বাঁধন ছেঁড়া প্রেম পর্বঃ৫

0
1045

#বাঁধন_ছেঁড়া_প্রেম
#পর্ব:০৫
#যারিন_তাসনিম
ধীর কণ্ঠে রাহা জবাবে বললো,
“জ্বী, অবশ্যই!”
নিয়াজ বসে তার পছন্দের গার্লিক চিকেন উইংস থেকে এক কামড় খেল।
রাহা কফি এক চুমুক খেয়ে নিয়াজের দিকে তাকালো। নিয়াজ অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলেও বুঝতে পারছিলো, রাহা তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের চশমা ঠিক করে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরলো। বারবার চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে শুরু করলো।
রাহা ফিক করে হেসে দিলো। বললো,
“আপনি বোধহয় আনকমফরটেবল ফিল করছেন।”
জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে নিয়াজ বললো,
“না, না। তেমন কিছু না।”
রাহা মুখে হাসি বজায় রেখেই বললো,
“ছেলে মানুষদের এত লজ্জা পেতে দেখি নি।”
নিয়াজ জবাব দিলো না। ওয়েটারকে ডেকে তার খাবারটা পার্সেল করতে বললো। রাহা অবাক হয়ে বললো,
“আপনি খাবার পার্সেল করতে কেনো বললেন?”
নিয়াজ খুব বিরক্ত হচ্ছে। উঠে তাশরিকের টেবিলের কাছে গিয়ে বললো,
“তাশরিক।”
তাশরিক হেসে হেসে সিদ্ধীকে কিছু বলছিলো। নিয়াজের বাধা পেয়ে তার দিকে তাকালো। চমকে বললো,
“কি হয়েছে?”
স্বাভাবিকভাবে নিয়াজ বললো,
“আমি যাচ্ছি। তুই থাক।”
তাশরিক দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো,
“যাচ্ছি মানে? চলে কেনো যাচ্ছিস?”
ক্ষিপ্ত কণ্ঠে নিয়াজ বললো,
“যাবো মানে যাবো। আমার পার্সেলের প্যাকেটটা তুই নিয়ে আসিস।”
তাশরিক জানে, নিয়াজ একবার যেটা বলেছে সেটা করবেই। তাই রাজি হয়ে গেলো। বললো,
“ঠিক আছে, যা।”
নিয়াজ দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল। রাহা সিদ্ধীর পাশে বসে বললো,
“লোকটা ভয়ংকর বেয়াদব।”
সিদ্ধী বললো,
“কি হয়েছে রে?”
তাশরিক ততক্ষণে বসে বললো,
“কিছু মনে করো না।ওর হয়তো শরীরটা খারাপ লাগছে, তাই চলে গিয়েছে।”
“আমারও যেতে হবে এখন।”
সিদ্ধীর কথা শুনে তাশরিকের মন খারাপ হয়ে গেলো। কিন্তু এই মুহূর্তে তাশরিকের খুব জানা প্রয়োজন, নিয়াজ হঠাৎ কেনো চলে গিয়েছে। অভিমানী সুরে বললো,
“সবাই ব্যস্ত। আমিই শুধু ব্যস্ত না।”
সিদ্ধী চুপ করে রইলো। রাহা অপমানে, লজ্জায় বললো,
“ভাইয়া, আসলে আমি উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, উনি আনকমফরটেবল ফিল করছেন কিনা। আর তারপরই উনি এমন বিহেভ করলো।”
সিদ্ধী হা করে তাকিয়ে রইলো। তাশরিক বললো,
“আসলে কিছু মনে করবেন না। ও একটু এমনই, চাপা স্বভাবের। মিশুক না খুব একটা। তবে একবার কারো সাথে মিশে গেলে খুব আপন করে নেয়। ”

রাহার মন মানলো না। এমন বিহেভিয়ারে তার ইগোতে খুব লেগেছে। সিদ্ধী কপাল কুচকে বললো,
“এ আবার তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড হলো কি করে?”
“বললাম না, একবার ওর সাথে মিশে গেলে খুব আপন করে নেয়। আর আমাকে একটু বেশিই আপন করে নিয়েছে।”
“অপোজিট ক্যারেক্টার কোনোদিন বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে নাকি?”
তাশরিক কিছু বলার আগেই রাহা বললো,
“অবশ্যই। তুই জানিস, অপোজিট ক্যারেক্টারের মানুষগুলোর বন্ধুত্বই বেশি সুন্দর হয়। আর অপোজিট ক্যারেক্টারের দুটো মানুষ একসাথে পুরো জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত যখন নেয়, তখন সবথেকে ভালো পদক্ষেপে তারা পা দেয়। দেখ, নিয়াজ ভাইয়া যেমন চুপচাপ, মিশুক না, তার বউও যদি মিশুক না হয়, চুপচাপ হয়, তাহলে তাদের মধ্যে বন্ডিংটা কখনোই ভালো হবে না। তারা দুজন কখনো কথা বলবে না, তাদের মধ্যে শেয়ারিং, কেয়ারিং থাকবে না। কিন্তু তার বউ যদি মিশুক হয়, চুপচাপ না হয়, তাহলে তার বউ তার সাথে অনেক কথা বলবে, তার প্রথমে বিরক্ত লাগলেও পরে একসময় খুব ভালো লাগবে। ভাববে, মেয়েটা এমন কেনো। এক অজানা ভালোলাগা কাজ করবে। মেয়েটার প্রতি কৌতূহল বাড়বে, কারণ, সে একদম ভিন্ন। আর একটা সময় ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। আবার দুজনেই যদি রাগী হয়, তাহলে দুজনে একসাথে রাগ দেখাবে, ঝগড়া-অশান্তি হবে।তাই যেকোনো একজনের নরম হতে হবে। তবে আমি বলবো না, অনেক বেশি ভিন্নতা থাকা উচিত দুজনের মধ্যে। দুজনের পছন্দ অবশ্যই এক হওয়া উচিত। নাহলে সংসারে অশান্তি হয়। যেমন ধর, তুই ঝাল খেতে পছন্দ করিস, কিন্তু ভাইয়া কম ঝাল খায়। তখন তুই তোর পছন্দমতো রান্না করলে ভাইয়া রেগে যাবে। আবার তোরও ঝাল বেশি ছাড়া খেতে ভালো লাগবে না। বিষয়টা ঠিক এরকমই।”

সিদ্ধী, তাশরিক অবাকপানে চেয়ে রইলো। কিন্তু সিদ্ধী সঙ্গে সঙ্গে তাশরিককে জিজ্ঞেস করলো,
“এই, আমি আসলেই ঝাল বেশি খেতে পছন্দ করি। তুমি?”
তাশরিক খুশি হয়ে বললো,
“আমিও।”
“হুম, তাহলে তোমাকে বিয়ে করবো।”

তাশরিক আর রাহা দুজনেই হেসে দিলো।

সিদ্ধীকে তাশরিক বাড়ি পৌঁছে দিতে চাইলেও সিদ্ধী রাজি হলো না। সিদ্ধী রাহাকে নিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে চাইছে। কিন্তু সেটা তাশরিককে জানাতে চায় না৷ এজন্যই অনেক বুঝিয়ে তাশরিককে একাই পাঠিয়ে দিলো। তাশরিক বিল পে করে চলে গেলো। সিদ্ধী রাহাকে বললো,
“চল।”
রাহা ভ্রুকুটি করে বললো,
“কোথায়?”
হাতে পার্স নিয়ে সিদ্ধী দাঁড়িয়ে বললো,
“সারি ঘাট।”
রাহাও দাঁড়িয়ে গেল। বললো,
“আজ না, প্লিজ। আমার হসপিটাল যেতে হবে।”
সিদ্ধী মন খারাপ করে বললো,
“আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, তুই শুধু লাঞ্চ টাইমের জন্য এসেছিস। তাহলে শুক্রবার যাবি?”
রাহা সিদ্ধীর গাল টিপে বললো,
“অবশ্যই।”

রাহা হসপিটাল চলে গেলো। আর সিদ্ধী বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।

তাশরিক বারবার নিয়াজকে ফোন করলো, কিন্তু ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলো না। তাশরিক পার্কে সেই পরিচিত কাঠের বেঞ্চের কাছে গেল, যেখানে মন খারাপ বা রাগ হলে নিয়াজ তার কালো রঙের সময়টাকে অতিবাহিত করে।
কিন্তু বেঞ্চ খালি দেখে তাশরিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগলো। আশেপাশে অস্থির চোখ বুলাতেই দেখলো, নিয়াজ একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের নোংরা পুকুরে গভীর মনোযোগ নিয়ে তাকিয়ে আছে। তাশরিক নিয়াজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটলো। নিয়াজ অন্যদিকে তাকালো। তাশরিক নিয়াজের দু’গাল চেপে ধরে তার দিকে ফিরিয়ে বললো,
“কিরে, হঠাৎ চলে এলি কেনো?”
নিয়াজ তাশরিকের হাত দুটো সরিয়ে বললো,
“এমনি, ভালো লাগছিলো না।”
তাশরিক এবার নিয়াজের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। বললো,
“শুধু জিজ্ঞেস করেছে, আনকমফরটেবল ফিল করছিস কিনা। তাতেই রাগ হয়ে গেলি!”
নিয়াজ নিচু হয়ে একটা ঢিল উঠিয়ে দূরে পুকুরের স্থির পানিতে ফেললো। ঢিলটি পুকুরের স্থির পানির কণাগুলোকে আন্দোলিত করলো। আন্দোলিত কণাগুলো আবার পার্শ্ববর্তী স্থির কণাগুলোকে আন্দোলিত করে ঢেউ সৃষ্টি করলো। ঢিল পড়ার আওয়াজ হলো। আবার গাছে হেলান দিয়ে বললো,
“পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য একত্র করে বোধহয় আল্লাহ ওকে তৈরি করেছে।মুখমন্ডলে যেনো স্বর্গের ছোঁয়া। চোখগুলো একটু বেশিই গভীর। ।”

তাশরিক কিছু মুহূর্তের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ফেরিওয়ালার ডাকে নিস্তব্ধতা ভাঙে। বলে,
“তুই তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছুটা সুভার বর্ণনা দিয়ে দিলি।”
মৃদু হেসে নিয়াজ বললো,
“সে তো সুভারই প্রতিরূপ।”
“কে?”

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here