একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব:২৮
কূজন আর ইরিন দুইজন পাশাপাশি বসে আছে। কূজনের মাথায় হাত আর ইরিন কতক্ষণ পর পর দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। কূজনের প্রচন্ড মন খারাপ। সে ভেবেই পাচ্ছে না সে এতো মিথ্যা কথা কবে শিখলো? তাও আবার বাবাকে মিথ্যে বলেছে সে। ইরিনের মন খারাপ কারণ সব ওর জন্যই হলো। ইরিন কূজনের দিকে ঘুরে বসে বললো,
– কূজন ভাইয়া তুমি তাড়াতাড়ি চলে যাও।
কূজন মাথা থেকে হাত সরিয়ে বললো,
– কালই চলে যাব।
– ভাইয়া প্লিজ তুমি এভাবে থেকো না আমার কান্না পাচ্ছে।
– আরে তুমি কেঁদো না।
– ভাইয়া আমার খুব কান্না পাচ্ছে।
ইরিনের কথা শেষ হওয়ার আগেই চোখ দিয়ে দু ফোঁটা পানি পড়লো। কূজন অবাক হয়ে বললো,
– আরে বোকা মেয়ে তোমার জন্য কিছুই হয়নি।
– আমি সেজন্য কাঁদছি না।
– তাহলে??
– আঙ্কেলকে মিথ্যে বলেছি তাই।
ইরিনের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছেই।
কূজন পকেট থেকে মোবাইল বের করে বাবার নাম্বারে ডায়াল করলো। হাসনাদ সাহেব রিসিভ করেই বললেন,
– হ্যালো মাই প্রিন্স!
– বাবা সোনার হরিণ তোমার সাথে কথা বলবে।
– দাও।
কূজন মোবাইলটা ইরিনের হাতে দিয়ে বললো,
– বাবাকে সত্যিটা বলে দাও।
ইরিন কূজনের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলো। কূজন হাত দিয়ে ইরিনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
– ভাইয়া আছি তো। তুমি বলে দাও কিছু হবে না।
– ঠিক আছে।
ইরিন স্পিকার অন করে বললো,
– আঙ্কেল!
– সোনার হরিণ গিফ্ট পছন্দ হয়েছে?
– আঙ্কেল প্যাকেট এখনো খুলে দেখিনি।
– কি বলো তাহলে তাড়াতাড়ি খুলে দেখো পছন্দ হয়েছে কিনা।
– আঙ্কেল আমি আর কূজন ভাইয়া আপনাকে মিথ্যে বলেছি। কূজন ভাইয়া আমার ভাইয়ের ফ্রেন্ড না।
ইরিন আবারো কেঁদে ফেললো। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে বললো,
– আঙ্কেল সরি! আপনি প্লিজ কূজন…
– হয়েছে মা কাঁদতে হবে না। সোনার হরিণকে কাঁদলে ভালো দেখায় না।
– আঙ্কেল সরি প্লিজ আপনি রাগ করবেন না বলুন।
– আরে বাবা রাগ করিনি। আমি তো এমনিতেও তোমাকে অনেক পছন্দ করতাম। আমি বরং কূজনকে তোমাদের এখানে দেখে খুশি হয়েছি। আমি ভাবতাম আমি বুঝি কূজনের বেস্ট ফ্রেন্ড কিন্তু ছেলেটা আমায় কিছুই বলেনি। তোমরা একজন আরেকজনকে পছন্দ করো ভালোই হলো আমার কাজ সহজ হয়ে গেলো।
হাসনাদ সাহেবের কথা শুনে ইরিনের হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেলো। কূজন ব্যাপারটা বুঝতে একটুখানি সময় নিলো। যখন বুঝলো ওর বাবা কি মিন করছে কূজন তাড়াতাড়ি মোবাইল তুলে নিয়ে একটানা পুরো ঘটনা বললো। হাসনাদ সাহেব কূজনের কথা শেষ হতেই ফোন কেটে দিলো। কূজন আবার কল করলো কিন্তু লাভ হলো না। হাসনাদ সাহেব মোবাইল বন্ধ করে রেখেছেন। কূজন আরো দুই একবার ট্রাই করলো কিন্তু লাভ হলো না। কূজন মোবাইল বন্ধ করে পকেটে রেখে দিলো তারপর ইরিনকে বললো,
– বাবার হয়ে আমি সরি।
ইরিন চুপচাপ থম মেরে কতক্ষণ বসে রইলো তারপর বললো,
– তুমি এখনই এই মুহূর্তে চলে যাবে।
ইরিন সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর আবারো বললো,
– ভাইয়া তোমার লাগেজ গোছাও আর কুমিল্লা ফিরে যাও।
কূজন একটাও কথা বললো না, চুপচাপ কলরবের রুমে গিয়ে লাগেজ গুছিয়ে নিয়ে এলো। কূজন সবসময় টিপটপ থাকে আর একই রকম থাকে তাই যাওয়ার জন্য আলাদা করে সময় নিয়ে রেডি হতে হয়নি।
ইরিন তখন ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে। ড্রয়িংরুমে লাগেজটা রেখে কূজন পা বাড়ালো ইরিনের রুমের দিকে। ইরিন সাথে সাথে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,
– আমার রুমে যাচ্ছো কেনো ভাইয়া?
কূজন শান্ত কণ্ঠে বললো,
– তোমার রুমের বারান্দায় আমার গিটারটা রাখা।
– আমি এনে দিচ্ছি।
ইরিন গিটারটা এনে কূজনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
– আর কিছু?
– না তবে তুমি আমার একটা ছবি এঁকেছিলে…
ইরিন কূজনের কথা শেষ না হতেই বলে উঠলো,
– দিয়ে দিচ্ছি।
ইরিন নিজের রুমে যেয়ে আর্ট খাতা থেকে কূজনের ছবিটা যে পাতায় আঁকা সে পাতাটা ছিঁড়ে নিয়ে এলো। তারপর কূজনকে দিয়ে বললো,
– নাও তোমার ছবি।
– আরেকটা জিনিস বাকি আছে।
– কি?
কূজন ওর বাবার দেয়া প্যাকেটটা ইরিনের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
– এটা রাখো।
– না রাখতে পারবো না।
– প্লিজ বাবা দিয়েছে, বাবা না হয় কষ্ট পাবে।
– না ভাইয়া আমি এটা রাখতে পারবো না।
– রেখে দাও প্লিজ।
– ভাইয়া এটা ভাবিকে দিয়ে দিও।
কূজন অবাক হয়ে বললো,
– কোন ভাবি?
– তোমার বউকে।
– মানে???
– আঙ্কেল এটা আমার জন্য এমনিতে নিয়ে আসেননি, যেটা ভেবে নিয়ে এসেছিলেন সেটা অসম্ভব। তুমি নিয়ে যাও।
– ইরিন রেখে দাও।
– ভাইয়া তুমি এখন যাও প্লিজ।
– আচ্ছা ভালো থেকো সোনার হরিণ।
– তুমিও ভালো থেকো ভাইয়া।
চলবে…