#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৩
#সুরাইয়া_নাজিফা
সকাল থেকে শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে।হয়তো কাল রাতের জন্য।প্রচন্ড মাথাব্যথা করছে।
তারপর আবার হাঁচি দিতে দিতে আমার অবস্থা পুরো খারাপ।শান আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর একটার পর একটা টিস্যু এগিয়ে দিচ্ছে। নাক মুছতে মুছতে আমার নাক লাল হয়ে গেছে আর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি আড় চোখে শানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি এখনও একই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হলো এতো রাগ করার কি আছে কোনো মানুষ কি জীবনে অসুস্থ হয় না? ”
উনি চোখ পাকিয়ে তাকিয় বললেন,
“হয় কিন্তু কেউ তোমার মতো ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থ হয়না। কালকে রাতে কতবার বলেছিলাম পা তুলে বসো ঠান্ডা লাগবে শুনেছিলে আমার কথা? শুনোনি।শুনবে কেন আমার কথা শুনলে তো তোমার বেশ ক্ষতি হয়ে যাবে। এইবার ভোগ করো। ”
“আমি বুঝেছি নাকি শরীর এতটা খারাপ হয়ে যাবে। ”
কথাটা বলতে না বলতেই আমি আবার হাঁচি দিলাম। উনি পারে না চোখ দিয়ে আমাকে ভর্ষ করে দেয়। উনি উঠে চলে গেলেন আমার পাশ থেকে। আমিও উনার পিছু পিছু গেলাম,
“কি হলো ওখান থেকে উঠে আসলেন কেন? ”
উনি কোনো কথা বলছিলেন না আমার সাথে। আমার সামনে থেকে সরে আবার বেডে গিয়ে বসলেন। আমিও বেডে ওনার সামনে বসে বললাম,
“কি হলো আমাকে দেখতে পাচ্ছেন না নাকি? আমি আপনার সাথেই কথা বলছি মুখ অন্যদিকে ঘুরাচ্ছেন কেন। ”
উনি কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে আছে। না আমার দিকে তাকাচ্ছে আর না কোনো কথা বলছে। উনার এতো রাগ দেখে এখন আমার নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছো। উফ তখন যদি উনার কথা শুনতাম তাহলে আজকে আমাকে এতো কষ্ট পেতে হতো না আর না উনি আমার উপর রাগ করে থাকতেন। এখন এই মহারাজের রাগ কি করে ভাঙাবো। আমি উনার সামনে বসে দুই হাত দিয়ে উনার মুখটা আমার দিকে ফিরালাম। উনি আবার উনার মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিলেন। আমি আবার উনার মুখটা আমার দিকে ফিরালাম উনি আবারও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। বেশ কয়েকবার এমন করার পর উনি রাগি চোখে তাকিয়ে বললেন,
“উফ এতো বিরক্ত করছো কেন? ”
আমি মুচকি হেসে বললাম,
“বিরক্ত করতে ভালো লাগে তাই করি। ”
উনি আবারও বিছানা থেকে উঠে গিয়ে সোফায় বসলেন। আমিও আবার উনার পিছু পিছু গেলাম।উনার পাশে বসে বললাম,
“উফ এতো রাগ কোথায় রাখেন বলেন তো? ”
শান কোনো কথা বললো না। তখনই শানের ফোনে কল আসল।শান ফোন রিসিভড করতেই ঐপাশ থেকে একটা সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসলো।
“স্যার আজ একটা জরুরী মিটিং আছে আপনি কখন আসবেন? ”
“আমি….। ”
শান বলার আগেই আমি শানের হাত থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিলাম আর বললাম,
“আপনাদের স্যার আজকে অফিসে যাবে না। অফিসের থেকে বাসায় উনার একটা বেশী জরুরী কাজ আছে। মিটিং আরশ ভাইয়া জয়েন করে নিবে ওকে।”
কথাটা বলেই আমি ফোনটা কেঁটে দিলাম। ভাগ্যিস ফোনটা স্পিকারে দেওয়া ছিল যার কারণে আমি শুনতে পেয়েছিলাম। নাহলে উনি এখনি এতো এতো রাগ নিয়ে অফিসে চলে যেতেন আর সারাদিন আমার অস্থিরতায় কাঁটতো।
“কি হলো ফোনটা নিলে কেন আমাকে না বলে?”
“আমার বরের ফোন আমি নিতেই পারি সেটা আপনাকে বলে নিবো নাকি?”
“ফোনটা দেও? ”
“না দেবো না। ”
উনি গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“সোহা ফোনটা দেও বিরক্ত করো না আমার ইমপরটেন্ট কাজ আছে। ”
“আমার থেকেও কি ইমপরটেন্ট কাজ শুনি। ”
উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,
“ফোনটা দেও। ”
আমিও আগের ভঙ্গিতেই বললাম,
“দেবো না। ”
“এখন যদি তোমার সাথে খারাপ কিছু করি তাহলে আমাকে বলতে এসো না। ”
আমি মুখ ভেঙিয়ে বললাম,
“যা খুশি করুন আমি আপনাকে ভয় পাই নাকি?”
কথাটা বলতেই উনি রেগে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। হায় হায় এখন আমাকে মারবে নাকি। আমি একটু পিছনে যেতেই পায়ে পা ভেজে হুট করে সোফায় গিয়ে পড়লাম।আমি পড়তেই উনি আমার দিকে একটু ঝুকে এলো আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম সেই সুযোগে উনি হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলেন। আমার থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসল। আমি একটু মুখ ফুলালাম। উনি আবার ফোন ডায়েল করতে শুরু করল। আমি গিয়ে আবার উনার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলাম,
“কাকে ফোন করছেন আবার? ”
“আমি অফিসে যাবো। ”
“মিথ্যা বলছেন কেন?আমি জানি আপনি অফিসে যাবেন না। ”
উনি ভ্রু কুচকে বললো,
“তোমাকে কে বললো?”
আমি হেসে উনার পাশে বসে উনার বুকে মাথা রেখে উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম,
“কেউকে বলতে হবে কেন? আমি জানিতো আমাকে এই অবস্থায় রেখে আপনি কখনো অফিসে যেতেই পারবেন না। ”
উনি একটু অভিমান নিয়ে বললো,
“হুম সব জানো বলেই এবাবে তিলে তিলে আমাকে কষ্ট দিতে তোমার সুবিধা হয়। ”
আমি মন খারাপ করে বললাম,
“স্যরি তো।”
“ছাড়ো আমাকে। ”
“ছাড়বো না। ”
“বলছি তো ছাড়ো। ”
“বললাম না ছাড়বো না। যতক্ষন আপনার রাগ না কমবে ততক্ষন আপনাকে এভাবেই জড়িয়ে থাকবো।”
এভাবে কিছুটা সময় যাওয়ার পর। একটু পর উনি নিজেই আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। উনাকে জড়িয়ে ধরতে দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল।
“কিভাবে কি করলে কার রাগ খুব সহজে ভাঙাতে পারবে সেটা খুব ভালোই জানো দেখছি। ”
আমি উনার বুকে মাথা রেখেই উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“যদি বর নাকের ডগায় সবসময় এমন রাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাহলে রাগ ভাঙানোর পদ্ধতিটা তো আয়ত্তে আনতেই হয়। ”
আমার কথা শুনে উনি ঠোঁট কামড়ে একটা মুচকি হাসি দিলেন। আমি হা করে একদৃষ্টিতে উনার দিকেই তাকিয়ে আছি। কেন জানি উনি হাসলে কখনোই উনার উপর থেকে আমি চোখ সরাতে পারিনা। শুধু মনে হয় দেখেই যাই। হঠাৎ উনি আমার সামনের চুল গুলো পিছনে গুজে দিয়ে বললেন,
“তাকিয়ে আছো যে? ”
“দেখছি?”
“কি?”
“আপনাকে।আপনার হাসিটা এতো সুন্দর মাঝে মাঝে মনে হয় খেয়ে নি। ”
উনি আমার কথা শুনে আমার দিকে চোখ পিটপিট করে তাকালেন,
“নাকের সাথে সাথে মাথাটাও গেছে নাকি? কি আবোল তাবোল বলছো বলোতো। ”
“আবোল তাবোল বলবো কেন আমার যেটা মনে হয়েছে সেটা বলেছি। ”
“হাসি আবার খায় কি করে এটা কি খাওয়ার জিনিস?”
“ধ্যাত এতো প্রশ্ন করবেন না তো জানি না আমি। ”
আমার কথা শুনে উনি হো হো করে হেসে দিলেন,
“প্লিজ এবাবে হাসবেন না। আপনাকে এবাবে হাসতে দেখলে আমার এইখানে লাগে। ”
আমি বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে দেখালাম।আমি নিজেও বুঝতে পারছি না আজকে আমার কি হয়েছে এতো অনায়াসে ওনাকে কথা গুলো বলে দিচ্ছি। এতোটুকু দ্বিধাবোধ কাজ করছে না মনে। শুধু মন চাইছে মনে যা আছে সব বলে দিতে উনাকে।উনি আমার কানের কাছে এসে বললো,
“আজকে কি হয়েছে সোহার বলোতো? এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছে? ”
আমি উনার বুকে মুখ খুজে বললাম,
“জানি না হয়তো আপনার মতো প্রেম রোগে ধরেছে। ”
শান মুচকি হেসে আরো শক্ত করে আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল।
★
★
কিছুক্ষনের মধ্যে বাড়ির সব মানুষ আমার রুমে এসে হাজির। আমি মাথা নিচু করে অপরাধীর মতো বসে আছি। এমন মনে হচ্ছে অসুস্থ হয়ে কোনো বড় ভুল করে ফেলেছি।
মা আমার কপালে হাত দিয়ে বললেন,
“গা গরম গরম লাগছে জ্বর উঠলো নাকি। ”
বাবা বললো,
“মেডিসিন নিয়েছিস? ডক্টর ডাকবো। ”
সাম্য ভাইয়া বললো,
“ওকে কি জিজ্ঞেস করছো বাবা তুমি ডাক্তারকে ফোন করো।এইসময় জ্বর উঠলে আরেক কেলেঙ্কারি বাজবে। ”
ভূমিকা আপু বললো,
“কি শান আমি তোমার থেকে এটা আশা করিনি তুমি তো জানোই ওর সহজে ঠান্ডা লেগে যায় তারপরও তুমি থাকতে ও এতটা অসুস্থ হলো কি করে?”
শান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার কথা সে শুনে?যতক্ষন তারসাথে রাগারাগি করা যায় ততক্ষন ভালো তারপর আবার যেই সেই।কি বলবো ওকে? ”
সবার কথা শুনে আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“উফ তোমরা এতো অস্থির হচ্ছো কেন কিছু হয়নি আমার ভালো আছি আমি। ”
শান আমাকে ধমক দিয়ে বললো,
“একদম কথা বলবে না চুপচাপ হয়ে বসো। ”
রহিমা আন্টি আমার জন্য খাবার নিয়ে এলো।মা বললো,
“নে খাবার গুলো খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নে।কি যে করিস না তোরা শুধু শুধু বড়দের চিন্তায় ফেলিস। ”
আমি নাক উঠিয়ে বললাম,
“একটু পরে খাই। আমার এখন ভালো লাগছে না। ”
এতক্ষন পুষ্প চুপ থাকলেও এখন বলে উঠলো,
“আমি কিন্তু তোমার উপর খুব রেগে আছি মিষ্টি কেন তুমি এমন বাচ্চাদের মতো করো বলোতো। ”
পুষ্পর কথা শুনে আমি পুরা হা হয়ে গেলাম।
“একটা বাচ্চা মেয়ে বলছে আমি বাচ্চাদের মতো বিহেভ করি। ”
আমার জাস্ট কথা বলার মতো ভাষা নেই। পেট ফেঁটে হাসি আসছিলো। শান বললো,
“খুব ভালো করে বকে দেও তো প্রিন্সেস একদম কারো কথা শুনে না। ”
পুষ্প বড় মানুষের মতো মুখ করে বললো,
“হুম বলবোই তো। দেখি হা করো আর এই পুরো খাবারটা শেষ করো। ”
পুষ্প আমার মুখের সামনে খাবার ধরলো। যদি পিছন থেকে শান প্লেটটা ধরে ছিলো। আমি হা করতেই পুষ্প আমাকে আস্তে আস্তে ওর ছোট ছোট হাত দিয়ে খাইয়ে দিতে লাগল। কিছুটা খাওয়ার পর আমার আর খেতে ইচ্ছা করছিলো না তাই বললাম,
“আর খাবো না। ”
পুষ্প কপাল চাপড়ে বললো,
“উফ এতো বাহানা করে মেয়েটা খেতে আসলে একে নিয়ে আর পারি না। ”
পুষ্পর কথা শুনে এবার বাড়ির সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। মা আগে আমাকে খাওয়ানোর সময় যে কথা গুলো বলতো একদম তেমন তেমন বললো।মনে হচ্ছে এটা যেন আমার ছোট মা। আমি পুষ্পকে কোলে তুলে ওর গালে একটা কিস করলাম। ভূমিকা আপু বললো,
“কি বুঝলে সোহা তোমার ছোট মা এসে গেছে দেখছো তো?আর আমাদের কি দরকার ও একাই একশ। ”
আমি হেসে বললাম,
“তাই তো দেখছি।”
তারপর পুষ্প আমার কোনো বায়না শুনল না। সব গুলো খাবার খাওয়ালো। বাড়ির সবাই আস্তে আস্তে রুম থেকে চলে গেল। পুষ্প আমাকে খাওয়ানোর পর নিজের হাতে মেডিসিন খাইয়ে দিলো। কিছুক্ষন পর ভূমিকা আপু একটা পাত্র কিছুটা গরম পানি নিয়ে আসলো।এনে আমার সামনে রাখলো,
“নেও একটু সেক নিয়ে নেও ভালো লাগবে। ”
আমি উঠে বসলাম। ভূমিকা আপু পুষ্পর হাত ধরে বললো,
“বেবী চলো এখন আমরা পরে আসবো আবার মিষ্টি এখন একটু রেস্ট নিক। ”
পুষ্প ওর মাকে বললো,
“উফ মা আমাকে বেবী বলো না আমি এখন বড় হয়ে গেছি না। ”
ওর কথা শুনে আবারও আমরা সবাই হেসে দিলাম। ভূমিকা আপু বললো,
“দিনদিন বড্ড পাকা হয়ে যাচ্ছো চলো এবার। ”
তারপর ভূমিকা আপু পুষ্পের হাত ধরে বেরিয়ে গেল। শান আমার সামনে বসে বললো,
“মাথাটা সামনে আগাও এবং আরেকটু নিচু করে রাখো। ”
উনার কথা মতো আমি মাথাটা নিচু করলাম। পানির থেকে গরম ভাপ উঠছে। শান আমার মাথার উপর একটা কাপড় দিয়ে দিলো।
“এইবার কিছুক্ষন এবাবে থাকো আর আস্তে আস্তে শ্বাস নেও। ”
উনার কথা মতো সবটা করলাম। নাহলে যদি আমার রেগে যায়। কিছুটা সময় যাওয়ার পর আমি বললাম,
“হয়েছে আর লাগবে না। ”
“লাগবে আরেকটু সময় থাকো। ”
এইবার আমি বিরক্ত হয়ে মাথার উপর থেকে কাপড়টা ফেলে বললাম,
“উফ আপনি সবসময় আমার সাথে এমন বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করেন কেন বলেন তো বললাম তো হয়েছে।”
“বাচ্চাদের সাথে মানুষ বাচ্চার মতোই বিহেভ করে। পুষ্প এইমাত্র বলে গেল শুনোনি। ”
শান আমার সামনে বসে ছিল। আমি রেগে গরম পানির পাত্রটা নিচে নামিয়ে বললাম,
“একদম না।আর এরপর থেকে আমাকে এমন বাচ্চাদের মতো ট্রিট করবেন না। ”
শান চোখে মুখে দুষ্টমির রেখা ফুটিয়ে আমার গালে হাত দিয়ে উনার বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আমার ঠোঁটে স্লাইড করে বললো,
“আচ্ছা তাহলে বড়দের মতো ট্রিট করি। ”
বলেই আমার দিকে এগিয়ে এলো আমি উনার কাছ থেকে দূরে সরে লজ্জা পেয়ে বললাম,
“না এমন ট্রিটের প্রয়োজন নেই। ”
আমার কথা শুনে উনি মুখ ঘুরিয়ে বললেন,
“কি সুইটহার্ট মুখে বলো বাচ্চা না কিন্তু বিহেভ করো তেমনিই তাহলে তোমাকে কি বলা উচিত। এইবার বেশী কথা না বলে সুয়ে রেস্ট নেও। ”
আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“তো এতে কি প্রমাণ হয়? নেক্সট টাইম একদম আমাকে বাচ্চা বলবেন না। ”
“স্যরি মানতে পারলাম না। তুমি এখন পর্যন্ত আমার সাথে বড়দের মতো কোনো বিহেভ করোনি যে তোমাকে আমি বড় বলতে পারি। ”
উনি কথাটা বলতে না বলতেই আমি উনার কলার ধরে উনাকে আমার দিকে টেনে আনলাম আর উনি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি উনার ঠোঁটটা নিজের দখলে নিয়ে নিলাম। তবে কিছু সময় পর দ্রুত উনার থেকে দূরে সরে গেলাম।
শান এখনও আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়তো উনি এই শক থেকে এখনো বের হতে পারছে না।শান ভাবতেই পারেনি কথাটা বললে এতো সহজে কাজ হয়ে যাবে। লজ্জায় আমি মাথা তুলতে পারছি না। ছি ছি এটা আমি কি করে করতে পারলাম। আমি উনার সামনে থেকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই উনি আমার হাত টেনে আমাকে উনার কোলের উপর বসিয়ে দিলেন আর পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন।
“এটা কি সত্যিই সোহা ছিল? ”
আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে রইলাম। উনার কথা শুনে আরো বেশী শিহরিত হচ্ছি আমি। উনি আবারও বললেন,
“এখন এতো লজ্জা পেয়ে কি লাভ যা করার করেই তো দিয়েছো। মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা অনুভুতি গুলো প্রকাশ হতে দেও কারণ আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি কিন্তু এই স্মৃতিগুলো সারাজীবন থেকে যাবে। ”
উনার এতো আবেগময় কথা শুনে চোখে জল চলে এলো।
উনি আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন,
“কিন্তু আমার যে আবার রিপিড টেলিকাস্ট দেখতে মনে চাইছে। ”
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“না। ”
উনি আমার ঘাড়ে উনার থুতনি রেখে বললেন,
“আমি বলেছি যখন হ্যাঁ তখন হ্যাঁ।”
কথাটা বলে উনি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি উনার বুকে মুখ লুকালাম।
★
★
বিকালে একটা মেরুন রঙের শাড়ি পড়ে চুল খোলা দিয়ে হালকা জুয়েলারির সাথে চোখে গাড় কাজল দিয়ে সিম্পলভাবে সাজলাম। আজ আব্বু, আম্মু আসবে আমার শ্বাশুরবাড়ী আপু আর আরশ ভাইয়ার বিয়ের কথা বলতে এজন্যই রেডি হচ্ছিলাম।
আয়নায় আরেকবার নিজেকে ভালো করে দেখে নিলাম সব ঠিক আছে কিনা। তখনই হঠাৎ কোমরে কারো স্পর্শ পেতে খানিকটা কেঁপে উঠলাম কিন্তু ভয় পেলাম না কারণ আমার এই ছোঁয়াটা যে বড্ড পরিচিত।শান আমাকে পিছনে জড়িয়ে ধরে উনার থুতনি আমার ঘাড়ের উপর রেখে বললেন,
“এতো দেখোনা সুইটহার্ট তোমায় এতো সুন্দর লাগছে যে আয়নারও না নজর লেগে যায়। ”
উনার কথা শুনে হাসলাম,
“তাই তাহলে নজর কাঁটিয়ে দিন। ”
“সিরিয়াসলি তাহলে আমার পদ্ধতিতে নজর কাঁটাই। ”
“জ্বী না মশাই।এসবের টাইম নাই। কিছুক্ষন বাদেই আব্বু আম্মু আসবে নিচে যেতে হবে। তাছাড়া আমি আপনার পদ্ধতিতে নজর কাঁটাতে বলিনি সত্যিকার অর্থে নজর কাঁটাতে বলেছিলাম।”
শান আমাকে ছেড়ে দূরে সরে গেল,
“ধ্যাত তুমি না একদমই আনরোমান্টিক।সবসময় মুডের বারোটা বাজিয়ে দিতে প্রস্তুত। ”
উনার কথা শুনে আমি আবারও হাসলাম। কিছুক্ষন পর হঠাৎ আমার মাথায় দুষ্টমিরা খেলতে আরম্ভ করল। তাই একটু হেসে উনার সাথে মজা করেই বললাম,
“আমার না আবার বিয়ে করতে মন চাচ্ছে।”
কথাটা বলতেই শান সরু চোখে আমার দিকে তাকালো,
“আবার বিয়ে করবে মানে? ”
আমি একটু মজা করেই বললাম,
“বিয়ে করব মানে বিয়ে করব।”
শান হঠাৎ করে আমার চুলের মুঠি ধরে আমাকে উনার কাছে নিয়ে গেল আর রাগান্বিত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“এই কথা মুখে আনলে কি করে তুমি?আমি ছাড়া দ্বিতীয় কারো কথা যদি কখনো মাথায় আসে তাহলে এইমাথাটা আর মাথার জায়গায় থাকবে না মনে রেখ। প্রথমে তোমাকে মারব তারপর নিজেই মরে যাবো।”
উনার কথা শুনে আমি খিলখিলিয়ে হেসে দিলাম আর উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম,
“এতো জেলাসি ঠিক নয় মিস্টার। অতিরিক্ত রাগ মানুষকে ধব্বংসের পথে নিয়ে যায় তাই কন্ট্রোল করুন। ”
“তোমার জন্য আমি কোন সীমা পর্যন্ত যেতে পারি সেই সম্পর্কে কোনো আইডিয়াই নেই তোমার। শুধু একবার তোমার সীমা অতিক্রম করে তো দেখো। ”
“আচ্ছা আপনি না বুঝে এতো রাগ দেখাচ্ছেন কেন আমি বলেছি বিয়ে করব কিন্তু দ্বিতীয়বার বিয়ে করব সেটা কি একবারও বলেছি?”
শান আমার চুল থেকে হাত সরিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“মানে? ”
আমি হেসে বললাম,
“মানে আমি আমার বিয়ে করা বরকে আবার বিয়ে করতে চাই। ”
কথাটা বলতেই উনার মুখে হাসি ফুটে উঠলো,
“তাই বলো আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।”
“এতো ভয় পান কেন?আপনার মনে হয় আমি আপনাকে কখনো ছাড়তে পারবো। ”
“সেটা তো তুমি চাইলেও পারবে না। ”
“হুম।”
“তো হঠাৎ আবার বিয়ে করতে মন চাইলো কেন?”
আমি হাসতে হাসতেই বললাম,
“না চাওয়ার কি আছে?আমার আর আেু সবসময় ইচ্ছা ছিল একই সাথে একই স্টেজে আমাদের বিয়ে হবে। বাট প্রথমবার যা হলো।বিয়ে ছিল না যুদ্ধ বুঝতেই তো পারিনি।আর বিয়েতে একটু মজাও করতে পারলাম না। শুধু টেনশনে ছিলাম বিয়েটা আরশ ভাইয়ার সাথে না হয়ে যায়।কিসের মধ্যে কি হলো বুঝার আগেই বিয়ে শেষ। এবাবে কার বিয়ে হয়। ”
“ওহ এই কথা ওকে আমার সুইটহার্টের যখন ইচ্ছা হয়েছে তাহলে সেটা অবশ্যই পূরণ করব আমি। ”
বিকেলবেলা আব্বু আম্মু আর আপু চলে এসেছে। সবাই জোড়ায় জোড়ায় পাশাপাশি বসেছে। পুষ্প নিজের রুমে খেলা করছে। এখন এখানে সব বড়রা রয়েছে। বিয়ের কথা বার্তা চলছে। কার কি কাজ সবাইকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রায় কথা বার্তা বলে সব ঠিক করেই নিয়েছে। বিয়ে পনেরো দিন পর হবে। এর মধ্যে কার্ড বিতরণ, কেনাকাটা, ডেকোরেশনের ব্যবস্থা সব কমপ্লিট করতে বলেছে শ্বশুর মশাই। উনি একদমই দেরী করতে চাইছেন না বিয়ের ব্যাপারে। কারণ এই বিয়ের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনদের একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত।
বিয়ের কথা কমপ্লিট হতেই আমি নিজের হাতে সবাইকে মিষ্টি মুখ করালাম। বাবা আর শ্বশুর মশাই কোলাকোলি করলেন দ্বিতীয় বার বেয়াই হওয়ার সুবাদে। তখনই শান বলে উঠল,
“বাবা আমি একটা কথা বলতে চাই। ”
শানের কথা শুনে শ্বশুর মশাই বললো,
“কি কথা বলবি?”
“বলছিলাম আরশ আর স্মৃতি সাথে আমার আর সোহার বিয়েটাও হলে কেমন হয় একদম প্রথমবারের মতো। আসলে প্রথমবার বিয়েটা কিভাবে হলো সেটা তো জানোই সবাই তেমন একটা মজাও করতে পারিনি তাই বলছিলাম। ”
শানের কথা শুনে আমি বিষম খেয়ে গেলাম। আমি তো মজা করে বলেছিলাম উনি এটা এতো সিরিয়াসলি নিয়ে নেবে কে জানতো। এখন সবাই কি ভাববে? আমার গলা দিয়ে মিষ্টিটা আর নামছে না।
কিছুক্ষন পর আমার বাবা বলে উঠলো,
“হুম কথা ঠিক। যদি তোমরা একে অপরকে পছন্দ করতে তবুও তোমাদের বিয়েটা তো ঠিকঠাক হয়নি আমারও মনে হয় তোমাদের বিয়েটাও আবার হলে ভালো হয়। ”
শ্বশুর মশাই উল্লাসিত হয়ে বললো,
“হ্যাঁ আগের বার ভুল জুটির বিয়ে দিতে চাইছিলাম। তবে আবার ধুমধাম করে ওদের বিয়ে দিবো কিন্তু এইবার ঠিকঠাক জোড়ার সাথে। ”
কথাটা শুনে সবাই খুশি হয়ে গেল। আপু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল,
“সব কিছু এতো ভালো ভালো হচ্ছে যে বিশ্বাসই হচ্ছে না। অবশেষে আমাদের দুইবোনের ইচ্ছাটা পূরণ হচ্ছে কি বলিস। ”
আমিও হেসে বললাম,
“হুম। ”
আমি আপু পাশে দাঁড়িয়ে শানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ শান আমার দিকে এগিয়ে আসছিলো। আমি একটু আশেপাশে তাকালাম কি করতে চাইছেন উনি?
শান আমার কাছে এসে পাশ ঘেসে যাওয়ার সময় আমার কানে ফিস ফিস করে বললেন,
“বলে ছিলাম না তোমার সব ইচ্ছা পূরণ করব। শুধু একবার মুখ ফুটে তো বলো। ”
কথাটা বলেই উনি চলে গেলেন।শুধুমাত্র আমার খুশির জন্য উনি এতটা করলেন ভেবেই আমার চোখে পানি চলে এলো। শান চলে যাচ্ছি আমি পিছন ঘুরে আবার উনার দিকে তাকালাম হঠাৎ শানের চোখে চোখ পড়তেই আমি চোখ পড়তেই আমি হালকা হাসলাম। শান আমাকে ঠোঁট দিয়ে ইশারায় কিস করতেই আমি লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলাম।
তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠল তানিশার কল ছিলো। তানিশার কল দেখে আমি একটু অবাক হলাম মনে মনে বললাম,
“এতোদিন পর কি ব্যাপার? ”
আমি ফোনটা নিয়ে ওদের থেকে একটু আড়ালে গিয়ে রিসিভড করলাম। রিসিভড করতেই ওপাশ থেকে তানিশা বলে উঠল,
“কিরে বিয়ের পর তো পৃথিবীতে সবকিছুই ভুলে বসে আছি জামাই বুঝি বেশী ভালোবাসছে? ”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“ফালতু কথা বাদ দিয়ে যেটা বলতে ফোন দিছিস সেটা বল।”
তারপর ও যেটা বললো সেটা শুনে আমার মাথা ঘুরতে লাগল। আমার সব শেষ। আমার এতো প্লান, প্রোগ্রাম, হাসিখুশি সব শেষ করে দিলো। এখন আমার কি হবে। আমি ফোনটা কেটে হনহন করে ড্রয়িংরুমে এগিয়ে গেলাম। আর গিয়েই মন খারাপ করে বললাম,
“এই বিয়েটা হবে না। ”
.
.
চলবে