একটুখানি পর্ব : ১৫

0
729

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব: ১৫
কুহু মোবাইল হাতে নিয়ে কূজনের মেসেজটা সীন করলো। জানালার পাশের কুহু লিখাটা দেখে হাসি পেল কুহুর, হাসলোও বেশ। তারপর রিপ্লাই করলো। রিপ্লাই করেই ইরিনদের বাসার উদ্দেশ্যে বের হলো। কলিংবেল চাপতেই কলরবের মা দরজা খুলে দিল। কুহু সালাম দিয়ে হাসি মুখে বললো,
– আন্টি ইরিন আছে?
– হ্যা এসো ভিতরে এসো।
কুহু ভিতরে যেতেই দেখলো ইরিন ডয়িংরুমের সোফায় বসে ইয়ার ফোন কানে দিয়ে মোবাইলে কি যেন দেখছে। কুহু সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
– ইরিন!
ইরিন শুনলো না তাই কুহু ইরিনের সামনে হাত নাড়ালো। ইরিন তাকিয়েই কুহুকে দেখতে পেয়ে হা করে রইলো তারপর ইয়ারফোন কান থেকে নামিয়ে বললো,
– ভা… ভালো আছেন আপু?
কুহু ঠিক বুঝলো ইরিন ভাবি বলে ফেলতে নিয়েছিল। কুহুর প্রথম প্রথম খুব বিরক্তি লাগলেও এখন উল্টো হাসি পায়। কুহু হালকা হেসেই ফেললো। তারপর বললো,
– ইরিন আমি ভালো তুমি?
– আমিও।
– কি হলো হা করে আছো কেনো? কোথায় পড়বে তোমার রুমে নাকি এখানে?
– এখানেই বসি?
– আচ্ছা তুমি বসো আমি তোমার বই খাতা নিয়ে আসছি।
– না আপু মাকে বলছি মা দিয়ে যাবে।
– আরে আন্টিকে বলার প্রয়োজন নেই আমি নিয়ে আসছি।
– থেঙ্ক ইউ আপু।
কুহু ইরিনের রুমে যেয়ে ইরিনের বই আর কলম নিল কিন্তু খাতা খুঁজে পেল না। খাতা খুঁজতে খুঁজতে ইরিনের আর্ট খাতা দেখতে পেল। বরাবরই কুহুর ইরিনের আর্ট খুব ভালো লাগে। ইরিনের পুরোটা বেডরুম এই সেই দৃশ্য দিয়ে ভরা। ফেইরি টেইল এর বিভিন্ন ক্যারেকটারের হাতে আঁকা ছবিও দেয়ালে ঝুলছে। কুহু আর্ট খাতাটা খুলে দেখতে লাগলো। প্রথমে ইরিনের নিজের ছবি আঁকা। নীচে লিখে রেখেছে ইরিন, ইরু, সোনার হরিণ,হরিণ। পরের পাতায় ইরিনের বাবার ছবি আঁকা। বাবার ছবির পাশে লিখেছে প্রিয় বাবা,পত্রিকা সাহেব। কুহু হেসে পাতা উল্টাতে দেখলো ইরিনের মায়ের ছবি। মায়ের ছবিতে কুহু লিখেছে ড্রামা
কুইন,মাষ্টারনী। ড্রামা কুইন লিখা দেখে কুহু একগাল হেসে পরের পাতা উল্টালো। পরের পৃষ্ঠাতেই কুহুর চোখ আটকে রইলো। কুহু দেখলো ইরিন কলরবের ছবি এঁকেছে। বাইকে বসা সানগ্লাস পড়া কলরবের ছবির পাশে লিখা বেস্ট ব্রাদার ইন দি ওয়ার্ল্ড, কলরব ইবনাত দি ডার্ক হ্যান্ডসাম, বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন,হবু ভাবীর বর। ইরিন এতো ভালো ছবি একেঁছে যে দেখে মনে হচ্ছে কলরবের সত্যিকারের ছবি। কুহু একমনে কিছুক্ষণ ছবিটা দেখলো তারপর পাতা উল্টিয়ে নিজের ছবি দেখে নিজের চোখকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছে না। কুহু এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খাতাটা দেখছিল সাথে সাথে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। ইরিন কুহুর ছবি এঁকেছে ভাবতেই কুহুর খুব ভালো লাগছে। সত্যি ইরিন মেয়েটা কুহুকে অনেক পছন্দ করে। কুহুর ছবির পাশে ইরিন লিখেছে মিষ্টি আপু, রাগী টিচার, হবু ভাবী। কুহু হবু ভাবী লিখা দেখে আগের পৃষ্ঠাটা কুহু আবার দেখলো। কলরবের ছবির পাশে লিখেছে হবু ভাবীর বর আর কুহুর ছবির পাশে লিখেছে হবু ভাবী। কুহু না চাইতেও হাসলো তবে রাক্ষসী হাসি না মিষ্টি হাসি। তারপর পরের পাতা আবার উল্টালো। সেখানে দেখলো ইরিন আর কলরবের মা – বাবা সহ ফ্যামিলির ছবি আঁকা। এরপরের পাতা উল্টাতেই কুহু হা করে রইলো। কারণ কলরব আর কুহুর ছবি পাশাপাশি আঁকা। ছবিতে ইরিন কুহুর বউ সাজার ছবি এঁকেছে। পাশে আবার কলরবও আছে। কুহু ছবিটা দেখে লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেল। কুহু তো নিজেও কোনোদিন বউ সাজলে কেমন লাগবে তা নিয়ে ভাবেনি। কুহু খাতাটা বন্ধ করে জায়গায় রেখে চলে এলো।
– ইরিন তোমার ইংরেজী খাতা পাইনি।
– এটা তো এখানেই রাখা।
– ওহ্।
কুহু আজ খুব সুন্দর ইরিনকে পড়ালো। একবারো ধমকায়নি। কুহু চাচ্ছে কলরবের কথাটা ভুল প্রমাণ করতে। তাছাড়া ইরিন ওকে রাগী টিচার বলেছে। পিহুও একই কথা বললো। কুহুর কাছে একটাও ধমক না খেয়ে ইরিন নিজেও স্তব্ধ। কুহু চলে যেতেই ইরিন ফোন দিল কলরবকে।
– হ্যালো ভাইয়া!
– হুম বল।
– কূজন ভাইয়াকে কি পৌঁছে দিয়েছো?
– হ্যা এখন ফেণী ব্যাক করছি।
– শুনো না ভাবী এসেছিল।
– হুম তা তো আসবেই।
– আমি ভাবলাম আর আসবেই না।
– কেনো আসবে না? আমি জানতাম কুহু ঠিকই আসবে আর তোকে একটাও ধমক দিবেনা।
– হ্যা হ্যা একদম ঠিক একটাও ধমক দেয়নি।
– হাহ্হাহা।
– ভাইয়া তুমি আসলেই ভাবীর চোখ পড়তে জানো।
– একটুখানি।
..
কূজন বাসায় ফিরে মাকে সবটা বললো। কূজনের মা বললো কলরবের মাকে ফোন দিয়ে কথা বলবে। কূজন মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে পকেট থেকে মোবাইল বের করলো। ডাটা অন করতেই কুহুর মেসেজ দেখে মাকে বললো,
– মা তুমি খাবার দাও আমি আসছি। কূজন মেসেজ পড়তে পড়তেই রুমে গেল। কুহুর রিপ্লাই ছিল এমন,
” হ্যা আমি জানালার পাশের কুহু। আচ্ছা কিছু মনে করবেন না একটা কথা বলতে চাই। আপনার সব কথা কি জানালার পাশেই আটকে থাকে?”
কূজন কুহুর মেসেজ পড়ে নিজের আনমনেই বললো,
– এখন থেকে সব কথা তোমাতেই আটকে থাকবে।
কথাটা বিড়বিড় করে বলে নিজেই বোকা বনে গেল। একি বললো সে? কূজন কি সত্যি পাগল হয়ে গেছে? কূজন নিজের মাথায় নিজে টোকা দিয়ে বললো,
– মিস্টার রবিন আপনি পুরো পাগলহয়ে গিয়েছেন।
তারপর রিপ্লাই লিখলো,
” না শিউর হওয়ার জন্য বলেছিলাম আরকি। আর আন্টি কেমন আছেন বললেন না যে???”
..
কুহু বাসায় আসার পর থেকে যে বারান্দায় গিয়ে বসেছে আর বেডরুমে ফিরেনি। কুহুর মনে হচ্ছে ইশ্ ঐ আজব কলরব তার বোনকে এতো কিছু বলে কেনো? কুহু তো পিহুকে সব বলে কারণ ওরা পিঠাপিঠি। কিন্তু ইরিন তো ছোট ওকে কেনো বলে এসব? আর বোনরা একে অপরের সাথে সবকিছু শেয়ার করে কিন্তু ভাই বোন কি একে অপরকে এতকিছু বলতে পারে নাকি? আর কলরব সত্যি কি তাকে নিয়ে এতো কিছু ভেবে রেখেছে? হঠাৎ পিহুর ডাকে কুহুর ভাবনায় ছেদ পড়ে।
– ঐ আপুণি!
– হ্যা বল।
– এখানে কি করিস?
– বসে আছি আরকি।
– তা তো দেখতেই পাচ্ছি।
– তাহলে জিজ্ঞাসা করছিস কেনো?
– তুই তো বারান্দায় তেমন একটা আসিস না তাই।
কুহু আমতা আমতা করে বললো,
– এমনিতেই তুই ছিলি না তো তাই একা একা ভালো লাগছিল না।
– তুই কি অন্ধ? আমি তো রুমেই ছিলাম। তুই আরো রুমে এসে বোরকা খুলে সোজা বারান্দায় চলে এলি।
– না মানে খেয়াল করিনি।
পিহু কুহুর পাশে বসে বললো,
– কি হয়েছে তোর আপুণি?
– কিছু হয়নি।
– আমাকে তো বল।
– আগামীকাল কি বার?
– হ্যা?
– কি বার?
– শুক্রবার।
– কাল তুই ছাদে যাবি।
– কেনো?
– ভুলে গেলি? নাগরদোলা চড়াবো তোকে তাও টানা পনেরোদিন।
– ও হ্যা মনে পড়েছে। তোর কলরবকে পরীক্ষা করার জন্য যেতে হবে।
পিহুর মুখে তোর কলরব কথাটা শুনে কুহুর কেমন যেন লাগলো। কুহু পিহুকে বললো,,
– তুই যা আমি আসছি।
– আচ্ছা।
পিহু উঠতে উঠতে আবার বললো,
– আপুণি শোন ভালবাসা এমন একটা অদ্ভুত বিষয় সেটা সবার ভাগ্যে থাকে না। কেউ হাজার চাইলেও ভালোবাসার পিছনে ছুটেও ভালোবাসার নাগাল পায় না। আবার কেউবা না চাইতেও একটুখানি জীবনে ভালোবাসার সমুদ্রে ভেসে যায়। কেউ কেউ তো এমন যে সে বুঝতেই পারে না সে ভালোবাসার জোয়ারে ভেসে কোনদিকে যাচ্ছে।
পিহু চলে যেতেই কুহু দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করলো আর সাথে সাথে কলরবকে দেখতে পেল।
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here