#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu
৩৯.
গভীর রাতে প্রান্তদের বাসা থেকে ফিরেই নির্ভীক দৌঁড়ে নিজের ঘরে আসলো।পুরো ঘর অন্ধকার।বিছানার উপর ল্যাপটপে হালকা নীল আলো জ্বলছে।সেই আলোতে অন্তকে দেখা যাচ্ছে।সে বিছানায় এলোমেলো হয়ে ঘুমোচ্ছে।পাশেই ল্যাপটপে কার্টুন হচ্ছে,ওগি ফুল স্পীডে ককরোচ তিনটিকে তাড়া করেছে।নির্ভীক মুচকি হেসে অন্তর পাশে বসলো।অন্তর মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালো।তারপর বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শার্টের বাটন খুলতে খুলতে খেয়াল করলো ঘরে খুব গরম। অন্ত ফ্যান বা এসি কোনোটায় দেয়নি।নির্ভীক ফ্যানের সুইচ টিপতে গিয়েও টিপলো না।মনে মনে ভাবলো বাইরে প্রচুর বাতাস হচ্ছে অন্তকে নিয়ে ছাদে যাব।আকাশে পরিষ্কার চাঁদ,মৃদু ঠান্ডা বাতাস।এরকম পরিবেশে পিচ্চিটার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।নির্ভীক শার্টের সবগুলো বাটন খোলা রেখে বিছানায় গিয়ে ল্যাপটপের স্যাটার নামিয়ে একপাশে রেখে দিল।খুব সাবধানে অন্তকে কোলে নিয়ে ছাদে চলে গেল।
ঠিক করে শ্বাস নিতে না পারায় অন্তর ঘুম ভেঙ্গে গেল।চোখ খুলে দেখে নির্ভীক দুই আঙুল দিয়ে তার নাক চেপে ধরে আছে।অন্ত মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে নাক থেকে নির্ভীকের হাত সরিয়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে এদিক-ওদিক দেখতে লাগলো।খটখটে জোছনায় সবটা ভাল মতো দেখা যাচ্ছে।বিকেলে ছাদের এক কোনায় বসে চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য বেতের টেবিল চেয়ার রাখা আছে।নির্ভীক অন্তকে কোলে নিয়ে সেখানকারই একটা চেয়ারে বসেছে।অন্ত সবটা বুঝে উঠে নির্ভীকের দিকে তাকালো।নির্ভীকের ঠোঁটের কোনায় হাসি,মৃদু বাতাসে মাথার সামনের লম্বা চুলগুলো চোখের উপর এসে উড়ছে আর কুচকুচে কালো অক্ষিকূট দুটো অন্তর দিকে তাকিয়ে আছে।অন্ত বিস্মিত হয়ে নিজের পেটের উপর রাখা নির্ভীকের হাতের উপর হাত রাখলো।নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘ঘুম হল?’
অন্ত নির্ভীকের বাম হাতের কনুই এর ভাজ থেকে মাথা তুলে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
‘আপনি চলে এসেছেন?’
নির্ভীক অন্তর দুই গাল টেনে বলল,
‘হুম,রাতের মেডিসিন নিয়েছো?’
অন্ত কান্নামুখ করে নির্ভীকের দিকে তাকালো।শুধু রাতের নয় অন্ত আজকে সারাদিন একটা মেডিসিনও মুখে তুলেনি।প্রান্তর বিয়ের জন্য নির্ভীক সারাদিন ব্যস্ত ছিল সেই সুযোগে অন্ত ফাঁকিবাজি করেছে আর সব মেডিসিন জানালা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।এখন নির্ভীকের কাছে বকা খাওয়ার ভয়ে কান্নামুখ করে বসে আছে।নির্ভীক ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে অন্তর গালে হাত রেখে বলল,
‘আরে বকা দিইনি এখনও,কান্না করবা নাকি?কান্না করলে কিন্তু মাইর দিব।সকালে খেয়ে নিবা ওকে?’
অন্ত মিনমিন করে বলল,
‘নেই আর মেডিসিন!’
নির্ভীক ভ্রু কুচকে বলল,
‘নেই?দুদিন আগেই তো সাতদিনের জন্য আনলাম।আবার সব ফেলে দিয়েছো?’
অন্ত মাথা নিচু করে নির্ভীকের শার্টের বাটন খুটলাতে লাগলো।’
নির্ভীক মুচকি হেসে অন্তর গালে চুমু দিয়ে বলল,
‘আচ্ছা আর মেডিসিন খেতে হবে না।’
অন্ত খুশি হয়ে বলল,
‘সত্যি!!’
নির্ভীক অন্তর গালে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
‘একটা কন্ডিশনে।’
অন্ত মাথা একটু পিছিয়ে নিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
‘কিসের কন্ডিশন?’
নির্ভীক ইনোসেন্ট মুখ করে বলল,
‘ইয়ে মানে আমাকে একটু আদর করলে কি হবে?ইউ লাভ মি না?’
অন্ত অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে মুচকি হাসলো কিন্তু নির্ভীককে এমনভাব দেখালো মনে হচ্ছে যেন সে রাগ করেছে।নির্ভীক অন্তর গালে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ফিসফিস করে বলল,
‘প্লিজ প্লিজ প্লিজ একবার,শুধু একবার প্লিজ।’
অন্ত মাথা নিচু করল।নির্ভীক হতাশ হয়ে বলল,
‘ওকে ফাইন।চলো রুমে যাই।তাড়াতাড়ি ঘুমোতে হবে সকালে ক্লাস আছে।’
নির্ভীক অন্তকে কোলে নিয়ে হাঁটা দিতেই অন্ত নির্ভীকের গলা জড়িয়ে ধরে।নির্ভীক থমথমে মুখ করে হেঁটেই চলেছে।অন্ত এবার তার নরম হাত নির্ভীকের গালে রাখলো।নির্ভীক হাঁটা থামিয়ে অন্তর দিকে তাকালো।অন্ত নির্ভীকের কাঁধের সাপোর্ট নিয়ে আর একটু উঁচুতে উঠে নির্ভীকের গালে রাখা হাত দিয়ে নির্ভীকের দুই চোখ ঢেকে দিল।এটুকুতেই নির্ভীক যেন পৃথিবীর বাইরে চলে গেছে।অন্ত কি করতে পারে বুঝতে পেরেই নির্ভীকের হার্টবিট বেড়ে গেল।অন্তর কাছ থেকে শিহরণ জাগা প্রথম ছোঁয়া পেতেই নির্ভীকের হাত আলগা হয়ে গেল।কিছু বুঝে উঠার আগেই অন্ত কোল থেকে নিচে পরে ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো।নির্ভীক শুকনো ঢোক গিলে কয়েকধাপ পিছিয়ে গিয়ে কপালের চুলগুলো মাথার উপর চেপে ধরল,সে যেন আত্মজ্ঞান ভুলে গিয়েছে।অন্ত মেঝেতে বসে বাম হাতের মুঠোয় থাকা নির্ভীকের শার্টের বোতামের দিকে তাকিয়ে তারপর নির্ভীকের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো।প্রায় এক মিনিট পর আত্মজ্ঞান ফিরে পেতেই নির্ভীক উত্তেজিত হয়ে অন্তর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে অন্তর দুই বাহু ধরে বলল,
‘সরি আ’ম সরি,কোথায় লেগেছে?বল আমাকে,কোথায় লেগেছে?এখানে ব্যথা পেয়েছো?’
নির্ভীক অন্তর ডান হাতের কনুইয়ে হাত দিতেই অন্ত চোখ খিচে বন্ধ করে বলল,
‘ওয়েট ওয়েট,হাত দিয়েন না,উফ্।’
নির্ভীক হন্তদন্ত হয়ে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে ফোন খুঁজতে লাগলো।ফোন না পেয়ে দৌঁড়ে যেয়ে ছাদের লাইট অন করে অন্তর কাছে ফিরে আসলো।অন্তর ডান কনুই খানিকটা ছিলে গিয়েছে।ফ্র্যাকচার ট্র্যাকচার হয়েছে কিনা সেই ভয়ে নির্ভীকের মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে।অন্তকে নিয়ে ঘরে এসেই অন্তর হাতে ব্যথা নিরাময়ের জন্য স্প্রে করে দিল।অন্ত ঠোঁট ফুলিয়ে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে আছে।টেনশনে নির্ভীকের ঘাম ছুটে গিয়েছে।নির্ভীক অন্তকে জড়িয়ে ধরে উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
‘সরি আমি বুঝতে পারিনি তুমি এভাবে পরে যাবা।তোমার কথা ভাবলেই আমার রক্তে ঢেউ উঠে আর এত কিছু,অহ মাই গড!নো নিড টু লাভ মি,জাস্ট স্টে উইথ মি।’
অন্ত মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘ছাড়ুন,পায়েও ব্যথা করছে আর হাঁটুতেও।’
নির্ভীক যেন এবার পাগলই হয়ে যাবে।সামান্য চোটের জন্য নির্ভীককে এত উত্তেজিত হতে দেখে অন্ত বেশ মজা পাচ্ছে।নির্ভীক অন্তর ব্যথা পাওয়া স্থানে স্প্রে করে দিয়ে অন্তকে শুয়ে দিল।দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে নিজেও অন্তর পাশে শুয়ে হাতের উপর অন্তর মাথা নিয়ে অন্তর দিকে ঝুকে বলল,
‘খুব বেশি পেইন হচ্ছে?আইস নিয়ে আসি একটু?’
অন্ত মুচকি হেসে বলল,
‘হ্যাঁ আইসক্রিম নিয়ে আসুন।’
নির্ভীক অন্তর কপালে চুমু দিয়ে বলল,
‘উহুম,ঠান্ডা লেগে যাবে তারপর গলা ব্যথা হবে।তখন আবার অনেকগুলো মেডিসিন খেতে হবে।আইস ও লাগবেনা,ঘুমাও এখন।সকাল হতে হতে দেখবা আর পেইন থাকবেনা।’
অন্ত মুখ ফুলিয়ে অন্যপাশ ফিরে শুলো।নির্ভীক অন্তকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ভালোবাসি’
অন্ত মুচকি হেসে নির্ভীকের দিকে ঘুরে আবার নির্ভীকের গালে হাত দিতেই নির্ভীক অন্তর হাত ধরে মুচকি হেসে বলল,
‘আবার?সামলাতে পারবা তো?কান্না করলেও কিন্তু ছাড়বো না।’
অন্ত মুখ কাঁচুমাচু করে আবার অন্যপাশ ফিরে বলল,
‘ঘুম পাচ্ছে,অনেক ঘুম।’
নির্ভীক মৃদু হেসে অন্তর কানে ফিসফিস করে বলল,
‘এ্যাক্চুয়েলি আমার বউটা ভয় পাচ্ছে,অনেক ভয়।’
অন্ত পেটের উপর থেকে নির্ভীকের হাত সরিয়ে দিয়ে বালিশে মুখ গুজে থাকলো।তার এখন খুব লজ্জা করছে।নির্ভীক অন্তকে জড়িয়ে ধরে চুপচাপ ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
—
সকালে নির্ভীককে ভার্সিটির জন্য বের হয়ে যেতে দেখেই টোয়া ঝোপের আড়াল থেকে বের হয়ে আসলো।অস্বাভাবিক মুখভঙ্গি করতে করতে বিরবির করে বলল,
‘এবার তোকে কে বাঁচাবে অন্ত?নির্ভীক তো চলে গেল।ফিরে এসে তোর লাশ দেখবে।উফ কত্ত মজা হবে।’
হাতে থাকা ধারালো ছুড়িটা ফোল্ড করে জিন্সের পকেটে ঢুকিয়ে খিটখিটে মেজাজ নিয়ে টোয়া নির্ভীকদের বাসায় ঢুকলো।পুলিশ স্টেশন থেকে ঘুষ দিয়ে টোয়ার বাবা টোয়াকে বাসায় এনে ঘরে আটকে রেখেছিল।টোয়া ছোট বোনকে বোকা বানিয়ে শরীরে ড্রাগস নিয়ে অন্তকে খুন করতে এসেছে।যারা ড্রাগ অ্যাডিক্টেড হয় তাদের মাথায় একবার কিছু গেঁথে গেলে সেটা আর ভুলতে পারেনা।টোয়াও মাথার মধ্যে গেঁথে নিয়েছে অন্তকে সে মেরে ফেলবে,অন্তকে মারলেই নির্ভীকের সাথে তার বিয়ে হবে।ড্রাগস নিলেই এখন তার মাথার মধ্যে এসব চিন্তাভাবনা আসে আর ড্রাগস না নিলে একদম ভাল।
অন্ত ব্রেকফাস্ট শেষে বিছানায় শুয়ে কানে ফোন ধরে চোখবন্ধ করে নির্ভীকের সাথে কথা বলছে।নির্ভীক রাগী কন্ঠে বলল,
‘বললাম তো ভার্সিটিতে যেতে হবেনা।সেমিস্টার ফাইনাল দিয়ে কি করবা?পড়েছো কিছু?রেজাল্ট খারাপ আসবে তারচেয়ে এবার গ্যাপ যাক সামনে বার এক্সাম দিও।এখন বাসায় পড়।’
অন্ত মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘ফ্রেন্ডরা তো লেভেল আপ করবে আমি একা একা..’
‘আচ্ছা ঠিক আছে।এক্সাম তো আরও অনেক দেরি আছে তুমি পড় ভাল করে তারপর প্রিপারেশন ভাল থাকলে এক্সাম দিও।এখন কি করছো বলোতো?’
অন্ত মুচকি হেসে বলল,
‘বরের সাথে কথা বলছি।’
‘কি কথা বলছো?’
অন্ত মুখ ফুলিয়ে বলল,
‘বরকে বাসায় আসতে বলছি আসছেনা আর ঘুরতেও নিয়ে যাচ্ছে না,পঁচা বর।’
নির্ভীক মৃদু হেসে বলল,
‘ওকে তোমার বরকে পাঠিয়ে দিচ্ছি,গেলেই একটা কিসি দিবা।রাতের মতো করে।উফ্ এখনও মনে হলে হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।’
অন্ত কান্না মুখ করে বলল,
‘আপনি আমাকে ফেলে দিয়েছেন।খুব খারাপ আপনি।আমি হাঁটতে পারছিনা আর হাত দিয়ে খেতেই পারছিনা।’
‘এই দুষ্টু মেয়ে একটু আগে কে লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি ভেঙ্গে রুমে গেল তাহলে?আর ব্রেকফাস্টে আমার অমলেটটা কে বানিয়ে দিল?’
অন্ত মুচকি হেসে বলল,
‘কে আবার আপনার বউ বানিয়েছে।আমি কিন্তু নই।আমার হাতে পায়ে ব্যথা,প্রচুর ব্যথা।’
টোয়া একদম অন্তর কাছে চলে এসেছে।অন্ত চোখবন্ধ করে আছে তাই দেখতে পাচ্ছেনা।টোয়া ছুড়ি বের করে বিছানায় রেখে দিল।হঠাৎ সে সিদ্ধান্ত চেন্জ করেছে।অন্তকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করলে নিশ্চয় চেঁচামেচি করবে আর তখন সবাই চলে আসবে।হসপিটালে নিয়ে গেলে বেঁচেও যেতে পারে।তারচেয়ে অন্তকে বালিশ চাপা দেওয়া ভাল হবে।চেঁচামেচি করতে পারবেনা আর তিন-চার মিনিটের মধ্যেই শ্বাস আটকে মরে যাবে।টোয়া ছুড়ি রেখে একটা বালিশ নিয়ে সর্বোশক্তি দিয়ে অন্তর মুখে চেপে ধরলো।
অন্তর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।হাত-পা ছুড়াছুড়ি করছে।কথাও বলতে পারছেনা।অন্ত বিছানার চাদর খামচে ধরে জড়িয়ে ফেলেছে।হঠাৎই মুখের উপর থেকে বালিশ সরে গেল।অন্ত ঘন ঘন শ্বাস নিতে নিতে একপাশ হয়ে শুয়ে পরলো।একদম নিস্তেজ হয়ে পরেছে,নড়ার শক্তি পাচ্ছে না।
এদিকে নির্ভীক রাস্তায় যেয়ে বুঝতে পেরেছিল ওয়ালেট ফেলে এসেছে তাই আবার বাসায় ফিরে এসেছে।অন্তকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বলেওনি যে সে এখন বাসায়।অন্তর সাথে কথা বলতে বলতে সিঁড়ির কাছে আসতেই ফোনের মধ্যে অদ্ভুত আওয়াজ পেয়ে নির্ভীক চিন্তিত হয়ে নিজের ঘরে এসে দেখে টোয়া অন্তর মুখে বালিশ চেপে ধরে আছে।নির্ভীক একমুহূর্তও দেরি না করে টোয়াকে টেনে মেঝেতে দাঁড় করিয়ে টোয়া গালে কষে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।টোয়া ড্রেসিং টেবিলের সাথে বারি খেয়ে কয়েকটা জিনিসপত্র নিয়ে নিচে পরে সেন্সলেস হয়ে যায়।নির্ভীক অন্তর কাছে গিয়ে অন্তকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।কিছুক্ষণ পর অন্ত একটু বেটার ফিল করলে নির্ভীক তার বাবা আর টোয়ার বাবা-মাকে ফোন করে বাসায় আসতে বলে।রাযীন আর নির্ভীকের মাও হসপিটালে চলে গিয়েছিল নির্ভীক তাদেরও বাসায় ডাকে।
ড্রইং রুমের সোফায় মুখ কালো করে বসে আছে সবাই।নির্ভীক সোফায় বসে রাগী আর তীক্ষ্ণ চোখে টোয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।টোয়া একটু দূরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।নির্ভীকের ভয়ে মাথা তোলার সাহস পাচ্ছে না।থাপ্পড় খেয়ে খেয়ে তার দুই গাল লাল হয়ে আছে।টোয়ার বাবা টোয়াকে ইচ্ছে মতো বকাবকি করছে।অন্ত মন খারাপ করে নির্ভীকের পাশে বসে আছে।নির্ভীক আর অন্তই শুধু চুপ করে আছে বাকি সবাই টোয়ার সাথে কথা বলছে।সবার ইউজলেস কথা শুনে নির্ভীকের আরও রাগ হচ্ছে তাই সেন্টার টেবিলে লাথি দিয়ে সবাইকে থামতে বলল।টোয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আমি ওর নামে এটেমপ্ট টু মার্ডারের কেইস করব।’
টোয়ার বাবা মেয়ের দিকে তাকিয়ে রেগে বললেন,
‘তার কোনো দরকার নেই,ওকে সংশোধনাগারে পাঠাবো।’
নির্ভীক উঠে দাঁড়িয়ে রেগে বলল,
‘কিসের সংশোধনাগার?ও ক্রাইম করেছে সো জেলে যাবে।আর জেলে গেলে এমনি ড্রাগসের নেশা ছুটে যাবে।টাকা খরচা করে ওকে সংশোধনাগারে দিতে হবেনা।আর বাবা শোনো?যেই বাসায় আমার বউ সেইফ না সেই বাসায় আমি থাকবো না।’
নির্ভীক কারো কথা না শুনে অন্তকে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।নির্ভীক যেতেই টোয়া হাতের কাছে যা পাচ্ছে সেটাই মেঝেতে ছুড়ে ফেলছে।টোয়ার মা রেগে গিয়ে টোয়ার চুল ধরে মারতে লাগলেন।কিছুক্ষণ পর টোয়া তার মাকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আফ্রার দিকে তাকালো।আফ্রা সোফার এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিল টোয়া হন্তদন্ত হয়ে আফ্রার সামনে দাঁড়ালো।আফ্রা কিছু বলার আগেই টোয়া আফ্রার গলার চেইন একটানে ছিড়ে নিয়ে বলল,
‘তোরা কেন এসেছিস এখানে?আজই তোর বোনকে নিয়ে চলে যাবি নাহলে মেরে দিব ওকে।’
আফ্রা গলায় ব্যথা পেয়ে রেগে গিয়ে টোয়ার গালে থাপ্পড় দিয়ে বলল,
‘তোকে তো মেন্টাল হসপিটালে দেওয়া উচিত।’
রাযীন আফ্রার একবাহু টেনে এক সাইডে দাঁড় করালো।টোয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
‘তোর ব্যবস্থা আজই করছি।’
তারপর টোয়ার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘চাচ্চু তুমি আজই ওকে ঢাকা পাঠানোর ব্যবস্থা কর।আমার পরিচিত সংশোধনাগার আছে।একবার ঢুকলে পালানোর কোন পথ নেই।এখন থেকে ও ওখানে থাকবে।’
টোয়া ভয় পেয়ে খিটমিট করতে করতে বলল,
‘আমি কোথাও যাব না।আর কিছু বলব না অন্তকে।’
তখনই নির্ভীক অন্তকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,
‘আর কিছু বলার সুযোগই তুই কোনদিন পাবিনা।একবার নয় কয়েকবার তুই অন্তকে খুন করার চেষ্টা করেছিস।তোর কি মনে হয় আমি তোকে ছেড়ে দিব?’
নির্ভীকের হাতে লাগেজ দেখে সবাই অবাক হল।রাযীন আফ্রার হাতে গলায় লাগাবার জন্য মলম দিয়ে নির্ভীকের কাছে এগিয়ে এসে ভ্রু কুচকে বলল,
‘কোথায় যাচ্ছিস তোরা?’
নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘যাই ঘুরে আসি কোথাও থেকে।মাথাটা একদম গরম হয়ে আছে।এখানে থাকলে খারাপ কিছু হয়ে যাবে।তোমরা এসব ঝামেলা মিটিয়ে নাও তারপর নাহয় আসবো।’
নির্ভীকের মা এগিয়ে এসে অন্তর পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,
‘সাবধানে যাস।’
নির্ভীক সবার থেকে বিদায় নিয়ে টোয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে অন্তকে নিয়ে চলে গেল।রাযীন তার বন্ধুকে ফোন করে টোয়ার কথা জানিয়ে দিল।টোয়াকে তার বাবা-মা একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে বুঝাতে লাগলো।
চলবে…………….