ভোরের_আলো পর্ব-৮

0
1009

#ভোরের_আলো
পর্ব-৮

রাতে ঘুমানোর আগ মূহূর্ত্বে অর্পিতার চুলে বিলি কেটে তেল দিয়ে দিচ্ছে মুক্তা। আশফাক ওর বাসা আর অফিসের এড্রেস এস এম এস করে দিয়েছে। এড্রেসগুলো বারবার দেখছে অর্পিতা। মুক্তা লক্ষ্য করলো ব্যাপারটা।

– কাকে দিয়ে খোঁজ নিবি কিছু ভেবেছিস?
– হুম।
– কাকে?
– কাউকে দিয়ে না। কোনো খবর টবর নিবো না।
– কেনো?
– উনার মাঝে কোনো খুঁত থাকলে তো আর উনি সেধে সেধে উনার এড্রেস দিতো না। যেভাবে হোক নিজের পরিচয় লুকানোর চেষ্টা করতো। উনি সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে চায়৷ এজন্যই উনি চাচ্ছেন উনার খোঁজটা যেনো আমি জলদি নিয়ে নেই।
– হুম। তা ঠিক বলেছিস। তাহলে কি হ্যাঁ বলে দিবি?
– হুম বলবো। তবে এখন না। আরাফাতের ঝামেলাটা মিটুক।
– সেটা তো মিটতে আরো অনেক দেরী।
– নাহ্। বেশি দেরী নেই। দেশে আসছে নেক্সট উইক।
– সত্যি?
– হ্যাঁ।
– কখন খবর পেলি?
– আধাঘন্টা আগে ফোন করে বললো।
– গরম খবর। অথচ আমাকে বললি না যে?
– রাতুল ভাইর সাথে কথা বলছিলি। তাই তোকে বিরক্ত করিনি।
– নেক্সট প্ল্যান কি?
– সুপ্তির সাথে কথা বলেছিলাম ঐ টাইপ মেয়ে কোথায় পাবো। ও বললো নিবিড় ভাইয়ার সাথে কথা বলে জানাবে।
– নিশাকে বলেছিস?
– হ্যাঁ।
– আরাফাত দেশে আসছে এটা কি সুমি আপু জানে?
– না এমন কোনো কথাই নাকি ঘরে হয়নি।
-তারমানে কাউকে জানায়নি।
– দেখি না আরো দু তিনদিন। সবে তো আজকে বললো নেক্সট উইক দেশে আসবে। হতে পারে আপুকে পরে বলবে। তবে না বলার চান্সই বেশি৷ আরাফাত ভালো করেই জানে এবার দেশে আসলে সুমি আপু ওকে আর ছাড়বে না। ধরে বেঁধে বিয়ে করবেই। আরাফাত তো ভুলেও সুমি আপুকে বিয়ে করবেনা। ওদের রিলেশনের কথা দুই ফ্যামিলি জানাজানি হয়ে গেছে। বিয়ের কথা অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে গেছে তাই আরাফাত পিছপা হতে পারছে না। আর নয়তো কবেই কেটে পড়তো।
– সুমি আপু অসম্ভব ভালোবাসে লোকটাকে৷ অথচ লোকটা আপুকে কতবড় ধোঁকা দিচ্ছে।
– কথা হচ্ছে গিয়ে আরাফাত এত ভালোবাসা পাওয়ার উপযুক্ত না। যোগ্যতার চেয়ে বেশিকিছু পেয়ে গেছে তাই মূল্য দিতে পারছে না।
– আশফাক ভাইকে কি বলবি?
– কোন ব্যাপারে?
– খোঁজ নিয়েছিস কি না?
– ঐটা কিছু একটা বলা যাবে।
– যদি তোর উত্তর জানতে চায়?
– দিবো না।
– উনি একটা নাছোড়বান্দা। তোর সাথে জোরাজোরি করতেই থাকবে।
– পরেরটা পরে বুঝা যাবে।

ডাইনিং টেবিলে বসে ডিনার সেড়ে নিচ্ছে আশফাক আর রিমন। খাওয়ার ফাঁকে কথা তুললো রিমন।

– আজ তোমাকে ৩০০ ফিটের ওদিকে দুইটা মেয়ের সাথে দেখলাম।
– তুই ওখানে গিয়েছিলি কেনো?
– বন্ধুদের সাথে গিয়েছিলাম। তোমার সাথে ছাইরঙা জামা পড়াটা অর্পিতা ছিলো তাই না?
– তুই জানলি কিভাবে ওটা অর্পিতা?
– আমার বন্ধু ফাহিমকে চিনো না? ওর পরিচিত।
– কেমন পরিচিত?
– এককালে অর্পিতার পিছনে ঘুরঘুর করতো। ভালোবাসতো আর কি।
– তারপর টাকা পয়সা খেয়ে ফাহিমকে রেখে চলে গেছে তাই না?
– তুমি কি ভালো কিছু ভাবতে পারো না? এত নেগেটিভিটি কেনো তোমার মাঝে? অর্পিতা যথেষ্ট ভালো একটা মেয়ে। বলতে পারো লাখে একটা। এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ওর মাঝে এসব বাজে স্বভাব নেই। ফাহিমকে ও কখনোই পাত্তা দেয়নি। ফাহিমের কোয়ালিফিকেশন, ফ্যামিলি স্ট্যাটাস সবকিছুই ওর সাথে খাপে খাপ ম্যাচ হয়। তবু ও রাজি হয়নি৷ তাছাড়া ফাহিম ওর সব খবর জানে। বহুদিন ঘুরেছে ওর পিছনে। কোথায় যায়, কি করে সব কিছুর পাই পাই রুটিন ফাহিমের জানা ছিলো। অর্পিতার কখনোই তেমন কোনো অভ্যাস ছিলো না।
– ওর প্রস্তাবে রাজি হয়নি কেনো?
– ফাহিমের প্রতি নাকি অর্পিতার তেমন কোনো টান কাজ করেনি তাই।

মুখ বাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আশফাক। রিমন ভালোই বুঝতে পারছে আশফাক ওর কথা বিশ্বাস করেনি। খানিকটা বিরক্ত হলো রিমন। কপালের মাঝে ভাঁজ পড়েছে ওর। হাত বাড়িয়ে ডালের বাটিটা হাতে নিলো সে। প্লেটে ডাল বাড়তে বাড়তে আশফাককে বললো

– ফাহিমের কাছ থেকে শোনার পর আমি মেয়েটার খোঁজ নিয়েছি। মেয়েটা যথেষ্ঠ ভালো৷ মেয়ের বাবার যে টাকা আছে তোমার মতো আশফাককে কিনে নিতে পারবে। অতএব মেয়েটা টাকার লোভে তোমার কাছে এসেছে এসব কথা মাথা থেকে বাদ দাও।
– তুই কেনো ওর খোঁজ নিয়েছিস?
– তোমার সাথে মেয়েটাকে দেখার পরই মনে হয়েছে মেয়েটা ভালো। খারাপ মেয়ে মানুষ দেখলেই চিনা যায়৷ তোমার অন্যান্য গার্লফ্রেন্ডদের মধ্যে কমবেশি সবাইকেই আমি দেখেছি। ওগুলো যে কোন স্বভাবের সেটা ওদের চালচলনেই বুঝা গেছে। এই মেয়েটা ওদের চেয়ে ডিফারেন্ট৷ তাছাড়া ফাহিমের কাছে শোনার পর মনে হলো পারসোনালি একবার ওর খবর নেয়া দরকার। আমি চাইনা কোনো ভালো মেয়ের লাইফ তোমার পাল্লায় পড়ে শেষ হোক। এজন্যই ওর খোঁজ নিয়েছি। ও ভালো ভাইয়া। আমি বলি কি তুমি ওকে বিয়ে করে ফেলো। তোমার লাইফ সাজানোর জন্য অর্পিতা একদম পারফেক্ট একটা মেয়ে।
– কথা বলার সময় বুঝেশুনে বলিস রিমন।
– বুঝে শুনেই বলছি। ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো। এভাবে আর কত? তোমার বয়স এখন ৩২। মেয়ে মানুষ নিয়ে আর কত ঘুরবে। এবার তো জীবনটা নিয়ে একটু সিরিয়াস হও।
– ও প্রচন্ড ধুরন্ধর একটা মেয়ে। সহজে ধরা দেয়ার মানুষ ও না। তাই তুই যা জেনেছিস সব ভুল। এই মেয়ে নিজের এলাকায় একদম সাধু হয়ে ঘুরে।
– আচ্ছা যাও মেনে নিচ্ছি তোমার ধারনা সত্যি। তাহলে একটা যুক্তি আমাকে বুঝাও তো। ওর তো টাকা, খাওয়া, পড়া কোনো কিছুর অভাব নেই। তাহলে কেনো অন্য ছেলেদের কাছ থেকে টাকা খাবে?
– এই টাইপ মেয়েগুলো এসব করে মজা পায়।
– জাস্ট মজা পাওয়ার জন্য এসব করবে?
– দুনিয়াটা খুব খারাপ রিমন। মানুষের মন মানসিকতাও জঘন্য। বিশেষ করে মেয়ে মানুষের।
– তুমি ভুল করছো ভাইয়া। প্লিজ নিজের অতীত থেকে বেরিয়ে এসে নিজের মাইন্ড ফ্রেশ করো। জীবনটাকে সাজাও ভাইয়া। আমার আর ভালো লাগেনা তোমাকে এভাবে দেখতে।

কলিংবেল বাজছে । কাজের লোক দরজা খুলে দিলো। রাত্রি এসেছে। মেজাজ চরমে পৌঁছে গেছে রিমনের। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে।

– এই জানোয়ারটাকে আবার ডেকে এনেছো?
– এই ছেলে তুমি কাকে জানোয়ার ডাকছো?
– আপনি চুপ থাকুন৷ আমি আমার ভাইয়ের সাথে কথা বলছি। বাসাটাকে তুমি বেশ্যাপাড়া বানিয়ে ফেলছো। এসব বাজে মেয়েকে নিত্যদিন ঘরে আনার মানে কি?
– মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ৷ আমাকে বেশ্যা ডাকছো কোন হিসেবে?
– যে মেয়ে হাজবেন্ড বাসায় রেখে এক্স বয়ফ্রেন্ডের সাথে রাত কাটাতে চলে আসে তাদের জন্য এরচেয়ে ভালো ভাষা আমি ইউজ করতে পারি না। আর এই ঘরে উঁচুস্বরে একমাত্র আমার ভাই আমার সাথে কথা বলার অধিকার রাখে। কোনো প্রস্টিটিউটকে আমি সে অধিকার দেইনি। আর তুমি, একটা কথা জেনে রাখো। এই মেয়ে যতদিন তোমার লাইফে থাকবে কখনোই তুমি লাইফটাকে সাজাতে পারবে না। ও একটা নোংরা। এসব নোংরা নর্দমার কীটের সাথে থাকলে অন্ধকারে ডুবে থাকতে হবে৷ আর অর্পিতার মতো ভদ্র মেয়ে কখনোই তোমার মতো একটা ছেলেকে ডিজার্ভ করে না৷ কারন তুমি এসব আজেবাজে মেয়েদের সাথে মিশে তুমি পুরোপুরি পঁচে গেছো।
(চলবে)

-মিম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here