একটুখানি পর্ব : ১৬

0
787

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব:১৬
– মাষ্টারনী!
– হুম ইফতেখার সাহবে বলুন।
– শুনলাম জাহরার ছেলে এসেছিল।
– হুম কূজন এসেছিলো।
– হাসনাদ সাহেব জানতে পারলে খবর আছে।
– এতো ভাব ধরে কেনো ঐ ব্যাটা?
– আরে অাত্মসম্মানে লেগেছে। তুমি উনাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলে..
– দেখো আমি উনার ভাগ্য খুলে দিয়েছি বরং। আমার বোন জাহরার মতো এতো শান্তশিষ্ট সুন্দরী একটা মেয়েকে বিয়ে করতে পেরেছে একমাত্র আমি ফিরিয়ে দেয়ার কারণেই।
– কিন্তু হাসনাদ সাহেব তোমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন।
– আল্লাহ! বুদ্ধি করে কাজটা না করলে আজ আর তোমাকে পাওয়া হতো না।
– ভাগ্যিস তোমার বাবাকে বুঝিয়েছিলে তুমি আমাকে ছাড়া আ কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।
– হুম তবে আমি ঠিকই বিয়ের আগের দিন বাবাকে বলে বিয়েটা ভাঙলেও হাসনাদ সাহেবকে আমি ঠকাইনি বরং আমার থেকে রূপে গুণে সবদিক থেকে এগিয়ে থাকা আমার ছোট বোনকে বিয়ে করে তিনি ধন্য হতে পেরেছেন।
– তোমার রূপ কি কম নাকি?
আমার ইরু তো পুরো তোমার মতো হয়েছে। সেই হরিণী চোখ সেই রকম গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট একদম তোমার ডুপ্লিকেট। আর চটপটে ভাবটাও পেয়েছে তোমার।
– বুদ্ধিটা কিন্তু আমার কলরব পেয়েছে।
– হুম তোমার বুদ্ধির প্রশংসা না করে যাব কোথায়? তুমি যেভাবে সবদিক হ্যান্ডেল করেছিলে বাববাহ্। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে পালিয়ে যেত নয়তো হাসনাদ সাহেবকে বিয়ে করতো। কিন্তু তুমি তা না করে তোমার বাবাকে ম্যানেজ করে ফেললে আবার হাসনাদ সাহেবের সাথে নিজের ছোট বোনের বিয়েটাও দিয়ে কি সুন্দর সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করলে।
– আমি আমার আপনজনদের জন্য সব কিছু করতে পারি। একদিকে বাবার সম্মানও রক্ষা করলাম অন্যদিকে হাসনাদ সাহেবকে সবচেয়ে বেস্ট অপশন দিয়েছি আর আমার বোনটাও সুখী। গাড়ি বাড়ি টাকা পয়শায় রাণীর হালে রেখেছেন কূজনের বাবা জাহরাকে।
– হুম কিন্তু তুমি হঠাৎ বিয়ের আগেরদিন পল্টি মারলে কেনো?
– মারলাম কারণ তুমি আমাকে যেদিন দেখে গিয়েছিলে সেদিনই তো বাবা তোমায় ফিরিয়ে দিয়েছিল। তোমার মতো অল্প বেতন পাওয়া কারো কাছে বিয়ে দিবে না তাও হাসনাদ সাহেবের মতো এতো বড় ব্যবসায়ী যখন আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে। কিন্তু তুমি বাবাকে বলেছিলে আমাকে না পেলে চিরকুমার
থেকে যাবে। কথাটা কেনো যেন আমার মনে ধরেছিল। তাই পরে পল্টি মারলাম।
– হাসনাদ সাহেবও কিন্তু তোমায় বেশ পছন্দ করতো। তোমার স্কুলের অনুষ্ঠানের চিফ গেস্ট হয়ে যেদিন স্কুলে গিয়েছিলেন সেদিনই তো তোমাকে দেখে তোমার বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
– হুম তবে আমার মনে হয়েছিলো আমাকে না পেলেও হাসনাদ সাহেব জীবনে ভালোই থাকবেন তবে কেনো যেন বারবার মনে হতো তোমার জীবন থমকে যাবে।
– তুমি আসলেই বুদ্ধিমতী। তোমার ভাবনাটা একদম ঠিক। হাসনাদ সাহেব নিজের জীবনে ভালোই আছেন। আর আমিও আমার মাষ্টারনীকে নিয়ে ভালোই আছি।
– হাসনাদ সাহেব যে বিয়ে করে আমাদের বাড়ি থেকে জাহরাকে নিয়ে গেলেন আর কোনোদিন আসেননি।
– জাহরা আর কূজনকে কিন্তু তোমার বাবার বাড়িতে যেতে নিষেধ করেননি কখনো তবে আমাদের বাসায় আসতে বারণ করে রেখেছেন তাও খুব স্ট্রিক্টলি।
– কি যেন বাবা এতো রাগ যে কেনো আমি বুঝিনা। বেচারার আরো আমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা দরকার তা না করে ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছেন। আমার তাতে কিছু আসেও না যায়ও না। আমার কাছের মানুষগুলো সুখী হলেই হলো। আমার বাবার সম্মানও ঠিক আছে আবার আমার বোনও অনেক সুখী আর তুমিও খুশি। আর হাসনাদ সাহেবকে আমি ঠকাইনি বরং জিতিয়েছি। জাহরা আমার মতো এতো চটাং চটাং করে না আর কতো রূপবতী, হাসিটাতেই সবাইকে পাগল করে দেয়।
– কিন্তু তোমার চোখ সেটা এই হেডমাষ্টারকে পাগল করে দিয়েছে।
– হুম এই জন্যই তো পাগলামি করো। সারাদিন একটার পত একটা পেপার পড়ো।
– হা হা হা। আচ্ছা কূজন আসবে তো?
– আরে আমি আছি না। না এসে যাবে কোথায়?
– হাসনাদ সাহেব?
– আরে রাখো তোমার হাসনাদ সাহেব আমার কাছে সবাই হার মানতে রাজি।
– একদম ঠিক মাষ্টারনী।
..
কুহু সারাদিন অপেক্ষা করলো কখন বিকেল হবে আর কখন পিহুকে ছাদে পাঠাবে। আছরের আজান দিতেই তাড়াডাড়ি পিহুকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে নামাজ পড়তে বললো। পিহু সপ্তাহের এই একটা দিন পড়াশুনা করে না। শুধু রেস্ট নেয় আর গান শুনে। পিহু আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বললো,
– একটু পরে পড়ি?
– না এখনই।
– এতো তাড়া কিসের তোর?
– নাগরদোলা চড়বি না???পিহু কুহুর কথা শুনে লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বললো,
– একমিনিট আমি ওযু করেই নামজটা সেরে ছাদে যাচ্ছি।
পিহু নামজ পড়া শেষ করে কুহুকে ডেকে বললো,
– আপুণি যাচ্ছি কিন্তু কান্না তো আসছে না।
– আরে তোকে কাঁদতে বললো কে?
– তুমিই তো সেদিন বললে।
– আরে প্রথম দিনই কান্নাকাটি করার দরকার নেই। নরমালি যাবি আবার নরমালি চলে আসবি। আর কলরব কিছু বললে কি বলতে হবে সেটা নিশ্চয় আমার মতো হাবলীর কাছ থেকে তোকে জানতে হবে না।
পিহু আর কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠলো। সেই যে গত ইদে ছবি তোলার জন্য পিহু ছাদে উঠেছিল তারপর আর উঠেনি। ছাদে যেতেই পিহুর সেখানে দাঁড়িয়ে হেডফোনে জাস্টিন বিবারের একটা গান শুনতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু মোবাইলটা নিয়ে আসেনি তাই আর শোনা হলো না। কাপড় নামাতে নামাতে চোখ দিল পাশের ছাদে। পিহু দেখলো দুইটা ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। খুব ধীরে সুস্থে ইচ্ছে করে একটু সময় নিয়ে পিহু কাপড় নামালো।
কুহু এখানে নিজেদের ফ্ল্যাটের দরজার সামনেই পিহুর জন্য অপেক্ষা করছিলো। পিহুকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে দেখে কুহু বললো,
– কিরে এতক্ষণ লাগলো কেনো?
– ইটিশপিটিশ করছিলাম তোর কলরবের সাথে।
– বাজে কথা রেখে ভিতরে চল।
– কাপড়গুলো ভাঁজ করে নেই তারপর কথা বলবো।
– না এগুলো আমি পরে করে দিব তুই এখন রুমে চল।
– ঠিক আছে আমি তো বেঁচেই গেলাম।
– উফ্ চল তো।
– পাশে বস বলছি।
– আরে নাটক বন্ধ করে বল।
– শোন তোর কলরব..
– এই চড় দিব কিন্তু। আমার কলরব মানে কি?
– আচ্ছা সরি!
– ঠিক আছে ঠিক আছে। এখন বল কি হয়েছে ছাদে?
– কিছুই হয়নি আর ইম্পর্টেন্ট কথা হলো আমি তো আর কলরবকে চিনি না।
– আরে পাশের ছাদে যে ছেলেটাকে দেখবি সেটাই কলরব।
– আমি তো দুইজনকে দেখলাম।
– দুইজন আসবে কোথা থেকে?
– হ্যা দুইজন ছিল। আচ্ছা আমি বর্ণনা দেই তুই বলিস কোনটা কলরব।
– বল।
– একজনকে দেখেছি মোটামুটি লম্বা, চোখে চশমা বেশ ফর্সা সুইট বয় যাকে বলে।
– না কলরব এমন না।
– আরেকজনকে দেখেছি বেশ লম্বা ছয় ফুট বলা যায়, বেশ এটরাকটিভ, চুলে জ্যাল দেয়া। হ্যান্ডাসাম এককথায় ডার্ক হ্যান্ডসাম অতোটা ফর্সা না আরকি।
– হ্যা এটাই।
– আচ্ছা শোন আমি ছাদে যেয়ে দেখি দুইজন কথা বলছে। এর মধ্যে চশমিশ হেসে হেসে কি যেন বলছে
আর কলরব বেশ জোরে জোরে হাসছে। আমি যেতেই কলরব একবার তাকিয়েছিল। আমাকে দেখে চোখ ফিরিয়ে আবার চশমিশের সাথে কথায় লেগে যায়। কলরবকে আমাদের ছাদে তাকাতে দেখে চশমিশও তাকিয়েছিল। সেও কলরবের মতোই চোখ ফিরিয়ে পরে কথায় মেতে যায়।
– ওহ্।
– আর আরেকটা কথা আজকে কারো হাতে বাস্কেটবল ছিল না।
– কি বলিস সবসময় কলরবের হাতে বাস্কেটবল থাকে।
– মনে হয় সাথে চশমিশ ছিল তাই আনেনি।
– হয়তো।
– ওহ্ আরেকটা ব্যাপার দুজনই আমাকে এক পলক দেখেছিল তবে দুজনই এক ঝলকের দেখায় বেশ গভীরভাবে আমাকে দেখেছে।
– মানে কি?
– মানে হলো দুজনই অবাক হয়ে আমাকে দেখেছিলো। আমার অন্তত তাই মনে হয়েছে।
– হুম।
– এখন আমাকে নিয়ে নাগরদোলা চড়াবি।
– ঠিক আছে রেডি হয়ে নে।
পিহু খুশি মনে চলে যেতে যেতে বললো,
– ম্যাডাম আমি একা না আপনাকেও চড়তে হবে।
– ঠিক আছে।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here