সুইটহার্ট-পর্ব:৪

0
1618

#সুইটহার্ট
#Sohani_Simu
৪.

সন্ধ্যা সাতটা বাজে।খুব ক্লান্ত লাগছে তাই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।সিলিং এর দিকে তাকিয়ে শ্রাবণ ভাইয়াকে মনে মনে হাজারও গালি দিতে লাগলাম।বিয়ের ভয়ে সারাদিন আমি বই এর থেকে উঠিনি।বেটা বজ্জাত বলে কিনা উনার কথা মতো না চললে আমাকে কালাচাঁদ বাতেনের সাথে বিয়ে দিবেন!!!কোথাকার কোন বিলেত ফেরত ছেলে এসে একদিনেই আমাকে নাচিয়ে ছেড়ে দিল?এর প্রতিশোধ আমি যদি না নিয়েছি তবে আমার নামও জুঁই নয় হু।আজ আসুক পড়াতে টয়কে বলে খামছি দিয়ে উনার মাংস তুলে নিবো কিন্তু টয়টা কোথায় গেল!নিশ্চয় রকির কাছে আছে।আমি তাড়াহুরো করে রকিদের ফ্লাটে আসলাম।রকির মা দরজা খুলে বলল,
“টয়কে নিতে এসেছো?”

আমি দরজার বাহিরে দাঁড়িয়েই বিরক্ত হয়ে বললাম,”তো কি তোমার ছেলেকে নিতে এসেছি?তাড়াতাড়ি নিয়ে আসো আমার টয় কে।”

রকির মা রকিকে জোড়ে জোড়ে দুবার ডাকতেই রকি টয়কে কোলে নিয়ে দরজার কাছে আসলো।রকির মা ভেতরে চলে গেল।রকি মুচকি হেসে টয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“কি ব্যাপার ফুল?আজকাল তোমাকে দেখা যায় না,থাকো কোথায় তুৃমি?”

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,”ফু্ল বলবানা তো।আমাকে কি তোমার বোকা মনে হয়? ফ্লাওয়ার বলতে পারো নো প্রবলেম।”

রকি মুচকি হেসে বলল,”আরে বাবা বোকা হবা কেন,এটা তো ভালোবাসার নাম।আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই ভালোবেসে ফুল বলে ডাকি।”

আমি রেগে বললাম,”কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসিনা তাই তুমি ফুল বলবা না।দাও তো আমার টয়কে। আজাইরা কথা বলার টাইম নেই আমার।”

আমি টয়কে নিয়ে উল্টো দিকে ঘুরতেই রকি বলল,”এই ফুল শোনো।”

আমি রকির দিকে ঘুরতেই ও কিছু না বলে দাঁত বের করে হাসলো।আমি ভ্রু কুচকে বললাম,”কি হয়েছে তাড়াতাড়ি বলো।আমি তো বলছি আমার টাইম নেই,বাংলা বুঝনা নাকি? ”

রকি দরজায় হেলান দিয়ে দুইহাত বুকে গুজে মুচকি হেসে বলল,”আই লাভ ইউ।”

আমি রেগে বললাম,”থাপ্পড় চিনিস থাপ্পড়?দাঁড়া আজ তোকে!!”

বলেই এক দৌঁড়ে লিফটে উঠে আমাদের ফ্ল্যাটে এসে ভাবির কাছে যেয়ে বললাম,”ভাবস শ্রাবণ ভাইয়াকে ফোন দাও তো।তাড়াতাড়ি আসতে বলো।দুমিনিটের মধ্যে আসতে বলো।”

ভাবি কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছে তাই আমিই ভাবির রুমে যেয়ে ফোন নিয়ে শ্রাবণ ভাইয়াকে ফোন দিলাম।উনি রিসিভ করতেই একদমে বললাম,”শ্রাবণ ভাইয়া?কোথায় আপনি?তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় আসুন।”

শ্রাবণ ভাইয়া চিন্তিত হয়ে বললেন,”হোয়াট হ্যাপেন্ড জুঁই?আ’ম কামিং।”

“হুম হুম তাড়াতাড়ি আসুন।আমি দশ পর্যন্ত কাউন্ট করছি ১…..২….৩….৪……৫….৬……………..১০।কি হল কোথায় আপনি?আসছেন না কেন?ওই বাল কথা বলছিস না কেন?”

তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো।শ্রাবণ ভাইয়া ফোনের মধ্যে বলল,”জুঁই ওপেন দ্যা ডোর।”

আমি ফোন কেটে বেডের উপর ফেলে দিয়ে দরজা পর্যন্ত যেতে যেতে রহিমা খালাই দরজা খুলে দিয়েছে।শ্রাবণ ভাইয়াকে দেখেই আমি দোঁড়ে যেয়ে উনার হাত ধরে টানতে টানতে বললাম,”তাড়াতাড়ি চলুন।”
শ্রাবণ ভাইয়া আমার সাথে আসতে আসতে বললেন,”কোথায় যাবো?কি হয়েছে?”

আমি কিছু বললাম না। রকিদের ফ্ল্যাটের সামনে এসে কলিং বেল চাপলাম।দরজা খুলছেনা দেখে আমি দরজা ধাক্কিয়ে জোড়ে জোড়ে বললাম,

“ওই রকি দরজা খোল।দেখ কাকে নিয়ে এসেছি।শ্রাবণ ভাইয়ার একটা থাপ্পড় খেলে তুই বাপের নাম ভুলে যাবি।বের হ কুত্তা। ”

শ্রাবণ ভাইয়া কিছু বুঝতে না পেরে আমাকে আটকানোর চেষ্টা করছেন আর জানতে চাইছেন কি হয়েছে।আমি ক্রমাগত দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।রকির মা এসে দরজা খুলে বলল,”তোমরা আবার ঝগড়া করেছো?”

আমি চেঁচিয়ে বললাম,”কোথায় রকি?ওই কুত্তা একবার বের হয়ে দেখ থাপ্পড় দিয়ে তোর সব দাঁত খুলে নিবো।”

শ্রাবণ ভাইয়া আমার একবাহু ধরে বললেন,”জুঁই,কি হচ্ছে টা কি?এভাবে কথা বলছিস কেন?কি হয়েছে?”

রকির মা হাসি মুখ করে বলল,”আর বলো না বাবা,এরা দুজন প্রতিদিনই ঝগড়া করে কিন্তু কিছুক্ষণ পরই আবার সব ঠিক হয়ে যায়।জুঁই আম্মু,তুমি বাসায় যাও আমি রকিকে অনেক বকা দিবো।”

আমি এবার ভেতরে যাবো তখনই শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে আটকে দিলেন।আমার হাত ধরে টেনে আমাদের বাসায় নিয়ে চলে আসলেন।আমার রুমে এসে টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে আমার একবাহু ধরে রাগী কন্ঠে বললেন,
“ছেলেদের সাথে কিসের এত কথা তোর?কোন ক্লাসে পড়ে রকি?”

আমি আমার হাত থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,”অনার্সে পড়ে,আপনার সমানই বড় হবে।আপনি ওকে দেখলেই একটা থাপ্পড় দিবেন।”

শ্রাবণ ভাইয়া আমার দুইবাহু শক্ত করে ধরে রেগে বললেনন,”হোয়াট?এত বড় ছেলের সাথে তোর কি হ্যা?কেন ঝগড়া করেছিস ওর সাথে?”

আমিও রেগে বললাম,”ঝগড়া করবো নাতো কি করবো ওই কুত্তাটা প্রতিদিন আমাকে আই লাভ ইউ বলে।ও জানে আমি সিজানকে ভালোবাসি তাও শুধু শুধু……….”

আর কিছু বলার আগেই শ্রাবণ ভাইয়া আমাকে থাপ্পড় দিয়ে সজোরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললেন,”কাকে ভালোবাসিস বললি?”

উনার রেগে লাল হয়ে যাওয়া চোখ দেখেই ভয়ে আমার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে।গালে হাত দিয়ে আমি হেঁচকি তুলে কান্না করতে লাগলাম।শ্রাবণ ভাইয়া ধমক দিয়ে বললেন,
“শাট আপ অ্যান্ড স্টপ ক্রায়িং নাহলে কিন্তু আরেকটা থাপ্পড় দিবো। ”

আমার কান্না আজকে আর থামবেনা। আমি তো চিনি আমাকে, খুন করে ফেললেও কান্না থামবে না!!তবে আমি কাঁদতে কাঁদতেও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি এই শ্রাবণ ভাইয়াকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না,আমাকে থাপ্পড় মারার শোধ আমি নিবোই।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here