#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–২০
💖
কলেজের মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে আরিবা, নেত্রা, শান্তা, তূর্য ও শাওন। ওদের আড্ডার মধ্য মনি হচ্ছে আরশ। ওদের মাঝে আরশকে নিয়ে কথা হচ্ছে। কাল বাড়ি গিয়ে আরশ আরিবার সাথে যা করছে তা ওদের বলছে। আরিবার কথা শুনে ওর বন্ধুরা বলছে আরশ ওকে ভালোবাসে। কিন্তু আরিবা তা মানতে রাজি না। আরশ তো ওর সাথে শুধু ঝগড়া করে ওকে মারে। তাহলে ভালো কি করে বাসে? ভালোবাসলে তো খুব ভালো ব্যবহার করে। ওর এসব কথা শুনে নেত্রা বললো।
“তাহলে ভাইয়া অন্য ছেলেদের সাথে তোকে কথা বলতে দেয়না কেনো?”
“ছেলেরা খুব খারাপ তাই ভাইয়া আমায় সেইফ করে। আমার নামে খারাপ কিছু উঠলে তো তারও অসম্মান হবে তাইনা? তাই সে আমায় সেইফ করে। দুনিয়ার খারাপ শুধু নিজেরটাই বুঝে।”
আরিবার কথা শুনে নেত্রা বললো।
“তোর কিছু হলে ভাইয়া অমন অস্থির হয়ে যায় কেনো?”
“কোথায় অস্থির হয়?”
“আমি তো দেখছি তুই একবার স্কুলে বেহুশ হয়ে পড়ার পর ভাইয়া কত পাগলের মতো করছে। তাছাড়া এমনিতেও তোর ব্যপারে ভাইয়া খুব সচেতন।”
আরিবা মুখ ভেংচি দিয়ে বললো।
“আরে এ তো এমনিতেই। আমি তার বোন হই তাই।”
তূর্য মুখ বাকিয়ে হেসে বললো।
“তাহলে কাল অমন করলো কেনো? আমরা তোর বন্ধু আমাদের সাথে চললে তো তার জেলাস হওয়ার কথা না। তাহলে হলো কেনো?”
“আব.. উম..”
আরিবা কিছু বলতে পারলোনা। আমতা আমতা করতে লাগলো। শাওন হেসে বললো।
“কি হলো? মুখ থেকে কথা বের হয়না কেনো? আমরা ঠিকই বলছি। তুই পরীক্ষা করে দেখিস!”
“আমার পরিক্ষা করা লাগবেনা ভাই। যা হচ্ছে হোক। এসব বাদ দে! আমরা নিজেদের মত করে গল্প করি।”
শান্তা ওর সাথে তাল মিলিয়ে বললো।
“হ্যাঁ ঠিকই বলছোছ। তখন থেকে কিসব অন্যদের কথা বলতাছোছ। চল মজা করি।”
ওরা সবাই মিলে নিজেদের মত করে গল্প করতে লাগলো। কখনো হাসাহাসি তো কখনো মারামারি। বন্ধু মানেই মারামারি, সুখে দুঃখে পাশে থাকা। একটা ভালো বন্ধু হলে জীবনে হয়তো মনের কথা বলার জন্য আর কাউকে লাগেনা। একজন বন্ধু অনেক ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি দিতে পারে। একজন বন্ধু চাইলে লাইফটাকে সাজিয়ে দিতে পারে আবার চাইলে মৃত্যুর মুখেও ঠেলে দিতে পারে। শত্রুর চক্রান্ত থেকে সহজেই বের হওয়া যায় কিন্তু বন্ধুর চক্রান্ত থেকে কখনোই বের হওয়া যায়না। কেননা তারা আমাদের সব বিষয় অবগত। তারা জানে কোথায় আঘাত করলে সব থেকে ক্ষতি করা যাবে। সেখানেই আঘাত করে। দূর্বল জায়গায় আঘাত করলে সব মানুষেই পঙ্গু হয়ে যায়। তাই কাউকেই নিজের দূর্বলতার কথা বলতে হয়না। কিছু গোপনীয়তা থাকা ভালো। যা জানার জন্য সবারেই আগ্রহ থাকে। ওদের কথা বলার এক পর্যায়ে শান্তা বললো।
“শোন একটা ছেলে কালকেও আমাদের ফলো করছিলো। আজকেও করতেছে। ওই দেখ!”
শান্তা হাত দিয়ে গাছের আড়ালে ইশারা করলো। ওর হাত অনুসরন করে সামনে তাকাতেই দেখলো গাছের নিচে ৩টা ছেলে বসে আছে। একটা ছেলে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। ওরা কিছুই বুঝতে পারলো না। শান্তা আবার বললো।
“কাল আমরা যখন ফুচকা খেতে গিয়েছিলাম তখন ও আমাদের পিছনে পিছনে গিয়েছিলো। আরিবার দিকেও তাকিয়ে ছিলো।”
আরিবা কপাল কুচকে বললো।
“কি হতে পারে রে?”
“জানিনা আমরা! এমনি হয়তো। চল দোস্ত বাড়ি যাই! অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
নেত্রার কথা শুনে আরিবা ঘড়ির দিকে তাকালো। জিবে কামড় দিয়ে তাড়াতাড়ি করে দাড়াতে দাড়াতে বললো।
“হায় আল্লাহ! অনেক দেরি হয়ে গেছে। আরশ ভাইয়া বকবে। বডিগার্ডরা অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে রে, যাই আমি! চল নেত্রা!”
সবাইকে বিদায় দিয়ে সামনে আগালো নেত্রা ও আরিবা। একটু আসতেই একটা ছেলে ওদের সামনে দাঁড়ালো। ওরা তাকিয়ে দেখলো একটু আগে গাছের নিচে যেই ছেলেটা ওকে ফলো করছিলো সেই ছেলেটাই। আরিবা ভ্রু কুচকে বললো।
“আপনি কে? আমাদের পথ আটকে দাড়ালেন কেনো?”
ছেলেটা আরিবার সামনে এসে দাড়ালো। নিজের গলাটা ঠিক করে বললো।
“আমি নাহিদ! এই কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছি। ইংরেজিতে অনার্স করছি। ”
শেষের কথাটা একটু ভাব নিয়ে বললো। ছেলাটার কথা শুনে আরিবা বিরক্তেতে কপাল কুচকে নেত্রার দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেঁপে বিড়বিড় করে বললো।
“মনে হয় আমরা অশিক্ষিত! কি ভাব নেয় দেখ! ইচ্ছা করছে বুড়িগঙ্গায় চুবিয়ে পঁচা পানি সব খাওয়ে আনি।”
আরিবা আস্তে বলছে বিধায় শুনতে পায়নি। তাই আরিবার দিকে একটু এগিয়ে ৩২পাটি দাঁত বের করে বললো।
“কি বললা? শুনিনি! একটু জোরে বলো?”
ওর দাঁত কেলানি দেখে আরিবা আরও বিরক্তি হলো। তবুও মুখে জোর পূর্বক হেসে বললো।
“বলছি আপনার বায়োডাটা আমাদের বলছেন কেনো? আমরা তো কোনো চাকরির ইন্টারভিউ নিচ্ছি না। যদিও নিতাম তবে আপনাকে প্রথমেই বাতিল করে দিতাম।”
কথাটা বলেই আরিবা সামনে আগালো। নাহিদ আবার ওর পথ আগলে দাড়িয়ে বললো।
“তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে।”
আরিবা নেত্রার দিকে তাকালো। অতঃপর নাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো।
“আপনার সাথে আমার কোনো কথা নাই। আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা।”
“একটুখানি জরুরি কথা। বেশি না একটুখানি!”
নেত্রা রাগি চোখে বললো।
“এই নাহিদা! আমার বান্ধবী বলছেনা ও কথা বলতে চায়না! বিরক্ত করছেন কেনো? সবাইকে ডাকবো কিন্তু?”
নেত্রার কথা শুনে আরিবা ঠোঁট চেঁপে হাসলো। নাহিদ লজ্জা পেয়ে এদিক ওদিক তাকালো। অতঃপর গলাটা ঝেড়ে আরিবার দিকে লজ্জা লতিয়ে বললো।
“তোমাকে আমি কাল প্রথম দেখেছি। কাল প্রথম দেখেই তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার চোখে যাদু আছে। আমায় ভালোবাসবে?”
ওর লতানো দেখে নেত্রা আর আরিবা হেসে কুটি কুটি। একটা ছেলে দোতালা থেকে ওদের কাহিনি দেখছে আর হাসছে। ছেলেটার নজর আরিবার দিকে। আরিবার মুখটা ওর বড্ড ভালো লাগে। কাল এই বাচ্চা বাচ্চা মুখটা দেখেই থমকে গিয়েছিলো। এক দৃষ্টিতে আরিবার কাহিনী দেখছে। আরিবা কপাল কুঁচকে বললো।
“ভাইয়া! আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারি এক শর্তে!”
একথা বলতেই নাহিদ আরও লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। আরিবা আর নেত্রা ভালোই মজা নিছে। লজ্জায় মাথা নিচু করে বললো।
“আমি সব শর্তে রাজি!”
“ওহ! শর্তটা খুব ছোটো। আমি ভালোবাসার একটা সংজ্ঞা পারি। আপনার ভালোবাসার সংজ্ঞা যদি আমার সংজ্ঞার সাথে মিলে তাহলেই ভালোবাসবো!”
নাহিদ প্রথমে অবাক হলো। যদি না মিলে? পড়ে ভাবলো ভালোবাসার সংজ্ঞা তো একেই। তাই নির্দ্বিধায় লজ্জা নিয়ে বললো।
“ভালোবাসা হচ্ছে দুটি মনের মিলন। যেখানে থাকে স্বর্গীয় সুখ হাশি আনন্দ। ভালোবাসা হচ্ছে সুখে দুঃখে পাশে থেকে তা ভাগ করে নেওয়া।”
“হয়নি!”
আরিবার কথা শুনে নাহিদ অবাক হয়ে তাকালো। আরিবা মুচকি হসে বললো।
“ভালোবাসার সংজ্ঞা এত বড় না। একটুখানি বুঝছেন?”
নাহিদের মনটাই ভেঙে গেলে। হতাশ হয়ে বললো।
“তোমার সংজ্ঞাটা বলো?”
“যে বাসায় ভালো ঘুম হয় তাকেই ভালোবাসা বলে। সিম্পল!”
কথাটা বলেই আরিবা মুচকি হেসে সামনে চললো। নাহিদ হা করে তাকিয়ে আছে। ও রিয়াকশন দিতেই ভুলে গেছে।
——————————
শাহীন আর আরশ জিসানের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে। ভাবছিলো জিসানকে কলেজে এসে জিজ্ঞাসা করবে কেনো তৃনাকে সাহায্য করেছিলো। কিন্তু জিসান আজ কলেজেই যায়নি। ওর ফোনটাও অফ করে রাখছে। তাই বাধ্য হয়ে ওরা জিসানের বাড়ি আসছে। কলিং বেল চাপতেই জিসানের মা এসে দরজা খুললো। আরশ তাকে দেখে হাসি মুখে বললেন।
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি! কেমন আছেন?”
জিসানের মা ওদের দেখে খুশি হলেন। হাসি মুখে বললেন।
“ওয়ালাইকুম সালাম। আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?”
“আমরাও ভালো আছি।”
“আরে বাইরে দাড়িয়ে আছো কেনো? ভিতরে আসো। তোমাদের কথা খুব মনে পড়ে। মাঝে মাঝে এই মাকে দেখতে আসতে পাড়োনা?”
আভিমান করে কথাটা বললেন জিসানের মা। আরশ মুচকি হেসে বললো।
“আন্টি পড়ালেখা নিয়ে অনেক বিজি জানেন তো? আমরা আসার চেষ্টা করবো। আন্টি জিসান কই?”
“জিসান উপরে ওর রুমে আছে যাও! শোনো, আজ না খেয়ে যেতে পাড়বেনা তোমরা। তোমাদের পছন্দের সরিষা ইলিশ রান্না করতাছি।”
শাহীন হাসি মুখে বললো।
“আমরা আপনার হাতে সরিষা ইলিশ না খেয়ে যাবও না আন্টি। আমার তো এখনি খিদে পেয়ে গেছে।”
“আচ্ছা উপরে যাই আন্টি!”
আরশ একথা বলে উপরে চললো।
জিসান ওদের দেখেই চমকে গেলো। আরশ ওকে দেখেই বললো।
“কলেজে গেলি না কেনো? তোর ফোন বন্ধ করে রাখছোছ কেনো?”
জিসান আমতা আমতা করে বললো।
“শরীরটা একটু খারাপ। আর ফোনটা ডিস্টার্ব দিচ্ছে।”
শাহীন ভ্রু কুচকে বললো।
“অজুহাত বাদদে। আগে বল তৃনাকে সাহায্য করেছিলি কেনো?”
জিসান মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। আরশ রাগি গলায় বললো।
“তৃনার সাথে কি সম্পর্ক তোর? যে আমাদের না জানিয়ে ওকে সাহায্য করলি? আমাদের বললে কি হতো? আমরা তোর বন্ধু না?”
জিসান আহত দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকালো। ওর তাকানো দেখে আরশ অন্য দিকে ঘুরে গেলো। শাহীন বিরক্ত নিয়ে বললো।
“ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই মামা! আমরা তোর বন্ধু না, তা প্রমান করে দিছোছ।”
জিসান আমতা আমতা করে বলতে শুরু করলো। ওর কথা শুনে অরশ অবাক হয়ে তাকালো। শাহীন আর আরশ একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে। আর ভাবছে এটা কি করে সম্ভব?
💝
ইনশাআল্লাহ চলবে…..