ভরসার_দুহাত পর্ব_২২

0
356

#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_২২

মা চুপচার খাটের পাশে বসে চোখের জল ফেলছে। বুরাক মায়ের হাত ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে। বাবা হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে ছেলে আর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। বশির বিরক্ত হয়ে বলল-
“তুই বললি কিছুদিন পর যাবি। আজই যেতে হবে, এর মানে কি?”
বুরাক মায়ের হাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলল-
“আজ নয়তো কাল তো আমার ফিরতেই হবে ভাই।”
রেনু বলল-
“উমায়ের বলেছে তাই চলে যাচ্ছো তাই না?”
“প্লিজ রেনু, উমায়ের এর দোষ খুঁজতে হবে না।”
“দোষ দিচ্ছি না। তুমি ওর কারণেই চলে যেতে চাচ্ছো। সত্যি বললাম বলে গায়ে লাগলো তাই না?”
“তোমরা প্লিজ এতে উমায়েরকে দোষারোপ করো না। আমার আসল পরিচয় জানার পরও তার পরিবার ও সে আমার উপর বিশ্বাস করেছে। আমি উনাদের খুব সম্মান করি।”
“তাহলে বলো ফিরবে কবে।”
বুরাক লম্বা নিশ্বাস ফেলে মায়ের পাশে বসে আবার মায়ের হাত ধরলো।
“আম্মু, আমি তো বলেছি আমি খুব শীগগিরই ফিরবো তাই না? প্লিজ হাসিমুখে আমাকে বিদায় করুন।”
মা বুরাকের দিকে তাকাল। বুরাক মায়ের চোখের পানি মুছে আবার বলল-
“সবার থেকে বেশী আপনাকে ভালোবাসি আমি। আপনার কান্না আমার একদম পছন্দ না। প্লিজ এইবার কান্না বন্ধ করুন।”
মা বুরাকের মাথায় হাত রেখে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলো। মা এখন শব্দ করে কাঁদছে। বুরাক কিভাবে মায়ের কান্না বন্ধ করাবে বুঝতে পারছে না। মাকে কান্না করতে দেখে তার ভালো লাগছে না। তখনই শাফিয়া আসলো। পরিস্থিতি দেখে বশিরকে নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো-
“কি হয়েছে সবার?”
“বুরাক চলে যাচ্ছে তাই মা কাঁদছে।”
“বুরাক তো উমায়েরকে দিয়েই এসে পরবে।”
“সেটা আমরা জানি। কিন্তু আমার কেন যেন ভয় করছে। আচ্ছা আমি নাহয় উমায়েরকে দিয়ে আসি। বুরাক থাকুক মায়ের সাথে।”
“এটা কি করে সম্ভব বশির? উমায়ের এর বাবা যদি ভুল কিছু ভেবে বসে? উনি বুরাককে দিয়েছে এই দায়িত্ব।”
“তা জানি, কিন্তু আমার খুব ভয় করছে।”
“চিন্তা করো না, বুরাক উমায়েরকে দিয়ে ফিরে আসবে। আবার কিছুদিন পর আমাদের সবাইকে নিয়ে উমায়েরদের বাসায় যাবে।”
“কিন্তু কেন?”
“তুমি কি এখনো বুঝতে পারো নি বুরাক উমায়েরকে পছন্দ করে?”
“বুরাকের পছন্দ দিয়ে কি হবে? উমায়ের এবং তার পরিবারের মতামত ভিন্ন হবে আমার মন বলছে।”
“নেগেটিভ ভেবো না।”
বশির জবাব দিলো না। শাফিয়া বুরাককে উদ্দেশ্য করে বলল-
“বুরাক, উমায়ের তৈরী হয়ে গিয়েছে। টিফিনবক্সে আমি তোদের জন্য খাবার দিয়ে দিয়েছি খেয়ে নিস।”
বুরাক মাকে ছেড়ে ভাবীর দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল-
“আমার চয়েস খুব সুন্দর। সঠিক মানুষের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিলাম। এনি ওয়েজ, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ বিউটিফুল লেডি।”
“এত সুন্দর প্রশংসা আজ পর্যন্ত কেও করে নি। শুন, তারাতাড়ি ফিরে আসিস। আমরা অপেক্ষা করবো।”
“জি, আমি উমায়েরকে দিয়ে ফিরোজ আনোয়ার স্যারের সাথে কিছু কথা বলে ফিরে আসবো। আর তোমরা চিন্তা করো না উনি বলেছন আমার জন্য জব আছে একটা। যদি ঢাকায় থেকে কাজ করতে হয় প্রতি মাসে ১ বার হলেও দেখা করতে আসবো।”
বাবা ভারী কন্ঠে বললেন-
“দরকার নেই আর ঢাকায় থাকা। আমাদের নিজস্ব ব্যবসা আছে সেটা সামলাবে ফিরে আসার পর।”
বুরাক দাঁড়িয়ে বাবার দিকে এগিয়ে গেল। বাবার মুখে রাগ দেখা গেলেও চোখে ভালোবাসা দেখা যাচ্ছে। বুরাক হেসে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। ছেলে জড়িয়ে ধরায় বাবা থমকে দাঁড়িয়ে রইলো। এত বছর পর ছেলেকে বুকে পেয়ে উনার খুব শান্তি লাগছে। বুরাকের পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। বুরাক বাবাকে জড়িয়ে ধরে রাখার অবস্থাতেই বলল-
“আপনি দুনিয়ার সবচেয়ে বেস্ট বাবা। আপনাকে কখনো বলা হয়নি। আজ বলতে চাই, আপনাকে আমি অনেক ভালোবাসি আব্বু।”
বাবা চোখ গড়িয়ে পানি পরলো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
“আ..আমিও”
বুরাক আরো শক্ত করে ধরলো বাবাকে। বাবাকে কাঁদতে দেখে বশির কান্না থামিয়ে রাখতে লাগলো না। পরিবেশ শান্ত, শুধু চাপা কান্নার শব্দ ভাসছে চারপাশে। উমায়ের দরজা দিয়ে উঁকি দিয়ে সবাইকে দেখলো। তার খারাপ লাগছে হঠাৎ। রেনু উমায়েরকে দেখে ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। হঠাৎ করেই উমায়েরকে তার অপছন্দ হয়ে গেল। শাফিয়া উমায়েরকে দেখে ইশারায় বলল ভেতরে আসতে। উমায়ের ধীরপায়ে হেটে ভেতরে গেল। বুরাক বাবাকে ছেড়ে বাবার চোখ মুছে দিয়ে বলল-
“আমার সুপারম্যান আপনি। আর আমার সুপারম্যানকে কাঁদতে দেখলে আমার খারাপ লাগবে খুব। আমি ওয়াদা করছি খুব শীগগিরই ফিরে আসবো, ওকে?”
রেনু বলল-
“ভেবে নাও বুরাক, অন্যের জন্য আবার নিজের পরিবারকে করা ওয়াদা ভুলে যেও না।”
উমায়ের বুঝতে পারলো রেনু তাকেই বলেছে কথাটা। কিন্তু সে গায়ে মাখলো না কথাটা। বুরাক রেনুর দিকে হেটে গিয়ে হাসিমুখে বলল-
“রেনু, আমার সাথে পরিচয় থাকা প্রত্যেক মানুষই আমার পরিবারের সদস্য। যার সাথে আমার পরিচয় হয় তার সাথে আমার একটা সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়। সেটা শত্রুতার হতে পারে, শ্রদ্ধার হতে পারে, স্নেহের হতে পারে আবার ভালোবাসারও হতে পারে।”
শেষের কথাটা বলে বুরাক আড়চোখে উমায়ের এর দিকে তাকাল। রেনু হেসে দিয়ে বলল-
“আচ্ছা, কিন্তু এখন এই ভালোবাসার মর্যাদা রাখলেই হলো।”
“সেটার চিন্তা তুই করিস না রে পাগলি।”
বলেই বুরাক রেনুর মাথায় আলতো করে টোকা মারলো। রেনু হেসে বলল-
“আমি জানি আমার চিন্তা করতে হবে না। কিন্তু চিন্তা আপনাআপনি মাথায় এসে ভর করে। কি করবো বল হাজার হলেও তুই আমার আমানত।”
বুরাক ফিক করে হেসে দিলো। উমায়ের শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রেনুর দিকে। রেনু বিরক্ত হয়ে বলল-
“হাসিস না বুরাক। তুই যত দ্রুত সম্ভব ফিরে আসবি।”
“আচ্ছা আসবো, এখন আমরা যাই তাহলে।”
মা বলল-
“যাই না বাবা, বল আসি।”
বুরাক মুচকি হেসে মায়ের হাত ধরে চুমু দিয়ে বলল-
“আসি”
মা আবারো বুরাককে জড়িয়ে ধরলো। বুরাক সবার থেকে বিদায় নিয়ে রিকশা খোঁজার জন্য বেরিয়ে গেল। উমায়ের দাঁড়িয়ে আছে দরজার পাশে। মা চোখের পানি মুছে উমায়েরকে কাছে ডাকলো। উমায়ের মাথা নিচু করে মায়ের দিকে এগিয়ে গেল। মা উমায়ের এর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বলল-
“আবার এসো মা”
উমায়ের মায়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল-
“আপনার ছেলে খুব শীগগিরই আপনার কাছে ফিরবে। আমি বাসায় পৌঁছে আব্বুকে বলল বুরাকের নামে যত কেস আছে সব বন্ধ করাতে। আর বডিগার্ডদের বলল বুরাককে সুস্থ সবল এই বাসায় দিয়ে যেতে।”
“আমি জানি তোমার পরিবার খুব ভালো। আসলে ছেলেকে এতদিন পর পেয়েছি তাই মন চাচ্ছে না তাকে যেতে দিতে।”
“আমি কখনো ঢাকা থেকে একা বের হই নি বা একা ঢাকা ফিরি নি। নাহলে আমি একাই চলে যেতাম।”
“একদম না, তোমাকে আমি নিজের মেয়ে ভেবেছি। বুরাক তোমাকে দিয়ে আসবে।”
উমায়ের মুচকি হাসলো। মা উমায়েরকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো। উমায়ের অবাক না হয়ে পারলো না। এত ভালো কেন বুরাকের পরিবার সে বুঝতে পারছে না। তখনই বুরাক আসলো। মা আর উমায়েরকে দেখে মুচকি হাসলো। মা বুরাককে দেখে উমায়েরকে ছেড়ে বলল-
“বুরাক এসেছে, সাবধানে যেও তোমরা।”
উমায়ের মাথা নাড়াল। সবার থেকে বিদায় নিয়ে বুরাক ও উমায়ের বাসা থেকে বের হলো। সবাই মেইন গেইট পর্যন্ত এসেছে তাদের বিদায় দিতে৷ উমায়ের রেনুর দিকে ঘুরে নিচু স্বরে বলল-
“তোমার আমানতের কিছু হবে না। সে তোমার কাছে সুস্থ সবল ফিরে আসবে এই আমার ওয়াদা।”
রেনু কি বলবে ভেবে পেলো না। উমায়ের মুচকি হেয়ে ঘুরে হাঁটা ধরলো। বুরাক রিকশায় উঠে উমায়ের এর দিকে হাত এগিয়ে দিলো। উমায়ের হাত এক নজর দেখে চোখ সরিয়ে ফেলল। নিজে থেকেই রিকশায় উঠে বসলো। বুরাকের মন খারাপ হলো তবুও জোরপূর্বক হাসিতে লুকিয়ে ফেলল। সবাইকে বিদায় দিয়ে তারা চলল ঢাকার উদ্দেশ্যে। দুজনই চুপচাপ বসে আছে পাশাপাশি। একসাথে থেকেও যেন হাজার কিলোমিটার দূর আছে তারা। নিরবতা ভালো লাগছে না। বুরাক নিরবতা ভেঙে বলল-
“ভাবী আমাদের জন্য খাবার দিয়েছে। বাসে উঠে খেয়ে নিও।”
বুরাক কি বলে কথা শুরু করবে বুঝে উঠতে না পেরে এই কথা বলে দিলো। উমায়ের নিঃশব্দে মাথা নাড়িয়ে আবার সামনের দিকে তাকাল। বুরাকের রাগ হচ্ছে নিজের উপর। কি বললে উমায়ের তার সাথে কথা বলবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ উমায়ের বলল-
“আমাকে বাড়ির দরজার পর্যন্ত দিয়ে চলে আসবে?”
বুরাক উমায়ের এর দিকে তাকাল। উমায়ের রোডের দিকে তাকিয়ে আছে। বুরাক “হুম” বলল। উমায়ের বুরাকের দিকে তাকিয়ে বলল-
“না, আব্বুর সাথে দেখা করে তারপর আসবে। আর তুমি একা আসবে না। তোমাকে আমাদের বডিগার্ডরা বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে।”
বুরাক হেসে বলল-
“তোমার বডিগার্ডরা আমার রক্ষা করতে পারবে না। আমি একাই যথেষ্ট নিজের জন্য।”
“আমি জানি তুমি খুব সাহসী। কিন্তু তুমি যেমন আমার পরিবারকে বলেছো আমার কিছু হতে দেবে না তেমনই আমিও তোমার আম্মুকে কথা দিয়েছি তোমার কিছু হতে দেবো না।”
“তাই? তুমি পারবে আমার হয়ে খালিদ খানের লোকেদের সাথে ফাইট করতে?”
“না, কিন্তু তোমার প্রাণ বাঁচাতে হলে নিজের প্রাণও দিতে পারবো। ফিরোজ আনোয়ারের মেয়ে কতটুকু সাহসী তুমি আন্দাজও করতে পারবে না।”
“ওহো শান্ত হও, তুমি যদি প্রাণ দিয়ে দাও আমার ওয়াদার কি হবে? যেটা আমি ফিরোজ স্যারকে করেছি।”
উমায়ের জবাব দিলো না। দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো। বুরাকও আর প্রশ্ন করলো না।

ববি তার জামা কাপড় ঘুছাচ্ছে। তাকে রিলিজ করা হয়েছে। ফিরোজ আনোয়ার ফর্মালিটি পূরণ করতে গিয়েছে। ফিরে আসলে একসাথে বের হবে। ববির এখন সত্যি মনে হচ্ছে সে মুক্ত পাখি। তার জীবনের সব কাটা সরে গিয়েছে। এখন সে সব অপবাদ মুক্ত হয়েছে। বিছানায় বসে লম্বা নিশ্বাস ফেলল। এত শান্তি সে কখনো অনুভব করেনি। তখনই ফিরোজ আনোয়ার আসলেন। ববি উনাকে দেখে উঠে দাঁড়াল।
“সব গুছানো শেষ?”
“জি স্যার”
“চলো তাহলে যাওয়া যাক।”
ববি মাথা নাড়িয়ে তার ব্যাগ নিতে নিলো ফিরোজ আনোয়ার সাথে সাথে ববির হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে বলল-
“তোমার হাতে ব্যাথা। আমি নিচ্ছি।”
“না স্যার প্লিজ আমি নিচ্ছি।”
“একদম চুপ, তুমি আস্তে ধীরে আসো আমি যাচ্ছি ব্যাগ নিয়ে।”
বলেই ফিরোজ আনোয়ার হাঁটা ধরলেন। ববির খুব আজব অনুভূতি হচ্ছে। এত ভালো ব্যবহারের অভ্যেস তার নেই। ধীরে ধীরে হাঁটা ধরলো। ফিরোজ আনোয়ার বাহিরে চলে গিয়েছে। ববি নার্স আর ডাক্তারদের ধন্যবাদ দিতে দিতে এগিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে হুইলচেয়ারে করে একজন বৃদ্ধা মহিলাকে নিয়ে আসছে। বৃদ্ধার কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছে। আর মেয়েটার জামায় রক্ত জমাট। সে পাগলের মতো ডাক্তার নার্সদের ডাকছে। ডাক্তার নার্সরা এগিয়ে যেতেই মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে কি যেন বলছে। ববি দ্রুত গিয়ে বৃদ্ধাকে দেখে আবার মেয়েটার দিকে তাকাল। হয় তো বৃদ্ধা মেয়েটার মা হয়। ডাক্তার নার্স মিলে উনাকে নিয়ে চলে গেলেন। মেয়েটা মুখ চেপে ধরে কাঁদছে। ববির মায়া হচ্ছে খুব মেয়েটাকে দেখে। কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফিরোজ আনোয়ার আসলেন।
“আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি তুমি আসছো না কেন?”
ববি ফিরোজ আনোয়ারের দিকে তাকাল। ফিরোজ আনোয়ার এগিয়ে এসে ববিকে দেখে আবার মেয়েটার দিকে তাকাল। মেয়েটা অবাক দৃষ্টিতে ফিরোজ আনোয়ার আর সামনে থাকা ছেলেটার দিকে তাকাল। চোখের পানি মুছে সরে যেতে নিলো তখনই ফিরোজ আনোয়ার বললেন-
“তোমার নাম আকলিমা তাই না?”
মেয়েটা থেমে গেল। ফিরোজ আনোয়ারের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল।
“তুমি এখানে? সব ঠিক আছে তো?”
“নূর-জাহান মায়ের মাথায় ইট পড়েছে কিভাবে জানি। উনার অবস্থা খুব খারাপ। অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে আর নিশ্বাস খুব ধীরে ধীরে চলছে।”
ফিরোজ আনোয়ার আকলিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-
“চিন্তা করো না মা। কিছু হবে না উনার। তুমি দাঁড়াও আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলি আর টাকা পয়সা নিয়ে তুমি টেনশন করো না।”
বলেই ফিরোজ আনোয়ার এগিয়ে গেলেন। ববি আকলিমাকে উদ্দেশ্য করে বলল-
“চিন্তা করবেন না স্যার আছেন তো। উনি আপনার আম্মুর চিকিৎসার সব ব্যবস্থা করে দিবেন।”
আকলিমা চোখের পানি মুছে মাথা নাড়াল। ববি তার পকেট চেক করলো। রুমাল রেখেছিল। পকেট থেকে রুমাল বের করে আকিলমার দিকে এগিয়ে দিলো। আকলিমা এক নজর ববিকে দেখে আবার রুমালের দিকে তাকিয়ে ওড়না দিয়ে চোখ মুছে বলল-
“ধন্যবাদ, লাগবে না।”
ববি আকলিমার হাত ধরে তার হাতে রুমাল দিয়ে বলল-
“রাখুন, একদম পরিষ্কার রুমাল দিয়েছি। আপনি যেভাবে কান্না করছেন হসপিটালে বন্যা বয়ে যাবে।”
বলেই ববি হাসতে লাগলো। কিন্তু আকলিমাকে দেখে মনে হচ্ছে সে এখন হাসার মুডে নেই। ববি চুপসে গেল আকলিমার চেহারা দেখে। মাথা নিচু করে বলল-
“সরি, ভাবলাম আপনাকে হাসানো যাক। চিন্তা করতে হবে না। আপনার আম্মু সুস্থ হয়ে যাবে।”
আকলিমা জবাব দিলো না। তার বিরক্ত লাগছে মানুষটার সাথে কথা বলতে। ববি নানান ধরণের কথা বলতে লাগলো। আকলিমা বিরক্তির এক এক করে ধাপ পাড় করছে। বিরক্তির শেষ ধাপে পৌঁছে গেলে ববির খবর করে ছাড়বে।

অন্যদিকে……
উমায়ের জানালার সাথে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে। বুরাক পানি নিতে গিয়েছে এখনো ফেরে নি। একা থাকলে উমায়ের এর ভয় করে খুব। চারপাশে মানুষের ভীরে একমাত্র বুরাককে তার বিশ্বাসী মনে হয়। বুরাকের হাতদুটো ধরলে তার মনে হয় এই হাত ধরে সে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর পথে চলতে পারবে। উমায়ের চোখ বন্ধ করে দুপুরের কথা ভাবতে লাগলো।

কিছুক্ষণ আগের মুহূর্ত…..
উমায়ের বুরাকদের উঠানো হাটাহাটি করছে। হয় তো একটু বেশী বলে ফেলেছে বুরাককে রাগের মাথায়। হতে পারে সে এক সময় সন্ত্রাসের সাথে জড়িত ছিল কিন্তু এখন তো নেই। আর উমায়ের তো জানে বুরাক কেন খালিদ খানের সাথে কাজ করছিলো এত বছর। উমায়ের নিজের চুল টেনে ধরে নিজেকে মনে মনে ইচ্ছে মতো গালাগাল করলো। বুরাককে সরি বলা উচিত। উমায়ের একটা লম্বা ফেলে এগিয়ে গেল। হঠাৎ বুরাকের কান্নাজড়িত কন্ঠ ভেসে আসলো। বুরাক কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। উমায়ের দরজার আড়ালে চলে গেল।
“আমার বিরুদ্ধে অনেক কেস আছে পুলিশদের কাছে। আমি যতগুলো খুন করেছি এর আমাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হবে আমি জানি। বা পুলিশ আমাকে পেলে ইনকাউন্টার করে ফেলবে। আমি কিভাবে আমার পরিবারের সাথে থাকি বল? আমি চাই না আমার বাসায় পুলিশ আসুক। পুলিশরা জানে আমি অনাথ। আর তারা যেন একজন অনাথকেই শাস্তি দেয়। ববি, উমায়েরকে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়ে আমি নিজেকে পুলিশের কাছে দিয়ে দিবো। এরপর আমার সাথে যা হবে সেটার সম্পূর্ণ দায়ভার আমার উপর।”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here