সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্বঃ১৯

0
1065

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ১৯

এরেন, ইলোরা আর মিথিলা ছাদ থেকে নেমে দেখল তুশির বাড়ির লোক এসেছে। বসার ঘর ভর্তি হয়ে গেছে। রনি আর সাকিবকে বসার ঘরে দেখা যাচ্ছে না। তুশি তার বাড়ির লোকদের সাথে এরেন, ইলোরা আর মিথিলার পরিচয় করিয়ে দিলো। এরেন প্রশ্ন করল,“ভাবি, সাকিব-রনি কোথায়?”

তুশি বলল,“রনির রুমে।”

এরেন ইলোরা আর মিথিলাকে বলল,“চলো রনির রুমে যাই। এখানে এদের কথার মাঝে থেকে কী করব?”

ইলোরা আর মিথিলা সায় দিয়ে এরেনের পিছু নিল। রনির রুমে ঢুকে দেখল সাকিব আর রনি গিটার নিয়ে খাটের উপর বসে আছে। এরেন গিয়ে খাটের উপর পদ্মাসনের মতো করে বসে পড়ল। মিথিলা আর ইলোরাও খাটের একপাশে বসল। মিথিলা উত্তেজিত হয়ে বলল,“ওয়াও! তোমরা কি গান করছিলে ভাই?”

সাকিব হেসে বলল,“করিনি, এখন করব।”

এরেন বলল,“সময়মতো এসেছি। চল গান ধর।”

ইলোরা বলল,“এখন তো বাসা ভর্তি মেহমান। এরমধ্যে তোমরা চিল্লাচিল্লি করবা? মেহমানরা কী মনে করবে?”

রনি শব্দ করে হেসে বলল,“কী আবার মনে করবে? শব্দ শুনলেই দেখবে তারাও সুরসুর করে আমাদের সাথে গলা মিলাতে চলে আসবে।”

মিথিলা বলল,“আরে বাহ্! তাহলে শুরু করো তাড়াতাড়ি।”

রনি সঙ্গে সঙ্গে গিটারে টুং টাং শব্দ তুলল। তারপর এরেন, সাকিব আর রনি মিলে সুর তুলল,

তোমার ঘরে বাস করে কারা ও মন জানো না
তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা
এক জনে ছবি আঁকে এক মনে
ও রে মন
আরেকজনে বসে বসে রং মাখে
ও আবার সেই ছবিখান নষ্ট করে কোন জনা কোন
জনা
তোমার ঘরে বসত করে কয়জনা।
………………………….…………..…….
………………………….…………..…….

গানের মাঝে বারকয়েক এরেনের সাথে ইলোরার দৃষ্টি বিনিময় হলো। প্রতিবারই এরেন মুচকি হাসল আর ইলোরা লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিল। ওদের গানের মাঝে একজন ছেলে আর দুজন মেয়ে এসে রুমে দাঁড়াল। গান শেষ হতেই ইলোরা আর মিথিলার সাথে তারাও হাততালি দিয়ে উঠল। রনি তাদের ডেকে পাশে বসাল। মেয়ে দুটো গিয়ে রনির পাশে বসল। কিন্তু ছেলেটা গিয়ে বসল ইলোরার পাশে। এরেন তা দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলল। তুশি যখন পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল তখন জানা গিয়েছিল ছেলেটা তুশির ছোটো ভাই। আর মেয়ে দুটোর মধ্যে একজন তুশির ছোটো বোন, আরেকজন মামাতো বোন। ছেলেটা হেসে বলল,“তোমাদের কারোর নাম জানা হয়নি এখনও।”

রনি একে একে সবার নাম বলল। ছেলেটার তার আর বোনদের নাম বলল। জানা গেল মেয়ে দুটোর মধ্যে তুশির ছোটো বোনের নাম তিশা আর মামাতো বোনের নাম নেহা। তিশা মিথিলার সমবয়সী আর নেহা ক্লাস নাইনে পড়ে। আর তুশির ছোটো ভাইটার নাম রিশাদ রকিব। সে একটা প্রাইভেট কোম্পানির এমডি। এরেন, সাকিব, ইলোরা আর মিথিলা খানিক অবাক হলো। কারণ রিশাদকে দেখে মনে হয় সে সাকিব-এরেনদের জুনিয়র। অথচ ছেলেটা না-কি তাদের সিনিয়র। তবে রিশাদ সিনিয়র হলেও সবার সাথে কিছু সময়ের মধ্যেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলল। বেশ মিশুক ছেলে সে। গায়ের রং শ্যামবর্ণ হলেও চেহারার গঠন সুন্দর। রিশাদ আর নেহা সবার সাথে গান গাইতে রাজি হলেও তিশা রাজি হলো না। তিশা স্বভাবতই অনেক চুপচাপ। এদিকে মিথিলাও গান গাইতে রাজি হলো, কিন্তু ইলোরা নারাজ। সে বলল তাকে দিয়ে গান কখনোই সম্ভব না। রিশাদ কয়েকবার জোরাজুরি করল। এরেন সরু চোখে রিশাদকে লক্ষ্য করে বলল,“ওকে জোর করার দরকার নেই ভাই। আমরাই গাই চলেন।”

রিশাদ ইলোরাকে আর জোর করল না। ইলোরা আর তিশা বাদে সবাই মিলে গলা ফাটিয়ে গান শুরু করল। তা-ও আবার একটা দুইটা না। একটার পর একটা করতে করতে পরপর কয়েকটা গান গাইলো। বলতে গেলে থামাথামির নাম নেই। রনি রিশাদকে বলল,“রিশাদ ভাই, আপনি একা একটা গান করেন।”
রিশাদও রাজি হয়ে গেল। রনি গিটারে সুর তুলতেই সে গেয়ে উঠল,

Dua Bhi Lage Na Mujhe
Dawa Bhi Lage Na Mujhe
Jab Se Dil Ko Mere Tu Laga Hai

Neend Raaton Ki Meri
Chahat Baaton Ki Meri
Chain Ko Bhi Mere Tune
Yun Thaga Hai

Jab Saanse Bharu Main Band
Aankhein Karun Main
Nazar Tu Yaar Aaya

Dil Ko Karaar Aaya
Tujhpe Hai Pyaar Aaya
Pehli Pehli Baar Aaya Oh Yaara

Dil Ko Karar Aaya
Tujhpe Hai Pyaar Aaya
Pehli Pehli Baar Aaya Oh Yaara.

এটুকু গেয়েই রিশাদ থেমে গিয়ে হেসে বলল,“আর পারব না ভাই।”

এরেন সূক্ষ্ম চোখে রিশাদকে নিরীক্ষণ করে চলেছে। কারণ গান গাওয়ার সময়ও রিশাদ ইলোরার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিল, আর ইলোরা এতে কিছুটা বিব্রত বোধ করছিল। রিশাদের গান শেষ হতেই এরেন হঠাৎ রনির হাত থেকে গিটারটা নিয়ে ঝংকার তুলে ইলোরার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে গাইতে শুরু করল,

ঘুম চলে যায়
তোমার চোখে বেড়াতে,
পারি না তাকে কোনো ভাবে ফেরাতে।
ঘুম চলে যায়
তোমার চোখে বেড়াতে,
পারি না তাকে কোনো ভাবে ফেরাতে।

আমার এ মন তোমার মনের পাড়ায়
বোকাসোকা হয়ে আড়ালে আবডালে দাঁড়ায়।

তোমাকে ছোঁয়ার নেইতো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড়ো ভাগ্য,
মনটা অবাধ্য, হচ্ছে প্রায়শ
কষ্টের বোঝা বেড়েই, যাচ্ছে ক্রমশ।

ঘুম চলে যায়
তোমার চোখে বেড়াতে,
পারিনা তাকে কোন ভাবে ফেরাতে।।

বায়বীয় প্রেম
আকাশ পাতাল সমতল,
বাস্তবতায় খাবি খায় শুধু
হারায় না তার মনোবল।

তোমাকে ছোঁয়ার নেইতো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড়ো ভাগ্য,
মনটা অবাধ্য, হচ্ছে প্রায়শ
কষ্টের বোঝা বেড়েই, যাচ্ছে ক্রমশ।

ঘুম চলে যায়
তোমার চোখে বেড়াতে,
পারি না তাকে কোনো ভাবে ফেরাতে।।

কেন যে তোমার সাথে
মনের এত টান,
কথা হয় নাই দেখেছি শুধু
তবুও কিসের অভিমান।

তোমাকে ছোঁয়ার নেইতো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড়ো ভাগ্য,
মনটা অবাধ্য, হচ্ছে প্রায়শ
কষ্টের বোঝা বেড়েই, যাচ্ছে ক্রমশ।

ঘুম চলে যায়
তোমার চোখে বেড়াতে,
পারি না তাকে কোনো ভাবে ফেরাতে।।

গান গাইতে গাইতে এরেন আড়চোখে কয়েকবার ইলোরার দিকে তাকাল। ইলোরা মুগ্ধ হয়ে তার গান শুনতে ব্যস্ত ছিল। মনে হচ্ছিল এরেনের গানের শব্দগুলো তারই জন্য। তাই এরেনের সাথে চোখাচোখি হলেও সে চোখ নামিয়ে নিল না। এরেন তার কান্ড দেখে ঠোঁট টিপে হাসল। এরেনের গান শেষ হতেই সবাই হাততালি শুরু করল। নেহা এরেনের প্রশংসা করে বলল,“ওয়াও ভাইয়া! আপনি খুব সুন্দর গান করেন! ভাবি কিন্তু আপনার গান শুনেই পটে যাবে।”

নেহার কথায় এরেন শব্দ করে হেসে উঠল। ইলোরা চোখ ছানাবড়া করে নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। এরেন ইলোরার মুখোভাব লক্ষ্য করে মৃদু হেসে আফসোসের সুরে বলল,“তা আর হলো কই? কেউ তো পাত্তাই দেয় না।”

এরেনের কথা শুনে ইলোরা মাথা নিচু করে মুচকি হাসল। রনি আর সাকিব আহাম্মকের মতো এরেনের দিকে তাকিয়ে রইল। এরেন তাদের লক্ষ্য করে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,“হোয়াট?”

সাকিব বলল,“আমার মনে পড়ে না তুই কাউকে প্রপোজ করছোস। তাইলে পাত্তা দেওয়ার কথা আসে কোত্থেকে?”

রনি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,“কী মামা? তলে তলে টেম্পু চালাও আর আমরা শব্দও পাই না!”

এরেন বিরক্ত হয়ে বলল,“তোদের মুন্ডু। আমি তো এমনি কথার কথা বললাম।”

রিশাদ হাসিমুখে বলল,“তা ভাই, প্রপোজ করো না কেন? কাউকেই কি পছন্দ হয় না?”

এরেন হেসে বলল,“বউয়ের অপেক্ষায় আছি ভাই। দুদিন প্রেম, তারপর ব্রেকআপ। এসব দলে আমি নেই।”

মিথিলা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“তাহলে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেলেন ভাইয়া। আমরাও একটু আনন্দ-ফুর্তি করি।”

এরেন ইলোরার দিকে তাকিয়ে দেখল ইলোরা আহাম্মকের মতো তাকিয়ে সবার কথা গিলছে। এরেন মিথিলার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,“হ্যাঁ, খুব শীঘ্রই বিয়ে করব। তুমি থাকবে বিশেষ অতিথি।”

মিথিলা শব্দ করে হেসে ফেলল‌। রিশাদ ইলোরাকে লক্ষ্য করে বলল,“মিস, তুমি তো গানও গাইলে না। আর এখন চুপচাপ বসে আছো কেন? কথা বলতে ইচ্ছে করে না?”

ইলোরা মুচকি হেসে বলল,“তেমন কিছু না ভাইয়া। আপনারা কথা বলুন আমি শুনছি।”

ইলোরার সাথে রিশাদের কথা বলাও এরেনের সহ্য হলো না। সে ইলোরার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,“তোমার যদি শোরগোল ভালো না লাগে তাহলে বেলকনিতে গিয়ে কিছুক্ষণ সময় কাটাও, ভালো লাগবে।”

ইলোরা এখান থেকে ওঠার একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। এরেন যখন সুযোগ করেই দিয়েছে তখন সেটা কাজে লাগিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,“তোমরা আড্ডা দাও, আমি বেলকনিতে যাচ্ছি।”

ইলোরা সোজা বেলকনিতে গিয়ে দম নিল। পরক্ষণেই আপন মনে হেসে এরেনকে মনে মনে ধন্যবাদ জানাল। আড্ডা দিতে দিতে অনেকটা সময় কেটে গেল। রিশাদ যে বারবার চঞ্চল চোখে বেলকনির দিকে তাকাচ্ছে তা এরেনের দৃষ্টিগোচর হলো না। আরও আড্ডা দেয়ার ইচ্ছে থাকলেও এরেন দমে গিয়ে বলল,“অনেক হয়েছে ভাই। আর ইচ্ছে করছে না।”

তখনই তুশি রুমে এসে বলল,“অনেক তো আড্ডা দিলে। এবার এসে কিছু খেয়ে যাও সবাই।”

রিশাদ বলল,“কিছুক্ষণ আগেই তো লাঞ্চ করলাম আপু।”

“কিছুক্ষণ! আড্ডা দিতে দিতে কত সময় পার করেছিস হুঁশ আছে?”

রনি বলল,“আচ্ছা ভাবি আসছি। ভাইয়া কখন আসবে?”

তুশি বলল,“মাত্রই এসেছে। তোমরা আসো তাড়াতাড়ি।”

তুশি চলে যেতেই সবাই উঠে পড়ল। একে একে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেও এরেন আর রিশাদ বসেই রইল। এরেন রিশাদকে বসে থাকতে দেখে বিরক্ত হলেও জোরপূর্বক হেসে বলল,“কী ভাই? যাবেন না?”

রিশাদ হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বেলকনির দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,“মিস ইলোরাকে ডেকে আনছি। ওনার কথা সবাই ভুলে বসে আছে দেখছি।”

এরেন হা করে তাকিয়ে রইল রিশাদের যাওয়ার দিকে। রিশাদ বেলকনিতে গিয়ে দেখল ইলোরা একহাতে রেলিং ধরে আরেক হাতে কপাল চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রিশাদ দ্রুত এগিয়ে গিয়ে চিন্তিত কন্ঠে বলল,“আর ইউ ওকে? কী হয়েছে তোমার?”

ইলোরা কিছু বলার আগেই জ্ঞান হারাল। রিশাদ খপ করে ইলোরাকে ধরে ফেলল। তারপর উৎকণ্ঠা নিয়ে কয়েকবার ইলোরার নাম ধরে ডাকল। এরেন সবেমাত্র বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছিল। রিশাদের কন্ঠস্বর শুনে সে দ্রুত পায়ে বেলকনির দিকে পা বাড়াল। বেলকনিতে গিয়েই সে বিস্মিত চোখে একবার রিশাদের দিকে আরেকবার ইলোরার দিকে তাকাল। ইলোরাকে রিশাদের বাহুডোরে দেখে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এল। রিশাদ এরেনকে দেখে চিন্তিত কন্ঠে বলল,“উনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।”

এরেন এতক্ষণে বুঝতে পারল আসল ব্যাপার। হঠাৎ করেই তার বুকটা ধক করে উঠল। রিশাদ ইলোরাকে রুমে নেয়ার জন্য উদ্যত হতেই এরেন ঝড়ের বেগে কাছে এসে হেঁচকা টানে ইলোরাকে রিশাদের বাহুডোর থেকে ছাড়িয়ে আনলো। তারপর ইলোরাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে দ্রুত পায়ে রুমে চলে গেল। এরেনের এহেন কাজে রিশাদ হা করে তাকিয়ে রইল। তারপর সেও এরেনের পেছন পেছন রুমে চলে এল। এরেন রুমে ঢুকে ইলোরাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ইলোরার গালে আলতো করে হাত রেখে মৃদু ঝাঁকিয়ে উত্তেজিত কন্ঠে ডাকতে লাগল,“ইলোরা, ইলোরা, কী হয়েছে তোমার? শুনতে পাচ্ছ? চোখ খোলো। কিছুক্ষণ আগেও তো ঠিক ছিলে। হঠাৎ করে কী হলো? ইলোরা?”

এরেনের উত্তেজনা দেখে রিশাদ কিছুটা অবাক হলো। তারপর সে বলল,“চোখেমুখে পানির ছিটা দিতে হবে। আমি পানি নিয়ে আসছি।”

রিশাদ তাড়াতাড়ি পানি আনতে চলে গেল। বসার ঘরে গিয়ে সে ইলোরার জ্ঞান হারানোর কথা বলতেই সবার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সাকিব খাবার ফেলে রেখে রনির রুমের দিকে ছুটল। সাকিবের পেছন পেছন বাকি সবাই রুমে চলে এল। এরেন উত্তেজিত হয়ে বারবার ইলোরাকে ডেকে চলেছে। সাকিব এসে ইলোরার পাশে বসে ইলোরার গালে হাত রেখে এরেনের মতোই উত্তেজনা নিয়ে ডাকতে শুরু করল। মিথিলা একগ্লাস পানি নিয়ে এসে সাকিবের হাতে দিলো। সাকিব ইলোরার চোখেমুখে পানির ছিটা দিলো। রনির ভাই শাকিল বলল,“ডাক্তার ডাকব?”

রিশাদ বলল,“একটু অপেক্ষা করে দেখুন, যদি জ্ঞান ফিরে তাহলে তো ডাক্তার ডাকতে হবে না।”

সাকিব, এরেন আর মিথিলা উত্তেজনা নিয়ে বারবার ইলোরাকে ডেকে চলেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইলোরার জ্ঞান ফিরে এল। সে চোখ পিটপিট করে তাকাতেই যেন সবার প্রাণ ফিরে এল। সাকিব ইলোরাকে ধরে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো। এরেন ইলোরার একহাত শক্ত করে ধরে বলল,“ঠিক আছো?”

ইলোরা একবার এরেনের হাতে ধরে রাখা নিজের হাতের দিকে তাকাল। এরেন এই প্রথম তাকে ছুঁয়েছে। তারপর এরেনের মুখের দিকে তাকিয়ে তার চিন্তিত মুখটা দেখে অবাক হয়ে গেল। তবু সে উপর নিচে মাথা দোলালো। এরেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল। মিথিলা বলল,“হঠাৎ করে জ্ঞান হারালে কেন আপ্পি?”

ইলোরা মৃদু কন্ঠে বলল,“জানি না। বেলকনিতে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ করেই মাথার মধ্যে চক্কর দিয়ে উঠল।”

সাকিল বলল,“আচ্ছা ওর জ্ঞান যখন ফিরে এসেছে তখন রুমের মধ্যে ভীড় না করে আমরা চলে যাই। আর তুশি, তুমি গিয়ে ওর জন্য হালকা কিছু খাবার নিয়ে এসো।”

সাকিলের কথায় সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। রিশাদ আর রনি দাঁড়িয়েই রইল। রিশাদ রনির কাছে এগিয়ে গিয়ে এরেনকে দেখিয়ে ফিসফিস করে বলল,“তোমার এই ফ্রেন্ডের এক্সাইটমেন্ট দেখে অবাক না হয়ে পারছি না। মনে হচ্ছে নিজের কেউ জ্ঞান হারিয়েছে।”

রনিও যে ব্যাপারটায় অবাক হয়নি তা নয়। সেও এরেনের এমন উত্তেজনা দেখে কিছুটা অবাক হয়েছে। তবু সে নিজের বিস্ময়টা প্রকাশ না করে স্বাভাবিকভাবেই বলল,“অবাক হওয়ার মতো তেমন কোনো ব্যাপার না। আসলে সাকিবের বোনদের আমরাও নিজেদের বোনের মতো ভাবি। সেজন্যই এরেন এমন চিন্তিত হয়ে পড়েছে।”

রিশাদ রনির কথাটা খুব সহজেই বিশ্বাস করে ফেলল। সে অন্যকিছু ভেবেছিল। নিজের ধারণা ভুল দেখে সে মনে মনে প্রচন্ড খুশি হলো। কিন্তু রনির মনে এরেনকে নিয়ে প্রশ্ন জেগে উঠল। ইলোরা এরেনের চিন্তিত মুখটা দেখে যতটা অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি খুশি হয়েছে‌। তার জন্য ছেলেটার এই উত্তেজনা, চিন্তা দেখে মনের কোণে এক টুকরো শান্তি উঁকি মারছে। তুশি কিছু ফ্রুটস আর পানি নিয়ে এল। মিথিলা ইলোরাকে ফ্রুটস খাইয়ে পানি খেতে দিলো। তুশি চিন্তিত কন্ঠে বলল,“হঠাৎ করে এমন কেন হলো বলো তো?”

সাকিব গোমড়া মুখে বলল,“কালই ডাক্তার দেখাব।”

এরেন বলল,“ওর একটু রেস্ট নেওয়া দরকার। চল আমরা এখন এখান থেকে চলে যাই, ও কিছুক্ষণ রেস্ট নিক।”

সাকিব এরেনের কথায় সায় দিয়ে বলল,“হুম। মিথি, তুই থাক এখানে।”

মিথিলাকে ইলোরার পাশে রেখে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ইলোরা চুপচাপ শুয়ে পড়ল। মিথিলা ইলোরার ফোনে গেমস খেলতে লাগল।

মিথিলার ডাকে ঘুম ভাঙল ইলোরার। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়ালই নেই তার। ধড়ফড় করে উঠে বসে বলল,“কয়টা বাজে?”

মিথিলা বলল,“মাগরিবের আজান হয়েছে মাত্র।”

“এতক্ষণ ঘুমালাম!”

“হুম। কেমন লাগছে এখন তোমার?”

“ভালো। ভাই কই?”

“বাসার ভেতরেই আছে। চলো এখন রুম থেকে বের হই।”

ইলোরা বিছানা থেকে নেমে নিজেকে ঠিকঠাক করে মিথিলার সাথে রুম থেকে বেরোল। রুম থেকে বেরোতেই রিশাদ এগিয়ে এসে হাসিমুখে বলল,“হেই মিস। সবাইকে তো চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলে। এখন ঠিক আছো?”

ইলোরা মুচকি হেসে বলল,“হ্যাঁ।”

“চলো বসা যাক।”

মিথিলা গিয়ে তিশা আর নেহার সাথে বসে গল্প জুড়ে দিলো। ইলোরা একটা সোফায় বসতেই রিশাদও তার পাশে বসে পড়ল। ইলোরা অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে রিশাদের থেকে একহাত দূরে সরে বসল। এদিক-ওদিক তাকিয়ে সে সাকিবদের খুঁজতে লাগল। রিশাদ কথা বলার জন্য উস-খুস করছে, কিন্তু কী বলবে তা-ই খুঁজে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ সে বলল,“ভাগ্য করে ভাই পেয়েছ কয়েকটা।”

ইলোরা কিছু বুঝতে না পারায় তার কপালে হালকা ভাঁজ পড়ল। সাকিব ছাড়া তার ভাই কে সেটা বুঝার চেষ্টা করল। রিশাদ হেসে বলল,“তুমি সেন্সলেস হওয়ার পর আমি তোমাকে ধরে রুমে আনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। তখন এরেন গিয়ে আমার থেকে তোমাকে এক প্রকার টেনে নিজের কাছে নিয়ে কোলে উঠিয়ে রুমে নিয়ে গেল। তারপর তোমার সেন্স ফিরছিল না বলে খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম। তারপর যখন রনি বলল ওরা তোমাদের নিজের বোনের মতো ভাবে তখন বুঝলাম, ভাগ্য করে এমন ভাই পেয়েছ।”

ইলোরা হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারল না। এরেন না-কি তার ভাই! রিশাদ তো আর জানে না সে তার হাসবেন্ড। না জানার কারণে বেচারা তার হাসবেন্ডকে ভাই বানিয়ে ফেলেছে। ইলোরা হা করে তাকিয়ে রিশাদের কথা শুনল। এরেন এক প্রকার টেনে রিশাদের থেকে তাকে নিজের কাছে নিয়েছে এটা শুনে তার খুব হাসি পেল। কারণ এতে এরেনের হিংসুটে ভাব স্পষ্ট ধরা পড়ে গেল ইলোরার কাছে। পরক্ষণেই এরেন তাকে পাঁজাকোলা করে রুমে নিয়েছে ভেবে ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেল। এরেনের দিকে তো এখন সে তাকাতেই পারবে না লজ্জায়। ভালো হয়েছে এরেন এখন তার সামনে নেই। থাকলে তাকে আরও লজ্জায় পড়তে হত। কিন্তু এখন নেই তো কী হয়েছে? পরে সামনে এলে কী করবে? সে তো লজ্জায় মরেই যাবে।

চলবে……………………..🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here