সুইটহার্ট-পর্ব:৩

0
1519

#সুইটহার্ট
#Sohani_Simu
৩.

বড় ফুপ্পিদের বাসায় দুইদিন থেকে আজ বিকেলে আমাদের বাসায় এসেছি।সন্ধ্যায় ভাল লাগছেনা তাই দাদির রুমে গেলাম।দাদি নামাজ পড়ে দোয়া দরুদ পড়ছে।আমি যেয়ে দাদির কোলের উপর মাথা রেখে আদুরে গলায় বললাম,
“বাবার আম্মুটা কি করছে?”

দাদিও আল্হাদি কন্ঠে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,”এই তোর আসার সময় হলো রে জুঁই ফুল?মনের মানুষরে পাইয়া এই বুড়িরে ভুইলা গেলি?”

আমি কোল থেকে মাথা তুলে ভ্রু কুচকে বললাম,”মনের মানুষ?সেটা আবার কে রে বুড়িয়া?”

দাদি বিছানায় পা মেলে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে বলল,
“কে আবার আমার বড় নানু ভাই।তোর যে তারে ভালই মনে ধরেছে আমি বেশ বুঝতে পারছি।এখন সব ক দেখিন,এই ছেমড়ি একদম মিছে কথা কইবিনা কিন্তু।”

আমি অট্ট হাসলাম।তারপর হাসতে হাসতে বললাম,”শ্রাবণ ভাইয়ার কথা বলছো?আরে ওই রাক্ষস টাকে কি করে মনে ধরবে বলো তো?সব সময় আমার দিকে রাগী চোখে তাকায়।তিনটে চড় মেড়েছে আমাকে।দুদিন গালের ব্যাথায় আমি কিছু খেতে পারিনি।আমার সাথে তো বেশি কথায় বলেনা যা একটু বলে হয় রেগে নাহয় ধমক দিয়ে কিন্তু রাগী হলে কি হবে বজ্জাতটা অনেক সুন্দর,তাইনা দাদি?

দাদি কিছু বলবে তখনি ভাবি এসে বলল,”এই জুঁই,এখানে কি করছিস?শ্রাবণ তোকে পড়াতে এসেছে।”

আমি এক লাফে দাঁড়িয়ে বললাম,”হোয়াট!!”
“হুম তাড়াতাড়ি যা নাহলে কিন্তু মেরে তক্তা বানিয়ে দিবে,তোর ভাইয়া আসতে বলেছে তাই এসেছে।”

“উফ্ ভাবস্ ভাইয়া আর কোন টিচার পেলো না?ওই রাগী বদ টাকেই আসতে বলল?ধূর ভাল্লাগেনা।”

কথা গুলো বলেই নাক সিটকাতে সিটকাতে আমি নিজের রুমে গেলাম।রুমে এসে দেখি শ্রাবণ ভাইয়া দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে ঘাড় একটু কাত করে দুই হাত পকেটে ঢুকিয়ে আমার ছবির দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি একটু সাউন্ড করতেই উনি আমার দিকে ঘুরে একটু রাগী মুখ করে বললেন,”সারাদিন এত বক বক করেও তোর হয়না জুঁই?এই সন্ধ্যাবেলাও পড়া বাদ দিয়ে গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসতে হবে?কদিন বাদে নাকি তোর ফাইনাল এক্সাম আর টেস্টে নাকি দুই সাবজেক্টে ফেইল করেছিস?”

আমি মুখ কাঁচুমাচু করে মনে মনে ভাবলাম,”ইশ!মান সম্মান আর কিছু থাকলো না।শ্রাবণ ভাইয়া নিশ্চয় আমাকে গাধা ছাড়া আর কিছু ভাবেছেন না।”
শ্রাবণ ভাইয়া আমার পড়ার টেবিলে গিয়ে আমার হোম টিচারের চেয়ার টেনে বসে বললেন,
“কি হলো গাধার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?আয় পড়তে বস।”

আমি ধীরে ধীরে যেয়ে আমার চেয়ার টেনে বসে বাংলা বই বের করলাম কারন বাংলাটা আমি সবচেয়ে ভাল পারি।শ্রাবণ ভাইয়া আমার দিকে ফিজিক্স বইটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“আমি তোকে সাইন্স পরাবো।মেইন দুইটা সাবজেক্টে ফেইল করে তুই প্রতিদিন কলেজ যাওয়ার স্বপ্ন দেখিস?তুই কি জানিস না ফেলটুস রা কলেজে যেতে পারেনা? ”

আমি কথা গুলোকে বিন্দুমাত্র পাত্তা দিলাম না।বলের চ্যাপ্টার টা বের করে হুদায় পড়া শুরু করে দিলাম।আমাকে পড়তে দেখে শ্রাবণ ভাইয়া আমার খাতা গুলো বের করে দেখতে লাগলেন।আমি পড়ছি আর সেদিকে তাকাচ্ছি,ভয়ও পাচ্ছি কারন খাতায় অনেক কিছু লিখা আছে শ্রাবণ ভাইয়া যদি সেগুলো সব দেখে ফেলে?সিজানের নাম যে কত জায়গায় লিখা আছে তার কোন হিসেব নেই।শ্রাবণ ভাইয়াকে কিছুতেই দেখতে দেওয়া যাবে না। কি করি, কি করি…ভাবতে ভাবতেই একটা আইডিয়া পেয়ে গেলাম।আমি একটানে খাতা নিয়ে বললাম,
“শ্রাবণ ভাইয়া আপনি কোন ক্লাসে পড়েন?”

উনি কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে বললেন,”ক্লাস সিক্সটিন শেষ করেছি।এখন তুই যদি কৃপা করিস তাহলে সেভেনটিন শুরু করবো।”

উনার কথা আমি কিছুই বুঝলাম না।আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,”তুৃমি আমার থেকে ছয় ক্লাস উপরে?ক্লাস টেনের পর বারো ক্লাস পর্যন্ত এইস.এস.সি তারপর অনার্স তারপর কোন ক্লাস হয়?তুমি সাইন্সে পড়ো?রোল কত তোমার?”

উনি আমার হাত থেকে খাতা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”আমি ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনে ফ্যাকাল্টি অব ইন্জিনিয়ারিং এ অনার্স করেছি।আমার আইডি নাম্বার E71025।দেখ তুই যদি ভাল হয়ে যাস আমি আবার লন্ডন ব্যাক করবো,আমার পড়াশুনা এখনও কমপ্লিট হয়নি।তুই বল কি করবি?”

আমি ভাব নিয়ে বললাম,” তোমার আইডি নাম্বারই তো রোল নাম্বার তাইনা?তোমার রোলই বলে দিচ্ছে তুমি খুবই পঁচা স্টুডেন্ট।আমার রোল জানো?আমি ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল আর দুটো সাবজেক্টে ফেইল এসেছে কারন আমি এক্সামই দিইনি।এক্সাম দিলে গোল্ডেন আসতো।এই তুমি এক কাজ করো,কাল থেকে তোমার বই নিয়ে এসো আমি তোমাকে পড়াবো তারপর দেখবা তোমার রোল ও ১ হবে।”

উনি রাগী কন্ঠে বললেন,”এক্সামে বসিসনি কেন তুই?”

আমি কিছু বললাম না।থমথমে মুখ করে বইয়ের পাতা উল্টাতে লাগলাম।কয়েক পাতা উল্টিয়ে বই আছাড় মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে বললাম,”আমি পড়বোনা আপনি চলে যান।এক্সাম দিবোনা আমি।”

শ্রাবণ ভাইয়া আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হালকা রেগে বললেন,”থাপ্পড় খেতে না চাইলে পড়তে বস।”

আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম।শ্রাবণ ভাইয়া আমার গাল ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নরম কন্ঠে বললেন,”আম্মু চাই তো?এক্সামের পর আমি তোকে আম্মু এনে দিবো।শুধু আম্মু নয় যা চাইবি তাই দিবো।”

আমি শ্রাবণ ভাইয়ার হাত সরিয়ে দিয়ে বিরক্ত হয়ে বললাম,”লীনা অ্যান্টিকে নিয়ে আসো আগে তারপর বাবার সাথে বিয়ে দাও নাহলে এক্সাম দিবো না।”

শ্রাবণ ভাইয়া রেগে গেলেন।এক হাতের আঙুল দিয়ে আমার দুই গাল শক্ত করে চেপে ধরে রক্তচক্ষু করে বললেন,
“আমাকে কন্ডিশন দেখাচ্ছিস?এত সাহস!!এক্সাম দিতে হবে না যা।আর পড়াশুনার দরকার নেই তোর,কাল তোকে বিয়ে দিবো।”

রেগে কথাগুলো বলে আমার গাল ছেড়ে দিলেন।আমি গালে মালিশ করতে করতে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,”বাবা প্রতিদিনই বলে বিয়ে দিবে কিন্তু দেইনা।আমি এসব হুমকি ধুমকিতে ভয় পাইনা হুহ্।”

শ্রাবণ ভাইয়া রেগে সোফায় গিয়ে বসলেন।কাউকে ফোন করে বললেন,
“রুপ,তোদের বাসায় যেতে বাতেন ভাইকে দেখলাম ও কি ম্যারিড?……গুড।ওই বাতেন ভাইকে কাল সকালে আমাদের ড্রিম ওয়ার্ল্ডে বর সাজিয়ে নিয়ে আসবি আর কিছুক্ষণের মধ্যে ওর একটা পিকচার আমাকে পাঠিয়ে দে তো।……..আর শোন বাতেনের চেয়ে সুন্দর কাউকে পেলে তাকে বর সাজিয়ে নিয়ে আসবি।……কার বিয়ে?আমার মামার একটা ছাগল আছে তার বিয়ে।হুম সুন্দর ছাগল..বাতেনের সাথে পারফেক্ট হবে।আমি ছাগলের পিকটা তোকে পাঠিয়ে দিচ্ছি তুই বাতেন কে দেখা।…ওকে বাই।”

ফোনালাপ শুনে আমি একটু টেনশনে পড়ে গেলাম।বরের নাম বাতেন!এটা আবার কি নাম রে ভাই!!শ্রাবণ ভাইয়া সোফা থেকে উঠে এসে খ্যাচ খ্যাচ করে আমার কয়েকটা পিক নিয়ে ওই ছেলেটাকে মনে হয় পাঠিয়ে দিলেন।আমি রেগে চেঁচিয়ে বললাম,
“এই তুৃমি কি করছো?কাকে দিলা আমার ছবি?ডিলিট দাও এখনই।”

শ্রাবণ ভাইয়া সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে বললেন,” অশিক্ষিতদের মতো কখনও তুই কখনও তুমি আবার কখনও আপনি বলিস কেন?তোর ভাষা শুনে মনে হয় তুই মেথরের বউ।এই তুই কি ম্যারিড?কোন মেথরের সাথে বিয়ে হয়েছে তোর?আগে কোনো বিয়ে হয়ে থাকলে ওসব ক্যান্সেল।কাল বাতেনের সাথে তোর পার্মানেন্ট বিয়ে হবে।”

আমি তিরিক্ষি হয়ে শ্রাবণ ভাইয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম,”তুই একটা কুকুর।কুকুর তাও ভাল নাম,তুই একটা কুত্তা আর তোর বউ একটা কুত্তার বউ।”

কথা গুলো বলে শ্রাবণ ভাইয়ার রাগী মুখ দেখেই ভয়ে আমি এক দৌঁড়ে দাদির রুমে চলে গেলাম।শ্রাবণ ভাইয়া দ্রুত পায়ে দাদির রুমে আসলেন।আমি দাদির পেছনে লুকিয়ে একদমে বললাম,”আমি সরি আর এসব বলবো না কখনও বলবোনা।”

দাদি চিন্তিত হয়ে শ্রাবণ ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,”কি হয়েছে নানু ভাই?কি করেছে ও?”

শ্রাবণ ভাইয়া দাদিকে সরিয়ে দিয়ে আমার সামনে দাঁড়ালেন।আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে শার্টের ফোল্ড করা হাতা কনুই পর্যন্ত তুলতে লাগলেন।আমি ভয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,”আর মারবেন না এখন থেকে ঠিক করে কথা বলবো।”

কিছুক্ষণ রাগী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে দাদিকে দেখিয়ে বললেন,”এই দেখো নানু ওর ফিওন্সি।কাল ওর সাথে তোমার জুঁই ফুলের বিয়ে।”

দাদি তো খুব খুশি।শ্রাবণ ভাইয়ার মুখে হাত দিয়ে চুমু খেতে লাগলেন।ছবি দেখে ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।দাদিকে দেখানোর পর শ্রাবণ ভাইয়া আমার সামনে এসে ফোন ধরে বললেন,”এই দেখ তোর উড বি হাসবেন্ড।”

ছবি দেখে আমার কলিজা উড়ে যাওয়ার উপক্রম।উগান্ডার মুচিও মনে হয় এর থেকে সুন্দর।আমি একটা চিৎকার দিয়ে দাদির কাছে যেয়ে বললাম,”আমি বিয়ে করবো না এক্সাম দিবো আমি।এক্ষুণি পড়তে বসছি যেয়ে।”

শ্রাবণ ভাইয়া ফোন পকেটে ঢুকিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে বললেন,”এখন এসব বললে হবেনা।আমি ওদের বলে দিয়েছি কাল বিয়ে।আমার কথার দাম আছে তোর মতো ফাঁকা আওয়াজ দিইনা আমি।মামা আর ভাইয়াও আমার সাথেই থাকবে আই নো।”

আমি কান্নার জন্য আর কোন কথায় বলতে পারলাম না।একটু পর বাবা ভাইয়া বাসায় এসেও বিয়ের জন্য রাজী হয়ে গেল।ভাবি তো রাত ৯টায় ভাইয়াকে নিয়ে শপিং করতে চলে গেল।বাবাও তার কিছু ফ্রেন্ডকে ফোনে বলল কাল তার একমাত্র মেয়ের বিয়ে আর শ্রাবণ ভাইয়া?উনি তো খাচ্ছেন,আজকে থেকেই আমার বিয়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন উনি।আমি লিভিং রুমের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে এসব দেখছিলাম হঠাৎই সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল ঠাস করে ফ্লোরে পরে গেলাম।

চলবে…………!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here