পারমিতা” পর্ব-৩

0
2766

#পারমিতা
পর্ব ৩
_নীলাভ্র জহির

সকাল থেকে আকাশটা মেঘলা। পারমিতা আজকে সম্মেলনে যাচ্ছে। দুপুর বারোটায় অফিসের গাড়ি ওকে তুলে নেবে। সকাল সকাল প্রীতুলকে সাজুগুজু করিয়ে সামান্তার সাথে পাঠিয়ে দিতে হলো। সামান্তা ফুপির বাড়িতে যাচ্ছে ওকে নিয়ে। বাচ্চাকে রেখে প্রথমবার দূরে যাচ্ছে ভেবে ভীষণ মন খারাপ করছিল পারমিতার। কিন্তু কিছুই করার নেই, প্রমোশন আর ম্যানেজার স্যারের কথা ভেবে তাকে এই ত্যাগটুকু স্বীকার করতেই হবে।
ঠিক দুপুর বারোটায় যথাস্থানে গাড়ি এসে দাঁড়াল। পরে দেরি হয়ে যাবে সেই ভেবে পারমিতা দশ মিনিট আগেই সেখানে উপস্থিত হয়। গাড়ি এক মিনিটও এদিক সেদিক করেনি দেখে বেশ অবাক হল পারমিতা। গাড়ির দরজা খুলে তৌশিক খান পারমিতাকে ভেতরে আসতে বলে। পারমিতা গাড়ির ভেতর দৃষ্টি দিতেই চমকে উঠলো। সিটে বসে আছেন স্বয়ং সাইমুন খান। চীফ এক্সিকিউটিভ! ওনার সাথে কখনো কথা হয়নি পারমিতার। চাকরির বয়সে মাত্র কয়েকবার ওনাকে দেখার সুযোগ পেয়েছিল কিন্তু তাও বড় কোনো আয়োজনের সময়। তাঁর সাথে একই গাড়িতে তাও আবার ওনার পাশের সিটে পারমিতাকে বসতে বলছে দেখে প্রথমে কয়েক সেকেণ্ড ইতস্তত করছিল পারমিতা। সাইমুন খান সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন, পারমিতা নাকি অন্যকেউ গাড়িতে উঠছে তাতে ওনার ভ্রুক্ষেপ নেই। তৌশিক বসেছে ড্রাইভারের পাশের সিটে। বিশাল পাজেরো গাড়ির প্রশস্ত সিট। পারমিতা ইতস্ততবোধ করে গাড়িতে উঠে বসলো। কিন্তু এক কোণায় জড়োসড়ো হয়ে বসে রইলো পারমিতা।

সাইমুন খান পারমিতার দিকে তাকিয়ে সৌজন্যতাসূচক হাসলেন। পারমিতাও চেষ্টা করল হাসি ফিরিয়ে দিতে। অনেক্ষণ গাড়ি চললো বড় হাইওয়ে ধরে। এসির শীতলতায় পারমিতার ঘুম এসে যাচ্ছে। বাইরের আকাশটা এখনও মেঘলা। সম্মেলনের প্রথম দিনের অনুষ্ঠান আজকে সন্ধ্যার পর। সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত। এখন হোটেলে গিয়ে শুধু রেস্ট নিতে হবে। একদিক থেকে ভাবলে পারমিতার এমন একটা ছুটি ভীষণ দরকার ছিল। আবার অন্যদিকে ভয়ে ওর বুক কাঁপছে। এসিস্ট্যান্ট হিসেবে সব কাজ ঠিকঠাক ভাবে করতে পারবে কি না!

বেশ কিছুক্ষণ ধরে গাড়ি চলার পর জ্যামে এসে দাঁড়াল। এই প্রথম কথা বললেন সাইমুন খান, তৌশিক সাহেব, আপনার বাড়ি যেন কোথায়?
– স্যার জামালপুর।
– দেশের বাড়ি নয়, ঢাকায় থাকেন কোথায়?
– ওহ সরি স্যার। ১১ নাম্বার সেক্টরে আছি স্যার।
– বিয়ে করেছেন?
– না স্যার। মা পাত্রী দেখছেন, হয়তো শীঘ্রই করে ফেলবো।
– হা হা হা। এত তারাতাড়ি করার দরকার কি। আগে লাইফটা এনজয় করুন না। আমি সব ব্যাচেলর ছেলেকে বলবো বিয়ে না করার জন্য।
– সরি স্যার, কেন জানতে পারি?
– বিবাহিত জীবন হচ্ছে যন্ত্রণা। প্রচুর প্রেশার, দায়িত্ব, বউয়ের প্যারা। সবমিলিয়ে বিরক্তিকর।
– স্যার মা তো আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।
– সেটা সব মায়েরাই লাগে। ওসব পাত্তা দেবেন না। আগে লাইফটা এনজয় করে নেন। শেষ বয়সে গিয়ে বিয়ে করবেন। আফসোস করার সময় পাবেন না।
– তখন তো আমাকে কেউ বিয়েই করতে রাজি হবে না স্যার।
– কি যে বলেন। দেশে এত ডিভোর্সি মেয়ে আছে, ওরা বিয়ে করার জন্য হা হুতাশ করে। কত বিধবা আছে। ওদের একটাকে বিয়ে করে নেবেন।

পারমিতা ভেতরে ভেতরে ক্ষুধ্ব হয়ে উঠলো। বাইরে রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো না ঠিক কিন্তু এই একটা কথার কারণেই সাইমুন স্যারের প্রতি প্রবল ঘৃণা জন্মালো পারমিতার। এই সমাজ ডিভোর্সি আর বিধবা মেয়েকে এত ছোট চোখে দেখে কেন! কোনো মেয়েই চায় না সে ডিভোর্সি কিংবা বিধবা হোক। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে কিছু হয়ে গেলে তাতে মেয়েটার ই বা দোষ কোথায়। অথচ মানুষ এসব মেয়েদেরকে এত নিম্ন শ্রেণীর ভাবে, মানুষের চিন্তাভাবনা বদলানো দরকার। সাইমুন স্যারের মতো একজনের মুখে এমন কথা শুনে ভেতরে ভেতরে জ্বলতে লাগল পারমিতা।

সাইমুন খান হঠাৎ পারমিতার দিকে তাকালেন, হ্যালো মিস। আপনার কি মনে হয়?
পারমিতা নিজেকে সংযত করে বলল- কিসের ব্যাপারে?
– ছেলেদের বিয়ে করা উচিত কিনা সেই ব্যাপারে।
– উচিৎ না। দরকার নেই এই জিনিসটার।
– শুনলেন মিস্টার তৌশিক, মিস বলছেন দরকার নেই।

তৌশিক পারমিতার কাছে জানতে চাইলো, কেন দরকার মনে হচ্ছে না আপনার?
– বিয়ের পর একটা মেয়ের লাইফ ঘরের ভেতর বন্দি হয়ে যায়। আজীবন এরা জেলখানার মতো ঘরে বন্দি থাকে। কাজের মেয়ের মতো সব কাজ করে। তারপরও দিনশেষে ওদেরকেই সবাই ছোট করে। তারপরও কারও ডিভোর্স হয়ে গেলে তাকেই হেয় করে এই সমাজ। এভাবে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করার চাইতে বিয়ে না করাটাই ভালো।

তৌশিক হা করে পারমিতার দিকে একবার তাকালো আর একবার সাইমুন স্যারের দিকে। সাইমুন খান রাগে ফুঁসছেন। কর্কট চোখে তিনি পারমিতার দিকে তাকালেন। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না। এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছে ড্রাইভার। তবে কথাটা বলার পর ভীত সন্ত্রস্ত বোধ করছে পারমিতা। যদি অপরাধ হয়ে যায়!
বাকি পথ কেউ কোনো কথা বলল না৷ সাইমুন খানের বয়স বড়জোর চল্লিশ হবে। টাকা পয়সা অগাধ কামিয়েছেন। ওনার চেহারায় সবসময় টাকাওয়ালা ধরনের একটা ভাব থাকে।
হোটেল শাহ সুলতান গ্রাণ্ডে প্রবেশ করে পারমিতার চোখ ছানাবড়া। এত বিশালাকার ভবন জুরে হোটেল হতে পারে সেটাই ওর ধারনার বাইরে ছিল। তার ওপর এই হোটেলের চাকচিক্য ভাব, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন মুগ্ধ হবার মতো। ভেতরে ঢুকে তৌশিক খান বললো, পারমিতা আপনি রুমে গিয়ে রেস্ট নিন। দুপুরের খাবার আমরা চাইলে একসাথে খেতে পারি, আপনার অসুবিধা থাকলে রুমে খাবার পাঠিয়ে দিতে বলবেন। আর ঠিক সন্ধ্যা ছয়টায় রেডি থাকবেন।
– জি স্যার, অফ কোর্স। থ্যাংক ইউ।
– আজকে তেমন কোনো ঝামেলা নেই, শুধু পরিচয় পর্ব আর পার্টি। যাইহোক, আপনার পার্টি ড্রেস আছে তো?
পারমিতা হকচকিয়ে গেল। ওর পার্টি ড্রেস নেই। পার্টিতে পরার জন্য শাড়ি নিয়ে এসেছে ও। শাড়ি ছাড়া আর কোনো পোষাকে এমনিতেও পার্টিতে ওর ভালো লাগত না। তথাকথিত ওয়েস্টার্ন ড্রেসে অভ্যস্ত নয় পারমিতা।
রুমে ঢুকে চোখ ঘুরিয়ে চারপাশ দেখে নিল। ঝকঝকে রুম। দেয়াল জুরে নান্দনিক শিল্পকর্ম। বিশাল একটা টিভি, আর নরম তুলতুলে বিছানা। লাফ দিয়ে বিছানায় বসলো পারমিতা। এত নরম বিছানা! ওর মনে পড়ে গেল বিয়ের পরের সপ্তাহে রাসিফের সাথে যাওয়া সেই হানিমুনের কথা। রাসিফ ওকে অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিল। বলেছিল সারাজীবন একসাথে পাশাপাশি থাকবে দুজনে। সেদিন একটা হোটেলের নরম বিছানায় সুখে ডুবে গিয়েছিল দুজন মিলে। সবকিছু মনে করতে না চাইলেও মাঝেমাঝে মনে পড়ে যায়। নিজেকে দ্রুত অতীত থেকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলো পারমিতা। বিছানায় শুয়ে বিশ্রামের চেষ্টা করলো।

সন্ধ্যা ৬ টা। প্রোগ্রামের হলরুমে এসে দাঁড়িয়ে আছে পারমিতা। শাড়ি পরে হালকা মেক আপ লাগিয়ে খুব সুন্দর করে সেজেছে। আনুমানিক চল্লিশ জন মানুষের প্রোগ্রাম। গোল টেবিলে কয়েকজন করে বসেছে। পারমিতা ও তৌশিক একসঙ্গে কিছুক্ষণ টেবিলে বসে ছিল। সাইমুন খান বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন, গল্প গুজব করছেন। তৌশিকও চলে গেল একজনের সাথে কথা বলতে। পারমিতা একা বসে থাকতে থাকতে উঠে দাঁড়াল। একদিকের কাঁচের দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে বাইরের শহর দেখতে লাগল পারমিতা।
হঠাৎ একজনের কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলো। একজন যুবক পাশে দাঁড়িয়ে, হাতে কোমল পানীয়ের গ্লাস। বলল, বাইরে খুব সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে তাইনা?
পারমিতা চমকে উঠে যুবকের দিকে ফিরল। যুবক বলল, সুন্দর না?
– হুম।
– মুখ অন্ধকার কেন? বৃষ্টি পছন্দ নয় নাকি?
– না সেরকম নয়।

পারমিতা বাইরে তাকিয়ে রইল। অপ্রয়োজনীয় আলাপের চেষ্টা করছে না সে। কিন্তু লোকটা আবারও বলল, এই বৃষ্টিতে এভাবে মিটিং না করে বাইরে গিয়ে ভিজতে পারলে ভালো হতো। এখানকার ছাদটা অনেক সুন্দর। বারান্দাও।
– হুম। কিন্তু মিটিংয়ের জন্যই মূলত এখানে আসা।
– ওহ হ্যাঁ। ভুলেই গিয়েছিলাম। আপনার পরিচয় প্লিজ?

পারমিতা স্থবির। সে সামান্য একজন কর্মচারী। তার তো দেবার মতো তেমন কোনো পরিচয় নেই। কী বলবে সে? এমন সময় একজন মহিলা এসে যুবকটিকে বললেন, হ্যালো। অনেকদিন পর দেখা তোমার সাথে। কেমন আছো?
– জি ম্যাম ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?
– আমি অলওয়েজ ফাইন। তোমার বাবা আসেননি?
– এসেছেন। ওই তো ওইদিকে বাবা।
– ওকে ওকে থ্যাংক য়ু ডিয়ার। সি ইউ।

মহিলা চলে গেলে যুবকটি পারমিতাকে বলল, বৃষ্টি খুব জোরে হচ্ছে। অনেক বড় বড় ফোটা। আজকে আর থামবে না হয়তো।
– হুম।
– আচ্ছা, আপনি কি কম কথা বলেন?
– হ্যাঁ একটু কম।
– একটু না, অনেক বেশিই কম কথা বলছেন। হোটেলের রুম গুলো চমৎকার। বিশাল বিশাল জানালা। চমৎকার একটা বারান্দা। আমার ইচ্ছে করছে রুমে গিয়ে বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখি। আপনার ইচ্ছে করছে না?
– না। আমার মিটিংটাই ইম্পর্ট্যান্ট।
– বাহ! জীবনে শাইন করতে পারবেন অনেক। বেস্ট অব লাক
– থ্যাংক য়ু।

পারমিতা সেখান থেকে চলে এলো। যুবক তখনও বারবার তাকাচ্ছিল ওর দিকে। পারমিতা আর কোনোদিকে না তাকিয়ে টেবিলে বসে পড়লো। শুরু হল মিটিং। আজকে তেমন কোনো প্রজেক্ট নিয়ে কথা হলো না। এক ঘন্টার মাথায় পার্টি ভেঙে গেল। যে যার মতো চলে গেল রুমে। হলরুম প্রায় ফাঁকা হয়ে গেল। স্যারের নির্দেশ পায়নি বলে পারমিতা এখনো বসে আছে। গালে হাত দিয়ে টেবিলে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে ও।

এমন সময় আবারও সেই যুবকের গলা শোনা গেল, আরে আপনি! এখনো চলে যাননি যে? মিটিংটা ইম্পর্ট্যান্ট বলে?
পারমিতা থতমত খেয়ে বলল, না আসলে..
– থাক বলতে হবে না। সবাই তো চলে গেছে।
– আপনি তো আছেন?
যুবক হাসতে হাসতে বললো, আমি একটু দরকারে.. এনিওয়ে, আপনার রুম নাম্বার কত?
পারমিতা থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইল। উত্তর দিলো না।
যুবক জিজ্ঞেস করলো, বলতে সমস্যা থাকলে বলবেন না। আমি আপনার রুমে যাবো না ম্যাডাম। এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
– না, আমি কিছু মনে করিনি।
– চেহারা তো অন্যকিছু বলে। এনিওয়ে, গুড বাই।

যুবক হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল। পারমিতা একটা নিশ্বাস ফেলে একা একা বসে রইল। অনেক্ষণ সময় কেটে গেল এর মধ্যে। তৌশিক এখনো এলো না। সবাই হলরুম থেকে বেরিয়ে গেছে। পারমিতা বিমর্ষ মনে নিজের রুমে চলে এলো। কিছুই ভালো লাগছে না। এই প্রোগ্রামকে যতটা এনজয় করবে ভেবেছিল, আসলে সেরকম উপভোগ্যকর মনে হচ্ছে না। বরং পানসে লাগছে।

বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকারে বৈদ্যুতিক আলোর ঝলক। খুব জোরে নেমেছে বৃষ্টি। বারান্দার দরজা খুলতেই শো শো শব্দে বাতাস আসতে শুরু করলো। পারমিতা অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল সেই বাতাসে। ওর শরীর মন ফুরফুরে হতে শুরু করেছে।

রাতের খাবার রুমেই সেরে নিলো পারমিতা। বিছানায় শুয়ে টিভি দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখে ঘুম লেগে এসেছে। এমন সময় তৌশিকের নাম্বার থেকে কল। পারমিতা রিসিভ করামাত্রই তৌশিক বলল, ইয়ে মিস পারমিতা, স্যারের রুম নাম্বার জানেন?
– হ্যাঁ। দুইশো নয়।
– আপনি স্যারের রুমে যান। স্যার ডাকছেন। আর হ্যাঁ, যাওয়ার সময় সুন্দর করে সেজেগুজে যাবেন।
– সেজেগুজে যাবো মানে? আর আমি একা যাবো কেন? আপনি যাবেন না?
– না। আমি গিয়ে কি করবো?
– তাহলে আমাকে কেন যেতে বলছেন?
– বুঝতে পারছেন না কেন? সবকিছু কি খুলে বলতে হবে মিস পারমিতা?

পারমিতার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল। ঢোক গিলে বলল, কী বলছেন!
– হ্যাঁ। যান ওনার রুমে। খুশি করতে পারলে এক ধাক্কাতেই অনেক ওপরের পোস্টে প্রমোশন পেয়ে যাবেন।
পারমিতার শরীর কাঁপতে শুরু করলো। নিজের কানকেও বিশ্বাস হচ্ছিল না ওর।
তৌশিক বলল, আপনাকে কেন আনা হয়েছে জানেন না? প্রতিবছর এ ধরনের কাজে আমরা একজন মেয়ে স্টাফকে নিয়ে আসি। ছেলেরা কাজটা পারবে না এমন তো নয়। সবাই চায় স্যারকে খুশি করতে। স্যার তো মুখ ফুটে কিছু বলেননি। কিন্তু আমার তো একটা দায়িত্ব আছে তাইনা?

ফোনের আড়ালে থাকা তৌশিকের বিভৎস চেহারা ভেসে উঠল পারমিতার সামনে। ও নিজেকে সামলাতে পারল না। চোখে পানি চলে এলো। তখন কাঁপছে গা।
তৌশিক বলল, কি ভাবছেন এত? আরে কেউ কিছু জানবে না। ভয় পাচ্ছেন নাকি?
কাঁপা কাঁপা গলায় পারমিতা বলল, আমার তো মনে হচ্ছে স্যার আমাকে ডাকে নি। স্যারকে খুশি করার জন্য আপনিই এসব করছেন যাতে আপনার পকেট ভারি থাকে।
– এইতো বুঝেছেন। কত চালাক আপনি। আপনারও পকেট ভারি হবে। স্যার শুধু শুধু আপনাকে নিয়ে খেলবে তা তো হয় না। আমাদের অফিসের কেয়াকে তো চেনেন? ওকে একবার স্যার নগদ এক লাখ টাকার চেক দিয়েছে। ও স্যারকে ভীষণ খুশি করেছিল।
– ছি। তৌশিক ভাই আপনি এরকম আমি জানতাম না।
– এরকম মানে? কেউ তো কিছু জানবে না। আমরা তো অফিসের কাজে এসেছি। এখানে একটু মনোরঞ্জন হতেই পারে বা বড় স্যারের খুশির জন্য আমাদের তো দায়িত্ব এসব তাইনা?

তৌশিক অনেক্ষণ ধরে উলটা পালটা বুঝিয়ে ফোন রেখে দিলো। পারমিতার গা থরথর করে কাঁপছে। কিছুতেই স্যারের রুমে যেতে পারবে না ও। ওর কোনো প্রোমোশন দরকার নেই। কিন্তু তৌশিকের কথা না শুনলে নির্ঘাত চাকরিটা চলে যাবে। আর এটা যদি চলে যায়, প্রীতুলের কি হবে? ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে পারমিতা?
চারপাশ যেন অন্ধকার হয়ে আসছে। দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইল পারমিতার। মনে হচ্ছে অতল সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে সে। কি করবে এখন?

চলবে..


https://www.facebook.com/439669216414853/posts/1354250008290098/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here