#যদি_তুমি_জানতে
#ইসরাত_জাহান_তানজিলা
#পর্ব_5
দুপুরে রোদের ভিতর পায়ে হেঁটে ভার্সিটি থেকে ফিরছে তুরান। বেশ তাড়াতাড়ি হাঁটছে! রোদে মাথা ঝিমঝিম করছে। মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে তুরান। বাবা-মা খুব কষ্ট করে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াচ্ছে। অবশ্য এখন টিউশনির টাকায়ই চলে যায় তুরানে। তবুও সব সময় হিসেব থাকে কিভাবে টাকা বাচানো যায়। ভার্সিটি থেকে পায়ে হেঁটে বাসায় আসলে ত্রিশ টাকা বেচে যায় । জীবনে সাকসেস হতে হলে এই টুকু কষ্ট তো করতেই হয়! তিন বোন এক ভাইয়ের মাঝে তুরানই বড়। বোন তিন জন তুরানের ছোট। টানাপোঁড়নের সংসারে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয় তুরানের বাবার।
ছোট্ট একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তুরান। দুপুর বেলা রাস্তা পুরো ফাঁকা। এলোমেলো পায়ে তাড়াতাড়ি হেঁটে চলে আসলো বাসায়। বাসায় এসে কিছুক্ষন রেস্ট নিলো। আজকে রাঁধতে ইচ্ছা করছে না মোটেও। কলেজ লাইফ থেকে ম্যাচে থাকত তুরান। মাঝে মাঝে বুয়ায় অনুপস্থিতে রান্না করতে করতে এখন পাক্কা রাঁধুনী হয়ে গেছে! যদিও রাঁধুনী শব্দটা শুধু মেয়েদের সাথেই যায়।
রান্নার উদ্দেশ্য শোয়া থেকে উঠে ক্লান্তির জন্য আর রাঁধতে ইচ্ছে হলো না। আবার শুয়ে পরলো।
কলিং বেলের শব্দে ঘুমানো আর হলো কোথায়? খুব বেশী বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলল তুরান।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রুপা। হাতে এক প্লেট পোলাউ আর মাংস। রুপার দিকে জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টিতে তাকালো তুরান।
মুচকি হেসে রুপা বলল,
-‘আপনার জন্য এনেছি।’
-‘সাহেলা আন্টি পাঠিয়েছেন?’
কোন উত্তর দেয় না রুপা। রুমে ঢুকে টেবিলের কাছে প্লেট টা রেখে বলল,
-‘নেন,নেন খেয়ে উদ্ধার করেন আমায়।’
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তুরান । এখন একদম স্বাভাবিক মনে হচ্ছে রুপাকে। কালো রঙের একটা থ্রী পিচ পরা রুপা। চুল গুলো বেনী গাঁথা ,হাঁটু ছোঁয়াচে। ঠোঁটের নিচের তিলটা স্পষ্ট হয়ে আছে। বেশী পরিপাটি মনে হচ্ছে!
মনে মনে খুশি হয়েছে তুরান । রান্না করতে ইচ্ছা করছিলো না, এমন সময় যদি কেউ খাবার পাঠায়! অদ্ভুধ রকমের ভালো লাগে।
তুরান রুপার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘আমার শার্ট,প্যান্ট নিতে আসো নি তো আবার খাবার দেওয়ার বাহানায়?’
হেসে দেয় রুপা। হাসিটা স্বচ্ছ।
-‘না ,না শার্ট ,প্যান্ট তো ছাদ থেকেই নেওয়া যায়। তার জন্য কি রুমে আসার প্রয়োজন আছে?’
তুরান একটু ভেবে বলল,
-‘তাইতো।’
-‘আপনার সে দিনের প্যান্টটা দিয়ে দিবো। আলখল্লার মত ঢিলা হয়। শার্ট রেখে দিবো।’
বলেই তুরানের দিকে উত্তরের আশায় তাকায় রুপা।
তুরান মাথা নেড়ে বলল,
-‘আচ্ছা।’
হঠাৎ মুখ গম্ভীর করে রুপা বলল,
-‘সেদিন আপনার গায়ে গ্লাস মেরেছি,সে জন্য আম্মু আমায় থাপ্পর দিয়েছে। ভালোই করেছে তাই না? ভুল করলে তো সবাই মারবে।’
রুপার কথা গুলো কেমন যেন বাচ্চা টাইপ লাগছে তুরানের কাছে। এখন যেন একদম ইন্নসেন্ট রুপা!
বেশ মজা পাচ্ছে তুরান। বলে,
-‘হ্যাঁ মারবেই তো।’
-‘সে কি আপনি খাচ্ছেন না?’
তুরান খাবার মুখে নিলো । রুপা একটা চেয়ার টেনে তুরানের কাছে বসলো।
-‘আম্মু হাতের রান্না খুব মজা তাই না?’
খাবার মুখে দিতে দিতে তুরান বলল,
-‘হুম অসাধারন।’
-‘আপনি একাই খাবেন?’
খাবার মুখে দিতে গিয়েও থেমে যায় তুরান। হেসে বলে,
-‘তুমি খেয়ে আসো নি?’
-‘আরে বাবা আমি কখন খেলাম? আমি তো আমার খাবার আপনার জন্য নিয়ে আসলাম।’
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় তুরান। লজ্জাও পেয়েছে বেশ!
-‘তোমার খাবার তুমি আমার জন্য এনেছো কেন? আমি তো ভাবছি সাহেলা আন্টি পাঠিয়েছে। এখন তো আমি ভাত ,মাংস মেখে ফেলেছি। তুমি কি খাবে?’
-‘না,না আপনি খান। কিন্তু আমি আপনার সামনে বসে আছি আমায় একটু সাধা কি উচিত ছিলো না?’
অস্বস্তিকর অবস্থায় পরে যায় তুরান । ইচ্ছে করছে আধ খাওয়া ভাত আর মাংস ফেরত দিয়ে দিতে।
-‘আমি তোমায় সাধবো কিভাবে? ভাত তো এক প্লেটই এনেছো? আচ্ছা তুমি আমার জন্য ভাত আনতে গেলে কেন!আজব।’
রুপা হেসে বলল,
-‘আপনার সাথে ভাব জমাতে। না ,না ভাত ফেরত নিবো কেন? আপনি খেয়ে নিন।’
এখন আর ভাত গলা দিয়ে নামছে না তুরানের। রুপা মিটিমিটি হাসছে।
-‘লজ্জা পেয়েছেন বুঝি?’
কথা বলছে না তুরান । কিছুক্ষন চুপ থেকে গম্ভীর গলায় বলে,
-‘তোমার মাথায় কি প্রবলেম আছে? তোমার খাবার তুমি আমার জন্য এনেছো কেন?’
-‘বললাম তো ভাব জমাতে।’
একা একা বিড়বিড় করে বকছে তুরান।
রুপা চেয়ারটা টেনে তুরানের আর একটু কাছে গিয়ে বলল,
-‘একা খেতে লজ্জা পাচ্ছেন এখন? আচ্ছা_ আচ্ছা! আপনিও খান,আমায়ও দেন।’
-‘তোমার খাবার তুমি পুরো টা নিয়ে যাও।’
রুপা হাঁ করে বলল,
-‘দেন খাইয়ে দেন।’
নিঃসংকোচ আবেদন! রীতিমত অবাক হয়ে যায় তুরান। এভাবে অপরিচিত এক জন মানুষের সাথে এমন বিহেভ কিভাবে করা যায় ভেবে পায় না? আর রুপা চাচ্ছে টা কি? না… রুপার এসব পাগলামী কোন চাওয়া-পাওয়া খুঁজে লাভ নেই । বড্ড বাচ্চা টাইপের মেয়েটা ।খাম-খেয়ালির বশত করছে এসব।
তুরান কে নিরুত্তর দেখে রুপা আবার বলল,
-‘কি হলো দিচ্ছেন না কেন?’
-‘তুমি বাসায় যেয়ে খেয়ে নিও।’
চোখ লাল করে রুপা বলে,
-‘কেউ যদি আমার কথা না শুনে তাহলে আমার মাথা ব্যাথা হয়। কাঁদতে ইচ্ছা হয়। আপনি কি চান আমি পাগলামী করি?’
কি ধরনের ব্লাকমেইল এগুলো? তুরান এবার রেগে গিয়ে বলল,
-‘তোমার খাবার তুমি নিয়ে যাও। দ্যান বাসায় গিয়ে পাগলামী করো।’
মুখ গম্ভীর করে ফেলে রুপা। চোখ ছলছল করছে। আর একটু হলেই কেঁদে দিবে।
-‘আমার মুখে কি ময়লা আছে? খাইয়ে দিলে কি পাপ হবে?’
-‘দেখো রুপা তুমি বাচ্চা মেয়ে। তুমি এসব বুঝবে না। আমার রুমে তোমায় কেউ দেখলে বাজে বলবে। প্লীজ তুমি যাও।’
চেঁচিয়ে উঠে রুপা।
-‘যাবো না আমি।’
চেয়ায় ধরে শক্ত করে বসে। যেন কেউ রুম থেকে বের করতে না পারে।
-‘রুপা তুমি ভালো ব্রেনের ডাক্তার দেখাও।’
-‘ব্রেন কি?’
কথা বলে না তুরান। এলিয়েন মনে হচ্ছে রুপাকে।
-‘আপনি যদি আমায় খাইয়ে না দেন তাহলে আমি কাঁদবো,চিৎকার করবো।’
মেজাজ খারাপ হচ্ছে তুরানের।
-‘এই মেয়ে পাগল পেয়েছো তুমি আমায়? বের হও আমার রুম থেকে।’
তুরান রুপার হাত ধরে বের করে দিতে চাইলে চেয়ারের হাতল ধরে আরও শক্ত হয়ে বসে রুপা।
এমন পাগলামী মানুষ করে? ফুঁফিয়ে কেঁদে দেয় রুপা। বাচ্চা দের মত ঠোঁট বাঁকা করে কাঁদছে।
তুরান মহা বিপদে পরেছে যেন! এমন বিপদে আল্লাহ যেন কাউকে না ফেলে।
তুরান চরম বিরক্ত নিয়ে বলল,
-‘হাঁ করো খাইয়ে দিচ্ছে ।’
চোখের পানি মুছে রুপা হেসে বলল,
-‘উঁহু! এভাবে বললে খাবো না । মিষ্টি করে বলেন।’
তুরান রাগ চেপে বলল,
-‘রুপা শয়তান বেটি খেয়ে উদ্ধার কর আমায়।’
উচ্চশব্দে হেসে দেয় রুপা। হাসতে হাসতে বলে,
-‘বেটি কি?’
তুরান কোন কথা বলে না। প্লেটের বাদ বাকী পোলাউ রুপাকে খাইয়ে দিয়ে প্লেট টা রুপার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-‘আর কখনো আমার রুমের ধারে কাছে আসবে না ।
ভেংচি কেটে রুপা বলল,
-‘সে পরে দেখা যাবে ।’
ইস! ভাব জমাতে আসছে উনি! বদের হাড্ডি।রুপার বিষয়টা একটু আধটু ভাবাচ্ছে তুরান কে। রুপা এমন অদ্ভুধ কেন?
চলবে..