ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)পর্বঃ১০

0
677

#ধর্মের_দেয়াল (সিজন-২)
নাফিসা মুনতাহা পরী
পার্টঃ১০

.
.
– রাফসান দৌড়ে মারিয়ামের কাছে আসার আগেই
মারিয়াম নাফিসা কে নিয়ে ভ্যানিস হয়ে যায়।
– রাফসান বুঝে উঠতে পারে না এটা কি করে সম্ভব।
.
– রাফসান সেখান থেকে দৌড়ে নাফিসার রুমে গিয়ে দেখে টেবিলের উপর চিরকুঠ একটি। সেটা খুলে দেখে একটা ছোট্ট লেখা। রাফসান যা দেখেছো গোপন রেখ তা না হলে নাফিসার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ওকে নিয়ে যাচ্ছি। নিজের পরিবার নিয়ে খুশি থেক। তুমি দেখলেই তো আমি সাধারন কোন মানুষ না তাই এ বিষয়ে চুপ থাকাটায় বেটার।……. মারিয়াম…….
.
.
.
– রুপ নাফিসার ঘ্রান পাওয়ার সাথে সাথে আসনে বসে পরে এবং ছুড়ি দিয়ে নিজেই নিজের হাত কেটে ফেলে। রক্ত গুলো গল গল পড়ে একটা বলয় হয়ে শূন্যে ভাসতে লাগল। রুপ আদেশ দিল যেখানে নাফিসা থাকেনা কেন সে স্থানের খোঁজ এখুনি দাও। আদেশ পাওয়ার সাথে সাথে রক্তের বলয় গুলো অদৃশ্য হয়ে গেল।
.
.
– রুপ ওর বাজ পাখিকে আহ্ববান করে বলে রক্তের বলয়ের পিছে যাও এবং যেখানে নাফিসা থাকে ওকে আমার কাছে হাজির কর। বাজ পাখিটা রুপের কথা সুনে নাফিসার কাছে ছুটে যেতে লাগল।
আর রুপ বসে অপেক্ষা করছে নাফিসার আবার কোন রেসপন্স পাওয়ার।
.
.
.

– মারিয়াম একটা খোলা মাঠে নাফিসা কে নিয়ে হাজির হয় এবং ওকে সুয়ে রেখে মন্ত্র পড়তে শুরু করে। এমন সময় ২ টা জ্বীন হাজির হয়। মারিয়াম বলে জলদি নাফিসাকে নিয়ে মালিকের কাছে চলে যান। হাতে সময় নেই কেউ আমাদের পিছু নিয়েছে।
.
.
– কিন্তু আমাদের আরও পরে তাকে নিয়ে যেতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।
– মারিয়াম হুংকার ছেড়ে বলল আমি আদেশ দিচ্ছি এক্ষুনি নিয়ে যাও বলতেই নাফিসার সামনে একটা রক্তের বলয় ভাসতে লাগল।
.
.
– মারিয়াম বলয়টা দেখে ঘাবড়ে যায়। কারন এটা থেকে নাফিসাকে আলাদা করা সম্ভব না কোন ভাবেই।
.

– মারিয়াম একটা ভুল করে বসে এতে একটা মায়ার আয়না বলয়ের সামনে ছুড়ে মারে। এতে বলয়টি আয়নাতে চলে যায় আর সেটা কাঁচের সাথে ধাক্কা খেয়ে রুপের কাছে তৎক্ষনাত ফিরে চলে যায়।
.
.
.
– রুপের সামনে রক্তের বলয়টি এসে রুপের গায়ে রক্ত ছিটিয়ে পড়ে। রুপ যা বোঝার বুঝে গেছে। রুপ আর দেরি না করে নাফিসার কাছে চলে যায়।
.
.
.
– ২ জ্বীন নাফিসাকে কেবল ছুতে যাবে এমন সময় বাজ পাখিটা এসে হাজির হয় ওদের সামনে। বাজ পাখিটি সাথে সাথে বিশাল দেহের রুপ ধারন করে
২ জন জ্বীন কে এটাক্ট করে।
.
.
– মারিয়াম এবার নাফিসার ২ শিক্ষক জ্বীন কে আহ্ববান করতেই রুপ এসে হাজির।
.
.
– রুপ নাফিসাকে দেখল ওর বুকে ছুড়ি বসানো। আর সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
.

– রুপ চিৎকার দিয়ে বলে মারিয়াম আমার নাফিসার সাথে তুমি কি করেছে? বলেই সেদিকে দৌড়ে যেতেই মারিয়াম এসে বাধা দেয়।
.
.
.
– রুপের এবার ধর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গেল। এক নিমিষে নিজের পাখা ২ টি বের করে পাখা দিয়ে মারিয়াম কে আঘাত করে। মারিয়াম ছিটকে পড়ে যায়। রুপ এবার চোখের পলকে গিয়ে মারিয়ামের গলা চিপে ধরে বলে আমি চুপ করে আছি বলে ভেবনা আমি দুর্বল। তুমি আজ যা করেছো তা আমার সহ্যর বাহির হয়ে গেছে বলে আবার ছুড়ে মারে।
.
.
.
– রুপ নাফিসার কাছে দৌড়ে গিয়ে বসে পড়ে। এটা কিভাবে মারিয়াম ওর সাথে করতে পারল। ও নাকি নাফিসার মায়ের মত।
.

নাফিসা দেখ আমি এসেছি। তোমাকে আর কখনও কষ্ট দিব না। আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ। রুপ ওর শক্তি সব প্রয়োগ করল কিন্তু হিতে বিপরীত হয়ে যাচ্ছে। এবার মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে যাচ্ছে শুধু।
.
.
.
– রুপ চিৎকার দিয়ে বলল আজ যদি নাফিসার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি তোমাকে এখানেই তোমার জিবনের সমাপ্ত করে দিব মারিয়াম।


মারিয়াম ওখানেই বসে নাফিসার ২ শিক্ষক জ্বীন দের ডাকতে লাগল।
.
– ২ জ্বীন এসে রুপ কে ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দেয়।
– মারিয়াম আর দেরি না করে ওদের কাছে গিয়ে হাজির হয়।
.
.
.
– মারিয়াম একটু হেসে বলল আমার জিবন থাকতে কখনও তোমার কাছে নাফিসাকে আসতে দিব না….. বলেই সবাই এক সাথে নাফিসাকে নিয়ে ভ্যানিস হয়ে গেল।
.
.
– রুপ ধপ করে বসে পড়ল। রুপ বুঝতে পারল নাফিসাকে একা ছেড়ে দিয়ে ও কতটা ভুল করে ফেলেছে। মারিয়াম কেন ওকে আঘাত করল এভাবে! ও জানে না এতে নাফিসার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। মারিয়াম তুমি এটা কেন করলা বলে রুপ চিৎকার দিয়ে উঠল।
.
.
.
– রুপের বাসায় মোট ৮০ জন জ্বীন হাজির হয়েছে। ২ গোত্র এক সাথে এই প্রথম হাজির হল।



– মিনা তো অবাক এটা কিভাবে সম্ভব। সিড, রোজ, রুপম সবাই অবাক। এতাটো হবার ছিল না।

– আমরা নিজেরা নিজেদের মধ্য মিমাংসা করতে প্রস্তুত। রোজ আর আজগড়ের বিয়ে হয়ে গেছে তাই তারা যে ভাবে চায় সেভাবেই ইচ্ছা মত বসবাস করতে পারবে।
.
.
– রোজ বলল আজগড় কোথায় আপনারা জানেন?

– ও ওর বাসায়। ওকে সসম্মানে ফেরত দিয়েছি। আমরা বিড়াট ভুল করে আসছি এত দিনে। এই ভুলটি একটা মেয়ের জন্য সংষোধন হয়েছে আমাদের। আমরা আজগড় করে অনেক আঘাত করেছি। আমরা মেয়েটার কাছে ক্ষমা চেয়েছি এর জন্য।

.
– মেয়েটি কে যে আমাদের এত বড় উপকার করল।
.

– নাফিসা বলে সিড মিনার দিকে তাকাল।
.

– কখনও না। যে আমাদের ক্ষতি করেছে সে কেন এ কাজ করবে।
.
.
– উনি ঠিকি বলেছে। এলিনা কন্যা নাফিসা কাজ টি সম্ভব করে দিয়েছে।
.
.
– রোজ সেখান আর দেরি না করে আজগড়ের বাসায় একদম সাথে সাথেই পৌছে যায়।
– আজগড় সুয়ে আছে আর ওর বাবা মা পাশে বসে
আছে।
.
.
– আজগড়ের বাবা মা রোজ কে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে রোজের কাছে গেল।

– আজগড়ের মা বলল রোজ! নাফিসা কি এখন তোমাদের বাসায় আছে?
– রোজ কি বলবে……. ভেবে পাচ্ছেনা। চুপ করে দাড়িয়ে আছে।
.
.
.
– রোজের চুপ করে থাকা দেখে ওরা রুম থেকে বের হয়ে গেল।
– রোজ এবার সুযোগ পেয়ে আজগড়ের কাছে গিয়ে বসে ওর গা থেকে চাদর টা সরিয়ে দিতেই সিউরে ওঠে।
– এই আজগড় তোমার এই অবস্থা কিভাবে হল।
.
.
– আজগর উঠে চুপ করে বসে থাকল।
– আজগড় কি হয়েছে বল! বলে কান্না করতে লাগল আর ওকে জড়িয়ে ধরল।
.
.
– আজগড় রোজ কে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল এবং গালে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলল ৪৫ দিন ধরে ওরা আমায় যে মৃত্যু সমান যন্ত্রনা প্রতিটা মুহুত্বে দিয়েছে তার থেকে বেশি যন্ত্রনা পেয়েছি যখন জানতে পেরেছি তুমি নাফিসার গায়ে হাত উঠাই ছো।
.
.
– আমার চোখের সামনে থেকে দুর হও। তোমার মত মেয়ের আমার প্রয়োজন নেই। অনেক আশা নিয়ে তোমাদের কাছে ওকে পাঠিয়েছিলাম তার প্রতিদান কি দিল তোমার পরিবার!

.
.
.
.
.
– রোজ আশ্চার্য হয়ে গেল। আজগড় কেমনে জানল সব কথা।
– তুমি কিভাবে জানলে সব?
.
.
– রোজ জেনে রেখো অবিশ্বাস দিয়ে কখনও জিবন চলে না। আমি বা নাফিসা কেউ তোমাদের ২ ভাই বোনদের বিশ্বাস নিয়ে খেলিনি কিন্তু আমাদের আবেগ নিয়ে তোমরা ২ ভাইবোন খুব ভালয় খেলেছো।
.
.
– আমি কিভাবে জানি সেটা বড় কথা না আমার কাছে সহানুভূতি না দেখিয়ে তোমার ভাই রুপ কে দেখাও যাও। ও জাষ্ট ফিনিস….. ওর অস্তিত্বই শেষ। আমার সব আছে কিন্তু ওর কলিজাটাই ওর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যাও এখান থেকে।
.
.
– মানে! ভাইয়ার কি হয়েছে?

– রুপ যা যা নাফিসার সাথে করেছে আজ থেকে ওর শাস্তি ও কঠিন থেকে কঠিনও তর ভাবে শুরু হয়ে গেছে। তাকে সামলাও যাও।
আমার ক্ষত কিছুদিন পর ঠিক হবে কিন্তু রুপের ক্ষত কোন দিন ঠিক হবেনা বলে স্বশব্দে হেসে উঠল আজগড়।
.
.
– রোজ সেখানে আর দেরি না করে বাসায় চলে আসে। mom ভাইয়া কই?
– এখনো বাসায় আসেনি। কেন?
.
.

– কারন তোমার মেয়ে বেশ চিন্তিত তার প্রিয় ভাই এখন তার ভুলের যোগ্য শাস্তি পাচ্ছে বলে সিড এসে ওদের কাছে দাড়াল।
.
.
– মিনা আর রোজ ২ জনেই খুব ভয় পেয়ে গেল।

সিড তুমি কি বলছ রুপ সম্পর্কে।

– ওকে আগেই সাবধান করেছিলাম কিন্তু ও না চাইতেই সব পেয়ে যেত তোমার মত তাই হারানোর কষ্ট যে কি জিনিষ সেটা ও বা তুমি কেউই বুঝতে পারোনি কখনও বলে সিড চলে গেল।
.
.
.
– সিডের কথা শুনে মিনা মাথা নিচু করে নিল। কারন সিড যা বলেছে সব সত্যই।
.
.
– রাফী হন্য হয়ে নাফিসাকে খুঁজেই চলছে। কোন জায়গায় না পেয়ে সাজ্জাদ কে বলল বাবা নাফিসাকে পাওয়া যাচ্ছেনা।

.
– সুমি দৌড়ে এসে দেখে রাফসান স্থির হয়ে খাটে বসে আছে। রাফসান নাফিসাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
……………………?
– রাফসান কি বলছি শুনতে পাচ্ছনা বলে রাফসানের গা ঝাকালো সুমি।
.
.
.
– রাফসান উঠেই ফটাফট কয়েকটা চড় বসিয়ে দিল সুমির গালে এবং বলল কাল এভাবেই নাফিসাকে চড় মাড়ছিলা না?
.
– সুমি গাল ধরে কেঁদে ফেলল। কি বলছো তুমি আমি কেন নাফিসা কে মারতে যাব।
.
– চুপপপপপ….. আর একটা মিথ্যা কথা বললে এখানেই মাটিতে গেড়ে দিব। সবাই মিলে আমাকে নিয়ে খেলেছিস। আর না। এবার যা করার আমি করব।
.
.
– রাফসার ভুল হয়ে গেছে আমার। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমায় শাস্তি দিও না এভাবে তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবনা।
.

– আর আমি নাফিসা কে ছাড়া একদমই বাঁচতে পারবনা বলে ছোট্ট নাফিসাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হতেই ওর সামনে ওর মা রেহেনা এসে বলল দাদু ভাইকে নিয়ে কই যাচ্ছিস। যে যাবার কথা সে চলে গেছে তাকে নিয়ে এত্ত ভাবনা কিসের।
.

– মায়ের কথা শুনে রাফসান রেগে বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে ঢুকেই স্টার্ট দিল।
.
.
.
– সুমি পিছন থেকে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল ওকে নিয়ে কই যাচ্ছ রাফসান। তুমি এটা করতে পারনা আমার সাথে।
.
.
.
– একজন শক্তিশালী পুরুষ মারিয়ামের গলা চিপে ধরে আছে। তুমি এটা কেন করেছো ওর সাথে। ওর যদি কিছু হয়ে যায় তোমায় জান্ত পুড়িয়ে মারব মারিয়াম……….
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here