#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu
৪০.
প্রায় তিন ঘন্টা গাড়িতে বসে থাকার পর নির্ভীক গাড়িটা রাস্তার পাশে একটা গ্যারেজে রেখে অন্তকে নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো।এখানে শহরের কোলাহল একদম নেই।রাস্তার ধারে তিনচারটে দোকান আর রাস্তার নিচে ফসলি জমি।পিচঢালা রাস্তার সাথে লাগিয়ে সরু মেঠো রাস্তা চলে গিয়েছে গ্রামের দিকে।জনশূন্য রাস্তার এদিক-ওদিক তাকিয়ে একটা গাড়িও দেখতে না পেয়ে অন্ত নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
নির্ভীক ভ্রু কুচকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আমাদের বাসায়।’
অন্ত বিস্মিত হয়ে বলল,
‘মানে!’
নির্ভীক অন্তর দিকে তাকালো।অন্তর পরনে সাদা গাউন, কপালে ক্লান্ত কয়েকটা চুল শুয়ে আছে,দীর্ঘ নাক,মায়াবী টানা টানা চোখ,পাতলা গোলাপি ঠোঁট আর কিছুটা লম্বিত চিবুক সব মিলে অদ্ভুত এক স্নিগ্ধ মিষ্টতা।নির্ভীক অন্তর একহাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘মানে আমাদের গ্রামের বাড়ি।বাড়িতে কেউ থাকেনা।নেইবার কাজিনদের বলে পরিষ্কার করে নিয়েছি।কাল আমার হলিডে তাই ভেবেছিলাম কাল আসবো কিন্তু আজই চলে আসলাম।চলো অনেক মজা হবে।’
অন্ত কৌতূহলি হয়ে বলল,
‘গ্রামের বাড়ি?ওয়াও,আমি কখনও গ্রামের বাড়িতে থাকিনি।আমরা আজকে থাকবো এখানে?’
নির্ভীক আরেক হাতে লাগেজ নিয়ে বলল,
‘অফকোর্স থাকবো।আজ থাকবো,কাল থাকবো তারপরের দিন বাসায় ফিরবো।’
বলতে বলতেই সামনের মেঠো পথ ধরে ধূলো উড়িয়ে দুটো বাইক এসে তাদের সামনে দাঁড়ালো।দুটো বাইকে তিনটে বড় বড় যুবক ছেলে।নির্ভীককে দেখেই ওরা বাইক থেকে নেমে কোলাকুলি করে কুশল মিনিময় করল।নির্ভীক অন্তর এক হাত ধরে ছেলে তিনটিকে দেখিয়ে বলল,
‘অন্ত,এটা হল হাসান ভাইয়া।হাসান ভাইয়ার বাবা আমাদের গ্রামের সব জমিজমা আর ঘর বাড়ি দেখাশুনা করে আর এই দুজন হাসান ভাইয়ার কাজিন মাসুদ আর রিফাত।বিয়ের দিনে ভাইয়ারা গিয়েছিল কিন্তু তোমার সাথে পরিচয় হওয়া হয়নি।এই মাসুদ কিন্তু তোমাদের ভার্সিটিতে পড়ে।’
অন্ত সালাম দিয়ে সবার সাথে টুকটাক কথা বলল।তারপর নির্ভীক মাসুদ আর রিফাতকে লাগেজ দিয়ে হাসানের বাইকে উঠে অন্তকেও উঠতে বলল।অন্ত বাইকে উঠে নির্ভীকের কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘ভয় করছে।’
নির্ভীক সামনে হাসানের দিকে আর একটু চেপে বসে বলল,
‘চেপে বসো,ভালো করে ধর আমাকে।হাসান ভাইয়া একটু আস্তে ড্রাইভ কর।’
হাসান বাইকে স্টার্ট দিয়ে বলল,
‘বউমা একটু শক্ত করে ধরে বসো।সামনে রাস্তা খুব খারাপ।অনেকদিন মেরামত নেই,ধূলোর মধ্যে গাড়ির চাকা বসে যায়।’
অন্ত ভয় পেয়ে পেছন থেকে দুইহাতে নির্ভীককে জড়িয়ে ধরলো।নির্ভীকও মুচকি হেসে অন্তর হাত ধরে আছে।প্রায় পাঁচমিনিট পর বাইক এসে মোটামুটি জঙ্গলে ঘেরা একটা পুরোনো একতলা পাকা দালানের সামনে এসে থামলো।পুরোনো বাড়ি এমনিতেই খানিকটা বিষন্ন প্রকৃতির হয়। এই বাড়ি দেখে একদম ভূতের বাড়ির মতো মনে হচ্ছে।বাড়ির সদর দরজা হাট করে খোলা। ভেতরে অনেক মেয়ে মানুষের আনাগোনা বুঝা যাচ্ছে।নির্ভীক অন্তকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে দেখে পাড়ার সব মহিলা তাদের দেখতে এসেছে।প্রায় এক ঘন্টা উঠোনে বসে সবার সাথে আলাপ শেষ করে হাসানের মা সবাইকে পাঠিয়ে দিলেন।তারপর হাসানের মাও খাবার আনার নাম করে পাশেই নিজেদের বাড়িতে চলে গেলেন।নির্ভীক গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে উঠোনে অন্তর পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
‘এটাই আমাদের বাড়ি।চলো ভেতরে যাওয়া যাক।’
অন্ত আশেপাশে দেখতে দেখতে বলল,
‘দাঁড়ান দেখি একটু।ওটা হেনা গাছ না?আর ওটা কুয়ো?আমি কুয়ো দেখবো।’
নির্ভীক শার্টের বাটন খুলতে খুলতে বলল,
‘একটু পরে দেখ আগে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিই চলো,ক্ষুধা লেগেছে।’
অন্ত তাও ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো।প্রশস্ত উঠোন।পুরো বাড়ি ইটের উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।উঠোনের একপাশে একটা কুয়ো পাড় আর তারপাশে বড় বড় দুটো মেহেদী গাছ।উঠোনের অন্যপাশে একটা কদম গাছও আছে।গাছে বলের মতো কদম ফুল ঝুলছে।এছাড়া পুরো উঠোন ছোট বড় আগাছায় ভরে আছে।অন্ত এত নিরিবিলি পরিবেশ দেখে খুব খুশি।নির্ভীক অন্তর হাত ধরে জোর করে বাড়ির ভেতর নিয়ে গেল।ভেতরে অনেকগুলো ঘর।সবগুলো ঘরে তালা দেওয়া শুধু তারা যেই ঘরে থাকবে সেটা খুলে রাখা।দক্ষিণ দিকের এই ঘরটায় ঢুকেই অন্ত খুশিতে লাফাতে লাগলো।একদম গ্রাম্য পরিবেশে সাজানো ঘর।আবলুসের মতো কালো রং করা আসবাবপত্র।আসবাবপত্র বলতে পুরোনো ডিজাইনের কাঠের একটা খাট, কাঠের আলমারি,খাটের পাশে বড় একটা টেবিল,টেবিলের সাথে একটা চেয়ার রাখা আর একটা ফাঁকা আলনা আছে।ঘরের দুটো জানালায় খোলা।কাঠের জানালায় লোহার শিক বসানো আছে।অন্ত জানালার সামনে যেয়ে দুই হাতে লোহার শিক ধরে বাইরে উকি দিল।বাইরে বিশাল একটা পুকুর আর পুকুরের পাড়ে বাগান।অন্ত খুশি হয়ে বলল,
‘চলুন পুকুরের ওই দিকে যাই?’
নির্ভীক ঘরে ঢুকে সবকিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে।কোথাও কোনো সমস্যা না দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে বিছানায় বসলো।টেবিলের উপর চার্জার ফ্যান রাখা আছে।ফ্যানের সুইচ টিপে অন্তকে ডেকে বলল,
‘এখানে আসো।বাতাসে বসো।একটা জিনিস খেয়াল করেছো?আমাদের বাসায় ইলেকট্রিসিটি নেই।পাওয়ার ব্যাংক এনেছি ওটা দিয়ে ফোন চার্জ করতে হবে।আর পাশের বাসা থেকে এই একটায় ফ্যান এনেছি, চার্জ শেষ হলে বাতাসও শেষ।রাতে লাইটও থাকবেনা,চার্জার লাইট ইউজ করতে হবে।’
অন্ত নির্ভীকের পাশে বসে বলল,
‘ওয়াশরুম কোথায়?গোসল করবো কখন?আর এই ফ্যান তাহলে অফ থাক,রাতে ইউজ করব।’
অন্ত ফ্যান অফ করে দিল।নির্ভীক অন্তর গাল টেনে বলল,
‘ওয়াশরুম বাহিরে আর গোসল কুয়োর পাড়ে।একদম খোলামেলা।’
অন্ত মেঝেতে দাঁড়িয়ে বলল,
‘পুকুরে গোসল করব,প্লিজ প্লিজ।’
নির্ভীক লাগেজ খুলে ড্রেস বের করতে করতে বলল,
‘পুকুরের পানি নোংরা,কুয়োর পানিতে গোসল করব।এই কুয়োর পানি খুব স্বচ্ছ,জোয়ার আসে,চাইলে খাওয়াও যায়।তুমি কোন ড্রেস পরবা?এই ব্লুটা নিই?’
অন্ত ঠোঁট ফুলিয়ে মাথা নাড়ালো।নির্ভীক হাতের ভাজে ড্রেস নিয়ে বলল,
‘আজকে কুয়োতে গোসল দিব,কাল টিউবয়েলে।কুয়োর পাড়ে গোসল দিয়ে বাথরুমে যেয়ে চেন্জ করতে হবে।পারবা তো?’
অন্ত টাওয়াল নিয়ে বলল,
‘হ্যাঁ আপনি থাকুন আমি গোসল করে আসি।’
নির্ভীক ড্রেসগুলো বিছানায় রেখে প্যান্ট-শার্ট চেন্জ করে একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো অন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে ফিরে আসছে।নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘কি হল চলে আসলা কেন?’
নির্ভীক শার্টের সাথে সাথে সাদা গেন্জিটাও খুলে ফেলেছে তাই অন্ত নির্ভীকের দিকে তাকাতে লজ্জা পাচ্ছে।মেঝের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘বাইরে একা একা ভয় লাগছে।’
নির্ভীক বিছানা থেকে টাওয়াল আর ড্রেস নিয়ে ঘাড়ে ঝুলিয়ে অন্তকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে হাঁটা দিয়ে বলল,
‘আমার সাথে চলো,কোন ভয় নেই।আচ্ছা কুয়োর ভেতরে কেমন হয় দেখেছো কখনও?’
অন্ত শুকনো মুখ করে বলল,
‘টিভিতে দেখেছি।কালো পানি।’
নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘পানি কালো নয়, শেওলা পরে কুয়োর প্রাচীর কালো হয়ে যায়।পানি তো বর্ণহীন,যেই পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের বর্ণ ধারণ করে।কুয়োর প্রাচীর কালো তাই পানিও কালো।আবার দেখ ওই পানি বাকেটে করে উপরে তুললে একদম স্বচ্ছ দেখাবে।
কুয়োর কাছে এসে অন্ত দুই হাত রেলিংয়ে রেখে ভেতর উঁকি দিয়েই কয়েকধাপ পিছিয়ে গিয়ে ভয়ার্ত চোখে নির্ভীকের দিকে তাকালো।নির্ভীক হুহা করে হেসে দিয়ে কুয়োর রেলিংয়ে বসে নিচে বালতি ফেলে বলল,
‘অনেক গভীর,তুমি কি ভয় পাচ্ছো?’
নির্ভীককে কুয়োর রেলিংয়ে বসতে দেখে অন্ত ভীত কন্ঠে বলল,
‘নামুন ওখান থেকে।ওখানে উঠেছেন কেন?পরে যাবেন তো।’
নির্ভীক রেলিং থেকে নেমে এক বালতি পানি তুলে ঝপাৎ করে নিজের মাথায় ঢেলে বলল,
‘আমি যখন ক্লাস টেনে ছিলাম তখন ঈদে একবার এসে কুয়োর নিচে নেমেছিলাম।দড়ি লাগিয়ে।উফ্ কি অ্যাডভেঞ্চার!সেদিন আম্মুর হাতে যা মাইর খেয়েছি এখনও মনে আছে।মই লাগিয়ে আমের গাছেও উঠেছিলাম নামার সময় দেখি মই নিচে পরে গিয়েছে।নামতে পারিনা, সেকি বিপদ!!গাছ থেকে পরে এই তো হাতের এখানে কেঁটে গিয়েছিল,সেদিনও আম্মুর হাতের মাইর একটাও মাটিতে পরেনি।’
অন্ত এতদিনে নির্ভীকের হাতের সেই কাটা দাগের রহস্য জানতে পারলো।এই দাগটার জন্য নির্ভীকের হাত তার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাত।নির্ভীক কুয়ো থেকে পানি তুলে অন্তর মাথায় ঢেলে দিয়ে বলল,
‘কেমন?’
অন্ত কেঁপে উঠে কপালের চুল সরিয়ে বলল,
‘অনেক ঠান্ডা,আর নয় হয়ে গেছে।’
অন্ত চলে যেতে লাগলেই নির্ভীক অন্তকে থামিয়ে দিয়ে আরও কয়েক বালতি পানি তুলে জোর করে অন্তর মাথায় ঢেলে দিল।অন্তর এভাবে নির্ভীকের সাথে গোসল করতে খুব লজ্জা করছে।লজ্জায় সে নির্ভীকের দিকে তাকাচ্ছেই না কিন্তু নির্ভীক ঠিকই অন্তকে দেখছে।অন্তর সাদা জামা ভিজে গিয়ে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে।ওড়না পেচিয়ে অন্ত নিজেকে প্রটেক্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে আর নির্ভীক ইচ্ছে করে এটা ওটা করে অন্তকে বিব্রত করছে।
হাসানদের বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার আসতেই নির্ভীক অন্তকে নিয়ে খাবার খেয়ে বিশ্রামের জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিল।অন্ত আলমারি খুলে পুরাতন কিছু কাঠের জিনিসপত্র নেড়েচেড়ে দেখছে।নির্ভীক পেছন থেকে অন্তর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।অন্তর পিঠে আধ ভেজা চুলগুলো ছড়িয়ে আছে।নির্ভীকের ইচ্ছে করছে অন্তর চুলগুলো এক পাশে নিয়ে অন্তর ঘাড়ে কয়েকটা চুৃুমু দিতে।এদিকে গরম লাগায় অন্ত নিজেই চুল গুলো কাঁধের একপাশে নিল।গরমে অন্তর ফর্সা ঘাড় ভিজে উঠেছে।ছোট ছোট কিছু চুল ভেজা ঘাড়ের সাথে লেপ্টে আছে।নির্ভক উঠে বসে একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,
‘শোনো?’
অন্ত তালপাতার তৈরী একটা হাত পাখা নিয়ে পেছনে ঘুরে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘বলুন।’
নির্ভীক অন্তর দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
‘না মানে,আসো একটু ঘুমাই।’
অন্ত উল্টো দিকে ঘুরে তালপাতার হাত পাখাটা রেখে বলল,
‘আপনি ঘুমান,আমার ঘুম পাচ্ছেনা।’
নির্ভীক একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়ালো।আচমকা অন্তকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে অন্তর গলায় মুখ ডুবিয়ে বলল,
‘তুমি কখনও আমার একটা কথাও শোনোনা।একটুও ভালোবাসোনা।জানো কত কষ্ট হয়?খেতে পারিনা,ঘুমোতে পারিনা,একটু স্থির হয়ে বসতেও পারিনা।সব সময় পেইন দাও,হার্টলেস!তোমাকে ভালোবাসায় ঠিক নয়,আর একটুও ভালোবাসবোনা তোমাকে।’
নির্ভীকের কথা শুনে অভিমানে অন্তর চোখ ভিজে এসেছে।বার বার একটা কথায় কানে বাজছে ‘আর একটুও ভালোবাসবোনা তোমাকে’।চোখের পলক ফেলতেই দুই চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পরলো দুফোটা গরম অশ্রু।নির্ভীক অন্তর গলা থেকে মাথা তুলে ভ্রু কুচকে বলল,
‘কাঁদছো কেন?’
অন্ত এবার দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হেচকি তুলে কাঁদতে লাগলো।নির্ভীক কিছুক্ষণ মলিন মুখ করে অন্তর দিকে তাকিয়ে থেকে পাশের বালিশে মাথা দিয়ে অন্তর দিকে মুখ করে শুয়ে থাকলো।অন্ত প্রায় দশমিনিট হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না করে তারপর আরও একঘন্টার মতো অন্যপাশ ফিরে কান্না করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরলো।অন্ত ঘুমোতেই নির্ভীক অন্তকে আলতো হাতে জড়িয়ে ধরে বিরবির করে বলল,
‘মাই হাফিস কুইন!একটু কিছু বললেই হাফ করতে হবে?উঠো একবার ঘুৃম থেকে তারপর দেখো এতক্ষণ কান্না করার পানিশমেন্ট কিভাবে দিই। ‘
অন্তর ঘুম ভাঙলো শেষ বিকেলে।ঘরের মধ্যে আবছা অন্ধকার।দক্ষিণের জানালা দিয়ে হুহু করে বাতাস আসছে।জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে আকাশে মেঘ জমেছে।অন্ত হাই তুলে অন্যপাশ ফিরে নির্ভীককে জড়িয়ে ধরলো।নির্ভীক বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে ফোনে কথা বলছে।অন্ত তাকে জড়িয়ে ধরতেই নির্ভীক কথা বলতে বলতে অন্তর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।অন্ত কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার চোখ বন্ধ করেছে দেখে নির্ভীক ফোন রেখে অন্তকে টেনে বসিয়ে দিয়ে বলল,
‘উঠো,কত ঘুমাবা?ঘুরতে যাব চলো।’
অন্ত ভ্রু কুচকে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল,
‘কোথায় ঘুরতে যাবো?’
বলতে বলতেই ঝুমঝুম করে বৃৃষ্টি নামলো।অন্ত বিছানা থেকে নেমেই ঝানালার পাশে গিয়ে কৌতূহলি হয়ে বলল,
‘বৃষ্টি এসেছে,আমি বৃষ্টিতে ভিজবো!’
নির্ভীক দ্রুত গিয়ে দরজার ছিটকিনি আটকে দিল যাতে অন্ত বাইরে যেতে না পারে।নির্ভীক অন্তর কাছে যেতে যেতে বলল,
‘না বৃষ্টিতে ভিজলে অসুখ করবে।’
অন্ত জানালা দিয়ে বাইরে বৃষ্টির পানিতে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘প্লিজ,প্লিজ,একবার শুধু।’
নির্ভীক অন্তর পেছনে দাঁড়িয়ে দুই হাত অন্তর কোমড়ে আর অন্তর মাথায় থুতনি রেখে বলল,
‘উহুম,একবারও নয়।’
অন্ত ভেজা হাত নির্ভীকের হাতের উপর রেখে বলল,
‘প্লিজ!আ……!’
জোরে একটা বাজ পরতেই অন্ত চমকে উঠে উল্টোদিক ঘুরে নির্ভীককে জড়িয়ে ধরলো।নির্ভীক মুচকি হেসে জানালা বন্ধ করে দিয়ে অন্তকে বিছানায় বসিয়ে দিল।দরজা জানালা সব বন্ধ থাকায় অন্ধকারে ঘরের মধ্যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।নির্ভীক চার্জার ফ্যানের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে অন্তর পাশে বসে বলল,
‘যাবা বাহিরে?’
অন্ত মাথা নাড়ালো।নির্ভীক মুচকি হেসে অন্তর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
‘আজকে তোমার পানিশমেন্ট আছে।’
অন্ত শুকনো মুখ করে বলল,
‘কিসের পানিশমেন্ট?’
নির্ভীক অন্তর হাত ছেড়ে আলো বন্ধ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
‘জানিনা,সাবধানে থেকো।’
দরজার ফাঁক দিয়ে কিঞ্চিত আলোর রেখা আসছে। অন্ত সেদিকে তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে বলল,
‘মানে?’
নির্ভীক উঠে বসে অন্তকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল,
‘জারিফ ভাইয়ার বাবু হবে জানো?’
অন্ত আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলল,
‘সত্যি!!বাসায় যাবো।ফোন কোথায়?কথা বলবো।’
নির্ভীক অন্তর কাঁধে নাক ঘষে চুমু দিয়ে ঝটপট আলো জ্বালিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলল,
‘চলো তো ফ্রেশ হয়ে আসো।ক্ষুধা পায়না তোমার?সেই দুপুরে একটু খেয়েছো।তুমি একটুও নিজের যত্ন নাও না। বাসায় চলো আম্মুকে বলে তোমার পেছনে নিউট্রিশনিস্ট লাগিয়ে দিব।’
বাইরে এখনও বৃষ্টি হচ্ছে।নির্ভীক ঘরের দরজা খুলে টাওয়াল গলায় ঝুলিয়ে অন্তকে নিয়ে ওয়াশরুমে গেল।অন্ত টিউবয়েলে পানি তুলতে পারেনা তাই নির্ভীকই পানি তুলে দিচ্ছে।অন্ত ব্রাশ হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
‘এটা ভেজা কেন?’
নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘কই?ভেজা নয়।দাও পেস্ট লাগিয়ে দিই।’
নির্ভীক ব্রাশ ভর্তি পেস্ট লাগিয়ে অন্তর হাতে দিল।অন্ত মুখের মধ্যে ব্রাশ নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ছাদের সিঁড়ির দিকে চলে গেল।নির্ভীক মুচকি হাসছে আর মাথা চুলকোচ্ছে।বিকেলে কাজিনদের বলে দুটো ব্রাশ কিনে আনতে বলেছিল।গ্রামের দোকানে একটা ব্রাশই পাওয়া গিয়েছে।যেটা দিয়ে নির্ভীক একবার দাঁত ব্রাশ করে নিয়েছে।সেটা দিয়েই আবার অন্তকেও ব্রাশ করতে দিয়েছে।অন্ত কিছু বুঝতেই পারছেনা।
চলবে………..