#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
#পর্ব:০৩
#যারিন_তাসনিম
পরেরদিন রাহা স্কুলে গিয়ে দেখলো, সিদ্ধী মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। রাহা সিদ্ধীর পাশে বসে বললো, “কি রে? মন খারাপ কেনো?”
সিদ্ধী পিছনে থাকা দুই বেণি সামনে এনে বললো, “হোমওয়ার্ক করি নাই।”
“ওহ এই কথা। এ তো নিত্যদিনের কাহিনী!”
সিদ্ধী আরো মুখ ফুলিয়ে বললো, “তুই এভাবে চিল মুডে বলতে পারলি? অনন্যা মিস খুব বকবে।”
রাহা সিদ্ধীর কাঁধে হাত দিয়ে বললো, “আরে আমি চিল মুডে বললাম, কারণ আমি তোর হোমওয়ার্কটা করে এনেছি। আমি জানতাম, তুই করবি না।”
টিফিন টাইমে,
রাহা আর সিদ্ধী স্কুলের নিচের সিঁড়িতে বসলো। সিদ্ধী সমুচা মুখে দিয়ে বললো,
“ভাইয়ার কি খবর?”
“হুম, ভালো।”
সিদ্ধী রাহার কান জোরে টেনে বললো,
“তোকে মিথ্যে বলতে নিষেধ করেছিলাম। যদি সত্যিই ভালো হত, তাহলে তুই মুখ বড় করে হা করে হুম বলতি।”
“উফ! ভালো না।”
সিদ্ধী কান ছেড়ে দিয়ে বললো,
“কেনো কি হয়েছে?”
“একটুও টাইম দেয় না। রেগুলার ঘুমায় যায়। আমি আমার কথাও শেষ করতে পারি না। খালি ঘুম, ঘুম করে। আমার সন্দেহ হয় রে!”
সিদ্ধী রেগে গিয়ে বললো,
“এই ফালতুর সাথে রিলেশন শেষ করতে বলসিলাম না? শেষ করস না কেন? তোর সাথে ওই ছেলের এক ফোঁটাও যায় না।”
গাল বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। বললো,
“এতটা সহজ না রে, যতটা সহজভাবে তুই বলছিস। ভালোবাসাটা খুব কঠিন, সত্যিকারের ভালোবাসলে সহজে বিচ্ছেদের কথা মুখে আনা যায় না। আর আনা গেলেও সত্যিকারের বিচ্ছেদ হয় না। আবেগী মন বিচ্ছেদ হতে দেয় না।”
“এক কাজ করিস। পরের বছর এস.এস.সি পরীক্ষায় ভালোবাসার এসব সংজ্ঞা লিখে আসিস।”
বাসায় এসে রাহা রাব্বিকে কোলে নিলো। রাব্বি চোখগুলো পিটপিট করে বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। খুশিতে চোখেমুখে ঝিলিক দিয়ে উঠেছে। এক বছরের ছেলেটা যেনো কত বুঝে যে, তার বোন স্কুল থেকে ফিরেছে।
———————————————————————————————————
সিদ্ধীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। সিদ্ধী রাহাকে ফোন দিয়ে বলা শুরু করলো,
“শুন, ছেলে আমেরিকায় জব করে। বিয়ের পর আমাকেও আমেরিকা নিয়ে যাবে। আমার খুব কান্না আসছে রে। আমি আব্বু, আম্মু, রাঈদ আর তোকে ছেড়ে যেতে পারবো না। ”
রাহা ল্যাপটপ বন্ধ করে বললো,
“আরে বোকা মেয়ে, তুই আমাদের ছেড়ে যাচ্ছিস কোথায়? তোকে তো আনবে দেশে।”
“হ্যাঁ, সেটা ৩-৪ বছর পর। আমি পারবো না এত বছর তোদের ছেড়ে থাকতে।”
বেলকনিটাকে নিজের মত করে সাজিয়েছে। রাহা বেলকনির ফ্লোরে গ্রিন গ্রাস ম্যাটও বিছিয়েছে। বসলে মনে হয়, ঘাসের উপর বসে আছে। কিন্তু কোনো গাছ লাগায় নি। ১১ তালা থেকে আকাশটা বড্ড সুন্দর দেখতে লাগে। সে আলাদা করে গাছের প্রয়োজনবোধ করে নি। বেলকনি গিয়ে গ্রিন গ্রাসের উপর বসে রাহা বললো,
“শুন, আন্টির কাছে শুনেছি ছেলে খুব ভালো। তাই এমন ছেলে হাতছাড়া করা উচিৎ হবে না। বাই দা ওয়ে, ছেলের নাম কি?”
“তাশরিক তানিম”
“ওহ, সুন্দর নাম।”
সিদ্ধী মন খারাপ করে জবাব দিলো,
“হুম।”
রাহা কাঁপা গলায় বললো,
“মন খারাপ করিস না প্লিজ। আস্তে আস্তে সব মানিয়ে নিতে পারবি।”
“তোর গলা কাঁপছে কেনো? কান্না আসছে?”
রাহা হেচকি দিলো। এরপর সত্যিই জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করলো। দুজন মানুষের সামনে রাহা নির্দ্বিধায় কাঁদতে পারে। একজন চন্দ্রিমা, যে বোনের থেকেও বেশি। আরেকজন সিদ্ধী, যার সাথে রক্তের সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও হৃদয়ের বন্ধনে আবদ্ধ সে। হেচকি দিতে দিতে বললো,
“আমি ওকে এখনো……ভালোবাসি…..। এখনো ওর…….. অপেক্ষায় আছি…।”
হেচকির কারণে কথা বলতে পারছিলো না। এরপর আরো কাঁদলো, আস্তে আস্তে কান্নাটা কমে আসলো। নিজ থেকেই রাহা বললো,
” এতদিন অবধি আমি যতটুকু হেসেছি, তার সবটুকুই সম্ভব হয়েছে তোর আর চন্দ্রিমা আপুর জন্য। হাসির আড়ালে কষ্ট লুকাতে পেরেছি তোদের জন্য। আর দুজনের মধ্যে তুই চলে গেলে আমার কি হবে? আমি কীভাবে থাকবো?”
সিদ্ধী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“তুই ও বিয়েটা করে নে।”
রাহা স্তব্ধ হয়ে গেলো সিদ্ধীর কথা শুনে। পুরো পরিবার তাকে এতদিন বিয়ে করতে বললেও সিদ্ধী একবারও বলে নি। কিছু সময় মানুষ এতটাই অবাক হয়ে যায়, যখন কাঁদতে চেয়েও কাঁদতে পারে না।
সিদ্ধী কথা ঘুরিয়ে বললো,
“আচ্ছা শুন, আমার হলুদে তুই জর্জেটের শাড়ি পরবি। শাড়িটার আঁচলের দু’পাশে হলুদ রঙ থাকবে। আর মাঝে বেগুনি রঙ। আর কুচিতে হলুদ,বেগুনি দুটো রঙই থাকবে।”
“তুই কিনেও ফেলেছিস, তাই না?”
“বুঝলি কীভাবে?”
“এইযে এত ব্যাখ্যা দিয়ে ফেলেছিস, তাই।”
সিদ্ধী হাসলো। বললো,
“ব্লাউজটা বেগুনি রঙের।”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রাহা বললো,
“আচ্ছা। বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে?”
“হুম, পরের মাসের ২০ তারিখ।”
“ওহ। কি পরবি বিয়েতে?”
“তাশরিক বলেছে, লেহেঙ্গা পড়তে। আর তুইও লেহেঙ্গা পরবি।”
“ওরে বাবা, তাশরিক! নামও ডাকা শুরু করেছিস?”
“তো কি? তোর মত ‘ও, ও’ করবো নাকি?”
রাহা চুপ করে রইলো।সিদ্ধী দ্রুত গতিতে বললো,
“শোন না, কালকে তাশরিক আর ওর ফ্রেন্ড আসবে। আমি আর তুইও যাবো।”
“আমি গিয়ে কি করবো?”
সিদ্ধী নাক মুখ ফুলিয়ে বললো,
“তুই আমার গুলুস ফুলুস টুলুস ফ্রেন্ড। আর তুই যাবি না? তাশরিক ফ্রেন্ড নিয়ে আসবে, আর আমি “ব্রোকেন এঞ্জেল” গানের মত “আই এম সো লোনলি” বলতে বলতে দেখা করতে যাবো?”
রাহা হেসে উঠলো। সিদ্ধী আবার বললো,
“শুন, এখন রাখি। তাশরিক ফোন দিচ্ছে কেনো জানি। ”
“আচ্ছা”
রাহা আকাশের দিকে তাকিয়ে কোনো চাঁদ দেখতে পেলো না। চাঁদ কি আজ উঠে নি? নাহ, মেঘ হয়তো ঢেকে দিয়েছে। সিদ্ধী নিশ্চয়ই এখন তাশরিক ভাইয়ার সাথে ফোনে কথা বলছে আকাশের দিকে তাকিয়ে। আচ্ছা সিদ্ধী কি ভালোবাসে তাশরিক ভাইয়াকে? ওদের তো এরেঞ্জ ম্যারেজ, দু’দিনেই কি ভালোবাসা হতে পারে? কিন্তু ভালো না বাসলে আকাশের দিকে তাকিয়ে কারো সাথে কথা বললে তো কোনো অনুভূতি হয় না। রাহা তো ভালোবেসে একটা সময় কথা বলতো। অন্যরকম কিছু অনুভব করতে পারতো। সিদ্ধী যদি ভালো না বেসে কথা বলে, তাহলে হয়তো ও তেমন কিছু অনুভব করতে পারে না।
দরজায় নকের আওয়াজে রাহার আজগুবি চিন্তার ছেদ ঘটলো।
রাব্বি এসেছে।
চলবে,,,