একটুখানি পর্ব : ১৭

0
866

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব: ১৭
কুহু পিহু দুজনই চট করে রেডি হয়ে নিল। দুই বোনের রেডি হতে সময় লাগে না তেমন। চট করেই পাঁচ দশ মিনিটের মধ্যে তৈরী হয়ে নীচে নেমে এলো। রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে দুজন। হঠাৎ পিহু কুহুর হাত চেপে ধরলো। কুহু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পিহুর দিকে তাকাতেই পিহু কুহুকে ইশারায় সাইডে তাকাতে বললো। কুহু
ডানপাশে ফিরে তাকাতেই দেখে কলরব বাইকে বসে আছে। লেদার বাইকার জ্যাকেট, বাইকার বুট আর চোখে সানগ্লাস। কলরব কুহুকে বোধহয় দেখেনি। কলরব ওদের বাসার গেইটের দিকে তাকিয়ে আছে। কুহু দেখলো কলরবদের বাসার গেইট দিয়ে একটা ছেলে বেরিয়ে আসছে। ছেলেটাকে কুহুর কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে। ছেলেটা কিছুটা সামনে আসতেই কুহু দেখলো ছেলেটা আর কেউ নয় কূজন। কূজন একটা সাদা সুয়েটশার্ট পড়ে আছে, সাথে নীল জিন্স, সাদা স্নিকারস, চোখে নীল ফ্রেমের চশমা। কূজন কলরবের বাইকের পিছনে বসতেই কুহু হা হয়ে গেল। কূজন বসতেই কলরব হেসে কথা বলতে বলতে বাইক স্টার্ট দিয়ে কুহুদের সামনে দিয়ে চলে গেল। কলরব আর কূজন কথা বলায় এতো ব্যস্ত ছিল যে কুহুদের দেখেনি তাছাড়া কুহু আর পিহু ওদের বাসার গেইটের ভিতর দাঁড়িয়েই রিকশা খুঁজছিলো তাই আরো দেখেনি। পিহু কুহুকে হা হয়ে থাকতে দেখে বললো,
– আপুণি দেখলি তো। আমি বলেছিলাম না দুইজনকে দেখেছিলাম। ওরাই ছিল ছাদে। এই হা হয়ে আছিস কেনো? মশা ঢুকবে তো।
পিহুর কথা শুনে কুহু মুখ বন্ধ করলো। পিহু আবার বলতে শুরু করলে,
– তোর কলরব কোনটারে? আশিকি টুর আদিত্য কাপুর নাকি জাব উই মেট এর শাহেদ কাপুর??
– এই শুন না আজব আর অদ্ভুত একসাথে কি করছে?
– কি বলছিস তুই?
– চশমিশটাই তো কূজন।
– ঐ যে জানালা কাহিনী?
– হুম।
– আচ্ছা দাঁড়া আমি চাদর নিয়ে আসছি। এক্সাইটমেন্টে চাদর আনতেই ভুলে গিয়েছি।
– যা নিয়ে আয়।
পিহু চাদর গায়ে জড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেইটের কাছে আসতেই দেখলো কুহু রিকশায় বসে আছে। কুহুর পাশে বসে পিহু বললো,
– আপুণি কি ব্যাপার?
– তোকে তো একটা কথা বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম।
– কি কথা?
কুহু শালবন থেকে ফেণী আসার ঘটনা থেকে শুরু করে মেসেজ এর কথাও বললো। পিহু সব শুনে বললো,
– কি দরকার ছিল নক করার?
– আরে ধন্যবাদ জানাতে চেয়েছিলাম তাই।
– শোন এসকল ধন্যবাদ থেকেই পড়ে কেচাল লাগে।
– কেচাল??
– ভেজাল আরকি।
– এখানে ভেজালের কি আছে?
– কিছু না থাকলেই হলো।
কুহু আর পিহু নাগরদোলায় চড়লো। কুহু তো উঠতেই চায়নি কিন্তু পিহুর আবার একা চড়ে মজা লাগে না তাই শর্তের কথা মনে করিয়ে কুহুকে টেনে নাগরদোলায় উঠালো। নাগরদোলা উপরে উঠার সময় কুহুর ভয় করে না বেশ মজাই লাগে কিন্তু নীচে নামার সময় আত্মা শুকিয়ে যায়। কুহুর মনে হয় যেন সে নিজে নামার আগেই তার আত্মা লাফ দিয়ে দেহ থেকে আলাদা হয়ে নীচে পড়ে যায়। তাই চোখ বন্ধ করে কোনোরকম বসে ছিল। তবে ভয়ে অনবরত দোয়া দরুদ পড়া তার বন্ধ হয়নি। একটার পর একটা পড়েই যাচ্ছে। হঠাৎ বেশি ভয় পেয়ে পিহুর হাত চেপে ধরে বলতে লাগলো,
– প্লিজ থামাতে বল আঙ্কেলকে।
– আপুণি প্লিজ থামালেই এখন আমাকেও নেমে যেতে হবে। প্লিজ! প্লিজ!
– না আঙ্কেল থামান প্লিজ।
পিহু কুহুর হাত আরো শক্ত করে ধরে বললো,
– আপুণি তোর শশী কাপুরের কসম তোকে।
– এই পাগল মেয়ে মরার সময় আল্লাহর নাম নে। শশী কাপুরের কথা বলতে বলতে মরলে আল্লাহর কাছে কি জবাব দিব আমি? আমার প্রাণ যায় যায় অবস্হা আর উনি শশী কাপুর নিয়ে পড়ে আছেন।
কুহু আবারো একমনে দোয়া পড়া শুরু করলো।
নাগরদোলা থামতেই কুহু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বাসায় ফিরার সময় পিহু কুহুকে ক্ষেপানোর জন্য বারবার বলতে লাগলো,
– এই তোর শশী কাপুরের প্রতি প্রেম?
– আমার তখন জান বেরিয়ে যাচ্ছিলো।
– এই একটুখানিতেই তোর এতো ভয়? জীবনে চলবি কীভাবে?
– আমার আল্লাহ্ আছে না।
– আল্লাহ্ সাহসী মানুষেরও থাকে।
– আমার মতো বোকাদের পাশেও কিন্তু থাকে।
– হয়েছে এবার এইটটিজের ডায়ালগ মারা বন্ধ কর প্লিজ।
– ওকে ওকে।
..
কলরব আর কূজন সারা সন্ধ্যা বাইকে ঘুরাঘুরি করে আড্ডা দিয়ে পার করলো। আসার সময় ইরিনের জন্য ফুচকা নিয়ে এলো দুজন।
বাসায় ফিরেই ইরিনকে ফুচকা দিতেই আনন্দে ইরিন একা একাই সবটুকু খেলো। কলরব ইরিনের খাওয়া দেখে বললো,
– তুই তো বড্ড খারাপ। দেখা যাবে বিয়ের পর আমার বউ এই বাড়িতে এসে ফুচকা আর খেতে পারবে না।
কূজন কলরবের কথা শুনে হেসে দিল। ইরিন কূজনের হাসি দেখে বললো,
– ভাইয়া তুমি শব্দ করেও হাসতে জানো?
– জানতাম না তবে কলরব ভাই শিখিয়ে ফেলেছে। কি বলো ভাই?
কলরব কলার নাচিয়ে বললো,
– কলরব ইবনাত দি..
বাকি কথাটা কূজন আর ইরিন কলরবকে বলতে না দিয়েই নিজেরা একসাথে বললো,
– সানশাইন অফ আওয়ার আড্ডাবাজি।
তারপর তিনজন এক সাথে হেসে উঠলো। ইফতেখার সাহেব ওদের হাসি শুনে পাশের ঘর থেকে পত্রিকা হাতে নিয়েই উঠে এলেন। কূজনের পাশে বসে কূজনের পিঠে চাপর দিয়ে বললেন,
– নবাব সাহেব আপনার খালামণি আপনার খেদমত ঠিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তো?
– খালামণির সবই ঠিকঠাক শুধু গানটা শোনাচ্ছেন না।
– কি বলো এতো বড় সাহস মাষ্টারনীর হলো কি করে?
কলরবের মা গরম গরম মাংসের সমুচা বানাতে বানাতে রান্নাঘর থেকে বললেন,
– কাল রাতে নবাবের আর্জি পূরণ করবো পত্রিকা সাহেব।
কলরবদের বসার ঘরে আবারো হাসির রোল উঠলো। খাওয়া শেষে কূজনের জায়গা হলো কলরবের ঘরে। কলরবদের বাসাটা বেশ গুছালো। বিশেষভাবে বসার ঘরটা নানান মাটির জিনিস দিয়ে সাজিয়ে রেখেছেন কলরবের মা। চারটা বেডরুম, ডাইনিং, ড্রয়িং মিলিয়ে বেশ ভালো একটা ফ্ল্যাট। উচ্চ মধ্যবিত্তদের মতোই তাদের বাসাটা শুধু এসি নেই।কূজন চাইলেই ফাঁকা রুমটায় থাকতে পারতো কিন্তু সে ইচ্ছে করে কলরবের সাথে কলরবের রুমে থাকতে চেয়েছে।
কলরব কূজনের পাশে শুতে শুতে বললো,
– এসি ছাড়া তোর একটু কষ্ট হবে রে ভাই। ভাড়া বাসা তাই লাগায়নি।
– আরে না কোনো সমস্যা নেই। তোমার সাথে থাকতে পারছি এটাই বা কম কিসে?
– আমাকে এতো ভালো লাগে? যেমন করে বলছিস মনে হচ্ছে আমি প্রিন্স হ্যারি।
– হা হা হা। এজন্যই তোমাকে এতো ভালো লাগে আমার। তোমার সাথে কথা বললে মন ভালো হয়ে যায়।
– হুম তবে দেখা তো বছরে একবারই হয়। নানার বাড়িতেও বছরে একবার যাওয়া আর আমাদের দেখা হওয়াও একবার।
কূজন কলরব কথা বলতে বলতে রাত দুটো বাজিয়ে ফেলেছে। দুটোর দিকে কথা শেষে দুই ভাই দুই দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে আছে। কিন্তু চোখ বন্ধ করে দুজনই পিহুকে নিয়ে ভাবছে। কলরবের ভাবনা: পিহু আজ ছাদে এলো কেনো? কুহু কি অসুস্হ? পিহুকে ডেকে কি কিছু জিজ্ঞাসা করার দরকার ছিল? ইশ্ কুহু কেমন আছে? সত্যি যদি শরীর খারাপ হয়ে থাকে? কালই ইরিনকে দিয়ে খবর নিতে হবে, দরকার পড়লে পিহুর সাথেও কথা বলবে।
কলরব এসব ভাবতে ভাবতে যখন ঘুমে তলিয়ে গেল তখনও কূজন মোবাইল হাতে নিয়ে কুহুর রিপ্লাইয়ের অপেক্ষা করছে। কুহুর রিপ্লাই না পেয়ে সে পিহুর কথা ভাবতে লাগলো। ছাদের ঐ মেয়েটাকে এতো পরিচিত মনে হচ্ছে কেনো ওর? খুব চেনা চেনা লাগছে। কে ঐ মেয়েটা?
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here