এক শহর ভালো’ পর্ব-২৮

0
1405

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৮
#প্রোপোজ_স্পেশাল_১
#সুরাইয়া_নাজিফা

“আমি যে তোমার সাথে এভাবে একসাথে একবাড়িতে থাকছি এতে তোমার বাবা কিছু মনে করবে না তো আফটার অল আমরা উপযুক্ত ছেলে মেয়ে। ”

কথাটা শুনে ঐশীর এতক্ষনের হাসি খুশি মুখটা বেজার হয়ে গেল।আজকে ঐশী অফিসে যায়নি সাথে তিমিরও তাই দুজনে মিলে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। তিমিরের সাথে প্রতিটা সময় কাঁটাতে খুব ভালোলাগে ঐশীর আসলে ব্যাপারটা শুধু সময় কাঁটানোর না ও বুঝতে চাইছে তিমির ওকে ভালোবাসে কিনা নাকি শুধুই বন্ধুত্বের খাতিরে করছে ওর জন্য এতোসব। কিন্তু হুট করেই তিমির এমন একটা কথা বলে দিলো যে ঐশীর মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেল।

ঐশী মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে বললো,
“হঠাৎ এমন প্রশ্ন করছো কেন? তোমার কি আমার সাথে থাকতে কোনো সমস্যা হচ্ছে? সমস্যা হলে যেতে পারো আমার এতো উপকারের দরকার নেই। ”

“সমস্যা হবে কেন ঐশী আমি তো শুধু একটা প্র্যাকটিক্যাল প্রশ্ন করছি। এভাবে একটা উপযুক্ত মেয়ের ঘরে একটা উপযুক্ত ছেলে দিনের পর দিন থাকছে যেখানে তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই সেটা সমাজও তো ভালো চোখে দেখবে না। তাই বললাম তোমার বাবা কিছু মনে করবে না তো। ”

“দেখো তিমির সমাজের কথা আমি ভাবিনা। তাদের মুখ আছে তারা বলবেই। কই কখনো তো তারা আমার কষ্টে বা বিপদে এগিয়ে আসেনি তাহলে কেন ভাববো তাদের কথা।আমি আমার কাছে ঠিক থাকলেই হলো। তোমার আর আমার মধ্যে এমন কোনো অবৈধ সম্পর্ক নেই যে কারো কথায় কিছু যাবে আসবে আর বাকি রইল বাবা! উনি কখনোই আমার প্রতি কোনো আগ্রহ দেখাননি সেটা তোমাকে আমি আগেই বলেছি তাই উনার কথা বলো না। আমার লাইফে আমি কি করব সেটা আমি ভাববো। সারাজীবন খোঁজ খবর না নিয়ে এইবেলা এসে যদি হম্ভিতম্ভি করে আমি তো মানবো না। ”

তিমির ঐশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সমানের টি-টেবিল থেকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো,
“ওকে কুল। নেও পানি খাও তুমি সব কথায় এতো রেগে যাও কেন? বাবা মা যেমনই হয় বাবা মা হয়। তাই তুমি এভাবে বলতে পারো না। উনি যদি কোনো বিষয়ের জন্য বারণ করে তাহলে তোমার শুনতে হবে। তোমার বাবার সাথে সম্পর্কটা ভালো করার চেষ্টা করো হয়তো সব আবার আগের মতো হতে পারে। ”

ঐশী বিরক্তি হয়ে বললো,
“প্লিজ তিমির তুমি যেটা জানো না দয়া করে বলো না। বাবা আর আমার সম্পর্ক কখনে ভালো ছিলই না যে আজ ভালো হবে। তারপরেও শান অনেক চেষ্টা করেছিল বাট সেও ব্যার্থ হয়েছিল তাই প্লিজ তুমি এই বৃথা চেষ্টা করো না। আমার বাবা থেকেও নেই আমি এতিম সেদিনই হয়ে গেছি যেদিন আমার মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। ”

বলেই ঐশী হুহু করে কেঁদে উঠল। তিমির ঐশীকে জড়িয়ে ধরল। উফ কি দরকার ছিল কথা গুলো বলার না চাইতেও ঐশীকে বারবার কষ্ট দিয়ে দেয়। কিন্তু ও ভেবেছিলো হয়তো ঐশীর বাবার সাথে সব ঠিক হলে ঐশীই ভালো থাকবে বাট হয়ে গেল উল্টা।

তিমির ঐশীকে শান্তনা দিয়ে বললো,
“আচ্ছা দেখো স্যরি আমি আর কখনো বলবো না প্লিজ এভাবে কেঁদো না প্লিজ।তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখলে আমারও অনেক কষ্ট হয়। ”

তিমিরের কথা শুনে ঐশীর কান্নাটা বন্ধ হয়ে গেল।ঐশী নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
“আচ্ছা তুমি বসো আমি একটু আসছি।”

“কোথায় যাচ্ছো?”
“রান্নাঘরে। ”
“হঠাৎ রান্নাঘরে কেন?”
“রান্না করব তাই। ”
তিমির অবাক হয়ে বললো,
“তুমি রান্না করতে পারো কখনো বলোনিতো? ”
“তুমি তো জিজ্ঞেস করোনি কখনো বলবো কি করে?”
“তাও ঠিক বাট আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে তুমি রান্না জানো?”
ঐশী চোখ ছোট ছোট করে বললো,
“কেন?”
“বর্তমান মেয়ে গুলো এমনিতেও তেমন একটা রান্না জানে না।সময় থাকলেও করতে চায় না। তারউপর তুমি একজন বিজন্যাস ওমেন হয়ে রান্না জানাটা একটু অস্বাভাবিক ব্যাপার সারাদিন তো এসব নিয়েই ব্যাস্ত থাকো সুযোগ কখন পাও। ”
ঐশী হেসে বললো,
“যে রাধে সে চুলও বাঁধে। রান্নাটা একটা আর্ট বুঝেছো। সেটা ভালোবেসে করতে হয়। যাদের ভালো লাগে না তারা করেনা। কিন্তু আমার অনেক ভালো লাগে তাই কাজের ফাঁকে সময় পেলে নিজের রান্ন। নিজেই করেই খাই কি বলো সবসময় তো আর অন্যের হাতের রান্না ভালো লাগে না। ”
“হুম তাহলে আজকে আমাকে রান্না করে খাওয়াও দেখি কেমন রান্না পারো। ”
ঐশী একটি ভাব নিয়েই বললে,
“ওকে। রান্না খেয়ে প্রশংসা না করেছো তো আমার নামও ঐশী না। ”
তিমির হেসে বললো,
“আচ্ছা দেখা যাবে। ”


আরশ অভিমান নিয়ে বললো,
“কালকে যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেলে না কেন?”

“ক্ষেপেছো কিভাবে বলতাম যে মিথ্যা কথা বলেছি তার উপর সবাই ওখানেই উপস্থিত ছিল একবার যদি ধরা পড়ে যাই সব শেষ।”

“তাই বলে ইশারায়ও বলা যেত না। ”

“না যেত না। তোমার মতো আমার এতো সাহস নাই। অনেক কষ্টে সব ঠিক হয়েছে আর কোনো ভুল করতে চাই না। ”

“হুম আমিও বাট অনেক মিস করছি তোমাকে কালকে দেখা করি? ”

স্মৃতি মজা করে বললো,
“শান ভাইয়া কি বলেছে ভুলে গেছ এখন নো দেখা দেখি একবারে বিয়ের পর দেখা হবে। ”

আরশ উত্তেজিত হয়ে বললো,
“হোয়াট? বিয়ে কোন বছর হবে তার কোনো ঠিক নেই এতোদিন আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারবো না।আমি জানি না কালকেই দেখা করব। ”

“বাবা এতো উতলা হচ্ছো কেন বলোতো তিনমাস তো একসাথেই ছিলাম এখনো একদিনও হয়নি তারপরও এতো মিস কি ব্যাপার মিস্টার। ”

“সিরিয়াসলি একসাথে ছিলাম বলেই হয়তো তোমাতে এতো আসক্ত হয়ে গেছি।তোমাকে ছাড়া এখন কিছুই ভালো লাগছে না।দিনকে রাত মনে হয় আর রাতকে দিন। মনে হয় পাগল হয়ে গেছি। এখন আর তোমাকে ছাড়া থাকা সম্ভব না প্রিয়তমা। ”

আরশের কথা শুনে স্মৃতি খিলখিলিয়ে হাসলো। আর টোন কেঁটেই বললো,
“বাবা কবি কবি ভাব কবিতার অভাব। ”
“আমি কিন্তু মন থেকে বলেছি। এই বলোতো ওই কথাটা। ”
ঐশী না বুঝার ভান করে বললো,
“কোন কথাটা? ”
“যেটা তুমি সবসময় বলো।”
স্মৃতি মজা করেই বললো,
“কি বলি আমি সবসময়? ”
আরশ রাগ করে বললো,
“এখন ডং করছো তাই না। ”
“কিসের ডং। ”
“একদম না বুঝার ভান করবে না তাড়াতাড়ি বলো ঐ থ্রি ম্যাজিক্যাল ওয়ার্ড। ”

“আমার তো মনে পড়ছে না। ”
আরশ রাগান্বিত হয়ে বললো,
“আচ্ছা তাহলে রাখি শুধু একবার তোমাকে হাতের কাছে পাই হচ্ছে তোমার। ”
আরশ ফোন কাঁটতে যাবে তার আগেই ঐশী বললো,
“এই ওয়েট ওয়েট ওয়েট এতো রাগ করছো কেন আমি তো মজা করছিলাম। ”
“আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।। ”
ঐশী মন খারাপ করে বললো,
“প্লিজ স্যরি তো। ”
“চাই না আমার কোনো স্যরি। ”
হুট করে ঐশী বলে উঠল,
“আই লাভ ইউ।এইবার তো শুনবে। ”
“কি বললে ভালো করে শুনতে পেলাম না একটু জোরে বলো।”
“আই লাভ ইউ। ”
“আরেকটু জোরে? ”
“আরশ আম্মু বাসায় যেকোনো সময় শুনে নিবে কি শুরু করেছো বলোতো।প্লিজ এইবার রাগটা কমাও। ”
স্মৃতির কথা শুনে আরশ হো হো করে হেসে উঠলো আর হাঁসতে হাঁসতে বললো,
“আমি রাগ করেছি সেটা তোমাকে কে বললো?”
স্মৃতি অবাক হয়ে বললো,
“এক্ষুনি তো তুমি রেগে কথা বলছিলে। ”
“ওটা তো তোমার মুখ থেকে ঐ কথাটা শুনবো বলে। একটা কথা বলো কেউ কখনো তার আত্মার সাথে রাগ করতে পারে তাহলে আমি কি করে করব? ”
স্মৃতি রেগে বললো,
“ইউ চিটার। ”
“হুম নিজের পাওনা আদায় করার জন্য একটু চিটিং করলে তাতে দোষের কিছু না। ”
“তুমি না অনেক খারাপ বুঝেছো তো। ”
“প্রেমিকরা একটু খারাপই ভালো এতে প্রেম জমে ক্ষীর হয়ে যায় বুঝলে প্রিয়া। ”

আরশ ফোনের উপর থেকে ঐশীকে একটা কিস করল। আরশের কর্মকান্ডে স্মৃতি লজ্জা পেয়ে গেল। এই ছেলেটাও পারে বটে একবারে তো মারবে না এভাবে তিলে তিলে মারবে। আরশ বললো,
“কি ব্যাপার স্মৃতি তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? ”
স্মৃতি কোনো কথা বললো না। আরশ ঐশীর চুপ থাকতে দেখে আবারও হেসে ফেললো,
“ফোনের ওপারেও এতো লজ্জা পাচ্ছো।তাহলে সামনা সামনি হলে কি হতো। আমার তো তোমার মুখটা এখনি দেখতে খুব ইচ্ছা করছে লজ্জামাখা মুখ খানি। ”

আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সেই কখন থেকে উদ্ভট কথা গুলো শুনে যাচ্ছি। লজ্জা কান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে ভাবা যায় নিজের দুলাভাই আর বোনের প্রেম ও আজকাল দাঁড়িয়ে দেখতে হচ্ছে। আমও আর শুনতে পারছিলাম না তাই দরজায় জোরে টোকা দিয়ে একটু গলা খাঁকারি দিলাম। আমার গলার আওয়াজ শুনে আরশ ভাইয়া তাড়াতাড়ি ফোনটা কেঁটে দিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলাম,

“আরে ভাবিজি আপনি এখানে? ”

“ডিসটার্ভ করলাম বুঝি মিস্টার দেবর?কি করবো বলো ভাবী আর শালীদের রাইট আছে তাদের দুলাভাই আর দেবরদের বিরক্ত করার আর সেইদিক থেকে আমার তো আরো বেশী অধিকার কারণ তোমার সাথে তো আমার দুটো সম্পর্কই আছে তাই না? সেদিক থেকে দেখতে গেলে এমন একটি ডিসটার্ভ তুমি ওলওয়েজই পাবে ধরে রাখো। ”

বলে আমি একটু হাসলাম। আরশ ভাইয়া একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“আসলেই তোমার আর আমার সম্পর্কটা এতো কনফিউজিং আর মজবুত না যে আমি না চাইলেও তুমি আমাকে জ্বালাতে এক পাও পিছু ছাড়বে না। ”

এইবার আমি একটু খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম,
“ইয়ে হুই না বাত। আশা করি এরপর থেকে আর বিরক্ত হবে না। ”

“চাইলেও না আফটার অল বড় ভাবী বলে কথা। তা এই টাইমে আমার রুমে কি ব্যাপার? ”

“তোমার চা দিতে আর একটা কথা বলতে এসেছিলাম। ”

“তাই বলে এমন ভুলবাল টাইমে। ”

“আমি কি করে জানবো তোমরা এই টাইমেও প্রেম করছো।এজন্য তো আমাকে এতো কষ্ট করে উপরে আসতে হলো তোমার খাবার দিতে। আফটার অল আবার দেবর আর জিজু বলে কথা বা খাইয়ে তো রাখতে পারি না। ”

আরশ ভাইায়াও কিছুটা মজা করে বললো,
“আহা কতো যত্ন করে আমার। এমন শালী পেলে আর বউয়ের কি প্রয়োজন। ”

“হয়েছে হয়েছে অভিনয় ছাড়ো। এখন কথাটা শোনো। ”

আরশ ভাইায়া একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
“বলছিলাম কি আমার কথা বাকি আছে এখনও কথাটা শেষ করেনি। তুমি ততোক্ষণ ঘুরে আসো। ”

আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“আমার এতো ঠেঁকা পড়ে নাই। কথাটা আপুর সম্পর্কে ছিল শুনলে তুমি নাচতে শুরু করতে। বাট তুমি না শুনতে চাইলে কি আর করার আমি আসি তাহলে। ”

বলেই যেতে নিবো তখনই আরশ ভাইয়া আমার সামনে এসে বললো,
“এটা কি বলছো ভাবীজি আমার কোনো তাড়া নেই প্লিজ বলো। ”

“না না তুমি কথা বলো শুনে কাজ নেই তোমার। ”

“স্যরি কিউটিপাই এইবার বলো। ”
“ভুলে গেছি। ”

“আরে মেরি মা স্যরি বললাম তো প্লিজ বলে দে। ”

কথাটা শুনে আমি মুখ চেঁপে হেসে দিলাম,
“আচ্ছা যাও এইবারের মতো মাফ করলাম। কিন্তু নেক্সট থেকে এমন করলে খবর আছে।”

আরশ ভাইয়া মাথা নাড়ালো। আমি আবারও বললাম,
“আজকে আমরা আমাদের বাড়ি যাচ্ছি ।পারলে শান তোমাদের বিয়ের কথাটা তুলবে হয়তো। ”

কথাটা শুনেই আরশ ভাইয়া খুশিতে আত্মহারা হওয়ার উপক্রম।খুশিতে তো বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করছে। উনার অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজের হাসি থামিয়ে বললাম,

“এতো লাফালাফি করার কিছু নেই এখনও এই বিষয়ে কেউ রাজি হবে কি না বলা যাচ্ছে না। ”

“প্লিজ এমনটা বলো না সব ভালো ভালো হোক। ”

“হুম তবে আপুকে বলার দরকার নেই আমরা যাচ্ছি।এটা আমাদের তরফ থেকে ওর জন্য সারপ্রাইজ। ”

“ওকে বলবো না। ”


ঐশী দুপুরে রান্না করে সেটা সার্ভ করে দিলো। তারপর চেয়ার টেনে তিমিরের পাশে বসে পড়ল হাত দুটো টেবিলে ভাজ করে রেখে।
“খাও। ”

“হুম খেতে তো হবেই দেখতে হবে না শুধু মুখেই বড় বড় কথা নাকি কাজেও। ”

ঐশী তিমিরকে মুখ ভেঙালো। তিমির এক লোকমা মুখে দিল কিন্তু মুখ আর তুললো না। ঐশী ভয় পেয়ে গেল। ঐশী তিমিরের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি হলো ভালো হয়নি?”

তিমির মুখ উপরে তুললো। ঐশীর দিকে কিছুক্ষন তাকালো।ঐশী ভ্রু কুচকে বললো,
“কি হলো কথা বলছো না কেন?”

তিমির চোখ মুখে উত্তেজিত হয়ে বললো,
“অনেক ভালো হয়েছে। আমি জাস্ট ভাবতেই পারছি না তুমি এতো ভালো রান্না করতে পারো। ”
ঐশী খুশি হয়ে বললো,
“হুম তাহলে আমি জিতে গেলাম তো? ”
“সেটা তো অবশ্যই। ”
ঐশী নিজের এক পাশের চুল ফু দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“এরপর আমার সাথে চ্যালেঞ্জ নিও না। ”

তারপর ঐশী বসে নিজের প্লেটে খাবার বেড়ে নিলো। ঐশী এক চমচ মুখে দিল তখনই ঐশী বললো,
“তাহলে কি বলো তোমার জন্য ছেলে দেখা শুরু করি। তোমার মতো এতো গুনি মেয়েকে যে ছেলে পাবে সে ধন্য হয়ে যাবে। ”
ঐশী দাঁত দাঁত চেপে রইল এতো রাগ লাগছে। শয়তান ছেলে একটা আসছে আমার জন্য ছেলে খুজতে? কেন তুই বিয়ে করলে কি ক্ষতি হবে।তাহলে কি তিমির আমাকে পছন্দ করে না। ভাবতেই ঐশীর কান্না এসে যাচ্ছে চোখ লাল হয়ে যাচ্ছে এই বুঝি কান্নারা নামবে ঝমঝমিয়ে। ঐশীর রাগে নাকের পাটা ফুলে যাচ্ছে। ঐশী রেগে তিমিরের কথায় তালে তাল মিলিয়ে বললো হাসার চেষ্টা করে বললো,

“তাই নাকি? ”

“অবশ্যই। ”

“কে বিয়ে করবে আমার মতো এমন রগচটা মেয়েকে সামলাতে পারবে কখনো?”

“হুম কেউ না কেউ তো আছেই তোমাকে সামলাতে পারে এমন? ”

ঐশী আনমনে নিচের দিকে তাকিয়ে নখ দিয়ে টেবিলে আছড় কাঁটতে লাগল
“ওহ আমার কথা ছাড়ো তুমি কেন বিয়ে করছো না? ”

“বিয়ে করবো ভাবছি কিন্তু যে মেয়েকে ভালোবাসি মনে হয় না সেই মেয়ে আমার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিবে। ”

তিমিরের কথায় এইবার ঐশীর হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে মন চাইছে। তাহলে তিমির অন্য কাউকে ভালোবাসে? আমার সাথেই কেন বারবার এমন হয়। ঐশী নিজের ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে লাগলো। তিমির ঐশীর অবস্থা বুঝতে পেরে ঐশীকে বললো,

“ঐশী কি হয়েছে তোমার? কান্না করছো কেন?”

ঐশী কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
“কই না তো?”
“মিথ্যা বলছো কেন? ”

ঐশী কথা এড়ানোর জন্য বললো,
“কত বছর ধরে পছন্দ করো?”

তিমির হেসে বললো,
“বছর না মাস। তিন মাস তবে এই তিনমাসে আমি তাকে এতোটা ভালোবেসেছি যে তারজন্য নিজের জীবন বিলিন করতেও একটুও কষ্ট হবে না।”

ঐশী না চাইতেও খানিকটা হাসলো,
“আচ্ছা তাহলে তুমি যে মেয়েটাকে ভালোবাসো এতো না ভেবে বলে দেও যে তুমি তাকে ভালোবাসো আশা করি তোমার মতো এতো ভালো একটা মানুষকে সে ফেরাবে না। ”

তিমির জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“বলছো?”

ঐশী মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়ালো। তিমির বললো,
“তাহলে বলেই দেই বলো?”

ঐশী পারবে না নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যকে প্রোপোজ করার জন্য টিপস দিতে। তাই পালানোর জন্য বললো,
“আচ্ছা আমি রান্নাঘর থেকে আসছি। ”

কথাটা বলে ঐশী উঠে যেতে নিতেই তিমির ঐশীর হাত চেপে ধরলো পিছন থেকে। ঐশী পিছন ফিরে তাকালো আর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তিমিরের দিকে। তিমির নিজের পকেট থেকে একটা আংটি বের করলো ঐশীর সামনে হাটু গেড়ে বসে বললো,

“তোমাকে যেদিন প্রথম দেখি সেদিন থেকেই তেমার মাঝে অদ্ভুত একটা টান অনুভব করি। না চাইতেও তোমার সাথে ঝগড়া করতে ভালো লাগতো। তোমার রাগ দেখতে বালো লাগতো তাই আবল তাবল কথা বলে তোমাকে রাগাতাম তখনে বুঝতে পারিনি আমি তোমার জন্য কি ফিল করি। কিন্তু যেদিন তুমি এক্সিডেন্ট করো তোমার রক্ত মাখা মুখটা দেখে মনে হয় আমি মরে যাচ্ছিলাম। আমার অন্তর থেকে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করলো। পাগলে মতো ছুটলাম তোমাকে নিয়ে।আর ভাবছিলাম যেভাবে হোক তোমাকে বাঁচাতে হবে।অন্তত আমার ভালো থাকার জন্যও তোমাকে বাঁচতে হবে। কারণ তুমি আমার ভালো থাকার ঔযুধ। তখন অনুভব করলাম যে তোমার জন্য আমার মনে যে অনুভুতি সেটা নিছক কোনো বন্ধুত্বের অনুভিতি নয় সেটা হলো ভালোবাসার অনুভুতি। আজ আমি জোর গলায় বলতে পারি আমি তোমাকে ভালোবাসি ঐশী। আই লাভ ইউ। উইল ইউ মেরি মি? ”

ঐশীর হার্টবিট যেন থেমে গেছে ও কি নিজের কানে ঠিক শুনছে? তিমির ওকেই প্রোপোজ করলো। ঐশী আর নিজের কান্না গুলো আটকে রাখতে পারলো না। ধুম করে নিচে হাটু গেড়ে বসে তিমিরের হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে একটা চুমু দিলো। তারপর তিমিরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আজ প্রথম নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে যে ও তিমিরের ভালোবাসা পেয়েছে।
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ আমি অনেক অসুস্থ কালকে ডাক্তারের কাছে গেছিলাম তাই গল্প দিতে পারিনি।আশা করি আপনারা বুঝবেন।রিচেক দেওয়া হয়নি বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here