অজানা পর্ব-২২

0
799

#অজানা
#লেখনীতে_তাশরিফা_খান
পর্ব–২২

💝

প্রতিশোধ জিনিসটা সবসময় অনেক খারাপ। অনেক সময় প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নিজেকেই এর শিকার হতে হয়। ভাগ্য সবসময় নিজের দিকে নাও থাকতে পারে। যদি ভাগ্য বিপরীত দিকে হয় তবে ঝামেলা জটিল হয়। যদি ঠিকমতো প্রতিশোধ নেয়ার ক্ষমতা তোমার না থাকে তবে চুপচাপ আঘাতটা নিজের মধ্যে হজম করাটাই শ্রেয়। যা করতে পারবেনা সেটা করতে কখনোই যেওনা এতে নিজেকেই পস্তাতে হয়। আরিবা ভয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছে। যদি আরশ হয় তবে আজ আবার ওর শাস্তি পেতে হবে। আরশের উপর প্রতিশোধ নিবে বলে যদি আজ এখানে না আসতো তবে শাস্তি পেতে হতো না। চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বললো। “রিবা রে রিবা! যা করতে পারোছ না তা করতে যাছ কেনো? আজ তো তুই গেছোছ। কি করবি এবার? আল্লাহ বাঁচাও এবার।”

“কিরে এখানে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছিস্ কেনো? রুমের এমন অবস্থা কেনো? তুই করছোছ?”

আরিবা ভাবছে আরশ এসেছে তাই ভয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। কিন্তু ওর মায়ের ধমক শুনে চোখ খুললো। খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। ওর মাকে ধরে নাচা শুরু করলো।

“আম্মাজান আম্মাজান চোখের মনি আম্মাজান! জন্ম দিয়েছেন আমায় আপনার… ”

“চুপ! এমন লাফালাফি করতাছোছ কেনো?”

আরিবা ওর মায়ের ধমক শুনে চুপ হয়ে গেল। ঠোঁট উল্টে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো। মিসেস আঞ্জুমান আবার বললেন।

“রুমের এমন অবস্থা করছোছ কেনো? হুম? এজন্যই তো আরশ বকে সাধে কি আর বকে!”

আরিবা গরম চোখে ওর মায়ের দিকে তাকালো। রাগি গলায় বললো।

“আম্মু! তুমি এমন কেনো? আমার আম্মু হয়েও অন্যের ছেলের পক্ষ নেও। কথাই বলবোনা যাও!”

কথাটা বলেই গাল ফুলিয়ে আরিবা চলে গেলো। পিছন থেকে আরিবার মা চিল্লিয়ে বললো।

“আজ আরশ কিছু বললে আমি তোকে বাঁচাবো না দেখিস! সার্ভেন্ট! তারাতারি রুমে আসো!”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরিবার মা সার্ভেন্ট দিয়ে আরশের রুম ঠিক করতে লাগলো।

—————————-

আরিবা ডাইরীটা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করে টেবিলে বসলো। ডাইরিটা হাতে নিয়ে ভাবলো এটা আসলেই আজব ধরনের। এমন প্রচ্ছেদের ডাইরী আরিবা কখনও দেখেনি। ডাইরীতে কি লিখা সেটা পড়ার জন্য ও উদগ্রীব হয়ে উঠলো। ডাইরীটা খুলেই অবাক হয়ে গেলো আরিবা। প্রথম পেইজে খুব সুন্দর আর্ট করে “মায়াপরী” লেখা আছে। আরিবার চোখ জুড়িয়ে গেলো। এত সুন্দর করে লেখা আর্ট ও কখনও দেখেনি। ও আরও কৌতুহলী হয়ে পড়লো। তাড়াহুড়া করে পৃষ্ঠা উল্টালো। সেখানে আরশের সুন্দর হাতের লেখা দেখে আরিবা ঠোঁট উল্টালো। ও অনেক চেষ্টা করেও এমন হাতের লেখা করতে পারেনি। ডাইরীর তারিখ দেখে আরিবা অবাক হয়ে গেলো। এতো আরও ৬ বছর আগের ডাইরী। আরশ তখন ইন্টারে পড়ে আর আরিবা ক্লাস সিক্স এ পড়ে। এত আগের ডাইরী এত সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে কেনো সেটাই ভাবছে আরিবা। এসব ভাবনা চিন্তা ফেলে ও পড়া শুরু করলো।

“মায়াপরী,
জানো তোমার নাম মায়াপরী কেনো দিয়েছি? কারন তুমি খুব সুন্দর। একজন পরীর মতো। তুমি সত্যি একটা পরী। যে আমায় সবসময় মায়া করে। তোমার ওই মায়া ভরা চোখের দিকে তাকালেই মায়ায় পরে যাই। তাই তুমি মায়াপরী। আমার মায়াপরী। এই নামে ডাকার অধিকার শুধু এবং শুধুই আমার।”

প্রথম পৃষ্ঠায় এটুকুই লিখা আছে। এটুক পড়ে আরিবা ভাবলো। মায়াপরীটা কে? কে আবার তাকে মায়া করে? এসব জানার জন্য আরিবা অপর পৃষ্ঠা উল্টালো।

“মায়াপরী
ডাইরীটা যে তোমাকে নিয়ে লিখছি তুমি কি তা জানো? জানো এতে কি লিখছি? এতে আমার না বলা অনুভূতি গুলো লিপিবদ্ধ করেছি। মনের অনুভূতি গোপন করাটা কতটা অসহ্য অনুভূতি তা তুমি জানবেনা। যে করে সেই বুঝে কতটা কষ্ট হয়। সেই ছোট বেলা থেকে জমিয়ে রাখা অনুভূতি আজ থেকে এখানে লিখবো। কেনো জানো? আমি আর এসব মনের মাঝে জমিয়ে রাখতে পারছিনা। বুকে খুব অসহনীয় ব্যথা অনুভব হয়। আমায় রাতে ঘুমোতে দেয়না। তাই এখানে লিখে মনটা হালকা করছি। প্রতিনিয়ত আমার মনের অনুভূতি গুলো এখানে জমা করবো। তোমার মিষ্টি মিষ্টি কথা, আউলা ঝাউলা দুষ্টামি প্রতিনিয়ত আমায় তোমার দিকে আরও টানে। আমার তোমাকে জালাতে ভালোলাগে। রাগ করে তোমার গাল ফুলানো আমার খুব ভালোলাগে। তোমার আমার ঘটে যাওয়া প্রতিটা মুহুর্ত লিপিবদ্ধ করবো। তুমি আমার হলে তোমাকে এই না বলা ভালোবাসা গুলো পড়তে দিবো।”

এটুক পড়ে আরিবা একটু থামলো। গালে হাত দিয়ে ভাবলো। মায়াপরীটা কে? নাম লেখা নাই কেনো? আরশ ভাইয়া সেই ইন্টারে পড়া থেকে একজন কে ভালোবাসে? সে কি আজও আছে? নাকি চলে গেছে? এসব জানার জন্য আরিবা অপর পৃষ্ঠা উল্টালো।

“তুমি আমার প্রথম অনুভূতি, খেলার ছলে মজার ভালোবাসা। তখনো বুঝিনি এটা ভালোবাসা, মনে হয়েছে এটা শুধুই মজা। বড় হওয়ার সাথে সাথেই বুঝতে পারি তুমি আমার ভালোবাসা, আমার জীবনের একমাত্র আকাঙ্খা, আমার উপকারী ঔষধ। যেটা না হলে প্রতিটা নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে মৃত্যুর যন্ত্রণা আমায় ঘিরে ধরে।”

“তোমায় কিছু সময় না দেখলে মনটা ব্যকুল হয়ে উঠে। ২দিন শিক্ষা সফরে গিয়ে একটুও মন টিকেনি আমার। আজ এসেই তোমাকে দেখতে ছুটে এসেছি। তোমায় দেখেই মনটা প্রশান্ত হলো। তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও যাবো না।”

“জানি আজ তোমায় কষ্ট দিয়েছি। তোমায় কষ্ট দিয়ে নিজেই কাঁদি। নিজেকেই কষ্ট দেই। কিন্তু তোমার চোখের পানি আমার ভালো লাগে। আমি তোমার মুখের হাসির কারন হতে চাই না, চোখের কোনে জমে থাকা জলের কারন হতে চাই। ঠোঁটের কোনের হাসিটা অনেকের জন্যই আসতে পারে কিন্তু চোখের জল! যেটা বিশেষ কারো জন্যই আসে।”

একুটু পড়ে পরের পৃষ্ঠা উল্টাতে যাবে তার আগেই কেউ ডাইরীটা টেবিল থেকে ছিনিয়ে নিলো। আরিবার মেজাজ খারাপ হয়ে এলো। রাগি চোখে কপাল কুচকে পিছনেই ফিরতেই রাগ উড়ে গেলো। আরশ রাগি লুক নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। জোর পূর্বক হেসে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। আরশ ওর দিকে দু’পা এগিয়ে রাগি গলায় বললো।

“কারো অনুমতি ছাড়া তার জিনিস ধরা ঠিকনা জানোছ না? আমার ডাইরী ধরছোছ কোন সাহসে?”

আরিবা কপাল কুচকে বিরক্ত নিয়ে বললো।

“কারো অনুমতি ছাড়া তার রুমে প্রবেশ করা ঠিকনা সেটা তুমি জানোনা?”

এটা বলায় আরশ আরও রেগে গেলো। আস্তে করে হাতে তালি দিতে দিতে আরিবার চারপাশে ঘুরলো। ওর সামনে দাড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললো।

“বাহ! ভালোই উন্নতি হয়েছে। কলেজে যেতে না যেতেই এত পরিবর্তন? আমার মুখে মুখে কথা বলছিস?”

শেষ কথাটা আরশ রেগে জোরে বলছে। আরিবা এবার ভয় পেয়ে গেলো। মাথা নিচু করে কাঁপাকাঁপা গলায় আস্তে করে বললো।

“আমি তো ঠিকই বলছি!”

আরশ রেগে আরিবার দিকে আগালো। পাশে টেবিলের উপরের ফুলদানি টা পাছার মেরে ভেঙে ফেললো। আরিবা ভয়ে কেঁপে উঠলো। আরশ রেগে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো।

“কতদিন বলছিনা আমার মুখের উপর কথা বলবিনা। আমার মুখে মুখে কথা বলাটা পছন্দ না। বলোছ কেনো হুম? বললি কেনো বল?”

আরিবা কিছুই বললো না। ভয়ে কেঁদেই দিলো। আরশের রাগরাগি শুনে মিসেস আঞ্জুমান ও মিসেস তারিন দৌড়ে এলো। সাথে কিছু সার্ভেন্ট ও এসেছে। ওদের দেখে আরশ আরও ক্ষেপে গেলো। রেগে চিল্লিয়ে বললো।

“তোমাদের এখানে কেউ ডেকেছে? কিছু হলেই দলবল নিয়ে চলো আসো? তামাশা দেখতে এসেছো? যাও এখান থেকে!যাও!”

আরশের কথা শুনে সব সার্ভেন্ট ভয় পেয়ে চলে গেলো। মিসেস তারিন ছেলের দিকে এগিয়ে বললেন।

“কি হয়েছে বাবা ক্ষেপছিস কে…”

মিসেস তারিনের কথা শেষ না হতেই আরশ রেগে বললো।

“যেতে বলছিনা? আমি সবাই কে বলছি। এক্ষুনি এখান থেকে যাও!”

মিসেস তারিন ও মিসেস আঞ্জুমান হতাশ হয়ে চলে গেলেন। আরিবা মাথা নিচু করে বসে বসে কাঁদছে। আরিবার কান্না দেখে আরশ একটু দম নিলো। এমনিতেও সবার উপর রাগটা ঝেড়ে ওর রাগ একটু কমছে। তবুও আরিবার দিকে এগিয়ে এমন কথা বললো। যা শুনে আরিবা কান্না রেখে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো।

💖

ইনশাআল্লাহ চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here