প্রতিশোধ 💘পর্ব_২৩

প্রতিশোধ
💘পর্ব_২৩

#লেখিকা_সুপ্রিয়া_নস্কর

নিলয় দোরবেল বাজায়।আর সাথে সাথে দরজা খুলে যায়।সামনে এদেরকে দেখে পিছিয়ে যেতে থাকে আয়ুসী।আয়ান দেখে আয়ুসীকে।মুখ চোখ শুকনো।আয়ুসীকে দেখে প্রথম এগিয়ে যায় ধ্রুব।আয়ুসীর সামনে গিয়ে-কী রে কেমন আছিস?

আয়ুসী কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে ধ্রুবর দিকে।তারপর নিলয়কে বলে-তুই এদেরকে এখানে এনেছিস?

নিলয় চুপ করে থাকে।

আয়ুসী-কী রে চুপ কেন?আমার সাথে থাকতে বুঝি তোর আর ইচ্ছা করছে না।

নিলয়-না দিদি তুই ভুল ভাবছিস।

ধ্রুব-তুই ওর উপর এমন করছিস কেন?আমাদের কথাটা একবার শোন তো।

এদিকে আয়ান আয়ুসীকে দেখতে থাকে।তার মুখের ভাষা হারিয়ে গেছে।আয়ুসী ব্যবহারে সে থমকে গেছে।

তোমরা এখানে কেন?চলে যাও এখান থেকে।-আয়ুসী

আয়ান আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।আয়ুসীর কাছে এগিয়ে এসে বলে-প্লিজ আমাদের কথাটা একবার শোনো।

আয়ুসী আয়ানের দিকে তাকায়।

আপনি!আপনি কেন এখানে?চলে যান এখান থেকে।-আয়ুসী

আয়ুসী এমন কর না।আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে।-আয়ান

কীসের কথা?আমি কোনো কথা শুনব না।-আয়ুসী

আয়ান এসে আয়ুসীর হাতটা ধরতে যায়।আয়ুসী পিছনে সরে যায় আর নিলয়কে বলে-কেন ভাই এদেরকে এখানে এনেছিস,কেন?

আয়ান আয়ুসীর আরো কাছে যেতে গেলে আয়ুসী আয়ানকে ঠেলে ঘর থেকে ছুটে বেড়িয়ে যায়।কেউ বুঝতে পারেনি আয়ুসী এমন করবে।সবাই আয়ুসীর পিছনে দৌড়াতে থাকে।আয়ুসীর সামনে সব ঝাপসা হয়ে যায়।সবাই চিল্লিয়ে আয়ুসীকে দাঁড়াতে বলে।কিন্তু আয়ুসী কারোর কথা শোনে না।হঠাৎ সামনে থেকে আসা একটা বাইকে আয়ুসীর ধাক্কা লাগে।বাইক চালক আয়ুসী এমন ভাবে দৌড়ে আসতে দেখে তিনি টাল সামলাতে পারে নি।আয়ুসী সাথে সাথে মাটিতে পরে যায়।তেমন বড় কিছু হয় না।অনেকটা কপালে কেটে যায় আর রক্ত বেড়িয়ে আসে।আর শরীরের কয়েক জায়গাতে আঘাত লাগে।এদিকে আয়ুসীর কাছে সবাই এসে পরে।

আয়ান মাটিতে বসে পরে।

আয়ুসী আয়ুসী চোখ খোলো।-আয়ান

ধ্রুব-ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।আয়ান আয়ুসী কোলে তুলে নেয়।

আয়ুসী চোখ খোলো।প্লিজ আয়ুসী চোখটা খোলো।-আয়ান কেঁদে ফেলে।

আয়ান শান্ত হো।-ধ্রুব

নিলয় কাছাকাছি ডাক্তারের নাম বলে।সবাই সেখানে যায়।আয়ুসীর তখনও জ্ঞান আসেনি।কপালে সেলাই পরে।তারপর আয়ান দেখতে পায় আয়ুসীর জ্ঞান ফিরছে।

আয়ুসী,আয়ুসী।-আয়ান

এদিকে ডাক্তার আয়ুসীকে ইঞ্জাকশান দেয়।তাতে আয়ুসী আবার চোখ বন্ধ করে নেয়।

আয়ান ভয় পেয়ে যায়।ডাক্তার বলে চিন্তার কারন নেই।ঘন্টাখানেকের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসবে।আর কিছু ওষুধ লিখে দেয়।

আমি এখনই ওকে ফিরিয়ে নিয়ে যাব-আয়ান

কিন্তু এতো রাতে কি যাওয়া ঠিক হবে-ধ্রুব

কিছু হবে না।-আয়ান

সবাই গাড়িতে বেড়িয়ে পরে।এদিকে আয়ুসীর জ্ঞান ফিরতে থাকে।কিন্তু কপালে ব্যথা আর শরীর দুর্বলে সে চোখ খুলতে পারে না।আর মাঝ রাস্তাতে সে ঘুমিয়ে পরে।ঘন্টাখানেকের মধ্যে আয়ানের বাড়িতে সবাই পৌঁছে যায়।আয়ুসী তখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।আয়ান ওকে নিয়ে ঘরে শুইয়ে দেয়।আর সবাই বসে থাকে।

ভোরের দিকে আয়ুসীর ঘুম ভেঙ্গে যায়।আয়ুসীকে দেখে সবাই ছুটে আসে।আয়ুসী চোখ খুলে চারিদিক দেখতে থাকে।সে বুঝতে পারে সে এখন কোথায়।তাড়াতাড়ি করে উঠতে যাবে আয়ান গিয়ে ধরে-তোমার শরীর দুর্বল।উঠ না।

আমি এখানে কী করে এলাম।আমি এখানে থাকব না।-আয়ুসী আয়ানের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।

প্লিজ আয়ুসী এরকম করিস না।তোর শরীর ভালো নেই।-ধ্রুব

কিন্তু আমি কেন এখানে?-আয়ুসী

আচ্ছা,তুই সুস্থ হয়ে যা তারপর যেখানে ইচ্ছা সেখানে চলে যাস।-ধ্রুব

ধ্রুবর কথায় আয়ান ধ্রুবর দিকে ফিরে তাকায়।ধ্রুব ইশারা করে ওকে চুপ করতে বলে।

কিন্তু—-আয়ুসী

আমি কথা দিচ্ছি তুই ঠিক হলে আমি তোকে দিয়ে আসব।-ধ্রুব

আয়ুসী আর কিছু বলে না।শরীর দুর্বল হওয়াতে তার কথা বলতেও ইচ্ছা করছে না।ধ্রুব আয়ানকে ডেকে নিয়ে চলে যায়।আর শ্রেয়াকে আয়ুসীর কাছে রেখে যায়।শ্রেয়া আয়ুসীকে শুইয়ে দেয়।

এদিকে আয়ান বাইরে এসে বলে-তুই ওকে সত্যি দিয়ে আসবি?

ধ্রুব-তখন ওটা না বললে ও শান্ত হত না।

কিন্তু—-আয়ান

ওকে আগে সুস্থ হতে হবে।তারপর দেখা যাবে কী করা যাবে।-ধ্রুব

আয়ান আর কিছু বলে না।এদিকে বেলাতে আয়ুসীর ঘুম ভেঙ্গে যায় শ্রেয়া আয়ুসীকে হেল্প করে তার ফ্রেশ হতে।আয়ান ধ্রুব ঘরে আসে আয়ানকে দেখে আয়ুসী অন্য দিকে ফিরে যায়।আয়ান সেটা লক্ষ্য করে।

ওকে ওষুধগুলো ঠিক মত দিয়েছ?-ধ্রুব শ্রেয়াকে বলে।

হ্যাঁ,দিয়েছি-শ্রেয়া

ধ্রুব আয়ুসীকে বলে-আমি এখন আসি আবার পরে আসব।

আয়ুসীর ইচ্ছা যেন ধ্রুব না যায়।ধ্রুব বুঝতে পেরে বলে- আমি আবার আসব।

ধ্রুব চলে যায়।শ্রেয়া থেকে যায়।এভাবে দুদিন কেটে যায়।শ্রেয়া এখানেই আছে।আর নিলয়ও আছে।আর ধ্রুব যাওয়াআসা করে।কিন্তু আয়ুসী আয়ানের সাথে কথা বলে না।আয়ান বুঝতে পেরে আয়ুসীর কাছে যায় না।তার খুব কষ্ট হতে থাকে।

শ্রেয়া সব বুঝতে পারে।সে ধ্রুবকে সব বলে।ধ্রুব বুঝতে পারে না কী করবে।

শ্রেয়া বলে-ওদেরকে একা থাকতে দিতে হবে।

মানে?-ধ্রুব

মানে আমরা কেউ এখানে আসব না।আর নিলয়কে নিয়েও চলে যাব।কিছুদিন ওদেরকে একা ছেড়ে দেব।আর এখন তো আয়ুসী বৌদি সুস্থ।-শ্রেয়া

হুম,এটা ভালো বুদ্ধি।কিন্তু ওরা কী রাজি হবে?-ধ্রুব

ওদের কেন বলব।তুমি তো যাওয়াআসা কর।আর তুমি আসবে না।আর নিলয়কে আমি বলব যে ও যেন আয়ুসীকে বলে ও এসেছে শুনে ওর বন্ধুরা দেখা করবে বলছে।নিলয় তোমার সাথে থাকবে।আর আমি বলব সামনে তো আমাদের বিয়ে তার কেনাকেটা কিছু বাকি আছে।আমি বলব আমি করেই চলে আসব।-শ্রেয়া

শ্রেয়ার বিয়ের আর এক সপ্তাহ বাকি।ও আর ধ্রুব না করেছিল বিয়েতে।কিন্তু সুষমা দেবী যেহেতু শোনেনি তাই ওরা আর কিছু বলতে পারে নি।বিয়ের অর্ধেক কেনা কাটা ওদের মা করেছে।ধ্রুব শ্রেয়া দু একদিন বেরিয়েছিল।

আচ্ছা,আয়ুসী কী আয়ানের উপর রেগে আছে?-ধ্রুব

আমার তো তাই মনে হয়-শ্রেয়া

কিন্তু কেন?-ধ্রুব

আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না।-শ্রেয়া

পরদিন শ্রেয়ার প্ল্যানমত যে যার মত কাজ করে।আর ধ্রুবও তাই করে।কিন্তু ও আবার বুদ্ধি করে বাড়ির বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়।প্রথম আয়ুসী থাকতে রাজি হয় না।কিন্তু সবাই বলে ওরা তাড়াতাড়ি চলে আসবে।তাতে আয়ুসী রাজি হয়।

আয়ুসী আয়ান বাড়িতে একা।আয়ান অন্য ঘরে আছে।আয়ুসীও অন্য ঘরে।আয়ুসী ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার জন্য কিচেনে আসতে যাবে।হঠাৎ দেখে লাভাকে।লাভাকে আয়ান খুব কম ছেড়ে রাখে।আয়ুসীকে দেখে লাভা চেল্লাতে থাকে।প্রথম সে চিনতে পারে না।আয়ুসী লাভার কাছে গিয়ে লাভার গায়ে হাত বোলাতে থাকে।লাভা চুপ করে আয়ুসীর আদর খেতে থাকে।

এদিকে লাভার চীৎকারে আয়ান বাইরে আসে।আয়ুসীকে দেখে।তার আগেকার কথা মনে পড়ে যায়।আয়ুসীকে এইভাবে দেখে তার খুব ভালো লাগে।আয়ুসী আয়ানকে এতক্ষণ দেখতে পায়নি।কিন্তু আয়ানকে দেখা মাত্র সে তাড়াতাড়ি করে চলে যেতে গিয়ে কাপড়ে পা আটকে যায়।আয়ুসী পড়ে যাচ্ছে দেখে আয়ান আয়ুসীকে ধরে ফেলে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।এদিকে সামনের কিছু চুল আয়ুসীর চোখে পরলে সে তাকিয়ে থাকতে পারে না।আয়ান তখন আয়ুসীর চুলগুলোকে সরিয়ে দেয়।আয়ুসী এতদিন পরে আয়ানের স্পর্শে কেঁপে ওঠে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে।আয়ুসীর হুঁশ ফিরলে আয়ুসী আয়ানের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।আয়ুসী চলে যেতে থাকে।

আয়ান বলে-আমি—-

আয়ুসী-আমি জানি।আমার যাতে অসুবিধা হয় তাই আপনি এমন করলেন তাই তো।

আয়ান-কী সব বলছ।

আয়ুসী-ঠিকই বলছি।কেন আপনি এখানে আমাকে কেন এনেছেন?আপনি তো সব জেনে গেছেন।তাও কেন আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন?

আয়ান-আয়ুসী আমার কথাটা একবার শোনো।

আয়ুসী-আপনার প্রতিশোধ নেওয়া কী শেষ হয়নি?

আয়ান রেগে গিয়ে জোরে বলে-আয়ুসী কী সব বলছ?

আয়ানের ব্যবহারে আয়ুসী চোখে জল এসে পরে।সে ছুটে ঘরে চলে যায়।আয়ান নিজের কাজে নিজের উপর রাগ দেখাতে দেওয়ালে ঘুঁষি মারতে থাকে।

কিছুক্ষণ বাদে আয়ান খাবার রেডি করে আয়ুসীর ঘরে দিয়ে আসে।আয়ুসী খাবার মুখে তোলে না।আয়ান খেতে বললে আয়ুসী অন্যদিকে ফিরে শুয়ে পরে।আয়ান কিছু আর বলে না চলে যায়।এদিকে বেলা বাড়লে আয়ুসী খিদে পায়।সে আয়ানের রেখে দেওয়া খাবারের দিকে চায়।কিন্তু খায় না।অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পর সে আর খিদে সহ্য করতে না পেরে আয়ানের খাবারটা খেতে থাকে।এদিকে আয়ান আয়ুসীর ঘরে ঢুকতে যাবে আয়ুসীকে খেতে দেখে সে লুকিয়ে পরে।আয়ান খুশি হয়।আয়ুসী খেয়ে শুয়ে পরে।

সন্ধ্যার সময় আয়ান লাভাকে ছেড়ে দেয়।আর লাভা ছাড়া পেয়েই আয়ুসীর রুমের দিকে ছুটে যায়।আয়ুসী ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিল লাভাকে দেখেই কোলে তুলে নেয়।এদিকে আয়ান লাভাকে ধরতে আয়ুসীর ঘরে এসে পরে।কিন্তু আয়ুসীর কোলে লাভাকে দেখে সে চলে যেতে থাকে।কিন্তু আয়ুসী বলে-নিলয়,শ্রেয়া আর ধ্রুব কোথায়?সন্ধ্যা হয়ে গেল এখনও তো এলো না।

আয়ান ফিরে তাকিয়ে বলে-আমি ফোন করে দেখছি।
আয়ুসীর সামনেই সে সবাইকে ফোন করে।কিন্তু সবার ফোন ব্যস্ত বলছে।কেউ ফোন ধরছে না।

কাউকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।-আয়ান

কী!আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।-আয়ুসী

কী আমি মিথ্যা বলছি।-এই বলে আয়ান আয়ুসীকে দেখিয়ে সবাইকে ফোন করে।

নিলয় কোথায় গেল?-আয়ুসী

বুঝতে পারছি না।-আয়ান

আয়ুসী চিন্তা করতে থাকে।আর আয়ান ফোন করতে থাকে।এদিকে নিলয় জানে সে না ফিরলে আয়ুসী চিন্তা করবে তাই সে ধ্রুবকে বলে অন্য কিছু বলতে।কিছুক্ষণের মধ্যে ধ্রুব ফোন করে বলে-নিলয় ফোন করেছিল।ওর বন্ধুর বাড়ি থাকবে।

আয়ুসী বলে-তোমরা কখন আসবে?

ধ্রুব-আজ যেতে পারব না।একটু কাজ পরে গেছে।শ্রেয়া আর আমি কাল যাব।

আয়ুসী আর কিছু বলে না।এদিকে ধ্রুব আয়ানের সাথে আলাদা করে কথা বলে।ধ্রুব আয়ানকে সবটা বলে।আর বলে-আয়ুসীকে মানানোর দায়িত্ব তোর।দেখ ওর কী হয়েছে।কিসের এতো অভিমান ওর।

আয়ানও ঠিক করে আয়ুসী কেন চলে গেছিল।আর আয়ুসীকে যে ভালোবাসে সে বলবে।

আয়ুসী নিলয়ের কথা শুনে শান্ত হয়।এদিকে রাতের ডিনার করে আনে আয়ান।কিন্তু আয়ুসী খেতে চায় না।আয়ুসী শুয়ে পরতে যাবে তখন দেখে আয়ান ওই ঘরের সোফাতে শোবে বলে ঠিক করছে।

আয়ুসী-আপনি এই ঘরে থাকবেন?

আয়ান আয়ুসীর দিকে না তাকিয়েই বলে-হুম

কেন আপনি এই ঘরে থাকবেন?-আয়ুসী

আয়ুসীর কথায় আয়ান এগিয়ে আসে আয়ুসীর দিকে এগিয়ে এসে বলে-তাহলে আমি কোথায় থাকব?

কেন অন্য ঘরে?-আয়ুসী

আয়ান আয়ুসীর দিকে ঝুঁকে বলে-কেন অন্য ঘরে থাকব।আমার তো তোমার সাথে এক খাটে শোওয়ার কথা তাই না।

কী!কী সব বলছেন?-আয়ুসী

কী বলেছি।আমরা তো স্বামী স্ত্রী তাই আমাদের একসাথে একঘরে থাকতে হবে।কী ঠিক বললাম তো।-আয়ান

আপনি কেন এমন করছেন।সরুন এখান থেকে।আগে তো নিজের চোখের সামনে রাখতেন প্রতিশোধ নেবেন বলে।এখন কী জন্য?কী কারনে?-আয়ুসী

আয়ান আয়ুসীর কথাতে আয়ুসীকে কাছে টেনে বলে-কেন জানো না।আমি তোমাকে ভালোবাসি আয়ুসী।আমি তোমার সাথে থাকতে চাই।তোমার সাথে জীবনটাকে শুরু করতে চাই।

আয়ানের কথাতে আয়ুসী অবাক হয়ে যায়।কিছুক্ষণ আয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করতে থাকে।কিন্তু আয়ান আরো শক্ত করে ধরে।

ছাড়ুন আমায়।-আয়ুসী

আয়ান আয়ুসীকে আরো কাছে টেনে আরো শক্ত করে আয়ুসীকে ধরে।

ছাড়ুন বলছি।কেন এমন করছেন।নিজের ভুল শোধরাতে।আপনি জেনে গিয়েছেন আমার বাবা কিছু করেননি তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।কী ঠিক বললাম তো?-আয়ুসী

এসব কী বলছ তুমি।আমি তোমাকে ভালোবাসি আয়ুসী।প্রথম দেখাতেই তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম।-আয়ান

আয়ুসী আয়ানকে খুব জোরে ঠেলে দেয় আর বলে-মিথ্যা বলছেন আপনি।আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসতেন না।

আয়ান কিছু বলবে আয়ুসী বলে-প্লিজ চলে যান।

এই বলে আয়ুসী কাঁদতে থাকে।আয়ানের খুব কষ্ট হয়।সে উঠে যায়।গিয়ে সোফাতে গিয়ে বসে পরে।অন্য ঘরে যাবে ভেবেও যায় না।আয়ুসীকে একা ছেড়ে যেতে পারে না।

আয়ুসী কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে।আয়ানও ঘুমিয়ে পরে।সকাল হলে আয়ুসী আগে উঠে স্নান সেরে ঘর থেকে বেড়িয়ে পরে।যাওয়ার সময় দেখে আয়ান ঘুমাচ্ছে।কিন্তু আয়ানের গায়ের চাদরটা নীচে পড়ে গেছে।আয়ান শীতে কুঁকড়ে শুয়ে গেছে।আয়ুসী দেখতে পেয়ে কাছে এসে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর চাদরটা তুলে আয়ানের গায়ে দিয়ে দেয়।অজান্তেই আয়ানের কপালের চুলগুলোকে সরিয়ে দিয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।কিন্তু হঠাৎ আয়ুসীর কিছু মনে পরে যায়।সঙ্গে সঙ্গে চোখে জল এসে পরে।তাড়াতাড়ি করে সে চোখের জল মুছে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।

ড্রয়িং রুমে সে বসে পরে।চোখ থেকে অঝোরে জল গড়াতে থাকে।এদিকে আয়ুসীকে দেখে লাভা চীৎকার করতে থাকে।আয়ুসী চোখের জল মুছে লাভাকে কোলে নিয়ে সোফাতে বসে বলে-লাভা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রে।আমি এখানে থাকতে পারছি না।

লাভা যেন সব বুঝতে পেরেছে।আয়ুসীর দিকে তাকিয়ে থাকে।আয়ুসী লাভাকে দেখে না হেসে পারে না।লাভাকে আদর করতে থাকে।কিন্তু হঠাৎ লাভা আয়ুসীর কোল থেকে নেমে যায়।আর আয়ুসী লাভাকে ধরতে ছোটাছোটি করতে থাকে।কিন্তু লাভা ধরা দেয় না।এদিকে লাভার পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে আয়ানের ঘরে চলে আসে।আয়ানের সাথে ধাক্কা লাগে।আর আয়ান উঠে স্নান সেরে বেরিয়ে নিজের ঘরে ঘোরাঘুরি করছিল।গতরাতের কথা ভাবছিল।

আয়ুসীকে সে ধরে ফেলে।আয়ুসী বুঝতে পারেনি আয়ান ঘুম থেকে উঠে পরবে।দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।আয়ানের চোখের পাতা পড়ছে না।আয়ুসী একটা আকাশি রংয়ের শাড়ি পড়ে আছে।অল্প ভিজে চুলগুলো পিঠের উপর খোলা।আয়ান যেন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে।এদিকে আয়ুসী আয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।এদিকে আয়ানের হাত আয়ুসীর কোমর শক্ত করে ধরে আছে।আয়ান ধীরে ধীরে আয়ুসীর কপালে কিস করে।আয়ুসী ভাবতে পারেনি আয়ান এরকম করবে।আয়ুসী চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।সে মুখে কিছু বলতে পারছে না।এদিকে আয়ান কপালে কিস করার পর আয়ুসীর চোখে কিস করে।আয়ানের ছোঁঁয়াতে আয়ুসী কেঁপে উঠতে থাকে।এতো কাছে দুজন যে তারা দুজনের নিশ্বাস শুনতে পারছে।আয়ুসীর হার্ট জোরে চলতে শুরু করেছে।এদিকে আয়ান আয়ুসীর চোখে কিস করার পর আয়ুসীর ঠোঁটের দিকে এগোতে থাকে।সে আয়ুসীর ঠোঁটের দিকে চেয়ে থাকে।আয়ুসীর কাঁপা ঠোঁট দুটোকে সে নিজের দখলে করতে আস্তে আস্তে সে এগোতে থাকে।এদিকে আয়ুসী চোখ খুলে আয়ানকে ওই অবস্থায় দেখে সে আয়ানকে জোরে ধাক্কা দেয়।আয়ানের ঘোর কেটে যায়।আর আয়ুসীর চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পরে।

আয়ান বুঝতে পারে সে কী করে ফেলেছে।সে আয়ুসীর দিকে এগিয়ে সে কিছু বলতে যাবে আয়ুসী হাত বাড়িয়ে থেমে যেতে বলে।আর আয়ানের সামনে এসে বলে-কেন এমন করছেন?কেন?আমি আর এখানে থাকব না।এখনি চলে যাব।

আয়ান দেখে আয়ুসীর চোখ জলে ভরে গেছে।আয়ুসীকে এইভাবে দেখে তার ভীষণ কষ্ট হতে থাকে।নিজের কাজের জন্য সে নিজেকে দোষারোপ করতে থাকে।

আয়ান বলে-আয়ুসী আমি—-

আয়ুসী আয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে-আপনি নিলয়কে ডাকুন আমি এখনই চলে যাব।

আয়ান-আয়ুসী একবার আমার কথাটা শোনো।তাছাড়া তুমি কোথায় যাবে।এখন থেকে তুমি এখানেই থাকবে।আমি তোমাকে ভালোবাসি আয়ুসী।

আয়ুসী চীৎকার করে বলে-না,না,ভালোবাসেন না।আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।আমি এখানে কিছুতেই থাকব না।কিছুতেই না।

আয়ান-আয়ুসী প্লিজ এরকম বল না।আমি তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব না।

আয়ুসী শান্ত হয়ে চোখের জল মুছে বলে-আমি আপনার সাথে থাকব না।আমি এখনই চলে যাব।এখনই।

এই বলে আয়ুসী ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়।আয়ানও পিছু পিছু যায়।আয়ুসী গিয়ে দরজা খুলতে যাবে কিন্তু দরজা খুলছে না।আয়ুসী বুঝতে পারে বাইরে থেকে দরজা আটকানো।সে কেঁদে ফেলে।এদিকে আয়ান এসে বলে-আয়ুসী প্লিজ শান্ত হও।

আয়ুসী-আপনি এমন করেছেন কেন।যাতে আমি বাইরে বার হতে না পারি।

আয়ান-মানে—-

আয়ুসী-আর মিথ্যা বলতে হবে না।আপনি আটকিয়েছেন আপনি খুলে দেবেন।

আয়ান-আমি আটকায় নি।আর আয়ুসী তুমি কেন এমন করছ।কেন আমার থেকে দূরে যেতে চাইছ?কেন?আমি জানি আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছিলাম কিন্তু বিশ্বাস কর আমি প্রথম যেদিন তোমায়—-

আয়ুসী কেঁদে ফেলে বলে-আমি কিছু শুনতে চাই না।কিছু না।

এই বলে সে দৌড়াতে দৌড়াতে ঘরে চলে আসে।আয়ানের চোখেও জল এসে যায়।সে বসে পরে।ভাবতে থাকে সত্যি আয়ুসী তার সাথে থাকতে চায় না।তাহলে ওকে জোর করে আটকিয়ে রেখে ওকে কষ্ট দেব না।

আয়ান ধ্রুবকে ফোন করে বলে-আয়ুসী চলে যেতে চায়।আর এখনই।

ধ্রুব আর শ্রেয়া দুজনেই আসে।কিন্তু নিলয়কে কিছু বলে না।

ধ্রুব এসে আয়ানকে কিছু বলতে যাবে আয়ান ধ্রুবকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে বলে-আমি হেরে গেছি ধ্রুব।ও আমাকে একদম দেখতে পারছে না।কেন ধ্রুব।আমি কী এতই খারাপ।

ধ্রুব আয়ানকে শান্ত করার চেষ্টা করে।আর ধ্রুব আর শ্রেয়া আয়ুসীর সাথে কথা বলতে যায়।তারা বুঝতে পারছে না আয়ুসী কেন এমন করছে।কারন ধ্রুব তো জানে আয়ুসী আয়ানকে ভালোবাসে।তাহলে কেন আয়ুসী আয়ানের থেকে দূরে যেতে চাইছে?

এদিকে আয়ানের ভীষণ কষ্ট হতে থাকে।সে আর থাকতে পারে না।অন্য ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

ঘরে গিয়ে দেখে আয়ুসী মেঝেতে বসে আছে।আর নীরবে কেঁদেই চলেছে।ধ্রুব আর শ্রেয়া পাশে বসে।ধ্রুব বলে-কী হয়েছে তোর?

আয়ুসী ধ্রুবর দিকে একবার তাকিয়ে আবার নীচের দিকে চেয়ে বলে-আমি চলে যেতে চাই।

ধ্রুব-কেন আয়ুসী?সেদিন তুই আমাদেরকে না বলে চলে গিয়েছিলিস।আর এখনও বলছিস চলে যাবি।কেন?তুই তো আয়ানকে ভালোবাসিস।তাহলে কেন ওকে ছেড়ে চলে যেতে চাইছিস?ও যে তোকে ছাড়া থাকতে পারবে না।ও তো তোকে ভীষণ ভালোবাসে।

আয়ুসী-হ্যাঁ,আমি ওনাকে ভালোবেসেছি।কিন্তু উনি আমাকে ভালোবাসেন না।আমি জানি।আর তুমি এসব বলছ।তুমিও জানো ও আমাকে ভালোবাসে না।

ধ্রুব-কী সব বলছিস আয়ুসী।আমি জানি ও তোকে ভীষণ ভালোবাসে।তুই ছিলিস না।ওর কী অবস্থা হয়েছিল জানিস।এই ছয় মাস ও শুধু নিজেকে কষ্ট দিয়েছে।এমন একদিন হয়নি যে ও তোর কথা বলে নি।ও তোকে ভীষণ ভালোবাসে।তোকে ছাড়া ও বাঁচবে না।

আয়ুসী-কী জানতো ধ্রুব দা।উনি আমার উপর প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন।কিন্তু যখন সব প্রমান হয়ে গেল।তখন নিজের ভুল শোধরাতে আমাকে কাছে আনার চেষ্টা করছেন।সব কিছু মানিয়ে নিতে চাইছেন।উনি কখনও আমাকে ভালোবাসেন নি।যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে আমি কী করে থাকব।সেদিন আমি সব শুনেছি।সব।

এই বলে আয়ুসী কাঁদতে থাকে।

ধ্রুব অবাক হয়ে বলে-কোনদিন আর কী শুনেছিস?

আয়ুসী বলতে থাকে সেদিনের কথা।যেদিন ধ্রুব আয়ানকে আয়ুসীকে ভালোবাসে কিনা জিজ্ঞাসা করেছিল।আর আয়ুসী শুনেছিল আয়ান তাকে ভালোবাসে না।ধ্রুব শুনে প্রথম চমকে যায়।তারপর আয়ুসীকে বলে-তুই শেষ পর্যন্ত শুনেছিলিস?

আয়ুসী-শেষপর্যন্ত মানে?

ধ্রুব আয়ুসীকে সেদিনের সব ঘটনা খুলে বলে।

ধ্রুব-ও তোকে সেদিনই বলত।কিন্তু সেদিন যা হয়ে গেল।আর ও তোকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছিল।কিন্তু তুই তো সব জানিস ওর মনে কীভাবে—-।

আয়ুসী সব শুনে চোখ থেকে অঝোরে জল গড়াতে থাকে।

ধ্রুব-তুই ওকে ভুল বুঝে ছয় মাস দূরে থাকলি?আর ও তোকে কোথায় না কোথায় খুঁজেছে।কত রাত জেগে কাটিয়েছে।

শ্রেয়া-আয়ুসী বৌদি তুমি চলে যাওয়ার আয়ানদা নিজের ঘর থেকে বার হত না।কারোর সাথে কথা বলত না।আর তুমি এখন চলে গেলে তো—-

শ্রেয়ার কথা আয়ুসী শেষ করতে দেয় না।

কোথায় উনি?-এই বলে আয়ুসী দাঁড়িয়ে পরে।

ধ্রুব শ্রেয়া কিছু বলার আগেই আয়ুসী ঘর থেকে বেড়িয়ে আয়ানকে খুঁজতে থাকে।কিন্তু কোথাও পায় না।হঠাৎ অন্য ঘরের সামনে এসে দেখে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ।সে দরজাতে আঘাত করতে থাকে।কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারে না।এদিকে চোখ দিয়ে জল পড়তেই থাকে।অনেকবার ধাক্কা দেওয়ার পর দরজা খুলে যায়।

চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here