রৌদ্রমাখা বর্ষা পর্ব-৩

0
821

#রৌদ্রমাখা বর্ষা
আলহীনা ইনাম [ছদ্মনাম]

০৩,,

সূর্য ওঠার পরপরই আফাফ কাজ শুরু করে দিয়েছে। মধ্যাহ্নভোজের পূর্বেই নিদ্রের আসার কথা। নিলা শিকদার মাঝে মাঝে এসে তদারকি করে যাচ্ছেন ওর কাজের। আজকে খাবারে ঝাল দেওয়া একদমই নিষেধ। আনাবিয়ার ডায়েট চার্টও ওর হাতে দেওয়া হয়েছে। আফাফ প্রথমেই সেগুলো রান্না করলো নিলা শিকদারের হুকুমে। একবার বলতে ইচ্ছা করছিলো, সে আনাবিয়ার কাজ করার জন্য সংসারের দ্বায়িত্ব নেয়নি। কিন্তু বললো না। খাবারের গন্ধ নাকে যেতে বমি আসছে ওর। বুঝতে পারছে অরুচি আসছে। নাকে ওড়নার মাথা মাঝে মাঝে চেপে ধরে রাখছে।

‘আফাফ, যে ডায়েট চার্টটা দিয়েছিলাম তার সব রান্না শেষ করে ফেলেছো?’
নিলা শিকদার কিচেনের দরজায় দাঁড়িয়ে কথাটা বললেন।

আফাফ মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ বললো।

নিলা শিকদার আফসোসের সুরে বললেন,
‘দুঃখিত আফাফ। তোমাকে খামোখা কষ্ট দিয়ে ফেললাম। ওটা ফেলে দাও বা কাউকে দিয়ে দাও। আনাবিয়ার এখন ওই চার্ট ফলো করা সম্ভব না। নিদ্র আমাকে এইমাত্র বললো। তুমি ঝাল কম দিয়ে যা রান্না করছিলে, সেগুলোই করো।’

আফাফ করুণ দৃষ্টিতে একবার ওনার দিকে তাকালো। নিলা শিকদারের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি চলে যেতে নিয়ে আবার ওর দিকে ফিরে বললেন,
‘যে মিষ্টিগুলোর কথা বলেছিলাম, আনিয়েছো?’

‘হ্যাঁ।’

‘মাছ রান্নার দ্বায়িত্বটা একদমই মর্জিনার উপর দিও না।’

আফাফ কেবল মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। অন্যান্যদিন আয়েশা শিকদার মাঝে মাঝে একটু আধটু সাহায্য করেন। কিন্তু আজকে তাও করছেন না। তিনি আত্মীয় সামলাতে ব্যস্ত। আবার লোকজন এতো বেশি আজকে, যেন মনে হচ্ছে ছোট খাট একটা বিয়ে বাড়ি। আফাফ কেবল দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে কাজে মন দিলো।

দুপুরের আগে আগে রান্না শেষ করে সবে টেবিল গোছাতে শুরু করেছে আফাফ। ডাইনিং এ বড় টেবিলটার পাশাপাশি আরো দুটো বিরাটাকার টেবিল পাতা হয়েছে, যেগুলো ডাইনিং এর সাথে সংযুক্ত লিভিং এরও অনেকটা জায়গা দখল করে বসে আছে। আফাফ একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো, ওর ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাওয়া শরীরটায় ওকে আরো বেশি সাধারণ মনে হচ্ছে। একবার ভাবলো কাজ শেষে শাওয়ার নিয়ে একটু সাজবে। মনের অদ্ভুত খেয়াল। ও জানে নিদ্র ওর দিকে হয়তো একবারও তাকাবে না। আবার আনাবিয়া ওর সাথেই আসছে। এরপরও ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখতে পারছে না।
নিলা শিকদার ডাইনিং এ এসে টেবিল গোছানোয় তদারকি করছেন। টেবিল গোছাতে গোছাতেই সেই চিরচেনা কন্ঠস্বর তার কানে পৌঁছালো। অবশ্য সে কেবল নিলা শিকদারকেই ডেকেছে। আফাফ সামনে তাকিয়ে দেখতে পেলো নিদ্র দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে।

আফাফ কয়েক মুহূর্ত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে। বয়স কতো তার? ২৩ বা ২৪ বছর? একদমই না। সামনের মাসে ত্রিশে পা দেবে সে। অবশ্যই আফাফের থেকে সে অন্তত সাত বছরের বড়। কিন্তু তাকে দেখে মনে হয়, বয়স থমকে গিয়েছে সেই চব্বিশে! আফাফকে বরং তার থেকে বড় মনে হয়। সাদা শার্টের উপরের খোলা বোতামের সাথে সানগ্লাসটা ঝুলছে। সুঠাম দেহের গড়নে শার্টটা এঁটে আছে যেন তার উদ্দেশ্যই শরীরের গঠন স্পষ্ট করে ফুটিয়ে তোলা। তাকে কি শহরের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম পুরুষ বলা যায়? আফাফ চিন্তা করলো।

নিদ্র এসে নিলা শিকদারকে মৃদু আলিঙ্গন করলো। নিলা শিকদার এতোদিন পর ছেলেকে কাছে পেয়ে কপালে স্নেহভরা চুমু খেলেন। আফাফ মনোযোগ দিয়ে দেখছিলো ওদের কাজ। ওর ধ্যান ভাঙলো আনাবিয়ার কন্ঠে। আনাবিয়া নিলা শিকদারের সাথে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত। ইতিমধ্যে বাড়ির সবাই টের পেয়ে গিয়েছে নিদ্র এসেছে। একবারে শূন্য থেকে যেন একেকজনের আগমন ঘটতে থাকলো এখানে। মূহুর্তে একটা কোলাহলপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হলো। আফাফের ধারণা সত্যি করে আসলে কেউই তার দিকে কোনো নজর দিলো না। সকলে আনাবিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

দুপুরে খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে বিধায় ওরা খুব দ্রুতই ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসে পড়লো একেকজন। এখানে মানুষ আর চেয়ারের সংখ্যা সমান। আফাফের আর ফ্রেশ হয়ে আসা হয়নি। দুটো চেয়ার খালি আছে, একটা নিদ্রের পাশে। নিলা শিকদার এবং আনাবিয়া কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। নিলা শিকদারের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। আনাবিয়ার ফর্সা গাল বারবারই পাকা টমেটোর মতো লাল হয়ে যাচ্ছে নিলা শিকদারের কথা শুনে।
আফাফের হঠাৎই অদ্ভুত খেয়াল হলো। নিদ্রকে আজকে ওর কাছে খুব বেশি আকর্ষণীয় লাগছে। এটা কি এতোদিন চোখের সামনে না দেখার ফল! নাকি আনাবিয়ার সাথে নিদ্রকে দেখে ও ইর্ষান্বিত হওয়ার কারণ! আফাফ জানে না। একপ্রকার ঝোঁকের বশেই আফাফ নিদ্রের পাশের চেয়ারটা দখল করে নিলো। এরপরের ঘটনা ও ভেবেও দেখেনি। উপস্থিত প্রায় সকলেই এমনভাবে তাকালো যেন, সে খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছে। নিদ্র একবার ওর দিকে তাকিয়ে আবারও হাতের মোবাইলটায় মনোযোগ দিয়ে বললো,
‘এটা আনাবিয়ার জায়গা। তুমি উঠে যাও।’

সবাই সব জানলেও, সবার সামনে স্বামীর এই অবজ্ঞাটা আফাফের আত্মসম্মানে আঘাত করলো। আফাফ জানে না ও কি করছে। শুধু বললো,
‘বাইরের মেয়েটার জন্য আমি আমার জায়গা কেন ছাড়বো? আপনার স্ত্রী আমি আর এই জায়গাটাই আমি প্রত্যাশা করি।’

কথাটা বলেই আফাফ বুঝতে পারলো, ও আজকে দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলেছে। এর কারণও উদঘাটন করে ফেললো, আনাবিয়া! হ্যাঁ, ওকে দেখে আফাফের সহ্য সীমা পার হয়ে গিয়েছে।
নিদ্র অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়েছে। আফাফের কাছে থেকে কথাগুলো ও আশা করেনি।
নিলা শিকদার আফাফের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
‘আফাফ ওঠো আর আনাকে বসতে দাও। ও আমাদের অতিথি, ওকে অসম্মান করো না। দেখো এখানে আর কোনো চেয়ার ওর জন্য ফাঁকা নেই। নিদ্রের পাশে ও বসবে।’

আফাফ যখন দেখলো ওর পক্ষে বলার মতো কেউ নেই,
তখন ও উঠে পড়লো। এর ভিতর আরো দু একজন বলে উঠলো, দ্রুত বসাবসি শেষ করে ওদের সার্ভ করতে। ও কিভাবে অধিকার দাবি করতে পারে, যখন নিদ্রই সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছে!
আফাফ উঠে যেতেই আনাবিয়া সেখানে বসলো। আফাফ খানিক দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। নিলা শিকদার এবার হাসি মুখে সকলের উদ্দেশ্যে যা বললেন, তাতে আফাফের পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেলো। আনাবিয়া অন্তঃসত্ত্বা। সে নিদ্রের সন্তানের মা হতে চলেছে। আর অতি শীঘ্রই ওদের বিয়ে হবে। এই ঘোষণা আফাফের কানে শূল ঢুকিয়ে দিলো। আনাবিয়ার ঠোঁটের কোণায় লজ্জা মিশ্রিত হাসি। আফাফ হতাশ দৃষ্টিতে আনাবিয়ার দিকে তাকাতেই ওদের চোখাচোখি হলো। আনাবিয়া ওর চোখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল আর হয়তো জায়গাটা ছেড়ে দেওয়ার জন্য হোক বা বিদ্রুপের জন্য হোক, উপহারস্বরূপ একগালে গর্ত খুঁচে একটা চওড়া মিষ্টি হাসি দিলো।

আফাফ আর ওখানে দাঁড়াতে পারলোনা। ছুটে চলে আসলো বেডরুমে। শুনতে পাচ্ছে ওদের কোলাহল। ওদের উল্লাস। নিদ্রের চোখেও আজকে আফাফ খুশি লক্ষ্য করেছে।
আফাফ বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। আর এই ঘটনার সর্বশেষ প্রতিক্রিয়াস্বরূপ বালিশটা মুখে চাপা দিলো আর চিৎকার করে কেঁদে দিলো।

আফাফ ক্লান্ত ছিলো এবং এই অনুভূতি থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছিলো। ও ঘুমিয়ে পড়লো। ও সারাদিন কিছু খায়নি আর এটা দেখার কেউ ছিলো না। যখন ও ঘুম থেকে জেগে উঠলো, তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। ও একটু অবাকও হয়েছে, ঘুমাতে পারলো কিভাবে!! সেইসময়কার ঘটনাটা স্মৃতিপটে স্পষ্ট হয়ে উঠলো আবারও। আফাফ চাইছে, সেটা কোনো দুঃস্বপ্ন হোক। কিন্তু আফসোস! সেটা কখনোই কোনো দুঃস্বপ্ন নয় বরং ওর জন্য দুর্ভোগ বয়ে আনা কঠিন বাস্তব। আফাফের বুক ভার হয়ে আসছে। কান্না পাচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলে নিলো।
উঠে দাঁড়াতেই মাথা ঘুরছে। ও সেভাবেই ধীরে ধীরে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে বসে পরলো। আহা! যদি এই পানির সাথে কষ্টগুলো ধুয়ে যেতো!

আফাফ ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ধোঁয়ার গন্ধে আরো অসুস্থবোধ করছে। তবে অবাক হয়নি ও। দরজা খোলাই ছিলো এতক্ষণ যা এখন বন্ধ। জানালাগুলো সব বন্ধ ছিলো। বর্ষাকাল আসার পরপরই বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। কখনো রোদ তো এই বৃষ্টি। তাই বেশিরভাগ সময় জানালা বন্ধই থাকে। নিদ্র সোফার উপর বসে সিগারেট টানছে। আফাফ সেন্টার টেবিলের উপর তাকিয়ে Marlboro Black এর একটা প্যাকেট দেখলো। অ্যাসট্রের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো এর আগে নিদ্র আরো একটা শেষ করেছে। সাথে ভাজ করা একটা কাগজ।
আফাফ ওকে কিছুই না বলে বেলকনির দরজা খুলে নিজের ভেজা জামা কাপড় মেলে দিলো। রুমে ফিরে আসতেই নিদ্র ওর দিকে না তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
‘ডিভোর্স পেপারটায় সাইন করে দিও।’

কথাটা আফাফের বুকে গিয়ে বিঁধলেও ওর কিছু করার নেই। ওর হয়ে ওর পক্ষে দাঁড়ানোর কেউ নেই। নিলা শিকদার তো আগেই বলেছেন ওকে। আফাফ মৃদু কন্ঠে বললো, ‘আচ্ছা।’

‘আজ রাতের ভিতর দেবে। দাদুকে কি বলবে, মম নিশ্চয়ই বলে দিয়েছে।’

আফাফ তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে তৎক্ষনাৎ ফ্লোরে হাঁটু ভেঙে বসে সেই ভাজ করা কাগজটার ভাজ খুলে টেবিলের উপর রাখা কলমদানি থেকে কালো রঙের একটা কলম নিয়ে সাইন করে দিলো। পেপারটার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে ও। সেখানে আগে থেকেই নিদ্রের সই ছিলো। এখন ওর সইটাও সগর্বে জ্বলজ্বল করছে, ‘ফাবলিয়া আফাফ’।
আফাফ পেপারটা টেবিল ঘষেই নিদ্রের দিকে এগিয়ে দিলো। নিদ্র একবার পেপারটার দিকে তাকিয়ে আবার আফাফের দিকে তাকালো। টেবিলের উপর থেকে সেটা নিয়ে ভালো করে দেখলো না। ভাজ করে ফেললো। উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে নিয়েও থেমে গেলো। আফাফের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘আনাকে বিয়ে করার আগে পর্যন্ত এখানে থাকতে পারো। যাওয়ার আগে আমার রুমটা পরিষ্কার করে যেও।’

এরপর আফাফকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। শেষ কথাটার অর্থ আফাফ বুঝতে পারলো, ওর কোনো চিহ্নই এই ঘরে থাকা যাবে না। আফাফ চোখের পানি আর আটকালো না।

বেশ রাত হয়ে যাওয়ার পর আফাফের রুমের দরজায় নক পরে। আফাফ দরজা খুলে দিতেই নাহিন ঢুকলো ওর রুমে। সে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলোনা। নাহিন সোফার উপর বসে ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, ‘রিপোর্ট কি?’

আফাফ ভ্রু কুঁচকে বললো, ‘কিসের রিপোর্ট?’

‘ওহ ভাবি, অস্বীকার করো না। তুমি কনসিভ করেছো?’

আফাফ বিস্ফোরিত চোখে ওর দিকে তাকায়। নাহিন হেসে দিয়ে বলে, ‘আমি জানি। গতকালকে তুমি দাদুর সাথে দেখা করতে গিয়ে সেই হসপিটালেই নিজের চেক আপ করিয়েছো।’

আফাফ থতমত খেয়ে যায়। ও কাউকে কিছু বলেনি। নাহিনের জানার কথা না। আফাফের ভীত হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে আরো জোরে হেসে দেয়।
‘আমি গতকাল দাদুর কাছে গিয়েছিলাম। লিফটে কেউ ছিলো না। জানোই আমার Claustrophobia আছে। আমি সিঁড়ি বেয়েই উঠছিলাম। তোমাকে তিনতলায় Gynecologist ডাঃ আফরিনের কেবিনের বাইরে দেখেছি। হাতে লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটা খামও ছিলো। এখন বলো রেজাল্ট কি?’
নাহিন বললো।

আফাফ দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
নাহিন হাত দুটো এক করে মাথার পিছনে ধরে ব্যাকরেস্টে শরীর এলিয়ে দিয়ে বললো,
‘এই হলো পুরুষ মানুষ। বাড়িতে বউ থাকলে, সে যেমনই হোক, সামনে বলবে মানি না। আর ওদিকে! ঘরেরটাকে মানে না বলে তো বাইরেরটা সামলাতে। সে যাই হোক, বলছো না কেন কাউকে? ওদিকে তো আরেকটা বাঁধিয়ে বসে আছে।’

‘তুমি একটু বেশিই ম্যাচিউর হয়ে গিয়েছো!’ আফাফ কৌতুকপূর্ণ কন্ঠে বললো।

‘তা হয়েছি। একসাথে তিনটার নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাতে এতটুকু দরকার হয়।’

‘এই বয়সে তিনটা!!’

‘যা জিজ্ঞাসা করেছি তার উত্তর দাও না।’

‘বলতে চাই না। আমাকে নিয়ে তাদের বিব্রত হওয়ার প্রয়োজন নেই।’

‘এই হলো সমস্যা। মান অভিমান! বিরক্তিকর! এজন্যই বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা নেই আমার।’

‘তাহলে এই তিনটার কি হবে?’

‘ছ্যাঁকা খেয়ে কচু গাছ আর কলা গাছে গলায় দড়ি দেবে। না হলে হারপিক খাবে।’

‘ভালো বুদ্ধি।’ আফাফ হেসে দিলো নাহিনের ভঙ্গিমা দেখে। নাহিনও ওর সাথে তাল মিলিয়ে একপ্রস্ত হাসলো। এরপর ওদের রাতভর আড্ডা চললো। নাহিনের কালকে বেশি পড়ার চাপ নেই। তাই আড্ডা দিতেও সমস্যা নেই। তাছাড়া ও বেশি লোকজন পছন্দ করে না। ওর রুমে থাকলে ওর কাজিনরা এসে ওকে বিরক্ত করছিলো। সারা বাড়িতে আফাফের ঘরটাই খানিকটা নিরিবিলি। কারণ ওর খোঁজ কেউ রাখে না। ও থাকা না থাকা সমান। নাহিনও নিজের শান্তির খোঁজেই পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here