একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব:১৪
ইরিন পুরোটা ভিডিও দেখা শেষ করে ডায়েরী খুঁজে একটা নাম্বার বের করলো। তারপর ডায়াল করলো নাম্বারটায় কিম্তু রিং হয়েই যাচ্ছে রিসিভ করার নাম গন্ধ নেই।
ইরিন বিরক্ত হয়ে ফোনটা বেডে ছুঁড়ে বসে রইলো।
..
কূজন স্টেজ থেকে নেমে সোজা গাড়িতে যেয়ে বসলো। তারপর রফিককে বললো,
– রফিক ভাই কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো?
– আরে কূজন ভাই বইলা ফেলেন।
– আপনি কি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসবেন? আমি আছি গাড়িতেই।
– আইচ্ছা ভাই।
রফিক চলে যেতেই কূজন চোখ বন্ধ করে সিটে হেলান দিয়ে বসে রইলো। কূজনের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না কূজন একটা গানে এতোগুলো ভুল করলো কীভাবে? আর কেনোই বা ঐ গানটা গাওয়ার সময় কুহুকে মনে পড়লো? কুহুকে তো কূজন দুইবার দেখলো। কই তখন তো কোনো স্পেশালিটি চোখে পড়েনি? তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো সুন্দরী তো নয় কুহু তাহলে?? কূজনের ভার্সিটিতে তো অনেক সুন্দর মেয়ে আছে তাদের চেহারা তো ভেসে উঠেনি কখনো? এই জন্য কি কুহুর কান্না দায়ী? কোনো মেয়ের কান্না দেখে কি কেউ তাকে পছন্দ করতে পারে? তাও আবার কূজনের মতো ছেলে যে কিনা কান্না সহ্যই করতে পারে না। চোখ বন্ধ করে কূজন কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কুহুর চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু কেনো যেন মনে করতে পারছে না। কূজন এবার চোখ খুললো। তার হিসাব আরো ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে। কুহুর চেহারাটা এখন চোখে ভাসছে না কেনো? হঠাৎ চোখ বন্ধ করে কূজন আবার গাইতে শুরু করলো এক লারকি কো দেখা তে এসা লাগা… গানটা গাইতেই কুহুর চেহারা আবার ভেসে উঠলো। কূজন চোখ বন্ধ করেই কুহুর চেহারার বিশেষত্ব খুঁজছে। কুহুর মাঝে কি এমন আছে যা কূজনের ভালো লেগেছে? কূজন খুঁজে পেয়েও গেছে। কুহুর গায়ের রঙ। এতো মিষ্টি কেনো মেয়েটার মুখের আভা? কূজন নিজেই তো কতো ফর্সা কিন্তু কুহুর গায়ের রঙটা এতো কেনো ভালো লাগছে কূজনের? কুহু তো ফর্সাও না হলুূদ পরীও না,বা লাল সুন্দরীও না। কূজন আবারো একবার চেষ্টা করলো কুহুর বিশেষত্ব খুঁজে বের করার। কুহুর ভ্রুগুলোও সুন্দর কিন্তু গায়ের রঙটা অস্হির। কূজন এখন খুব ভালো করেই বুঝেছে কুহুর কান্না আর গায়ের রঙটাই তার মন কেঁড়েছে যদিও ভ্রুগুলোও সুন্দর। কূজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে কুহু রিপ্লাই দিয়েছে কিনা দেখার জন্য মোবাইলটা পকেট থেকে বের করলো। মোবাইল বের করতেই দেখলো এগারোটা মিসড কল তাও সোনার হরিণের দেওয়া। কূজন ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে কল ব্যাক করলো। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করতেই লূজন বললো,
– হ্যালো সোনার হরিণ!
– তোমার নাম কি রবিন ইবনে হাসানাদ?
– হুম আমার নাম রবিন। কেনো বলো তো?
– তুমি কি এখন ফেণী?
– হুম।
– আমি এখনই এড্রেস মেসেজ করে দিচ্ছি চলে এসো।
– কোথাকার এড্রেস?
– আমাদের বাসার এড্রেস।
– সোনার হরিণ তুমি তো জানো বাবা একদম রাগ করবেন একথা শুনলে।
– প্লিজ প্লিজ একবার এসো না।অন্তত আমার জন্য এসো।
– না বাবা অনেক রাগ করবেন।
– আঙ্কেল জানলে তো রাগ করবেন।
– বাবাকে কি মিথ্যা বলা যায়?
– আমি অতো শতো বুঝি না তুমি প্লিজ এসো। জানো তুমি যেই স্কুলে গান করতে গিয়েছিলে সেটা আমার স্কুল কিন্তু আমার পা ভাঙা তাই যেতে পারিনি।
– কি বলো? কীভাবে ভেঙেছে?
– প্লিজ একবার এসো বাসায় তোমার গান শুনবো আমি।
– না এটা তো হয়না।
– প্লিজ আমার কথা রাখবে না তুমি?
– আহা ইরিন শুনো না..
– না কোনো কথা শুনবো না তুমি আসবে কিনা বলো।
– এটা অসম্ভব ইরিন।
ইরিন কূজনের এ কথা শুনে সাথে সাথে ফোন কেটে দিল তারপর বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগলো। কেউ ইরিনের কথা শুনে না। কলরবকে কতো করে কাল বললো নিয়ে যেতে নেয়নি আর আজ কূজনকে বললো বাসায় আসতে কিন্তু সেও আসলো না। কূজন বারবার ফোন করেই যাচ্ছে ইরিনকে কিন্তু ইরিন ফোন ধরছেই না এমনকি মেসেজ পাঠাচ্ছে তাও সীন করছে না। ইরিন এখানে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েই গেল। দুপুর তিনটার দিকে কলরব বাসায় এসেই ঢুকলো ইরিনের রুমে। কলরব ধীরে ধীরে ইরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। কলরব ইরিনের কপালে চুমু দিয়েই আস্তে করে ডাকলো,
– ইরিন!ইরিন! উঠ্ তো।
ইরিন ওপাশ ফিরে ঘুমঘুম কণ্ঠে বললো,
– না।
– উঠ্ না ভাইয়া ডাকছি তো।
– তোমরা কেউ আমার কথা রাখো না। আমি ছোট বলে আমাকে পাত্তা দাও না।
– কে বলেছে এগুলো? এখন উঠ তো।
ইরিন ভাইয়ের হাত কপাল থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
– বুঝো না রাগ করেছি।.
– বুঝি তো আর এজন্যই তো রাগ ভাঙাতে চাইছি।
– আইসক্রিম দিলেই আমি গলবো না।
কলরব ইরিনকে টেনে তুলতে তুলতে বললো,
– আয় তো আমার সাথে।
– না যাব না তুমি আমাকে কনসার্টে নিয়ে যাওনি।
কলরব ইরিনের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে সোজা ইরিনকে পাঁজাকোলে নিয়ে নিল।
ইরিন মুখ গম্ভীর করে বললো,
– আমাকে কোলে নিতে হবে না। যাও ভাবীকে নাও।
কলরব কিছুটা কেশে বললো,
– ইরিন আস্তে বল তোর কথার যা শ্রী মা বাবা শুনলে কি বলবে আল্লাহই জানে।
– আস্তে বলার কি আছে ভাবীকে তো কোলে নিবেই তুমি। বিয়ের দিন ঐ বাড়ি থেকে এ বাড়ি পর্যন্ত আমার ভাবীকে কোলে করে নিয়ে আসতে হবে তোমাকে। বুঝলে আমার হবু ভাবীর বর?
– বুঝলাম তাই একটু প্র্যাকটিস করছি আরকি।
কলরব কথা বলতে বলতে ইরিনকে ড্রয়িংরুমে নিয়ে এলো। তারপর বললো,
– ট্যানট্যানা…..
ইরিন কলরব থেকে চোখ ফিরাতেই দেখলো কূজন সোফায় বসে আছে। ইরিন কলরবের গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমো দিয়ে বললো,
– থেঙ্ক ইউ কূজন ভাইয়াকে এখানে নিয়ে আসার জন্য।
কলরব কূজনের পাশেই ইরিনকে বসিয়ে দিতেই কূজন গিটার নিয়ে গান গাওয়া শুরু করলো।
” মায়াবনো বিহারিণী হরিণী
গহনো স্বপনো সঞ্চারিণী…..”
গান গাওয়া শেষ হতেই ইরিন কূজনের হাত ধরে বললো,
– থেঙ্ক ইউ সো মাচ কূজন ভাইয়া।
– প্লেজার মাই সোনার হরিণ।
কলরবের মা সাহরা খাতুন স্কুল থেকে মাত্র ফিরলেন। আর কলিংবেল চাপতেই কলরবকে দরজা খুলে দিতে দেখে অবাক হলেন কারণ কলরবের এখন অফিসে থাকার কথা। আর উনিও ভুলে কলিংবেল চাপলেন কারণ ইরিনের তো পায়ে ব্যাথা। মনেই ছিল না চাবি দিয়ে দরজা খুলতে। অবাক হয়ে কলরবকে কিছু বলতে যাবে এমন সময় গানের শব্দ ভেসে এলো ভিতর থেকে। সাহরা খাতুন ভিতরে ঢুকতেই দেখলেন কূজন গান গাইছে আর ইরিন পাশে বসে শুনছে। গান শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটা শব্দও করেননি তিনি। আসলে গান গাওয়া আর শোনা দুটাই উনার শৌখিনতা। কূজন গান শেষ করতেই সাহরা খাতুন ব্যাগ সোফায় রেখে বললেন,
– কিরে কূজন গরীবের বাড়িতে পা পড়লো অবশেষে তোর।
– খালামণি কি যে বলো না। এই ইরিনটার জন্য এখন আসতে হলো। বাবা জানলে খুব মন খারাপ করবে। তুমি তে জানোই বাবা কেমন।
– যাক ইরিন একটা কাজের কাজ করেছে।
– আরে বলো না মেয়ে রাগ করে ফোনই কেটে দিল। তারপর কতো কল দিলাম, মেসেজ দিলাম কিন্তু আমার সেনার হরিণ তো রাগ করেছিল আমার উপর। তারপর কল দিলাম কলরব ভাইকে। ভাই অফিস থেকে এসে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। রফিক ভাইকেও বিদায় করে দিয়েছি কারণ বাবার কানে কথাটা গেলেই শেষ।
– তোর বাবাটা না পারেও।
এখন বস আগে কিছু খেয়ে নে।
কূজন বসা থেকে উঠতে উঠতে বললো,
– আরে খালামণি না না এখনই বাসায় ফিরতে হবে।
কলরব ভাই বাইক আছে না তোমার?
– আছে তো।
– আমাকে কুমিল্লা পৌঁছে দাও।
– আচ্ছা তোকে কুমিল্লা পৌঁছে দিব।সে চিন্তা তোকে করতে হবে না কিন্তু না খেয়ে এক পাও কেথায়ও যেতে পারবি না।
– আরে ভাই তুমি অন্তত বুঝার চেষ্টা করো।
কলরবের মা বললো,
– যদি কথা দিয়ে যাস আবার কাল আসবি ব্যাগ পত্র নিয়ে তাহলে আজ ছাড়বো। তোর বাপ জাহান্নামে যাক তা নিয়ে ভাববো না। এখন বল কাল তুই বিকালের মধ্যে তোর মাকে বলে বাবাকে ম্যানেজ করে কয়েক সপ্তাহের জন্য এখানে আসবি।
– কথা দিতে পারছি না।
– তুই জাহরাকে বলবি যে করেই হোক তোকে আসতেই হবে।
– বাবা আছে তো।
– আরে তোর মাকে বলিস ফোন দিতে বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নিব। তুই তোর খালামণিকে চিনিস না?
– তা ভালো করেই চিনি তোমার মতো ইন্টিলিজেন্ট আছে নাকি আর আমাদের ফ্যামিলিতে? কলরব ভাই এখন চলো তো।
– আচ্ছা তুই যা আমি এখনই আসছি।
– কূজন ভাইয়া কাল কিন্তু আবার আসবে তুমি।
– খালামণি ম্যানেজ করে দিতে পারলে অবশ্যই আসবো সোনার হরিণ।
চলবে..