একটুখানি পর্ব : ৬৫

0
1038

একটুখানি
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৬৫
মেসেজটা পড়েই পিহুর হাত পা কাঁপা শুরু করলো। কাঁপা
হাতেই মেসেজটা ডিলিট করে দিয়ে নাম্বারটা ব্লক
লিস্টে ফেললো। তারপর মোবাইল চার্জার পিন
থেকে খুলে ফেললো। চার্জ না দিয়েই
মোবাইল ওয়ারড্রবের ড্রয়ারে কাপড়ের ভাঁজে
রেখে দিলো। এই শীতের রাতেও পিহুর কপালে
বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো। হাতের উল্টোপিঠে
ঘাম মুছে পিহু এক গ্লাস পানি খেলো তারপর বসে
ভাবতে লাগলো। কুহুকে একদম জানানো যাবে না।
কুহুর কানে কথাটা পৌঁছুলে নিশ্চয় অঘটন ঘটবে। পিহু
ভাবছে কলরবকে জানানো দরকার কিন্তু কলরবকে
জানালে কলরব যদি কূজনের কথা ভেবে বিয়ে
ভেঙে দেয়? নাহ্ কলরব এমনটা তো কখনোই
করবে না আবার করতেও পারে। মানুষের মন আর
আকাশের রঙ! অবশ্য কলরবকে পিহুর কাছে খুব স্ট্রং
ক্যারেকটারের মনে হয়। কিন্তু ঝড় এলে বড় গাছটায়
কিন্তু ভেঙে পড়ে, ছোট গাছগুলো টলতে
টলতেও টিকে রয়। উঁহু পিহু কখনোই এ রিস্ক নিবে
না। কলরব বিয়ে ভেঙে দিলে কুহু পাগল হয়ে
যাবে। আর কুহুকেও জানাবে না সে। জানালে আবার
কি থেকে কি করে তার ঠিক নেই পরে আবার
নিজেই পস্তাবে। পিহু সিদ্ধান্ত নিলো কুহু কিংবা কলরব
কাউকেই কিছু জানাবে না। কিন্তু কূজন যদি সত্যি এরকম
স্টেপ নেয় তাহলে তো ভয়ংকর পরিস্হিতির
স্বীকার হতে হবে সবাইকে। কূজন শুধু শুধু কুহুকে
ম্যানেজ করার জন্য ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করছে
না তো? নাকি সত্যি মনে এমন কোনো ভাবনা
আছে? থাকতে পারাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কূজন তো
প্রেমে ছন্নছাড়া হয়ে আছে। পিহুর কাছে মনে
হচ্ছে মহাবিপদের শুরু মাত্র,সামনে বহু কিছু বাকি। এই
জন্য পিহু প্রেম ভালোবাসা নামক নেশা থেকে
দূরে থাকে। তাছাড়া পৃথিবীতে প্রেম, ভালোবাসা
এগুলো আছে বলে পিহুর মনে হয়না। জাস্ট
কয়েকদিনের আর্কষণ বৈকি আর কিছুই নয়। এই যে
কুহু কলরব একে অন্যের জন্য পাগল এগুলো
হলো তীব্র আর্কষণের ফলাফল। কূজনও কুহুকে
পাওয়ার জিদ ধরেছে। মরীচীকার পিছনে ছুটার নামই
প্রেম।
কবরীর ডাকে পিহুর ভাবনায় ছেদ পড়লো।
– হুম মা বলো।
– কিরে এ ঘরে কি করছিস? কুহুর কাছে যা। পরে
যখন দূরে চলে যাবে তখন কেঁদে কেটেও
খুঁজে পাবি না।
পিহু মুখ ভেঙচিয়ে বলল,
– শখ কতো তোমার মেয়েকে কোন দুঃখে
মিস করতে যাব?
– যখন করবি তখন ঠিকই বুঝবি।
– আপুণি তো বান্ধবীদের সাথে তাই আসলাম।
আপুণির বান্ধবীদের মাঝে বসে থাকতে বোরিং
লাগে।
– তারপরো যা। কুহুকে তো চিনিস মেয়েটা কতো
কোমল হৃদয়ের।
পিহু যেতে যেতে বলল,
– এই কোমলতাই কাল হয়ে দাঁড়াবে একদিন।
কবরী হেসে বললেন,
– নারে দেখিস মেয়েটা সত্যি ভালো থাকবে। যার
মন এতো ভালো তার জন্য উপরওয়ালা আছে।
পিহু কথা বাড়ালো না। কুহুর কাছে যেয়ে বসলো।
কুহুর গুটিকয়েক বান্ধবী আছে তবে
বেস্টফ্রেন্ড টাইপ এর তেমন কেউ নেই। পিহুর
ওদের কথা শুনতে খুব বেশি বোরিং লাগলেও কুহুর
পাশে বসে আছে। কেনো যেন কুহুর দিকে
তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগছে। লাবণ্যতা আর
কোমলতা চেহারা জুড়ে ঝেঁকে বসে আছে।
চোখ জোড়ায়ও কেমন যেন নির্মলতা, গভীর
ভালোবাসা ধরা দেয়। পিহু কুহুকে দেখছে আর
ভাবছে “কুহুর কপালে সুখ সইবে তো? পিহুর
কেনো যেন মনে হয় ভালো মানুষগুলো
পৃথিবীতে বেশিদিন সুখী হয়ে থাকতে পারে না।
পৃথিবী বড়ই স্বার্থপর। পৃথিবী ভালো
মানুষগুলোকে একা করে দিয়ে নিজে সেই
মানুষগুলোর নিসঙ্গতায় সঙ্গী হয়। পৃথিবী যে
নিসঙ্গতা পছন্দ করে! ”
কুহু বান্ধবীদের সাথে কথা বলতে বলতেই পিহুকে
নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলো। পিহুকে
তাকিয়ে থাকতে দেখে কুহু চোখের ইশারায় কি
হয়েছে জিজ্ঞাসা করলো। পিহুও ইশারায় কিছু হয়নি
বললো। কিন্তু কুহু পিহুকে জড়িয়ে ধরলো তারপর
হঠাৎ করেই কাঁদতে লাগলো।
পিহু হেসে বলল,
– শুধু শুধু কাঁদছিস কেনো? ভাব দেখে মনে
হচ্ছে বহুদূর চলে যাচ্ছিস। পাশের বাড়িতেই তো
পড়ে থাকবি। দূরে বিয়ে হলে আমার জ্বালা
কমতো।
পিহুর কথা শুনে কুহুর কান্না আরো বেড়ে গেল।
কাঁদতে কাঁদতেই যেন কিসব বলল। কান্নার চোটে
কুহুর বান্ধবীরা পুরো কথা ক্লিয়ারলি বুঝেনি কিন্তু পিহু
ঠিকই বুঝে নিয়েছে। ছোটবেলায় পিহু বোনের
বিয়ের ছুটি চেয়ে দরখাস্ত,বোনের বিয়েতে
বান্ধবীকে দাওয়াত দিয়ে চিঠি এসব পড়ার সময় ইচ্ছে
করে জোরে জোরে পড়তো। চিৎকার করে
পড়া যাকে বলে। পাশের ফ্ল্যাট থেকেও শোনা
যেত। কুহু লজ্জায় আর রাগে পিহুকে অনেক
বকতো কিন্তু পিহু নিজের কাজ চালিয়েই যেত,কুহুর
কথায় কান দিতো না। একদিন কুহু স্যারের কাছে পড়ছিল
আর পিহু ভিতরের রুমে বসে বসে ইচ্ছে করে
উচ্চস্বরে এই দরখাস্ত আওড়াচ্ছিল। কুহু লজ্জায়, রাগে
মরে যাচ্ছিল। স্যার চলে যাওয়ার পর পিহুকে
মেরেও ছিল,পিহুও পাল্টা আক্রমণ করেছিল। কিন্তু
তারপরো সে এই কাজ ছাড়েনি। এখনো মাঝে
মাঝে এমন করে। পিহু এর মাধ্যমে এক পৈশাচিক
আনন্দ পায়। কুহু এই কথাগুলোই বলল। পিহুর এবার কান্না
এসে গেল। পিহুও ফুৃঁপিয়ে কাঁদলো। পিহুকে
কাঁদতে দেখে কুহু বলল,
– এই মেয়ে একদম কাঁদবি না। কাঁদলে মনে হয় তুই
মেকাপ করে এসেছিস।
পিহু কুহুর কথা শোনে হেসে ফেললো। কুহুর
বান্ধবীরা চেয়েছিল কুহুকে তাদের সঙ্গে
রাখতে কিন্তু কুহু থাকলো না,সে পিহুর সাথে
ঘুমোবে। রাতে কুহু পিহুকে জাপটে ধরে
ঘুমিয়েছে। পিহু হাজার ধাক্কিয়েও সরাতে পারেনি।
কুহুর এক কথা,
– “আজকে তোকে জড়িয়ে ঘুমাবো। তোর
যতোই দম বন্ধ হয়ে আসুক আর বিরক্ত লাগুক।”
পিহুও নিরুপায় হয়ে মেনে নিলো। কিন্তু কুহুকে
কয়েকশতো কথাও শুনিয়ে দিয়েছে। কুহুর অবশ্য
এ কথাগুলোতে কখনোই রাগ হতো না আজো
হয়নি। পিহু ভয়ে ভয়ে ছিল রাতে আবার না কুহু
মোবাইল চেয়ে বসে। কিন্তু কুহু মোবাইল
চাইলো না। কলরবেরর সাথে তো কথা বলার জন্য
সারাজীবন পড়েই আছে কিন্তু পিহুকে খুব বেশি মিস
করবে সে। তাই পিহুর সাথেই আজ রাতে গল্প
করবে। কলরবকে অবশ্য কুহু একবার বলেছিল যে
বিয়ের আগের রাতটা কুহু তার বেস্ট ফ্রেন্ডের
পিহুর সাথেই কথা বলে পার করবে। এজন্য হয়তো
কলরবও আর ফোন দেয়নি।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here