একটুখানি পর্ব : ১৮

0
804

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব: ১৮
কলরব ঘুৃম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই গেল ইরিনের রুমে। ইরিন তখনও ঘুম থেকে জাগেনি। কলরব ইরিনকে ডেকে তুললো।
– ভাইয়া যাও তো ঘুমাচ্ছি।
– শ্বশুড়বাড়িতে যেয়ে আমাদের বদনাম বের করবি তুই।
ইরিন মুখ বাকিয়ে বললো,
– ঢং!
– আচ্ছা যা আগে হাত মুখ ধূয়ে আয়।
– তোমার এতো তাড়া কিসের?
– আছে আছে।
– সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।
– আসলে কালকে না কুহু ছাদে আসেনি, কুহুর বোন এসেছিল।
– পিহু আপু?
– হুম।
– হঠাৎ?
– এটাই তো। কুহু অসুস্হ নয় তো?
– কি যেন জানি না তো।
– তোকে কি আজকে পড়ানোর কথা?
– হুম বিকেলে আসার তো কথা, খবর নিব?
– না থাক বিকেলে না এলে ফোন করিস।
– ঠিক আছে।
কলরব নিজের রুমে ফিরে এসে পায়চারী করতে লাগলো। কিছুই ভালো লাগছে না তার। কূজন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে কলরবকে এভাবে পায়চারী করতে দেখে বললো,
– কি ভাই এমন দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?
– না তেমন কিছু না।
কূজন আর কথা বাড়ালো না। কলরবের রুম থেকে বের হয়ে কূজন গেল ইরিনের রুমে। দরজায় দাঁড়িয়ে নক করলো। ইরিন কূজনকে দেখেই বললো,
– আরে নক করতে হয় নাকি আবার?
কূজন ইরিনের বেডের পাশে চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো,
– সোনার হরিণ তুমি দেখি ভালো আর্টিস্ট, পুরো রুম জাস্ট ওয়াও!
ইরিন হেসে বললো,
– তোমার একটা ছবি এঁকে দেই?
– সত্যি?
– টেবিলের উপর একটা আর্ট খাতা আছে নিয়ে এসো তো।
– দাঁড়াও।
– উহু দাঁড়াতে পারবো না পায়ে সমস্যা।
– তুমিও মজা করতে জানো বেশ।
ইরিন বেশ খানিকটা সময় নিয়ে কূজনের ছবি আঁকলো।
কূজন অধীর আগ্রহে ইরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। ইরিনের ছবি আঁকা শেষ হতেই ইরিন কূজনকে বললো চোখ বন্ধ করতে। কূজন চোখ বন্ধ করলো। ইরিন খাতাটা কূজনের সামনে তুলে ধরে কূজনকে চোখ খুলতে বললো। কূজন চোখ খুলতেই তার ঠোঁটে লেগে থাকা হাসিটা বিস্তৃত হলো। কূজন হাত বাড়িয়ে খাতাটা নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে কতক্ষণ চেয়ে রইলো। কূজন অভিভূত হয়ে গিয়েছে। কূজন প্রোগ্রামে গান গাওয়া শেষে যখন চোখ খুলে বুকের বাম পাশে হাত রেখে নিজের বেড়ে যাওয়া হৃদকম্পন অনুভব করছিলো ঠিক সেই সময়কার চিত্র এঁকেছে ইরিন। কূজন স্টেজের চেয়ারে বসা, সামনে মাইক, এক হাতে গিটার ধরে রেখেছে আর আরেক হাত বুকে চেপে ধরে রেখেছে। কূজন কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে ইরিনের দিকে তাকাতেই ইরিন বললো,
– লিখাটা পড়েছো?
কূজন ইরিন থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে ছবির নীচে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
সিলভার টাং, হাসিমাখা আকাশ, কূজন ভাইয়া।
কূজন জোরে জোরেই পড়লো। তারপর ছবি থেকে চোখ না সরিয়েই বললো,
– সোনার হরিণ আমাকে কি ছবিটা দিয়ে দিবে?
– না।
কূজন ইরিনের কথায় অবাক
হয়ে ইরিনের দিকে তাকালো। ইরিন কূজনের হাত থেকে আর্ট খাতাটা নিমিষেই নিয়ে নিল। তারপর বললো,
– সরি ভাইয়া কিন্তু আমি কাউকে আমার আঁকা ছবি দেই না। অবশ্য এই খাতায় যেই আর্টগুলো করি সেগুলো আরকি।
কূজন ইরিনের কথার মানে না বুঝে শুধু ইরিনের দিকে চেয়ে রইলো। ইরিন বিষয়টা বুঝতে পেরে বললো,
– বুঝিয়ে বলছি শুনো। এ খাতায় আমি শুধু আমার খুব পছন্দের মানুষগুলোর ছবি আঁকি। আর যার ছবি আঁকি তাকে ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে দেইনা। আবার তাকে দেখতে দিলেও ছবিটা নিজের কাছে রেখে দেই।
কূজনের বিস্ময়ে অবাক হওয়া চোখজোড়া খুশিতে ঝলমল করে উঠলো তারপর সেই কিউট হাসিটা ঠোঁটে এনে বললো,
– আমি কি খুব প্রিয় কেউ?
– হুম।
– আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো?
– অবশ্যই।
– এই ইরিন শোন তো তোর সাথে অনেক ইমপর্টেন্ট একটা কথা আছে।
কলরব কথা বলতে বলতে ইরিনের রুমের ভিতর চলে এলো। কূজন চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো,
– আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি।
কূজন চলে যেতেই কলরব অস্হির হয়ে বললো,
– ইরিন আমার একদম ভালো লাগছে না।
– কেনো কি হলো?
– শোন তুই এখনই একটা কল দে কুহুকে। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবো না।
– আচ্ছা দিচ্ছি।
ইরিন কলরবের সামনেই কুহুকে কল দিল। প্রথম কল বেজে কেটে গেল কিন্তু কুহু রিসিভ করলো না। কলরব অস্হির হয়ে ইরিনের পাশে বসলো। ইরিন আরেকবার কল দিতেই পিহু ফোন রিসিভ করলো।
– হ্যালো আপু তো ওয়াশরুমে তুমি একটু পরে কল করো।
– আচ্ছা।
ইরিন কান থেকে ফোন সরাতেই কলরব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ইরিনের দিকে তাকালো। ইরিন বললো,
– ভাবি ওয়াশরুমে।
– পাঁচ মিনিট পর আবার কল করবি।
ইরিন পাঁচ মিনিট পর আবার কল করলো। এবার কুহু রিসিভ করলো।
– হ্যালো ইরিন বলো।
– আপু আমি না ভুলে গিয়েছি হোম ওয়ার্ক কি ছিল।
কুহু ধমক দিতে যেয়েও ধমক দিল না উল্টো ইরিনকে বলে দিল কি কি হোমওয়ার্ক দিয়েছিল।
– আচ্ছা আপু আজকে কয়টায় যেন আসবেন পড়াতে?
কুহুর এবারো মেজাজ খারাপ হলো কিন্তু মেজাজ ঠান্ডা করে বললো,
– সাড়ে তিনটায়।
– থেঙ্ক ইউ আপু।
ইরিন ফোন রাখতেই কলরব বললো,
– কি বললো?
– বললো তো সাড়ে তিনটায় আসবে।
কলরব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইরিনের কপালে চুৃমো দিয়ে বললো,
– থেঙ্ক ইউ।
ইরিন কিছু না বলে শুধু হাসলো।
কলরব বেড ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো,
– অসুস্হ হলে তো আর আসতো না, তাই না?
ইরিন অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর বললো,
– অনেক ভালোবাসো তাই না?
কলরব কিছু বললো না শুধু হাসলো, সেই ঘর কাঁপানো হাসি।
..
ইরিন ফোন রাখতেই কুহু মোবাইলটা ছুঁড়ে টেবিলের উপর ফেললো।
– কি হলো হঠাৎ রেগে গেলি যে?
– ইরিন এতো কেয়ারলেস কীভাবে হতে পারে?
– কি করেছে?
– হোমওয়ার্ক কি ছিল সেটা ভুলে গিয়েছে এমনকি আমি কখন যাব পড়াতে তাও ভুলে গিয়েছে।
পিহু কুহুর কথা শুনে হাসলো তারপর বললো,
– তুই যে কিছু বললি না ওকে?
– হ্যা ওকে কিছু বলবো আর কলরব আর তুই এসে পরে আমাকে কথা শুনিয়ে যাবি তাইনা?
– চিল বেইবি চিল।
– চুপ কর।
– আরে মাথা ঠান্ডা করে চিন্তা কর। আসলে সে কিছুই ভুলেনি।
– তাহলে?
– আরে কলরব কল করিয়েছে।
– কেনো?
– কাল তুই ছাদে যাসনি তাই তোর খবর নিতে।
– ওহ্
পিহু আর কিছু বললো না, কলেজ ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বললো,
– আসছি।
পিহু কলেজে যাওয়ার জন্য বের হয়ে রিকশা নিল। কূজন ইরিনের রুম থেকে বেরিয়ে সোজা ছাদে চলে এসেছিল। ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের কিছু ছবি তুলছিল। হঠাৎ রাস্তায় তাকাতেই দেখলো পিহু রিকশায় করে কোথায় যেন যাচ্ছে। কূজন বেশ ভালো করে খেয়াল করলো পিহুকে, যতটুকু করা যায় আরকি। কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারছে না পিহুকে সে কোথায় দেখেছে। ছবিগুলো আপলোড দিতে ডটা অন করতেই কুহুর মেসেজ দেখে তাড়াতাড়ি সীন করলো।
– ” আম্মু আল্লাহর রহমতে ভালোই আছে”
কূজন মেসেজটা পড়ে ভাবতে লাগলো কুহুকে আর কি লিখা যায়। অনেক ভেবেও খুঁজে বের করতে পারলো না কুহুকে কি লিখলে কুহু তাকে রিপ্লাই দিবে।
..
দূপুরের খাওয়া শেষেই কূজন আর কলরব আবারো ঘুরতে বের হলো। কূজন বিকেলের দিকে বের হতে চেয়েছিল কিন্তু কলরবের জোরাজুরিতে এখনই বের হতে হলো। কলরব বিকালের
মধ্যে বাসায় ফিরে আসতে চায়। শনিবার অফিস নেই তাই বিকেলে ছাদে দাঁড়িয়ে কুহুকে দেখবে যদিও একটু পর কুহু কলরবদের বাসাতেই আসবে। কিন্তু কুহু বাসায় এলে কলরব কুহুর সামনে তেমন একটা যায় না এমনকি দূর থেকেও দেখে না। কলরব জানে দূর থেকেও যদি সে কুহুকে ফলো করে কুহু সেটা বুঝে যাবে। এটা সব মেয়েরাই পারে। আর কুহুকে কলরব মোটেও অস্বস্তিতে ফেলতে চায় না তাই কলরব এই কাজটা করে না। কলরব মনে করে ছাদে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকা ব্যাপারটায় প্রেমিক প্রেমিক ভাব আছে কিন্তু নিজের বাসায় আসা কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকাটা অনেকটা ক্যারেকটার ঢিলাদের কাজ।
কূজনরা বের হওয়ার আধা ঘণ্টা পরই কুহু এলো ইরিনকে পড়াতে। ইরিনকে পড়াতে পড়াতে পাঁচটা বাজলো। হোমওয়ার্ক বুঝিয়ে দিয়ে চলে এলো কুহু। কুহুকে ওদের বাসার গেইট দিয়ে ঢুকতে দেখে কূজন ঢোক গিললো। তারপর বাইক থেকে নামতে নামতে মনে মনে বললো,
– মিস্টার রবিন ইবনে হাসনাদ তুই পাগল হয়ে গিয়েছিস। আগে তো চোখ বন্ধ করলে কুহুকে দেখতে পেতি আর এখন রাস্তাঘাটেও কুহুকে দেখা শুরু করে দিয়েছিস।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here