কাজল নদীর জলে
আফিয়া আপ্পিতা
২২.
সুরলা বিয়ের অমত দেয়ার পর পরই সাবিনা বোনকে জানায়। নিতিকাও শুনে। শুনে তার বিস্ময়ের শেষ থাকে না। যে মেয়েটা ক’দিন আগ অবধি চয়ন চয়ন বলতে অজ্ঞান ছিল, আজ সে কি-না চয়ন থেকে মুখ ফিরিয়ে দিচ্ছে! নিতিকা কথা বলতে চায় সুরলার সাথে। সুরলা নিতিকার ফোন উঠায় না, সাবিনার ফোন থেকে কথা বলতে চাইলেও বলে না। ঘটনা জানতে নিতিকা ইদের তৃতীয়দিন সকালে মাকে নিয়ে খালার বাসায় আসে । এসে ফ্রেশ হয়ে সুরলাকে ঝেকে ধরে। সুরলা শুধু জানায় সে চয়নকে তার জীবনে চায় না। চয়নকে তার জীবন থেকে মুছে নিয়েছে। তাদের মাঝে এখন কোন কিছু নেই। নিতিকার বিশ্বাস হয় না যেন। সে এর পেছনে ঘটনা জানতে চাইলে সুরলা এড়িয়ে যায়। বিকেলে সুরলাকে নিয়ে সাবিনা, রেহানা, নিতিকা আলোচনায় বসেছে। আলোচনার মূখ্য বিষয়, সুরলার বিয়ে। রেহানা সুরলাকে নানানভাবে বুঝাচ্ছেন যেন রাজি হয়ে যায়। রেহানা এমন ও বলেন,
“সরু মা চয়নের মতো ছেলে আজকাল পাওয়া দুষ্কর। সে লাখে একটা। যেমন ভদ্র, তেমন চেহারা। চাকরি বাকরি ও ভালো। সবদিক দিয়েই পারফেক্ট। তুই খুব সুখে থাকবি। তাছাড়া আমার কাছাকাছি থাকবি, আমি যখন তখন তোকে দেখতে পাবো। রাজি হয়ে যা মা!”
সুরলার কড়া উত্তর, “আমি ওকে বিয়ে করব না।” সাবিনাও মেয়ের জেদ ভেবে বারবার বলছেন, “সামান্য কারণে এত বড় সিদ্ধান্ত নিস না। পরে পস্তাবি।” সাবিনার ভাবনামতে, সুরলা আর চয়নের মাঝে কোন ঝামেলা হয়েছে, যার দরুন সুরলা চয়নকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। নিতিকা বারবার সুরলার অমত পোষণ করার কারণ জানতে চাইছে, চয়নকে বিয়ে করার সুযোগ হাতছাড়া করতে নিষেধ করছে । সুরলার কানে যেন কথা যায় না। সবাই বুঝাতে বুঝাতে ক্লান্ত, তাও সুরলা তার সিদ্ধান্তে অনড়। আলোচনার মাঝে রেহানার ফোন বেজে ওঠে। টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে রুমের এক কোণে গিয়ে কথা বলতে থাকে। রেহানা অন্যদিকে যেতেই সাবিনা বলেন,
“তুই চয়নকে ভালোবাসিস, তবে ওকে রিজেক্ট করছিস কেন! তোদের ঝগড়া হয়েছে? সামান্য ঝামেলার জন্য ভালোবাসাকে হারাস না। রাজি হয়ে যা মা, দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।”
নিতিকা জানতো না যে চয়নের কথা আগ থেকে জানে রেহানা। জেনে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“খালামণি তুমিও জানো তবে! সুরলা এমন পাগলামি করছে কেন আমি বুঝতে পারছি না। ক’দিন আগ অবধি চয়নের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিল, বিয়ের কথা বলতেই সে কি অনুভূতি তার! পারলে তখনি বিয়ে করে নেয়। অথচ এখন বিয়ের প্রস্তাব আসতেই নিষেধ করছে! কেন? এই সুরলা তোর বিয়েতে অমত পোষণ করার কারণ কী? বল আমাদের। আমরা হিসেব মেলাতে পারছিনা।”
সুরলার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায় । সে চিৎকার দিয়ে বলে,
” কারণ জানতে চাইছো? তবে শুনো, তোমরা যাকে ভদ্র নম্র বলছো, সে আসলে মুখোশধারী। বাইরে এক আর ভেতরে এক। ওর মতো খারাপ মানুষ আর দুটি নেই। তোমরা যদি ওর আসল রূপ দেখতে তবে বিয়ের জন্য বলতে না আমায়। আমি ওই বদলোককে বিয়ে করব না, মরে গেলেও না। ওর মতো জঘন্য লোককে বিয়ে করার চেয়ে গলির মোড়ের কোন বখাটেকে বিয়ে করা ভালো। অন্তত তাদের ব্যবহার এতটা জঘন্য নয়, যতটা তোমাদের ভদ্র মুখোশধারী পাত্র মি.জুবায়ের আরেফিনের ব্যবহার। রাস্তার বখাটেরা ও ওর থেকে ভালো আছে। ভদ্রতার সংজ্ঞা জানে ওই লোক? মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলে সেটা জানে? মেয়েদের সম্মান করতে জানে? জানে না।”
সুরলা বাঘ্রকন্ঠে বলেই যাচ্ছে। রেহানা ফোন কানে দেয়া অবস্থায় ইশারায় বারবার চুপ করতে বলছেন। সুরলার কথার কারণে ফোনের অপাশে বলা মানুষটার কথা যাচ্ছে না। সুরলাকে যখন বলেও থামানো যাচ্ছে না তখন তিনি রুম থেকে যাওয়া ধরলেন। দুই কদম দিতেই সুরলা তাকে থামিয়ে দেয়। রেহানার হাত থেকে ফোন নিয়ে নেয়। ফোন খাটে ছুড়ে মেরে, খালাকে খাটে বসায়। বলে ওঠে,
“আমার কথা শেষ না হওয়া অবধি ওঠবে না। শুনো, তোমাদের সুপাত্রের কুকীর্তি। মেয়ে বিয়ে দেয়ার স্বাধ মিটে যাবে। ওই বদলোকের কাছে বিয়ে দিলে আমি সুখে থাকব বলছো? আমার তো মনে হয় আমার জীবন থেকে সুখ উধাও হয়ে নরকে পরিণত হবে। তোমাদের দেখে সালাম দিয়ে হেসে দুটো কথা বলে, তাই বলে ধরে নিলে সে ভদ্র? আসলে সে মুখোশধারী। ভদ্রতার আড়ালে তার হিংস্রতা চাপা পড়ে গেছে। একটা ভালো মেয়েকে রাস্তার মেয়ে বানানোর স্বভাবি মানুষ সে। আর তুমি বলছো ভদ্র?”
“ওকে দেখতে তো ভদ্রই মনে হয়। ও কী করেছে সেটা তো বলবি?” মুখ খুলে নিতিকা। সুরলা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
” স্ত্রীকে খুন করা স্বামী গুলোকে বিয়ের সময় খুনি মনে হয়? ধীরে ধীরে তাদের আসল চেহারা সামনে আসে, তখন সবাই আফসোস করে। আমি চাই না তোমরা আফসোস করো। তোমাদের তথাকথিত ভদ্র পাত্র কতটা জঘন্য সেটা তোমাদের ধারণার বাইরে। যে মেয়েদের সম্মান দিতে জানে না তাকে আর যাই হোক আমি অন্তত ভদ্র বলি না। তার অশালীন ভাষা যদি তোমরা শুনতে তবে বিয়ের কথা মুখে নিতে না। তার আসল রূপ দেখে আমি কোনভাবেই ওকে বিয়ে করে নিজের জীবন নষ্ট করতে চাই না। দরকার হলে তোমরা কোন চোর ডাকাতকে আমার পাত্র হিসেবে ঠিক করো, আমি হাসিখুশি রাজি হব, কিন্তু মেয়েদের সম্মান করতে না জানা এই জঘন্য লোককে আমি বিয়ে করব না। ”
“ক’দিন আগ অবধি এই জঘন্য লোক বলতেই অজ্ঞান ছিলি, আমি যদি ভুল না হই তোদের মাঝে কোন সম্পর্ক ও ছিল। তোর রুমে তার দেয়া পেইন্টিংয়ের ঠাই পাওয়া সেটাই বলে অন্তত। সে যে জঘন্য সেটা কী আগে জানতি না তুই?” না পারতে বলে দেন সাবিনা।
সুরলা রেগে বলে,
” তার আসল রূপ দেখার পরপরই আমি ভাবনা থেকে তাকে ঝেড়ে ফেলেছি। কোন একসময় এমন জঘন্য লোক আমার ভাবনায় ছিল ভাবতেই আজকাল লজ্জা লাগে আমার। ভাবনা থেকে যাওয়ার পরপরই আমার চারপাশ থেকে তার অস্তিত্ব বিলীন করেছি। সেই পেইন্টিং এখন হয়তো বুড়িগঙ্গার তীরে আবর্জনায় হাবুডুবু খাচ্ছে। আজকের পর থেকে বিয়ের কথা তো দূর ওই লোকের নামটাও বলবে না আমার সামনে। আমি তাকে ঘৃণা করি, সে মরুক বাঁচুক আমার কিছু যায় আসে না। ”
থেমে খালার দিকে শান্ত গলায় বলে,
“তুমি আজই ওই বদলোকের ভালো মাকে ভদ্রভাবে নিষেধ করে দিবে। ভদ্রমহিলা চমৎকার মানুষ, ছেলেটাই যতটা বদ। আন্টি আর চিবাকে আমার পক্ষ থেকে সরি বলে দিবে।”
রেহানা হতভম্ব হয়ে সুরলার দিকে তাকিয়ে আছে। সব কিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। চয়নের নামে এত বাজে কথা তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। আর সুরলা এসব জানে কিভাবে! নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খায় রেহানার মতে। রেহানা অনেকটা ফিসফাসিয়ে বোনকে জিজ্ঞেস করে। সাবিনা পুরো বিষয়টা বুঝিয়ে বলে। রেহানা অবাক হয়। এদের মাঝে কিছু ছিল অথচ তিনি টের অবধি পাননি! তিনি সুরলাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চান। মুখ খুলতেই সুরলা কড়া ভাষায় বলে দেয়,
“বিয়ে যখন হচ্ছে না তখন এত ঘাটাঘাটির প্রয়োজন নেই। অতীত আজ আমার কাছে ঘৃণিত। আমাকে আমার মত থাকতে দাও। দয়া করে এ ব্যাপারটা তুমি মিটিয়ে নাও খালামণি, আমার কানে যেন আর ওই বদলোকের নাম না আসে। ”
বলে রুমে চলে যায় সুরলা। গিয়ে দরজা আটকিয়ে দেয়। সুরলা চলে গেলে সাবিনা বলেন,
” সুরলাকে আজ অবধি এতটা কঠোর হতে কখনো দেখি নি আমি। ভীষণ নরম মনের মানুষ আমার মেয়েটা। এতটা কঠোর হওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই কোন বড় কারণ আছে। সুরলা চয়নকে এত ঘৃণা করে এর অর্থ চয়ন সুরলার সাথে জঘন্য কোন আচরণ করেছে। আমার তো ভয় হচ্ছে, আমার মেয়েটার কী সর্বনাশ করেছে ছেলেটা!”
নিতিকা খালার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে। তারপর বলে,
“আমার কী মনে হয় জানো খালামণি? চিবার জন্মদিন পার্টি দুদিন পর সুরলা না বলে আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল যে? ওটাও চয়নের কারণে। ওদের মাঝে বড় বড় কোন ঝামেলা হয়েছিল হয়তো। সুরলা নিজেকে সামলাতেই রাশনার বাসায় চলে গিয়েছে। বাসায় ফেরার পর আমি এসে দেখি ওর চোখ মুখ ফোলা। চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গিয়েছিল। নিশ্চয়ই কেঁদেকেটে নির্ঘুম রাত পার করেছে। আমি জিজ্ঞেস করার পর এড়িয়ে গেছে ব্যাপারটা। ”
থেমে বলে,
“একটা বিষয় খেয়াল করেছো? এরপর থেকেই কিন্তু সুরলা আমাদের বাসায় যায় নি। আমার সন্দেহ ঠিক হলে ঘটনাটা তখনি ঘটেছে।”
রেহানা গম্ভীরমুখে বলেন,
” সরু আমার সাথে অবধি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখেছে ওই ছেলের জন্য। কতদিন বাসায় যায় না। চয়নের সম্পর্কে এতসব শুনে আমার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। সবাই এত ভালো জানে ছেলেটাকে, অথচ সে এত খারাপ! ভাবতেই অবাক লাগছে। আজকাল মানুষ চেনা যায় না।” নানান কথা বলতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে রেহানার মনে পড়ে ফোনের কথা। এতক্ষণে বেমালুম ভুলে গেছেন। ।তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নেন। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে কপাল চাপড়ান। চেহারায় লজ্জার আভা দেখা দেয় তার। জোবায়েদা ফোন করেছিল তার কথার মাঝেই সুরলা টেনে রেখে দিয়েছিল। তারপর আর কাটা হয় নি। জোবায়েদা সবটা শুনে ফেলেছেন! তাড়াতাড়ি রেড বাটন চেপে কেটে দেন।
এদিকে আরেফিন হাউজের দ্বিতীয় তলার চয়নদের বাসাটায় পড়ন্ত বিকেলে সবাই ড্রয়িংরুমে গল্পের আসর বসেছে। এতে চয়নদের পুরো পরিবার উপস্থিত আছে। চয়নের বিয়ের আয়োজন নিয়েই মূলত আলোচনা চলছে। গল্পের মাঝেই জোবায়েদা বলেন,
“পাত্রী পক্ষ থেকে কোন মতামত এলো না এখন অবধি। তাদের কী মত নেই?”
চরণ বলে,
“তুমি রেহানা আন্টিকে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করো, তাদের মতামত কী?”
ছেলের কথাতেই রেহানাকে ফোন করে জোবায়েদা। সবার শোনার সুবিধার্থে ফোন স্পিকারে দিয়ে টেবিলে রাখেন। খানিক কথা বলার পর রেহানার গলার আওয়াজ আসে না আর তার পরিবর্তে কোন মেয়ের রাগত স্বর ভেসে আসে। ভালো করে শুনতেই বুঝা গেল এটা সুরলার গলা। বিয়ে নিয়েই কথা বলছে। অতঃপর একে একে সুরলার সব কথা শুনলো তারা। সুরলা যখন চয়নকে খারাপ বলছিল, বখাটের সাথে তুলনা করছিল তখন সবাই অবিশ্বাস্য চোখে তার দিকে বারবার তাকাচ্ছিল। যেহেতু চয়ন সুরলা একে অপরের পরিচিত ছিল তাই তাদের ভাবনা মতে, সুরলা না জেনে কথা বলছে না, নিশ্চয়ই এরমাঝে কোন ঘটনা আছে। চোখ মুখ লাল করে চয়ন মাথা নিচু করে বসে থাকে। মাঝে একবার চরণ ফোন কাটতে নিলে বাবা বাধা দেয়। বলে,
“আমরাও শুনি আমাদের ছেলের কীর্তি। ”
সুরলার প্রতিটা কথা অবাক করে সবাইকে। সবাই যখন চয়নের দিকে তাকাচ্ছিল তখন লজ্জায় চয়নের মাথা কাটা যাবার উপক্রম হলো যেন। এতটা অপনানিত বোধ কখনো করেনি সে। ফোন কাটার পর বখতিয়ার সাহেব গম্ভীরমুখে বলেন,
“আজ অবধি কেউ তোমার নামে মন্দ কথা বলে নি। এই মেয়েটা তোমাকে এত খারাপ বলছে। তোমাকে বিয়ে করার চেয়ে কোন বখাটেকে বিয়ে করা উত্তম মনে করছে। তার কারণ কী? তুমি মেয়েটার সাথে কী করেছো? যা বখাটে কর্ম ও হার মানায়?”
জোবায়েদা ছেলের দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বলে,
“বাবা আসলেই কী তুই এতটা খারাপ? সুরলা এতসব কিভাবে জানে? তুই ওর সাথে কী খারাপ কিছু করেছিস? প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার সময় রেহানা যদি আমাকে এসব বলে তবে আমি কী বলব? কী সাফাই দিব?”
মা বাবার অবিশ্বাস মানতে পারে না চয়ন। উঠে চলে যায় নিজের রুমে। সামান্য একটা মেয়ের জন্য মা বাবা তাকে অবিশ্বাস করছে! মেয়েটার সাথে সে কী এমন করেছে? খানিক বকা দিয়েছে শুধু। এর জবাবে মেয়েটা এমনভাবে প্রতিশোধ নিল! তাকে যতটা খারাপভাবে উপস্থাপন করেছে সে কি ততটা খারাপ? তার জানামতে, সে এতটা খারাপ নয়। মেয়েটা বাড়িয়ে বলেছে তাকে সবার সামনে ছোটো করতে। মনে রাগ আর ক্ষোভের ভীড় দেখা যায়। চেহারায় রাগের রক্তিম আভা। মা বাবার অবিশ্বাস্য দৃষ্টি বারবার চোখে ভাসে চয়নের। মা বাবা তাকে কত খারাপ ভাবছে! সবসময় তারা তাকে নিয়ে গর্ববোধ করতো আজ মেয়েটা তাকে খারাপ বানিয়ে দিয়েছে। সুরলা পরিকল্পনা করে এতসব করেছে। এমন ভাবনা মনে আসতেই রাগগুলো প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে। রাগে কিড়মিড় করে ভাবতে থাকে তার জীবনে অশান্তি আনা মানুষকে কিভাবে অশান্তি আনা যায়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতে চয়নের ভাবনা শেষ হয়। মাথায় চমৎকার পরিকল্পনা আসে। সে সুরলাকে বিয়ে করবে। তার ভাবনা, আমাকে খারাপ বলছো তুমি? আমি বখাটে থেকেও খারাপ? আমাকে বিয়ে করলে তোমার জীবন নরক হবে? হোক নরক। আমাকে খারাপ বানিয়ে তুমি কী শান্তিতে থাকতে পারবে? পারবে না। আমি দিব না। আমি তোমাকে বিয়ে করব, তোমার অমত থাকা সত্ত্বেও। আজ আমাকে সবার সামনে খারাপ বানিয়েছো, আমাকে সবার সামনে ভালো বানানোর দায়িত্ব ও তোমাকে নিতে হবে। শুধু দেখে যাও আমি কী করি!
জেদ চেপে যায় চয়নের। মায়ের ফোন থেকে সুরলার মায়ের ফোন নাম্বার নিয়ে কল দেয়। রিসিভ হতেই সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় দেয়। চয়ন নামটা শুনে সাবিনার কন্ঠ গম্ভীর হয়। কল দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করে। চয়ন জানায়, বিকেলে মায়ের ফোন কলের মাধ্যমে সুরলার বলা সব কথাই সে শুনেছে। সে ব্যাপারেই কথা বলতে চায়। এরপর চয়ন তার আবেগী কন্ঠে নানান কথা ব্যক্ত করে। যার মূলভাব হলো, সুরলা এবং সে একে অপরকে ভালোবাসে, তাদের মাঝে সম্পর্ক ও ছিল। সামান্য একটা কারণে সুরলা তার সাথে ঝগড়া করে ব্রেকাপ করে নেয়। ক্ষোভ থেকে এখন বিয়ে করতে চাইছে না। চয়ন সুরলাকে ভীষণ ভালোবাসে, বিয়ে করলে সুরলাকেই করবে। সুরলাও চয়নকে ভালোবাসে, শুধুমাত্র জেদ আর ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিয়েতে অমত পোষণ করছে। সাবিনা যেন সুরলাকে বুঝায়, সুরলাকে বিয়ের জন্য রাজি করায়।
সাবিনা তাদের মাঝে ঝগড়ার কারণ জানতে চাইলে চয়ন জানায়, অফিসের একটা প্রজেক্টে তার এক মেয়ে কলিগের সাথে সে কাজ করছিল অনেকটা সময় ধরে। কাজের বাইরে তাদের মাঝে কোন সম্পর্ক ছিল না। অধিকাংশ সময় মেয়েটা তার সাথে থাকায় সুরলা চয়নকে সন্দেহ করতে শুরু করে। সুরলার ধারণা, চয়ন মেয়েটার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে। যা কি-না ভিত্তিহীন। তার কলিগ মেয়েটার নাম, মাহিরা। সে বিবাহিত, তার দুটো বাচ্চা ও আছে। চয়ন তার কথা সত্য প্রমাণ করতে মাহিরার পারিবারিক ছবিও দেয়। যাতে মাহিরা আর তার স্বামীর বন্ডিং শোভা পাচ্ছে। চয়ন ল্যাপটপ ঘুরে মাহিরার সাথে তার করা শেষ প্রজেক্টের এগ্রিমেন্ট ও দেখায়। পুরো ব্যাপারটা এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যে সন্দেহ করার অবকাশ নেই। প্রমাণের ভিত্তিতে সাবিনা বিশ্বাস করেন চয়নের কথা। সুরলার বিকেলে বলা কথার সাথে উক্ত ঘটনার খানিক রেশ পাওয়া যায়। তাছাড়া সুরলা চয়নকে ঘৃণা করার সুস্পষ্ট কারণ বলেনি, শুধু খারাপ তা বলেছে।
চয়নের শান্ত গলায় গুছিয়ে বলা কথাগুলো বিস্মিত করে সাবিনাকে। সাবিনার সাথে কথা বলার সময় চয়নের ভদ্রতা ছিল নজরকাড়া। খানিক সময়েই চয়ন সাবিনার ব্রেন ওয়াশ করে ফেলে। সুরলা এবং সে একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারবে না। মুখে বললেও সুরলা এখনো চয়নকে ভালোবাসে। সে সাবিনাকে জানায়, সুরলার ভুলবুঝাবুঝি আর নিতে পারে না সে। সে এর শেষ চায়, খুব তাড়াতাড়ি সুরলাকে বিয়ে করতে চায়। সাবিনা আশ্বাস দেয়, সুরলাকে বুঝিয়ে বিয়ের জন্য রাজি করাবেন। কথা শেষে ফোন রেখে রেহানাকে চয়নের বলা কথাগুলো বলে। অল্পতে হাইপার হওয়া আর ভুল বুঝাবুঝির অভ্যাস আছে সুরলার। সেটা কারো অজানা নয়। সুরলার দ্বারা সব সম্ভব। তাই রেহানা ও বিশ্বাস করেন। চয়নকে তিনি চেনেন ভালো করে, সে এতটা খারাপ হতেই পারে না। দুই বোন মিলে সিদ্ধান্ত নেন, তারা সুরলাকে চয়নের কাছে বিয়ে দিবেন।
তানভীর সাহেব রাজি হন না মেয়ের অমতের জন্য। পরে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে চয়ন ভালোভাবে বুঝিয়ে বলে। তানভীর সাহেবের মন জয় করতে খুব বেশি সময় লাগে না চয়নের । সে খুব সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারে। চয়নকে ভীষণ পছন্দ হয় তানভীর আহমেদের। চয়নের কথার মাঝে তিনি সুরলার জন্য চিন্তা আর ভালোবাসা দেখতে পান। যার দরুন চয়নের কথা বিশ্বাস করতে সময় লাগে না তার। সুরলার জন্য চয়নকেই উত্তম মনে হয় তার। চয়ন তানভীর আহমেদকে জানায় সে সুরলাকে বিয়ে করতে চায়, আর তা খুব দ্রুত।
বিয়ের ব্যাপারে তানভীর সাহেব কোন আশ্বাস না দিয়ে ভেবে জানাবেন বলে বাসায় ফেরেন। বাসায় ফিরে স্ত্রীর সাথে আলাপ করেন এ ব্যাপারে। সাবিনা তো আগে থেকেই রাজি ছিলেন। স্বামীকে ও তার মতামতের কথা বলেন। মেয়ের জেদের জন্য মেয়ে নিজের সুখ বিসর্জন দিচ্ছে, মা বাবা হয়ে তাদের চুপ থাকা উচিত নয়। তানভীর সাহেব চয়নের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে খারাপ কিছু পান না, বরং সবাই চয়নকে ভালোই খ্যাতি দেয়। বাদ দেয়ার কোন সুযোগ না পেয়ে তিনি ও রাজি হন।
রেহানার সাথে যোগাযোগ করে দু’দিন পরই হ্যাঁ বলে দেন। তাদের ইতিবাচক জবাবে আরেফিন পরিবারের বিস্ময়ের বন্যা বয়ে যায়। এত কিছুর পর পাত্রীপক্ষ থেকে ইতিবাচক জবাব কেউই কল্পনা করতে পারেন নি। জোবায়েদা বারবার রেহানাকে জিজ্ঞেস করেন,
“সুরলা রাজি আছে? আপনাদের সবার মত আছে এতে?”
রেহানা জানেন জোবায়েদা কেন বারবার এই কথা জিজ্ঞেস করছেন। সুরলার সব কথা যে জোবায়েদা শুনে ফেলেছেন তা অজানা নয় রেহানার। তাই তিনি বিষয়টা সত্যায়িত করতে এক গাল হেসে জবাব দেন,
“সবাই রাজি আছে। আসোলে, চয়নের সাথে সুরলার ঝগড়া হয়েছে কোন এক ব্যাপারে। বিচ্ছেদ ও হয়েছে ওদের সম্পর্কে। চয়নের উপর বেশ ক্ষোভ ছিল সুরলার, প্রস্তাব আসার পর সে ক্ষোভ ঝাড়ে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে। ওদের ভুল বুঝাবুঝির রেশ ধরেই সমন্ধটা ভাঙতে বসেছিল। চয়ন সেই ভাঙন ঠিক করে এখন ওদের ভুল বুঝাবুঝির ইতি টেনেছে। তবে সুরলা খানিক রেগে আছে চয়নের উপর, বিয়ে হলে ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করবেন না। ”
“চয়ন!” অবাক কণ্ঠ জোবায়েদার। তার বিশ্বাস হচ্ছেনা যেন। রেহানা বলেন,
“হ্যাঁ চয়নই তো আমার বোন আর ভগ্নিপতির সাথে কথা বলে সবটা ঠিক করেছে। আপনারা শীঘ্রই প্রস্তাব আর বিয়ের পাঁকা কথা সারতে আসুন।”
“আলহামদুলিল্লাহ। আমি কালই আসব স্বপরিবারে।”
জোবায়েদার খুশি ধরে না যেন। ফোন রেখে খুশিতে হাক ছাড়েন সবাইকে। দুপুরের খাবারের পর সবে যে যার রুমে গিয়ে ভাতঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। জোবায়েদার ডাকে সবাই তড়িঘড়ি করে বসার রুমে চলে আসে। সবাই আসতেই জোবায়েদা খুশির সংবাদ দেয়। চিবা খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠে। বখতিয়ার আরেফিনের চেহারায় ও খুশির আভা দেখা যায়। খুশির আভা দেখা যায় না চরণের চেহারায়। সে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“এটা কিভাবে সম্ভব! সুরলা রাজি হলো কিভাবে!”
জোবায়েদা চয়নের দিকে তাকান। বলেন,
“তোদের সম্পর্কের কথা আগে বলিস নি কেন? পরশু সুরলার থেকে এতসব শোনার পর আমরা যখন তোকে অবিশ্বাস করছিলাম, তখন অন্তত বলতে পারতি, যে তোদের মাঝে ঝগড়া হয়েছে, তাই সুরলা রেগে এসব বলছে। বলিস নি কেন?”
উত্তরে চয়ন বলে,
” আমাদের মাঝে যেই সমস্যা ছিল, তা মিটে গেছে, এখন পুরোনো কথা না টেনে বিয়ের দিকে মন দাও।”
চিবা, চরণ আর বখতিয়ার সাহেব কিছু বুঝতে পারছেন না। তারা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বখতিয়ার সাহেব বলেন,
“কিসের সমস্যার কথা বলছো তোমরা?”
উত্তর জোবায়েদা রেহানার বলা কথা গুলো বলেন। চিবা বলে,
“আমি তো ওইদিনই সুরলার কথা শুনে বুঝতে পেরেছিলাম, তোমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক আছে। ভাইয়ার করা পেইন্টিং যে চলে গেছে সুরলার ঘরে। ”
চয়ন চেহারায় লাজুকতা টেনে মৃদু হাসে। ভাবটা এমন যে সে সত্যিই সুরলার প্রেমে মগ্ন। চরণ ভাইয়ের পাশে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
“ভাইয়া, কেউ না জানলেও আমি সত্যটা জানি। তুমি কী করতে চাইছো? হঠাৎ রঙ বদলালে কেন? যদি এর পেছনে সুরলাকে কষ্ট দেয়ার কারণ থাকে, তবে দয়া করে এসব করো না?”
চয়ন ভাইয়ের দিকে তাকায় এক পলক। তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আর মাত্র দু’দিন ছুটি আছে আমার। এরপর আমি চট্টগ্রাম চলে যাব। এই দুইদিনে তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো। ঘরোয়া বিয়ে হবে, বাইরের কেউ যেন না থাকে। আমি আংকেলের সাথে কথা বলে নিব। এদিকটা তুমি সামলাও। ”
বলে হাটা ধরে। মাঝপথে থেমে পেছু ফিরে বলে,
“আর হ্যাঁ, তোমার গুনধর পুত্রবধূকে বিয়ের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করবে না। আমার রাগ তোমাদের উপর ঝাড়বে। ওর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করো না।”
রাতে তানভীর আহমেদের সাথে কথা বলে চয়ন। ছুটি শেষ হওয়ার কারণেই পরদিনই তড়িঘড়ি করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সুরলাকে রাজি করানোর দায়িত্ব দেয়া হয় নিতিকাকে। নিতিকা আসে পরদিন সকালে। সুরলা তখন ঘুমে মগ্ন। নিতিকা সুরলাকে জাগিয়ে বলে,
“তুই এদিকে ঘুমাচ্ছিস? আর ওদিকে সব ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।”
“কী হয়েছে আবার?” ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে সুরলা। নিতিকা তড়িৎ বলে,
“চয়ন কাল বিয়ে করে ফেলেছে । তুই রিজেক্ট করায় ও বেশ ক্ষেপে গেছে। তারপর ওর এক কাজিনকে বিয়ে করে নিয়েছে। মাত্রই নিলয় ফোন দিয়ে বলল। ”
চয়নের বিয়ের কথা শুনে সুরলা তড়িৎ উঠে বসে। চোখ থেকে ঘুম চলে যায়। রাগের বশত সেদিন মা বোনকে এত কথা শুনিয়েছে সে। তার সত্য কয়টা? সে চয়নকে এখনো ঘৃণা করতে পারে না, তার মনে ঘৃণা আসে না চয়নের জন্য। চয়নকে ভুলার ভান করলেও সফলভাবে ভুলতে পারে না। মনে নানান রূপে এসে হানা দেয় চয়নের ভাবনা। আত্মমর্যাদা রক্ষার্থেই সে চয়নকে রিজেক্ট করেছে, সে আর চায়না চয়নকে। চয়নের উপর জমে থাকা ক্ষোভ থেকেই সেদিন এতসব বলেছিল। আজ চয়নের বিয়ের কথা শুনে মনের কোথাও খারাপ লাগা কাজ করছে। কষ্ট হয় সুরলার। সে বুঝতে পারে তার মনে চয়নের জন্য ভালোবাসা এখনো অবশিষ্ট আছে। নিজের কষ্টগুলো বোনকে দেখাতে চায় না। কাঁপা গলায় বলে,
“ত্তো আমি ক্কি ক্কোরবো?”
সুরলার গলার স্বর জানান দেয় সুরলার কষ্টের কথা। নিতিকা অন্যদিকে ফিরে মুচকি হাসে। সুরলার দিকে ফিরে বলে,
“ও তোর উপর জেদ করে বিয়ে করে ফেলেছে। তুই বাপ্পারাজের বেশ ধরবি কেন? তুই ও বিয়ে করে নে। ওকে দেখিয়ে দে, তুই ও ওকে ছাড়া চলতে পারিস।”
এভাবে নানান কথা বুঝায় নিতিকা। সুরলার মনে ক্ষোভের জায়গা দিয়ে সুরলাকে রাজি করায় বিয়ের জন্য। সে জানায়, মুকিফের এক বন্ধু আছে যে কি-না নিতিকার বাগদানের পর থেকে সুরলাকে পছন্দ করে। মাস খানেক আগে সে প্রস্তাব দিয়েছে, সুরলা রাজি থাকলে যখন তখন বিয়ে করতে প্রস্তুত সে। জেদের বশত সুরলা বলে দেয়, “আজই কাজি নিয়ে আসতে বল তাদের। আমি বিয়ে করব। কারো কথা ভাবব না। ওই বদলোকের জন্য নিজের জীবন থামিয়ে রাখব না। ”
এর রেশ ধরেই সন্ধ্যার পর কাজি নিয়ে হাজির হয় আরেফিন পরিবার। সুরলাকে নিতিকা তার রুমে দরজা আটকে রাখে, যাতে পাত্রের খোঁজ না পায়। বিয়ে পড়ানোর আগে, সাবিনা, রেহানা, কাজি, নিতিকা, তানভীর সাহেব যায় সুরলার রুমে। বিয়ে পড়াতে শুরু করে। সুরলার মনে তখনো চলছে চয়ন। চয়নের সাথে কাটানো সব মুহুর্তের কথা ভাবছে সে। এদিকে যে পাত্রের নাম জুবায়ের আরেফিন বলছে কাজি সেদিকে তার খেয়াল নেই। একে একে সব কথা ভেবে চয়নের অপমানের কথাও ভাবে সে। রীতিমতো মনে রাগ জমে, ক্ষোভ জমে। তখনি নিতিকা তাকে ঝাকি দিয়ে কবুল বলতে বলে। সুরলা বাস্তবে ফিরে। মনের ক্ষোভ নিয়েই কবুল বলে ফেলে। রেজিস্ট্রার পেপারে সাক্ষর ও করে দেয়। বিয়ে হয়ে যায়। নিতিকা ছাড়া বাকিরা সুরলার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যায়। নিতিকা সুরলার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হাসতে থাকে। সুরলা কারণ জিজ্ঞেস করে। নিতিকা হাসি থামিয়ে বলে,
“জেস ধরে বিয়ে করতে গিয়ে পাত্রের নামটাএ শুনলি না, ছবিও দেখলি না। পরে দেখকে কেমন চমকাবি তাই ভাবছি।”
সুরলার রাগত উত্তর, ” পাত্র যেমনই হোক, অন্তত এই বদলোক থেকে ভালো হবে এটাই আমার বিশ্বাস। বিয়ের আগে না দেখে বিয়ের পর দেখে নিব সে কেমন।”
“পাঠাব তাকে?”
চলবে…