#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৭
#সুরাইয়া_নাজিফা
ভালোবাসার মানুষটা যতক্ষন আমাদের আশেপাশে থাকে ততক্ষন আমরা তার ভালোবাসাটা বুঝতে পারিনা তবে দূরে গেলেই বুঝা যায় আমরা তাকে কতটা ভালোবাসি। বিচ্ছেদের সময়টা অনেক দীর্ঘ হয়। না তাকে দেখতে পারি না তার কাছে যেতে পারি শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা। তবে এই অপেক্ষারও আলাদা একটা মজা আছে। যারা কারো জন্য জীবনে একবার হলেও অপেক্ষা করেছে তারাই সেই মজাটা অনুধাবন করতে পারবে।কারণ অপেক্ষা আমাদের অনুভব করতে শেখায় যে আমরা সেই মানুষটাকে কতটা ভালোবাসি। তাকে ছাড়া জীবনটা শূন্য মনে হয়। আর অনুভব করতে পারি বলেই হয়তো আমরা বলি অপেক্ষার প্রহর অনেক দীর্ঘ হয়।
কিছুক্ষন আগেই আমি আমাদের বাড়িতে এসে পৌঁছেছি।এতদিন পর নিজের বাড়ি নিজের ঘরে এসেছি তাতে যে ভালো লাগাটা কাজ করার কথা সেই ভালোলাগা এখন কেন জানি মিসিং মনে হচ্ছে। নিচে যতক্ষন সবার সাথে ছিলাম ভালোই লাগছিলো কিন্তু যখনই রেস্ট নেওয়ার জন্য একটু রুমে আসলাম তখনই চারপাশটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো। যেদিকে তাকাই সেদিকেই মনে হয় শানকে দেখতে পাচ্ছি। আগে এই বাড়িতে আসলে ইচ্ছা হতো না যেতে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে শান আসত আর খুব দ্রুত আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেত। ভাবতেই ধপাস করে বিছানা হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ মনে পড়ল আমি তো শানের জন্য জায়গা রাখিনি ও কোথায় ঘুমাবে?
আমি সরে এসে একপাশে শুয়েছিলাম।পরক্ষণেই আবার নিজের মাথায় নিজেই একটা বারি মারলাম আর নিজের মনেই বললাম,
“ধ্যাত শান এখানে কি করে আসবে সে তো তার বাড়িতেই আছে আর আমি আমার বাড়ি। ”
ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম এখন আমি কিছুতেই ঘুমাতে পারব না। আমি এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে আচড়ানো প্রয়োজন। আমি হাতে চিরুনি নিয়ে চুল সেট করতে শুরু করলাম। চুলটা হাত খোপা করে নিলাম। হঠাৎ আমার চোখ পড়ল শানের লাভ বাইটের দিকে। আমি একটু হাত বুলিয়ে দিলাম। নিজের দিকে নিজে তাকাতেই কেমন লজ্জা পেয়ে গেলাম। আমি দুই হাত দিয়ে নিজের মুখটা ঢেকে নিলাম। প্রতিদিন উনার করা সেই পাগলামি গুলো আমার মনে এমন ভাবে দাগ কেঁটে গেছে যে আমি এখন সেসবই মিস করছি। সবচেয়ে মিস করছি যেটা ওনার “সুইটহার্ট ” এবং “বেখেয়ালি ” ডাকটা। উফ বারবার মনে হচ্ছে কেউ আমাকে বারবার এই নামগুলোতেই ডাকছে। বারবার মাথায় উনার নেশাক্ত কন্ঠে বলা কথা গুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। হায় আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি। কি হচ্ছে আমার সাথে এসব।
আমি দৌঁড়ে গিয়ে ফোনটা হাতে নিলাম। ফোনটা হাতে নিতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। এখনও একটাও কল করেনি। কি খারাপ ও বাড়িতে আসার সময় যেভাবে বলছিল মনে হচ্ছিল যেন আমাকে কত কল করবে। অথচ এখনও অব্দি একটা মিসকল পর্যন্ত দেয়নি। আমি ফোনটা পাশে রেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। উনি কি বুঝতে পারছে না আমি উনাকে কতটা মিস করছি। উনার প্রতিনিয়ত জ্বালানো গুলো মিস করছি। উনার চোখের সেই মাতাল চাহনি মিস করছি। প্রতিটা মুহূর্ত উনাকে অনুভব করছি। উনার আমার প্রতি যত্ন নেওয়া, ভালোবাসা সব সব মিস করছি প্রচন্ড ভাবে। উনি কি আমাকে মিস করছে? তাহলে কেন ফোন করছে না। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে রইলাম। উনার মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আমি নিজের চোখ খুলে ফেললাম। আবারও ফোনের দিকে তাকালাম। কি অবস্থা ফোনটা কি নষ্ট হয়ে গেল নাকি? কল আসে না কেন?
হঠাৎ কেউ এসে আমার পিছনে হাত রাখতেই আমি চমকে উঠলাম। দ্রুত পিছনে তাকাতেই দেখলাম আপু। আমি হতাশ হয়ে বললাম,
“তুই?”
আপু ভ্রু নাচিয়ে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তাহলে কাকে আশা করেছিলি? ”
আমি মনে মনে বিরবির করে বললাম,
“কাকে আর আশা করব মাথার মধ্যে তো শুধু শানই ঘুরছে। ”
কিন্তু মুখে তোতলাতে তোতলাতে বললাম,
“ক কাকে আ আশা ক ক করব কাউকে না। হঠাৎ পিছনে হাত রেখেছিস তাই ভয় পেয়েছি। ”
আপু একটু টেনে বললো,
“ওহ তাই বুঝি। আচ্ছা যেটা বলতে এসেছি চল নিচে খেতে আম্মু ডাকছে। ”
আমি আবার বিছানায় বসে ফোনের দিকেই তাকিয়ে বললাম,
“তুই যা আমি পরে আসছি। ”
“পরে আসছি মানে কি? সবার খাওয়া হয়ে গেছে শুধু তুই, আমি আর আম্মু বাকি দ্রুত আয়। ”
আমি মন খারাপ করে উঠে দাঁড়িয়ে ইনোসেন্ট ফেসে আপুকে বললাম,
“আচ্ছা আপু আমার ফোনে একটা ফোন দে তো আমার মনে হয় ফোনটা নষ্ট হয়ে গেছে একটা কলও আসছে না। ”
আপু অবাক হয়ে বললো,
“মানে কল আসছে না এজন্য ফোন নষ্ট?”
“উফ এতো কথা বলিস কেন তোকে দিতে বললাম তুই দে না এতো কথা না বলে। ”
আপু ড্রেসিনটেবিলের উপর থেকে নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে আমার ফোনে একটা কল দিলো। আমার ফোনে আমার পছন্দের রিংটোন বেজে উঠলো। যাক তাহলে আমার ফোন ঠিকই আছে। তাহলে শান কল করেনি একবারও। আমার অনেক রাগ লাগলো।
আপু বললো,
“শান্তি মোবাইল একদম ঠিক আছে। এবার খেতে চল। ”
আমি তখনও ফোন হাতে নিয়ে ফোনের দিকেই তাকিয়ে রইলাম। আপু নিজের কাঁধ দিয়ে আমার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“কি হয়েছে বলতো? ফোনে কোনো ইমপরটেন্ট কল আসবে নাকি যে এভাবে ফোনের উপর পড়ে আছিস। ”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“না কিসের ইমপরটেন্ট কল আসবে।”
“তাহলে ফোনের মধ্যে কি?”
আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“না ওই কাস্টমার কেয়ারে একটা প্রবলেমের জন্য কমপ্লেইন করেছিলাম। ওরা বলেছিল কিছুক্ষন পর ফোন দিবে তাই অপেক্ষা করছিলাম। ”
“আচ্ছা ওরা যখন ফোন দেওয়ার দেবে এখন খেতে চল তুই। ”
আমি হতাশ হয়ে বললাম,
“হুম। ”
তারপর আপুর সাথে নিচে চলে গেলাম ফোন রেখেই। নিচে এসে খেতে বসলাম কিন্তু কি আর খাওয়া মুখে তো দিচ্ছি বাট পেটে যাচ্ছে না। অনেকক্ষন যাবৎ ভাত পাতে নিয়ে শুধু নাড়াচাড়াই করে যাচ্ছি। আম্মু আমার কাঁধে হাত রেখে বললো,
“কি হয়েছে তোর তখন থেকে দেখছি শুধু ভাত নিয়ে নাড়াচাড়াই করছিস খাচ্ছিস না কেন? শরীর খারাপ নাকি? ”
আম্মু অস্থির হয়ে আমার কপালে গলায় হাত দিয়ে দেখল,
“না ঠিকই তো আছে।”
আমি আম্মুকে বললাম,
“তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো না।কিছু হয়নি আমার। খাচ্ছি তো আমি। ”
“কই খাচ্ছিস এখনো যেমন খাবার তেমনই। কি হয়েছে তোর। ”
আমি কিছু বলবো তার আগে আপু কিছুটা টোন কেঁটে বললো,
“আহা আম্মু তুমিও না বুঝোনা তোমার মেয়ের গুরুতর অসুখ হয়েছে যেটা এত সহজে ছাড়বে না। ”
আম্মু আঁতকে উঠে বললো,
“অসুখ হইছে মানে? কি অসুখ হইছে যে ছাড়বে না সহজে।এই মেয়ে কি হইছে তোর। ”
আপু আম্মুর কথা শুনে খিলখিলিয়ে হাসতে শুরু করলো। আম্মু রেগে বললো,
“ঐ মেয়ে কি হইছে বলিস না কেন? খালি হাসিস। ”
আপু হেসে বললো,
“কুচ কুচ হোতা হে অসুখ। ”
আমি আপুর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালাম।আপু হাসতে লাগলো। আম্মুর দিকে তাকাতেই মনে হলো আম্মু এখনো বিষয়টা ধরতে পারেনি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে।আমি আম্মুকে বললাম,
“উফ আম্মু আপুর কথা ছাড়ো তো তুমি খাও এই দেখো আমি খাচ্ছি। ”
বলেই দ্রুত খাবার মুখে পুড়তে লাগলাম। তখনই উপর থেকে লতা আমার ফোন হাতে দৌঁড়ে এসে বললো,
“আপা আপনার ফোনে কেডায় জানি ফোন দিছে। ”
কথা শুনতেই আমার বিষম লেগে গেল।আমি কাঁশতে আরম্ভ করলাম। আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
“আরে আস্তে খাবি তো। এতো উতলা হওয়ার কি আছে? ”
আমি দ্রুত পানিটা খেয়ে কোনো মতে উঠে গিয়ে দৌঁড়ে ফোনটা হাতে নিলাম। ফোনটা হাতে নিতেই এতক্ষনে আমার মনের মধ্যে যে উড়ু উড়ু করছিলো এক নিমিষে সেটা শেষ হয়ে গেল কারণ সেটা গ্রামীন ফোনের অফিস থেকে ফোন ছিল। ইচ্ছা করছিলো ফোনটা একটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলি। কিন্তু নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে নিলাম।
লতার দিকে তাকিয়ে রাগি দৃষ্টিতে বললাম,
“ঐ তোরে এতো পন্ডিতি কে করতে বলছে ফোন আসুক আর যাই করুক তুই কেন ফোনটা আনতে গেলি। ”
লতা মুখ কাচুমাচু করে বললো,
“আমি ভাবছি আফনের দরকারি ফোন হইব এর লাইগাই তো আনলাম। ”
আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কিরে তুই মেয়েটার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন সোহা? ও তো তোর উপকারের জন্যই ফোনটা আনলো। ”
আপু হাত মুছতে মুছতে পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“কিরে সোহা তোর কাস্টমার কেয়ার বুঝি এখনো ফোন দেয়নি। আসলে কি বলতো ওটা কাস্টমার কেয়ার না হয়ে স্পেশাল কেয়ার হলে ভালো হতো তাহলে তোকে এতটা অপেক্ষা করতেই হতো না বল। ”
আপুর কথা শুনে আম্মুও ফিক করে হেসে দিল।হয়তো এতক্ষনের কথায় আম্মুও বুঝে গেছে। উফ এদের হাসি দেখে এতো রাগ হচ্ছে যে আমি আর দাঁড়ালামই না নিচে। হনহনিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম। সুযোগ পেয়েছে তো তাই সবাই মজা নিচ্ছে ধ্যাত।
★
★
রাত প্রায় বারোটা আমি বিছানায় শুয়ে পাশে আপু। আপু ঘুমিয়ে গেছে হয়তো। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই আমি শুধু বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছি। ফোনটা এখনো হাতে নিয়ে আছি নো কলস, নো মেসেজ। প্রচন্ড বিরক্ত লাগলো। আমি লাফ দিয়ে উঠে বসলাম শোয়া থেকে তখনই আপু চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“কি সমস্যা তোর সোহা না নিজে ঘুমাচ্ছিস না আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছিস এতো নড়ছিস কেন চুপচাপ ঘুমা না। ”
আমি কর্কশ কন্ঠে বললাম,
“তুই ঘুমা না চুপচাপ কান চেঁপে আমার দিকে মনোযোগ দিচ্ছিস কেন? ”
“পাশে যদি কেউ বসে এতো নাড়াচাড়া করতে থাকে তাহলে কেমনে ঘুমাবো। ”
“ঘুমাতে না পারলে ঘুমাস না জেগে থাক। ”
আমার কথা শুনে আপু কিছুক্ষন চুপ করে রইল। তারপর পাশে লাইট জ্বালিয়ে উঠে বসল। আমি একগালে হাত দিয়ে মন খারাপ করে বসে ছিলাম। আপু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“এতো মিস করছিস যখন নিজেই ফোন দিয়ে নে। ”
আমি অভিমানের সুরে বললাম,
“কাউকে মিস করছি না আমি। ”
“তুই বললেই হবে নাকি। আমরা তো আর চোখ হাতে নিয়ে হাঁটি না। আমার ছোট্ট বোনটার মনটা যে কারো জন্য জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে সেটা তো বুঝতে পারি। ”
আমি ছলছল চোখে আপু দিকে তাকালাম। আপু আবার বললো,
“আরশ যখন মাঝে মাঝে কাজের প্রেসারে ফোন দিতে না পারে তখন আমারও এমনটাই হয় ওর সাথে কথা বলতে না পারলে। যতক্ষন আরশের উপর অভিমানটা ঝাড়তে না পারি ভালো লাগে না। তখন আমি কি করি জানিস নিজ থেকে ফোন করে যত বকা আছে সব দিয়ে দেই মনটা ভালো হয়ে যায়। তুইও ট্রাই করতে পারিস। ”
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
“বলছিস এতে আমার মন ভালো হবে? ”
আপু “হ্যাঁ সূচক “মাথা নাড়ালো।
“আচ্ছা তুই ঘুমা আমি আসছি। ”
কথাটা বলেই আমি বেলকনিতে চলে আসলাম। শানের নম্বরে ডায়েল করব কিনা আরো একবার ভাবতে লাগলাম। না একবার বকা না দিলে মনটা শান্তি লাগবে না। তাই উনার নাম্বার ডায়েল করতে লাগলাম। আমি কল দেওয়ার আগেই আমার ফোনে রিং বেজে উঠলো। প্রথমত ভয় পেয়ে গেছিলাম তারপর ভালো করে নম্বারের দিকে তাকাতেই মনটা নেচে উঠলো। আচ্ছা এটা আমার চোখের ভুল না তো। আমি ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম না সত্যিই শান কল দিয়েছে। শানের নামটা ফোনের স্ক্রীনে জ্বলজ্বল করছে। একটা চিৎকার দিতে মন চাইল কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম। সবার ঘুম ভেঙে গেলে কেলেঙ্কারি অবস্থা হয়ে যাবে।
আমি ফোনটা একবার রিং হওয়ার সাথে সাথেই ফোন রিসিভড করলাম। ফোন কানে ধরে চুপ করে বসে রইলাম। হঠাৎ শান ওপাশ থেকে বলে উঠলো,
“কি ব্যাপার ফোন করার সাথে সাথেই ফোন রিসিভড হলো আমার ফোনের জন্য কেউ অপেক্ষা করছিলো বুঝি? ”
আমি কথা না বলে চুপ করে রইলাম। এতক্ষনে উনার কন্ঠটা শুনে মনে হয় মনটা শান্তি পেল।মনে মনে কত বকা দেবো বলে ভেবে রেখেছিলাম বাট এখন কিছুই বলতে পারছি না। সব কথাই যেনো গলার কাছেই আটকে আছে।
উনি আবারও বললো,
“কি ব্যাপার ওপাশের মানুষটার কথা কি শুনতে পাবো না এজন্যই কি ফোন দিয়েছিলাম।যদি কথা বলতে ইচ্ছা না হয় তাহলে ফোন রেখে দিচ্ছি। ”
উনি কথাটা বলতেই আমি দ্রুত বলে উঠলাম,
“না। ”
শান হাসল।
“তাহলে কথা বলছো না কেন? ”
আমি অনেকটা অভিমান নিয়ে বললাম,
“কেন কথা বলবো ও বাড়ি থেকে চলে আসার পর তো কেউ একজন বেমালুম আমাকে ভুলে গেছে। অথচ আসার সময় কত বড় বড় কথা বলেছিল ওই কথা গুলো কোথায় গেল? ”
“সুইটহার্ট তোমাকে কি আমি ভুলতে পারি।তোমার কথা মনে পড়লেই ছুটে তোমার কাছে চলে আসতে হয় এজন্যই নিজেকে একটু কাজের মধ্যে ডুবিয়ে নিয়েছিলাম।তবে যেদিন থেকে তুমি আবারও পার্মানেন্টলি চলে আসবে সেদিন থেকে আবারও সব কাজ থেকে ছুটি নিয়ে নেবো।আর পুরোটা সময় শুধু তোমায় ভালোবাসব। ”
আমি লজ্জা পেয়ে চুপ হয়ে গেলাম। শান আবারও বললো,
“এতো রাত হয়ে গেছে এখনও ঘুমাওনি কেন? ”
“আপনিও তো ঘুমাননি। ”
“কি করব একজনকে ছাড়া তো আমার পুরো বিছানা, ঘর সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কোনোভাবে ঘুমই আসছে না শুধু একটাবার তার কন্ঠটা শুনার জন্য মনটা আনচান করছিল এজন্যই জেগে আছি। কিন্তু সেও কি সেই একই কারণে জেগে আছে? ”
আমি চুপ করে রইলাম কোনো কথা মাথায় আসছে না।
শান আবারও বললো,
“কি হলো বলো চুপ থাকলে তো হবে না। ”
“সব কথা মুখে বলতে হবে কেন? আপনি আমার না বলা কথা গুলো কি বুঝেন না।
”
“বুঝি তো কিন্তু কথা গুলো তোমার মুখ থেকে শুনতেই বড্ড ইচ্ছা হয় আমার মনে অফুরন্ত শান্তি প্রাপ্তি হয় তাহলে ”
আমি আবার চুপ হয়ে গেলাম।
“এই বেখেয়ালি ভালেবাসি তো। ”
উনার এই ডাকটা শুনে আমার পুরো শরীরে কাপন ধরে গেল যেন কতবছর পর শুনলাম এই ডাকটা। আমার মুখে খিল ধরে গেল।
শান আবার বললো,
“কিছু তো বলো? ”
“খেয়েছেন আপনি?”
শানের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো,
“এটা বলতে বলেছিলাম বুঝি? ”
উনার কথা শুনে আমি ফিক করে হেসে দিলাম। উনি বললেন,
“হাসছো না আমাকে এভাবে জ্বালিয়ে খুব মজা লাগছে না একবার শুধু কাছে পাই সুদ সমেদ সব ফেরত দিয়ে দিবো মনে রেখ। ”
আমি না জানার ভান করে বললাম,
“আমার কি দোষ আপনিইতো কিছু বলতে বলেছিলেন আমি বললাম আমার দোষ কই। ”
উনি দৃঢ় কন্ঠে বললেন,
“আমি আমার কথার উত্তর চাই উত্তর দেও। ”
আমি আবারও চুপ হয়ে গেলাম।শানও চুপ হয়ে থাকল। বাহিরে সুন্দর ফুরফুরে বাতাস বইছে মনে কাপন ধরে যাচ্ছে। এই রাতের নিস্তব্ধতা যেন মনটাকে আরো বেশী উতলা করছে। দুটো মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে না। নিশ্চুপ থেকেও যে হাজারও না বলা কথা বলে দিতে পারে তার প্রমাণ হয়তো আমরা দুজনই। মুখে কোনো কথা বলছিনা শুধু দুজন দুজনের কথা গুলো কান পেতে শুনছি আমাদের মনই বলে দিচ্ছে সব না বলা কথা।
হঠাৎ আমি মুখ ফুটে বলে উঠলাম,
“ভালোবাসি। ”
শান স্লো ভয়েসে বললো,
“আবার বলো। ”
“ভালোবাসি খুব বেশী ভালোবাসি মিষ্টার AAS।কখনো আপনাকে হারাতে চাই না।কখনো না। ”
এভাবেই আমাদের মাঝে টুকটাক কথা চলতে থাকলো। সময় কোথা থেকে কোথায় গিয়ে ঠেঁকলো সেটা আমাদের দুজনেরই খেয়াল নেই। উনি আমার কথা শুনছে আর আমি উনার কথা। আমরা যেন দুজন দুজনার মাঝেই হারিয়ে গেছিলাম যে আশেপাশের কোনো চিন্তাই মাথায় আসছিলো না। হঠাৎ দূর থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসলো। বুঝতে অসুবিধা হলো না ফজরের আজান দিচ্ছে। চারপাশে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ শুনা যাচ্ছে।
আমি একটু হেসেই বললাম,
“যা রাত পাড় হয়ে গেল কিভাবে? এই কিছুটা সময়ই তো হলো কথা বলা শুরু করলাম। ”
শানও হেসে বললো,
“উফ তুমি পাশে না থাকলে সময় কাঁটতেই চায় না আর তোমার সাথে কথা বলা শুরু হতে এতো লম্বা সময় চোখের পলকেই কেঁটে গেল তাহলে কি বলবো সময়ও আমাদের দেখে হিংসা করে। ”
“হয়তো। কিন্তু এখন তো ফোন রাখতে হচ্ছে। নামাজ পড়তে হবে। যান আপনিও গিয়ে নামাজ পড়ে একটু গুমিয়ে নিন। ”
“হুম যেতো তো হবে কিন্তু ইচ্ছা তো করছে না আমার মনে হয় এভাবেই হাজার বছর পার করে দিতে পারবো। ”
আমি একটু লজ্জা মাখা কন্ঠে বললাম,
“রাখছি তাহলে? ”
“হুম তবে আগে এটা বলো আর কত রাত এভাবেই নির্ঘুম কাঁটবে তোমাকে ছাড়া। ”
“এইতো আর কিছুদিন তারপরে শুধু আপনি আমি আর থাকবে আমাদের দুজনের এক শহর ভালোবাসা। ”
“অপেক্ষা করতে খুব কষ্ট হয় জানো তো। ”
“জানি তবে ধৈর্য ধরুন ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয়। ”
তারপর আমি ফোন কেঁটে দিলাম। ফোনটা কেঁটে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলাম। আর কিছুটা সময় তারপরেই ওনাকে চোখের সামনে দেখতে পাবো ভাবতেই মুখে হাসির রেখা ফুঁটে উঠলো।
.
.
চলবে