করে ওকে।
আমি কিছু বললাম না।মাথাটা বামপাশে ঘুরিয়ে নিয়ে বাম হাত দিয়ে অতি দ্রুত চোখের জল মুছে নিলাম।নিজেকে শক্ত করে বললাম,
আমি:নিচে যাবো,শীত করছে।
আমার কথা শুনে উনি আমার কাঁধ থেকে মাথা তুলে চিন্তিত হয়ে আমার কপালে হাত দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:এই গরমে তোমার শীত করছে?জ্বর এসেছে নাকি?
আমি:উফ্ কখন থেকে বলছি ঘুম পাচ্ছে আমার,আপনি আমাকে বাসায়ও যেতে দিচ্ছেন না এখানেও ঘুমোতে দিচ্ছেন না।কাল ভাইয়াদের সাথে ঘুরতে যাবো,আজকে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে হবে নাহলে কাল সকাল সকাল উঠতে পারবো না তো।বুঝতে পেরেছেন?(হালকা রেগে)
নির্ভীক:কোথাও যাবেনা তুমি আর ওই ছাগলদের সাথে কিছুতেই যেতে দিবো না।(রেগে)
আমি:আপনি আবার ভাইয়াদের ছাগল বললেন?(রেগে উঠে দাঁড়িয়ে)
নির্ভীক:ছাগলদের ছাগল বলবোনা তো কি বলবো?(বসে থেকেই আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:থাকুন আপনি,আমি এখনই বাসায় চলে যাবো।(রেগে)
নির্ভীক:আজকে তুমি এখানেই থাকবে ইভেন কালও।(আমার এক হাত চেপে ধরে রেগে)
আমি:নেভার।(রেগে)
নির্ভীক:চুপ,এত জেদ করো কেন?(রেগে ধমক দিয়ে)
এমনিতেই এতক্ষণ কান্না আটকে রেখেছিলাম আর এখন আমাকে ধমক দিলেন তাই আর আটকাতে পারলাম না।জোড়ে জোড়েই কেঁদে দিলাম।এটা ধমক দেওয়ার জন্য নয়,উনি মায়াকে ভালোবাসেন সেজন্য।আমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে উনি দুইহাত আমার গালে রেখে বললেন,
নির্ভীক:কেঁদোনা প্লিজ,আমি কিছু বলিনি তো তোমাকে।আচ্ছা কাল তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো,ওকে?ওই ছাগলদেরও সাথে নিবো।
আমি চেয়েও কান্না থামাতে পারছিনা।উনি আমার চোখ মুছে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:তোমার জন্য একটা গিফট্ আছে,ভেবেছিলাম পরে দিবো কিন্তু এখনই দিতে হবে দেখছি।আই থিংক ওটা দেখলে তোমার কান্না সব চলে যাবে।চলো নিচে যাই।
বলেই উনি আমাকে নিচে যেই রুমে আমি থাকবো সেখানে নিয়ে আসলেন।রুমে এসে দেখি কমলা খালা ঘুমোচ্ছেন।উনি আমাকে রেখে চলে গেলেন।কিছুক্ষণ পর উনি লাল কালার র্যাপিং পেপারে ঢাকা বক্স হাতে ফিরলেন।তারপর আমাকে নিয়ে আবার ছাদে আসলেন।এবার ছাদের লাইট অন করে রেখেছেন।আমি এখনও ধীরে ধীরে হেঁচকি তুলে কাঁদছি।উনি আমাকে নিয়ে দোলনায় বসে বক্সটা খুলতে খুলতে বললেন,
নির্ভীক:আমার পিচ্চি যা চায় তাই পাবে এট লিস্ট আমি যতক্ষণ বেঁচে আছি।(মুচকি হেসে)
কখনও না,কিছুতেই পাবো না। আমি আপনাকে চায় কিন্তু কখনও পাবোনা কারন আপনি মায়াকে ভালোবাসেন।(মনে মনে)
উনি বক্সটা খুলে তিনটে টিশার্ট বের করে দিলেন।একটা সেম টু সেম আরাফ ভাইয়ার ওই টিশার্টের মতো।আমি ওটা দেখে সব দুঃখ কষ্ট একদম ভুলে গেলাম।নীলচে সাদা টিশার্ট টা হাতে নিয়ে সবার আগে লোগো টা চেক করলাম।হুম লোগোতে একই ভাবে ফিয়ারলেস লিখা আছে।পরম আকাঙ্খার বস্তু হাতে পেয়ে এত খুশি লাগছে,ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা।আমি হাসি মুখে নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনি আমার চোখ মুছে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:চোখে জল মুখে হাসি,আর কত রুপ দেখাবা রে পিচ্চি?
আমি:এটা…
উনি আমাকে পুরোটা বলতে না দিয়ে অন্য দুটো টিশার্ট দুই হাতে নিয়ে বললেন,
নির্ভীক:এগুলোর দিকেও একটু দেখ।
আমি ওগুলোর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে লাল টিশার্ট টা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম।এটা পুরোটা লাল কালার বুকে লিখা আছে ফিয়ারলেস।এটাও সুন্দর।
আমি এবার অন্য টিশার্ট টা হাতে নিলাম। এটাতে তিনটা কালার আছে উপরের অংশে নেভি ব্লু, নিচের অংশ সাদা,সাদা অংশের উপর হালকা সবুজ কালারের দুটো টুনটুনি পাখির ছবি প্রিন্ট করা আর বুকের বামপাশে গোল লোগো প্রিন্ট করা আছে। এই লোগোতেও লিখা আছে ফিয়ারলেস।এই টিশার্ট টা আরাফ ভাইয়ার ওটার থেকেও বেশি ভাল লেগেছে।তাই আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
আমি:আমার এটা বেশি ভাল লেগেছে। আমি এটাই নিবো।
নির্ভীক:শুধু ওটা?এই সব গুলোই তো তোমার।(মুচকি হেসে)
আমি:এগুলো কোথায় পেলেন?আর এটা তো আরাফ ভাইয়ার ওটার মতোই।(খুশি হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:অনেক খুঁজতে হয়েছে।আর আরাফ ভাইয়ার ওটার মতো বলবা না।আরাফ ভাইয়ার ওটা আর নেই।(রাগী কন্ঠে)
আমি:নেই মানে?(ভ্রু কুচকে)
নির্ভীক:নেই মানে নেই,ওটা মারা গেছে।আমি ওটাকে মেরে ফেলেছি।(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমি:কি বলছেন?(অবাক হয়ে)
নির্ভীক:কিছুনা,এখন আমাকে দুটো কিসি দাও তো।তাড়াতাড়ি দাও।(গাল এগিয়ে দিয়ে)
আমি:কি?(চোখ বড় বড় করে)
নির্ভীক:অহ তুমি তো দিবানা, ওকে আমিই দিই।
বলেই উনি আমার গালে একসাথে কয়েকটা কিস করে ছেড়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:চলো এখন ঘুমোবে।
আমি কিছু বললাম না,অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।উনি আমাকে হাত ধরে রুমে নিয়ে আসলেন।আমাকে রুমে দিয়ে উনি নিজের রুমে চলে গেলেন।আমি ফ্রেশ হয়ে পাখি লাগানো টিশার্ট পরে খালার পাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম।এটা পরে অদ্ভূত ফিলিং হচ্ছে।বুকের উপর নির্ভীক ভাইয়ার নাম পরে আছে ভাবতেই ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠছে।হঠাৎ কিছু একটা ভেবে লাফ দিয়ে উঠে ওয়াশরুমে যেয়ে টিশার্ট চেন্জ করে জামা পরে এসে শুয়ে পরলাম।তারপর বালিশে মুখ গুজে কাঁদতে থাকলাম।আমার কান্না বুঝতে পেরে খালা জেগে গিয়েছে।খালা উঠে ব্যস্ত হয়ে আমার সাথে কথা বলতে লাগলো।কান্নার জন্য আমি কথায় বলতে পারছিনা।খালা ভয় পেয়ে রুম থেকে বাহিরে যাওয়ার জন্য এগুতেই আমি খালাকে জড়িয়ে ধরলাম।কিছুক্ষণ পর একটু স্থির হয়ে বললাম,
আমি:খালা তুমি এখানেই থাকো।(জড়িয়ে ধরে)
কমলা:কি হইছে তোমার?কাঁদতাছো ক্যান?ভয় পাইছো?(আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)
আমি শুধু মাথা নাড়িয়ে হুম বললাম।খালা আমাকে নিয়ে বসে থাকলো,আমি কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি নিজেও জানিনা।
.
সকাল ৮টা।নাস্তার টেবিলে সবাই বসে আছি।সবাই বললে ভুল হবে এখানে অ্যাঙ্কেল আর জাফর চাচা নেই,উনারা দরকারি কাজের জন্য আগেই নাস্তা সেরে কোথায় যেন গিয়েছেন।আমি,অ্যান্টি,খালা,নির্ভীক ভাইয়া আর রাযীন ভাইয়া বসে আছি।সবাই আপুর জন্য অপেক্ষা করছি।আমার চোখমুখ ফোলা দেখে সবাই জিজ্ঞেস করছিল কি হয়েছে খালা তখন সবাইকে বলেছে রাতে আমি ভয় পেয়ে কেঁদেছি।সবাই খুব সহজেই বিশ্বাস করে নিল,বিশ্বাস করলেই ভাল।নির্ভীক ভাইয়া আমার পাশেই বসে আছেন।কেন যেন উনার সামনে আসতে খুব কষ্ট হচ্ছে।কিছুতেই মানতে পারছিনা এত সুন্দর,সুদর্শন ছেলেটা আমাকে নয় মায়াকে ভালোবাসবেন।
আমি মাথা নিচু করে নিজের কষ্ট গুলোকে সময় দিচ্ছিলাম তখনই আপু এসে আমার পাশের চেয়ারের কাছে দাঁড়ালো।আপুর দিকে তাকিয়ে হা হয়ে গেলাম।লাল শাড়ীতে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে।চোখে কাজল দিয়েছে।মাথার ভেজা চুলগুলো হেয়ার পিন দিয়ে বেঁধে রেখেছে।আপু চেয়ার টেনে বসবে এমন সময় আমি বললাম,
আমি:আপু তুমি এত সকালে গোসল দিয়েছো কেন?আর ভেজা চুলগুলো এভাবে বেঁধে রেখেছো কেন?তোমার না কোল্ড এলার্জি আছে?(ভ্রু কুচকে)
আমার কথা শুনে আপু চেয়ারে না বসে দ্রুত পায়ে রুমের দিকে চলে গেল।খালা আর অ্যান্টিও ব্যস্ততা দেখিয়ে উঠে কিচেনের দিকে চলে গেল।আমি,নির্ভীক ভাইয়া আর রাযীন ভাইয়া শুধু বসে আছি।দুসেকেন্ডের মধ্যে রাযীন ভাইয়াও উঠে দাঁড়িয়েছে এমন সময় আমি বললাম,
আমি:ভাইয়া? না খেয়ে উঠছেন কেন?আপুও চলে গেল।আপনি বসুন তো আমি আপুকে নিয়ে আসছি।(উঠে দাঁড়িয়ে)
আমি উঠতেই নির্ভীক ভাইয়া আমাকে টেনে বসিয়ে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:তুমি বসো এখানে,ভাবি আজ আর নিচে আসবেনা।
আমি:কেন?(অবাক হয়ে)
“শান্তি প্যাকেজ এত তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি,আমাদের তো ফালুদা হলো ছোটুর কপালে কি আছে আল্লাহ মালুম।”
কথা গুলো বলতে বলতে রাযীন ভাইয়া চলে গেলেন।আমি নির্ভীক ভাইয়ার দিকে তাকালাম।উনি মুচকি হেসে আমার মুখে খাবার তুলে দিয়ে বললেন,
নির্ভীক:এখন এই সব গুলো খাবার আমাদের।
আমি:খাব না,সবাই না খেয়ে উঠে গেল তো।(নির্ভীক ভাইয়ার হাত সরিয়ে দিয়ে)
নির্ভীক:আরে খাও,ওরা রুমে খেয়ে নিবে।(আমার মুখে খাবার গুজে দিয়ে)
আমি অল্প খেয়ে উঠে চলে আসলাম।কি হল কিছুই বুঝলাম না।নির্ভীক ভাইয়া তো খেতেই থাকলেন।আমি বাসায় চলে যাবো তাই রুমে এসে ফোন নিয়ে নিচে গেলাম।নির্ভীক ভাইয়া বেসিনে হাত ধুচ্ছেন।আমি দেখেও না দেখার ভান করে কিচেনে অ্যান্টির কাছে গেলাম।
আমি:অ্যান্টি আমি বাসায় চলে গেলাম।(কিচেনের দরজায় দাঁড়িয়ে)
অ্যান্টি:এখনই?পরে যাস।(আমার দিকে এগিয়ে এসে)
আমি:না এখনি গেলাম।খালা গেলাম।তোমরা এসো আমাদের বাসায়।
বলেই আমি দ্রুত পায়ে গেইটের দিকে গেলাম।যাওয়ার সময় দেখলাম নির্ভীক ভাইয়া সোফায় বসে ফোন টিপছেন।আমার যাওয়া দেখে উনি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।আমি একটু অবাক হলাম কারন আমার যাওয়া দেখে উনি সব সময় মন খারাপ করেন আজ প্রথম হাসলেন আর আমাকে এগিয়ে দিতেও আসছেন না।আমি ভাবতে ভাবতে বাহিরে আসতেই জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে এক দৌড়ে ভেতরে এসে সোফার উপর উঠে দাঁড়ালাম।
অ্যান্টি খালা ব্যস্ত হয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো।
অ্যান্টি:কি হয়েছে?অন্ত?কি হয়েছে?(উদ্বিগ্ন কন্ঠে)
আমি:দরজার ওখানে তিনটে কুকুর আছে।(সোফার উপর দাঁড়িয়ে কাঁপতে কাঁপতে)
অ্যান্টি:ও ওগুলো রাযীন কিনে এনেছে,পুষবে।ওগুলো ভালো কুকুর,কিছু বলবেনা।
নির্ভীক:কিছু বলতেও পারে। ভাইয়া তো কালই কিনে আনলো এত তাড়াতাড়ি পোষ মানেনা এগুলো।আর এরা তো অনেক রাগী কুকুর,একটু রেগে গেলেই কামড়ে দিবে।(ফোন টিপতে টিপতে)
অ্যান্টি:না না অতোটাও নয়।(আমার দিকে তাকিয়ে)
নির্ভীক:চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।(উঠে দাঁড়িয়ে ফোন পকেটে রেখে)
আমি:নাআআ,কোথাও যাবোনা আমি।(ভয় পেয়ে)
নির্ভীক:আরে কিছু হবে না আমি আছি তো,চলো।(আমার হাত ধরে সোফা থেকে নামিয়ে)
আমি উনার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এক দৌড়ে আপুর রুমে আসলাম।এখানে এসে দেখি রাযীন ভাইয়া আপুকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।দরজা খোলায় ছিল তাই আমি নক করিনি।কি একটা অবস্থা।আমি চোখ বন্ধ করে এক দৌড়ে লাইব্রেরীর পাশের রুমে গিয়ে দরজা লক করে বেডের উপর গিয়ে বসলাম।এক মুহূর্তের মধ্যে এসব কি হয়ে গেল।আমি ফোন নিয়ে জারিফ ভাইয়াকে কল করে বললাম আমাকে এখনই বাসায় নিয়ে যেতে কিন্তু ভাইয়া বলল ভাইয়া অফিসে গিয়েছে তাই বিকেলে নিয়ে যাবে।
আমি হতাশ হয়ে বেডের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে পরলাম।
চলবে…..