#নিশি_রাতের_ডাক
#পর্ব 2
#সুমাইয়া_আক্তার
মেয়েটার চোখ থেকে রক্ত ঝরছে ঝর্নার মতো…আর ঘাড় টা বাকা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে…
আমি দৌড়ে নিচে চলে আসি…রুমে ঢুকে তাড়াতাড়ি দরজা লাগিয়ে দিলাম…
এই রিদিতা, অনন্যা, সায়মা, নাফিসা ওঠ তোরা……ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই…
রাত 1টা…আমার পাশে সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে বসে আছে…আমি এখনো ভয়ে কাঁপছি… কি হচ্ছে আমার সাথে??
রিদিতা বলে উঠলো,,, এই কি হইছে তোর?? কই গেছিলি তুই???
তুই নিজেও ঘুমাস না আর আমাদের ও ঘুমাতে দিস না…
কি হইছে বল তো কাহিনী???
আমি সব খুলে বললাম,,,রিদিতা মনে হয় কিছুটা ভয় পেলো…আমাকে বলতে লাগলো,,,এই তুই না সাইন্সের স্টুডেন্ট??? তুই কি এসব বিশ্বাস করিস???
অনন্যা আমাদের থামিয়ে বলল,,,এই চুপ করবি তোরা???আমি এখানে একবছর ধরে আছি… আমি তো কিছু দেখিনাই…আর এসব হচ্ছে ভুয়া…কোনদিন এসবে বিশ্বাস করবি না তোরা…
সেদিন ভয়ে ভয়ে কাটালাম সারাদিন… রাতের বেলা আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম… আড্ডার মূল কারণ আমি…আমাকে হাসানোর জন্য সবাই মিলে আমার সাথে আড্ডা দিচ্ছে…
হঠাৎ আমার কানে ভেসে আসলো,,, কেউ গান গাইছে…তার গানে এত নেশা বলে বোঝাতে পারব না…
এই শোন তোরা কি গান শুনতে পাচ্ছিস…????
সায়মা বলল,,কই নাতো???
তাহলে আমি যে শুনতে পাচ্ছি…
আমার কথা শুনে অনন্যা বলল,,,এই শোন তোকে নরমাল করার জন্য আমরা আড্ডা দিচ্ছি আর তুই কিনা!!!!
আচ্ছা আচ্ছা সরি…এবার ঘুমিয়ে পড় সবাই..আমার খুব ঘুম পাচ্ছে…
আমি শুয়ে পড়লাম…আমার কানে এখনো গান ভেসে আসছে…রিদিতা আমাকে এমন ভাবে জড়িয়ে রেখেছে আমার নাড়াচাড়া করার সাধ্য নাই…
আমার খুব যেতে ইচ্ছে করছে কে এত সুন্দর করে গান গাইছে???
কোনভাবেই ঘুম আসছে না আমার…আমি যাবো…যেভাবেই হোক…
রিদিতা কে বললাম,,,এই শোন আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো…
রিদিতা ঘুমের ঘোরে থাকায় তেমন কিছু বলল না…
আমি এই সুযোগে বাইরে চলে যাই…আবার ও সেই গান শোনা যাচ্ছে…কিন্তু কি গান সেটা বুঝতে পারছিনা…আর নূপুরের শব্দ শোনা যাচ্ছে….আমি খুজে যাচ্ছি কোথা থেকে আওয়াজ আসছে…
হঠাৎ মনে হলো আমার পিছন দিকে কেউ দৌড়ে চলে গেলো…আমি কে কে বলে আওয়াজ দিতে থাকি…কিন্তু কারো আওয়াজ পেলাম না…
আবার ও আমার চোখের সামনে দিয়ে একটা ছায়া দৌড় দিয়ে চলে গেলো…
আমি পাগলের মতো ছুটতে থাকি…হঠাৎ দেখলাম কাল রাতের সেই মেয়েটা পুকুর পাড়ের দিকে যাচ্ছে…
আমি সেই মেয়েটাকে ডাক দেই…কিন্তু সে মেয়ে টা হেটেই চলেছে…আমিও গেলাম মেয়েটার পিছু পিছু….
একি মেয়ে টা দেখি পুকুরের পানিতে নেমে যাচ্ছে…আমিও নেমে যাচ্ছি পানিতে….
হঠাৎ অনন্যা এসে আমার হাত টান দিয়ে পুকুরের পাড়ে উঠিয়ে নিলো…
এই ফাহমিন কি করছিস তুই???তুই পুকুরে কেন যাচ্ছিস???
আমি বললাম,,,ওই যে দেখ ওইখানে একটা মেয়ে আমাকে বাঁচাও বাঁচাও বলছে…
কোথায়??কোন মেয়ে??এখানে তো কেউ নেই??
তুই চল এখান থেকে…চল বলছি…আমি জানতাম তুই ওয়াশরুমের নাম করে বাহিরে যাবি…তাই আমিও তোর পিছু পিছু বের হয়ে তোকে খুজতে লাগলাম… এসে দেখি তুই পুকুরে নামছিস…
আমি বললাম,,,আমি সত্যি বলছি… ওখানে কাল রাতে যে মেয়েটাকে দেখেছিলাম সেই মেয়েটাই ছিলো…
কেউ আমার কথা বিশ্বাস করতেই চাইলো না…
আমাকে নিয়ে অনন্যা শুয়ে পড়েছে…আর আমাকে ধমকাচ্ছে তুই যদি আবার কোথাও গেছিস তোর খবর আছে…চুপচাপ শুয়ে ঘুমা…
কিন্তু আমার যে ঘুম আসছে না…সারারাত আমার চোখে ঘুম নেই…
কে এই মেয়ে?? আর তার পরনে এমন ছেঁড়া ড্রেস কেন???কি চায় সে আমার কাছে??কেনইবা আসছে আমার কাছে…???
হাজার টা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে… ভোর চারটার দিকে একটু ঘুমিয়েছিলাম…
ছয়টার দিকে হৈচৈ এর শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গে… ঘুম থেকে উঠে দেখি রুমে কেউ নেই…আমিও ওদের খুজতে খুজতে বাহিরে যাই…
ক্লাস সিক্সের সামান্তা নিজের রুমেই আত্নহত্যা করেছে…
আমি চিৎকার দিয়ে কান্না করতে থাকি…কান্না করতে করতে আমি সামান্তার পড়ার টেবিলে ধাক্কা খাই…
সামান্তা একটা ছোট্ট কাগজে লিখেছে আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়…
ক্লাস সিক্সের একটা মেয়ে কোন কারণ ছাড়াই কেন আত্নহত্যা করবে???
ওইদিন আমাদের আর পরীক্ষা হয়নি…আমার মামা এসে সব পর্যবেক্ষণ করে সবাই কে বলল,,,দেখো তোমরা এমন কিছু করবা না যাতে আমাদের হোস্টেল এর বদনাম হয়…
এদিকে সামান্তার মা বাবা এসে স্কুলের টিচার দের শাসিয়ে গেছে স্কুলের টিচারদের নামে মামলা করবে..
আমার মামা প্রভাবাশালী হওয়ায় পুলিশদের ঘুষ দিয়ে মামলা ধামাচাপা দিয়েছে….
আমার মাথা কাজ করছে না কেন এভাবে আত্নহত্যা করছে মেয়েরা???
নাকি আয়েশা ওদের এভাবে মারছে???না আয়েশা তো মারা গেছে তাহলে???
সামান্তার মৃত্যুর পর আমরা সবাই অনেক ভয়ে থাকতাম…রাতের বেলা বাহিরে যেতাম না…আর বাহিরে গেলেও দুইজন একসাথে বের হতাম…
রাতের বেলা আমি আর সায়মা ওয়াশরুমে গেলাম…সায়মা ওয়াশরুমে ঢুকেছে…আর আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি…
আমার কেন যেন মনে হলো,,,আমার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে…. আমি ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরতেই দেখি সামান্তা আমার ঘাড়ে তার নখ দিয়ে আচড় দিয়েছে…
আমি ঘাড়ে হাত দিয়ে চিৎকার করি…আমার চিৎকার এ সায়মা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে… সাথে রিদিতা,অনন্যা,নাফিসাও চলে এসেছে…
আমাকে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়…আমি আধমরা অবস্থায় হাসপাতালের বেডে পড়ে রইলাম…মামা আমার খবর শুনে ছুটে চলে আসে.. খুব ক্ষুব্ধ ছিল মামা…খোজ করতে লাগলেন কে করেছে আমার সাথে এমন???
আমি মামাকে কিছুই বলিনি কারণ মামাও আমার কথা বিশ্বাস করবে না…বাবা মাকে জানাতে নিষেধ করেছি… জানলে খুব চিন্তা করবে…এমনকি বাড়ি থেকে ছুটে চলে আসবে আমার কাছে…সব কাজ কর্ম ফেলে আমার কাছেই পড়ে থাকবে…
আর তাছাড়া মামা আমার কোন অযত্ন করেনি…আমার দেখাশোনার জন্য একজন নার্স রেখে দিয়েছেন…
ডাক্তার বলছে ঘাড়ে এভাবে কেউ আঘাত করে??মনে মচ্ছে কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে….
আমার জ্ঞান ফিরলে,,, অনন্যা, সায়মা কে বলি কিভাবে এসব হলো???
ওরা কেউ আমার কথা বিশ্বাস করছে না…কিভাবে বিশ্বাস করাবো ওদের???
তোরা প্লিজ আমাকে বিশ্বাস কর… সামান্তা এসেছিলো…সামান্তা ওর বড় বড় নখ দিয়ে
আমার ঘাড়ে আঁচড় দেয়….
অনন্যা চিৎকার দিয়ে বলল,,,তুই থামবি প্লিজ??? সামান্তা আজ মারা গেছে আর ওর দাফন হয়ে গেছে…কিভাবে সম্ভব এটা???
আমি আর কিছু বলিনি ওদের… কারণ ওদের বলে লাভ নেই কেউ বিশ্বাস করবেনা আমার কথা….
আমার ঘাড়ে তিনটা সেলাই হয়েছে… এক সপ্তাহ পর বেড রেস্ট করতে বলা হয়েছে…আর ঘাড় কোনভাবেই নাড়াচাড়া করা যাবেনা…
এভাবে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে খুব অসহ্য লাগছে আমার…অনন্যা, সায়মা, নাফিসা,রিদিতা ওরা চারজন আমার পাশে থাকতো…
এক সপ্তাহ পর হাসপাতাল থেকে আমার রিলিজ করেছে… আমি এখন মোটামোটি সুস্থ…হাটাচলাও করতে বলেছে ডাক্তার…তবে বেশি স্ট্রেস নিতে নিষেধ করছেন…
মামা এসে আমার খোজ খবর নিয়ে যেতেন…
পরদিন সকালে উঠে দেখি আমার খাতায় রক্ত দিয়ে লেখা,,,আমাদের খুন করা হয়েছে…এর শাস্তি আমরাই দিব,,,প্রতিশোধ আমরা নিবোই….
আমি চিৎকার দিতে গিয়েও দিতে পারলাম না…কারণ ঘাড়ে সেলাই আছে কোনভাবেই চিল্লানো যাবেনা…
আমি দৌড়ে গিয়ে অনন্যা কে ক্লাস থেকে ডেকে আনি…
ওকে দেখানোর আগেই আমার খাতা থেকে লেখাগুলো গায়েব হয়ে যায়…
(চলবে)