#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৩
#সুরাইয়া_নাজিফা
আমি, স্মৃতি আপু, আরশ ভাইয়া তিনজনই শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি শানের দিকে। আর শান রাগান্বিত হয়ে তাকিয়ে আমাদের দিকে। এক পা নড়ার শক্তি পাচ্ছি না।
আমি কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলাম,
“আপনি?”
শান গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,
“আরশ তোর থেকে এটা মোটেও আশা করি নি।”
আর মাথা নিচু করে বললো,
“স্যরি ভাইয়া আসলে আমি ভয় পেয়েছিলাম এজন্য বলা হয়নি। ”
শান তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিল,
“তোর আর আমার সম্পর্কটা আমি অনেক
গভীর জানতাম আরশ। তোকে ছোট ভাইয়ের চেয়ে বন্ধু ভাবতাম বেশী আর সেই তুই বলছিস তুই আমাকে ভয় পাচ্ছিলি এজন্য কথাটা কেমন জানো হজম হলো না। ”
শানের এমন কাতর কথা শুনে আমার কান্না চলে আসল। মানুষটা হয়তো সত্যিই অনেক কষ্ট পেয়েছে। আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“প্লিজ আপনি আমাদের কথাটাও শুনুন আমি বলছি….। ”
পুরো কথা বলার আগেই শান আমার দিকে রক্তবর্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,
“জাস্ট শাট আপ। এতোদিন যখন কিছু বলোনি তখন তোমার মুখ থেকে আর কোনো কথা শুনতে চাই না। চুপই থাকো সেটাই ভালো। ”
শানের ধমক শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।আমার চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে নিরবে অশ্রু জরাচ্ছিলাম। তখনই শান বললো,
“তোমাদের দুজনকেই আমি সব থেকে বেশী বিশ্বাস করতাম আর তুমরা কি করলে বিশ্বাসঘাতকতা যেটা আনু কখনো ভুলব না। ”
আরশ ধরা গলায় বললো,
“ভাই আমি যদি এটা তোকে বলতাম যে আমি স্মৃতিকে নিয়ে বিয়ের দিন পালাবো তাহলে সেটা তুই কখনো সাপোর্ট করতিস না আর….। ”
শান দুই পকেটে হাত দিয়ে বললো,
“আর সেই জন্য তুই আমাকে বলিস নি ওকে। কেন করবো তোকে হেল্প তোর যদি এতোই স্মৃতিকে পছন্দ ছিলো তাহলে সেরা বিয়ের আগে বলতে পারতিস পরিবারের সবাইকে তুই কি বলেছিস?বিয়ের দিন সবার মান সম্মান নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেললে কেন হেল্প করব তোকে? ”
আরশ বললো,
“ভাই প্লিজ একটু শান্ত হয়ে বসে আমাদের কথাটা শোন। স্মৃতি বলতে পারেনি ওর বাবার ভয়ে। তুই তো জানিস আঙ্কেলকে বিয়েটা এতো তাড়াতাড়ি এরেন্জ করলো যে ঐ সময়ে যদি বলতামও আঙ্কেল আমাদের কখনো বিশ্বাস করতো না। আর আমি বারবার চেষ্টা করেও বলতে পারিনি। ”
শান হাত দেখিয়ে আরশ ভাইয়াকে থামিয়ে দিলো,
“কোনো কথা শুনতে চাইনা আর অনেক বলেছিস আর বলিস না। ”
কথাটা বলেই শান চলে গেল। শানকে এভাবে রেগে বের হয়ে যেতে দেখে আমিও ছুটে গেলাম ওনার পিছন পিছন।
“প্লিজ শুনুন আমার কথাটা। ”
শান কোনো কথা না বলেই গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। আমি দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে থমকে দাঁড়ালাম। শান একবারও আমার কথাটা শুনার প্রয়োজন মনে করলো না এতোটা বিষ হয়ে গেছি আমি উনার নজরে। ভাবতেই আমার চোখ থেকে গলগল করে পানি পড়তে লাগল। তখনই পিছন থেকে এসে স্মৃতি আপু আমার কাঁধে হাত রাখল। আমি চোখের পানি মুছে স্মৃতি আপুর দিকে তাকালাম আর একটু হাসার চেষ্টা করলাম।
স্মৃতি আপু ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো,
“আমি আগেই জানতাম যে এই একটা কাজের জন আমাকে অনেক ভুগতে হবে। কিন্তু আমার ভুলের কারণে আমার ছোট্ট বোনটাকেও যে এতোটা ভুগতে করতে হবে সেটা আমি ভাবতেও পারিনি। এতোটাই পোড়াকপালি আমি। ”
আমি রেগে বললাম,
“এসব কি বলছিস তুই আপু কিছু হয়নি। দেখবি সব ঠিক গয়ে যাবে। এখানে কেউই ভুগবে না। আমাদেরর তো আরো ভালোই হলো শান আমাদের বিষয়টা আগেই জেনে গেছে নাহলে আমরা কখনোই হয়তো বিষয়টা সলভ করতে পারতাম না। এখন উনারও হেল্প পাওয়া যাবে। আর তুই তো জানিসই শান আরশ ভাইয়াকে কতটা ভালেবাসে। ঠিক উনার রাগ পড়ে যাবে আর তুই খুব তাড়াতাড়ি ঐ বাড়ির বউ হয়ে যাবি। এখন শুু সেটার প্রস্তুতি নে এতো না ভেবে। ”
স্মৃতি বিরক্ত হয়ে বললো,
“এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও তুই এখনো আমার কথা ভাবছিস কোন মাটি দিয়ে তৈরী তুই। আজকে যেটা হলো তারপর তোর আর শানের ভাইয়ার সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভেবেছিস একবারও। ”
আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“কি আবার হবে কিছু না। উনি এখন একটু রেগে আছেন ঠিকই কিন্তু কিছুক্ষন পর উনার রাগ ঠিক কমে যাবে দেখিস। উনি আমার উপর রাগ করে থাকতেই পারবে না। তাই আমার কথা না ভেবে নিজেরটা ভাব। ”
আরশ ভাইয়া জল ভরা চোখে তাকিয় আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“প্লিজ ভাইয়া মন খারাপ করো না সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
আরশ কান্না মাখা কন্ঠে বললো,
“না সোহা কিছু ঠিক হবে না। ভাই অনেক কষ্ট পেয়েছে আজ না জেনেই আমি ভাইকে চরম কষ্ট দিয়েছি। আর কাছের মানুষের দেওয়া কষ্ট মানুষ কখনে ভোলে না। ”
আমার চোখেও নোনা জলেরা এসে ভিড় করলো,
“হুম তবে যদি ভালোবাসা দিয়ে পুসিয়ে দিতে জানো সেই কষ্টটা ভুলতেও সময় লাগে না। তুমি এতদিনের মতো আজও একটু বিশ্বাস রাখো আমার উপর আমি সব ঠিক করে দেবো।”
আরশ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো,
“তুমি আছো বলেই এখনো সাহস পাচ্ছি। ”
“ব্যাস তাহলে হলো তো এইবার তোমরা বাড়ি ফিরে যাও। বাকি কথা ফোনে হবে। ”
কথাটা বলে আমিও গাড়িতে উঠে বসলাম। জানিনা এরপরে কি আছে ভাগ্যে। ওদের তো সাহস দিয়ে দিলাম এবার আমার কি হবে? শান যদি সত্যি না মানে। না না এমন বললে হবে না আমাকে পারতেই হবে।
★
★
বাড়ির ভিতরে আসতেই দেখি শানসহ সবাই স্বাভাবিকভাবে বসে আছে। আমার ভয় লাগছিল শান আবার সব কিছু বলে দেয়নি তো। আমি স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম ওনাদের দিকে চেয়ে ওনাদের রিয়েকশন বুঝার জন্য। বাট ওনারাও একই ভাবে আমার দিকে চেয়ে আছেন। বারবার হাত কাপালে দিচ্ছিলাম আর আরেক হাত দিয়ে ওড়নার খোঁট ধরে মোছড়া মুছড়ি করছিলাম। তখনই সবাই একসাথে উঠে দাঁড়ালো ভয়ে আমার হাত মুখ ঘামছিল। মা আমার দিকে এগিয়ে আসলো। আমি এক্ষন উনাদের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মাথানিচু করে নিলাম কারণ সব জানাজানি হওয়ার পর আমি সবার সাথে চোখ মিলাতে পারব না। সবাই একটাই প্রশ্ন করবে সব যদি জানতামই তাহলে কেন বলিনি?যার উত্তর নেই আমার কাছে
মা এসে বললো,
“এটা তোর থেকে আশা করিনি সোহা।এভাবে আমাদের সাথে মিথ্যা বললি কেন তুই? ”
মায়ের কথা শুনে আমার হমদস্পন্দনটা থেমে যাওয়ার উপক্রম। আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।আমার চোখ থেকে পানি পড়ে গেল আর মাথানিচু করে বললাম,
“স্যরি মা আসলে…। ”
মা দুই হাতে আমার মুখটা উপরে তুলে বললো,
“আরে বোকা মেয়ে কাঁদছিস কেন?তুই ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে যাবি সেটা বলে গেলে কি আমরা কেউ তোকে বারণ করতাম।”
মায়ের কথা শুনে আমি হা করে তাকিয়ে আছি। বিষ্ময় কাঁটছে না। আমি অবাক হয়ে বললাম,
“মানে?”
মা হেসে বললো,
“মানে তুই আজকে ভার্সিটিতে যাবি বলে ফ্রেন্ডেদের সাথে চলে গেলি কেন? আমাদের বলে যেতি।শান তোকে দেখতে পেয়ে রেগে গেছে একা একা যাওয়ার জন্য। ”
আমি খুব বড় একটা নিঃশ্বাস নিলাম। তারমানে উনি কিছু বলেনি তাহলে।কিন্তু কেন?উনার তো বলার কথা ছিল। আমি উনার দিকে তাকালাম জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে। উনি আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি এখান থেকে উঠে উপরে চলে গেলেন। আমি চোখ ফিরিয়ে মায়ের দিকে তাকালাম
মা বললো,
“সাংঘাতিক রেগে আছে। যা গিয়ে হ্যান্ডেল কর আর কখনো না বলে একা একা যাস না কোথাও।”
আমি মুখে কিছু বললাম না শুধু মাথা নাড়ালাম। তারপর আস্তে আস্তে পা বাড়ালাম রুমে যাওয়ার জন্য। জানি না আমার জন্য কোন জড় অপেক্ষা করছে।
রুমের সামনে এসে দরজায় হালকা ধাক্কা দিতেই খেয়াল করলাম দরজা বন্ধ অদ্ভুত এইসময় দরজা বন্ধ করলেন কেন উনি। আমি আরো দুই তিনবার নক করলাম বাট কোনো সাড়া শব্দ নেই। আর বেশী নক করাও যাবে না নিচ থেকে মা-বাবা যদি শুনতে পায় আর রক্ষে থাকবে না। আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষন পরই খট করে দরজাটা খুলে গেল। আমি মাথা উপরে তাকালাম।
“আপনি দরজা আটকে রাখলেন কেন? ”
শান কথা না বলে চলে যাচ্ছিলেন আমি উনার সামনে দাঁড়ালাম,
“কি হলো আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি। ”
“যেকেউ চাইলেই আমার রুমে প্রবেশ করার অধিকার রাখে না অন্তত আমি থাকাকালীন তো নাই। ”
উনার কথাটা শুনে কোথাও আমার অভিমানটা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইল। আমি চোখ মুখ কঠোর করে বললাম,
“ওহ তাহলে এই যে কেউয়ের জন্য নিচে মিথ্যা কথা বলে আসলেন কেন? ”
শান তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বললো,
“স্যরি আমি তোমার জন্য কিছু করিনি। যা করেছি আমার পরিবারের জন্য। কি বলে তো আমি নিতে পেরেছি তোমার বিশ্বাসঘাতকতা সেটা ওরা নিতে পারবে না। একটি বেশীই ভালোবাসে কিনা। ”
কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন। আমার চোখের পানি ঝর্ণার ধারার মতো বইতে লাগলো। বারবার উনার” বিশ্বাসঘাতক ” শব্দটা কানে বাজছে যার জন্য হৃদয়ে কষ্টের পাহাড় ভেঙে পড়েছে। আরে আমি নিজেও তো জানতাম না ওরা পালিয়ে যাবে। তাহলে এখানে আমার দোষ কোথায়।
★
★
শান নিজের দুই পকেটে হাত দিয়ে একা একা রাস্তায় হাঁটছে । এদিকে তেমন একটা মানুষ নেই। থাকলেও মাঝে মাঝে দুই একজন আসছে যাচ্ছে। চারদিকে শীতল বাতাস বইছে। তবুও মনটাকে শীতল করতে পারছে না। বারবার এটাই মনে হচ্ছে ওর সবচেয়ে দুজন কাছের মানুষ ওর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
বিয়ের দুইদিন আগের কথা মনে করার চেষ্টা করছিলো শান।
শান সোহাকে ভালোবাসত তাই কখনোই স্মৃতিকে বিয়ে করতে পারবে না। কিন্তু এই কথা বাবা বা সোহার বাবাকে কিভাবে বলবে বুঝতে পারছিলো না শান। তাই স্মৃতিকে ডেকে পাঠালো।
স্মৃতি অন্যরুমে আরশের সাথে কথা বলছিলো তখনই একজন এসে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিলো যেটাতে লেখা “ছিল পুল সাইডে এসো কথা আছে” নিচে ছোট্ট করে শানের নাম লেখা। স্মৃতি ভয় পেয়ে গেলো এই এতো রাতে শান ডাকছে ব্যাপার কি? স্মৃতি আরশকে বলে ফোন কেঁটে শানের বলা জায়গায় চলে এলো। স্মৃতি এগিয়ে এসে বললো,
“ভাইয়া আপনি আমাকে ডেকেছেন? ”
শান পিছন ফিরে তাকালো,
“হুম। ”
স্মৃতি চিন্তা নিয়ে বললো
“কেন?”
শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
“দেখো স্মৃতি তোমাকে কিভাবে যে কথাটা বলবো আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু তারপরও আমাকে বলতেই হবে।সবকিছু এত দ্রুত ঘটে যাচ্ছে যে কাউকে কিছু বলার সুযোগই পাচ্ছি না আসলে….। ”
স্মৃতি শানকে ইতস্তত করতে দেখে বললো,
“ভাইয়া কি হয়েছে আমাকে বলেন না? ”
“স্মৃতি আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না আমি অন্যকাউকে ভালোবাসি প্লিজ বিয়েটা ভেঙে দেও। ”
সেদিন কথাটা শুনে স্মৃতির কোনো প্রতিক্রিয়া বা কোনো প্রতিবাদ করেনি যদিও করার দরকার ছিলো। ওর জায়গায় যেকেউ থাকলে করতো বিয়ের দুইদিন আগেই এসব কথা বললে। কিন্তু সেখানে স্মৃতি নিরবে মেনে নিয়েছিল। তখনই শানের খটকা লেগেছিল বাট সেটা এতো আমলে নেয় নি।ভেবেছে হয়তো স্মৃতি এই বিয়েটাতে রাজি না। অন্যদিকে আরশের ব্যাপারটা ও শান ক্লিয়ার ছিলো যে আরশ কখনোই সোহাকে বিয়ে করবে না কারণ সে জানত শান সোহাকে ভালোবাসে। শান ভেবেছিলো এজন্য হয়তো আরশ পালিয়েছে। কিন্তু আরশ যে ওর কাছ থেকে এত বড় একটা কথা লুকাবে সেটা ভাবতেও পারেনি। এটা কেন বললো না আরশ আমাকে যে ও স্মৃতিকে ভালোবাসে তাহলে হয়তো আমি ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করতে পারতাম তখন।আর সোহা সব জেনেও এতটা দিন এক ছাঁদের নিচে থাকার পরেও এতোবড় একটা ঘটনা চেঁপে গেল। একটাবার কি বলা যেত না। অভিমানটা এখানেই হচ্ছে। মাঝে মাঝে আমাদের কাছে ভালোবাসার থেকে অভিমানটা বড় হয়ে যায় আর শানেরও তাই হয়েছে।
রাত দশটার দিকে শান বাসায় ফিরে গেল। নিজের ঘরের প্রবেশ করেই সোফায় গিয়ে বসল। একবার আড়চোখে সোহাকে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে খুজে নিলো বাট কোথাও সোহা ছিল না। শানের অদ্ভুত লাগলো। তারপরও সেটা বেশী না ভাবলো না। কারণ অভিমানটা ভাবতেই দিচ্ছে না। তাই শান চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগলো। বাট অনেকক্ষন পরোও যখন সোহার কোনো সাড়া পাচ্ছিলো না তখনই ভয় পেলো। তাহলে কি ঐদিনের মতো আবারও কোথাও চলে গেল? শান সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালালো। একবার ওয়াসরুমে দেখে নিলো না সেখানেও নেই। তাহলে কি বাগানে আছে।কথাটা মনে হতেই শান এক পা বাড়াবে বাগানে যাওয়ার জন্য তখনই ওর কানে কারো ফুফিয়ে কান্নার আওয়াজ এলো। শান মনে মনে ভাবল এই রুমে কে কাঁদছে? শানের অস্তিরতা বেড়ে গেল। শান কান্নার আওয়াজ ভালো ভাবে শুনে বুঝার চেষ্টা করে বুঝলো আওয়াজটা বেলকনি থেকেই আসছে। শান আওয়াজটা অনুসরণ করে বেলকনি অব্দি গেল যেতেই চোখ পড়ল সোহার উপর। শানের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে?সোহা ওখানে বসে বসে অশ্রু বিসর্জন করে যাচ্ছে।শানের রাগ হলো।
শান আস্তে আস্তে সোহার দিকে এগিয়ে গেল,
“ঐভাবে কান্নাকাটি করে কি প্রমান করতে চাইছো? ”
শানের কথা শুনে আমি মাথা তুলে তাকালাম। আমার চোখের পানি এখনো একবিন্দুও শুকায়নি।শানকে দেখে আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। শান আমার আরেকটু কাছে এসে বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো,
“লিসেন এখানে কেউ মরে যায়নি যে এভাবে কান্না করে শোক পালন করছো। একদম কাঁদবে না। আমার কারো কান্না সহ্য হয় না। ”
আমি কান্না মাখা কন্ঠে বললাম,
“মরেছে তো এজন্যই কাঁদছি। ”
শান আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো,
“এতো হেয়ালি কথা শুনার কোনো সময় নেই আমার সরাসরি বলো কি বলতে চাও। ”
আমি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
“সেটা তো আমার থেকে আপনি ভালো জানেন। কারণ আপনার কাছে তো আমি বিশ্বাসঘাতক। এখন আর আপনি আমাকে বিশ্বাস করেন না। আমাদের মধ্যে থাকা বিশ্বাস, ভরষা, বন্ধুত্ব সবটাই তো মরে গেল তাহলে শোক পালন করতেই হবে তাই না। ”
শান কঠোর গলায় বললো,
“তার জন্য শুধুমাত্র তুমি দায়ি। তুমি মেরেছো তাও নিজের হাতে তাই ডেই দোষ তুমি অন্যকাউকে দিতে পারো না । ”
আমি ঘাড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। উনি আমার দিকে উনার রুমালটা এগিয়ে দিলেন,
“চোখের পানিটা মুছে নেও জলদি। ”
আমি উনার কথা শুনেও না শুনার ভান করে থাকলাম। শান উনার হাত দিয়ে আমার মুখের দুইপাশে হাত দিয়ে চেঁপে ধরে জোর করে ধরে উনার দিকে ফেরালেন। তারপর নিজের হাতে আমার চোখের পানি মুছে দিলেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম শূন্য দৃষ্টিতে। এই মানুষটাকে কখনোই কি আমি বুঝতে পারবনা। এতোটাই যত্ন যদি করবে তাহলে কেন মাঝে মাঝে এত অবহেলা করে। আমার ভাবনার শুতা কেঁটে শান বললো,
“কান্নাকাটি করে প্লিজ চেহারার নকশাটা পরিবর্তন করো না।নাহলে সেদিনের মতো মা ভাববে আমি তোমাকে মেরেছি। তাই দয়া করে কান্নাটা বন্ধ করো। ”
কথাটা বলেই উনি চলে যাচ্ছিলেন তখনই আমি উনাকে হাত ধরে আটকালাম।কান্না করে বললাম,
“প্লিজ একটাবার আমার কথাটা তো শুনুন।”
শান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
“আবার কি বলবে? নিশ্চয় নতুন কোনো মিথ্যা কথা। ”
উনার কথা শুনে আমি পুরো স্পিচলেস হয়ে গেলাম।এতোটাই অবিশ্বাস করেন উনি আমাকে জাস্ট ভাবতেও পারছি না। নিজের প্রতি নিজেরই রাগ লাগছে। উনার কথা বলার পরেও বেহায়ার মতো বললাম,
“আচ্ছা বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে বলছি অন্তত বন্ধু ভেবে নাহয় একটাবার আমার শেষ কথাটা শুনে নিন। ”
শান কিছু বললো না তবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল,
“আরশ ভাইয়া আর স্মৃতি আপু যখন পালিয়ে যায় আমি তখনও জানতাম না। আমি তাদের বারণ করেছিলাম বাট তারা আমার কোনো কথাই শুনেনি। পালিয়ে যাওয়ার পর জানতে পারি তখন চাইলেও কিছু করার ছিলো না। আর এই পরিবারের সবার কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি এরপর এই কথা বলার সাহস করতে পারিনি যদি সব হারিয়ে ফেলি।”
আমার চোখে জল ছল ছল করছিলো। আমি চোখের পানি মুছে বললাম,
” তবে গত একমাস আগে আমি আপনাকে বলার চেষ্টা করেছিলাম আপনার মনে আছে কিনা জানি না তবে কথাটা বলার আগেই আপনি কাজের জন্য চলে যান তখন আর বলা হয়নি। ”
সোহার কথাটা শুনেই শানের মাস খানিক আগের কথা মনে পড়ল। একদিন বিকালে সোহা হাতে দুইজনের জন্য দুই কাপ কফি নিয়ে এসে বললো,
“আপনি কি কাজ করছেন? ”
আমার হাতে ফোন ছিলো আমি ফোনটা পাশে রেখে বললাম,
“না। বসো না। ”
সোহা আমার সামনের চেয়ারে বসলো,
“এই নিন আপনার কফি। ”
“ধন্যবাদ। ”
সোহা একটু হাসলো।তারপর চোখে মুখে চিন্তা নিয়ে বললো,
“আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলবো আপনি রাগ করবেন না তো। ”
আমি সোহার হাতের উপর হাত রেখে আস্বস্ত করে বললাম,
“এতো ইতস্তত করছো কেন বলো না একদমই রাগ করবো না। ”
সোহা নিজের ঠোঁট কামড়ে বসে আছে।হয়তো ভয় পাচ্ছে। তখনই আমি আবার বললাম,
“বলো কি হয়েছে।”
সোহা চোখ মুখ ছোট করে বললো,
“আসলে ওই স্মৃতি আপু আ…..।”
সোহা সম্পূর্ন কথা বলার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো। আমি ফোন হাতে নিয়ে সোহা কে বললাম,
“স্যরি একটু ইমপরটেন্ট কল পরে শুনছি। ”
কথাটা বলেই উঠে যাচ্ছিলাম তখনই সোহা বলে উঠল,
“বাট আমার কথাটাও ইমপরটেন্ট। ”
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভড করে কানে ধরে সোহাকে ইশারায় এককানে ধরে স্যরি বলে বেরিয়ে গেলাম।আর সোহা মন খারাপ করে তাকিয়ে রইল।সেদিন যদি জানতো এই কথা বলবে তাহলে হয়তো কথাটা সময় নিয়ে শুনত।হঠাৎ সোহার কথা শুনে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এলো শান,
“আমি জানি না আপনি আমার কথা বিশ্বাস করবেন কিনা তবে এটাই সত্যি। তবে এখন যখন ওরা একটা ভুল করেই ফেলেছে তাই আমাদেরও উচিত ওদের ভুলটা সুদ্রে ওদের মেনে নেওয়া। প্লিজ আমার কথা শুনে নাহলেও আপনার ভাইয়ের সুখের জন্য আমাকে একটু হেল্প করুন যাতে সবাই ওদের মেনে নেয়। নাহলে আমার একার পক্ষে কিছুই সম্ভব না। ”
আমি আর কিছু বলবো তার আগেই শান বললো,
“তোমার বলা শেষ হলে এইবার আমি যেতে পারি? ”
উনার কথা শুনে শূন্য দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমি কিছু বলিইনি। আমার উত্তরের কোনো তোয়াক্কা না করেই উনি দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আর আমি ওখানেই আবার ধপ করে বসে পড়লাম।
.
.
চলবে
বিঃদ্রঃ আমি অনেক অসুস্থ যার কারণে প্রতিদিন গল্পটা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।
রিচেক দেওয়া হয়নি।বানান ভুল ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।