একটুখানি পর্ব : ১০

0
1151

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব:১০
কলরব দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে কুহুকে বললো,
– ইরিন ভিতরেই আছে।
কুহুকে তখনও বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কলরব আবারো বললো,
– ভিতরে এসো বাবা বাসায় আছেন।
– ইরিন কোন রুমে আছে?
– এসো দেখিয়ে দিচ্ছি।
কুহু কলরবের পিছন পিছন হেঁটে যেতেই দেখলো ক্রিম কালার পাঞ্জাবী পড়া একজন ভদ্রলোক পেপার পড়ছেন। তিনি পেপার থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন,
– কলরব কে এসেছে?
– বাবা ইরিনের টিচার এসেছেন ওকে দেখতে।
ইফতেখার সাহেব পেপার থেকে মুখ তুলে কুহুকে বললেন,
– তুমি ইরুর টিচার?
– জ্বি আঙ্কেল। ভালো আছেন আঙ্কেল?
– আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভালো। কলরব ওকে ইরিনের রুমে নিয়ে যা তো।
– হ্যা বাবা সেখানেই নিচ্ছি।
কুহু ইরিনের রুমে যেয়ে অবাক হয়ে কতক্ষণ চেয়ে রইলো তারপর ইরিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– তুমি তো বেশ ভালো আর্ট করো।
– থেঙ্ক ইউ আপু।
– এখন কেমন আছো?
– ভালোই মুটামুটি।
– কীভাবে পা ভাঙলে?
– স্কুলের সিঁড়ি থেকে পড়ে।
– এতো ছটফট করলে তো এমন হবেই। আন্টি কোথায় দেখছি না যে?
– মা তো স্কুলে।
– ওহ্।
কুহু আর ইরিনের কথার মাঝেই কলরব ঢুকলো নাস্তার ট্রে হাতে।
– মা বাসায় নেই তো তাই বেশি কিছু দিতে পারিনি।
– না সমস্যা নেই।
কলরব চলে যাওয়ার পর ইরিন কুহুর হাতে চায়ের কাপ তুলে দিয়ে বললো,
– আপু এমন সময়ে এলেন যে মাও নেই আর আমি ভালো থাকলে আপনাকে পায়েশ রেঁধে খাওয়াতাম।
কুহু হেসে বললো,
– আপু তুমি পায়েশ রান্না করতে জানো?
– আপনি আমার টিচার না হয়ে অন্য কিছু হলে ভালো হতো।
ইরিনের কথা শুনে কুহু গম্ভীর হয়ে গেল।
ইরিন বললো,
– বললাম কারণ যখন আপনি টিচার থাকেন তখন একটুও হাসেন না, এতো সুন্দর করে আপুও বলেন না। কিন্তু আজ কি সুন্দর করে মিষ্টি করে কথা বললেন।
কুহু ইরিনের কথা শুনে এবার জোরে হেসে ফেললো।
– আচ্ছা এখন থেকে আপু বলে ডাকবো।
– আল্লাহ আপনি এতো মিষ্টি করে হাসতে পারেন!
– মিষ্টি করে কোথায় হাসলাম? এটাকে তো রাক্ষসী হাসি বলে।
– হাহ্হাহহাা না আপনার হাসির আওয়াজটা কেমন যেন অনেক মধুর। আপু আপনি কি গান গাইতে জানেন?
– নাহ্ তবে শুনতে ভালোবাসি।
– একদম ভাইয়ার মতন।
কুহু আবারো কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেল তারপর বললো,
– এখন আমি আসি, আরেকদিন দেখে যাব এসে।
– আচ্ছা থেঙ্ক ইউ।
কুহু উঠতে উঠতেই তার ব্যাগের চেইন খুলে সেখান থেকে একটা ডেইরি মিল্ক সিল্ক খুলে ইরিনকে দিয়ে বললো,
– এটা তোমার জন্য।
– না না লাগবে না।
– আহা মিষ্টি আপুর হাত থেকে চকলেট নিতে কেউ কি আবার না করে নাকি?
ইরিন ঠোঁটে হাসিয়ে ফুটিয় চকলেট নিয়ে বললো,
– থেঙ্ক ইউ মিষ্টি ভা.. মানে আপনি অনেক ভালো আরকি মিষ্টি আপু।
কুহু সবসময় একটা ব্যাপার খেয়াল করে সেটা হলো ইরিন প্রায় কথায় কথায় ভা… বলেই থেমে যায়। কুহু বুঝতে পেরেও না বুঝার ভাণ ধরে থাকে।
কুহু চলে যেতেই ইরিন কলরবকে ডাকলো।
– কি হলো ডাকছিস যে?
– তোমাকে একটা জিনিস দেওয়ার ছিল।
– কি?
কলরব ইরিনের হাত থেকে চকলেট নিতে নিতে বললো,
– কি করবো খুলে দিবো? পা ভাঙলে বুঝি চকলেট খুলে খাওয়া যায় না?
– ইশ্ আমি এতো আহ্লাদী কবে হলাম?
– তুই তো মায়ের মতোই আহ্লাদী।
– ভাইয়া আমি তো তোমাকে খেতে দিলাম।
– আমাকে?
– হুম।
– আমাকে কেনো?
– এটা ভাবি এনেছে তাই।
– মানে?
– কুহু আপু আমাকে দিয়েছিলো আমি ভাবলাম তুমি এই চকলেটটা পেলে খুশি হবে।
কলরব তার গগনবিহারী হাসি দিয়ে উঠে বললো,
– থেঙ্ক ইউ ইরিন সোনা।
– ভাইয়া তুমি কি একটা ব্যাপার জানো?
– কি?
– ভাবিও তোমার মতোই জোরে শব্দ করে হাসে।
– তাই?
– হুম একটু আগে শুনলে না?
– না আমি তো তখন বাইরে গিয়েছিলাম।
– বাইরে কেনো?
– আমার মনে হচ্ছিলো আমি বাসায় থাকায় কুহু খুবই আনকমফরটেবল ফিল করছিলো।
– ইশ্ তুমি একটুখানি বেশিই ভালো।
– তোর ভাই যে তাই বোধহয়
..
কুহু অপেক্ষা করছে পিহু কখন প্রাইভেট থেকে বাসায় ফিরবে। পিহু বাসায় আসতেই কুহু বললো,
– বোন তোর সাথে কথা আছেরে।
– বলতে না করেছে কে?
– আমার পাশে বস বলছি।
– দ্বারা একটু ঠান্ডা পানি খেয়ে আসি।
– খেয়ে আসি না পান করে আসি।
– তোর চাইনিজ ভাষা তুই নিজের কাছেই রাখ।
– আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়।
– বল কি বলবি।
– ইরিনকে দেখতে গিয়েছিলাম ওদের বাসায়। তখন ওর বাবা বললো ও তো অসুস্হ তাই যেন একটু কষ্ট করে হলেও ওদের বাসায় যেয়ে ওকে পড়িয়ে আসি। এখন কি করবো বল তো?
পিহু বেশ বিরক্তির সাথে কুহুর দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকার পর বললো,
– ইরিন কি সত্যি সত্যি তোর ননদ নাকি যে সে অসুস্হ হওয়ায় ওকে দেখতে যেতে হবে?
– কি বলিস মেয়েটা পা ভে…
– তোর এসব দরদী কর্মকান্ডেই তুই ফেঁসে যাস।
– একটা ভদ্রতা আছে না?
– ওদের কাছে তুই ভদ্র হলেই কি আর না হলেই কি? তোর শ্বশুড়বাড়ির মানুষ তো আর না।
– এই উল্টাপাল্টা কথা বলবি না তো। আমি কি তোর মতো পাথর নাকি যে একটা মেয়ে অসুস্হ তাকে দেখতেও যাব না?
– আরো বেশি করে যাও দেখলেই তো এখন কি হলো।
– কি করবো পিহু?
– তুই ইরিনের বাবাকে কি বলেছিস?
– বলেছি আব্বু বললে পড়াব।
– ভালো করেছিস আর এখন আব্বুকে না করে দিবি যেন ওরা বললে নিষেধ করে দেয়।
– ঠিক আছে।
– ফোন করে খবর নিলেই পারতিস শুধু শুধু ভেজালে পড়লি।
কুহু কিছু একটা বলতে যেয়েও আর বললো না।
..
কুহুর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। সে ইরিনকে দুই দিন ধরে বলে এসেছে এমফেটিক স্টেটমেন্টের উপর পরীক্ষা নিবে। কিন্তু এখন এই মেয়ের খাতা দেখে কুহুর মেজাজ পুরোই গরম হয়ে উঠেছে। রাগে গজগজ করতে করতে কুহু খাতা থেকে চোখ সরিয়ে সামনে বসে থাকা ইরিনের দিকে চাইলো তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
– আমি যে পরীক্ষা নিব তোমাকে কয়দিন আগে বলেছি?
ইরিন ভয়ে ভয়ে বললো,
– দুই দিন।
– তুমি কি পড়েছো নাকি না পড়েই পরীক্ষা দিয়েছো?
– পড়েই দিয়েছি।
– তাহলে এটা কি লিখেছো এখানে? মিথ্যে বলা হচ্ছে আমার সাথে?
– কি লিখেছি?
– ”গতকালও আমি সেখানে গিয়েছিলাম”বাক্যটার ট্রান্সলেট করে কি লিখেছো তুমি?
– আই ওয়েন্ট দেয়ার ইয়েসটার্ডে।
– একটা চড় দিব মেয়ে।
তোমাকে আমি পড়াইনি?
কুহু কথা বলতে বলতে স্কেলটা হাতে নিয়ে টেবিলে বেশ জোরেই একটা বারি দিয়ে বললো,
– কয়েকদিন ধরে তোমাকে কিছু বলছি না দেখে পড়াশুনা একেবারে বাদই দিয়ে দিয়েছো নাকি?
তোমাকে আমি শিখাইনি ইনভার্শন বা এমফেটিক স্টেটমেন্ট?
ইরিন কাচুমুচু হয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে বললো,
– শিখিয়েছেন আপু।
– তাহলে বলো গতকালও আমি সেখানে গিয়েছিলাম ইংরেজী কি?
– আই ওয়েন্ট দেয়া…
– চুপ করো মেয়ে। আমি তোমার খাতায় লিখে দেইনি? এটা হবে, ইয়েসটার্ডে আই ওয়েন্ট দেয়ার। বলো লিখে দেইনি?
কুহু কথা বলতে বলতে আবার স্কেলটা দিয়ে টেবিলে বারি দিলো।
কলরব মাত্র অফিস থেকে এসেছে। বৃহস্পতিবার হওয়ায় হাফ টাইম তাই বিকেলেই এসে পড়েছে। টাইটা ঢিল করতে করতে সে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো। ইরিনের রুম ক্রস করেই তার রুমে যেতে হয় তাই যাওয়ার সময় সে কুহুর সবটা কান্ড দেখলো। তারপর এগিয়ে এসে কুহুর হাত থেকে স্কেলটা এক ঝটকায় নিয়ে নিল।
কুহু অবাক হয়ে তাকাতেই দেখে কলরব দাঁড়িয়ে।
কলরব বললো,
– এভাবে কেউ পড়ায়? পড়াতে হলে অনেক ধৈর্য্য প্রয়োজন। তুমি কখনোই একজন ভালো শিক্ষক হতে পারবে না। একজন ভালো শিক্ষক স্টুডেন্টের সাথে নমনীয় ভাবে কথা বলে তার কাছ থেকে বুঝিয়ে পড়া আদায় করে নেয় এভাবে ধমকিয়ে নয়। এভাবে ধমকালে সবাই তোমার ইনভার্শন ভুলে যাবে।
কলরব খুব ঠান্ডা স্বরে কথাগুলো বলেই স্টাডি টেবিলে স্কেলটা কুহুর চেয়েও জোরে বারি দিয়ে বললো,
– “হে আমি গিয়েছিলাম ” ট্রান্সলেট করো।
কুহুর মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হচ্ছে না, সে কোনোভাবেই গলা দিয়ে কথা বের করতে পারছে না।
কলরব আবারো স্কেল টেবিলে মেরে বললো,
– কি হলো ভুলে গেছো?
কুহু কোনোরকম নিজের গলার সাথে পনেরোশো ছাপান্ন সালের পানি পথের যুদ্ধের চেয়েও বড় যুদ্ধ করে আস্তে করে বললো,
– ইয়েসটার্ডে ডিড আই গোউ দেয়ার।
– এবার বলো, ”যদি আমার ছেলে ডাক্তার হতো”
– ইফ মাই সান বি অ্যা ডক্টর।
– আমি তোমাকেই ভালোবাসি।
– আই ডু লাভ ইউ।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here