অজানা পর্ব-২১

0
820

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–২১

💖

ভালোবাসা একটা শব্দহীন অনুভুতির নাম। এই অনুভুতি সবার মনেই জন্ম নিতে পারে। না সময় না বয়স। কিছুই মানে না এই ভালোবাসা। ভালোবাসার মানুষটা যত খারাপেই হোক তবুও তার প্রতি অনুভূতি নিঃশেষ হয়ে যায় না। সবার কাছে যে মানুষটা খারাপ কুৎসিত সেও তার ভালোবাসার মানুষের চোখে খুব ভালো। পৃথিবী জাগতিক নিয়মে চলে। কখন কি হয় সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। যে মানুষটাকে কখনও দেখেনি তার জন্যও অনুভুতি তৈরি হতে পারে। সত্যি বলতে ভালোবাসার নিদির্ষ্ট কোনো সংজ্ঞা হয়না। ভালোবাসার সংজ্ঞা প্রত্যেক মানুষের কাছেই আলাদা আলাদা। যে যেভাবে ভালোবাসে, সে সেভাবেই ভালোবাসার সংজ্ঞা সাজায় সেভাবেই হয়। সবার ভালোবাসা যেমন আলাদা তেমন তাদের প্রকাশটাও ভিন্ন। একজনের ভালোবাসার সাথে আরেক জনের ভালোবাসা কখনোই মিলাতে যাবেন না। কারন সবার প্রকাশটাই নিজেদের মতো করে আলাদা আলাদা। সবার কাছে খারাপ মানুষটাও তার ভালোবাসার মানুষের কাছে সবসময় ভালো। তাই যে কাউকেই ভালো লাগতে পারে।

গালে হাত দিয়ে গম্ভীর মুখে বসে আছে আরশ ও শাহীন। ওদের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে জিসান। আরশের মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। জিসান তখন বলছে ও তৃনাকে ভালোবাসে। তৃনাকে কখন কিভাবে ভালোবাসলো সেটাই ওদের মাথায় ঢুকছেনা। এমন একটা মেয়েকে ওর ভালো লাগলো কি করে বুঝতে পারছেনা। হয়তো ভুল শুনছে শিওর হওয়া প্রয়োজন। তাই আরশ নিরবতা ভেঙে গলাটা ঠিক করে বললো।

“জিসান! আমরা কি ভুল শুনছি? নাকি তুই কি সত্যি সত্যি তৃনাকে ভালোবাসোছ?”

জিসান মাথাটা উচু করে আরশের দিকে তাকালো। ও কিছু বলবে তার আগেই শাহীন বললো।

“আমরা ভুল শুনছি। আমাদের বন্ধু ওমন বাজে মেয়েকে ভালোবাসতেই পারেনা। ও একটা চরিত্রহীন মে…”

কথাটা শেষ করার আগেই আরশ হাত উচু করে ওকে থামিয়ে দিলো। জিসান করুন চোখে ওদের দিকে তাকালো। আরশ শাহীনের দিকে এগিয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“মুখে লাগাম দে! কারো সামনে তার ভালোবাসার মানুষের নামে খারাপ কিছু বললে কতটা খারাপ লাগে সেটা তুই বুঝবিনা। আমি বুঝি কারন আমি একজনকে ভালোবাসি। ভালোবাসা কখনও ভালো খারাপ দেখে হয়না। কখন কি কারনে হয় সেটা কেউই বলতে পারেনা। যেদিন তুই কাউকে ভালোবাসবি তখন বুঝবি। ভালোবাসার মানুষ হোক বা না হোক। কোনো মেয়েকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা ঠিক না। কারন একটা ছেলের স্পর্শ ছাড়া একটা মেয়ে চরিত্রহীন হয়না। মেয়েরা সব সময় আমাদের কাছে সম্মানের যোগ্য। ওরা বিশেষ করে চার দিক থেকে আমাদের কাছে সম্মানের যোগ্য। মা হিসেবে, বোন হিসেবে, বউ হিসেবে আর মেয়ে হিসেবে। ওদের সবসময় সম্মান করবি বুঝলি?”

শাহীন নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বললো।

“হুম”

আরশ জিসানের দিকে তাকালো। এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসলো। ওর কাঁদে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো।

“মাথা নিচু করার দরকার নাই দোস্ত। ভালোবাসা যে কারো প্রতি আসতে পারে। তুই নিজের ভালোবাসা দিয়ে ওকে তোর মতো করে নিবি। আচ্ছা বলতো কবে থেকে ওকে ভালোবাসোছ? তাছাড়া আমাদের বললি না কেনো? আমাদের থেকে কেনো লুকাইছোছ?”

জিসান হতাশ চোখে চেয়ে বললো।

“প্রথম দিন কলেজে ঢোকার সময় আমার সাথে কথা বলে। ওর ক্লাস কোনটা সেটা জিজ্ঞাসা করছিলো। এইদিন থেকেই ওকে ভালোলাগে। আস্তে আস্তে বড় অনুভূতির জন্ম হয়।”

শাহীন লাফিয়ে এসে জিসানের পাশে বসলো। ওর পিঠে ঘুষি মেরে বললো।

“শালা! ডুবে ডুবে পানি খাও আর আমাদের বলো না? তোকেও আর আমি কিছু বলবোনা। তোর সাথে কথাই নাই। তুই বন্ধু জাতের নাম ডুবাবি।”

জিসান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।

“তৃনা তো আরশকে ভালোবাসে তাই বলিনি। ও এখনো আমাকে ভালোবাসে না। কখনোও আমাকে ভালোবাসবে না।”

আরশ হালকা ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বললো।

“সেটা আমার উপর ছেড়ে দে! দরকার পড়লে তুলে নিয়ে আসবো! তুই টেনশন মুক্ত থাক! আমি..”

আরশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর ফোন বেঁজে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে ধরতেই কপাল কুচকালো আরশ। রাগে কপালের রগ ফুলে উঠেছে। নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রেখে চেয়াল শক্ত করে বললো।

“আগামী এক ঘন্টার মধ্যে ওকে আমার গোডাউনে চাই।”

কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো। ওরা বুঝে গেছে কি হইছে তাই আর কিছু জিজ্ঞাসা করলোনা। ওরা তাড়াতাড়ি খাওয়া দাওয়া করে ওদের থেকে বিদায় নিয়ে যার যার গন্তব্যে চলে গেলো।

——————————–

গোডাউনে চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেঁধে রেখেছে নাহিদকে। সাথে চোখমুখও বেঁধে রেখেছে। নাহিদ কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলো হঠাৎ একদল লোক ওকে ধরে নিয়ে বসলো। ও বুঝতে পারছেনা ওকে কেনো এখানে বেঁধে রেখেছে। ওর জানা মতে ও কোনো অপরাধ করেনি। কেনো ঝামেলায় কখনও জড়ায়নি। তবে কে এখানে বেঁধে রেখেছে? কিছু জিজ্ঞাসা ও করতে পারছেনা মুখ বাঁধা। নড়াচড়া করারও শক্তি নাই এত শক্ত করে বেঁধেছে। শুধু মাঝে মাঝে এদের কথা শুনা যাচ্ছে। একেক জন একেক কথা বলছে। যেমন-

“আজ এর খবর আছে।”

“আমি বুঝিনা সবাইকে রেখে ম্যাডামের দিকে নজর কেনো দেয়? এদের ভয় নাই?”

“জানিনা ভাই আজ এর কি অবস্থা হবে!”

“কেউ কথা বলিস না। স্যার এমনিতেই রেগে আছে বেশি কথা শুনলে আমাদের উল্টো ঝুলিয়ে রাখবে।”

ওদের এসব কথা শুনে নাহিদ ভয় পেয়ে গেছে। গলা শুকিয়ে আসছে। কিন্তু ও বুঝতে পারছেনা ও কোন ম্যডামের পিছনে লাগছে। ওর ভাবনার মাঝেই ঠাস করে একটা থাপ্পড় এসে লাগলো ওর গালে। থাপ্পড়ে মনে হচ্ছে ওর দাঁত নড়ে গেছে। আরেকটা থাপ্পড় মেরে রাগি গলায় চিল্লিয়ে লোকটি বললো।

“জানোয়ার! তোরা আর মেয়ে খুঁজে পাছ না? আমার মায়পরীর দিকে ওইসব নজরে তাকাছ? তোর চোখ আজ তুলে নিবো। এই ওর চোখ খোল!”

একথা বলার সাথে সাথে ওর চোখ খুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নাহিদ ভয় পেয়ে গেছে। তবুও ভাবছে মায়াপরী টা কে? ও আবার কার দিকে নজর দিছে? এসব ভাবতেই আরিবার কথা মনে পড়লো। তার মানে আরিবার কেউ? নাহিদের ভাবনার মাঝেই ওর চোখ খুলে দিলো। সামনে তাকিয়ে ও অবাক হয়ে গেলো। লোকটি ইশারা করতেই ওর মুখটাও খুলে দিলো। নাহিদ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বললো।

“তানজীম হাসান আরশ চৌধুরী না? আমি কি ভুল করছি ভাইয়া?”

আরশ সাথে সাথে ওর গালে আরেকটা থাপ্পড় দিয়ে বললো।

” তুই কোন সাহসে ওকে প্রেমের কথা বলোছ হুম বল! ওর দিকে কেউ তাকালেই আমি তাকে মেরে হসপিটালাইজ করি আর তুই ওকে অফারও দিছোছ হুহ!”

বলেই নিজের ইচ্ছামতো ঘুষি দিতে লাগলো। শেষে চেয়ারে বসে নাহিদের দিকে তাকালো। নাহিদ কথা বলতে পারছেনা তবুও কষ্ট করে বললো।

“ভাইয়া আমি জানতাম না ও আপনার বোন। আমাকে মাফ করে দিন। আর হবে না আপনার মতো আজ থেকে আরিবা আমারও বোন।”

আরিবাকে বোন বলতেই আরশ আরও ক্ষেপে গেলো ঘুষি দিতে দিতে বললো।

“ও আমার মায়াপরী। আমার প্রান বুঝলি? আমার বউ ও!”

নাহিদ অজ্ঞান হয়ে গেলো। আরশ ওর লোকদের ইশারা করে চলে গেলো। ওরা জানে ওকে হসপিটালে ভর্তি করতে হবে। এসব ওদের মুখস্থ হয়ে গেছে।

——————————–

আরশের রুমে দৌড়াদৌড়ি করছে আরিবা। দৌড়াদৌড়ি বলতে আউলা জাউলা করছে ওর রুম। সোফার কুশন একেকটা একেক জায়গায় ফেলছে। বিছানার বালিশ বেডশিট উল্টা পাল্টা করে ফেলছে। অতঃপর কোমরে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়লো। বিছানার উপরে দেয়ালে টানানো আরশের ছবির দিকে তাকালো। সেদিকে আঙ্গুল তাক করে নিজে নিজেই বললো।

“মি. খাটাশ! আমাকে দিয়ে কাল মাথা টিপাইছো! আজ তার প্রতিশোধ নিবো হুহ। এসে আরাম করে ঘুমাবে তাইনা? আহ চান্দু আসো আসো। বিছানা রেডি করতেই আধা ঘন্টা লাগবে।”

পরক্ষনেই গালে হাত দিয়ে ভাবলো। এইসব কাজ তো সার্ভেন্টদের দিয়ে করাবে। তাহলে তো আরশের শাস্তি হবে না। পরক্ষনেই আরশের স্টাডি রুমের দিকে তাকালো। ওর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো। স্টাডি রুমে গিয়ে বুক শেলফ থেকে বই আউলা ঝাউলা করতে লাগলো। যাতে আরশ সহজে খুজে না পায়। হঠাৎ টেবিলের দিকে নজর যেতেই একটা ডাইরী দেখলো। ডাইরীর উপরের প্রচ্ছেদে সাদা ঝমকালো ড্রেস পড়া একটা পরীর ছবি। আরিবার কৌতুহল বেড়ে গেলো। ডাইরীটা হাতে নিতেই ভিতর থেকে সুন্দর একটা কলম নিচে পরলো। আরিবা উঠিয়ে কলমটা হাতে নিলো। ভাবলো কি আছে এই ডাইরীতে? যে এত দামী কলম দিয়ে লিখে ওর আরশ ভাইয়া? উত্তেজনা নিয়ে ডাইরীটা খুলবে তার আগেই কারো পায়ের শব্দ পেলো। আরিবা ভয় পেয়ে গেলো। আরশ আসছে নাতো? যদি আসে তো ও শেষ! ভয়ে আরিবা এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।

💝

ইনশাআল্লাহ চলবে……..

(রি-চেইক করার সময় পাইনি। ভুলত্রুটি মাফ করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here