সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্বঃ২৫

0
1178

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ২৫

গুটি-গুটি পায়ে হেঁটে এসে বসার ঘরে সামান্য উঁকি দিলো ইলোরা। ভেবেছিল এরেন যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ সে নিজের রুমে বসে থাকবে। কিন্তু তা আর হলো কই? মালিহা বেগম তার হাতে ফ্রুটসের ট্রে ধরিয়ে দিয়েছে এরেন আর রনিকে খেতে দেয়ার জন্য। ইলোরা এত করে বলল তুমি দিয়ে আসো। মালিহা বেগম নিজের কাজের দোহাই দিয়ে মেয়েকে ঠেলে পাঠিয়েছেন। ইলোরা ঠোঁট উলটে দাঁড়িয়ে আছে, এরেনের সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না। কিছুক্ষণ মনের সাথে তুমুল যুদ্ধ করে অবশেষে ধীর পায়ে ভেতরে ঢুকল। এরেন আর রনি তাকে দেখে মিষ্টি হেসে দুজন একসাথেই বলে উঠল,“কেমন আছো?”

ইলোরা হালকা হেসে বলল,“ভালো আছি। আপনারা?”

রনি বলল,“ভালো।”

এরেন সরু চোখে তাকিয়ে বলল,“তুমি না কি অসুস্থ?”

ইলোরা হাতের ট্রেটা টি-টেবিলে রাখতে-রাখতে বলল,“মাথা ব্যথা ছিল। এখন কমে গেছে।”

এরেন চিন্তিত কন্ঠে বলল,“তুমি কি প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ো?”

“হুম।”

“নিশ্চয়ই নিজের কেয়ার করো না।”

ইলোরা কোনো উত্তর দিলো না। রনি ড্যাবড্যাব করে একবার এরেনের দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার ইলোরার দিকে। তারপর সে কিছু একটা ভেবে বলল,“এরেন, তুই বস। আমি একটু ভেতরে গিয়ে দেখে আসি সাকিব গোসল করতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল কি না।”

এরেন হেসে বলল,“যা।”

রনি উঠে সাকিবের রুমের দিকে চলে গেল। ইলোরা একপাশে দাঁড়িয়ে হাত কচলাতে লাগল। এখান থেকে চলে যাবে না দাঁড়িয়ে থাকবে, এটা নিয়েই চিন্তায় পড়ে গেল সে। এরেন ইলোরার দিকে তাকিয়ে বলল,“বসো।”

ইলোরা হাসার চেষ্টা করে বলল,“না, ঠিক আছে।”

এরেন একটা আঙুর মুখে পুরে বলল,“সবার অজান্তে প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি এলাম।”

ইলোরা চোখ বড়ো করে তাকাল এরেনের দিকে। এরেন হেসে বলল,“অবাক হচ্ছ কেন? আমি আর তুমি ছাড়া আর কেউ তো জানে না এটা আমার শ্বশুরবাড়ি। তাই আজ যে আমি প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি এসেছি, এটা সবার অজানা। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার!”

এরেন হাসছে। ইলোরা চুপচাপ এরেনের হাসি দেখছে। সত্যিই তো। আজও কেউ জানে না তাদের বিয়ের কথা। যেদিন জানবে, সেদিন কী হবে তা আল্লাহ্ ছাড়া কারো জানা নেই। সম্পর্কটা জোড়া লাগবে না সম্পূর্ণ ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে সেটাও অজানা। মূলত এই সম্পর্কটাই ধোঁয়াশা। কিন্তু একটা ব্যাপার এখন তার কাছে স্পষ্ট যে এরেন এই সম্পর্কটাকে জোড়া লাগাতে চায়। হয়তো চেষ্টাও করবে সে। ইলোরাকে গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবতে দেখে এরেন ভ্রু কুঁচকে বলল,“এত কী ভাবছো?”

ইলোরা ডানে-বায়ে মাথা নেড়ে বলল,“কিছু না।”

“তুমি সত্যিই সুস্থ আছো এখন?”

“হ্যাঁ।”

“নিজের খেয়াল তো রাখতে পারো একটু।”

“ও নিজের খেয়াল রাখবে? হাসালি। আমি তো শুধু ভাবি ওকে যেই ছেলে বিয়ে করবে, ওর কেয়ার করতে-করতেই তার জীবন পার করতে হবে।”

কথাগুলো বলতে-বলতে সাকিব ভেতরে ঢুকল। রনিও তার পেছন-পেছন এসে এরেনের পাশে বসে পড়ল। ইলোরা গাল ফুলিয়ে সাকিবের দিকে তাকাল। এরেন আড়চোখে ইলোরার দিকে তাকিয়ে বলল,“তাহলে তো বর খোঁজা অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।”

সাকিব বলল,“হ্যাঁ। ওর জন্য বর ঠিক করার আগে ইন্টারভিউ নিতে হবে ভালো করে।”

রনি দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“তাহলে এখনই খোঁজ লাগিয়ে রাখ।”

সাকিব এগিয়ে গিয়ে একটা কমলার কোয়া হাতে নিয়ে বলল,“হ্যাঁ। আব্বু তো বলল ভালো ছেলে পেলে এবছরই ওর ছুটির ঘন্টা বেজে যাবে।”

সাকিবের কথায় এরেন আর ইলোরা একসাথে চমকে উঠল। দুজনেই একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। এরেন একটা ঢোক গিলে নড়েচড়ে বসে বলল,“মাত্র তো ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে। এত তাড়া কিসের?”

সাকিব পাশের সোফায় বসে বলল,“তাড়া নেই। কিন্তু আব্বুর এটাই ইচ্ছে। ও তো আর আমাদের অমতে বা অপছন্দে বিয়ে করবে না। তাছাড়া ওর নিজের কোনো পছন্দও নেই। থাকলে সবার আগে আমাকেই জানাত। সো কোনো প্রবলেমও নেই।”

ইলোরা করুন চোখে সাকিবের দিকে তাকাল। এই ভাইটার সাথে শেয়ার করেনি এমন কোনো কথা তার জীবনে নেই। অথচ সে নিজের জীবনের সবচেয়ে বড়ো সত্যিটাই এই ভাইয়ের কাছে লুকিয়েছে। তখন তো ভয়ে বলতে পারেনি। যেদিন ভাই জানতে পারবে সেদিন তার রিঅ্যাকশন কেমন হবে? নিশ্চয়ই খুব রেগে যাবে তাকে না জানানোর কারণে। হয়তো কষ্টও পাবে। আচ্ছা? সে কি তাহলে নিজের অজান্তেই নিজের প্রিয় মানুষগুলোকে কষ্ট দেওয়ার পাঁয়তারা করছে? ইলোরার কান্না পেয়ে গেল। সে জিব দিয়ে শুকনো ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিয়ে কোনোমতে নিজেকে সামলে, ধীর পায়ে বসার ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। এরেন শান্ত দৃষ্টিতে ইলোরার চলে যাওয়া দেখল। মেয়েটা একদিন খুব সন্তর্পণে তার জীবনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছিল। আবার যদি একদিন তেমন সন্তর্পণেই তার জীবন থেকে চলে যায়? নিজের জীবনে এই মেয়েটার আগমন সে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি। ঠিক একইভাবে মেয়েটার চলে যাওয়াও সে মানতে পারবে না। সে চাইছে সম্পর্কটা জোড়া লাগুক। কিন্তু তার জন্য অনেক সময়ের দরকার। হুট করে দুটো পরিবারকে মানানো সম্ভব হবে না। ইলোরার পরিবারকে হয়তো চেষ্টা করলে মানানো যেতে পারে। কিন্তু তার পরিবার এত তাড়াতাড়ি তার বিয়ের কথা মানা তো দূর, চিন্তাও করে না। বিশেষ করে তার সিংহের মতো বাবা। তার বাবার ইচ্ছে ছেলের পড়াশোনা শেষ হলে তার বিজনেসের দায়িত্ব ছেলের হাতে দিয়ে তারপর বিয়ে করাবেন। কিন্তু ততদিনে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। না সে মেয়েটাকে ছাড়তে পারছে, আর না গ্রহণ করতে পারছে। জীবনটা কি খেলছে তার সাথে? এ কেমন ফ্যাসাদে ফেলল তাকে তার নিয়তি!

দুপুর দুইটা বাজতেই মালিহা বেগম সাকিবকে ডেকে বললেন রনি আর এরেনকে নিয়ে খাবার টেবিলে বসতে। সাকিব ওদেরকে নিয়ে খাবার টেবিলে বসল। মিথিলা আর সাজিদ হোসেন আগেই বসা ছিলেন। এরেন আসার পরে সাজিদ হোসেনের সাথে পরিচয় হলেও ঠিকমতো কথা হয়নি এখনও। এরেন আগ্রহ নিয়ে সাজিদ হোসেনের সাথে গল্প জুড়ে দিলো। শ্বশুরমশাই বলে কথা! মালিহা বেগম সবার প্লেটে খাবার দিয়ে ডালিয়া আর ইলোরাকে ডাকলেন। ডাকার সঙ্গে-সঙ্গেই ডালিয়া এসে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। সাকিব প্রশ্ন করল,“ইলু আসছে না কেন এখনও?”

ডালিয়া নিজের প্লেটটা কাছে টেনে নিয়ে বলল,“কতবার করে ডাকলাম, ও বলছে পরে খাবে। এখন শুয়ে আছে।”

সাজিদ হোসেন চিন্তিত কন্ঠে বললেন,“আবার মাথা ধরল না কি? মালিহা, গিয়ে দেখে আসো তো।”

মালিহা বেগম মাথা নেড়ে ইলোরার রুমে গেলেন। গিয়ে দেখলেন ইলোরা চোখ খুলে সটান শুয়ে আছে। মাকে দেখে ইলোরা প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকাল। মালিহা বেগম প্রশ্ন করলেন,“কিরে মা? আবার মাথা ব্যথা করছে?”

ইলোরা উত্তর দিলো,“না আম্মু। এমনিতেই শুয়ে আছি।”

“খেতে আসছিস না কেন?”

“এখন খেতে ইচ্ছে করছে না, পরে খাব।”

“ইচ্ছে না করলেও খেতে হবে। খাওয়ায় অনিয়ম করলে আরও শরীর খারাপ হবে। চল তাড়াতাড়ি।”

“প্লিজ আম্মু, জোর কোরো না।”

মালিহা বেগম কোনো কথাই শুনলেন না। টেনেহিঁচড়ে ইলোরাকে খাবার টেবিলে নিয়ে গেলেন। সাজিদ হোসেন বললেন,“ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে চাস না বলেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়িস। বড়ো হয়েছিস, এখন একটু খেয়াল রাখ নিজের।”

ইলোরা গাল ফুলিয়ে রইল। আড়চোখে এরেনের দিকে তাকিয়ে দেখল এরেন ঠান্ডা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন দৃষ্টি দেখে ইলোরা খানিক অবাক হলো। মালিহা বেগম ইলোরার প্লেটে খাবার দিলেন। ইলোরা মাথা নিচু করে চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। সে ভেবেছিল এরেন চলে যাবার পর একবারে রুম থেকে বের হবে। এরেনেরও ব্যাপারটা বুঝতে বাকি রইল না। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে এরেন আর রনিকে নিয়ে সাকিব নিজের রুমে চলে গেল আড্ডা দেওয়ার জন্য। ইলোরা রুমে এসে দেখল ডালিয়া আর মিথিলা শুয়ে শুয়ে ফোনে ফানি ভিডিয়ো দেখছে, আর হাসতে-হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। ইলোরা কোমড়ে দুহাত দিয়ে বিরক্তির সুরে বলল,“ওই পাগল, ছাগলগুলা, পাগলা গারদে পাঠাইতে হইব না কি? আজকেই তো মনে হয় সব হাসি হাইসা শেষ কইরা ফেলবি।”

মিথিলা হাসতে-হাসতে বলল,“আরে আপ্পি, তুমিও দেখো একটু। না হেসে থাকতে পারবে না।”

ইলোরা বিছানার একপাশে পা ঝুলিয়ে বসে বলল,“ঘোড়ার ডিম! দরকার নাই আমার দেখার। তোরাই দেখ আর ছাগ্লামি কর।”

ডালিয়া কপাল কুঁচকে বলল,“ঘোড়ার ডিম না হয় তোর ডায়লগ হিসেবে মানলাম। ছাগ্লামি কী বইন?”

ইলোরা মিথিলার পেটের উপর মাথা রেখে ধপাস করে শুয়ে পড়ে বলল,“তোরা যা করছিস তা-ই ছাগ্লামি।”

মিথিলা চোখ বড়ো করে জোরে বলে উঠল,“ওরে আপ্পি, তোমার জন্য কি বালিশের অভাব পড়ছে? ও আম্মু গো, মইরা গেলাম গো। ওই ওঠো তাড়াতাড়ি।”

ইলোরা সোজা হয়ে উঠে বসে মিথিলার দিকে বিরক্তিভরা দৃষ্টিতে তাকাল। তখনই সাকিব তার রুম থেকে উচ্চস্বরে ডেকে বলে উঠল,“ইলু, এক গ্লাস পানি দিয়ে যা তো বোন।”

অন্যসময় হলে ইলোরা সঙ্গে-সঙ্গে উঠে চলে যেত। কিন্তু আজ কিছুটা বিরক্ত লাগল। সে মিথিলা আর ডালিয়াকে হাজার বলেও পাঠাতে পারল না। তারা তো ফোনে ব্যস্ত। ইলোরা রাগে ফুঁসতে-ফুঁসতে নিজেই চলল। এক গ্লাস পানি নিয়ে সাকিবের রুমে ঢুকে সাকিবের দিকে এগিয়ে ধরতেই সাকিব বলল,“আমি খাব না, এরেনকে দে।”

ইলোরার বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এরেন অকারণে পানি খেতে চেয়েছে। ইলোরা গাল ফুলিয়ে এরেনের দিকে পানির গ্লাসটা বাড়িয়ে ধরল। এরেন মিষ্টি হেসে ইলোরার হাত থেকে গ্লাসটা নিল। রনির ফোনটা স্বশব্দে বেজে উঠতেই এরেন পানি খাওয়া রেখে রনির হাত থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে নিল। রনি হন্তদন্ত হয়ে বলল,“আরে ফোন নিলি কেন? ফোন দে।”

এরেন হাতটা পেছনে লুকিয়ে বলল,“আগে দেখি কে ফোন করছে তখন থেকে।”

রনি বিরক্ত হয়ে বলল,“ধুর! বললাম তো আননোন নাম্বার। ফোন দে তো।”

সাকিব সন্দিহান কন্ঠে বলল,“মোটেও না। আননোন হলে তুই বারবার কল কেটে দিতিস না। নিশ্চয়ই পরিচিত কেউ। কাহিনি কী ভাই? স্পেশাল‌ কেউ না কি?”

রনি কপাল চাপড়ে বলল,“না রে ভাই। বিশ্বাস করস না ক্যান আমার কথা?”

ইলোরা এরেনের থেকে গ্লাসটা নেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। অথচ এরেন এখনও এক ফোঁটা পানি মুখেই দিচ্ছে না। প্রথমে সে বিরক্ত হলেও এখন তার আগ্রহ জাগল রনিকে কে কল করেছে তা জানার। সাকিব বলল,“এরেন, ফোনটা দে আমার কাছে। দেখি কে কল করছে।”

এরেন হাতটা পেছন থেকে সামনে এনে সাকিবের হাতে ফোনটা দিলো। রনি চেষ্টা করেও ফোনটা নিতে পারল না। সাকিব লক খুলে কললিস্টে গিয়ে অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল। রনি চঞ্চল দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। সাকিব ফোন থেকে দৃষ্টি উঠিয়ে চোখ বড়ো করে রনির দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল। এরেন আর ইলোরা প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে একবার সাকিবকে দেখছে, আরেকবার রনিকে দেখছে। এরেন সাকিবকে হালকা ধাক্কা মেরে বলল,“টাস্কি খাইছোস ক্যান? বল কে কল করছে।”

সাকিব হাতের ফোনটা এরেনের মুখের সামনে ধরল। এরেন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে সে-ও হা হয়ে গেল। বাকি রইল ইলোরা। সে আরও আগ্রহী হয়ে উঠল, অথচ কেউ কিছু বলছেই না। রনি আড়চোখে এরেনের দিকে তাকিয়ে শুকনো একটা ঢোক গিলল। এরেন মাথায় হাত দিয়ে বলল,“আমার বোনের সাথে প্রেম করে বেড়াস, আর আমি নিজেই জানি না! হায় কপাল!”

ইলোরার মুখের অবস্থাও এবার সাকিব আর এরেনের মতোই হয়ে গেল। রনি ফট করে বলে উঠল,“ফালতু কথা বলছিস কেন? আমি তোর বোনের সাথে প্রেম করতে যাব কোন দুঃখে?”

সাকিব বলল,“দুঃখে না সুখে তা আমরা কীভাবে জানব? আমরা তো হাতেনাতে প্রমাণ পেলাম। তলে তলে এতদূর?”

এরেন বলল,“আমার সন্দেহই তাহলে ঠিক হয়ে গেল। সামনে সামনে দুজনেই সাধু সেজে থাকো, যাতে কেউ জানতে না পারে।”

রনি অস্বীকার করে বলল,“না রে ভাই, এমন কিচ্ছু না। তোরা ভুল ভাবছিস। জারিন এমনিতেই মাঝে মাঝে ফোন করে আমাকে। জাস্ট খোঁজ নেওয়ার জন্য। এর বেশি কিছু না।”

“ওসব আমাদের বুঝা হয়ে গেছে। আমাদের কাছে লুকানোর কী ছিল রে ভাই? আমি কি তোদের মাঝে ভিলেন হতাম?”

“ধুর! তুই গিয়ে জারিনকে জিজ্ঞেস করিস, তাহলেই বুঝতে পারবি আমি সত্য বলছি না মিথ্যা।”

“ও জীবনেও স্বীকার করবে না আমার কাছে। ওর পেটের কথা বের করা অত সহজ না।”

সাকিব বলল,“আর স্বীকার করলেই কী, না করলেই কী? আমরা তো জেনেই গেছি।”

রনি রাগত স্বরে বলল,“আমার মাথা জানছোস তোরা। জারিনকে আমি বোনের মতো মনে করি। আবোল-তাবোল বকিস না তো।”

এরেন তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,“বুঝা হয়ে গেছে আমাদের। আপনার আর সাধু সাজতে হবে না স্যার।”

“বিশ্বাস করলে করবি না করলে নাই। আমার ঠেকা পড়েনি তোদের জোর করে বিশ্বাস করানোর।”

এরেন রনির কথায় পাত্তা না দিয়ে ঢকঢক করে গ্লাসের পানিটুকু গলাধঃকরণ করল। পানি খেয়ে এরেন ইলোরার হাতে গ্লাসটা ফিরিয়ে দিলো। ইলোরা গ্লাসটা নিয়ে চুপচাপ রুম থেকে চলে এল। আড্ডা শেষ করে এরেন আর রনি বিকাল চারটায় ইলোরার বাসা থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় এরেন সন্ধানী দৃষ্টিতে আশেপাশে ইলোরাকে খুঁজেও পায়নি। ইলোরা তখন নিজের রুমে বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল। এরেনের মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেল। দুটো দিন মেয়েটাকে ভার্সিটিতে না দেখে তার খুব অস্থির লাগছিল। তার ওপর আজ যখন সাকিবের থেকে শুনলো ইলোরা অসুস্থ, তখন তার অস্থিরতা আরও বেড়ে গিয়েছিল। ঐ মুখটা না দেখলে যে তার ভেতরের অস্থিরতা একটুও কমবে না, তা সে বেশ বুঝতে পেরেছিল। সঙ্গে-সঙ্গে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আজ সাকিবের সাথে গিয়ে মেয়েটাকে দেখে আসবে। কথা যদি না-ও বলা হয়, একনজর দেখতে পেলেই চলবে। তাই সে ক্লাস শেষে হঠাৎ সাকিবকে বলে বসেছিল সে সাকিবের বাসায় যেতে চায়। এতে সাকিব আর রনি খুব অবাক হয়েছিল। কিন্তু এরেন অজুহাত দেখিয়ে বলেছিল সাকিবের মা যেহেতু অনেকদিন ধরে যাওয়ায় জন্য এত করে বলছে, সেহেতু না গেলে সেটা খুব খারাপ দেখায়। একবার অন্তত তার সাথে দেখা করে আসা উচিত। গুরুজনের কথা এভাবে অমান্য করা একদম ঠিক না। সাকিব আর রনিকে কোনোমতে বুঝিয়ে সে বহুল আকাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে একনজর দেখার আশায়, নিজের অপছন্দের কাজকেও বলি দিয়ে সোজা ইলোরার বাসায় চলে গিয়েছিল। এই যে এখন তার ভেতরের অস্থিরতা কতটা কমে গেছে, অপছন্দের জের ধরে রাখলে তো আর এই অস্থিরতা এক ফোঁটাও কমতো না। মাত্র দুদিনেই মেয়েটার ওই লজ্জা মাখা মুখটা না দেখতে পেয়ে মনটা কেমন উতলা হয়ে গেল! এখন তো ইচ্ছে করছে একে সারাজীবনের জন্য নিজের সামনে রাখতে। কিন্তু নিয়তি? সে কি তা হতে দিবে? হয়তো দিবে, হয়তো দিবে না। ভাগ্যে যা আছে তা তো হবেই। ঐ যে বলে না? “ভাগ্যের লিখন না যায় খন্ডন!”

চলবে………………………..🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here