অজানা পর্ব-১৮

0
1009

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–১৮

“আআআ…”

ওয়াশরুমের ভিতরে পা রাখতেই ধপাস করে পড়ে গেলো আরশ। হঠাৎ করে কিছু না বুঝার আগেই পড়ে গেলো তাই ব্যথাটা অনেক পেয়েছে। কোমরে হাত দিয়ে উঠতে গেলেই আবার পড়তে নিলো কিন্তু পড়তে পড়তে দেয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিলো। ফ্লোরে তাকাতেই খেয়াল করলো ফ্লোরে সাবান মাখানো। এটা যে আরিবা করেছে তা বুঝতে আরশের এক মিনিটও সময় লাগেনি। রাগে চেয়াল শক্ত হয়ে এলো। কপালের রগ ফুলে উঠেছে। দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে দাড়িয়ে পড়লো। ইচ্ছে করছে এখনি গিয়ে আচ্ছা মতো ধোলাই দিলে। কিন্তু নাহ! আরিবাকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবেনা যে, ওর ফাঁদে পড়েছে। হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই আরশ রহস্যময় হাসি দিলো। ঠোঁট বাকিয়ে হেসে আরশ মন দিয়ে গোসল করতে লাগলো।

নিজের ঘরে পায়চারি করছে আরিবা। খুশিতে ওর নাচতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু নাহ্ এখন নাচা যাবেনা তাহলে বুঝে যাবে। নিজের উৎসাহ টা একটু দমিয়ে রাখলো। আয়েশ করে বিছানায় বসলো। গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো। “আরশ কি এসেছে? নাকি এখনও বাইরে? প্রতিদিন আর বাইরে যায়না আজ আমি একটু নাচবো আর আজেই তার আসার নাম নেই। কখন যে খুশির আওয়াজ টা পাবো? দেখে আসি আসছে কিনা?” এসব বলেই আরিবা খাট থেকে নামলো। সযত্নে আস্তে করে দরজাটা খুললো। মাথাটা হালকা বের করে উকি দিয়ে আরশের দরজার দিকে তাকালো। দেখলো ঘরে লাইট জ্বালানো। তারমানে এসেছে? দরজা আটকেই খুশিতে দুইটা লাফ দিলো। আবার ভাবলো এত লাফালে বুঝে যাবে। তাই চুপচাপ পড়ার টেবিলে বসলো। পড়ার টেবিলে বসলেও ওর কান পাশের রুমের দিকে। অনেক ক্ষন কেটে গেলো কিন্তু কোনো আওয়াজ আসছেনা। আরিবার মেজাজ বিরক্ত হয়ে এলো। ঠাস করে বইটা বন্ধ করে। বেলকনিতে চলে গেলো। আরশ এখনও পড়ছেনা কেনো তাই আরিবার মেজাজ খুব খারাপ। বিরক্তি নিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। কিন্তু শান্তিতে ওর আকাশ দেখা হলোনা। ফোনটা বেজে উঠলো। আরিবা বিরক্তি নিয়ে টেবিলের উপর ফোনের দিকে তাকালো। এখন কে ফোন করলো? তাকে শান্তিতে একটু চাঁদও দেখতে দিবেনা? আরিবা ওকে বকতে বকতে ফোনের কাছে গেলো। ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরলো কটা করা কথা শুনাবে বলে। তার আগেই ফোনের ওপাস থেকে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো।

“কিরে? ফোন ধরতে এত সময় লাগে? কই ছিলি?”

নেত্রার এতগুলো প্রশ্ন শুনে আরিবা কপাল কুচকালো। এমনিতেই মেজাজ খারাপ আর এ আবার ফোন করে আরও খারাপ করে দিচ্ছে। আরিবা রাগি গলায় বললো।

“জ্যোৎস্না বিলাস করতে ছিলাম আর তুই আমায় বিরক্ত করছোছ। আর এখন আবার জিজ্ঞাসা করোছ কই ছিলাম?”

নেত্রা অবাক হলো। ও কি চোখে কম দেখে? একটু আগে দেখে এলো আকাশ অন্ধকার। চাঁদের কোনাও দেখা যায় না তো জ্যোৎস্না আসবে কোথা থেকে? ও কি ভুল দেখছে, নাকি এখন চাঁদ উঠছে? এসব ভেবেই নেত্রা শিওর হওয়ার জন্য জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। অন্ধকারে আকাশেই তো দেখা যায় না। এ চাঁদ দেখে কিভাবে? আবার জ্যোৎস্না বিলাস? নাকি ওদের ওখানে চাঁদ দেখা যায়? নেত্রা কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।

“তোদের ওখানে চাঁদ উঠছে?”

আরিবা বিরক্তি নিয়ে বললো।

“তোরা কোন দেশে থাকিস রে?”

নেত্রা বোকা বনে গেলো। ও কোথায় থাকে আরিবা জানে না? ভুলে গেলো নাকি? অবাক হয়ে বললো।

“আমরা কোথায় থাকি তা ভুলে গেছোছ? তোর শর্ট টাইম মেমরি লসের সমস্যা আছে?”

আরিবার চরম মেজাজ খারাপ হলো। ধমক দিয়ে বললো।

“আমাদের এখানে চাঁদ উঠলে তুই দেখতি না? তোদের বাড়ি তো অন্য দেশে না যে দেখবিনা। যত্তসব হুহ্!”

“তাহলে তুই বললি কেনো জ্যোৎস্না বিলাস করোছ? চাঁদ না থাকলে জ্যোৎস্না কই পাবি?”

“মনে মনে, স্বপ্নে ভাবি বুঝলি? এবার ফোন রাগ তো।”

“এই শোন যা বলতে ফোন দিছি! ”

“হুম বল!”

“ওই তমা আমাদের খুব বিরক্তি করে। আরশ ভাইয়া কে বললে ভাইয়া থ্রেট দিলে আর কিছুই বলতোনা উল্টো সালাম দিতো।”

আরিবা এবার ক্ষেপে গেলো। ওর কথা বলছেনা আরশের কথা বলছে? ও কি কম পারে তমা কে শায়েস্তা করতে? ওর কাছেও আরশ ভালো? ওর সাথেও কথা বলবোনা। ঝাড়ি মেরে বললো।

“তোর ইচ্ছা হলে তুই নিজে বল। আমি পারবোনা। বাই!”

কথাটা বলেই আরিবা ফোন কেটে দিলো। রাগে ফোনটা খাটের ওপর জোরে ফিকে মেরে ফেলে দিলো। নিজেও ধাম করে বিছানায় বসে নেত্রাকে বকতে লাগলো।

“রিবা! এই রিবা! তাড়াতাড়ি আমার রুমে আয়।”

আরশ নিজের রুম থেকে জোরে আরিবাকে ডাকলো। আরশের ডাক শুনে আরিবা চমকে উঠলো। ভয় পেয়ে লাফ মেরে খাট থেকে নেমে পড়লো। এদিক ওদিক পায়চারী করছে আর নখ কামড়ে ভাবছে। “আমায় ডাকছে কেনো? খবিশটা কি বুঝে গেলো? হায় আল্লাহ বুঝলো কিভাবে? এবার আমার অবস্থা খারাপ করে দিবে। আল্লাহ রক্ষা করো।”

“তোকে ডাকি শুনোছ না? আসতে কয়দিন লাগে? নাকি তোর রুমে গিয়ে বরন করে আনতে হবে?”

আরশ রেগে কথাগুলো বলছে। এবার আরিবা আরও ভয় পেলো। কিন্তু কি করবে তাই আস্তে আস্তে আরশের রুমের দিকে চললো। আরশের রুমের বাইরে দাড়িয়ে আরিবা ভিতরে উকি দিলো। দেখলো আরশ ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ভিজা চুল মুছছে। মানে গোসল করে বের হইছে। এজন্যই ওকে ডাকছে। তারমানে আরশ পড়েছে। এসব ভেবেই আরিবা একটু ড্যান্স দিলো। ওর যা হওয়ার হবে। আরশ তো পড়ছে, এতেই হবে। নাচা বন্ধ করে আবার ভিতরে উকি দিলো। গলাটা ঠিক করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরশ দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“এমন উঁকি ঝুঁকি মারোছ কোনো? ভিতরে কি নিমন্ত্রণ করে আনতে হবে?”

আরিবা কিছু বললো না ভয়ে ভয়ে সামনে আগাতে লাগলো।

“ওমামামামা….”

রুমের মধ্যে পা দিতেই ধপাস করে পা পিছলে পরে গেলো আরিবা। স্বপ্নেও ভাবেনি এমন হবে। তাহলে জীনেও এখানে আসতো না। কোমড়ে হাত দিয়ে বোকা চোখে আরশের দিকে তাকালো। আরশ তাড়াহুড়া করে ওকে উঠালো। উঠাতে উঠাতে বললো।

“দেখে চলতে পারোছ না? কার্পেটে বেঝেও পড়ে যাছ? তোকে দিয়ে কি হবে বল? তুই জাতির অন্য ধ্বংস করা ছাড়া তো কিছুই পারবিনা।”

আরিবা ঠোঁট উল্টে কেঁদে কেঁদে বললো।

“আমি মোটেও কার্পেটে বেঝে পড়িনি। তুমি এখানে কিছু দিছো। আমার কোমর শেষ, পা ও গেছে!”

“চুপ! ফালতু কথা বলবিনা। আমি কিছুই দেইনি।”

আরিবা কিছুই বলতে পারলোনা। কি বলবে তা খুজতে লাগলে।

“কিরে আরশ আরিবা চিৎকার দিলো কে…”

মিসেস তারিন কথাটা বলতে বলতে আসতে ছিলেন। কিন্তু আরিবাকে পড়ে থাকতে দেখে দৌড়ে ওর কাছে আসলেন। ওকে উঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আরিবার মা আসতে আসতে বললেন।

“কিরে পড়লি কি করে? কোথায় ব্যাথা পাইছোছ?”

আরিবা কেঁদে কেঁদে বললো।

“আম্মু আমি মোটেও পড়ে জাইনি আরশ ভাইয়া ফেলে দিছে।”

মিসেস তারিন আরশের দিকে রাগি চোখে তাকালেন। মিসেস আঞ্জুমান আরশের দিকে তাকাতেই ও বললো।

“দেখো তোমরা! আমি কত দূরে ওকে কি করে ফালাবো বলে? আমি ওকে টার্চ করিনি সত্যি। ”

তারা দেখলো ঠিকই আরশ অনেক দূরে। ওর কথাটাও সত্যি। আরিবা ঠোঁট উল্টে কেঁদে কেঁদে বললো।

“আম্মু এখানে কিছু ছিলো। সত্যি কিছু ছিলো!”

“চেয়ে দেখো কার্পেট! শুধু কার্পেট আছে। ও নিজে লাফাতে গিয়ে পড়ে গেছে আর এখন আমার দোষ দিচ্ছে। তোমরা তো জানো ও আমার পিছেই লেগে থাকে।”

মিসেস আঞ্জুমান আরিবার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো।

“সব সময় লাফালাফি। একটু দেখে চললে কি হয়? বড় হইছোছ না? তোর বাবা আজ আসুক ঠ্যং ভেঙে ঘরে রেখে দিতে বলবো।”

আরিবা অসহায় দৃষ্টিতে ওর মায়ের দিকে তাকালো। কিছু বলবে তার আগেই আরশ বললো।

” তোমরা যাও। ওকে আমি দেখছি।”

আরিবার মা ওর দিকে গরম চোখে তাকিয়ে চলে গেলেন। আরিবা হতাশ হয়ে বসে রইলো। আরশ ওর কাছে এসে ভ্রু কুচকে তাকালো। আরিবা ওর দিকে তাকালো। আরশ ওকে উঠাতে উঠাতে বললো।

“আহ! তোর জন্য কষ্ট লাগছ রে। কেনো যে সুচ ফুটাতে এসে সাপের কামড় খাছ আমি বুঝিনা।”

আরিবা কিছুই বললোনা। ও জানে আরশ বদলা নিচ্ছে। তাই চুপ চাপ বসে রইলো। আরশ ওকে টেনে তুললো। খাটে ধাক্কা মেরে ফেলে এমন কথা বললো যা শুনে আরিবা ওর দিকে অবাক চোখে তাকালো। মনে বললো “এটা কি বললো আরশ ভাইয়া? নাহ! এটা আমি কিছুতেই করবো, না কিছুতেই না।”

ইনশাআল্লাহ চলবে……..

(রি-চেইক করিনি। ভুলত্রুটি মাফ করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here